Translate

Search This Blog

বিশেষ সতর্কবার্তাঃ

এই ব্লগটি নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সন্দেহবাদী, মুক্তমনা এবং স্বাধীনচেতা মানুষদের জন্য। যারা যেকোন বিষয়ের সমালোচনা সহ্য করার মত ক্ষমতা রাখে। যদি কোন ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিক এই ব্লগটিতে আসে তবে তার ধর্মানুভূতি নামের অদ্ভূত দূর্বল অনিভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্লগ লেখক দায়ী থাকবে না। ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিকদের নিজ দায়িত্বে তাদের দূর্বল ধর্মানুভূতিকে সংরক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে। কারো ধর্মানুভূতি নামের অযৌক্তিক অনুভূতি আহত হবার জন্য কোন ক্রমেই ব্লগার বা লেখককে দায়ী করা যাবে না। যদি কোন অতি দুর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগে ভূল করে ঢুকে পরেন এবং তিনি তার অনুভূতিকে দূর্বল ভাবেন অর্থাৎ যিনি তার ধর্মের উপযুক্ত সমালোচনা সহ্য করতে অপারগ, তাকে বিনীত ভাবে এই ব্লগটি থেকে প্রস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পরেও যদি কোন দূর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগটিতে ঘুরাফেরা করেন এবং তার ফলে তার দূর্বল ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হন তবে কোন ক্রমেই এবং কোন ক্রমেই ব্লগের মালিক, 'আমি নাস্তিক' দায়ী থাকবে না।

Friday, July 4, 2014

বিশ্বজগতের রহস্য উন্মোচন এবং বিশ্বজগতের ব্যাখ্যায় সৃষ্টিকর্তাকে বর্জন :



পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি বা ধারণার উত্পত্তি মানুষ করেছিল প্রাচীন কালে তাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানের অক্ষমতা থেকে l মানুষ বিশ্বজগতের গঠন প্রণালী এবং কার্যপ্রণালী বুঝার মত বা ব্যাখ্যা করার মত যথেষ্ট জ্ঞান এবং ব্যবস্থা ছিল না l তাই তারা সরল ব্যাখ্যা দাড় করিয়েছিল l আর এই সরলতম ব্যাখ্যায় সৃষ্টিকর্তার উপর দায় অর্পণ করা আবশ্যিক হয়ে পড়েছিল l সেই সময় সৃষ্টিকর্তার আনয়ন ছাড়া বিশ্বজগতের (পৃথিবী কেন্দ্রিক) কার্যপ্রণালী ব্যাখ্যা করা সম্ভব ছিল না l আর তাই বিশ্বজগতের একজন সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি করা ছাড়া মানুষের কোন উপায় ছিল না l খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম থেকে খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে কিছু কিছু বিজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা ছাড়া বিশ্বজগতের ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেছিল l এদের মধ্যে অন্যতম একজনের নাম হচ্ছে এরিস্টার্কাস l সে দেখিয়েছিল সৃষ্টিকর্তা ছাড়াও প্রকৃতির গতি প্রণালী নিজস্বভাবে চলতে পারে l এবং জগতের সব নিয়ম নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যেতে পারে l
কিন্তু তার পরে থেকে কোন বিজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা ছাড়া জগতের কার্যপ্রণালী চলতে পারার সম্ভাবনাকে খাটো করে দেখেছে l আর এই ধারণার নিয়ন্ত্রন করেছে সেই সময়ের প্রধান দার্শনিক এরিস্টটল l এরিস্টটল সৃষ্টিকর্তার ধারনাকে প্রধান ধরে নিয়ে প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন l যার প্রভাবে সপ্তদশ শতাব্দী এমনকি বিংশ শতাব্দীর প্রাথমিক সময় পর্যন্ত কোন বিজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা ছাড়া প্রকৃতির কার্জ প্রণালী ঘটার সম্ভাবনাকে কেউ আমলে নেয়নি l
এর মধ্যে টলেমি বিশ্বজগতের গঠন প্রণালীতে পৃথিবীকে কেন্দ্রে রেখেছে l কিন্তু কোপারনিকাস দেখিয়েছেন পৃথিবী কেন্দ্রে নয় বরং সব গ্রহ নক্ষত্র সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে l এই ধারনাটা আরো শক্ত করেছেন গ্যালিলিও l আর এই ধারণা সৃষ্টিকর্তার গুরুত্বকে কিছুটা খর্ব করতে সক্ষম হয়েছিল l কিন্তু কোপারনিকাস গ্যালিলিও এবং পরবর্তিতে নিউটন, এরা কেউ সৃষ্টিকর্তার ধারনাকে সরাসরি বাদ দিতে পারেনি l
গ্যালিলিও এবং নিউটন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা সৃষ্টিকর্তার ধারনাকে বাদ দেয়নি প্রকৃতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে l

প্রথম যে বিজ্ঞানী বিজ্ঞানের প্রাথমিক ধারনাকে আধুনিক বিজ্ঞানের ধারনাতে রুপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছেন সে হচ্ছে আইনস্টাইন l তিনি তথাকথিত বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থেকে বের হতে পেরেছিলেন l তিনি দেখিয়েছেন প্রকৃতির নিয়ম চিরন্তন নয় l তার পূর্বের সকল বিজ্ঞানী বিশ্বাস করত প্রকৃতির নিয়ম চিরন্তন বা অপরিবর্তনীয় l এই নিয়মের কখনো ব্যতিক্রম হয় না l
প্রকৃতির নিয়ম অপরিবর্তনী বা প্রকৃতি তার নির্দিষ্ট নিয়মের বাইরে যায় না এই ধারণার উত্পত্তি থেকে বিজ্ঞানের যে অগ্রগতি শুরু হয়েছিল সেটাকে ভুল প্রমান করে আইনস্টাইন দেখিয়েছেন যে প্রকৃতির নিয়ম এক বিশেষ ব্যবস্থায় গেলে এই নিয়মগুলোও পরিবর্তন হতে পারে l
অর্থাত প্রকৃতি যে নির্দিষ্ট নিয়মে চলছে যেটা সৃষ্টিকর্তা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং এর কোন পরিবর্তন হওয়া সম্ভব নয়; আইনস্টাইন দেখিয়েছেন এই প্রকৃতির নিয়ম চিরন্তন নয় বা অপরিবর্তনীয় নয় বরং এটি পরিবর্তনশীল হতে পারে যদি এটাকে একটা বিশেষ অবস্থায় রাখা হয় l
আইনস্টাইন সৃষ্টিকর্তাকে তার ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে আমলে নেননি l তিনি মুক্ত ভাবে চিন্তা করেছেন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া একটা জগতের l
তার মতে বিশ্বজগত চলছে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কিন্তু এগুলো কোন সৃষ্টিকর্তা নিয়ন্ত্রণ করছেন না l এবং এই নিয়মগুলো পরিবর্তন হচ্ছে নিজেদের কিছু বৈশিষ্টের কারণে l
আইনস্টাইনের পূর্বে এক জীববিজ্ঞানী একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছিল l যেটা বলেছে প্রানিজগতকে কোন সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেনি l বরং জড় জগত থেকে প্রাণী জগতের সৃষ্টি হয়েছে l সে হচ্ছে চার্লস ডারউইন l
চার্লস ডারউইন-এর এই ব্যতিক্রমী এবং সৃষ্টিকর্তা বহির্ভূত তত্ত্ব সে সময়ের বিজ্ঞানীরা মেনে নিতে পারেনি l কিন্তু বিজ্ঞানের আধুনিক যুগে অর্থাত বিংশ শতাব্দিতে ডারউইন-এর তত্বকে সত্যি হিসেবে বিজ্ঞান গ্রহণ করেছে l

আইনস্টাইন-এর পর থেকে মানুষ সৃষ্টিকর্তা ছাড়া বিশ্বজগতের কার্য প্রণালীর ব্যাখ্যা করতে উঠে পরে লেগে গেছে l তার পূর্বের প্রায় সব বিজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তাহীন জগতের কার্য- প্রণালী ব্যাখ্যায় গুরুত্ব দেয়নি l বরং তারা সৃষ্টিকর্তাকে প্রধান ধরে নিয়ে প্রকৃতির ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করেছেন l কিন্তু আইনস্টাইন সে পথে না হেটে মুক্ত এবং স্বাধীনভাবে চিন্তা করেছেন সৃষ্টিকর্তাহীন জগতের কার্য-প্রণালী ব্যাখ্যা করতে l
আধুনিক পদার্থ বিদ্যার সূচনাও করে গেছেন আইনস্টাইন l আইনস্টাইনের পর থেকেই মানুষ বিশ্বজগতের গঠন প্রণালী এবং এর কার্য-প্রণালী সম্পর্কে মুক্ত চিন্তা করতে সক্ষম হয়েছে l
আইনস্টাইনের আগের প্রায় সব বিজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তার ধারনাকে গুরুত্বের সাথে দেখেছেন l কিন্তু আইনস্টাইন এবং তার পর থেকে বিজ্ঞানীরা সৃষ্টিকর্তার ভুমিকাকে খাটো করে দেখেছেন l
আধুনিক বিজ্ঞানে সৃষ্টিকর্তার ভুমিকাকে অপ্রয়োজনীয় বা বাহুল্য হিসেবে দেখে বিজ্ঞানীরা l
বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ট বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস তার বিগ ব্যাং থিওরিতে দেখিয়েছেন বিশ্বজগত সৃষ্টিতে কোন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন হয়নি l অর্থাত বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই l
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা একমত যে বিশ্বজগত কোন সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেননি l বরং প্রকৃতির আপন খেয়ালেই অথবা প্রকৃতির নিজস্ব বৈশিষ্টের কারণের বিশ্বজগতের সৃষ্টি হয়েছে l আধুনিক বিজ্ঞান মেনে নিয়েছে প্রাণীর উত্পত্তি এবং বিশ্বজগতের সৃষ্টি হয়েছে কোন অতিক্ষমতা সম্পন্ন সৃষ্টিকর্তা ব্যতিত l
আইনস্টাইনের পর থেকে বিজ্ঞানীরা সৃষ্টিকর্তাহীন প্রকৃতি ব্যাখ্যা এবং এর কার্য-প্রণালী সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন l এবং তারা সৃষ্টিকর্তার ধারনাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে অর্থাত বাদ দিয়ে বিশ্বজগতের গতি প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে সম্পূর্ণ সফল হয়েছেন l
আধুনিক বিজ্ঞানের সৃষ্টিকর্তাহীন জগত ব্যাখ্যা করতে সৃষ্টিকর্তার ভুমিকাকে বাদ দেয়ায় বিজ্ঞান বিশ্বজগতের সৃষ্টি বা উত্পত্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছে l মানুষ নিশ্চিত হয়েছে বিশ্বজগত কোন সৃষ্টিকর্তা বানাননি এবং প্রাণীর উত্পত্তি বা সৃষ্টি কোন সৃষ্টিকর্তা করেনি l বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে নিজে নিজে এবং প্রাণীর আবির্ভাব হয়েছে প্রকৃতির এক বিশেষ ব্যবস্থাপনায় l আর এই ব্যবস্থাপনাকে বিজ্ঞানীরা অরিজিন অফ স্পিসিস এবং বিবর্তনবাদ এই তত্ত্ব দুটি দিয়ে ব্যাখ্যা করে থাকেন l
আধুনিক বিজ্ঞান দাড়িয়ে আছে সৃষ্টিকর্তাহীন ধারণার উপরে l
বিজ্ঞানের প্রাথমিক পর্যায়ে সৃষ্টিকর্তার ধারণা দিয়ে মানুষ প্রকৃতির ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছিল l কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ধারণা সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে মানুষ বিশ্বজগতের সৃষ্টি রহস্য এবং প্রাণীর উত্পত্তির রহস্য খুব সফলতার সাথে উদঘাটন করেছে l
আর তাই বিজ্ঞান দ্বারা প্রমান করতে খুব কষ্ট হয় না যে সৃষ্টিকর্তা বলে পৃথিবীতে কিছু নেই l এই বিশ্বজগত সৃষ্টিকর্তাহীন বিশ্বজগত l

No comments:

Post a Comment