Translate

Search This Blog

বিশেষ সতর্কবার্তাঃ

এই ব্লগটি নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সন্দেহবাদী, মুক্তমনা এবং স্বাধীনচেতা মানুষদের জন্য। যারা যেকোন বিষয়ের সমালোচনা সহ্য করার মত ক্ষমতা রাখে। যদি কোন ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিক এই ব্লগটিতে আসে তবে তার ধর্মানুভূতি নামের অদ্ভূত দূর্বল অনিভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্লগ লেখক দায়ী থাকবে না। ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিকদের নিজ দায়িত্বে তাদের দূর্বল ধর্মানুভূতিকে সংরক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে। কারো ধর্মানুভূতি নামের অযৌক্তিক অনুভূতি আহত হবার জন্য কোন ক্রমেই ব্লগার বা লেখককে দায়ী করা যাবে না। যদি কোন অতি দুর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগে ভূল করে ঢুকে পরেন এবং তিনি তার অনুভূতিকে দূর্বল ভাবেন অর্থাৎ যিনি তার ধর্মের উপযুক্ত সমালোচনা সহ্য করতে অপারগ, তাকে বিনীত ভাবে এই ব্লগটি থেকে প্রস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পরেও যদি কোন দূর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগটিতে ঘুরাফেরা করেন এবং তার ফলে তার দূর্বল ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হন তবে কোন ক্রমেই এবং কোন ক্রমেই ব্লগের মালিক, 'আমি নাস্তিক' দায়ী থাকবে না।

Saturday, March 14, 2015

জাকির নায়েকের মিথ্যাচার এবং প্রতারনা । বিজ্ঞান সম্পর্কে জাকির নায়েকের মিথ্যাবাদীতা এবং প্রতারনা । (পর্ব ৬) সূর্য পরিভ্রমন করে বলতে কুরআন কি বুঝিয়েছে? সূর্যের গ্যালাক্সিকে পরিভ্রমন করা নাকি পৃথিবীকে পরিভ্রমন করা। এটা নিয়ে জাকির নায়েক কেন মিথ্যা কথা বললো?


জাকির নায়েক একজন বিখ্যাত ইসলামী পন্ডিতকিন্তু সে তার বক্তব্যে নানা অসত্য কথা, উদৃতি দিয়ে মানুষের সাথে প্রতারনা করে থাকেজাকির নায়েকের মিথ্যাবাদিতা এবং প্রতারণা অনেকেই আগে ধরিয়ে দিয়েছে; আমিও এই পর্বগুলোতে জাকির নায়েকের নানা মিথ্যেবাদিতা এবং প্রতারণা ধরিয়ে দিয়েছিএই পর্বটিতেও জাকির নায়েকের একটা মিথ্যাবাদিতা এবং প্রতারণা ধরিয়ে দেবো
জাকির নায়েক তার 'কুরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞান- বিরোধ নাকি সাদৃশ্য' স্বীর্ষক বক্তৃতায় (লেকচারে) সূর্যের এবং চাঁদের পরিভ্রমন বা গতিশীলতা সম্পর্কে নিম্নোক্ত কথাগুলো বলেছে,

"আগেকার দিনে ইউরোপিয়ানরা মনে করতো যে, পৃথিবী এই বিশ্বজগতের কেন্দ্রে একেবারে স্থির হয়ে বসে আছে আর সূর্য সহ অন্য সব গ্রহ নক্ষত্র পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিন করছেএই মতবাদকে বলা হতো থিউরী অফ জিওসেন্ট্রিজম এই মতবাদে বিশ্বাস করতেন টলেমী খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে এবং তার পরবর্তীতে এই মতবাদ টিকে ছিল ১৬০০ শতাব্দি পর্যন্তযতদিন না কোপার নিকাস বললেন যে, পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহ সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিন করছেআর পরবর্তীতে ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে ইউহান্নেস কেপলাম, তিনি তার বই এস্টোনবিয়া নবিয়াতে লিখেছেন যে, এই সৌর জগতে পৃথিবী আর অন্যান্য গ্রহ শুধু সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিন করে না, তারা নিজ অক্ষের চারপাশেও প্রদক্ষিন করে
আমি যখন স্কুলে ছিলাম, তখন পড়েছিলাম যে, পৃথিবী আর অন্যান্য গ্রহ নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিন করেতখন আমি পড়েছিলাম যে, সূর্য স্থির থাকে, সূর্য তার নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিন করে না


কিন্তু পবিত্র কুরআনে আছে, সুরা আল আম্বিয়ার ৩৩ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে, সেখানে আছে,
"হুয়াল্লাজি খালাকা লাইলা ওয়া নাহারা"; "আর আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি করিয়াছেন রাত্রি এবং দিবস"
"ওয়া সামসু ওয়া কামার"; আর সূর্য এবং চন্দ্র"
"কুল্লুনফি ফালাকী ইয়াজবাহুন"। "প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করিতেছে তাহাদের নিজস্ব গতিতে।"
এখানে আরবি শব্দটি 'ইয়াজবাহুন', এটা এসেছে মূল শব্দ সাহাবা থেকে; যেটা দিয়ে চলন্ত কোন কিছুর গতিকে বুঝানো হয়
যদি আমি বলি একজন মানুষ মাটির উপরে সাবাহা করছে তারমানে এই নয় যে, সে মাটিতে গড়াগড়ি করছেএর অর্থ সে হাটছে অথবা দৌড়াচ্ছে
যদি আমি বলি যে, একজন মানুষ পানিতে সাবাহা করছে; তারমানে এই নয় যে, সে ভেসে আছেএটার অর্থ সে সাঁতার কাটছে
একই ভাবে পবিত্র কুরআনে যখন বলা হচ্ছে 'ইয়াজবাহুন' যার মূল শব্দ সাবাহা, গ্রহ নক্ষত্র সম্পর্কে তখন সেটা উড়ে যাওয়া বুঝায় না, নিজ অক্ষের চারদিকে প্রদক্ষিন করা বুঝায়
আর এখন বিজ্ঞানের কল্যাণে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সূর্যের ইমেজ ঘরে বসেই পরীক্ষা করা যায়দেখা যাবে বেশ কিছু কালো রংয়ের বিন্দু আছেআর এই কালো বিন্দুগুলো আনুমানিক ২৫ দিনের মধ্যে একবার নিজ অক্ষকে প্রদক্ষিন করবেযার অর্থ সূর্য আনুমানিক ২৫ দিনের মধ্যে নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিন করে

একবার চিন্তা করেন পবিত্র কুরআন সূর্যের গতি আর নিজের অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিনের কথা, বলেছে, আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে, যেটা বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে কিছু দিন আগে!

পবিত্র কুরআনের সূরা ইয়াসিনের ৪০ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে যে,
"সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চন্দ্রের নাগাল পাওয়া এবং রজনির দিবসকে অতিক্রম করা।"
"কুল্লুনফি ফালাকী ইয়াজবাহুন"
"এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরণ করে তাহাদের নিজস্ব গতিতে।"
পবিত্র কুরআনে এই কথাটা দিয়ে কি বুঝানো হয়েছে যে, "সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চন্দ্রের নাগাল পাওয়া"?  

আগেকার দিনের মানুষ মনে করতো যে, সূর্য আর চাঁদের কক্ষপথ একটাইকিন্তু পবিত্র কুরআন বলছে না, সূর্য আর চাঁদের কক্ষপথ দুটোই আলাদাতাই একটার পক্ষে আরেকটার নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়আর এরা দুটোই সূর্য এবং চাঁদ, গতিশীল আর নিজ অক্ষকে প্রদক্ষিন করে

পবিত্র কুরআনের সূরা ইয়াসিনের ৩৮ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে যে,
"ওয়া সামসু তাজি লিমুসতাকারিল্লাহা"
যে, সূর্য ভ্রমণ করে ওহার নির্দিষ্ট পথে নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে
এখানে আরবি শব্দ মুসতাকার অর্থ একটি নির্দিষ্ট গন্তব্য, অথবা একটা নির্দিষ্ট সময়

আজকের দিনে বিজ্ঞান জানতে পেরেছে যে, সূর্য এই সৌরজগতকে নিয়ে বিশ্বজগতের দিকে একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যে পয়েন্টাকে বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন সোলার এপেক্সএই পয়েন্টের দিকে সূর্য যাচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে ১২ মাইল গতিতেআর এভাবেই সূর্য যে পয়েন্টের দিকে এগোচ্ছে সেটার নাম কন্সোলেশন অফ হারকিউলিস
এই একই কথা বলা হয়েছে পবিত্র কুরআনের সূরা রাদের ০২ নাম্বার আয়াতেআর এছাড়াও সূরা ফাতির ১৩ নাম্বার আয়াতেসূরা লোকমানের ২৯ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছেআর এছাড়াও সূরা আল জুমার ০৫ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে যে, বলা আছে,
"সূর্য এবং চন্দ্র ওহারা প্রত্যেকে পরিভ্রমন করে এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত।"

এটাই ছিল জাকির নায়েক কর্তৃক 'কুরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞান- বিরোধ নাকি সাদৃশ্য'-এ বলা কথাগুলো এখন আমরা দেখবো জাকির নায়েক তার এই বক্তৃতায় কি কি মিথ্যে কথা বলেছে এবং কি কি প্রতারণা করেছে এবং সেগুলো কিভাবে করেছে

প্রথমেই জাকির নায়েক কর্তৃক উল্লেখিত আয়াতগুলোকে পর্যায়ক্রমে পর্যালোচনা করে দেখি সেখানে আসলে কি বলা হয়েছে
জাকির নায়েকের উল্লেখিত আয়াতগুলো হলো,
জাকির নায়েক প্রথমে সূরা আম্বিয়ার ৩৩ নাম্বার আয়াতের কথা উল্লেখ করে বলেছে, সূর্য ও চন্দ্র যে নিজ নিজ অক্ষকে প্রদক্ষিন করে সেটা এই আয়াতে বলা হয়েছেপ্রকৃত আয়াতটি হলো,
"আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিবস এবং সূর্য ও চন্দ্র; প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে।"
এই আয়াতে সূর্য ও চন্দ্রের নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করার পাশাপাশি রাত ও দিনের নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণের কথাও বলা হয়েছেবলা হয়েছে, রাত ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করেঅর্থাৎ রাত দিন ও চন্দ্র সূর্য সব গুলোই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে
এই আয়াতের অন্যান্য অনুবাদগুলো লক্ষকরি,
"আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিবস এবং সূর্য ও চন্দ্র; প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে।" (অনুবাদ- প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান)
"আল্লাহ তায়ালাই রাত, দিন, সুরুজ ও চাঁদকে পয়দা করেছেন; (এদের) প্রত্যেকেই (মহাকাশের) কক্ষপথে সাঁতার কেটে যাচ্ছে।" (অনুবাদ- হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ)
"আর তিনিই সেই জন যিনি রাত ও দিনকে এবং সূর্য ও চন্দ্রকে সৃষ্টি করেছেনসব কটি কক্ষপথে ভেসে চলেছে।" (অনুবাদ- ডঃ জহুরুল হক)
"It is He Who created the Night and the Day, and the sun and the moon: all [the celestial bodies] swim along, each in its rounded course." (অনুবাদ- Abdullah Yusuf Ali)
"And He it is Who created the night and the day, and the sun and the moon. They float, each in an orbit." (অনুবাদ- Mohammad Marmaduke Pickthal)

প্রত্যেকটি অনুবাদ বলছে, সূর্য ও চন্দ্রের মত রাত ও দিনও নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরন করেএর অর্থ রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র প্রত্যেকটি একই রকম কক্ষপথে বিচরণ করে বা ভেসে বেড়ায়
এই আয়াতটিকে কখনই সূর্য ও চন্দ্রের নিজ নিজ অক্ষের চারদিকে প্রদক্ষিনের কথা বলা হয়নি যেমনটা জাকির নায়েক বলেছেবুঝা যাচ্ছে জাকির নায়েক সব সময়ের মতই মিথ্যে কথা বলছেএবং উল্টাপাল্টা কথা বলে তার মতকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেএজন্য সে মিথ্যের আশ্রয়ও নিচ্ছে যেমনটা সে সব সময়ই করে থাকে

বরং এই আয়াতটি দিয়ে বুঝানো হয়েছে রাত ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র নিজ নিজ পথে ভ্রমন করেএবং সূর্য ও চন্দ্রের মত রাত দিনও নিজ নিজ কক্ষপথে চলেযদি সূর্য ও চন্দ্রের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কক্ষপথ ধরা হয় তবে রাত দিনেরও আলাদা আলাদা কক্ষপথ ধরে নিতে হবেকারণ রাত ও দিনের ক্ষেত্রেও সূর্য ও চন্দ্রের মত নিজ নিজ কক্ষপথের কথা কুরআনে বলা হয়েছেকুরআন মতে সূর্য ও চন্দ্রের মত রাত দিনও আলাদা আলাদা কক্ষপথে চলে বা বিচরণ করেকিন্তু বিজ্ঞান আমাদের বলে রাত দিনের কোন আলাদা কক্ষপথ নেইরাত দিন চলেও নারাত দিন সব সময়ই স্থির থাকেকিন্তু কুরআন বলছে রাত দিনও সূর্য ও চন্দ্রের মত বিচরণশীল থাকেঅর্থাৎ কুরআন ভুল কথা বলেছে
এখানে সূর্য ও চন্দ্রের নিজের অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিনের কথা বলা হয়নিবলা হয়েছে সূর্য ও চন্দ্র নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করেকক্ষপথে বিচরণ করা আর নিজ অক্ষকে প্রদক্ষিন করা সম্পূর্ন ভিন্ন কথা
কুরআনে সূর্য ও চন্দ্রের মতো রাত দিনেরও নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণের কথা বলা হয়েছেতাই এ আয়াতে যদি সূর্য ও চন্দ্রের নিজের অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিন করা বুঝানো হয়ে থাকে তবে রাত দিনেরও নিজের অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিন করা বুঝতে হবেকিন্তু আমরা জানি সূর্য ও চন্দ্রের মত রাত দিনের নিজের অক্ষ নেইঅর্থাৎ কুরআন এখানে ভুল কথা বলছে
জাকির নায়েক এই আয়াতটিকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করে মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে  

এরপর জাকির নায়েক সূরা ইয়াসিন-এর ৪০ নাম্বার আয়াতটির কথা উল্লেখ করেছেপ্রকৃত আয়াতটি হলো,
"সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চন্দ্রে নাগাল পাওয়া এবং রজনীর পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা; এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে চলছে।"
এই আয়াতটিতে বলা হয়েছে সূর্যের পক্ষে চাঁদের নাগাল পাওয়া সম্ভব নয় এবং রাত দিনকে অতিক্রম করতে পারে নাএবং এরা সবাই নিজ নিজ কক্ষপথে চলছেঅর্থাৎ সূর্য চাদের নাগাল পায়না এবং রাতও দিনকে ডিঙ্গিয়ে আগে চলে যায় নাএই আয়াতটিতে সূর্যের দ্বারা চাঁদকে ধরে ফেলার কথা বলা হয়েছেব্যাপারটা এমন যে, সূর্য আর চাঁদ একই পথে প্রতিযোগিতা করছে কিন্তু সূর্য চাঁদকে ধরতে পারছে না বা নাগাল পাচ্ছে নাকিন্তু আমরা জানি সূর্য, পৃথিবীসহ সব গ্রহ-উপগ্রহকে নিয়ে বিশ্বজগতের দিকে ছুটে চলেছেঅর্থাৎ সূর্যের কাছে পৃথিবী সহ সব গ্রহ উপগ্রহ নাগালের মধ্যেই রয়েছেআর এই নাগালের নাম মহাকর্ষ শক্তিসূর্য পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহ এবং চাঁদসহ সব উপগ্রহকে নাগালের মধ্যেই ধরে রেখেছেকিন্তু কুরআন বলছে সূর্যের পক্ষে চন্দ্রের নাগাল পাওয়া সম্ভাব নয়অর্থাৎ কুরআন ভুল কথা বলেছেকুরআন এখানে বুঝিয়েছে সূর্য ও চন্দ্র একই কক্ষপথে বিচরণ করে কিন্তু সূর্য চন্দ্রের নাগাল পায় নাসূর্য আর চন্দ্রের কক্ষপথ সম্পূর্ন আলাদা, তাই একটা আরেকটাকে ধরে ফেলা বা একটা আরেকটার নাগাল পাওয়ার কথা বলা অর্থহীনএখানে এজন্যই সূর্যের চাঁদকে নাগালে পাওয়ার কথা বলা হয়েছে কারণ সূর্য ও চন্দ্রকে একই কক্ষপথে কল্পনা করা হয়েছে কিন্তু তবুও সূর্য চন্দ্রকে নাগালে পাচ্ছে না বলে এই কথাটি বলা হয়েছেঅর্থাৎ কুরআন সব দিক থেকেই ভুল কথা বলেছে
আর জাকির নায়েক কথার প্যাঁচে মিথ্যাকে সত্য বানাতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে

এরপর জাকির নায়েক সূরা ইয়াসিন-এর ৪০ নাম্বার আয়াতটি উল্লেখ করেছেপ্রকৃত আয়াতটি হলো,
"এবং সূর্য ভ্রমণ করে ওর নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এটা পরাক্রমশালি, সর্বাজ্ঞের নিয়ন্ত্রন।"
এই আয়াতে বলা হয়েছে সূর্যের একটি নির্দিষ্ট গন্তব্য রয়েছে আর সূর্য সেই নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে ধাবমান থাকে
সূর্য যে ভ্রমণ করে বা গতিশীল থাকে সেটা আবিষ্কার হয়েছে খুব বেশী দিন আগে নয়কিন্তু মানুষ সূর্যের প্রকৃত গতিশীলতা কখনই নিজ চোখে দেখতে পারে নাতবে মানুষ সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উঠতে দেখে এবং পশ্চিম দিকে ঢুবে যেতে দেখেঅর্থাৎ মানুষ নিজের চোখেই সূর্যকে গতিশীল অবস্থায় দেখতে পায়কিন্তু মানুষের নিজের চোখে দেখা সূর্যের গতিশীলতা আসলে সূর্যের প্রকৃত গতিশীলতা নয়মানুষ সূর্য ও চন্দ্রকে গতিশীল দেখে পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্যঅর্থাৎ মানুষ সূর্যের যে গতিশীলতা দেখে সূর্যকে গতিশীল ভাবে, প্রকৃতপক্ষে সেটা সূর্যের আসল গতিশীলতা নয়মানুষ সূর্যকে এভাবে গতিশীল দেখার কারণ সূর্যের প্রকৃত গতিশীলতা নয়, বরং পৃথিবীর গতিশীলতার জন্য সূর্যের গতিশীলতা অনুভব করেকিন্তু প্রকৃতপক্ষে সূর্য আসলে সেভাবে গতিশীল থাকে নাসূর্যের গতিশীলতা এমন নয় যে, পূর্ব দিক থেকে উঠে পশ্চিম দিকে গমন করে; বরং সূর্যের গতিশীলতা মানুষ নিজের চোখে দেখতে পায়না
আর তাই কুরআনের এই আয়াতটি বুঝতে হলে আগে জানতে হবে কুরআন এখানে সূর্যের কোন গতিশীলতার কথা বলেছেমানুষ সূর্যকে যেভাবে গতিশীল প্রত্যক্ষ করে সেটা নাকি সূর্যের প্রকৃত গতিশীলতা, যেটা মানুষ দেখতে পায়না সেটা? এই আয়াতটি থেকে এটা বুঝার কোন উপায় নেইকারণ এই আয়াতটি একটি সাধারণ কথা বলেছে যেটা দিয়ে সূর্যের গতিশীলতা বুঝিয়েছে এবং সূর্যের একটা গন্তব্যের কথা বলেছেতাহলে এখন প্রশ্ন হলো, কুরআন সূর্যের গতি বলতে কি বুঝিয়েছে এবং সূর্যের গন্তব্যইবা কোনটি?
এর উত্তর পাওয়া যায় এই আয়াতটির একটা ব্যাখ্যামুলক হাদিসে যেখানে বলা হয়েছে সূর্যের প্রকৃত গন্তব্যের কথাহাদিসটিতে স্পষ্ট করে বলা আছে সূর্যের গন্তব্য বলতে কুরআন কি বুঝিয়েছে? হাদিসটি হলো,

সহীহ বুখারী- ভলিউম ৪, অধ্যায় ৫৪, নং-৪২১
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত :- তিনি বলেন, একদা সূর্য অস্ত যাবার সময় রসূল(সাঃ) আমাকে বললেন, "তুমি কি জান সূর্য কোথায় গমন করে?" আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভাল জানেন তিনি বললেন, এটা যায় (ভ্রমন করে অর্থাত যেতে যেতে) আরশের নিচে পৌছে সিজদা করে এবং পুনরায় উদিত হওয়ার অনুমতি চায় এবং তাকে অনুমতি দেয়া হয় এবং অচিরেই (এমন এক সময় আসবে) যখন সে প্রায় সেজদা নত হবে কিন্তু তা গৃহীত হবে না এবং নিজস্ব পথে যাত্রা করার অনুমতি চাইবে; কিন্তু আর অনুমতি মিলবে না, (বরং) তাকে নির্দেশ দেয়া হবে, সেই পথেই ফিরে যেতে - যে পথে সে এসেছে এবং তখন সে পশ্চিম দিকে উদিত হবে এটাই হলো আল্লাহর তাআলার এই বাণীর মর্ম :- এবং র্সূয ভ্রমণ করে ওর নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এটা পরাক্রমশালী, সর্বাজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ । (৩৬:৩৮)

এই হাদিসটিকে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা আছে যে, সূর্যের নির্দিষ্ট গন্তব্য হলো আল্লাহর আরসের নিচেএবং এটি পূর্ব দিক থেকে উঠে পশ্চিম দিকে অস্ত যায়এবং এরপর এটি আল্লাহর আরসের নিচে আশ্রয় নেয়কিন্তু একদিন আসবে যখন তাকে যে দিক থেকে এসেছে সে দিকে ফিরে যেতে বলা হবেতখনই সে পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে এবং তখন কেয়ামত হবে
অর্থাৎ স্পষ্টতই এখানে সূর্যের পৃথিবীর চারদিকে ভ্রমনের কথা বলা হয়েছেসূর্যের প্রকৃত গতিশীলতা মানুষ দেখতে পায়নাকিন্তু পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্য সূর্যকে পৃথিবীর চারপাশে (পূর্ব থেকে পশ্চিমে) ঘুরতে দেখেকিন্তু সেটা প্রকৃত সূর্যের গতিশীলতা নয়এটি পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারণে সৃষ্টি হওয়া একটা ভুল প্রতিচ্ছবি যেটা মানুষ প্রত্যক্ষ করেকিন্তু সূর্যের প্রকৃত গতিশীলতা মানুষের পক্ষে নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব হয় নাতাই কুরআনেও সূর্যের প্রকৃত গতিশীলতার কথা বলা হয়নিএখানে পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্য মানুষ সূর্যের যে গতিশীলতা প্রত্যক্ষ করে সেটার কথাই বলা হয়েছেআর তাই এই আয়াতটির ব্যাখ্যাকারী হাদিসটিতে সূর্যের পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে অস্ত যাবার কথা বলা হয়েছে এবং এটির গন্তব্য হিসেবে দেখিয়েছে আল্লাহর আরসের নিচেঅর্থাৎ কুরআনে সূর্যের গন্তব্য বলতে আল্লাহর আরসের নিচের স্থানকে বুঝিয়েছে
কিন্তু আমরা জানি সূর্যের কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থল নেইসূর্য আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত গতিশীল রয়েছেঅর্থাৎ অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহ যেভাবে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে বা প্রদক্ষিন করে ঠিক সেভাবেই সূর্য গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে সব সময়ই ঘুর্নায়মান থাকেএবং এটির কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থল নেইসূর্য গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘূর্ণায়মান থাকে
অর্থাৎ কুরআন এখানে সম্পূর্ন ভূল কথা বলেছেআর জাকির নায়েক সেই ভূল কথাটিকে বিজ্ঞান বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছেএর জন্য কিছু প্রতারণামূলক কথা তাকে বলতে হয়েছে

এরপর জাকির নায়েক সূরা রাদের ০২ নাম্বার, সূরা ফাতির ১৩ নাম্বার,  সূরা লোকমানের ২৯ নাম্বার, এবং সূরা আল যুমার ০৫ নাম্বার আয়াতের কথা উল্লেখ করে দাবী করেছে সেখানে বলা হয়েছে,
সূর্য এবং চন্দ্র প্রত্যেকেই পরিভ্রমন করে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত
ওই আয়াতগুলোতে বলা আছে,
"আল্লাহ সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়মাধীন করেছেন, প্রত্যেকে পরিভ্রমণ করে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত।"
অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়মের মধ্যে রাখা হয়েছেআর তারা নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমন করে
এই আয়াতে বলা হচ্ছে সূর্য আর চন্দ্র একটি নির্দিষ্টকাল বা সময় পর্যন্তই পরিভ্রমণ করেতাহলে প্রশ্ন হলো বাকি সময় তারা কি করে? অর্থাৎ সেই নির্দিষ্টকালটা শেষ হলে সূর্য ও চন্দ্র কোথায় যায়কুরআনের এই আয়াতগুলোতে বলা হচ্ছে সূর্য ও চন্দ্র একটা নির্দিষ্টকাল পর্যন্তই পরিভ্রমন করে বা ভ্রমনরত থাকেআর সেই নির্দিষ্টকাল বা সময়টা যখন শেষ হয় তখন তারা কি করে সেটা কুরআনে উল্লেখ করা নেইএটি বর্ননা করা আছে সেই হাদিসটিতে যেখান সূর্য অস্ত যাবার পরে আল্লাহর আরসের নিচে যায় বলে মুহাম্মদ বলেছিলসহী বুখারীর ভলিউম ৪, অধ্যায় ৫৪, নং-৪২১ হাদিসে মুহাম্মদ বলেছে যে, সূর্য অস্ত যাবার পর আল্লাহর আরসের নিচে যেয়ে সেজদা করেএবং পরের দিন উদয় হবার জন্য অনুমতি চায়এবং তাকে অনুমতি দেওয়া হলে সে পরের দিন আবার উদিত হয়
অর্থাৎ কুরআনে বলা আছে সূর্য ও চন্দ্র একটা নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমন করে; এই নির্দিষ্টকালটা হল সূর্য উদয় থেকে সূর্য অস্ত যাবার সময় পর্যন্তঅর্থাৎ কুরআনের কথা অনুযায়ী সূর্য ও চন্দ্র উদয় হওয়া থেকে অস্ত যাওয়া সময় পর্যন্তই পরিভ্রমন করেবাকী সময় আল্লাহর আরসের নিচে যেয়ে সেজদারত অবস্থায় থাকে
কুরআন এখানে সম্পূর্ন ভুল এবং অবৈজ্ঞানিক কথা বলেছেঅর্থাৎ কুরআনের কথা অবাস্তব এবং অবৈজ্ঞানিক
কিন্তু জাকির নায়েক এই অবাস্তব এবং অবৈজ্ঞানিক কথা দিয়েই কুরআনকে বৈজ্ঞানিক বানানোর চেষ্টা করেছেএজন্য সে অবশ্য একটু প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে  

এবার জাকির নায়েকের প্রতারনামুলক কথাগুলোকে একটু বিশ্লেষন করে দেখি সে কি কি মিথ্যে কথা বলেছে এবং কি কি প্রতারণা করেছে
জাকির নায়েক প্রথমেই বলেছে, আগেকার দিনে নাকি ইউরোপিয়ানরা মনে করতো যে, পৃথিবী এই বিশ্বজগতের কেন্দ্র একেবারে স্থির হয়ে বলে আছে এবং বাকী সব গ্রহ নক্ষত্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে
জাকির নায়েকের এই কথা বলতে যেয়ে এমন ভাব প্রকাশ করেছে যেন ইউরোপিয়ানরা ছাড়া বাকী পৃথিবীর সবাই ভিন্ন কথা মনে করতোজাকির নায়েক নিশ্চয় জানে যে সারা পৃথিবীর মানুষই (জাকির নায়েকের উত্তরসূরী আরবীয় এবং ভারতীয়রাও) একথাই মনে করতোপৃথিবীর সবাই মনে করতো পৃথিবীই এই বিশ্বজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত
জাকির নায়েকের কথাতে প্রতারণাটুকু লক্ষ করুন, সে বুঝাতে চেয়েছে যে, আরবীয়রা পৃথিবীকে বিশ্বজগতের কেন্দ্র মনে করতো নাতার প্রতারণামূলক এই বক্তব্যটির উদ্দেশ্য কুরআনকে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ করাকিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় পৃথিবীর সব মানুষই মনে করতো যে, পৃথিবী এই বিশ্বজগতের কেন্দ্র এবং সূর্য ও চন্দ্র এবং তারকারা পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরেসুতরাং জাকির নায়েকের বলা কথাটি (শুধু) ইউরোপিয়ানরা মনে করতো পৃথিবী বিশ্বজগতের কেন্দ্র কথাটিতে সুক্ষ প্রতারণা রয়েছেসঠিক কথাটি হবে আগেকার সব মানুষই এমনটি মনে করতো
থিওরী অফ জিওসেন্ট্রিজম (পৃথিবী কেন্দ্রিক বিশ্বজগত) টলেমির সময় থেকে ১৬০০ শতাব্দি পর্যন্ত সময়ে সারা পৃথিবীর মানুষই বিশ্বাস করতোআরবীয়রাও, ভারতীয়রাওসুতরাং একথা দাবী করা অর্থহীন যে ইউরোপিয়ানরাই শুধু মনে করতো পৃথিবী কেন্দ্রিক বিশ্বজগতের কথা
জাকির নায়েকের প্রতারণাটুকু একদম স্পষ্ট
এরপর জাকির নায়েক বলেছে, ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে ইউহান্নেস কেপলাম, তিনি তার বই এস্টোনবিয়া নবিয়াতে লিখেছেন যে, এই সৌর জগতে পৃথিবী আর অন্যান্য গ্রহ শুধু সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিন করে না, তারা নিজ অক্ষের চারপাশেও প্রদক্ষিন করে
জোহান্নেস কেপলার-এর বইটির নাম 'এস্ট্রোনমিয়া নোভা'এই বইটির মাধ্যমেই পৃথিবীর মানুষ জানতে পেরেছে যে পৃথিবী বিশ্বজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত নয়বরং পৃথিবী সহ সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ এবং চাঁদ সহ অন্যান্য উপগ্রহ সূর্যের চারপাশে পরিভ্রমন করেকুরআন বা অন্যান্য গ্রন্থগুলোর মাধ্যমে কেউ জানতে পারেনি সূর্য কেন্দ্রিক সৌরজগতের কথাঅর্থাৎ এর আগের সব গ্রন্থেই পৃথিবী কেন্দ্রিক বিশ্বজগতের বর্ণনা দেওয়া আছেকুরআনেও বিভিন্ন আয়াতে চাঁদ তাঁরা ও সূর্যের ভ্রমনের কথা বলা হয়েছে কিন্তু পৃথিবীর ভ্রমনের কোন কথাই বলা হয়নিঅর্থাৎ কুরআন পৃথিবী কেন্দ্রিক বিশ্বজগতের কথাই বর্ননা করেছে

এরপর জাকির নায়েক দাবী করেছে যে, সে যখন স্কুলে পড়তো তখন নাকী সে জেনেছে যে, পৃথিবী সহ সব গ্রহ উপগ্রহ সূর্যের চারপাশে ঘুরে এবং তাদের নিজের অক্ষেও ঘুরেকিন্তু সূর্য নিজের অক্ষে ঘুরে না
জাকির নায়েক যেহেতু প্রচুর মিথ্যে কথা বলে সুতরাং এটা ধরে নিতে পারি যে সে এটাও মিথ্যে কথা বলছেকিন্তু প্রমাণ না পাওয়ায় সেটা নিয়ে কোন কথা বলবো না
তবে হ্যাঁ সূর্য পরিভ্রমন করে না বা সূর্য নড়াচড়া করে না, এটি সত্য কথাএটা বুঝতে হলে আগে বুঝতে হবে গতিশীল অবস্থা বলতে বিজ্ঞান কি বুঝে? সাধারন ভাবে কোন কিছুকে গতিশীল দেখলেই তাকে গতিশীল বলা হয়কিন্তু বিজ্ঞানের ভাষায় গতিশীলতা নির্নয় করা হয় কোন একটা বস্তু বা স্থানকে কাঠামো বা সাপেক্ষ ধরে নিয়ে 
যেমন দুটো ট্রেন যদি পাশাপাশি একই বেগে গতিশীর থাকে তবে একটা ট্রেনে দাড়ানো যাত্রীর সাপেক্ষে অন্য ট্রেনের বিপরীত যাত্রীটি স্থির আছে ধরে নেওয়া হবে; যদিও উভয়েই পৃথিবীর সাপেক্ষে গতিশীলঠিক তেমনি ভাবে যদি একটি বাস দশ কিলোমিটার বেগে যায় এবং অপরটি পনের কিলোমিটার বেগে গতিশীল থাকে তবে প্রথম বাসটি অপর বাসটিকে পাঁচ কিলোমিটার বেগে গতিশীল দেখবেযদিও উভয়টি পৃথিবীর সাপেক্ষে ভিন্ন বেগে গতিশীল রয়েছেঠিক তেমনি আমরা চাঁদকে যে গতিতে বিচরন করতে দেখি চাঁদ আসলে তার থেকে অনেক বেশী গতিশীল থাকেকারণ পৃথিবী চাঁদকে নিয়ে প্রচন্ড গতিতে সূর্যের চারপাশে পরিভ্রমন করে
ঠিক একই ভাবে যখন একটি মানুষ পৃথিবী থেকে সূর্যকে লক্ষ করবে তখন সে সূর্যকে স্থির দেখবেকারণ পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্য সত্যি সত্যিই স্থিরকারন সূর্য গ্যালাক্সির চারপাশে যখন গতিশীল থাকে তখন পৃথিবীকেও একই বেগে তার সাথে নিয়ে চলেফলে একজন গ্যালাক্সির বাইরে থেকে কেউ দেখবে যে সূর্য এবং পৃথিবী দুটোই প্রচন্ড বেগে গতিশীল রয়েছেকারণ সে থাকবে শুন্য গতিতেফলে সে সূর্য এবং পৃথিবীকে দেখবে সেকেন্ডে ২০০ কিলোমিটার বেগে গতিশীল
কিন্তু পৃথিবীতে দাড়িয়ে একজন দেখবে যে সূর্য স্থিরকারণ সূর্য যখন গতিশীল থাকে তখন পৃথিবীকে সঙ্গে নিয়েই গতিশীল থাকে ফলে পৃথিবীতে দাড়ানো ব্যাক্তিটি সূর্যকে স্থির দেখবেঅর্থাৎ পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্য স্থিরএটি এখনও স্থির এবং ভবিষ্যতেও পৃথিবীর সাপেক্ষে স্থিরই থাকবে
আর তাই যখন বলা হবে সূর্য স্থির তখন সেটা বিজ্ঞানের ভাষায় পৃথিবীর সাপেক্ষে স্থির বলে ধরে নিতে হবে
সত্যি সত্যিই পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্য স্থির থাকেকিন্তু গ্যালাক্সির সাপেক্ষে এক রকম ভাবে গতিশীল থাকে এবং বিশ্বজগতের সাপেক্ষে আরেক রকম ভাবে গতিশীল থাকেবিশ্বজগতের সাপেক্ষে গ্যালাক্সি নিজেও প্রচন্ড গতিতে গতিশীল রয়েছে বলে তখন সূর্যের গতি গ্যালাক্সির সাপেক্ষে যেটা তার থেকে অনেক বেশী হবে
গতিশীলতা নির্নয় করা হয় কোন একটি স্থান বা বস্তুকে সাপেক্ষ ধরে নিয়েআর তাই পৃথিবী এবং সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের সাপেক্ষে সূর্য এখনও স্থিরই আছে, স্থিরই থাকে  

আধুনিক যুগ আসার আগে মানুষের পক্ষে সম্ভব ছিল না গ্যালাক্সির সাপেক্ষে সূর্যের গতিকে পরিমাপ করাকিন্তু আধুনিক কালে এসে মানুষ গ্যালাক্সির সাপেক্ষে সূর্যের গতিকে পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছে বলে আজ মানুষ জানে সূর্যও গতিশীলগ্যালাক্সির সাপেক্ষে সূর্যের গতি কত সেটা মানুষ বিজ্ঞানের জ্ঞান ব্যবহার করে নির্ণয় করতে পেরেছেকোন ধর্মীয় জ্ঞান দিয়ে সেটা নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি
আর তাই একশো বছর বা ত্রিশ বছর আগে মানুষ যদি বলে থাকে যে সূর্য স্থির ছিল তবে তার কথা মিথ্যে হয়ে যাবে নাকারণ পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্য সত্যি সত্যিই স্থিরকিন্তু গ্যালাক্সি বা বিশ্বজগতের সাপেক্ষে সূর্য স্থির নয়; গতিশীল  
আর তাই জাকির নায়েক যদি পড়ে থাকে যে সূর্য স্থির তবে সেটাকে ভুল বলা যাবে নাপৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্য এখনও স্থির

এরপর জাকির নায়েক সূরা আম্বিয়ার ৩৩ নাম্বার আয়াতটি উল্লেখ করে বলেন, সেখানে লেখা আছে,
আল্লাহ রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেকটি নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে বা ভ্রমন করে
জাকির নায়েক আরো বলেছে, এই আয়াতটিতে 'ইয়াজবাহুন' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে'ইয়াজবাহুন' শব্দটি আরবী 'সাবাহা' শব্দ থেকে এসেছে যেটা দিয়ে কোন চলন্ত বস্তুর গতিকে বুঝায়
জাকির নায়েকের প্রতারণা বা ভন্ডামীর এটা এক উজ্জল নিদর্শনসে সব সময় অমুক শব্দটি তমুক শব্দ থেকে এসেছে, আর তমুখ শব্দটির অর্থ অমুকতাই অমুকের অর্থ বদলে হয়ে যাবে তমুক মার্কা উদ্ভট কথা বলে মানুষের সাথে জঘন্য ভাবে প্রতারণা করেকারণ হলো সে জানে যে কুরআনে সম্পূর্ন ভুল কথা বলা আছে এবং অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক কথা বলা আছেআর তাই সে কুরআনের কোন একটি শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে পুরো আয়াতের অর্থকে বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জ্যপূর্ণ রেখে পরিবর্তন করে দেয় এবং কুরআনকে বিজ্ঞানময় দেখায়কিন্তু মানুষতো আর এটা জানে না যে, কুরআনের কোন একটা শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে কুরআনের আয়াতের অর্থ পরিবর্তন করে কুরআনকে সংশোধন করে বিজ্ঞানময় বানালে সেখানে কুরআনের কোন ভুমিকাই থাকে নাকারণ কুরআনের ভুলকে ইতিমধ্যে শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে সংশোধন করে দেওয়া হয়ে গেছেতাহলে কুরআনের কোন মূল্য থাকবে নাকারণ সেটা মুসলমান দ্বারা সংশোধিত কুরআন; প্রকৃত কুরআন নয়কারণ প্রকৃত কুরআন ভুল ছিল বলেই মুসলমানরা কুরআনের অর্থ পরিবর্তন করে বিজ্ঞানের সাথে মিলিয়ে নতুন অর্থ করেছে

জাকির নায়েক নির্লজ্জের মতো এই কাজটি করে এবং মিথ্যা বলে মানুষের সাথে প্রতারণা করে
এই আয়াতে ইয়াজবাহুন অর্থ কক্ষপথে ভ্রমন করা অথবা কোন পথে বিচরন করা বা ভ্রমন করাকিন্তু জাকির নায়েক ইয়াজবাহুন-এর মূল শব্দটি এনে এই শব্দটির অর্থ পরিবর্তন করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেইয়াজবাহুন শব্দটি সাবাহা শব্দটি থেকে আসুক আর না আসুক এটা দিয়ে যে অর্থটিকে প্রকাশ করা হয়েছে কুরআনে, অনুবাদের সময় সেই অর্থটিকেই অক্ষুন্ন রাখতে হবেএখন ইয়াজবাহুন শব্দটি সাবাহা থেকে এসেছে তাই সাবাহা শব্দটির যা অর্থ ইয়াজবাহুন শব্দটিরও সে অর্থই হবে সেটা দাবী করা রীতিমত হাস্যকরহস্ত থেকে যদি হস্তি শব্দটি তৈরী হয় তবুও হস্তি (হাতি) এবং হস্ত (হাত) এক অর্থে ব্যবহৃত হবে না কোন দিনওঠিক তেমনি ইমপসিবল (impossible) শব্দটি এসেছে পসিবল (possible) শব্দটি থেকেতাই বলে কি আমি দাবী করতে পারি যে, যেহেতু ইমপসিবল শব্দটি এসেছে পসিবল শব্দটি থেকে তাই ইমপসিবল অর্থ সম্ভবসেটা রীতিমত হাস্যকর শুনাবেকারন আমরা জানি ইমপসিবল (অসম্ভব) এবং পসিবল (সম্ভব) শব্দ দুটো পরস্পর বিপরীত অর্থ বহন করেআর তাই ইয়াজবাহুন-এর অর্থ সাবাহা শব্দটি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যাবে নাএক্ষেত্রে ইয়াজবাহুন শব্দটি সাবাহা শব্দটির অনুরুপ অর্থ প্রকাশ করলেও ইয়াজবাহুন শব্দটি দিয়ে যা বুঝায় সেটাই ব্যবহার করতে হবেঅন্য বা ভিন্ন অর্থ এনে নতুন অর্থ করাটা হবে ভন্ডামী বা প্রতারণা
তাই জাকির নায়েক এখানে ইয়াজবাহুন এর অর্থ পরিবর্তন করতে সাবাহা শব্দটিকে টেনে আনতে পারেন নাআনলে সেটা হবে প্রতারণা
কিন্তু জাকির নায়েক সাবাহা শব্দটি এনেই ক্ষান্ত হয়নি, উপরন্তু সাবাহা শব্দটির অর্থকেও পরিবর্তন করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর চেষ্টা করেছে সে  

জাকির নায়েক বলেছে, ইয়াজবাহুন শব্দটি এসেছে মূল শব্দ সাবাহা থেকেআর সাবাহা দিয়ে চলন্ত কোন কিছুর গতিকে বুঝানো হয়
তবুও জাকির নায়েক ধরা খেয়ে গেছেকারণ ইয়াজবাহুন শব্দটির বদলে যদি সে সাবাহা শব্দটির অর্থকেও ব্যবহার করে তবুও সূর্যের নিজ অক্ষের চার পাশে প্রদক্ষিন করা বুঝাবে নাকারণ সাবাহা দিয়ে চলন্ত কিছুর গতিকে বুঝায়অর্থাৎ সাবাহা দিয়ে সূর্যের চলন্ত অবস্থার গতিকে বুঝাবেসূর্য যে পৃথিবীর চারপাশে গতিশীল সেটাই বুঝাবেকারণ জাকির নায়েক নিজেই বলেছে যে, সাবাহা দিয়ে চলন্ত কিছুর গতিকে বুঝায়অর্থাৎ সূর্যের চলমান অবস্থার গতিকে বুঝাবে; নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিনের কথা বুঝাবে না
চালাকি করেও জাকির নায়েকের প্রতারণা ঢাকতে পারলো না জাকির সাহেব

জাকির নায়েক বলেছে, “যদি বলা হয় কোন মানুষ মাটির উপরে সাবাহা করছে, তার মানে এই নয় যে, সে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছেএর অর্থ সে হাটছে বা দৌড়াচ্ছে
এই বাক্যটিতে জাকির নায়েকের চালাকিটা দেখার মতো বটে! সে নিজেই বলেছে যে, সাবাহা অর্থ চলন্ত কিছুর গতিশীলতাআর তাই যখন বলা হবে মানুষটি সাবাহা করছে তখন এমনিতেই এর অর্থ হবে মানুষটি গতিশীল আছে বা চলন্ত আছেঅর্থাৎ সে হাটছে বা দৌড়াচ্ছেকারণ হাটা আর দৌড়ানোই হলো মানুষের ক্ষেত্রে চলন্ত কিছুর গতিশীলতামাটিতে গড়াগড়ি করা কোন চলন্ত প্রক্রিয়া নয়কারণ মাটিতে গড়াগড়ি করা মানুষের চলন্ত অবস্থা বুঝায় নাহাটা বা দৌড়ানো দিয়ে মানুষের চলন্ত অবস্থা বুঝানো হয়
কিন্তু জাকির নায়েক প্রতারণা করার জন্য বলছে, এখানে সাবাহা অর্থ মাটিতে গড়াগড়ি হবে না
যদি সাবাহা অর্থ চলন্ত কিছুর গতিশীলতাই হয় তবে সেটা এমনিতেই গড়াগড়ি খাওয়া বুঝাবে নাএর জন্য এই অবান্তর কথাটির আমদানী করার প্রয়োজন ছিল নাকিন্তু জাকির নায়েক এই অবান্তর কথাটিকে এজন্যই এখানে এনেছে যেন তার প্রতারণা কেউ ধরতে না পারে

এরপর জাকির নায়েক বলেছে, “যদি আমি বলি যে, একজন মানুষ পানিতে সাবাহা করছে; তারমানে এই নয় যে, সে ভেসে আছেএটার অর্থ সে সাঁতার কাটছে
এখানেও জাকির নায়েক প্রতারণামূলক কথার আমদানী করেছেযদি সাবাহা অর্থ চলন্ত কিছুর গতিই হয় তবে পানিতে সাবাহা করার অর্থ এমনিতেই সাঁতার কাটা হয়ভেসে থাকা হবে না; কারণ সাবাহা দিয়ে চলন্ত কিছুকে বুঝানো হয়আর ভেসে থাকা মানে সেটা চলন্ত কিছুর গতিশীলতা নয়তবে সাঁতার কাটা মানে চলন্ত কিছুর গতিশীলতাআর তাই পানিতে সাবাহা করা মানে পানিতে সাঁতার কাটাইকিন্তু এই কথাটাও জাকির নায়েক তার প্রতারণাকে বৈধ করার জন্য আমদানী করেছে  

এরপর জাকির নায়েক বলেছে, “একই ভাবে পবিত্র কুরআনে যখন বলা হচ্ছে 'ইয়াজবাহুন' যার মূল শব্দ সাবাহা, গ্রহ নক্ষত্র সম্পর্কে তখন সেটা উড়ে যাওয়া বুঝায় না, নিজ অক্ষের চারদিকে প্রদক্ষিন করা বুঝায়
এখানে জাকির নায়েকের ভন্ডামী বা প্রতারণাটা দেখার মতোনিজেই সাবাহা'র অর্থ চলন্ত কিছুর গতিশীলতা বলে নিজেই এর অর্থকে ভিন্ন দিকে নিয়ে গেছেকেন গ্রহ নক্ষত্রের ক্ষেত্রে সাবাহা শব্দটির অর্থ বদলে যাবে? জাকির নায়েকতো বলেছে সাবাহা অর্থ চলন্ত কিছুর গতিতাহলে গ্রহ নক্ষত্রের ক্ষেত্রে কেন চলন্ত গ্রহ নক্ষত্রের গতিশীলতা হবে না? জাকির নায়েক সাবাহার অর্থ বলেছে চলন্ত কিছুর গতি অর্থাৎ কোন কিছুর গতিশীলতাতাহলে কেন গ্রহ নক্ষত্রের গতিশীলতা বা চলমানতা না বুঝিয়ে নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিন করা বুঝাবে? তাহলে ভুলে ভরা কুরআনকে বিজ্ঞানময় হিসেবে দেখানো যাবে এই জন্য?
লক্ষ করুন সাবাহা অর্থ চলন্ত কোন কিছুর গতি বা গতিশীলতাতাহলে গ্রহ নক্ষত্রের ক্ষেত্রে সাবাহা শব্দটির অর্থ এমনিতেই হবে গ্রহ নক্ষত্রের পরিভ্রমন বা ভ্রমন বা চলমান থাকাকিন্তু জাকির নায়েক এই সাভাবিক অর্থটিকে না নিয়ে তার সুবিধা অনুযায়ী ভিন্ন অর্থ নিচ্ছে; নিজ অক্ষের চারদিকে প্রদক্ষিননিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিন বলা হলে এটি চলন্ত কিছুর গতিকে বুঝালো নাকারণ চলন্ত কিছু হতে হলে তাকে জায়গা বদলাতে হয়অর্থাৎ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা বুঝাতে হবেযেমনটি মাটিতে সাবাহ করা অর্থাৎ হাটা বা দৌড়ানো এবং পানিতে সাবাহা করা বা সাঁতার কাটাকারণ হাটা বা দৌড়ানো অথবা সাঁতার কাটা দিয়ে চলন্ত কিছুর গতিকেই বুঝানো হয়তবে গ্রহ নক্ষত্রের ক্ষেত্রেও সাবাহা অর্থ গ্রহ নক্ষত্রের পরিভ্রমন বা বিচরণ অর্থই ব্যবহৃত হবেতবেই সাবাহা অর্থ চলন্ত কিছুর গতিশীলতা অর্থটি সঠিক হবে
কিন্তু জাকির নায়েক সেটা না করে নিজের মত করে সাবাহার অর্থকে নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিন করা বলে চাপিয়ে দিচ্ছেআর কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাচ্ছেকারণ নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিন করা চলন্ত কিছু হলো নাএকটা গাড়ি স্থির অবস্থায় চাকা ঘুড়লেই সেটাকে চলন্ত বলা হয় নাসেই চাকা ঘুরাটা যখন গাড়িটিকে স্থান পরিবর্তন করাবে তখনই সেটা হবে চলন্ত অবস্থাআর তাই গ্রহ নক্ষত্রের নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিন করা কোন চলন্ত প্রক্রিয়া নয়এটি একটি স্থির প্রক্রিয়াকারণ নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিন করলেও গ্রহ নক্ষত্র স্থান পরিবর্তন করবে নাকিন্তু গ্রহ নক্ষত্রের বৃত্তাকার পথে পরিভ্রমন করা ব্যবহার করলেই কেবল এটি দিয়ে গতিশীলতা বা চলন্ত অবস্থা বুঝাবে
তাই জাকির নায়েকের দাবীর মতো সাবাহা বা ইয়াজবাহুন দিয়ে কখনই নিজ অক্ষে প্রদক্ষিন করা বুঝায় নাতাই কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে আয়াতের অর্থকে পরিবর্তন করে অযৌক্তিক ভাবে নতুন অর্থ করলেই তাদের দাবীর মতো করে কুরআন বিজ্ঞানময় হয়ে যাবে নাকুরআনের আসল অর্থ অনুযায়ী কুরআনের এই আয়াতটিতে ইয়াজবাহুন দিয়ে সূর্যের গতিশীলতা বুঝিয়েছে; নিজ অক্ষকে প্রদক্ষিন বুঝায়নিআর এই গতি যে গ্যালাক্সির চারপাশে বৃত্তাকারে ভ্রমন নয় বরং পূর্ব থেকে পশ্চিমে পৃথিবীকে পরিভ্রমন করা সেটা সেই হাদীসে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা আছেআর তাই জাকির নায়েকের ভন্ডামী অনুযায়ী এর অর্থ পরিবর্তন করলেই কুরআন বিজ্ঞানময় হয়ে গেলো নাবরং কুরআনের ভুল প্রমানিত হলো 

জাকির নায়েক বলেছে, সূর্যের মধ্যে কালো কালো বিন্দুগুলো আনুমানিক ২৫ দিনের মধ্য একবার ঘুরে আবার পুর্বের জায়গায় আসে তাই সূর্য আনুমানিক ২৫ দিনে একবার নিজ অক্ষকে প্রদক্ষিন করে
এই হিসাবটা বিজ্ঞানীরা বের করেছেনকেউ কুরআন দেখে সূর্যের নিজ অক্ষকে প্রদক্ষিন করাটা আবিষ্কার করেনিকারণ কুরআনে সূর্যের নিজ অক্ষকে প্রদক্ষিনের কথা বলা হয়নিবরং সূর্যের কক্ষপথ বা চলার পথ দিয়ে পরিভ্রমন বা ভ্রমনের কথা বলা হয়েছেকুরআন এবং হাদিস অনুযায়ী সূর্য ও চন্দ্র পৃথিবীর চারপাশে পরিভ্রমন করে সেটাই বলা হয়েছে ওই আয়াতে 

এরপর জাকির নায়েক বলেছে, একবার চিন্তা করেন পবিত্র কুরআনে সূর্যের গতি আর নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিনের কথা বলা হয়েছে সেই ১৪০০ বছর আগে আর বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে কিছু দিন আগে
এজন্যই জাকির নায়েককে সবাই জুকার নায়েক বলে
সে কিছু উল্টাপাল্টা কথা বলে দাবী করে বসলো কুরআনে ১৪০০ বছর আগেই বিজ্ঞানের আধুনিক আবিষ্কারের কথা লেখা আছেকুরআনের অর্থ পরিবর্তন করে, ভিন্ন শব্দ এনে, তার ভিন্ন অর্থ দিয়ে কুরআনের মূল অর্থকে পরিবর্তন করে, তার সুবিধামত নতুন অর্থ করে, এত কিছুর পরেও কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে ব্যর্থ হয়ে নির্লজ্জের মতো দাবী করে বসলো, কুরআনে বিজ্ঞানের আবিষ্কারের কথা ১৪০০ বছর আগেই লেখা আছে
সাধারন মানুষ জানে না বা বুঝতে পারে না আসলে কুরআনে সত্যিই জাকির নায়েকের বলা কথাগুলো আছে কিনাআর মুসলমানরা কোন কিছু নিজে যাচাই করার ক্ষমতা বা ইচ্ছা কোনটাই রাখে নাফলে তারা জাকির নায়েকের বলা অগনিত মিথ্যে কথা এবং প্রতারণামূলক কথাগুলো বিশ্বাস করেকেউ কিছু যাচাই করে না বলে সহজেই জাকির নায়েকের মতো ভন্ড ও প্রতারকদের প্রতারণার স্বীকার হয় 

এরপর জাকির নায়েক সূরা ইয়াসিনের ৪০ নাম্বার আয়াত উল্লেখ করে বলেছে সেখানে লেখা আছে,
সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া এবং রজনির দিবসকে অতিক্রম করাএরা প্রত্যেকে সন্তরন করে তাহাদের নিজস্ব গতিতে
এই আয়াতটি উল্লেখ করে জাকির নায়েক দাবী করেছে, এখানে সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া দিয়ে বুঝানো হয়েছে, সূর্য আর চাঁদের কক্ষপথ আলাদাকিন্তু আগের দিনে মানুষ মনে করতো সূর্য ও চন্দ্রের কক্ষপথ একটাই
এখানেও জাকির নায়েক কৌশল বা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেএই আয়াতে বলা হয়েছে সূর্যের পক্ষে চাঁদের নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়কেন সূর্যের চাঁদকে নাগালের কথা বলা হলো? সূর্য আর চাঁদতো একই কক্ষপথে নেইতাহলে কেন সূর্যের চাঁদকে ধরে ফেলা বা নাগাল পাবার কথা বলা হয়েছে
এর কারণ কুরআন লেখক ভেবেছে সূর্য আর চাঁদের কক্ষপথ একটাই কিন্তু সূর্য চন্দ্রের নাগাল পেতে পারে নাআর তাই এই আয়াতে বলা হয়েছে সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়াঅর্থাৎ কুরআন মতে সূর্য এবং চাঁদের কক্ষপথ একটাইকিন্তু তবুও সূর্য চাঁদের নাগাল পেতে পারে না
যদি কুরআন লেখক জানতো যে সূর্য আর চাঁদের কক্ষপথ আলাদা তবে একটাকে আরেকটার নাগাল পাওয়ার কথা বলা হতো না
তাই যদি না হবে তাহলে কুরআন লেখক কি জানতো না যে সূর্য চন্দ্রের নাগাল ঠিকই পায়? কারণ সূর্য পৃথিবী এবং চন্দ্রকে তার মহাকর্ষ শক্তির দ্বারা নিজের কাছে আটকে রাখেঅর্থাৎ কুরআন লেখক আসলে জানতো না যে, সূর্য চন্দ্র ও পৃথিবীর নাগাল অনেক আগে থেকেই পেয়ে বসে আছে এবং নিজের কাছে মহাকর্ষ বল দ্বারা এদেরকে আটকে রেখেছে
এসব কথা জানতো না বলেই কুরআন লেখক ভেবেছে সূর্য আর চন্দ্র একই পথে বিচরন করে কিন্তু এগুলো একটা আরেকটাকে ধরতে পারে নাতাই সে এই ভাবে কথাটি বলেছে যে, সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চন্দ্রের নাগাল পাওয়া
এছাড়াও এই আয়াতে বলা হয়েছে রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রম করারাত কেন দিনকে অতিক্রম করতে যাবেরাত আর দিন কি সূর্য ও চন্দ্রে মতো গতিশীল যে একটা আরেকটাকে অতিক্রম করবেকিন্তু কুরআন রাত ও দিনকে সূর্য ও চন্দ্রের মতো গতিশীল হিসেবে বর্ননা করেছে বিভিন্ন আয়াতে। (পরে এসম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে)
অর্থাৎ কুরআন এই আয়াতটিতে উল্টাপাল্টা কথা বলেছেকিন্তু জাকির নায়েক এই উদ্ভট কথাবার্তার আয়াতগুলো দিয়েই গুজামিল দিয়ে কুরআনকে বিজ্ঞানময় প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে এবং মিথ্যে বলে ও চতুরতা করে মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে  
জাকির নায়েক এরপরে বলেছে, “আর এরা দুটোই সূর্য এবং চাঁদ, গতিশীল আর নিজ অক্ষকে প্রদক্ষিন করে
এই আয়াতে বলা হয়েছে রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র এরা প্রত্যেকে নিজ অক্ষকে প্রদক্ষিন করেকিন্তু আমরা জানি সূর্য চন্দ্র নিজ অক্ষে প্রদক্ষিন করলেও দিন রাত নিজ অক্ষকে প্রদক্ষিন করে নাকারণ রাত দিনের সূর্য ও চন্দ্রের মতো নিজ নিজ অক্ষ নেইকিন্তু কুরআনে সূর্য চন্দ্রের মতো রাত দিনও নিজ অক্ষকে প্রদক্ষিন করে বা নিজ কক্ষপথে সন্তরন করে এই কথাটি বলা হয়েছেকারন কুরআন লেখন ধরেই নিয়েছে সূর্য আর চাঁদের মতো দিন রাতেরও গতিপথ আছেরাত দিন গতিশীল নয় এই কথাটি কুরআন লেখক জানতো না বলে কুরআনে এই ভুল কথাগুলো বলেছেকিন্তু জাকির নায়েক শুধু সূর্য ও চন্দ্রের নিজ কক্ষপথে সন্তরন করে এই অংশটুকু নিয়ে রাত দিনের কথা এড়িয়ে গেছেঅর্থাৎ জাকির নায়েক কৌশলের আশ্রয় নিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে

এরপর জাকির নায়েক সূরা ইয়াসিনের ৩৮ নাম্বার আয়াতটি উল্লেখ করেছে,
সূর্য ভ্রমণ করে ওহার নির্দিষ্ট পথে নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে
জাকির নায়েক দাবী করেছে, এখানে মুসতাকার অর্থ একটি নির্দিষ্ট গন্তব্য বা নির্দিষ্ট সময়
আবারও জাকির নায়েক একটি শব্দের দুটো অর্থ উপস্থাপন করে প্রতারণা করার পথ তৈরী করেছেকোন শব্দের একাধিক অর্থ থাকতেই পারে, এটাই ভাষার সাধারণ বৈশিষ্ট্যকিন্তু যখন কোন শব্দ কোন একটি বাক্য ব্যবহার করা হয় তখন শুধু ওই শব্দটি দ্বারা একটা নির্দিষ্ট অর্থই বুঝানো হয়তাই এখানে মুসতাকার অর্থ হয় নির্দিষ্ট গন্তব্য হবে না হলে নির্দিষ্ট সময় হবেকিন্তু সব অনুবাদকই এখানে নির্দিষ্ট গন্তব্য এই অর্থটিই ব্যবহার করেছেআর বুখারী, ভলিউম ৪, অধ্যায় ৫৪, নং-৪২১ হাদিসটি অনুযায়ী এই আয়াতে নির্দিষ্ট গন্তব্য এই অর্থটিই ব্যবহৃত হয়েছেসুতরাং জাকির নায়েকের ভিন্ন অর্থ এনে কুরআনের অর্থ পরিবর্তন করে ভিন্ন অর্থ আনার কোন সুযোগই নেইসুতরাং অনুবাদ নিয়ে জাকির নায়েক এখানে প্রতারণা করতে পারবে নাপ্রতারক জাকির নায়েকের হাত ওই হাদিসটি বন্ধ করে দিয়েছে

জাকির নায়েক এরপর বলেছে, বিজ্ঞান বর্তমানে জেনেছে যে, সূর্য সৌরজগতকে নিয়ে বিশ্বজগতের একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টের দিকে যাচ্ছে যেটাকে জাকির নায়েক দাবী করেছে বিজ্ঞানীরা নাকি সেই পয়েন্টকে সোলার এপেক্স বলেজাকির নায়েক আরো দাবী করেছে সূর্য নাকি ওই পয়েন্টের দিকে ১২ মাইল বেগে যাচ্ছেজাকির নায়েকের দাবী সূর্য যে পয়েন্টের দিকে যাচ্ছে সেই পয়েন্টের নাম কন্সোলেশন অফ হারকিউলিস

জাকির নায়েক কুরআন কে বিজ্ঞানময় বানাতে কুরআনের অর্থেরতো পরিবর্তন করেছেই, তার উপর তার মন গড়া ব্যাখ্যা দাড় করেছেআর এখন বিজ্ঞানকে ভূল ভাবে উপস্থাপন করে অপবিজ্ঞান ছড়াচ্ছে

সূর্য গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকারে (অথবা উপবৃত্তাকারে) প্রদক্ষিন করেসূর্যের প্রতি বার গ্যালাক্সিকে পরিভ্রমন করতে ২২৫ মিলিওন বছরেরও বেশী সময় লাগেআর সূর্যের গ্যালাক্সিকে পরিভ্রমন করার সময় এর যাত্রা পথে বা কক্ষপথে গ্যালাকটিক প্লেনে (গ্যালাক্সিকে একটা সিডি বা ডিভিডি ডিস্কের সাথে তুলনা করলে ডিস্কের প্লেটের মতই হলো গ্যালাক্সির প্লেন) একবার উপরের দিকে উঠে এবং আরেকবার নিচের দিকে নামেপ্রতিবার গ্যালাক্সিকে পরিভ্রমনের সময় সূর্য প্রায় তিন বার (২.৭ বার) উঠা নামা করেআর সূর্য গ্যালাক্টিক প্লেনে প্রতিবার উঠানামার সময় যে দিকে ভ্রমন করতে থাকে সেই দিকের নির্দিষ্ট একটা বিন্দুকে কেন্দ্র করে সূর্য উঠানামা করেযে বিন্দুটিকে কেন্দ্র ধরে সূর্য চলতে থাকে সেই বিন্দু অভিমূখে সূর্যের চলার পথকে সোরাম এপেক্স বলেআমাদের গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করে সূর্য বৃত্তাকার পথে পরিভ্রমন করছে অনেকটা গ্রহগুলোর সূর্যকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকারে (বা উপবৃত্তাকারে) পরিভ্রমন করার মতকিন্তু গ্রহগুলো যেমন শুধু একটি নির্দিষ্ট সরলরৈখিক ভাবে ঘুরে, সূর্য গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে সেরকম সরলরৈখিক পথে চলে নাসূর্য প্রতিবার গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে সরলরৈখিক পথে চলার সময় আবার এর যাত্রা পথে উপরে নিচেও নামা উঠা করতে থাকেফলে গ্যালাক্সিতে সূর্যের গতিপথ গ্রহদের গতিপথের মত সরলরৈখিক বৃত্তাকার না হয়ে ঢেউ খেলানো বৃত্তাকার পথ হয়আর এই ঢেউ খেলানো পথে সূর্য যে দিকে উঠতে থাকে অথবা যে পথে নামতে থাকে সেই পথটিতে প্রতিবার উঠা বা নামার সময় একটি বিন্দুকে কেন্দ্র ধরে নিয়ে সূর্য প্রতিবার উঠা নামা করেসূর্য যে সময়ে উঠা বা নামার সময় যে নির্দিষ্ট বিন্দুটির অভিমুখে যেতে থাকে অর্থাৎ চলতে থাকে সেই বিন্দুটি বরাবর সূর্যের গতিপথকেই সোলার এপেক্স বলে
ফলে সোলার এপেক্স বা সূর্যের একটি বিন্দু বরাবর গতিপথ সব সময় পরিবর্তন হয়কারণ সূর্য যে সময়ে গ্যালাক্টিক প্লেনে উপরের দিকে উঠতে থাকে সেই সময়ের সোলাম এপেক্স আর পরবর্তীতে সূর্য গ্যালাক্টিক প্লেনে নিচের দিকে নামার সময় সোলার এপেক্স বা সূর্যের নির্দিষ্ট বিন্দুর দিকে যাওয়ার গতিপথ সেটি সম্পূর্ণ বললে যাবেকারণ গ্যালাক্টিক প্লেনে সূর্যের উঠার সময়ে সোলার এপেক্স এবং পরবর্তি ধাপে নামার সময় সোলার এপেক্স সম্পূর্ন ভিন্ন হবেকারণ সূর্য প্রতিবার গ্যালাক্সিকে পরিভ্রমনের সময় কয়েকবার উঠানামা করে কিন্তু এর মধ্যে সূর্য অনেক জায়গা বা স্থান অতিক্রম করে ফেলেএবং উঠা নামার সময়ে সূর্যের গতিপথের দিক পরিবর্তন হয়ে যায়এমনকি সূর্যের একটা সোলার এপেক্স বরাবর চলা শেষ হলে নতুন সোলার এপেক্স শুরু হবেফলে সূর্যের সোলার এপেক্স বা নির্দিষ্ট বিন্দু অভিমুখে গমন প্রতিনিয়ত চলতেই থাকবে এবং প্রতিনিয়ত সোলার এপেক্স বদলে যেতে থাকবেসোলার এপেক্স কখনও গ্যালাক্টিক প্লেনের সাপেক্ষে উপরের দিকে এবং কখনও গ্যালাক্টিক প্লেনের সাপেক্ষে নিচের দিকে হবে
বর্তমানে সূর্য যে নির্দিষ্ট বিন্দু অভিমুখে যাচ্ছে সেটা অর্থাৎ বর্তমানের সোলার এপেক্সটা কনস্টেলেশন হারকিউলিস এবং স্টার ভেগার পাশাপাশি একটি কাল্পনিক বিন্দু অভিমুখি

কিন্তু জাকির নায়েক এতো কিছু না বুঝেই বা বুঝেও প্রতারণার উদ্দেশ্য বলেছে সূর্য সোলার এপেক্সের যে বিন্দুটির দিকে যাচ্ছে সেটির নামই কনস্টেলেশন অফ হারকিউলিসকিন্তু প্রকৃত পক্ষে সোলার এপেক্স কনস্টেলেশন অফ হারকিউলিস নয়; তবে সোলার এপেক্সের বিন্দুটি কনস্টেলেশন হারকিউলিস এবং ভেগা তারার পাশেই অবস্থিত একটা কাল্পনিক বিন্দু  

জাকির নায়েকের দাবী মোতাবেক সূর্য সোলার এপেক্সের যে বিন্দুটির উদ্দেশ্যে পরিভ্রমন করছে সেটিই সূরা ইয়াসিন-এর ৩৮ নাম্বার আয়াতে উল্লেখিত সূর্যের গন্তব্যস্থলকিন্তু সূর্যের গন্তব্যস্থল যে সোলার এপেক্স নয় সেটি বুখারী, ভলিউম ৪, অধ্যায় ৫৪, নং-৪২১ হাদিসটিই প্রমাণএই হাদিসটি অনুযায়ী সূর্যের গন্তব্যস্থল হলো আল্লাহর আরশের নিচে

আবার সোলার এপেক্সের যে বিন্দুটিকে জাকির নায়েক সূর্যের গন্তব্যস্থল বলে দাবী করেছে সেটি সূর্যের গন্তব্যস্থল হতে পারবে নাকারণ সূর্যের সোলার এপেক্স একটি লম্বা সময় পর পর বদলে যাবেকারণ সূর্য যখন গ্যালাক্টিক প্লেনের সাপেক্ষে উপরের দিকে উঠতে থাকবে সেই সময়ের সোলার এপেক্স এবং সূর্য যখন নিচের দিকে নামতে থাকবে সেই সময়ের সোলার এপেক্স সম্পূর্ন ভিন্নসূর্য যে পথকে অতিক্রম করে সেই পিছনের পথের কেন্দ্র বিন্দু অভিমুখি পথকে সোলার এন্টাপেক্স বলে
আর তাই সূর্যের নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থল বলতে সোলার এপেক্সের নির্দিষ্ট বিন্দু হতে পারবে নাকারণ সূর্য অনবরত গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরতে থাকে এবং সোলার এপেক্সের দিক পরিবর্তিত হতে থাকেসূর্য কখনই তার পরিভ্রমন বন্ধ করে নাআর তাই সূর্যেরও কোন গন্তব্যস্থল নেইসূর্যের কক্ষপথ আছে কিন্দু কোন গন্তব্যস্থল নেইকিন্তু হাদিস ও কুরআন অনুযায়ী সূর্যের একটা গন্তব্যস্থল আছে আর সেটা হলো আল্লাহর আরশের নিচেএই আয়াতটি দিয়ে এটাই বুঝানো হয়েছে
তাই জাকির নায়েকের দাবীর কোন ভিত্তিই নেইবরং জাকির নায়েক কুরআনের আয়াতের অর্থ পরিবর্তন করে এবং বিজ্ঞানকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে মিথ্যে কথা বলেছে ও প্রতারণা করেছে  

সব শেষে জাকির নায়েক বলেছে, “এই একই কথা বলা হয়েছে পবিত্র কুরআনের সূরা রাদের ০২ নাম্বার আয়াতেজাকির নায়েক একই কথা বলা আছে এই কথাটি দিয়ে বুঝাতে চেয়েছে যে, কনস্টেলেশন হারকিউলিস এবং সোলার এপেক্সের কথা সূরা রাদের ০২ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছেকিন্তু সূরা রাদের ০২ আয়াতে বলা হয়েছে, (আল্লাহ) সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়মানুবর্তী করেছে, প্রত্যেকটি নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবর্তন করে
অর্থাৎ এই আয়াতে কনস্টেলেশন হারকিউলিস বা সোরার এপেক্সের কথা বলা নেইএবং এটি দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলের কথাও বলা হয়নিবরং বলা হয়েছে সূর্য ও চন্দ্রের শুধু নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমনের কথাকিন্তু সেই নির্দিষ্টকাল শেষ হলে সূর্য কি করে বা কোথায় যায় সে সম্পর্কে এই আয়াতে কিছু বলা হয়নি

এছাড়া জাকির নায়েক বলেছে, সূরা ফাতির ১৩ নাম্বার আয়াত, সূরা লোকমানের ২৯ নাম্বার আয়াত এবং সূরা আল জুমার ০৫ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে,
"সূর্য এবং চন্দ্র ওহারা প্রত্যেকে পরিভ্রমন করে এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত।"

সূরা ফাতির ১৩ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে,
"(আল্লাহ) সূর্য ও চন্দ্রকে করেছেন নিয়ন্ত্রিত; প্রত্যেকে পরিভ্রমন করে এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত।"
সূরা লোকমানের ২৯ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে,
"(আল্লাহ) চন্দ্র ও সূর্যকে করেছেন নিয়মাধীন, প্রত্যেকটি পরিভ্রমন করে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত।"
সূরা আল জুমার ০৫ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে,
"(আল্লাহ) সূর্য ও চন্দ্রকে করেছেন নিয়মাধীন প্রত্যেকেই পরিভ্রমন করে এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত।"

অর্থাৎ জাকির নায়েকের উল্লেখিত সবগুলো আয়াতেই একথা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, সূর্য এবং চন্দ্র একটা নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমন করেঅর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্র একটা নির্দিষ্টকাল পর্যন্তই পরিভ্রমন করে
তাহলে প্রশ্ন আসে এই নির্দিষ্টকাল বা সময়টা শেষ হলে সূর্য ও চন্দ্র কোথায় যায়? এবং এই নির্দিষ্টকাল বা নির্দিষ্টসময় শেষ হলে সূর্য ও চন্দ্র কি করে?
এর চমৎকার উত্তর আছে পোস্টে উল্লেখিত বুখারী শরীফের হাদিসটিতেযেখানে বলা হয়েছে, সূর্য অস্ত যাবার পর সূর্য আল্লাহর আরশের নিচে গিয়ে সেজদারত থাকে
তাহলে এই হাদীস অনুযায়ী সূর্যের গন্তব্যস্থল হলো আল্লাহর আরশের নিচেএবং এটি নির্দিষ্টকাল পরিভ্রমন শেষে আল্লাহর আরশের নিচে গিয়ে সেজদা দেয় এবং পুনরায় উদিত হবার জন্য অনুমতি চায়
সুতরাং স্পষ্ট ভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, কুরআন এবং হাদিস সূর্যের গতিশীলতা নিয়ে অবাস্তব এবং অবৈজ্ঞানিক কথা বলেছেতার মানে কুরআন ভুল ও মিথ্যা কথা বলেছে
অর্থাৎ কুরআন এবং হাদিসে সূর্যের পরিভ্রমন সম্পর্কে উল্টাপাল্টা কথা বলা হয়েছে যেটা অবাস্তব এবং অবৈজ্ঞানিককিন্তু জাকির নায়েক এই সব আয়াতগুলো দিয়ে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর চেষ্টা করেছেএবং এটা করতে যেয়ে সে কুরআনের আয়াতের অর্থকে সুবিধানুযায়ী পরিবর্তন করে নিয়েছে, কুরআনের ভিন্ন ও নতুন অর্থ করেছে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখেএবং সব শেষে উল্টাপাল্টা কথা বলে এবং বিজ্ঞানকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করে প্রচুর মিথ্যে কথা বলেছে এবং মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেযারা জাকির নায়েকের কথাকে বিশ্বাস করেছে তারা এভাবেই প্রতারক জাকির নায়েকের কাছ থেকে প্রতারিত হয়েছে
অর্থাৎ জাকির নায়েক কুরআনকে বিজ্ঞানময় প্রমাণ করতে যেয়ে অনেকগুলো মিথ্যে কথা বলেছে এবং মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে  

বি.দ্র.: মুসলমানরা রেগে যেতে পারে এবং প্রশ্ন করতে পারে কেন জাকির নায়েকের মিথ্যাচার ও প্রতারণা প্রকাশ করার জন্য লেখক উদ্বেগ হয়ে গেছেএর কারণে বলতে হবে, জাকির নায়েকের দ্বারা অগনিত মুসলমান প্রভাবিততারা বুঝে বা না বুঝে জাকির নায়েকের কথাগুলোকে অন্ধের মত বিশ্বাস করেকিন্তু জাকির নায়েক যে একটা মিথ্যেবাদী এবং প্রতারক সেটা জানতে পারলে অনেক মানুষ কুসংস্কার থেকে মুক্ত হতে পারবে
আবার জাকির নায়েকের কথাগুলো এবং মিথ্যেবাদিতা গুলো প্রত্যেকটি মুসলমানই তোতা পাখির মতো বারবার বলে থাকেআজ প্রত্যেকটা মুসলমানই জাকির নায়েকের মতো ভন্ড ও প্রতারকতারা কুরআনকে বিজ্ঞানময় প্রমান করতে কুরআনের নতুন নতুন অর্থ করে এবং অর্থ পরিবর্তন করে বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে নতুন অর্থ করে নতুন মুসলমানদেরকে সহজেই বোকা বানায়এবং কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে যেয়ে কুরআনের অর্থ পরিবর্তন করে কুরআনকে সংশোধন করে নতুন মুসলমান ও বোকা মুসলমানদেরকে বোকা বানিয়ে রাথেসেজন্যই জাকির নায়েকের মিথ্যেবাদিতা এবং প্রতারনা সবার কাছেই ফাঁস করে দেওয়া সবার দায়িত্বআর তাই জাকির নায়েকের মিথ্যাবাদিতা এবং প্রতারণা সবার সামনে প্রকাশ করাফলে জাকির নায়েকের মত ভন্ড প্রতারকদের কাছ থেকে ভবিষ্যতের মানুষগুলো সাবধান হতে পারবে এবং তাদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক করতে উৎসাহিত করা যাবে
জাকির নায়েকের মত মুসলমানগুলোই অপ-যুক্তি ও অপ-বিজ্ঞান ছড়ায়তাই মানুষের কাছে এদের মিথ্যেবাদিতা ও প্রতারনা উন্মুক্ত করে দেওয়া সবারই প্রধান দায়িত্ব

9 comments:

  1. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  2. ha ha ha ,,ses ja buja gelo nastik ra nastik hoy manush hote parena..

    ReplyDelete
  3. শালা বলদ একটা,,,,,,,বাচ্চাদের মত কথাবার্তা বলতেছে,,,,,!!!!!!

    ReplyDelete
  4. সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা।
    জাকির নায়েক সঠিক কথাই বলেছেন। আপনি বুঝতে ভুল করেছেন।
    আল্লাহ আপনাকে হেদায়েত করুন

    ReplyDelete
  5. নাস্তিকরা পবিত্র করআনে বিজ্ঞানের সূত্রগুলো লিপিবদ্ধ আকারে দেখতে চায় ।কিন্তু তাদের জানতে হবে যে মহান পবিত্র গ্রন্থ কোরআন প্রধানত একটি হেদায়েতের গ্রন্থ।এটি বিজ্ঞান কিংবা ইতিহাস গ্রন্থ নয়।মানুষের জাগতিক ও পারলৌকিক কল্যানের জন্য যেখানে প্রয়োজন বিজ্ঞান ও ইতিহাসর বিষয় টুকু আল্লাহ তায়ালা তা তুলে ধরছেন।বিজ্ঞানের কোন কোন বিষয় আল্লাহপাক সরাসরি পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন আবার কোন কোন বিষয় সরাসরি উল্লেখ করেননি।বিজ্ঞানে আয়াত গুলো প্রজ্ঞার সাথে বুঝে নিতে হয়।যেমন নাস্তিকরা জানতে চায় বিগ ব্যাংয়ের আগে আল্লাহ কোথায়া কিভাবে ছিলেন ?আল্লাহ বিগ ব্যাংয়ের আগে ছিলেন তা কোরআনে উল্লেখ করেছেন।কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব তা উল্লেখ করেননি।আল্লাহপাক বলেন তিনি সৃষ্টির আগে ছিলেন এবং অন্তেও থাকবেন।এটি স্পষ্ট কি বিগ ব্যিংয়ের পূর্বাবস্থা নয়?তাছাড়া সুরা আম্বিয়র ৩০ এবং হা মীম সেজদার ১১ নং আয়াতে বিগব্যংয়ের আদি রূপ উল্লেখ আছে
    Category

    ReplyDelete
  6. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  7. পৃথিবীর বুকে নাস্তিক-মুরতাদরা সারাজীবন নবী-রাসুলদের কাছে আল্লাহ তাআলার নির্দেশন দেখতে চেয়েছেন কিন্তু তাদেরকে নির্দেশন দেখানো হলে তারা সেটা কে অস্বীকার করেছেন আল কুরআন শুধু মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ না ,এটা এসেছে মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে, এটা কোন কবির কবিতা নয় আল কুরআন এসেছে গোটা মানবজাতির কল্যাণের জন্য গাইডলাইন হিসেবে সেই মহান পরাক্রমশালী আল্লাহর থেকে Islam is the complete code of life. আপনি কি ফেরাউন সম্পর্কে জানেন না যে ফেরাউনকে আল্লাহতালা এখনো পৃথিবীর বুকে অবিকৃত অবস্থায় রেখেছেন আপনাদের কাফিরদের নিদর্শনস্বরূপ আল-কুরআনে তাকে নিয়ে কি বলা হয়েছে আল কুরআনকে গভীরভাবে জানুন আল্লাহ আপনাকে হেদায়েত দান করুন আমীন।

    ReplyDelete
  8. তুমি যে কি বুজো, সেটাই আমার কাছে সন্দিহান। হায়রে মাথামোটা তুই তো কথাই গুছিয়ে লিখতে জানো না। তোর কোন যুক্তি আমার কাছে যুক্তি মনে হয় বরং হচ্ছে বৈজ্ঞানিক অপব্যাখ্যা। , ������মাদারটেক

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঠিক বলেছেন সে নিজে আসলেই মাথা মুটা,দাড়ি কমা কই কি আছে কোনটার ব্যবহার কিভাবে হবে কিচ্ছু না বুজে জগাখিচুরি পাকিয়ে পোস্ট করল নাকি বুঝেও অন্যের ধর্ম না জেনে বুঝে অপমান করতে চায়ল,আর কোন ড.ডিগ্রী নিয়ে এই অনলাইনে চিল্লাই সেই ইন্ট্রোডিউজ দিয়ে কথা বলুক আরেকজন ড.লোককে নিয়ে,এই যোগ্যতা থাকলে জাকির নায়েকের মত লাখ লাখ মানুষের সামনে দাড়িয়ে কথা বলুক,কথায় আছে কুত্তায় কামড়াতে আসলে পায়েই কামড়ায়তে পারে এর উপরে উঠতে পারেনা

      Delete