Translate

Search This Blog

বিশেষ সতর্কবার্তাঃ

এই ব্লগটি নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সন্দেহবাদী, মুক্তমনা এবং স্বাধীনচেতা মানুষদের জন্য। যারা যেকোন বিষয়ের সমালোচনা সহ্য করার মত ক্ষমতা রাখে। যদি কোন ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিক এই ব্লগটিতে আসে তবে তার ধর্মানুভূতি নামের অদ্ভূত দূর্বল অনিভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্লগ লেখক দায়ী থাকবে না। ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিকদের নিজ দায়িত্বে তাদের দূর্বল ধর্মানুভূতিকে সংরক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে। কারো ধর্মানুভূতি নামের অযৌক্তিক অনুভূতি আহত হবার জন্য কোন ক্রমেই ব্লগার বা লেখককে দায়ী করা যাবে না। যদি কোন অতি দুর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগে ভূল করে ঢুকে পরেন এবং তিনি তার অনুভূতিকে দূর্বল ভাবেন অর্থাৎ যিনি তার ধর্মের উপযুক্ত সমালোচনা সহ্য করতে অপারগ, তাকে বিনীত ভাবে এই ব্লগটি থেকে প্রস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পরেও যদি কোন দূর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগটিতে ঘুরাফেরা করেন এবং তার ফলে তার দূর্বল ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হন তবে কোন ক্রমেই এবং কোন ক্রমেই ব্লগের মালিক, 'আমি নাস্তিক' দায়ী থাকবে না।

Sunday, May 3, 2015

কেন আমি ইশ্বর বা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করি না ? (পর্ব ১)


মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া প্রত্যেক সন্তার যেমনটি শিক্ষা পায় ধর্মের বিষয়গুলোতে, আমিও ব্যতিক্রম ছিলাম নাপ্রতিটা মুসলিম পরিবারের মত আমাকেও শৈশবে কিছু ধর্মীয় বিশ্বাস ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিলপ্রত্যেকটি মুসলিম পরিবারের সন্তানদের মতই আমি জেনেছিলাম যে আল্লাহ হলো এই বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা এবং ইসলাম হলো আল্লাহর মনোনিত ধর্মপৃথিবীর সব ধর্মই মিথ্যে একমাত্র ইসলামই সত্য ধর্ম এবং আল্লাহই হলো একমাত্র বিশ্বজগতের সত্য সৃষ্টিকর্তা
প্রত্যেকটি মুসলিম সন্তানের মত আমাকেও শেখানো হয়েছে যে, নামাজ রোজা ইত্যাদি ইবাদত করলে বেহেশতে যাওয়া যায়, যেখানে আছে অনন্ত সুখ, মদ, হুরপরী ইত্যাদিআর তাই আল্লাহর ইবাদত করা অত্যন্ত জরুরী
আল্লাহর ইবাদত হলো, আল্লাহর গুনগান করা, কোন অপরাধ না করেও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, এটা দাও, ওটা দাও বলে আবদার করতে থাকা ইত্যাদি ইত্যাদিএবং আল্লাহ যত বড় অন্যায় কাজই করতে বলুক না কেন, চোখ কান বন্ধ করে সেই কাজ করাটাই হলো ইবাদত  


পৃথিবীর সব ধর্মই ভ্রান্ত; কেবল ইসলামই সত্যআর আমি এই সত্য ধর্মের পথে আছি এবং এর ফলে যত অপরাধই আমি করি না কেন, একদিন নিশ্চিত বেহেশতে যেতে পারবোঅন্য দিকে যত ভাল ও মহৎ কাজই করুক না কেন বিধর্মীরা সরাসরি জাহান্নামে যাবে এতে কোন ভুল নেইএটা ভেবে অহংকার বোধ করতাম যে আমি সত্য ধর্মেরই অনুসারীআর তাই আমি শ্রেষ্টদের অন্তর্ভুক্তআর বিধর্মীরা হলো নিকৃষ্টদের অন্তর্ভুক্তভাবতেই বুকটা দুই ইঞ্চি উঁচু হয়ে যেতো

আমি আর দশটা মুসলমানদের মতই বড় হচ্ছিলাম মুসলিম হিসেবেকিন্তু কেন আমি ইসলাম ছেড়ে দিয়ে নাস্তিকতার পথে পা বাড়ালাম এই কারণটিই এই পর্বগুলোতে পর্যায়ক্রমে বর্ননা করবো 
আমি কেন ইসলাম ছেড়ে নাস্তিক হলাম সেই কাহিনী এবং যুক্তিগুলোই এই পর্বগুলোতে উল্লেখ করবো ইসলামকে বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে এবং আমার জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা পর্যালোচনা করে
কেন আমি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিক হলাম?

আমাদের গ্রামে মোটামুটি বিভিন্ন মতবাদের মানুষের বসবাস ছিলআর এটা আমার মনকে পরবর্তীতে মুক্ত হতে সাহায্য করেছিলআমি অন্যান্য মুসলমানদের মতই শৈশবে শিখেছিলাম ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম, বাকী সব ধর্মই মিথ্যেপরে আমি এটাকে বিশ্বাস করেছিলাম সম্পূর্ণ মন থেকেআমি সত্য ধর্মের অনুসারী এবং আমি জান্নাতে যেতে পারবো, কিন্তু যারা ইসলাম বাদে অন্য ধর্মের অনুসারী তারা জান্নাতে যেতে পারবে না    

মুসলমানদের মতই ভাবতে ভালো লাগতো যে, আমি সত্য ধর্মের অনুসারী আর বাকীরা ভূল ধর্মের অনুসারী
আমাদের গ্রামে ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের বসবাস থাকার কারণে আমি মোটামুটি মিক্সড্ কালচারে বড় হয়েছিভিন্ন ধর্মাবলী হলেও আমার বন্ধুদের মধ্যে ধর্মীয় ভেদাভেদ ছিল না কখনইফলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সম্পর্কে কখনই আমার বিরুপ মনোভাব গড়ে উঠেনিবরং মুসলমান হয়েও যখন দেখতার একজন মুসলমান কোন হিন্দুকে নিয়ে নেগেটিভ মন্তব্য করছে তখন সেটার প্রতিবাদ করতে মন চাইতোআমি দেখতাম মানুষের ধর্ম ভিন্ন হলেও একজন মানুষ অন্যজন মানুষের থেকে ভিন্ন নয়সবার চিন্তা চেতনাই মোটামুটি একই রকম

একটু বড় হলে যখন কিছুটা ধার্মিক হতে শুরু করলাম তখন ধর্ম নিয়ে ভিন্ন মতের বন্ধুদের সাথে তর্ক করতামতাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করতাম যে আমার ধর্ম কতটা সত্য ধর্ম আর ওদেরটা কতটা মিথ্যে ধর্মএই নিয়ে দিনের পর দিন বন্ধুদের সাথে তর্ক করেছিতর্কে হারি জিতি সেটা বড় কথা নয়, তর্কের শেষে ভাবতাম আমার যুক্তি অকাট্ট এবং আমার বন্ধুরা সবাই ভ্রান্তির মধ্যে আছেআমি মাঝে মাঝে ওদের ভ্রান্তিতে থাকাটা নিয়ে গর্ব করতাম এটা ভেবে যে, আমি সত্য পথে আছি আর ওরা ভ্রান্তিতে আছেআবার মাঝে মাঝে ওদের যুক্তি দেখে ভাবতাম, ওরা কতটা ভ্রান্তিময় যুক্তি দেয় আর আমি কতটা যুক্তিপূর্ণ যুক্তি দেইএভাবেই অনেক দিন যায়
ধর্মীয় ব্যবধান কখনই আমাদের বন্ধুত্বের মাঝে ফাঁটল ধরাতে পারেনিআমরা সব সময়ের মতই একই সাথে ঘুরতাম, ফুটবল খেলতাম এবং একই সাথে স্কুলে যেতাম  

আমার বাবা খুব ধার্মিক ছিলযাকে বলে একে বারে গোঁড়া ধার্মিকজীবনের দীর্ঘ সময় ধর্মের পিছনে ছুটেছে বলে ভালো অবস্থানে থেকেও জীবনে ভালো কিছু করতে পারেনিধর্মের পিছনে পুরো সময় ব্যয় করাতে পরিবারের প্রতি খুব একটা খেয়াল রাখতে পারেনিফলে আমাদের পরিবারে সব সময়ই একটা আর্থিক নাজুক অবস্থা বিরাজ করতোঅবশ্য জীবনের শেষ সময়টাতে বাবা পরিবারকে গুছিয়ে নিতে পেরেছিল বলে আজ আমরা মোটামুটি ভালো অবস্থানে আছিকিন্তু যদি সে ধর্মের পিছনে সময় অপচয় না করে জীবনের পিছনে সময় কাজে লাগাতো তবে আমরা অনেক ভালো অবস্থানে থাকতে পারতামশুধুমাত্র বাবার ধর্মীয় গোঁড়ামীর জন্যই সে কিছু করতে পারেনিআর এটা আমি নাস্তিক হবার পরে খুব ভালো ভাবে উপলব্ধি করতে পারি

বাবা ছিল প্রচন্ড রকমের গোঁড়ামীপূর্ণ মানুষসব মুসলমানদের মত সেও নিজে যা বুঝতো সেটাকেই একমাত্র সত্যি ও ভালো মনে করতোকারো কথাই শুনতে চাইতো নানিজে যেটা ভালো মনে করতো সেটাকেই সব সময় প্রাধান্য দিতআর পরিবারের সবাইকে ধর্ম-কর্ম করার জন্য চাপ দিতো
এভাবেই ধর্মীয় গোঁড়ামীপূর্ণ অবস্থায় বড় হয়েছি আমরা ভাই-বোনরা
আব্বা ঢাকার এক সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ছিলকিন্তু আমরা বাড়িতে থাকতামবাবা ধর্মের জন্য সবটা সময় ব্যয় করতো বলে ঠিক ভাবে বাড়িতেও যেতো নাআর বাড়িতে আসলে একটা উৎসব উৎসব আমেজ বিরাজ করতোবাবা এলে আমার খুব ভালো লাগতোপ্রতিবার বাবা বাড়িতে যাওয়া মানেই একটা উৎসব উৎসব আনন্দ বিরাজ করাআর বাবাকে আমরা ভাইবোনরা পীরের মতো মহামানব মনে করতামবাবা মানেই ছিল আমাদের কাছে পীর আউলিয়ার মতো সম্মানিত ব্যক্তিএবং সেভাবেই আমরা সবাই বাবাকে সম্মান ও ভয় পেতাম
ফলে বাবা যতদিন বাড়িতে থাকতো ততদিন ভয়েই নামাজ কালাম পড়তে যুদ্ধ শুরু করে দিতামবাবা চলে গেলেই আগের মতো অবস্থা
আমাদের মা ততটা ধার্মিক ছিল নাযদিও নিজে নামাজ পড়তো ঠিক ভাবে কিন্তু কখনই আমাদেরকে নামাজের জন্য চাপ দিতো নাআর আমরা সেই স্বাধীনতাটুকু ভোগ করতাম
আমার বাবা গোঁড়া ধার্মিক হলেও আমরা কোন ভাইবোনই ততটা ধার্মিক ছিলাম না কখনইআমার বড় বোনটা শুধু ধার্মিক হয়েছিল আর আমরা সবাই ছিলাম ধর্মের ক্ষেত্রে উদাসীন
এভাবেই যাচ্ছিল আমাদের দিন 

কিছুটা বড় হবার পরে হঠাৎ করে আমি বেশ ধার্মিক হয়ে উঠলামযদিও আমরা বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় খুব ধর্ম-কর্ম পালন করতাম; কিন্তু বাকী সময় আমরা ধর্মকর্মে পুরোপুরি উদাসীন থাকতামকিন্তু আমি একটা সময় প্রচন্ড রকমের ধর্মের প্রতি ঝোকে পড়লামধার্মিক হয়ে একটা বিষয় উপলব্ধি করলাম যে, আমি নামাজি এবং আমি নেক বান্দাআর এটা নিয়ে মনে মনে গর্ব করতামযখন আমি আমার অ-নামাজি বন্ধুদের দেখতাম তখন মনে হতো ওরা খুব একটা ভালো মানুষ নাআমি অনেক ভালো মানুষআর তাই আমি ওদের থেকে অনেক সম্মানিত মানুষ এবং আমি ওদের থেকে উন্নত মানুষযতদিন আমি নামাজি ছিলাম ততদিন আমার মধ্যে এই অহংকারটা কাজ করতোকিন্তু যখন আমি কৈশর পার করে যৌবনে পুরোদমে পা রাখলাম তখন বিড়ি খাওয়া থেকে শুরু করে স্কুল ফাকি দেওয়া, মেয়েদের সাথে টাংকি মারা প্রভৃতি অপকর্মে জড়িত হলাম সময়টা আমি ধর্ম থেকে কিছুটা দুরে সরে গেলামযদিও আমি শুক্রবারে নামাজ মিস করতাম নাএবং রমজান মাস এলে পুরোদমে মুমিন বনে যেতামকৈশর ও যৌবনের শুরুতে যত প্রকার অপকর্ম আছে সব গুলোই করতে লাগলাম পুরোদমেসারা দিন ক্রিকেট খেলা, বিকেলে টাংকি মারতে যাওয়া, তাস খেলা আর বিড়ি টানা ছিল নিত্য দিনের কাজ

সেই সময়টাতে নামাজী বন্ধুদেরকে আমার মনে হতো বেয়াক্কেলশৈশবের কোন মজাই তারা করতো না, যৌবনের মজা করাটাতো তাদের জন্য জঘন্য কাজ ছিলআমরা সেই সব বন্ধুদেরকে বলদ বলে ডাকতাম আড়ালে আড়ালেএভাবেই সেই সময়টা পার করে দিলাম
কিছুদিন পরে যখন পড়াশুনায় মনোযোগী হয়ে উঠলাম ঠিক সেই সময়টাতে একটা রুটিনে চলে আসলামনামাজ পড়া শুরু করলাম আবার করেপরীক্ষা যতই কাছাকাছি চলে আসলো ততই যেন ধার্মিক হয়ে উঠতে লাগলামপরীক্ষার কাছাকাছি সময়টাতে একেবারে নামাজী হয়ে গেলামফজর নামাজ একটাও আর মিস হয় নাএভাবেই সেই সময়টা টুপি মাথায় দিয়ে কাটালাম
পরীক্ষা যখন শেষ হলো তখন যেন বন্দী দশা থেকে মুক্ত হলামআবার করে সেই স্বাধীন জীবনে ফিরে গেলামআগের মতই এলোমেলো চলাফেরা শুরু করে দিলামশুক্রবার ছাড়া আর মসজিদ মুখো হই নাএভাবেই কাটতে লাগলো জীবন

ইতি মধ্যে পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে দিলোফলাফল খুব একটা ভালো হলো নাপরীক্ষার আগের নামাজ কোন কাজ দিলো নাআমি পরীক্ষার আগে নামাজী হয়েও যা ফল করলাম, আমার মসজিদ না ছাড়া ধার্মিক বন্ধুরাও একই ফল করলোমোট কথা নামাজ পড়াটা কারো জন্যই কোন বাড়তি ফল এনে দিলো না

এর মধ্যে আমি পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসলামঢাকার নতুন পরিবেশ, সব কিছুই নতুন নতুননিজেকে কোন ভাবেই খাপ খাওয়াতে পারছিলাম নাতখন নামাজ পড়া শুরু করলাম পুরো দমেএভাবেই ঢাকার সময়গুলো যেতে লাগলো
স্কুলে ভর্তি হলাম। (এখানে উল্লেখ্য আমার শৈশব কৈশরের বাদঁরামীর জন্য পড়াশুনায় গ্যাপ পড়ে গেছিলো।) ক্লাস করা শুরু করলামবন্ধুবান্ধব জোটতে শুরু করলোস্কুল, কোচিং, বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডার চাপে পড়ে আমার নামাজী হওয়ায় ভাটা পড়তে লাগলোএবং এক সময় আবার শুক্রবার ছাড়া আর মসজিদ মুখো হতাম নাএভাবেই বছর ঘুড়ে যাচ্ছিলএক সময় পড়াশুনার চাপে পড়ে আবার পুরো দমে নামাজী হয়ে গেলামঢাকায় কিছু নামাজী বন্ধুও জুটে গেলোওরা সব সময়ই নামাজীঅতিরিক্ত ধার্মিক বলে প্রথমে ওদেরকে আমি এড়িয়ে চলতামকিন্তু আমি নামাজি হবার পর থেকে ওদের সাথে ঘনিষ্টতা বাড়তে লাগলোএসময় নামাজ এবং পড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম বলে আমার নরমাল বন্ধুদের সাথে কিছুটা দুরত্ব বেড়ে গেলোওরা সবাই আগের মতই চলতে লাগলোএকই ভাবে স্কুল, কোচিং ও বিকেলে আড্ডা দিতে থাকলো ওরাএদিকে আমি শুধু স্কুল, কোচিং এবং নামাজ নিয়ে পড়ে থাকলাম আমার নামাজী বন্ধুদের সাথে


এভাবে যতই পরীক্ষা ঘনিয়ে আসতে লাগলো, আমাদের নামাজ পড়ার মাত্রাও বাড়তে লাগলোনামাজে সারাক্ষন একই প্রার্থনা যেনো পরীক্ষায় ভালো ফল হয়দেখতে দেখতে পরীক্ষা এলো এবং নামাজ পরীক্ষা নিয়ে প্রচন্ড ব্যস্ত থাকলামপরীক্ষা শেষ হলো এবং আমি ফ্রি হয়ে আবার পুরোদমে নামাজী বন্ধুকে রেখে নরমাল বন্ধুদের সাথে মিশতে লাগলামএতে অবশ্য নামাজী বন্ধুরা আমাকে খেপাতে লাগলো নামাজ পড়ি না বলেকেই কেউ বললো, আমি নামাজী সেজেছিলাম শুধু পরীক্ষার ভয়েআর তাই আমার নামাজ কবুল হবে না, আমি পরীক্ষায় ভারো ফলাফল করতে পারবো না কিন্তু ওরা সত্যিকার নামাজী বলে ওরা ভালো ফলাফল করবে ইত্যাদি ইত্যাদিকিন্তু আমি সেসবে পাত্তা দিলাম না
যথারীতি রেজাল্ট হলো এবং আমার ফলাফল খারাপ হলোনিজেকে বুঝাতে চাইলাম যে আমি ঠিক ভাবে নামাজ পড়িনি এবং শুধু পরীক্ষার আগেই নামাজ পড়েছি এবং পরীক্ষা ছাড়া নামাজ পড়িনি বলে আমার রেজাল্ট খারাপ হয়েছেকিন্তু যখন দেখলাম যে আমার নামাজী বন্ধুরা যারা সব সময়ই নামাজ পড়তো তাদের রেজাল্টও ভালো হয়নিকিন্তু যারা নামাজের ধার ধারে না ওদের রেজাল্টই ভালো হয়েছে

এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম নাকারণ আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে, যেহেতু আমরা নামাজি তাই আমাদের রেজাল্টই ভালো হবে এবং যারা নামাজ পড়ে না তাদের রেজাল্টই খারাপ হবেকিন্তু বাস্তবতা হলো তার বিপরীত
এই ব্যাপারটা আমাকে ক্রমেই ভাবিয়ে তুললোআমি নামাজ পড়লাম এবং যারা সব সময়ই নামাজ পড়লো তাদের রেজাল্ট খারাপ হয় কিভাবে? আর যারা নামাজ পড়রো না তাদের রেজাল্ট ভালো হয় কিভাবে? আল্লাহ এমনটা করতে পারলো !
অনেক দিন এটা নিয়ে ভাবতে লাগলামক্রমেই নামাজের প্রতি আমি অনীহ হয়ে উঠলাম

এর মধ্যে প্রিটেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলোআমি পুরোপুরি পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে উঠলামস্কুল, কোচিং এবং বিকেলে বন্ধুদের সাথে কিছুটা সময় ব্যয় করা ছাড়া আর কোন বাজে কাজ করতাম নাসারাক্ষন পড়াশুনা করতামনামাজী বন্ধুরা অবশ্য আমাকে নামাজে যেতে বলতো কিন্তু আমি নামাজে গেলাম নাসব সময়ই পড়তে লাগলামআমি যেহেতু সাইন্সের ছাত্র তাই বিজ্ঞানটা ভালো করে পড়তে শুরু করলামআমি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করলাম যেসব প্রশ্ন আমি সেই শৈশব থেকে ভেবে আসছি সেই সব প্রশ্নের উত্তর আছে বিজ্ঞান বইয়েআস্তে আস্তে বিজ্ঞানটা বুঝতে লাগলাম এবং অবাক হয়ে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর ব্যাপারগুলো উপলব্ধি করতে পেরে রুমাঞ্চিত হতে লাগলামপুরো বিজ্ঞানের বিষয়গুলো আস্তে আস্তে গলাধঃকরন করতে লাগলাম পদার্থ, রসায়ন আমার কাছে পানির মতো সহজ এবং মধুর চেয়েও অমৃত মনে হতে লাগলোবিশ্বজগতের প্রকৃতিটা আমার কাছে স্পষ্ট হতে লাগলোযে পড়াশুনাকে ভয় পেতাম সেই পড়াশুনাই আমার কাছে আনন্দের হয়ে গেলোবিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়ি আর পৃথিবী আকশ চাঁদ তারা নিয়ে ভাবিএভাবেই দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে পরীক্ষা শেষ হলো টেরই পেলাম নাএই প্রথম পড়া এবং পরীক্ষায় প্রচন্ড মজা পেলামএবং বিজ্ঞানকে ভালোবেসে ফেললাম
ততদিনে মহাবিশ্বের প্রকৃতি, জীববৈচিত্র, শরীরের গঠন, মানুষের সাথে প্রানী ও উদ্ভিদের সম্পর্ক এবং এদের বিবর্তন সম্পর্কে আমার ধারণা স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছেএখন আর আমাকে ভাবতে হয় না আকাশের রং কেন কালো? আমি রং ধনু দেখে অবাক হয়ে আর সুবাহানাল্লা বলি নাকারণ আমি জানি আকাশ কেন নীল. রংধনুর সাত রংয়ের কাহিনী কি? কালো রং কেন কালো? গাছ কেন সবুজ? পাখি উড়ে কিন্তু আমাদের উড়তে হয় প্লেন দিয়ে, কিন্তু কেন? পৃথিবী কেন সূর্যের চারপাশে ঘুরে? কেন রাত দিন হয়? আমাদের জগতটা কিভাবে চলছে? ইত্যাদি হাজারটা প্রশ্নের উত্তর আমি জেনে গেছিআর তাই আমি আগের মত বলি না যে আকাশে ফেরেশতা বৃষ্টি ঘটায়কারণ আমি জানি কেন বৃষ্টি হয়মেঘ ডাকলে আমি আর আল্লাহর গজবের ভয় পাই নাকারণ আমি জানি কেন মেঘ ডাকেদিন রাত হয় কোন ফেরেশতার জন্য নয়, বরং দিন রাত পরিবর্তন হয় পৃথিবী ঘুরে বলেবিদ্যুৎ আসা যাওয়াতে এবং লাইট জ্বলাতে কোন ফেরেশতার দরকার হয় না, ইলেক্ট্রনের জন্যই বিদ্যুৎ আসে যায় এবং লাইট জ্বলে
এরকমের হাজারটা প্রশ্নের উত্তর আমি ইতিমধ্যেই জেনে গেছিতাই সব কিছুতেই আল্লাহ এবং ফেরেশতাদেরকে ডেকে আনা আমি কমিয়ে দিয়েছিএভাবেই আমি নামাজ ছাড়া চলতে লাগলাম

যথারীতি রেজাল্ট হয়ে গেলো তার কিছু দিন বাদেইআমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম আমার রেজাল্ট খুব ভালো হয়েছেআমার নরমাল বন্ধুদের চেয়েও আমি ভালো রেজাল্ট করেছিযেসব নামাজী বন্ধু ছিল আমার, ওরা আগের মতই কোন রকমের রেজাল্ট করলোঅথচ আমি এবার নামাজ না পড়ে বেশী সময় নিয়ে পড়াশুনা করায় অনেক ভালো রেজাল্ট করলামকিন্তু ওরা নামাজ পড়েও আগের মতই ফল পেলো
থেকে আমি বুঝতে পারলাম, নামাজ আসলে কোন ফলই দেয় নাবরং যেসব বন্ধু কখনও নামাজ মিস করে না তারা নামাজের পিছনে অনেক সময় ব্যয় করে বলে তারা খুব একটা ভালো রেজাল্ট করে নাকিন্তু যারা সেই সময়কে কাজে লাগায় তারাই ভালো রেজাল্ট করেএখানে কে নামাজি আর কে নামাজি নয় সেটা বড় কথা নয়বড় কথা হলো কে বেশী পড়াশুনা করে এবং সময়কে ঠিক ভাবে কাজে লাগায়নামাজ বা প্রার্থনা কোন ভুমিকাই রাখতে পারে না
আমার নরমাল বন্ধুরা আগে যেমন ভালো রেজাল্ট করতো এখনও তেমনি ভালো রেজাল্ট করেছেআর নামাজী বন্ধুরা যারা পাক্কা মুমিন তারা তাদের নামাজের শক্তিতে আলাদা কোন ফল পায়নি কখনই
এ থেকে আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম যে প্রার্থনা কোন কাজে আসে না কখনইযে বেশী পড়াশুনা করে মনোযোগ দিয়ে সেই ভালো ফলাফল করেসে নামাজ পড়ুক বা না পড়ুক সেটা দিয়ে কোন কিছু যায় আসে না
কিন্তু আমি বিশ্বাস করতাম আল্লাহ আছে কিন্তু আল্লাহ কোন প্রার্থনা শুনে তার জবাব দেয় নাআল্লাহ সত্য, ইসলাম সত্য কিন্তু তাই বলে আল্লাহ সব কিছুতে হস্তক্ষেপ করে নামানুষ যা করে তা নিজের দায়িত্বেই করেআল্লাহ প্রার্থনা কবুল করে না সত্য কিন্তু তার অস্তিত্ব আছে বলেই আমার পূর্ণ বিশ্বাস ছিল তখনপ্রত্যেকটি মুসলমানের মতই আমিও বিশ্বাস করতাম মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রসুল এবং কুরআন হলো আল্লাহর কিতাবপ্রত্যেকটি মুসলমানের মতই আমি বিশ্বাস করতাম কুরআন হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ট গ্রন্থ এবং কুরআনের মত কোন গ্রন্থই আজ পর্যন্ত কেই লিখতে পারেনি এবং পারবেও নাকারণ কুরআন হলো আল্লাহর লেখা পবিত্র গ্রন্থ 

একদিন ধর্ম নিয়ে আমার বড় বোনের সাথে কথা বলার সময় আপা বললো যে, বিজ্ঞানীরা নাকি ধর্ম বিশ্বাস করে নাকেউ একজন ধর্ম বিশ্বাস করে না এটা আমি এর আগে জানতাম নাআমি হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃস্টান এবং আরো অনেক ধর্মের অনুসারীদের কথা শুনেছি কিন্তু কেউ একজন ধর্ম মানে না সেটা আমি তখনও জানতাম নাআমি অবাক হয়ে আপাকে প্রশ্ন করলাম, তাহলে বিজ্ঞানীরা কুরআনকে কি বলে? কুরআনতো আল্লাহর বাণীকুরআনের কথা পড়েতো তাদের বুঝা উচিৎ যে এটা আল্লাহর বই?  
আপা উত্তরে বললো, ওরা কুরআনকে একটা সাহিত্য মনে করেসাহিত্য ছাড়া কুরআনকে তারা অন্য কিছু মানতে নারাজ
সাহিত্য বিষয়টা কি সেটা তখন আমি খুব ভালো ভাবেই জানিসেই অনেক আগে থেকেই আমি গল্প উপন্যাস পড়িএবং গল্পগুচ্ছ, দেবদাস, শ্রীকান্তর মত নামীদামী উপন্যাস পড়া আমার সেই সময়েই কমপ্লিটতাই আমি ততদিনে খুব ভালো করেই সাহিত্য কি সেটা জেনে গেছিলাম এবং সাহিত্যের রস সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা পেয়েছিলাম
ফলে আপার কথাটা আমাকে খুব ভাবিয়ে তুলতোআমি ভাবতে লাগলাম কুরআনকে কেউ কেউ সাহিত্য মনে করে ? দিনের পর দিন আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলামকুরআন পড়ে দেখলাম বাংলাতেএই প্রথম আমি কুরআন বাংলাতে পড়লামকারণ আমি জেনেছিলাম কুরআন হলো আল্লাহর বানী এবং এতে দুয়া দরুদ আছে আর দুয়া দুরুত হলো সম্পূর্ণ ঔষী একটি বিষয়আর তাই এগুলো বাংলাতে পড়ার দরকার নেই এগুলো আরবীতে পড়লেই নেকী (পূণ্য)আর তাই কখনই আমি কুরআন বাংলাতে পড়িনিকিন্তু যখন শুনলাম যে কিছু মানুষ কুরআনকে সাহিত্য মনে করে তখন কুরআন বুঝার জন্য বাংলাতে পড়া শুরু করলামএবং পরীক্ষা করে দেখতে চাইলাম এটি আসলেই কোন সাহিত্যর মতো কিনা?


কুরআন বাংলাতে পড়তে যেয়ে দেখলাম কুরআনের কথাগুলো একজন মানুষের কথার মতইআগে আরবীতে পড়তাম বলে বুঝতাম না যে কুরআনের কথাগুলো মানুষের কথার মতইআরবীতে কুরআন পড়ে এবং নামাজের দুয়া পড়ে ভাবতাম এগুলো ঔষী বাণীকিন্তু সেগুলোই বাংলাতে পড়তে গিয়ে দেখলাম এগুলো সাধারণ মানুষের লেখার মত কিছু কথাকুরআন পড়তেই থাকলাম আস্তে আস্তেএকটা সময় দেখলাম কুরআন কিছুটা গল্পের মতো করে লেখা, কিছুটা পুঁথি কাব্যের মতো করে লেখা এবং কিছুটা কবিতার মতো করে লেখা
ফলে আপার কথাটা সত্যি মনে হতে লাগলোআমি যেন বুঝতে পারলাম কেন কিছু মানুষ কুরআনকে সাহিত্য বলে মনে করেঠিক তখন থেকেই আমি সন্দেহ করতে শুরু করিআসলেই কি কুরআন আল্লাহর বাণী, সত্যিই কি কুরআনের কথাগুলো ঔষী কথা? তাহলে কি মুহাম্মদ (সাঃ) ভুল কথা বলেছে? সে কি মিথ্যে কথা বলেছে? কিন্তু সে তো আল-আমীন ছিল; তবে সে কেন মিথ্যে কথা বলবে?
এরকম নানা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগলোকিন্তু আমি তখনও পুরাপুরি নিশ্চিত বিশ্বাস করতাম যে আল্লাহ সত্য এবং মুহাম্মদ মিথ্যাবাদী নয়কুরআন আল্লাহর বাণীই  

সামাজিক বিজ্ঞান বই থেকে ধর্মের উৎপত্তির ইতিহাস থেকে জেনেছি যে, প্রাচীণ মানুষ ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্ন দেখতো এবং জেগে গেলে তাদেরকে বিছানায় আবিষ্কার করতোএ থেকে তারা ধারণা করে যে দেহ ঘুমিয়ে গেলে আত্মা দেহের বাইরে বেড়িয়ে আসে এবং সারা রাত ঘুরাফেরা করে এবং সকালে দেহে ফিরে আসে এবং তখনই মানুষ ঘুম থেকে উঠে পড়েকিন্তু যেদিন আত্মা আর ফিরে না আসে সেদিনই সে মারা যায়
এ থেকে তারা আত্মার ধারণার সুত্রপাত করেএবং পরবর্তীতে তারা মৃত্যু ভয় থেকে শান্তনা পাবার জন্য কল্পনা করে নেয় যে আত্মা অমরদেহ মারা গেলেও আত্মা মারা যায় না
আর আত্মার ধারণা থেকেই পরকালের ধারণা মানুষ কল্পনা করেপরবর্তীতে কালে কালে মানুষ সূর্যকে দেবতা কল্পনা করতে থাকে এবং এরকম নানা দেবতার হাত ধরেই তৈরী হয় ধর্মের
এছাড়াও মানুষ প্রাচীণকালেও ভাবতো তারা কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় যাবে? বিশ্বজগত কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদিএসব প্রশ্নের উত্তর তাদের জানা সম্ভব ছিল না বলে তারা তাদের মনের মতো করে উত্তর তৈরী করেছেআর এভাবেই পৃথিবীতে ধর্মের উৎপত্তি ঘটেছে

ধর্মের উৎপত্তির এই ব্যাখ্যাকে আমার কাছে খুবই যৌক্তিক মনে হয়েছে
সামাজিক বিজ্ঞানের ধর্মের উৎপত্তির ব্যাখ্যা পেয়েছিপদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়নের মাধ্যমে জানতে পেরেছি বিশ্বজগত পরিচালিত হতে সৃষ্টিকর্তার কোন সাহায্য লাগে নাজীব বিজ্ঞানের মাধ্যমে জানতে পেরেছি মানুষের শারীরিক গঠন এবং অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদের মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমানআর এরা সবাই একই প্রাণী থেকে উৎপন্ন হয়েছেএমনকি মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর শারীরিক গঠন একই রকমআর তাই এটা সহজেই প্রমাণিত হয় মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী বিবর্তনের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগত সৃষ্টি করেছেঅর্থাৎ একই জীব থেকে সব জীবের সৃষ্টি হয়েছে
আরো জানতে পেরেছি যে জীব দেহ তৈরী হয়েছে জড় পদার্থ থেকেতাহলে এটা সত্য যে জীব প্রথমে জড় পদার্থ থেকে তৈরী হয়েছে এবং পরে সমগ্র জীবজগত সৃষ্টি হয়েছে
অর্থাৎ মানুষের উৎপত্তিতে সৃষ্টিকর্তার কোন ভুমিকা বা হস্তক্ষেপ নেই

কুরআন পড়ে জানতে পেরেছি যে, এটি অন্যান্য সাহিত্যের মতই একটা সাহিত্য যা মানুষের পক্ষেও রচনা করা সম্ভব
এবং সব চেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য ব্যাপার হলো, সৃষ্টিকর্তা মানুষের কোন প্রকার প্রার্থনাই কবুল করে নামানুষ যত প্রার্থনাই করুক না কেন সৃষ্টিকর্তা তার কোনই জবাব দেয় নাসুতরাং সৃষ্টিকর্তা সেই প্রার্থনা শুনতে পায় কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ তৈরী হয়এবং সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা কেন মানুষের প্রার্থনা শুনেও তার জবাব দেয় না সেটা যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি করেতাহলে কি সৃষ্টিকর্তা নেই?

এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আমি দিনের পর দিন ভেবেছিঅনেক চিন্তা ভাবনা করে এটা বুঝতে পেরেছি যে, যে ইসলামকে একমাত্র সত্য ধর্ম বলে সেই ছোট বেলা থেকেই বিশ্বাস করে এসেছি সেই ইসলামকে নিয়ে সন্দেহ করার মতো যথেষ্ট কারণ আছেএছাড়াও আরেকটা ব্যাপার আমাকে নাস্তিক হবার পথে চালিত করেছিল যে, মুহাম্মদ(সাঃ) যদি সর্বশেষ নবীই হয় তবে তার উপর নাযিল হওয়া কুরআনে সব জ্ঞানই থাকতে হবে যাতে ভবিষ্যতের মানুষের এবং সব সময়ের মানুষের জন্য এটি একটি নিদর্শন হয়ে থাকতে পারেকিন্তু আমি খুব ভালো করে লক্ষ করেছি যে কুরআনে শুধু ততটুকুই জ্ঞান বা চিন্তা ধারা লিপিবদ্ধ করা আছে যতটুকু মুহাম্মদ (সাঃ) জানতোযেমন মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সময়ের মানুষ শুধু আকাশ, চাঁদ-তাঁরা, সূর্য ও পাহাড় পর্বত ইত্যাদি সম্পর্কেই জানতোআর তাই কুরআনে পৃথিবী, আকাশ, চাঁদ, তাঁরা এসব মানুষের জ্ঞানের সীমার মধ্যে সীমিত বিষয়গুলোই বার বার উল্লেখিত হয়েছেসমগ্র কুরআনে এমন কোন কিছুই পাওয়া যায় না যেটা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সময়ের মানুষের জ্ঞানের বাইরে ছিল
আর তাই আমি এটা মানতে নারাজ ছিলাম যে মুহাম্মদ (সাঃ) এবং কুরআনের পরে কোন ওহী বা আল্লাহর বাণী আসবে নাআমার প্রায়ই মনে হতো কুরআনে যে জ্ঞান বা তথ্য আছে সেটা দেড় হাজার বছর আগের মানুষের জন্য উপযুক্ত হলেও একবিংশ শতাব্দির জন্য উপযুক্ত নয়বরং কুরআনে বিশ্বজগত সম্পর্কে সংকীর্ণ বা ভূল উপস্থাপনাগুলো আধুনিক মানুষের জন্য ছেলেমানুষী ধরনের
তাই আমার মনে হতো যদি ইসলাম এবং আল্লাহ সত্য হয়ে থাকে তবে অবশ্যই একজন আধুনিক নবীর আবির্ভাব হবার দরকার যে একটা আসমানী কিতাব আনবে যাতে আধুনিক বিজ্ঞান এবং বিশ্বজগত সম্পর্কে কুরআনের প্রাচীণ ধারণার বদলে আধুনিক ধারণাগুলো বর্ননা করা থাকবে এ যুগের মানুষের জন্য নিদর্শন স্বরুপ
কুরআনের তথ্যগুলো বড্ড প্রাচীণ এবং কুরআনের বিশ্বজগতের বর্ণনাটা একেবারে প্রাচীণ মানুষের চিন্তা ধারা এবং পর্যবেক্ষণের মতইআর তাই একটা আধুনিক নবী এবং একটা আধুনিক আসমানী কিতাব প্রেরণ করা হলে কুরআনের ভূল ও প্রাচীণ তথ্যগুলোর সংস্করণ হতোআর এটা আধুনিক মানুষের জন্য উপযুক্ত নিদর্শন হতো
আর তাই আমার মনে সন্দেহ ছিল যে মুহাম্মদ (সাঃ) যদি সর্বশেষ নবী হয় তবে কুরআনের অসম্পূর্ণ ও ভূল তথ্যগুলোর আর পরিবর্তন হবে নাএবং কুরআনের নিদর্শনগুলো প্রাচীণকালের মানুষের জন্য নিদর্শন হলেও আধুনিক মানুষের জন্য নিদর্শন বহন করতে ব্যর্থ আর তাই এই সন্দেহটা যৌক্তিক যে কুরআন কোন এক মানুষের রচিত এবং ইসলাম সত্য ধর্ম নয়; ফলে আল্লাহর ধারণাও সত্য নয়
প্রাচীণ ধ্যান ধারণার কুরআন দিয়ে আর যাই হোক সৃষ্টিকর্তার সত্যতা প্রমাণিত হয় না

ফলে বিজ্ঞান এবং ইসলাম ধর্মের উপরিউক্ত সামগ্রিক বিষয়গুলোই আমার নাস্তিক হবার প্রথম কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছিল
আর এই কারণগুলোর জন্যই আমি পরবর্তীতে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে বিশ্বাস করিনিএই কারণগুলোই আমার জন্য পরবর্তীতে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের বিরোদ্ধে প্রমাণ হিসেবে হাজির হয়েছিল

23 comments:

  1. ঝাটা দিয়ে পিটাইলেও ত ২ একটা কবিতার লাইন বের হইব না......।।আর বলে পবিত্র কুরআন যে কারও পক্ষে লেখা সম্ভব...............ছাগল

    ReplyDelete
  2. ঝাটা দিয়ে পিটাইলেও ত ২ একটা কবিতার লাইন বের হইব না......।।আর বলে পবিত্র কুরআন যে কারও পক্ষে লেখা সম্ভব...............ছাগল

    ReplyDelete
  3. এটা কোন কথা না। আপনি তাকে কাউন্টার দিয়ে বোঝান সে বিপদগামী, সেখান থেকে ফেরানোর পথ দেখান। --মনমাঝী ভাই
    ধন্যবাদ

    ReplyDelete
  4. ভাই, আপনি খুবি বোকা চোদা একজন মানুষ। এখনো জিবিত আছেন কিনা জানিনা। জিবিত থাকলে ভাল হয়ে যান। কারণ মরার পর ভাল হওয়ার সুযোগ নাই। আমরা আপনার জন্য দোয়া করি।

    ReplyDelete
  5. ভাই, আপনি খুবি বোকা চোদা একজন মানুষ। এখনো জিবিত আছেন কিনা জানিনা। জিবিত থাকলে ভাল হয়ে যান। কারণ মরার পর ভাল হওয়ার সুযোগ নাই। আমরা আপনার জন্য দোয়া করি।

    ReplyDelete
  6. আর আপনি ইসলাম টা ভাল জায়গা থেকে শিখতে পারেন নি। জানায় গলদ আছে, সেটা আপনার দোষ না। আপনি বলদ, তাই আপনার জানায় গলদ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।

    ReplyDelete
    Replies
    1. তুমি একটা বিশাল গাধা এবং ইডিয়ট, অন্তত একজন শিক্ষিত মানুষের ব্যাক্তিগত ব্যাপার থেকে তোমার অস্বাভাবিক লম্বা নাকটা দূরে রাখো।

      Delete
  7. খুব কষ্ট পেলাম। আপনার লেখা চমথকার কিন্তু আপনার শিমিত বিদ্দা আপনাকে এখানে আনেছে। মানুষ এর শরিলের গঠন প্রিথিবি সউরজগথ এগুল আপনি যেভাবে এত সহজ করে বললেন এটা মটেও এতো সহজ না। আশা করি আর গবেষনা করলে সথততা জানতে পারবেন। ভাল থাকবেন।

    ReplyDelete
  8. খুব কষ্ট পেলাম। আপনার লেখা চমথকার কিন্তু আপনার শিমিত বিদ্দা আপনাকে এখানে আনেছে। মানুষ এর শরিলের গঠন প্রিথিবি সউরজগথ এগুল আপনি যেভাবে এত সহজ করে বললেন এটা মটেও এতো সহজ না। আশা করি আর গবেষনা করলে সথততা জানতে পারবেন। ভাল থাকবেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. This comment has been removed by the author.

      Delete
  9. খুব ভাল লিখা। ধর্ম নামক হাস্যকর ব্যাপার থেকে মুক্ত হওয়ার প্রাথমিক পরজায়।তবে আর গভীরে যেতে হবে।

    ReplyDelete
  10. আমি খুব অবাক হলাম যে অনেকে আপনাকে আবার অন্ধকারে ফিরে যেতে কমেন্ট করছে। আমি আপনাকে স্বাগত জানাই অত্যন্ত পরিস্কার চিন্তা চেতনা ধারন করার জন্য এবং ধর্মের ভুলগুলো বোযহার জন্য। ইসরায়েলে পড়াশুনা করার সময় একটা ব্যাপার আমি বুঝেছি যে আমাদের বিজ্ঞান অ প্রযুক্তি যে গতিতে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে আগামি ১০-২০ বছরের মাথায় ধর্মগুলোর ১২টা বেজে যাবে, এবং আনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য। সাবধানে থাকবেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ১৫০০ বছরে কিছু হয়নি আর ১০ ২০ বছরে বারটা বেজে যাবে। ভেরি ফ্যান্টাসটিক। নাস্তিক দের কথা শুনলে হাসি পায়

      Delete
  11. আল্লাহ কোরআনে বলেছেন এ সে কিতাব যারা আদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস করে। আর এই বিশ্বাস কে সত্য হিসেবে প্রমান করতে হলে আমাদে কোরআন এর আরবি জানতে হবে বুঝতে হবে। ইসলাম সম্পর্কে বুঝতে হবে

    ReplyDelete
    Replies
    1. যে যার যার বিশ্বাস নিয়ে থাকুক সমস্যা নাই।সব চেয়ে বড় কথা হলো ধর্ম গুলো নিজ নিজ বক্তব্যের কারণেই প্রশ্ন বিদ্ধ।বর্তমানে যে যত ধর্ম নিয়ে পড়া শুনা করবে সে তত বড় নাস্তিক হবে,তবে অবশ্য বিঙ্গান সম্পর্কে অন্তত সাধারণ ঙ্গ্যান থাকতে হবে।

      Delete
  12. ভাই আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই আমি অনেক নাস্তিকদের সাথে কথা বলে তাদের ভুল ধারণা গুলো দূর করে দিয়েছি আমি আপনাকে আমার ফেসবুক আইডি দিয়ে দিতেছি এখানে আমাকে মেসেজ করে আমার সাথে কথা বলতে পারবেন আশাকরি আপনি আমার সাথে কথা বলার পর আস্তিক হয়ে যাবেন

    ReplyDelete
  13. 'A little knowledge leads away from God, much...leads towards Him'

    ReplyDelete
  14. ভাই, মহা পবিত্র আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করে আপনাকে যেন হেদায়েত দান করেন। আপনার লেখা পড়ে বুঝলাম আপনি খুবিই সীমিত জ্ঞানের অধিকারী। কোরআন বুঝে পড়ুন, জাহান্নামের আগুন থেকে বাচার চেষ্টা করুন।

    ReplyDelete
  15. Bhai tumi dhamrer bapare agyan

    ReplyDelete
  16. কোরআন এর একটাও আয়াত ১৪০০শ বছর ধরে কেউই মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেনি।
    পারলে বইলেন কোরআন এর এই আয়াত টা মিথ্যা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. সুরা নাহল আয়াত:১০১।
      আর যখন আমি একটি আয়াতের স্থানে পরিবর্তন করে আরেকটি আয়াত দেই এবং আল্লাহ ভাল জানেন সে সম্পর্কে যা তিনি নাযিল করেন। আর তারা বলে বস্তুত তুমি মিথ্যা রটনাকারী। বরং তাদের অধিকাংশই জানে না।
      "কোনটা কার বক্তব্য"

      প্রথম অংশ: "আর যখন আমি একটি আয়াতের স্থানের পরিবর্তন করে আরেকটি আয়াত দেই"
      এটা কার বক্তব্য? এটা আল্লাহর বক্তব্য হলে দ্বিতীয় অংশটা কার বক্তব্য?
      দ্বিতীয় অংশ: "এবং আল্লাহ ভাল জানেন সে সম্পর্কে যা তিনি নাযিল করেন"
      এটা কার বক্তব্য? এটা আল্লাহর বক্তব্য হলে এমন হতে পারত যে: "আর আমিই ভাল জানি সে সম্পর্কে যা আমি নাযিল করি"
      তাই নয় কি?
      আয়াতটা পড়ে বোঝা যাচ্ছে আয়াতের প্রথম অংশটা আল্লাহর বক্তব্য। আর দ্বিতীয় অংশটা নবীর বক্তব্য। আমি কি ঠিক বললাম না কি আমি ঠিকই বললাম?

      Delete