মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কুরআন। তাদের কেউ বলে এটা তাদের আরবীয়
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ নিজে রচনা করেছে এবং ২৩ বছর যাবত মুহাম্মদের কাছে প্রেরণ করেছে
জিব্রাইল নামের এক গোলাম বা ফেরেস্তার মাধ্যমে। আল্লাহ হলো আরবের ততকালীন প্রত্তলিক
(প্যাগান) ধর্মের প্রধান দেবতা আল্লাহ, যাকে চন্দ্র দেবতা বলা হতো। মুসলমানদের অনেকেই
বলে, জিব্রাইল আল্লাহর তরফ থেকে কুরআনের বাণীগুলো (যা লাওহে মাহফুজ নামের এক আল্লাহ
বিশেষ জায়গাতে রাখা হয়েছে) মুহাম্মদের কাছে নিয়ে আসতো এবং মুহাম্মদের কাছে পড়ে শুনাতো।
কিন্তু তৎকালে মুহাম্মদ ব্যতীত কোন মানুষই জিব্রাইল নামের কোন কিছুকে দেখেনি। মুহাম্মদ
বলতো তার কাছে জিব্রাইল আসতো সেটা সবাই অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছে।
প্রকৃতপক্ষে কুরআনের
সমস্ত আয়াতই মুহাম্মদের অনুসারীরা শুনেছে মুহাম্মদের কাছ থেকে। মুহাম্মদ মুখে কুরআনের
আয়াতগুলো বলতো আর তার সাহাবারা অর্থাৎ অনুসারীরা সেগুলো লিখে রাখতো এবং মুখস্ত
করে রাখতো। কিন্তু কেউ মুহাম্মদ ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে বা অন্য কোন কিছুর কাছ
থেকে এই আয়াতগুলো শুনতে পায়নি। মুহাম্মদ বলেছে তার বলা কুরআনের কথা বা আয়াতগুলো স্বয়ং
আল্লাহর কথা এবং এগুলো জিব্রাইল নামের এক আজব ও অদৃশ্য প্রাণী তার কাছে দিয়ে গেছে।
এভাবেই কুরআনের বাণীগুলো মানুষের হাত ধরে আজকের আধুনিক কুরআন রুপে বিদ্যমান হয়েছে।
কুরআন বই আকারে আকাশ থেকে পাঠানো হয়নি। অথবা কেউ জিব্রাইলকে
কুরআনের আয়াতকে আবৃতি করতে দেখেনি। বরং সবাই সর্বপ্রথম কুরআনের আয়াতগুলো মুহাম্মদের
মুখ থেকেই আবৃতি করতে দেখেছে। এজন্য তৎকালীন অন-ইসলামী মানুষগুলো মুহাম্মদকে এবং তার
বিবৃত কুরআনকে আল্লাহর বাণী বলে অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করতে চায়নি এবং তারা তা করেওনি।
শুধু মাত্র মুহাম্মদের অন্ধবিশ্বাসী অনুসারীরাই অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছে মুহাম্মদ আল্লাহর
নবী এবং তার মুখ নিঃসৃত কুরআনের বাক্যগুলো আল্লাহর বাণী। অর্থাৎ সমস্ত বিশ্বাসটিই দাড়িয়ে আছে তৎকালীন মানুষের অর্থাৎ মুহাম্মদের
অন্ধ ভক্তদের অন্ধবিশ্বাসের উপর।
আবার আমরা জানি কুরআনের আয়াতগুলো যেমন মুহাম্মদের মুখ থেকেই
প্রথম উচ্চারিত হয়েছে ঠিক সেভাবে কুরআনের বিচ্ছিন্ন একেকটি আয়াত মানুষের কাছ থেকে খুজে
খুজে বের করে তৎকালীন মুহাম্মদের অন্ধ অনুসারীরাই একে বইয়ের আকার দিয়েছে। অর্থাৎ কথিত
আল্লাহর বাণীগুলো মুহাম্মদের মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়ে মানুষের মুখে মুখে, পাথরে, গাছের
পাতায় প্রভৃতি মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আয়াতগুলো একত্র করে একটি বই বা গ্রন্থের
আকৃতি দিয়েছে মুহাম্মদের কিছু অন্ধ অনুসারী। অর্থাৎ কথিত আল্লাহর বাণীগুলো যেমন মুহাম্মদের
মুখ দিয়েই প্রথম উচ্চারিত হয়েছে, ঠিক তেমনি সেই বাণীগুলো একত্র করে বই আকারে যেমন
আল্লাহ বানাইনি তেমনি মুহাম্মদও বানায়নি। এমন কি মুহাম্মদ সেগুলোকে বই আকারে বাধাই
করে রাখতে কাউকেই পরামর্শ দেয়নি। কথিত আল্লাহর বাণীগুলোকে একত্র করে বই বানানোর পরামর্শটি
এসেছে মুহাম্মদের একজন অন্ধ অনুসারী ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমরের হাত ধরে। উমরই
প্রথম মানুষ যে কুরআনকে গ্রন্থ আকারে বাধাই করার পরামর্শ দেয়। সেই সময় খলিফা আবু বক্কর
উমরের পরামর্শ মতো কুরআনকে বই আকারে বানাতে চায়নি। কিন্তু উমর বারবার পরামর্শ দিতে
দিতে আবু বক্করকে রাজী করিয়েছিল। অর্থাৎ কুরআন যে একটি গ্রন্থ সেটা এসেছে সম্পূর্ণ
উমরের পরামর্শে। পরবর্তীতে ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান আবু বক্করের আমলে বানানো কথিত
আল্লাহর গ্রন্থ কুরআনকে সংশোধন, পরিমার্জন এবং পরিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক কুরআনকে
সংকলন করেছেন। অর্থাৎ যে কুরআনকে মুসলমানরা আল্লাহর বাণী আল্লাহর বাণী বলে চিৎকার চেঁচামেঁচী
করে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে সেটি যদিও মুহাম্মদের মুখ নিঃসৃত বাণী তথাপি এই বাণীগুলোকে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অবস্থায় এগুলোকে একত্রিত করা এবং একে গ্রন্থ বানানো এবং একে পরবর্তীতে
সংশোধন পরিমার্জন করা হয়েছে কিছু স্বাধারণ আরব মানুষের হাত দিয়ে।
অথচ মুসলমানরা দাবী করে এটি নাকি তাদের আরবীয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নিজের হাতে লেখা বই। কিন্তু আমরা দেখি এটি যেমন মুহাম্মদের মুখ থেকেই আসা কিছু আয়াতের সমষ্টি ঠিক একই ভাবে এটি মানুষই গ্রন্থের আকার দিয়েছে (তাও আবার ছড়িয়ে থাকা বিচ্ছিন্ন আয়াতকে খুজে খুজে বের করে আনার মাধ্যমে)। আবার মুসলমানরা দাবী করে কুরআনকে তাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহই সংরক্ষণ করেছে। আসলে কুরআনকে সংরক্ষণ যেমন মানুষের হাত দিয়ে ঘটেছে ঠিক সেভাবে কুরআন সংশোধিত হয়েছে মানুষের মাধ্যমেই। আধুনিক কুরআন যেটাকে মুসলমানরা অবিকৃত দাবী করে সেটি আসলে কিছু মানুষের দ্বারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু আয়াত বা কথার সমষ্টির রুপ যা পরবর্তীতে মানুষই সংশোধন করেছে এবং পরিমার্জিত আধুনিক কুরআন বানিয়েছে। এসবের কোনটিতেই তাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কোন প্রকারের নুন্যতম ভূমিকাও ছিল না।
কুরআন কখনই আল্লাহর বাণী হিসেবে প্রমাণিত ছিলো না। ঠিক তেমনি এখনও মুসলমানরা কুরআনকে আল্লাহর বাণী হিসেবে প্রমাণ দিতে পারেনি। আমরা যারা কুরআনকে আল্লাহ নামের আরবীয় সৃষ্টিকর্তার বাণী বলে মানিনা তারা দেখেছি কুরআনে এমন কিছুই নেই যা প্রমাণ করে কুরআন আসলেই কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী হতে পারে। কুরআন পড়লে এটা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, কুরআনে এমন কিছুই আসলে নেই যা মুহাম্মদ বা ততকালীন আরবের মানুষের জানা ছিল না। উপরন্তু কুরআনে এমন এমন কিছু ভূল ও মিথ্যা তথ্য দেওয়া আছে যা সে সময়ের একজন আরবীয় মানুষের ভূল ভ্রান্তিকর ধারনার সমষ্টি। অর্থাৎ কুরআন পড়লে একথা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে কুরআন আসলে তৎকালীন আরবের কোন এক স্বাধারণ মানুষের দ্বারাই সৃষ্টি হয়েছে। কোন সৃষ্টিকর্তার মাধ্যমে নয়।
কিন্তু তারপরেও কিছু অজ্ঞ, মিথ্যাবাদী ধর্মব্যবসায়ী এবং সর্বপরী কিছু অন্ধবিশ্বাসী কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ কুরআনকে তাদের কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর বাণী বলে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে। তাদেরকে হাজার হাজার প্রমান দেখানোর পরেও তারা তাদের ত্যাঁড়া গলাটা আরেকটু বাঁকা করে দাবী করতেই থাকে- কুরআনে কোনই ভূল নেই, কুরআন আল্লাহরই বাণী, পৃথিবীর কেউ এমন গ্রন্থ বানাতে পারবে না, কুরআনে সব বিজ্ঞানের জ্ঞান আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদেরকে কুরআনের প্রচুর ভূল দেখিয়েছে পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত জ্ঞানী মানুষরা। আমিও আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি কুরআন কোন ক্রমেই কোন অতিজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তার বাণী হতে পারে না। বরং কুরআন হলো দেড় দুই হাজার বছর আগের প্রাচীন আরবীয় মানুষের দ্বারা তৈরী।
এই পর্বে আরো একটি প্রমাণ হাজির করে দেখিয়ে দেবো কুরআন আসলে মানুষেরই লেখা একটি প্রাচীণ ধ্যান ধারণার বই।
প্রাচীণকালের মানুষ জানতো না কিভাবে মানুষের বংশবৃদ্ধি ঘটে।
ঠিক তেমনি আরবের মানুষও জানতো না আসলে মানুষের জন্ম হয় কিভাবে। তবে তৎকালীন আরবের
মানুষরা এতোটুকু জানতে পেরেছিল আসলে নারী পুরুষের যৌন মিলনের মাধ্যমেই মানুষের জন্ম
ও বংশবিস্তার ঘটে। এটা পৃথিবীর সব মানুষের মতই আরবের মানুষেরাও বুঝতে পেরেছিল। তারা
প্রকৃতির মধ্যে থাকা নানা রকম পশু পাখিদের মধ্যেও দেখেছিল যে, নারী পশু-পাখি এবং পুরুষ
পশুপাখির দৈহিক মিলন ছাড়া সন্তান জন্ম নেয় না। তাদের চারপাশে দৃশ্যমান সমস্ত পশু, পাখি
এবং মানুষই নারী পুরুষের মাধ্যমে জন্মে। এ থেকে ধারণা করেছিল পৃথিবীর সমস্ত পশু-পাখি
ও সমস্ত মানুষই নারী পুরুষের দৈহিক মিলন ছাড়া জন্ম নিতে পারে না। এবং অনেকেই এই ধারণা
থেকে ধরেই নেয় বিশ্বজগতে যা কিছুই আছে তার সব কিছুই আসলে নারী পুরুষ জাতিও দুইটি ভিন্ন
ভিন্ন প্রজাতি থেকে জন্ম নেয়। যেহেতু মানুষের জ্ঞান সেই সময়টিতে খুব অল্প ছিল তাই যেসব
কিছু তারা জানতো না সেসব কিছুর উত্তর খুজতে তাদের কল্পনার আশ্রয় নিতে হতো। ফলে নানা
রকম ভূল ও মিথ্যা ধারণা মানুষের মাঝে প্রচলিত ছিল। যেমন কেউ কেউ মনে করতো শুধু পশু
পাখি ও মানুষই জোড়া জোড়া করে সৃষ্ট। আবার কেউ কেউ মনে করতো পৃথিবীর সব কিছুই জোড়া
জোড়া সৃষ্টি। আবার কেউ কেউ মনে করতো বিশ্বজগতের সব কিছুই জোড়া জোড়া করেই সৃষ্টি।
অর্থাৎ তারা তাদের চারপাশে দেখেছে সব পশুপাখি এবং মানুষের বিস্তার হয় এক জোড়া থেকে
ঠিক তেমনি তারা ধরে নিয়েছে সমস্ত প্রাণী এমনকি সব কিছুই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি হয়েছে।
অর্থাৎ তাদের একটি মাত্র প্রমাণিত বাস্তব সত্য অভিজ্ঞতা থেকে
তারা কল্পনা দিয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা তাদের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না। তারা যেমন
দেখেছে তাদের আশে পাশের সব জীবই নারী পুরুষের জোড়া থেকে তৈরি হয়েছে তেমনি তারা ধরে
নিয়েছে সমস্ত জীবই বুঝি জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি তারা তাদের এই অভিজ্ঞতাটা
জীব ছাড়িয়ে জড়ের দিকেও কল্পনা করেছে। এবং মনে করেছে শুধু জীবই নয় বরং জড়েরও নারী পুরুষের
মতো জোড়া আছে।
যেহেতু প্রাচীণ মানুষের যথেষ্ট জ্ঞান ছিল না তাই তাদের কাল্পনিক
ধারণা দিয়ে তাদের জ্ঞান পিপাসা দুর করাতে কোন ত্রুটি ছিল না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে
আধুনিক যুগে এসেও কিছু মানুষ এই সব মিথ্যা ও ভূল তথ্যকে সত্যি ভেবে বসে আছে। (কারণ
প্রাচীণ মানুষের দ্বারা বানানো তাদের ধর্ম গ্রন্থে বলা আছে তাই তারা অন্ধের মতো সেই
ভূল কথাকেই বিশ্বাস করে।)
একই ধারণা কুরআনেও রয়েছে। যেহেতু মুহাম্মদ প্রায় দেড় হাজার বছর
আগে আরবের এক সাধারণ মানুষ তাই তৎকালীন আরবের মানুষের মত সেও বিশ্বাস করতো পশু পাখি
ও মানুষের যেমন জোড়া জোড়া আছে ঠিক একই রকম সমস্ত প্রাণীরও জোড়া জোড়া অর্থাৎ নারী
পুরুষের মতো জোড়া আছে। এমনকি সেও বিশ্বাস করতো বিশ্বজগতের সমস্ত বস্তুরই জোড়া অর্থাৎ
নারী পুরুষের মতো জোড়া আছে।
এজন্যই কুরআনে নানা আয়াতে এই ভ্রান্ত কথাটি বলা আছে।
কুরআনের সূরা আন নাবা-এর ৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
"(সৃষ্টির ধারা অব্যাহত রাখার জন্যে) আমি তোমাদের জোড়ায়
জোড়ায় পয়দা করেছি, " (অনুবাদ - হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ)
অর্থাৎ বলা হচ্ছে মানুষের বংশবৃদ্ধি করাতে তাদেরকে জোড়ায় জোড়ায়
সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষ যেন বংশবৃদ্ধি করতে পারে তার জন্য তাদের মধ্যে নারী ও পুরুষ
এই দুই প্রকারের মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকেরই একজন করে জোড়া বা বিপরীত
লিঙ্গের সঙ্গি রয়েছে।
বিষয়টি যদিও বিতর্কিত (কারণ পৃথিবীর পুরুষ ও নারী সংখ্যায় একটু
কম বেশী পরিমানে রয়েছে) তবুও তর্কের খাতিরে ধরে নেই পৃথিবীর সমস্ত জায়গার সব পুরুষের
জন্য একজন নারী রয়েছে (যদিও ইসলামে এক পুরুষ চারটা বিয়ে করতে পারে অর্থাৎ ইসলামের এই
বিধান কুরআন বিরুদ্ধ)। তবে বলতে হয় এটা বলার জন্য কোন সৃষ্টিকর্তা হতে হয় না। কারণ
একজন সাধারণ মানুষ তার চারপাশের পরিবেশ থেকে দেখে জানতে পারবে যে প্রতিটা দেখা প্রাণীই
বংশবিস্তার করে পুরুষ ও নারীর দৈহিক মিলনের মাধ্যমে। সে থেকে যদি সেই মানুষটি ধারণা
করে নেয় যে পৃথিবীর সব মানুষেরই একজন সঙ্গি রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটা পুরুষ বা নারীই তার
জন্য একজন নারী বা পুরুষ পাবে। যদিও এটি কেউ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবে না যে তার জোড়ার
নারী বা পুরুষটি সত্যিই পৃথিবীতে রয়েছে কিনা! তবুও যদি কেউ তার চারপাশের অভিজ্ঞতা থেকে
দেখে যে প্রতিটা পুরুষই একজন নারী পাচ্ছে। এবং তাদের জোড়া থেকেই সন্তান জন্ম নিচ্ছে।
তাহলে সে এই ধারনা করেই নিতে পারে যে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের জন্যই বিপরীত একজন মানুষ
রয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষেরই জোড়া রয়েছে। সত্য কথা বলতে একজন স্বাধারণ মানুষ তার
চারপাশের পরিবেশ দেখলে এ কথা ভাবতে বাধ্য হবে যে সত্যিই প্রত্যেক মানুষের একজন করে
জোড়া রয়েছে। আর তাই এই কথাটি কুরআনের মতো প্রাচীণ গ্রন্থে থাকায় অবাক হবার কিছুই
নেই। বরং প্রাচীণ মানুষ যে এমন একটি অপ্রমাণিত ধারণাই মনে পোষন করবে এটাই স্বাভাবিক।
এর জন্য কাউকে সৃষ্টিকর্তার মতো সর্বজ্ঞানী হবার দরকার পরে না।
সূরা শূরা, আয়াত ১১;
"তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং চতুষ্পদ জন্তুগুলোর মধ্য হতে (তাদের) জোড়া; এভাবে তিনি তাতে তোমাদের বংশ বিস্তার করেন; কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।" (অনুবাদ - প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান)
এই আয়াতে বলা হচ্ছে মানুষের যে জোড়াটি বানানো হয় অর্থাৎ নারীর জন্য পুরুষ এবং পুরুষের জন্য নারী সেই জোড়াটি আসলে সেই জোড়ার একজনের মধ্যে থেকেই বানানো হয়। আর সেটা বানানো হয় পুরুষের মধ্যে থেকে নারীকে।
এই আয়াতটির অনুবাদ দেখে মনে হতে পারে যে এখানে একজনের জোড়া সমস্ত মানুষের মধ্য থেকে বানানো হয় এই কথাটি বলা হয়েছে। কিন্তু কুরআনের অন্য আয়াত দেখলে বুঝা যায় এখানে তোমাদের মধ্য থেকে বলতে সমস্ত মানুষের মধ্য থেকে নয় বরং একজন মানুষের থেকে বুঝায়।
এখানে দুটোই বুঝাতে পারে। কারণ কুরআনের অন্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ আদমের বুকের পাঁজরের হাঁড় থেকেই তার নারী সঙ্গি হাওয়াকে সৃষ্টি করেছে (যেমন সুরা নিসার ১ নং আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ এক ব্যক্তি থেকে সমস্ত মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই ব্যক্তি থেকেই তার সঙ্গি হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়েছে)।
তাহলে এই আয়াত অনুযায়ী মানুষের জোড়া বানাতে পুরুষের হাড় থেকে নারী সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা জানি নারী আসলে পুরুষের বুকের হাঁড় থেকে তৈরী হয়নি বরং মানুষ পুরুষ ও নারীর শুক্রানু ও ডিম্বানু থেকে জন্ম নেয়। অর্থাৎ নারী পুরুষের জন্ম হয় তাদের পিতা মাতার শুক্রানু ডিম্বানুর মধ্য থেকে; কোন পুরুষের থেকে নারী হয় না। আর আমরা
জানি মানুষ এসেছে পূর্বতন প্রাণী থেকে পর্যায়ক্রমে বিবর্তনের মাধ্যমে। কোন এক মানুষ
থেকে নয়।
আবার যদি ধরে নেই যে এই আয়াতে নারী পুরুষের জোড়া, মানব জাতির মধ্য থেকে হয়, তবে এখানেও বলা যায় এই তথ্যটি জানার জন্য সৃষ্টিকর্তা হতে হয় না। সেই প্রাচীণ কাল থেকে মানুষ জেনে এসেছে নারী পুরুষের জন্ম মানব জাতির মধ্য থেকেই হয়। এই তথ্যটি একজন প্রাচীণ আরবের সাধারণ মানুষের জানার মধ্যেই রয়েছে এবং যে কোন আরবই এটি কোন বইয়ে লিখে দিতে সক্ষম। এর জন্য তাকে সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা হবার প্রয়োজন নেই।
ঠিক একই ভাবে চার পায়ের পশুদের পুরুষের সঙ্গি যে সেই পশুর প্রজাতি
থেকেই জন্ম নেয় সেটা প্রাচীণকালের মানুষও জানতো। এর জন্য হাজার হাজার বছর পুরোনো
মানুষদেরকেও কোন সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা হতে হয়নি।
সূরা রাদ, আয়াত ৩;
"তিনিই ভূতলকে বিস্তৃত করিয়াছেন এবং উহাতে পর্বত ও নদী
সৃষ্টি করিয়াছেন এবং প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করিয়াছেন জোড়ায় জোড়ায়। তিনি দিবসকে
রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। ইহাতে অবশ্যই নিদর্শন রহিয়াছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের
জন্য।" (অনুবাদ – Ministry of Religious Affairs of Bangladesh).
এই আয়াতে বলা হয়েছে প্রতিটি ফলকে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করা
হয়েছে। এই আয়াতটির পূর্বে উল্লেখিত আয়াতগুলোকে যদিও সত্যি বলে ধরা যেতে পারে কিন্তু
এই আয়াতটিকে সত্য বলে ধরা যায় না। কারণ ফল কখনই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি হয় না। মানুষ
ও পশু পাখিদের যেমন সন্তান জন্ম দিতে জোড়ার প্রয়োজন হয়, ঠিক তেমন ফলদের জোড়ার প্রয়োজন
হয় না। এটি একটি প্রাচীণ অজ্ঞ মানুষের অজ্ঞতাসূচক বক্তব্য। একথা ঠিক একজন প্রাচীণ আরব
মানুষ তার চারপাশের জোড়া থেকে সন্তান জন্ম নেওয়ার পদ্ধতিটি দেখে। কিন্তু তাই বলে যদি
সে ধরে নেয় মানুষ ও পশুপাখির মতো সব ফলেরও জোড়া থাকে তবে বলতে হবে সে প্রাচীণ আরবের
একজন স্বাধারণ অজ্ঞ মানুষ ছাড়া আর কিছুই নয়। এবং সেই কথাটিই যদি সে কোন বইয়ে (যেমন
কুরআনে) লিখে দেয় তবে সেই বইটিকে বলতে হবে প্রাচীণ আরবের একজন বোকা মানুষের দ্বারা
লেখা বই। আর তাই এই মিথ্যা কথাটি কুরআনে উল্লেখ থাকায় একথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় কুরআনের
লেখক একজন প্রাচীণ আমলের অজ্ঞ ও মূর্খ লোক ছাড়া আর কিছুই নয়।
কারণ পৃথিবীর ফলগুলোর কোন জোড়া থাকে না। প্রকৃতপক্ষে মানুষ
ও পশু পাখির মতো গাছদের জোড়া থাকে না। গাছ হলো এক প্রকারের জীব যাদের পুরুষ ও নারী
এই দুই প্রকারের লিঙ্গ বা জেন্ডার হয় না। গাছ হলো পুরুষ ও নারীর মিলিত রুপ। অর্থাৎ
গাছ নিজেই নারী এবং নিজেই পুরুষ। গাছ হলো উভলিঙ্গের জীব। যেমন গাছ থেকে যে ফুল হয়
সেটিতে পুরুষ ও নারী এই দুই প্রকারের ক্রোমোসোম তৈরি হয়। আর এটা হবার কারণ গাছটাই
আসলে পুরুষ ও নারীর মিলিত রুপ। মানুষ ও পশুপাখির মতো গাছের আলাদা নারী পুরুষ সত্ত্বা
নেই। কারণ গাছ নিজেই নারী নিজেই পুরুষ। অর্থাৎ গাছ হলো আলাদা প্রকৃতির। ফলে গাছ থেকে
যে ফল হয় সেগুলো নারী বা পুরুষ হয় না। সেগুলোও নারী পুরুষের মিলিত সত্ত্বা। এটি আধুনিক
মানুষ জেনেছে মাত্র কয়েকশো বছর আগে। তাই প্রাচীণ আরবের এক সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা
সম্ভব ছিল না যে মানুষ ও পশু-পাখির যেমন নারী পুরুষের আলাদা আলাদা অস্তিত্ব আছে এবং
এজন্য তাদের জোড়া থাকে, ঠিক সেভাবে গাছ বা ফলের আলাদা আলাদা নারী পুরুষের অস্তিত্ব
নেই। আর তাই ফলেরও কোন জোড়া নেই। সুতরাং তার পক্ষে কখনই জানা সম্ভব ছিল না যে ফলের
আসলে জোড়া হয় না। অর্থাৎ কুরআন লেখকের এই দাবীটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আর তাই কুরআন কখনই
কোন সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তার বাণী হতে পারে না। এটি যেহেতু প্রাচীণ মানুষের ভ্রান্ত
ধারণা বহন করছে তাই বলা যায় এটি অবশ্যই কোন প্রাচীণ মানুষের লেখা বই।
একটি কথা না বললেই নয় এই আয়াতটি একটি ভ্রান্ত ধারণার কারখানা। কারণ এই আয়াতে অনেকগুলো ভ্রান্ত কথা বলা হয়েছে। যেমন- এক. এখানে বলা হয়েছে পৃথিবীর বিস্তৃত হওয়ার কথা অর্থাৎ বলা হয়েছে পৃথিবী সমতল ভাবে বিস্তৃত। দুই. ফলের জোড়ার কথা বলা হয়েছে কিন্তু বাস্তবে ফলের কোন জোড়া হয় না। এটি প্রাচীণকালের অজ্ঞ মানুষের ভ্রান্ত ধারণা মাত্র। তিন. এই আয়াতে বলা হয়েছে দিনকে নাকি রাত দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এটা আসলে প্রাচীণ মানুষের বিভ্রান্তিমুলক একটি কথা। কারণ দিনকে আসলে রাত দিয়ে ঢেকে দেওয়া যায় না। কারণ দিন কোন বস্তু নয় এবং রাত কোন চাদর নয় যে রাতকে দিয়ে দিনকে ঢেকে দেওয়া যাবে। বুঝাই যাচ্ছে এটি প্রাচীণ মানুষের বিভ্রান্তিমুলক একটি কথা। রাত কোন বাস্তবিক অস্তিত্বশীল কোন পদার্থ নয়। রাতের কোনই অস্তিত্ব নেই। রাত হলো আলোর অনুপস্থিতিতে মানুষের (ও পশু-পাখির) মস্তিষ্কে তৈরী হওয়া একটি কাল্পনিক প্রতিচ্ছবি। তাই রাতকে দিয়ে দিনকে ঢেকে দেওয়া সম্ভব নয়।
দেখতে পাচ্ছি এই সম্পূর্ণ আয়াতটিই একটি প্রাচীণ অজ্ঞ-মূর্খ মানুষের বিভ্রান্তিকর একটি বক্তব্য। তাই এই আয়াতটি কোন ক্রমেই কোন সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তার বাণী হতে পারে না।
সূরা ইয়াসীন, আয়াত ৩৬;
"পবিত্র ও মহান সে সত্তা, যিনি সবকিছুকে জোড়ায় জোড়ায়
পয়দা করেছেন, (চাই তা) যমীনের উৎপন্ন উদ্ভিদ থেকে হোক, কিংবা (হোক) স্বয়ং তাদের নিজেদের
থেকে, অথবা এমন সব সৃষ্টি থেকে হোক, যাদের (সম্পর্কে) মানুষ (এখনো) আদৌ (কিছু) জানেই
না।" (অনুবাদ - হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ)
এই আয়াতে বলা হচ্ছে আল্লাহ মানুষ, উদ্ভিদ ও যা মানুষ জানে না
সেসবকেও জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছে। মানুষ যেসব জানে না এর মধ্যে মানুষের অজানা জীব
বা বস্তু হতে পারে। আমরা জানি মানুষের জোড়া থাকে কিন্তু উদ্ভিদের কোন জোড়া থাকে
না। উদ্ভিদ হলো এমন জীব যার কোন জোড়া (নারী পুরুষ আলাদা আলাদা) হয় না। কিন্তু প্রাচীণ
আমলের কুরআন লেখকের পক্ষে যেমন সম্ভব ছিল না এ তথ্যটি জানা ঠিক তেমনি তার ভ্রান্ত ধারণাটি
কুরআনে লেখা উচিত কিনা সেটাও সে বুঝতে পারেনি। ফলে তার ভ্রান্ত ধারণাটি কুরআনে লিখে
দিয়েছে। কুরআন লেখক আসলে বুঝতে পারেনি এক সময় মানুষ এতো জ্ঞানী হবে যে তার সেই ভূল
ধারণাটির সঠিক উত্তর মানুষ বের করে ফেলবে। আর তাই আজ আমরা জানতে পারছি সঠিক তথ্যটি,
সাথে সাথে বুঝতে পারছি কুরআনের লেখক একজন স্বাধারণ প্রাচীণ আরবের মানুষ ছিল।
এই আয়াতে আরেকটি বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে; বলা হয়েছে মানুষের
অজানা সব কিছুই নাকি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের অজানা জীব ও জড়
বস্তু সব কিছু্ই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি প্রাচীণ আরবের মানুষের
অজানা অনেক জীব যেমন এককোষী ব্যাকটেরিয়া এবং পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় প্রজননশীল
নানা প্রজাতির প্রাণীদের আসলে কোন জোড়া থাকে না। অর্থাৎ এই প্রজাতির প্রাণীর কোন
পুরুষ প্রজাতি থাকে না। এরা সবাই জোড়াহীন নারী। তাই বলা যায় কুরআনের এই দাবীটি সম্পূর্ণ
মিথ্যা। আবার বস্তুদের কখনও জোড়া হয় না। বস্তু হচ্ছে জোড়াহীণ জড় বস্তু। এদের পুরুষ
নারী হবার প্রশ্নও আসে না। সেটা কুরআন লেখকের পক্ষে কখনই সেই প্রাচীণ আরবের মাটিতে
দাড়িয়ে জানা সম্ভব ছিল না।
সূরা যূখরুফ, আয়াত ১২;
"আর যিনি সমস্ত কিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন, আর তোমাদের জন্য নৌকো জাহাজ ও গবাদি পশুর মধ্যে বানিয়েছেন সেগুলো যা তোমরা চড়ো," (অনুবাদ - ডঃ জহুরুল হক)
এই আয়াতটিতে বলা হচ্ছে শুধু জীবই নয় বরং সমস্ত জড় বস্তুরও জোড়া জোড়া অর্থাৎ নারী পুরুষ রয়েছে। এটা একটা পাগলের দাবী ছাড়া কিছুই নয়। একজন আরবের প্রাচীণ অজ্ঞ মানুষ, যে দেখেছে মানুষ ও পশু-পাখির নারী পুরুষ রয়েছে এবং তাদের জোড়া মিলে বংশবৃদ্ধি করে। কিন্তু তাই বলে যদি সে ধরে নেয় এই প্রক্রিয়া শুধু মানুষ, পশু-পাখির মধ্যেই স্বীমাবদ্ধ নয় বরং এটি উদ্ভিদ এবং জড় বস্তুর মধ্যেও ঘটে। অর্থাৎ মানুষ ও পশু-পাখির মতো উদ্ভিত ও জড় বস্তুও নারী পুরুষ এই ভিন্ন রকমের প্রজাতির মধ্যে দৈহিক মিলনের মাধ্যমে তাদের বংশবৃদ্ধি করে। তাহলে বলা যায় কুরআনের লেখক প্রাচীণ বিভ্রান্ত মানুষ ছাড়া আর কিছুই নয়।
সূরা যারিয়াত, আয়াত ৪৯;
"আমি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়, যাতে
তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পার।" (অনুবাদ - প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান)
এই আয়াতটি স্পষ্ট করে বলছে আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতিটি বস্তুই
জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ বিশ্বজগতের প্রতিটি বস্তুই নারী পুরুষে বিভক্ত।
আর তারাও মানুষ ও পশু-পাখির মতো দৈহিক মিলনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। যেভাবে মানুষ
ও পশু-পাখিদের সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে তারা দৈহিক মিলনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করতে পারে,
ঠিক সেভাবেই বিশ্বজগতের প্রতিটি বস্তুরই নারী পুরুষ এমন জোড়া আছে। আর তাই বলা যায়
তারা দৈহিক মিলনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধিও করে।
প্রাচীণ আরবের মানুষ দেখেছে তার চারপাশের মানুষ, পশু ও পাখিরা
জোড়ায় জোড়ায় নারী পুরুষে বিভক্ত। আর সেটা দেখে সে ধারণা করেছে সমস্ত প্রাণীই নারী
পুরুষে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি হয়েছে। তার কল্পনা একটু বাড়িয়ে সে ভেবেছে তাহলে নিশ্চয়
সব জীবই (প্রাণী ও উদ্ভিদ) এভাবে নারী পুরুষ জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি হয়েছে। এবং সে তার
কল্পনা একটু বাড়িয়ে দিয়ে কল্পনা করে নিয়েছে যেহেতু মানুষ ও পশুপাখিও নারী পুরুষের জোড়ায়
সৃষ্টি তাহলে নিশ্চয় সমস্ত জীব এমনকি সমস্ত জড় বস্তুও জোড়ায় জোড়ায় নারী পুরুষে বিভক্ত।
আর তার সেই বিভ্রান্তকর ধারণাটিই সে কুরআনে লিখে দিয়েছে।
সুতরাং কুরআনের এরকম ভ্রান্তকর তথ্য দেখে একথা প্রমাণিত হয় যে
কুরআন আর যাই হোক কোন সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা দ্বারা রচিত কোন গ্রন্থ নয়। কোন ক্রমেই
নয়।
প্রকৃতিতে জীবের দুই ধরণের প্রজনন ঘটে। যৌন প্রজনন এবং অযৌন প্রজনন। যৌন প্রজনন ঘটে দুটো জীবের মধ্যে বিপরীত প্রকারের লিঙ্গের মধ্যে যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে অথবা যৌন সঙ্গম ব্যতীত ভিন্ন প্রকারের যৌন উপাদান মিলিত হয়ে বা নিষিক্ত হয়ে প্রজনন ঘটে। অনেক উদ্ভিদের প্রজনন ঘটে যৌন প্রজনন প্রক্রিয়ায় দুই ভিন্ন প্রকারের ফুলের রেণুর মিলিত হয়ে নিষিক্ত হবার মাধ্যমে।
অপরদিকে অযৌন প্রজনন ঘটে কোন নারী পুরুষের যৌন মিলন ব্যতীত। এমনকি এদের মধ্যে নারী পুরুষের আলাদা আলাদা প্রকৃতি থাকে না। এ প্রক্রিয়ায় উদাহরণ হলো পার্থেনোজেনেসিস প্রজারির প্রাণীদের প্রজনন।
এককোষী প্রাণীগুলোর কোন পুরুষ বা নারী লিঙ্গ থাকা সম্ভব নয়। এরা বংশবিস্তার করে কোষ বিভাজনের মাধ্যমে। ফলে এদের জোড়া বলে কিছু নেই। আবার অনেক প্রকার গাছ আছে যারা তাদের ডাল বা পাতার মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। তাই এদেরও জোড়া বলে কিছু থাকে না। ব্যাক্টেরিয়া বা আর্কিয়া জাতীয় এককোষী জীব, নানা রকমের ছত্রাক, প্রোটোজোয়া, অ্যালজি, ইস্ট প্রভৃতি অনুজীবগুলোর কোন জোড়া নেই। এরা কোন প্রকারের জোড়া ছাড়াই বংশবৃদ্ধি করে।
গাছের ফুলের মাধ্যমে যৌন প্রজনন হলেও এদের আসলে প্রকৃতপক্ষে
কোন জোড়া থাকে না। গাছের ক্ষেত্রে যেটা হয়, জোড়াহীন গাছের মধ্যে ফুল হয়, আর ফুলেই
মধ্যে দুই প্রকারের রেণু হয় যা গাছকে ফল বা বীজ উৎপন্ন হতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে
গাছের কোন জোড়া থাকে না কিন্তু জোড়াহীন গাছে যে ফুল হয় তার মধ্যে দুই প্রকারের রেণু
হয় যার মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি ঘটে। অর্থাৎ গাছেরও আসলে কোন জোড়া নেই। আবার অনেক গাছ বা
উদ্ভিদ আছে যেগুলো ফুলের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে না। এদের শাখা, প্রশাখা, কান্ড বা
পাতার মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি ঘটে। অর্থাৎ এদের জোড়ার কোন প্রয়োজনই নেই।
আবার অনেক বহুকোষী প্রাণী আছে যাদের প্রজনন হয় স্পোরের মাধ্যমে।
এদের বংশবৃদ্ধিতে কোন জোড়ার প্রয়োজন নেই। কিছু কিছু অ্যালজি ও ছত্রাক এভাবে বংশবিস্তার
করে। কোন কোন জীব তাদের দেহের কোন অংশ ভাগ হয়ে বংশবিস্তার করে।
জোড়া ছাড়াই যে বহু প্রাণী বংশবৃদ্ধি করে অর্থাৎ তাদের জোড়া
থাকে না, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে পার্থেনোজেনেসিস ও এপোমিক্সিস প্রক্রিয়ায় বংশবিস্তার
করা অনেক প্রকারের প্রাণী। যেমন- কিছু কিছু প্রকারের মাকড়সা, কিছু কিছু কৃমি, শামুক
এবং সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হলো - হুইপটেইল টিকটিকি, কমোডো ড্রাগন নামের একপ্রকার প্রাণী
ইত্যাদি। প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতিতে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ আছে যারা পার্থেনোজেনেসিস ও এপোমিক্সিস
প্রক্রিয়ায় বংশবিস্তার করে। এবং চমকপ্রদ সত্য হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায় বংশবিস্তারকারী প্রাণীগুলোর
কোন পুরুষ থাকে না। অর্থাৎ এই প্রজাতির সবগুলো প্রাণীই হলো নারী।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এসব তথ্য সেই প্রাচীণ আরবের মাটিতে দাড়িয়ে
থাকা কোন মানুষের পক্ষেই জানা সম্ভব ছিল না। ফলে তারা জানতো না যে আসলে প্রকৃতিতে
যদিও মানুষ ও অন্যান্য বহু পশুপাখি যদিও জোড়ায় জোড়ায় বিদ্যমান রয়েছে তথাপি প্রকৃতিতে
বহু প্রাণী তথা জীব আছে যারা জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি হয়নি। যেহেতু এই তথ্যগুলো সে সময়ের
মানুষ হিসেবে কুরআন লেখকের জানা ছিল না তাই কুরআন লেখক তৎকালীন এই ভূল ও মিথ্যা তথ্যগুলো
কুরআনে লিখে দিয়েছে।
কুরআন লেখক যে শুধু প্রাণী বা জীবের জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টির কথা
বলেছে তাই নয় বরং সে ধরে নিয়েছিল অনেক জীবের মতো জড় বস্তুও জোড়ায় জোড়ায় অর্থাৎ নর
নারীতে সৃষ্টি হয়েছে। এবং সব বস্তুও বংশবিস্তার করে। তাই সে কুরআনে এই ভ্রান্ত ধারণাটিই
লিখে দিয়েছে।
আমরা জানি জড় বস্তুর জোড়া থাকাটা অর্থহীন কথা। কারণ কোন জড়
পদার্থেরই কোন জোড়া থাকে না। জড় পদার্থের জোড়া থাকা অসম্ভব। আর তাই পদার্থকে বা
বস্তুকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয় বলে কুরআন যে দাবী করে সেটা সম্পূর্ণ প্রাচীণ
আরবের অজ্ঞ মূর্খ মানুষের বিভ্রান্তিকর চিন্তা ভাবনার বহিঃপ্রকাশ।
এতোক্ষণে এ কথা প্রমাণিত যে কুরআন যেভাবে দাবী করেছে বিশ্বজগতের
সমস্ত প্রাণীই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি এবং সমস্ত বস্তুও জোড়ায় জাড়ায় সৃষ্টি। কিন্তু
আমরা জানি পৃথিবীতেই অনেক প্রাণী বা জীব আছে যেগুলোর কোনই জোড়া নেই। এবং জড় বস্তুর
কখনও জোড়া হওয়া সম্ভব নয়।
অর্থাৎ সন্দেহাতীত ভাবেই প্রমাণিত যে কুরআন আসলে মিথ্যা ও ভ্রান্তিকর
তথ্য দিয়েছে। যে তথ্যটা আসলে তৎকালীন আরবের সাধারণ মানুষের ধ্যাণ ধারণায় প্রচলিত ছিল।
আর তাই কুরআন কোন ক্রমেই কোন অতিক্ষমতাবাণ সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তার বাণী হতে পারে
না। যেহেতু কুরআন প্রাচীণ আরবের মানুষের ধ্যান ধারণাই কুরআনে বর্ণিত হয়েছে তাই বলা
যায় অবশ্যই কুরআন কোন মানুষ লিখেছে। যেহেতু কুরআনের প্রতিটি আয়াত মুহাম্মদের মুখ দিয়ে
নিঃসৃত হয়েছে তাই সন্দেহাতীত ভাবেই কুরআন মুহাম্মদের বাণী।
সুতরাং কুরআন আল্লাহর বাণী নয় বরং কুরআন হলো মুহাম্মদের বাণী।
(প্রমাণিত)
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ভূলে ভরা কুরআনকে
আধুনিক কালের মুসলমানরা বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে মরিয়া হয়ে থাকে। আর তাই অনেক মুসলমান আধুনিককালে এসে কুরআনের বস্তুর জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারটিতে মহা বিজ্ঞান খুজে পায়। কুরআনে বলা হয়েছে বস্তুর জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টির কথা আর তারা দেখায় বস্তু কি দিয়ে গঠিত সেটা জোড়ায় জোড়ায় কিনা সেটা। অর্থাৎ তারা দেখাতে চেষ্টা করে ঋনাত্মক ইলেক্ট্রন আর ধনাত্মক প্রোটন মিলে জোড়া হয়েছে। আর সেই জোড়াকেই আরবের অজ্ঞ মুর্খ কুরআন লেখক নাকি জোড়া বুঝিয়েছে। কিন্তু কুরআনে বলা হয়েছে বস্তুর
জোড়ার কথা অর্থাৎ পদার্থের জোড়ায় জোড়ায় থাকার কথা। সেই বস্তু বা পদার্থটি যেগুলো
দিয়ে গঠিত সেগুলো জোড়ায় জোড়ায় কিনা সে কথা বলা হয়নি।
জড় পদার্থ গঠিত হয় ইলেক্ট্রন নামের নেগেটিভ চার্জ যুক্ত কণা এবং প্রোটন নামের পজেটিভ চার্জযুক্ত কণা দিয়ে। আবার পদার্থের কেন্দ্রে প্রোটনের সাথে চার্জমুক্ত নিউট্রন মিলে পরমানুর কেন্দ্র (নিউক্লিয়াস) গঠিত হয়। যদিও দুই প্রকার চার্জ দিয়ে পদার্থ গঠিত হয় কিন্ত তার মানে এই নয় যে পদার্থই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট। মানুষের শরীর যেমন কোটি কোটি কোষ দিয়ে তৈরি ঠিক তেমনি পদার্থের মৌলগুলোও দুই প্রকার ভিন্ন চার্জযুক্ত কণা দ্বারা তৈরি। আবার এরকম এক বা একাধিক মৌল দিয়ে পদার্থ তৈরি হয়। অর্থাৎ পদার্থের জোড়া থাকে না তবে এগুলো একাধিক কণা দিয়ে গঠিত হয়। যেমনটা মানুষ নারী-পুরুষ এই প্রকার জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি
হলেও তারা যে কোষ দিয়ে তৈরি তারাও এককোষী প্রানীর মতো সতন্ত্র কোষ। আবার এই কোষগুলো
আবার দুই প্রকারের ভিন্ন ভি্ন্ন ক্রোমোজোম দিয়ে গঠিত। যেমন নারীর কাছ থেকে আসা এক্স
ক্রোমোজোম এবং পুরুষের কাছ থেকে আসা এক্স বা ওয়াই ক্রোমোজোম দিয়ে। অর্থাৎ প্রতিটি
দেহকোষই এক একটি জোড়ায় জোড়ায় তৈরি নারী পুরুষের ক্রোমোজোম দিয়ে গঠিত। কিন্তু
তাই বলে একজন মানুষতো জোড়া হয় না। দুই ভিন্ন প্রজাতির (নারি ও পুরুষ) মানুষ মিলেই
জোড়া হয় যা দ্বারা বংশবিস্তার ঘটে। ঠিক তেমনি পদার্থের বা বস্তুর অনুগুলো যে পরমানু
দিযে গঠিত সেগুলো দুই ভিন্ন প্রকারের চার্জ দিয়ে গঠিত; পদার্থ নয়। তাই দুই ভিন্ন চার্জযুক্ত
কণিকা দিয়ে মৌল গঠিত হলেও পদার্থ কোন চার্জ দিয়ে তৈরি নয়। বস্তু বা পদার্থ হলো চার্জহীন।
এবং পদার্থের মধ্যে কোন ভিন্ন ধর্মী চার্জ কাজ করে না। অর্থাৎ বস্তু বা পদার্থ হলো
চার্জহীন অর্থাৎ জোড়াহীন। তাই মুসলমানরা যতই কুযুক্তি, অপযুক্তি, গুজামিল দিয়ে দেখাতে
চেষ্টা করুক না কেন তারা যা দাবী করে তা কুরআনে বলা নেই। কারণ কুরআনে বস্তু বা পদার্থের
জোড়ার কথা বলা হয়েছে পদার্থের ক্ষুদ্রতম উপাদানকে বুঝানো হয়নি। আসলে কুরআনের মতো প্রাচীণ মিথ্যা ও ভ্রান্তিকর
ধ্যাণ ধারণার একটি সাধারন মানের বইকে সৃষ্টিকর্তার গ্রন্থ বানাতে মরিয়া মুসলমানরা যেভাবেই
হোক কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে যায়। যার ফলে কুরআনের নানা অপব্যাখ্যা এনে, কুরআনের
অর্থের পরিবর্তন করে এবং নানা রকমের কুযুক্তি অপযুক্তি হাজির করে এবং গুজামিল দিয়ে
কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর চেষ্টা করে। তাতে করে বুদ্ধিমানদেরকে ধোঁকা দিতে না পারলেও
বোঁকা আস্তিকদেরকে বোঁকা বানানো সম্ভবপর হয়।
No comments:
Post a Comment