Translate

Search This Blog

বিশেষ সতর্কবার্তাঃ

এই ব্লগটি নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সন্দেহবাদী, মুক্তমনা এবং স্বাধীনচেতা মানুষদের জন্য। যারা যেকোন বিষয়ের সমালোচনা সহ্য করার মত ক্ষমতা রাখে। যদি কোন ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিক এই ব্লগটিতে আসে তবে তার ধর্মানুভূতি নামের অদ্ভূত দূর্বল অনিভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্লগ লেখক দায়ী থাকবে না। ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিকদের নিজ দায়িত্বে তাদের দূর্বল ধর্মানুভূতিকে সংরক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে। কারো ধর্মানুভূতি নামের অযৌক্তিক অনুভূতি আহত হবার জন্য কোন ক্রমেই ব্লগার বা লেখককে দায়ী করা যাবে না। যদি কোন অতি দুর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগে ভূল করে ঢুকে পরেন এবং তিনি তার অনুভূতিকে দূর্বল ভাবেন অর্থাৎ যিনি তার ধর্মের উপযুক্ত সমালোচনা সহ্য করতে অপারগ, তাকে বিনীত ভাবে এই ব্লগটি থেকে প্রস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পরেও যদি কোন দূর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগটিতে ঘুরাফেরা করেন এবং তার ফলে তার দূর্বল ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হন তবে কোন ক্রমেই এবং কোন ক্রমেই ব্লগের মালিক, 'আমি নাস্তিক' দায়ী থাকবে না।

Friday, April 22, 2016

বাইবেলঃ এটি একটি কৌতুক গ্রন্থ, গল্প গ্রন্থ, সন্ত্রাসী গ্রন্থ, রক্তপিপাসী গ্রন্থ নাকি মিথ্যার সংকলন। (পর্ব ৩)


পৃথিবীর সব ধর্মের অন্ধবিশ্বাসী অনুসারীদের মতো খ্রিস্টানরাও অন্ধভাবে বিশ্বাস করে যে তাদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল হলো তাদের সৃষ্টিকর্তা জেহোভা প্রদত্ত একমাত্র সত্য ধর্মগ্রন্থ। যেহেতু তারা বিশ্বাস করে যে তাদের ধর্মগ্রন্থ তাদের সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত গ্রন্থ তাই এতে কোন ভূল ভ্রান্তি নেই। এই দাবীটি প্রায় সব ধর্মের অনুসারীরাই করে থাকে যে তাদের ধর্মগ্রন্থটিই একমাত্র সত্য সৃষ্টিকর্তা দ্বারা পাঠানো ধর্মগ্রন্থ এবং তাদের ধর্মগ্রন্থটিতে কোনই ভূল নেই। যেমন মুসলমান বা হিন্দুরাও বিশ্বাস করে যে তাদের ধর্মগ্রন্থটিতে বর্ণিত কথাগুলো তাদেরই ধর্মের সৃষ্টিকর্তার বাণী এবং এগুলোতে কোনই ভূল নেই। এমনকি কিছু অত্যুৎসাহী অন্ধবিশ্বাসী এক ধাপ এগিয়ে দাবী করে যে তাদের ধর্মগ্রন্থটিতে আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক আবিষ্কারের কথা দেড়, দুই বা তিন হাজার বছরের পুরনো ধর্মগ্রন্থটিতে লেখা রয়েছে। এই দাবীটি পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের মতো খ্রিস্টানরাও করে। যেমন তারা দাবী করে বিজ্ঞানের সব আবিষ্কারই করা হয়েছে তাদের বাইবেল থেকে। এবং তাদের বাইবেলই সমস্ত জ্ঞানের মুল। এমনকি তারা দিন রাত এক করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে যে তাদের ধর্মগ্রন্থটি আসলে বিজ্ঞানের জ্ঞানে পরিপূর্ণ।
কিন্তু বাস্তবে আসলে তাদের দাবীর কোনই ভিত্তি নেই বরং তারা অন্ধবিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে এসব উদ্ভট দাবী করে থাকে।
এই পর্বটি সাজানো হয়েছে বাইবেলের সমস্ত বানীকে বিশ্লেষণ করে দেখা। বাইবেলকে বস্তুবাদী দৃষ্টিতে এবং বর্তমানের ভিত্তিতে বিবেচনা করে দেখা যে আসলে বাইবেলে বর্ণিত কথাগুলো কি কোন সৃষ্টিকর্তার বাণীর মতো, নাকি এটি কোন প্রাচীণ আমলের মানুষের প্রাচীণ ভ্রান্তিকর ধারণার সমষ্টি? এই পর্বটিতে পর্যায়ক্রমে বাইবেলের প্রতিটি কথাকেই বিশ্লেষণ করে দেখা হবে।

জেনেসিসঃ
:
এইভাবে পৃথিবী, আকাশ এবং তাদের আভ্যন্তরীণ যাবতীয় জিনিস সম্পূর্ণ হল।
:
যে কাজ ঈশ্বর শুরু করেছিলেন তা শেষ করে সপ্তম দিনে তিনি বিশ্রাম নিলেন।

ব্যাখ্যাঃ এই ভার্স দুটোতে বলা হয়েছে সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর এই বিশ্বজগত মাত্র ছয় দিনে সৃষ্টি করেছে। এই পৃথিবী এর অভ্যন্তরীণ সব কিছু এবং আকাশের সব কিছুই ইশ্বর মাত্র ছয় দিনে সৃষ্টি করেছে। অপরদিকে বললে বলতে হয় ঈশ্বর সর্বশক্তিমান হবার পরেও এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করতে ছয় দিন লাগিয়ে দিয়েছে। যদিও খ্রিস্টানরা তাদের সৃষ্টিকর্তা জেহভাকে সর্বশক্তিমান দাবী করে তবুও সেই সৃষ্টিকর্তা এই বিশ্বজগতকে সৃষ্টি করতে ছয়টি দীর্ঘ দিন লাগিয়ে দিয়েছে। (তাহলে সর্বশক্তিমান হয়ে লাভ কি?)
: এই ভার্সটিতে বলা হয়েছে ঈশ্বর ছয় দিনে বিশ্বজগতের সব কিছু সৃষ্টি করার পরে সাত দিনের মাথায় বিশ্রাম নিয়েছে। মানুষ যেমন সারা দিন কাজ করে পরিশ্রান্ত হয়ে বিশ্রাম নেয় ঠিক সেভাবেই সৃষ্টিকর্তারও কাজ শেষে বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ ইশ্বর আসলে মানুষেরই মতো শারীরিক অক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাক্তিবিশেষ।

২:৩
সপ্তম দিনটিকে আশীর্বাদ করে ঈশ্বর সেটিকে পবিত্র দিনে পরিণত করলেন। দিনটিকে ঈশ্বর এক বিশেষ দিনে পরিণত করলেন কারণ ঐ দিনটিতে পৃথিবী সৃষ্টির সমস্ত কাজ থেকে তিনি বিশ্রাম নিলেন।
২.৪
এই হল আকাশ ও পৃথিবীর ইতিহাস। ঈশ্বর যখন পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টি করেছিলেন, তখন যা কিছু ঘটেছিল এটা তারই বর্ণনা।

ব্যাখ্যাঃ ঈশ্বর ছয় দিনে পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টি করে সাত দিনের মাথায় বিশ্রাম নিয়েছিলো। আর এই সপ্তম দিনটিকে পবিত্র দিন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এজন্যই ইহুদীরা এই দিনটিকে বিশ্রাম দিবস হিসেবে পালন করে। এই দিনে সব কাজ নিষিদ্ধ। কারণ বাইবেল তথা তওরাৎ (ওল্ড টেস্টামেন্ট যা ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ) অনুযায়ী ঈশ্বর ছয় দিন টানা দিন-রাত পরিশ্রম করে সাত দিনে এসে বিশ্রাম নিয়েছিল। খুবই হাস্যকর বর্ণনা এগুলো। ঈশ্বর, যাকে ইহুদী খ্রিস্টানরা সর্বশক্তিমান বলে কল্পনা করে নিয়েছে সেই কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তা (এবং সর্বশক্তিমান) পৃথিবী আর আকাশ সৃষ্টি করতেই হাঁপিয়ে ওঠেছিল। তাই তার বিশ্রাম নেবার প্রয়োজন হয়েছিল। এজন্যই নাকি সেই সপ্তম দিনটিকে পবিত্র দিন আখ্যায়িত করেছিল সে।
কি গাঁজাখুরি গল্প! এসব বর্ণনাগুলো পুরোটাই রুপকথার গল্প কারণ এসবের সাথে বাস্তবের বিশ্বজগত সৃষ্টির সাথে কোনই মিল নেই উপরন্তু এগুলো বাস্তবের বিশ্বজগত সৃষ্টির প্রণালীর বিপরীত।
হাস্যকর ব্যাপারটি হলো যখন তারা তাদের কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তাকে সর্বশক্তিমান বলে এবং এসব অর্থহীন রুপকথার বানীগুলোকে বিশ্বাস করে তখন যে তারা পরস্পর বিরোধী কথা বলছে সেটাই তারা বুঝতে পারে না।

২.৫
পৃথিবীতে তখন কোন গাছপালা ছিল না। মাঠে তখন কিছুই জন্মাতো না। কারণ প্রভু তখনও পৃথিবীতে বৃষ্টি পাঠান নি এবং ক্ষেতে চাষবাস করার জন্য তখন কেউ ছিল না।

ব্যাখ্যাঃ এই বাক্যটিতে অনেকগুলো ভূল তথ্য বের হয়ে এসেছে। যেমন বলছে পৃথিবীতে বৃষ্টি পাঠায়নি বলে পৃথিবীতে কোনই গাছ পালা জন্মায়নি। কথাটিতেই অনেকগুলো ভূল আছে। প্রথমত, যদি পৃথিবীর সমুদ্রগুলোতে পানি থাকে এবং সূর্য তাপের ব্যবস্থা থাকে তবে অবশ্যই বৃষ্টি হবে। কারণ তখন সূর্য তাপে পানি বাষ্প হবে এবং বৃষ্টি ঘটবে।
দ্বিতীয়ত, বাইবেল বলছে ঈশ্বর বৃষ্টি পাঠায়; অর্থাৎ ঈশ্বর এই বৃষ্টিটি অন্য কোথাও থেকে পাঠায়। কিন্তু আমরা জানি বৃষ্টি হয় পৃথিবীর পানি থেকেই।
এবং তৃতীয়ত, মানুষ না থাকলে পৃথিবীতে গাছপালা জন্মাতে পারবে না বলে বাইবেল যে দাবীটি করেছে সেটি সম্পূর্ণই মিথ্যা ও ভ্রান্তিকর। কারণ বিবর্তনবাদ অনুযায়ী পৃথিবীতে গাছের উৎপত্তি ঘটেছে মানুষ সৃষ্টির অনেক আগেই। এই গাছপালাগুলো যখন পৃথিবীতে ছেয়ে গেছে এবং পর্যাপ্ত পরিমানে অক্সিজেনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে তারপরেই উন্নত প্রাণীদের উৎপত্তি ঘটা সম্ভব হয়েছে। আর এইসব উন্নত প্রাণীগুলো বিবর্তিত হয়ে বানর শিপ্পাঞ্জির মতো প্রাণীগুলোর উৎপত্তি ঘটেছে এবং সব শেষে মানুষের উৎপত্তি ঘটেছে।
অর্থাৎ বাইবেল যেমনটা বলছে যে মানুষ ছিল না বলে গাছপালা ছিল না, কথাটি সম্পূর্ণই মিথ্যা। বুঝাই যাচ্ছে খ্রিস্টানদের সৃষ্টিকর্তা জেহোভার জ্ঞান আসলে খুবই নিম্ন মানের ছিল। কারণ প্রাচীণ মানুষগুলো তাদের ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে জেহোভাকে সৃষ্টি করেছিল বলেই জেহোভার জ্ঞান বুদ্ধিও সেই সময়ের মানুষদের মতই অজ্ঞতাপূর্ণ ছিল।

২.৬
পৃথিবী থেকে জল উঠে চারপাশের জমিতে ছড়িয়ে পড়ল।
২.৭
তখন প্রভু ঈশ্বর মাটি থেকে ধুলো তুলে নিয়ে একজন মানুষ তৈরী করলেন এবং সেই মানুষের নাকে ফুঁ দিয়ে প্রাণবাযু প্রবেশ করালেন এবং মানুষটি জীবন্ত হয়ে উঠল।

ব্যাখ্যাঃ হেঁ হেঁ হেঁ! দাড়ান কিছুক্ষন আগে হেসে নেই! এমন হাস্যকর কথা আমি আমার জীবনে শুনেছি কিনা ঠিক মনে করতে পারছি না। পৃথিবীতে নাকি সমুদ্রের পানি উঠে এসে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল!
জোয়ার ভাটার সময় সমুদ্রের পানি কিছু অংশে উঠে আসে। সেটা খুবই কম জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু পৃথিবীর চারদিকে পানি ছড়িয়ে পড়ার যে ব্যবস্থাটা সেটা হলো বৃষ্টি। সমুদ্রের পানি বাষ্প হয়ে মেঘের আকার ধারণ করে। এবং এই মেঘ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং বৃষ্টি হয়ে পৃথিবীর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বাইবেলের ঈশ্বর এসব ব্যপার জানতো না বলে এরকম কথা বলেছে।
ঈশ্বরের সব চেয়ে হাস্যকর ব্যাপারটি হলো সে দাবী করেছে সে নাকি মাটি দিয়ে মানুষ বানিয়েছে। হাঁ হাঁ হাঁ!! মানুষ কি মাটির পুতুল নাকি যে তাকে মাটি দিয়ে বানানো হবে? মানুষের শরীরে যে সব উপাদান আছে সেগুলো মাটি নয় এমনকি মাটি দিয়েও বানানো নয়। অথচ বাইবেলের ঈশ্বর দাবী করছে সে নাকি মাটি দিয়ে মানুষকে বানিয়েছে!
সব চেয়ে মজার ব্যাপারটি হলো ঈশ্বর সেই মাটির পুতুলের মানুষটিকে নাকি নাকে ফুঁ দিয়ে প্রাণবায়ু প্রবেশ করিয়েছে। আর তার ফলেই নাকি মাটির পুতুলটি প্রাণ পেয়েছে। এমন হাস্যকর কথা প্রাচীণ আমলের ঈশ্বরের পক্ষেই বলা সম্ভব। আধুনিক ঈশ্বর হলে এমন অবাস্তব হাস্যকর কথা কেউ বলতো না। মাটির পুতুলকে ফুঁ দিয়ে প্রাণবায়ু দিয়ে তাকে জীবন্ত করার কথাটা রুপকথাকেও হার মানায়। প্রাণ বায়ুকে যদি অক্সিজেন বলে ধরে নেই তবে অক্সিজেন দিলেও কোন জড় পদার্থ জীবিত হবে না কখনই। আবার প্রাণ বায়ু যদি আত্মা হয় তবে আধুনিক কালে বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে আত্মা বলে আসলে কিছু নেই। সবচেয়ে বড় কথা জড় বস্তু থেকে জীবের উৎপত্তি ঘটে প্রাকৃতিক ভাবে কোন সৃষ্টিকর্তার হস্তক্ষেপ ছাড়াই।
সুতরাং ঈশ্বর ধুলাবালি পৃথিবী থেকে নিয়ে সেটা দিয়ে মানুষের পুতুল বানিয়ে তার মধ্যে প্রাণবায়ু প্রবেশ করিয়ে মানুষকে জীবন্ত করার যে গল্পটি বাইবেল লেখক দাবি করেছে সেটি আসলে রুপকথার গল্প। এর সাথে বাস্তবতার কোনই মিল নেই। যে গ্রন্থটি এসব রুপকথার গল্পগুলোকে সত্য বলেদাবী করেছে সেটি কোন ভাবেই কোন সৃষ্টিকর্তার কথা হতে পারে না।

.
তখন প্রভু ঈশ্বর পূর্বদিকে একটি বাগান বানালেন আর সেই বাগানটির নাম দিলেন এদন এবং প্রভু ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টি করা মানুষটিকে সেই বাগানে রাখলেন।

ব্যাখ্যাঃ বাইবেলের এই ভার্সটি দাবী করছে পৃথিবীর পূর্বে ঈশ্বর একটি বাগান বানিয়েছেন যার নাম ইডেন বা স্বর্গের বাগান। প্রথমত, পৃথিবীর কোন পূর্ব পশ্চিম দিক নেই। প্রাচীণ কালের মানুষ জানতো না যে পৃথিবী সমতল নয় বরং গোলাকার। তারা ধরেই নিয়েছিল যে পৃথিবী সমতল এবং এর পূর্ব বা পশ্চিম এসব দিক আছে। আসলে গোলাকার কোন কিছুর পূর্ব পশ্চিম থাকাটা অর্থহীন। কারণ গোলক আকৃতির কোন কিছুর যেটাই পূর্ব সেটাই পশ্চিম। কারণ ঘুরে ফিরে একই জায়গাতে আসে গোলাকার কোন কিছু। যেহেতু মানুষ পৃথিবীকে সমতল ভেবেছে তাই তারা নিজেদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে পূর্ব পশ্চিম এসব নাম দিয়েছে। আসলে বিশ্বজগতের কোন পূর্ব পশ্চিম নেই বিশ্বজগত দিকহীন এবং এর কোন কুল কিনারা নির্ণয় করা যায় না। আমরা আজকে যে দিককে পূর্ব বলছি ছয় মাস পরেই সেটি পশ্চিম দিক হয়ে যাবে (সৌর জগতের হিসেবে) অর্থাৎ পূর্ব পশ্চিম আসলে আপেক্ষিক ব্যাপার। সময়ের সাথে সাথে এই দিক গুলো বদলে যায়। কিন্তু পৃথিবীর বুকে দাড়িয়ে থাকা একজন মানুষের কাছে মনে হয় পূর্ব দিক এবং পশ্চিম দিক আলাদা আলাদা। তাই মানুষ বলতেই পারে পূর্বে নদী, পশ্চিমে পাহাড় ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সমগ্র পৃথিবীর হিসেবে পূর্ব পশ্চিম আপেক্ষিক। তাই যদি কেউ দাবী করে যে পৃথিবীর পুর্ব পাশে একটি বাগান বানানো হয়েছে তবে বলতে হবে সে আসলে পৃথিবীর আকৃতি কেমন সেটা জানে না। গোলাকার ফুটবলের পূর্ব পাশে বা পশ্চিম পাশে বলে কিছু থাকবে না। পৃথিবীরও নেই।
আবার দাবী করা হচ্ছে ঈশ্বর মানুষকে সেই বাগানে রেখেছে। অর্থাৎ প্রথমে মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তারপরে বাগান সৃষ্টি করা হয়েছে। এটা বিজ্ঞানের বিরুদ্ধ একটি কথা। বিজ্ঞান বলে প্রথমে বন জঙ্গল সৃষ্টি হয়েছে এবং তার লক্ষ লক্ষ বছর পরে মানুষের উৎপত্তি ঘটেছে। অর্থাৎ বাইবেলের এসব কথা সম্পূর্ণই মিথ্যা বানোয়াট। এসব রুপকথার গল্পের মতোই ভিত্তিহীন কাল্পনিক।

২.৯
এবং সেই বাগানে প্রভু ঈশ্বর সব রকমের সুন্দর বৃক্ষ এবং খাদ্যোপযোগী ফল দেয় এমন প্রতিটি বৃক্ষ রোপণ করলেন। বাগানের মাঝখানটিতে প্রভু ঈশ্বর রোপণ করলেন জীবন বৃক্ষটি যা ভাল এবং মন্দ বিষয়ে জ্ঞান দেয়।

ব্যাখ্যাঃ বোকামীর শেষ নেই! প্রথমে বাগান বানানো হলো তারপর সেখানে বৃক্ষ রুপণ করা হলো! মামা বাড়ীর আবদার আরকি! মানুষের মত প্রথমে জমি নির্বাচন করা হলো অর্থাৎ বাগান বানানো হলো তারপর সেখানে গাছ লাগানো হলো! হাস্যকর কথাবার্তা। আমরা জানি পৃথিবীতে গাছের উৎপত্তি ঘটেছে বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এবং গাছগুলো পর্যায়ক্রমে ছোট ছোট প্রজাতি থেকে বড় গাছের প্রজাতির উৎপত্তি ঘটেছে পর্যায়ক্রমে। বাইবেলের এই হাস্যকর বর্ণনার মতো নয় যে বড় বড় গাছ লাগানো হলো বাগানের মধ্যে। আসলে প্রাচীণ কালের মানুষ ভেবেছে তারা যেভাবে বাগান বানিয়েছে ঠিক সেভাবেই বুঝি পৃথিবীর গাছগুলোকেও কেউ না কেউ রোপণ করেছে। তারা কিভাবে জানবে যে এই গাছপালা গুলো সম্পূর্ণই প্রাকৃতিক নিয়মেই বিবর্তনের মাধ্যমে জন্মেছে! বরং তারা ধরেই নিয়েছে কেউ একজন অবশ্যই এই গাছগুলোকে লাগিয়েছে। তাকে তারা ঈশ্বর হিসেবে কল্পনা করেছে।
এই ভার্সটির হাস্যকর উক্তিটি হলো খ্রিস্টানদের ঈশ্বর নাকি জ্ঞানের বৃক্ষ রুপণ করেছিল। ইস্ যদি আসলেই জ্ঞানের বৃক্ষ বলে সত্যিই কিছু থাকতো তবে কতই না মজা হতো! আমাদের আর কষ্ট করে পড়াশুনা করে জ্ঞান অর্জন করতে হতো না। আমরা শুধু জ্ঞান গাছের ফল খেতাম আর জ্ঞানী হয়ে উঠতাম। তখন আস্তিকরাও একটু আকটু জ্ঞানের অধিকারী হতে পারতো! (ওদের জ্ঞানের যে অবস্থা!)
জ্ঞান বৃক্ষের কথা বাইবেলে লেখা থাকায় এটা নিশ্চিত ভাবেই প্রমাণ হয়েছে যে বাইবেল আসলে একটি রুপকথার গল্পের বই। যাকে ইহুদী খ্রিস্টানরা ধর্মগ্রন্থ বলে মনে করেছে। এটি আসলে একটি রুপকথার গল্পের বই।
প্রাচীণ কালের মানুষ জানতো না মানুষের বুদ্ধিমত্তা বা জ্ঞান কিভাবে কাজ করে। তাই তারা কল্পনা করে নিয়েছে যে, মানুষ কোন একটি গাছের ফল খেয়ে জ্ঞান অর্জন করেছে। আর এই মিথ্যা ধারণাটাই বাইবেলের লেখক বাইবেলে লিখে দিয়েছে।
সুতরাং বাইবেল নির্দিধায় একটি প্রাচীণ মানুষ লিখিত বই।

.১০
এদন হতে এক নদী প্রবাহিত হয়ে সেই বাগান জলসিক্ত করল। তারপর সেই নদী বিভক্ত হয়ে চারটি ছোট ছোট ধারায পরিণত হল।
.১১
প্রথম ধারাটির নাম পীশোন। এই নদী ধারা পুরো হবীলা দেশটিকে ঘিরে প্রবাহিত।
.১২
(সে দেশে সোনা রয়েছে আর তা উঁচু মানের। এছাড়া এই দেশে গন্ধদ্রব্য, গুগ্গুল আর মূল্যবান গোমেদকমণি পাওয়া যায়।)  
.১৩
দ্বিতীয় নদীর নাম গীহোন, এই নদীটি সমস্ত কুশ দেশটিকে ঘিরে প্রবাহিত।
.১৪
তৃতীয় নদীটির নাম হিদ্দেকল। এই নদী অশূরিয়া দেশের পূর্ব দিকে প্রবাহিত। চতুর্থ নদীটির নাম ফরাত্

ব্যাখ্যাঃ ভুল শুধুই ভূল। এতোটুকু পড়েই কতগুলো ভূল দেখতে পাচ্ছি। এই টুকুর মধ্যে এতো এতো ভূল থাকে কিভাবে? বাইবেল বলছে এদন বা ইডেন নামের বাগান থেকে নাকি নদী প্রবাহিত হয়েছে। ঈশ্বর আসলে জানেই না নদ নদীগুলো আসলে কিভাবে উৎপত্তি হয়। যদি জানতো তবে এমন অর্থহীন দাবী করতো না। বাস্তবে নদী তৈরী হয় পাহাড়ে জমে থাকা পানি ঝর্ণার মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে সাগরে যাবার মাধ্যমে। এই পানি যে পথ দিয়ে সাগরে প্রবাহিত হতো কালক্রমে সেই পথই নদ বা নদী হতো। কিন্তু খ্রিস্টানদের কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তা এই স্বাধারণ জ্ঞানটি রাখতো না বলেই এই অবৈজ্ঞানিক দাবীটি করেছে। আসলে নদ নদী কোন বাগান থেকে নয় বরং পাহাড় পর্বত থেকে উৎপত্তি হয়। (এখানে উল্লেখ্য যে এই এদন বা ইডেন গার্ডেনটি কিন্তু পৃথিবীতেই সৃষ্টি করা হয়েছে বলে বাইবেল দাবী করেছে। আর সেই বাগানটি নাকি পৃথিবীর পূর্ব পাশে অবস্থিত। যার কোন বাস্তব ভিত্তি নেই।)
পীশোন, হবীলা, গীহোন, হিদ্দেকর, অশুরিয়া এবং ফরাত্ প্রভৃতি রুপকথার গল্পের কিছু প্রচলিত নাম। অর্থাৎ এসব কাহিনী এবং বর্ননাগুলো সম্পূর্ণই রুপকথার গল্পের অংশ। বাস্তবতার সাথে এসবের কোনই মিল নেই। আসলে বাইবেল হলো একটি রুপকথার বই। যা ইহুদী খ্রিস্টানরা তাদের ধর্মগ্রন্থ হিসেবে মেনে এসেছে যুগযুগ ধরে।

সুতরাং বাইবেল পড়ে এটা প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে যে বাইবেল আসলে কোন সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত গ্রন্থ নয়। বরং বাইবেল একটি প্রাচীণ মানুষের দ্বারা লিখিত একটি প্রাচীণ ধ্যান ধারণার বই। যার সাথে রুপকথার বইয়ের ১০০% মিল পাওয়া যায়। এটি আসলে একটি কৌতুক গ্রন্থ, গল্প গ্রন্থ এবং মিথ্যার সংকলন।

No comments:

Post a Comment