Translate

Search This Blog

বিশেষ সতর্কবার্তাঃ

এই ব্লগটি নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সন্দেহবাদী, মুক্তমনা এবং স্বাধীনচেতা মানুষদের জন্য। যারা যেকোন বিষয়ের সমালোচনা সহ্য করার মত ক্ষমতা রাখে। যদি কোন ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিক এই ব্লগটিতে আসে তবে তার ধর্মানুভূতি নামের অদ্ভূত দূর্বল অনিভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্লগ লেখক দায়ী থাকবে না। ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিকদের নিজ দায়িত্বে তাদের দূর্বল ধর্মানুভূতিকে সংরক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে। কারো ধর্মানুভূতি নামের অযৌক্তিক অনুভূতি আহত হবার জন্য কোন ক্রমেই ব্লগার বা লেখককে দায়ী করা যাবে না। যদি কোন অতি দুর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগে ভূল করে ঢুকে পরেন এবং তিনি তার অনুভূতিকে দূর্বল ভাবেন অর্থাৎ যিনি তার ধর্মের উপযুক্ত সমালোচনা সহ্য করতে অপারগ, তাকে বিনীত ভাবে এই ব্লগটি থেকে প্রস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পরেও যদি কোন দূর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগটিতে ঘুরাফেরা করেন এবং তার ফলে তার দূর্বল ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হন তবে কোন ক্রমেই এবং কোন ক্রমেই ব্লগের মালিক, 'আমি নাস্তিক' দায়ী থাকবে না।

Friday, April 15, 2016

আস্তিকদের অযৌক্তিক, কুযৌক্তিক, অপযৌক্তিক এবং অপ-বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের যৌক্তির ও বৈজ্ঞানিক উত্তর। (পর্ব ১১)


আস্তিকদের অযৌক্তিক, কুযৌক্তিক, অপযৌক্তিক এবং অপ-বৈজ্ঞানিক প্রশ্নঃ
আমি মুসলিম আমি সারা পৃথিবীর মানুষ থেকে আল্লাহকে বেশি বিশ্বাস করি। আমার কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ট অবস্থানে রয়েছে মহান আল্লাহ তাআলা।
যৌক্তির এবং বৈজ্ঞানিক উত্তরঃ
আপনি আল্লাহকে বিশ্বাস করলেও যা, আর সৃষ্টিকর্তা হিসেবে ঘোড়ার ডিম বা সানি লিওনকে বিশ্বাস করলেও তাই। এদের কেউ সৃষ্টিকর্তা হয়ে উঠবে না। সানি লিওনের তাও বাস্তব অস্তিত্ব আছে কিন্তু আল্লাহ ভাইজানের আর ঘোড়ার ডিমের তো কোন অস্তিত্বই নেই। তাই আল্লাহর চেয়ে সানিলিওনকে বিশ্বাস করাই যুক্তিযুক্ত।

কোন কাল্পনিক কিছুকে বিশ্বাস করা এবং তাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়া আর না দেওয়ার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। কারণ আল্লাহর যেহেতু কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই (শুধুমাত্র কিছু অন্ধবিশ্বাসীদের কল্পনায় রয়েছে) তাই আল্লাহকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখা অথবা না রাখার কোন কার্যকারিতা নেই। আল্লাহর বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই। পরজীবিদের মতো আল্লাহ শুধুমাত্র কিছু অন্ধবিশ্বাসীদের মনে বসবাস করে। যদি পোষক দেহ হিসেবে অন্ধবিশ্বাসী মানুষগুলো না থাকে তবে আল্লাহও আর অস্তিত্বশীল থাকবে না। যেহেতু আল্লাহর অস্তিত্ব শুধুমাত্র অন্ধবিশ্বাসীদের মনের মধ্যেই আছে তাই সেই অন্ধবিশ্বাসীদের বিনাশের সাথে সাথে আল্লাহর অস্তিত্বও ধ্বংস হয়ে যাবে। অর্থাৎ অন্ধভাবে বিশ্বাস করলেই কেবল আল্লাহ অন্ধবিশ্বাসীদের মনে অস্তিত্বশীল থাকতে পারে কিন্তু বাস্তব জগতে থাকতে পারে না। আর তাই আপনি আল্লাহকে বিশ্বাস করুন বা তাকে সর্বোচ্চ স্থান দিন তাতে কিছু যায় আসে না। বাতাসের কাছে কিছু চাইলে হয়তো বা বাতাসের পক্ষে সেটা দেবার নুন্যতম সক্ষমতা আছে; কিন্তু শুন্যের কাছে কিছু চাইলো শুন্যের সম্ভব নয় কিছু দেবার। কারণ শুন্য মানে যার কোনই অস্তিত্ব নেই।
তাই আপনি আল্লাহকে বিশ্বাস করেন নাকি তাকে সর্বোচ্চ স্থান দেন সেটা সম্পূর্ণটাই আপনার মনের কল্পনাতে ঘটে। বাস্তব জগতে এর কোনই প্রভাব ফেলে না। আল্লাহ পরজীবিদের মতো আপনার মতো অন্ধবিশ্বাসীদের মনে বাস করে; বাস্তব জগতে করে না। বাস্তব জগতে এসব কাল্পনিক স্বত্বাদের কোনই অস্তিত্ব নেই। তাই তাদের পক্ষে বাস্তব জগতে কিছু করাও সম্ভব নয়।

আস্তিকদের অযৌক্তিক, কুযৌক্তিক, অপযৌক্তিক এবং অপ-বৈজ্ঞানিক প্রশ্নঃ
আপনি আপনার মাকে ভালবাসেন এই ভালবাসার বাস্তব অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারবেন? ভালোবাসার প্রমাণ যেমন মানুষ দিতে পারে না ঠিক তেমনি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণও দেওয়া সম্ভব নয়। প্রমাণ ছাড়া ভালোবাসার যেমন অস্তিত্বকে মানুষ মেনে নেয় সেভাবে সৃষ্টিকর্তাকেও মেনে নিতে হয়।

যৌক্তির এবং বৈজ্ঞানিক উত্তরঃ
অবশ্যই ভালোবাসার বাস্তব অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারবো। আমি যেমন মায়ের ভালোবাসা বুঝতে পারি, মাও তেমনি আমার ভালোবাসা বুঝতে পারে।
আপনার মা কি কখনই আপনি অসুস্থ হলে আপনাকে সেবা করেনি? যদি করে থাকে তবে সেটাই আপনার প্রতি আপনার মার ভালোবাসার প্রমাণ।
তেমনি কে আপনাকে ভালোবাসে আর কে আপনাকে ঘৃনা করে সেটা আপনি সেই মানুষের আচার ব্যবহার দেখেই বুঝতে পারবেন। একজন মানুষ মুখে বললো সে আপনাকে ভালোবাসে কিন্তু প্রতিনিয়ত আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করে যাচ্ছে, তাহলে আপনি কি বিশ্বাস করবেন যে সে আপনাকে সত্যিই ভালোবাসে? যদি আরও ভয়ঙ্কর আচরন করে তবে? ধরুন মুখে বললো ভালোবাসে কিন্তু আচরনে সে আপনাকে ঘুনা করলো, আপনাকে অত্যাচার করলো এবং মেরে ফেলতে চাইলো, তবে সেটা কি ভালোবাসা হলো?
তেমনি ভালোবাসা বুঝা যায় ভালোবাসা দেখে। আদর ভালোবাসা, মায়া, মমতা এগুলোই হল ভালোবাসার প্রমান।
আপনার মা আপনাকে ঘৃনা করে না ভালোই ভাসে সেটা আপনি তার প্রতিনিয়ত আপনার সাথে করা ব্যবহার, আচার আচরন দেখেই বুঝতে পারেন। তার মমতা, আপনার জন্য তার আকুলতা, দরদ দেখেই আপনি বুঝতে পারেন ভালোবাসা আর ঘৃনার পার্থক্য।
এগুলোই ভালোবাসার প্রমান। আপনার আচরনই প্রমান বহন করে যে আপনি কাকে ভালোবাসেন আর কাকে ঘৃনা করেন।
সুতরাং ভালোবাসা একটা প্রমানযোগ্য প্রমানিত বিষয়।
তবে এটা ঠিক যে ভালোবাসা মস্তিষ্কের মধ্যে কিভাবে কাজ করে সেটা বিজ্ঞান পুরোপুরি (সম্পূর্ণরুপে) বের করতে পারেনি। তবে বিজ্ঞানীরা জানে ভালোবাসার সময় মস্তিষ্কের কোন অংশটা উত্তেজিত হয়। কোন অংশে ভালোবাসা প্রকাশ পায় ইত্যাদি ইত্যাদি।
সুতরাং এটা দাবী করা যাবে না যে, ভালোবাসা, ঘৃনা প্রভৃতি প্রমান করা যায় না। ভালোবাসার লক্ষ কোটি প্রমান পৃথিবীতে আছে। এমন কি ভালোবাসা মস্তিষ্কে কিভাবে কাজ করে সেটাও বিজ্ঞানীরা বের করে ফেলেছে। ভবিষ্যতে আরো ভালো করে বের করতে পারবে। চিকিতসা বিজ্ঞান যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা থেকে অনুমান করা যায় খুব সহজেই।
সুতরাং ভালোবাসা প্রমান করা যায় না কথাটি সত্য নয়।
আপনি প্রতিনিয়ত আপনার প্রেয়সীর কাছে ভালোবাসার প্রমান দিয়ে যাচ্ছেন। কখনও ফুল, কখন গিফট, কখনও আবেগ দিয়ে প্রতিনিয়তই প্রমাণ করে যাচ্ছেন যে আপনি কতটা তাকে ভালোবাসেন।
আপনার মার চোখের জল, মার জন্য আপনার কান্না, বিপদে অস্থির হয়ে যাওয়া আরও শত শত প্রমান আছে ভালোবাসার।
কিন্তু বিপরীতে সৃষ্টিকর্তার কোনই অস্তিত্ব নেই। আর এজন্যই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের পক্ষে কোনই প্রমাণ পাওয়া যায় না। মানুষ কখনই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের কোনরুপ প্রমাণই পায়নি। শুধু অন্ধভাবে বিশ্বাস করে এসেছে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে। সুপারম্যান, স্পাইডারম্যানদের যেমন বাস্তব অস্তিত্ব নেই ঠিক তেমনি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বও বাস্তবে নেই। আছে মানুষের কল্পনায়। কোন প্রকার প্রমানও আস্তিকরা দেখাতে পারেনি এবং নিজেরাও দেখেনি। শুধু অন্ধভাবে বিশ্বাস করে গেছে। অপরদিকে ভালোবাসা মানুষ নিজে দেখে, উপলব্ধি করে এবং অনুভবের মাধ্যমে বুঝতে পারে। মানুষ ভালোবাসার প্রমাণ পায় বলেই কোনটা ভালোবাসা আর কোনটা ভালোবাসা নয় সেটা যাচাই করতে পারে। অপরদিকে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকেই মানুষ দেখেনি তাই তার অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়াও তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই ভালোবাসার সাথে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের তুলনা করা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ভালোবাসা প্রমাণিত বিষয় আর সৃষ্টিকর্তা অপ্রমাণিত বিষয়। উপরন্তু যুক্তি তর্কের বিচারে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকাটাই অসম্ভব। কিন্তু ভালোবাসা যেমন অস্তিত্বশীল রয়েছে ঠিক একই ভাবে ভালোবাসার অস্তিত্ব মানুষ নিজে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষন করে। অর্থাৎ ভালোবাসার বাস্তব অস্তিত্ব আছে।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন

আস্তিকদের অযৌক্তিক, কুযৌক্তিক, অপযৌক্তিক এবং অপ-বৈজ্ঞানিক প্রশ্নঃ
যদি আমি ডাকাত হই তবে আমাকে বলুন, ডাকাতি করা আমার জন্য কেন খারাপ? অপরদিকে ধর্ম বলে, সৃষ্টিকর্তা বলেছে ডাকাতি করা খারাপ। ডাকাতি করলে আল্লাহ জাহান্নামে পাঠিয়ে অনেক কঠিন শাস্তি দিবে, তাই ডাকাতি করা খারাপ। কিন্তু ধর্ম ছাড়া কি আপনি বলতে পারবেন কেন আমার জন্য ডাকাতি করা খারাপ?

যৌক্তির এবং বৈজ্ঞানিক উত্তরঃ
ভালো-মন্দ নিজের স্বার্থ দেখে বিচার হয় না। ভালো মন্দ নির্ধারিত হয় অন্যের স্বার্থ রক্ষার উপর নির্ভর করে। যে নিজের স্বার্থ দেখে তাকে স্বার্থপর বলা হয়। আর স্বার্থপরতা খারাপ। সুতরাং কেন ডাকাতি আমার জন্য খারাপ হবে প্রশ্নটিতে স্বার্থপরতার ভাব আছে। ডাকাতি করা খারাপ কারণ এটি অন্যের ক্ষতি করে।
যেহেতু ভালোর সংজ্ঞা হলো অন্যের উপকার করা কল্যাণকর কাজ করা; এবং খারাপের সংজ্ঞা হলো অন্যের ক্ষতি করা মানুষের অকল্যানমুলক কাজ করা।
এই সংজ্ঞাটি মানুষ নিজে দাড় করিয়েছে। যদি অন্যের উপকারকে খারাপ কাজ বলা হতো এবং অন্যের ক্ষতি করাকে ভালো কাজ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হতো তবে ডাকাতি করাকে ভালো কাজ বলা হতো। কিন্তু যেহেতু অন্যের ক্ষতি করাকে খারাপ কাজ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে তাই সংজ্ঞানুযায়ী ডাকাতি করা খারাপ কাজ।
ভালো কাজ শুধু নিজের ভালো হলো এটার উপর নির্ভর করে না। যে কাজ অন্যের ক্ষতি করে এবং যা মানব জাতির জন্য অকল্যাণকর সেগুলোই খারাপ কাজ।
ডাকাতি করলে নিজের ভালো হয় কিন্তু অনেক মানুষের ক্ষতি হয়। আর তাই ডাকাতি করা খারাপ।
আবার শুধু নিজের স্বার্থের দিকে লক্ষ রেখে অন্যের ক্ষতি করাও সংজ্ঞানুযায়ী খারাপ কাজ। যেহেতু ডাকাতি করলে নিজের ভালোটা হয় অন্যের ক্ষতি করার মাধ্যমে, তাই সংজ্ঞানুযায়ী ডাকাতি করা খারাপ কাজ।
প্রশ্ন করতে পারেন এই ভালো খারাপের সংজ্ঞাটা কোথা থেকে এলো?
এর উত্তর পাওয়া যায় বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান থেকে। মানুষ যখন বনে জংগলে ঘুরে বেড়াতো তখন প্রাকৃতিক শক্তির হাত থেকে বাঁচার জন্য একে অন্যকে সাহায্য করতে হতো নিজেদের টিকে থাকার জন্য। যে জাতি বা দল যত বেশী পরস্পরের উপর সাহায্যপূর্ণ ছিলো সে জাতি বা দল তত সহজে প্রাকৃতির দুর্যোগ এবং বন্য হিংস্রতা থেকে রক্ষা পেতো। ফলে পরস্পর সহযোগীরাই টিকে যেতো। আর মানুষ দেখলো পরস্পরের সহযোগীতাই তাদের জন্য মঙ্গলজনক। আর তাই সভ্যতা গড়ে উঠলো পরস্পর সহযোগীতার মধ্য দিয়ে। এভারেই মানুষ অন্যের জন্য ভালো কাজ করাকে সম্মানিত করতে শিখলো নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থের প্রয়োজনেই। দেখা গেলো অন্যের উপকারের মাধ্যমেই একটা জাতি বা সমাজ সব চেয়ে বেশী উন্নত শক্তিশালী হতে পারছে। ফলে পরস্পরের সহযোগীতা বা অন্যের উপকার করাটাকে মানুষ সম্মানের গর্বের মনে করলো।
আবার বিপরীতে যে সম্প্রদায় বা দল পরস্পরের সাহায্য করলো না এবং পরস্পরের ক্ষতি করতে লাগলো ফলে তারা নিজেদের সমাজের বা দলের ক্ষতি করার মাধ্যমে নিজেরা নিজেরাই ধ্বংস হতে লাগলো। আর মানুষ উপলব্ধি করলো পরস্পরের ক্ষতি করাটা সবার জন্যই অকল্যাণকর হচ্ছে। এদের মধ্যে যারা পরস্পরের ক্ষতি করা বাদ দিয়ে পরস্পরের সহযোগীতা করা শুরু করলো তারাও টিকে গেলো। যেহেতু পরস্পরের ক্ষতি করাটা সবার জন্য ক্ষতিকর হিসেবে দেখা দিলো তখন সবাই অন্যের ক্ষতি করাকে অসম্মানের মনে করতে লাগলো।
এভাবেই অন্যের উপকার করাকে ভালো কাজ এবং অন্যের ক্ষতি করাকে খারাপ কাজ হিসেবে নির্ধারিত করলো মানুষ।
আর তাই অন্যের ক্ষতি করাকে খারাপ কাজ বলা হয় এবং অন্যের উপকার করাকে ভালো কাজ বলা হয়। যেহেতু ভালো খারাপের সংজ্ঞা নিজের স্বার্থ রক্ষার উপর নির্ভর করে না, তাই নিজের ভালো হলো নাকি খারাপ হলো সেটার উপর নির্ভর করে ভালো খারাপ বলা হয় না। বরং ভালো খারাপ নির্ভর করে অন্যের ভালো হলো নাকি খারাপ হলো তার উপর।
যে কাজ নিজের ভালো হয় কিন্তু অন্যের জন্য খারাপ হয় সেটাকেই খারাপ কাজ বলে। নিজের ভালো করে অন্যের ক্ষতি করাটা পুরো সমাজের জন্য চরম ক্ষতিকর। কারণ সবাই যদি অন্যের ক্ষতি করে শুধু নিজের ভালো করতে থাকে তবে এক সময় সবাই একে অন্যের ক্ষতি করার মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যাবে। আর তাই মানুষ অন্যের ক্ষতি করাকে খারাপ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে।
ডাকাতি করার মাধ্যমে অন্যের ক্ষতি করা হয়। যদি সব মানুষ ডাকাতি করতে শুরু করে দেয় তবে মানুষ পরস্পরের ক্ষতি করার মাধ্যমে সমাজকে ধ্বংস করে দেবে। আর তাই মানুষ ডাকাতি করাকে খারাপ হিসেবে দেখেছে। নিজের ভালো হলেও অন্যের ক্ষতি করা হয় বলে ডাকাতি হলো খারাপ কাজ। কারণ অন্যের ক্ষতি করাকেই খারাপ কাজ বলা হয়। নিজের ভালোর জন্যে অন্যের ক্ষতি করাটাও খারাপ কাজ। আর যেহেতু ভালো খারাপ নির্ধারিত হয় অন্যের ভালো খারাপ করার মাধ্যমে (অন্যের ক্ষতি করাটাই হলো খারাপ কাজ এবং অন্যের উপকার করাটা হলো ভালো কাজ) তাই ডাকাতি করলে নিজের ভালো হলেও অন্যের ক্ষতি হয় বলে এটি খারাপ কাজ।
ডাকাতি করা খারাপ কাজ। কিন্তু সেটা ডাকাতের জন্য সাময়িক ভালো ফল এনে দেয় বটে কিন্তু ডাকাতি করার মাধ্যমে তার জীবন ঝুকির মধ্যে থাকে। সে মানুষের ক্ষতি করে বলে মানুষও তার ক্ষতি করার সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। আর দেশের আইনে যেহেতু ডাকাতি করা শাস্তিযুগ্য অপরাধ ফলে ডাকাতি করলে ডাকাতের শাস্তির (জেলের) ব্যবস্থা তৈরী হয়। এভাবেই ডাকাতি করা ডাকাতের জন্য খারাপ কাজ।
ডাকাত যেহেতু তার নিজের ভালোর জন্য ডাকাতি করে তাই আপাত দৃষ্টিতে এটা তার জন্য ভালো ফল দেয়। কিন্তু এটা তার সমাজ পরিবারের জন্য ভালো ফল দেয় না। ডাকাত সমাজে ঘৃনিত। একটা সমাজে সবাই ডাকাত হলে সেই সমাজটাই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এর প্রভাব ডাকাতের উপর অবশ্যই পড়বে। একজন ভালো  মানুষ এবং একজন ডাকাতকে মানুষ কখনই এক চোখে দেখে না। মানুষের কাছে সে সব সময়ই ঘৃনার বস্তু।
এটাই ডাকাতের জন্য ক্ষতিকর।
আর যেহেতু ডাকাত সমাজের বাইরে বাস করতে পারবে না। তাকে সমাজের সাথেই থাকতে হবে, তাই ডাকাতি করার মাধ্যমে সমাজের ক্ষতি করলে সেই ক্ষতি ডাকাতের উপরও প্রভাব ফেলবে। বস্তত ডাকাত হলো ঘৃনিত মানুষ। ডাকাতি করলে জেলে যেতে হবে, মানুষের ক্ষতি করার কারণে শত্রু তৈরী হবে। এগুলোই ডাকাতি করার জন্য ডাকাতের উপর পড়া খারাপ প্রভাব। এটাই ডাকাতের জন্য খারাপ।ধর্ম বলেছে বলেই ডাকাতি করা খারাপ এবং ডাকাতি করলে সৃষ্টিকর্তা শাস্তি দিবে তাই ডাকাতি করা  খারাপ এটা কোন যুক্তি হলো না। অস্তিত্বহীন কোন কাল্পনিক স্বত্বার দোহাই দিয়ে ভালো মন্দের পার্থক্য দেখানো যায় না। তাই যদি হতো তবে প্রচলিত ধর্মগুলো এবং সেই ধর্মের কাল্পনিক ইশ্বরগুলো অনেক খারাপ কাজকে বৈধতা দিয়েছে এবং সেগুলোকে ভালো কাজ বলে উল্লেখ করেছে। কিন্তু বাস্তবে সেগুলো খারাপ কাজ। যেমন প্রতিটি ধর্মই ভিন্ন ধর্মের মানুষকে তাচ্ছিল্য করেছে যা তাদের সৃষ্টিকর্তা দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং আদেশকৃত। নারীর প্রতি পক্ষপাতদৃষ্টতা, দাসত্বের প্রতি উৎসাহ দেওয়ার মতো খারাপ কাজগুলোকেও ধর্ম সৃষ্টিকর্তা দ্বারা বৈধতা দেওয়া হয়েছ যা আসলে খারাপ কাজ।
তাই কোন কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তা বলেছে বলেই তা ভালো বা খারাপ হবে এটার কোন ভিত্তি নেই।
সৃষ্টিকর্তা ডাকাতি করলে জাহান্নামের শাস্তি দিবে এই যুক্তিতে ডাকাতি খারাপ এমন ভাবার কোনই কারণ নেই। বরং ডাকাতি করা মানুষের জন্য অমঙ্গল বয়ে নিয়ে আসে এই সংজ্ঞাটির যথাযথ এবং উপযুক্ত। কারণ কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তাগুলো এমন কিছু কাজের জন্যও মানুষকে জাহান্নামের ভয় দেখিয়েছে যা আসলে বাস্তবিক ভাবে ভালো কাজ। যেমন - পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ সমান এবং সব মানুষকেই ভালোবাসার ব্যাপারগুলো সৃষ্টিকর্তার মধ্যে নেই। বরং কেউ যদি সৃষ্টিকর্তার প্রমাণহীনতায় তাকে অবিশ্বাস করে তবে সে ক্ষেপে যেয়ে তাকে শাস্তি দিবে বলে ভয় দেখায়। এমনকি যদি কেউ ভালো কাজ করেও তবুও সে বেহেশ্তে যেতে পারবে না বলে ধর্মগুলো দাবি করে। অথচ অপরাধ করেও সেই ধর্মের অনুসারীরা বেহেস্তে যেতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যা বাস্তবিক ভাবে চরম খারাপ কাজ। অথচ সেই সব অসাম্যতাগুলোকে ধর্ম এবং কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তার দ্বারা প্রসংশিত করা হয়েছে। অপরদিকে বাস্তবিকভাবে ভালো কাজ ধর্ম এবং কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তাগুলোর উপর নির্ভর করে না। যা কিছু খারাপ তা সমাজের অকল্যাণ ঘটায় বলেই সেসব খারাপ। আবার সমাজের জন্য কল্যাণকর কাজগুলো সব সময়ই ভালো কাজ হিসেবে গন্য। আর এসব ভালো কাজে সৃষ্টিকর্তার কোনই প্রভাব নেই। বরং ধর্মই মানুষকে ভালো কাজের জন্য সৃষ্টিকর্তা নামের এক কাল্পনিক স্বত্বার নাম যোগ করে আর দাবী করে সৃষ্টিকর্তাই এই ভালো খারাপগুলো নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেটা সত্য নয়। বরং মানুষই তাদের প্রয়োজনে ভালো খারাপের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে।
আপনার দাবীর সব থেকে বড় ভূলটা হলো, যদি শাস্তির ভয়েই খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হয় তবে মানুষের তৈরি করা আইনগুলোই ভালো খারাপ নির্ধারণ করায় প্রধান ভূমিকা রাখে। কোন কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তা নয়। কারণ মানুষ জেলে যাবার ভয়েই খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে।
সব চেয়ে বড় কথা কোন কিছুর ভয়ে যদি কোন কাজ করা হয় তবে সেটা মোরালিটির বা নৈতিকতাবোধের মধ্যে পড়ে না। পাড়ার মাস্তানের ভয়ে মানুষ অনেক কাজ করা বা না করা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু তাই বলে সেগুলো ভালো বা খারাপ কাজ হয়ে যায় না। সৃষ্টিকর্তার মতো একজন মাফিয়া বস্ বলেছে বলেই সেটা ভালো আর তার কথার অবাধ্য হলেই সেটা খারাপ ভাবাটা ওই পাড়ার মাস্তানের ভয়ে করা কাজগুলোর মতই। এর সাথে ভালো খারাপের কোন সম্পর্ক নেই।
আর তাই যদি বলেন আপনাদের কল্পনা করা সৃষ্টিকর্তাটি বলেছে বলেই ডাকাতি করা খারাপ এমনটা ভাবা আর মাথায় বন্দুক রাখা হতভাগার বাধ্য হয়ে করা কাজটি ভালো ভাবা একই কথা। আসলে এদুটোর কোনটিই ভালো বা খারাপ কাজ নয়। বরং যেইই বলুক না কেন যদি কাজটা প্রকৃতই ভালো হয় অর্থাৎ মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে তবেই তাকে ভালো কাজ বলতে হবে। এখানে মাফিয়া সৃষ্টিকর্তা বললো নাকি পাড়ার মাস্তানরা বললো সেটি মুখ্য নয়। মানুষের খারাপ হলেই কাজটিকে খারাপ বলা হবে।
আর তাই সৃষ্টিকর্তা বলেছে ডাকাতি করা আপনার জন্য খারাপ তাই আপনি সেটাকেই সত্য বলে ধরে নিবেন অথচ সেটি মানুষের ক্ষতি করলো কিনা সেটা দেখবেন না তাহলেতো আর সেটা নৈতিকতার মধ্যে পড়লো না।
যদি বলেন সৃষ্টিকর্তা বলেছে বলেই ডাকাতি করা খারাপ তবে তা সত্য নয়। সৃষ্টিকর্তা যদি ডাকাতিকে ভালো বলতো তবে ডাকাতি করা ভালো হয়ে যেতো না। অথবা যদি বলেন, ডাকাতি করলে আপনার কোন ক্ষতি হবে না তাই সেটা খারাপ নয় তবে বলতে হয়, ডাকাতি করলে আপনারই ক্ষতি বেশী। পুলিশের দ্বারা এবং সমাজ দ্বারা আপনি এবং আপনার পরিবারের ক্ষতি হবে। এমনকি যদি আপনি বলেন যে, আপনি শাস্তির ভয় করবেন বলেই ডাকাতি করা খারাপ তবে বলতে হয় পাড়ার মাস্তানরাই তবে বেশী সৃষ্টিকর্তা আপনার সৃষ্টিকর্তার তুলনায়। কারণ তারাও সৃষ্টিকর্তার মতো ভয় দেখিয়ে মানুষকে দিয়ে কাজ করায়। আপনি যদি ভয়ে কাজ করাকেই ভালো বা খারাপ বলেন তবেতো আপনার সৃষ্টিকর্তা যদি মানুষকে খুন করতে বলে তবে আপনি সেটাকেই ভালো কাজ মনে করবেন। অপরদিকে আপনার কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তা যদি জীবন বাঁচাতে নিষেধ করে তবে আপনি জীবন বাঁচানোকে খারাপ কাজ মনে করবেন। (অনেক ধর্মের অনুসারীরা মনে করে মানুষ খুন করা ভালো যদিও তা সমাজের বড় ক্ষতি করে। অর্থাৎ বাস্তবিক খারাপ কাজকেই ধর্ম ভালো কাজের মর্যাদা দিয়েছে।)
কি দেখলেন তো, ভালো খারাপের নির্ধারক হিসেবে সৃষ্টিকর্তাকে আনলে ভালো খারাপের কেমন বারোটা বাজে!
যদি ডাকাতি কেন খারাপ কাজ এই প্রশ্ন করা হয় তবে বলতে হয়, ডাকাতি করলে অন্যের ক্ষতি হয় তাই ডাকাতি করা খারাপ সংজ্ঞানুযায়ী নিজের ভালোর জন্য (বা এমনিই) অন্যের ক্ষতি করাকেই খারাপ কাজ বলেতাই ডাকাতি করাটা খারাপ কাজআর যেহেতু ভালো কাজ ও খারাপ কাজ নিজের স্বার্থের উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে অন্যের স্বার্থ রক্ষার উপর তাই ডাকাতি করা ডাকাতের জন্য সাময়িক ভালো হলেও এটি অন্যের ক্ষতি করার কারণে ডাকাতি করা একটি খারাপ কাজ
অপরদিকে ডাকাতি করা ডাকাতের জন্য খুব খারাপ; কারণ এতে আইনের শাস্তি এবং সামাজিক মর্যাদাহানীর ভয় আছে।

No comments:

Post a Comment