Translate

Search This Blog

বিশেষ সতর্কবার্তাঃ

এই ব্লগটি নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সন্দেহবাদী, মুক্তমনা এবং স্বাধীনচেতা মানুষদের জন্য। যারা যেকোন বিষয়ের সমালোচনা সহ্য করার মত ক্ষমতা রাখে। যদি কোন ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিক এই ব্লগটিতে আসে তবে তার ধর্মানুভূতি নামের অদ্ভূত দূর্বল অনিভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্লগ লেখক দায়ী থাকবে না। ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিকদের নিজ দায়িত্বে তাদের দূর্বল ধর্মানুভূতিকে সংরক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে। কারো ধর্মানুভূতি নামের অযৌক্তিক অনুভূতি আহত হবার জন্য কোন ক্রমেই ব্লগার বা লেখককে দায়ী করা যাবে না। যদি কোন অতি দুর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগে ভূল করে ঢুকে পরেন এবং তিনি তার অনুভূতিকে দূর্বল ভাবেন অর্থাৎ যিনি তার ধর্মের উপযুক্ত সমালোচনা সহ্য করতে অপারগ, তাকে বিনীত ভাবে এই ব্লগটি থেকে প্রস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পরেও যদি কোন দূর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগটিতে ঘুরাফেরা করেন এবং তার ফলে তার দূর্বল ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হন তবে কোন ক্রমেই এবং কোন ক্রমেই ব্লগের মালিক, 'আমি নাস্তিক' দায়ী থাকবে না।

Thursday, January 7, 2016

জাকির নায়েকের মিথ্যাচার এবং প্রতারনা । বিজ্ঞান সম্পর্কে জাকির নায়েকের মিথ্যাবাদীতা এবং প্রতারনা । (পর্ব ৮) কুরআনে কি পরমাণুবাদসম্পর্কে আসলেই কিছু বলা হয়েছে? নাকি জাকির নায়েক মিথ্যে উলম্ব আস্ফালন করেছে?



জাকির নায়েক একজন বিখ্যাত ইসলামী বক্তা। সে তার সুন্দর বাঁচন ভঙ্গীর মাধ্যমে খুব সহজেই আস্তিকদেরকে আকৃষ্ট করে থাকে। কিন্তু আমরা বিশ্ময়ের সাথে লক্ষ করেছি জাকির নায়েক তার বকৃতায় অসংখ্য মিথ্যা কথা বলে থাকে এবং নানা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকে। একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে জাকির নায়েক তার বলা মিথ্যা কথা এবং নানা প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে বোকা বানিয়ে রাখে। যেহেতু আস্তিকরা বিশেষ করে মুসলমান আস্তিকরা জ্ঞান বিজ্ঞান এমন কি তাদের ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে অথবা বিজ্ঞান এবং ধর্ম সম্পর্কে জানলেও তাদের জ্ঞানের পরিধি অত্যন্ত ক্ষুদ্র তাই তারা জাকির নায়েকের বলা মিথ্যা কথাগুলো এবং প্রতারণাগুলো ধরতে পারে না। এভাবেই জাকির নায়েক মানুষের সাথে প্রতারণা করে ধর্মকে ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করে থাকে। তার লেকচারগুলো থেকে সে বিশাল অংকের টাকা উপার্জন করে থাকে। কিন্তু মানুষের সাথে প্রতারণা করে টাকা উপার্জন করা কতটা ন্যায় সঙ্গত সেটা তুলে ধরা এবং জাকির নায়েকের প্রতারণামুলক বক্তব্যগুলো সবার সামনে তুলে ধরাই এই পর্বগুলোর উদ্দেশ্য। একথা সর্বসম্মতিক্রমে (জাকির নায়েকের অন্ধভক্তরা বাদে) স্বীকৃত যে জাকির নায়েক একজন কুখ্যাত মিথ্যাবাদী এবং প্রতারনাকারী। জাকির নায়েক যে মিথ্যাবাদী এবং প্রতারক সেটা অনেকেই ইতিপূর্বে সুন্দর ও সহজ ভাবে প্রমাণ করেছে এবং আমিও আগের পর্বগুলোতে জাকির নায়েকের মিথ্যাবাদিতা এবং প্রতারণা অত্যন্ত সফল ভাবেই প্রমাণিত করতে পেরেছি। এই পর্বটিতেও জাকির নায়েকের মিথ্যাবাদিতা এবং প্রতারণার একটি প্রমাণ উপস্থাপন করবো।


জাকির নায়েক তার "কুরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞান: বিরোধ নাকি সাদৃশ্য" বকৃতায় পরমানু বিদ্যা সম্পর্কে নিম্নুক্ত কথাগুলো বলেছে-
পদার্থ বিজ্ঞানে একটা থিউরী আছে যার নাম এটোমিজম। পরমানু হল কোন পদার্থের ক্ষুদ্রতম উপাদান যেটাকে আলাদা করা যায় না। এই থিউরীর কথা প্রথম বলেছিলেন ডেমোক্রেটাস গ্রীক দুই হাজার ৩০০ বছর আগে। আর আরবদেরও এই জ্ঞানটা ছিল। আর পরমানুর আরবী শব্দ হল 'যাররা'।
কিন্তু আজকের দিনে বিজ্ঞান উন্নত হবার পরে আমরা জানতে পেরেছি; যদিও পরমানু হল কোন পদার্থের ক্ষুদ্রতম উপাদান, পদার্থের বৈশিষ্ট্যই এর মধ্যে থাকে, তারপরেও একে আলাদা করা যায়। ইলেক্ট্রন, প্রোটন ইত্যাদি অংশে। তাই লোকে ভাবতে পারে কুরআন সেকেলে হয়ে গেছে। পবিত্র কুরআন যাররা সম্পর্কে বলেছে; আর বলেছে, এটি একটি ক্ষুদ্রতম অংশ। কিন্তু কোথাও একথা লেখা নেই যে এটাকে আলাদা করা যায় না।
পবিত্র কুরআনের সূরা সাবা'র ৩ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে; বলা হয়েছে যে,
"যখন কাফেররা বলে আমাদের নিকট কেয়ামত আসিবে না; তাহাদের বল, আসিবেই; শপত আমার প্রতিপালকের নিশ্চয় তোমাদের নিকটও আসিবে। তিনি অদৃশ্য বিষয় সমূহ সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে জ্ঞাত। আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীতে তাহার অগচড় নয় অনু পরিমাণ কিছু কিংবা ততপেক্ষা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ কিছু।"
তাহলে কুরআন বলছে, অনুর চাইতে ছোট ও বড় উপাদান আছে। তাই কুরআন আসলে সেকেলে নয়; এটা খুবই আধুনিক।
একই কথা আছে পবিত্র কুরআনে সূরা ইউনুস-এর ৬১ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে যে,
"তোমাদের প্রতিপালকের অগচর নহে কিছুই; অনু অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর অথবা বৃহত্তর কিছু।"

জাকির নায়েক তার বক্তব্যে উপরুক্ত কথাগুলো পরমানুবাদ সম্পর্কে বলেছে। এখন আমরা তার বক্তব্যকে বিশ্লেষনের মাধ্যমে দেখবো যে তার করা দাবী অনুযায়ী কুরআনে আসলেই পরমানুবাদ সম্পর্কে তার উপরিউক্ত কথা গুলো সঠিক নাকি জাকির নায়েক প্রতারণা করে মানুষকে বোকা বানিয়েছে।
জাকির নায়েক দাবী করেছে কুরআনে পরমানু সম্পর্কে আধুনিক আবিষ্কারের কথা লেখা আছে। কিন্তু আসলেই কি কুরআনে পরমানুবাদের মৌলিক আবিষ্কারের কথা লেখা আছে? জাকির নায়ের তার দ্বাবীর পক্ষে কুরআনের দুটো আয়াতের উল্লেখ করেছে। আয়াত দুটোর প্রকৃত অনুবাদ হলো-
সূরা সাবা, আয়াত ৩
"কাফিররা বলেঃ আমাদের উপর কিয়ামত আসবে না। বলঃ হ্যাঁ আসবেই, শপথ আমার প্রতিপালকের, নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট ওটা আসবে। তিনি অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে তাঁর অগচর নয় অণু পরিমাণ কিছু কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ কিছু; বরং এর প্রত্যেকটি লিপিবদ্ধ আছে সুস্পষ্ট কিতাবে।" (অনুবাদ- প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান)
জাকির নায়েক তাঁর মিথ্যাবাদিতা এবং প্রতারণার ক্ষমতা দিয়ে এই আয়াতটির অর্থের তেমন বিকৃতি করেনি। কিন্তু জাকির নায়েক এখানে যে প্রতারণার আশ্রয়টি নিয়েছে সেটি হলো, সে আয়াতটির শেষ অংশ উপস্থাপন করেনি। কারণটিও খুব স্পষ্ট। জাকির নায়েক সব সময়ই মিথ্যা কথা বলে এবং প্রতারণামূলক কথা বলে। এখানেও জাকির নায়েক সম্পূর্ণ আয়াতটি উপস্থাপন না করে, এই আয়াতটির সুবিধামত কিছু অংশ উপস্থাপন করেছে যাতে তার কথা মানুষের কাছে সত্য বলে উপস্থাপন করতে পারে।
আয়াতটির যে অংশটুকু জাকির নায়েক উল্লেখ করেছে সেখানে পরমানুবাদের আধুনিক আবিষ্কারের কথা উল্লেখ না থাকলেও একটি ধুয়াশার মতো কথা বলা আছে। কুরআনের এই আয়াতটিতে সত্যিই উল্লেখ করা আছে যে আল্লাহর কাছে অনু এবং অনু অপেক্ষা ক্ষুদ্র বা বৃহৎ কিছুর সম্যক জ্ঞান আছে। কিন্তু এই আয়াতটি দিয়ে পরমানুর আধুনিক আবিষ্কারের কথা প্রমানিত হয় না। কারণ কুরআনের এই আয়াতটি একটি দ্বিঅর্থক বাক্য। এর দ্বারা হ্যাঁ এবং না দুটোই বুঝায়। কুরআনের আয়াতটিতে বলা হয়েছে, "তাঁর (আল্লাহর) অজানা নয় অনু পরিমান কিছু বা তার চেয়ে ক্ষুদ্র বা বড় কিছু।" অর্থাৎ আল্লাহ অনু পরিমান কিছু সম্পর্কে সব জানে এমনকি যদি তার চেয়ে ছোট বা বড় কিছু থেকে থাকে তবে আল্লাহ সেগুলো সম্পর্কেও জানে। অর্থাৎ আয়াতটি দিয়ে বুঝায় যদি অনুর থেকে ছোট কিছু থাকে তবে তাও সে জানে। কিন্তু এই আয়াতটি দিয়ে এটা প্রকাশিত হয় না যে কুরআনের আয়াতটি বলেছে অনুর চেয়ে ছোট কোন কিছুর অস্তিত্ব আছে। আয়াতটিতে এটাই বুঝানো হয়েছে যে যদি অনুর চেয়ে ছোট কিছু থেকে থাকে তবে সেই জ্ঞানও আল্লাহর আছে। অর্থাৎ এই আয়াতটি দিয়ে আছে এবং নেই এই দুটো অর্থই বুঝায়। এখানে জাকির নায়েক তার সুবিধা মতো অনুর চেয়ে ক্ষুদ্র কিছু আছে এই অর্থটিকে নিয়েছে যাতে সে ভূলে ভরা কুরআনকে বিজ্ঞানময় দেখাতে পারে।
কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে এই আয়াতটি দিয়ে কখনই বুঝা সম্ভব নয় যে অনুর চেয়ে ছোট কিছুর অস্তিত্ব আসলেই আছে নাকি নেই?
এই বাক্যটি এমন যে যদি বিজ্ঞান আবিষ্কার করতো যে অনু বা পরমানুর চেয়ে ছোট কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই তবে এই জাকির নায়েকই এই আয়াতটি উল্লেখ করে বলতো- এই আয়াতটিতে স্পষ্ট করে বলা নেই যে আসলেই অনুর চেয়ে ছোট কিছুর অস্তিত্ব আছে কিনা।

কারণটি আমি আগেই বলেছি যে, এই বাক্যটি দ্বিঅর্থবোধক। এর অর্থ হ্যাঁ-ও হয় আবার না-ও হয়।
লক্ষ করুন বাক্যটিতে বলা হয়েছে- আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে নেই অনু পরিমান কিছু বা তার থেকে ছোট বা বড় কিছু। অর্থাৎ আল্লাহ অনু এবং অনুর চেয়ে ছোট যদি কিছু থেকে থাকে তার সম্পর্কে এবং অনুর চেয়ে বড় যা কিছু আছে তাদের সম্পর্কে সব জানে। কিন্তু এই আয়াতটির কোথাও বলা হয়নি যে অনু বা পরমানুর চেয়ে ছোট কিছুর অস্তিত্ব আসলেই আছে।
আর তাই এই আয়াতটি উল্লেখ করে এটা দ্বাবী করা অর্থহীন যে এখানে অনু বা পরমানুর চেয়ে ক্ষুদ্র কিছুর অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে। বরং অনু পরমানু সম্পর্কে একটা স্বাধারণ মানুষের মতো অনুমান মূলক একটি কথা বলেছে। যদি অনুর চেয়ে ছোট কিছু থাকে তবে তার সম্পর্কে জ্ঞান আল্লাহর আছে এটাই এই আয়াতটি দিয়ে বুঝানো হয়েছে। এই আয়াতটিতে কোথাও স্পষ্ট করে বলা হয়নি যে আসলেই অনু বা পরমানুর চেয়ে ছোট কিছুর অস্তিত্ব আছে; নাকি নেই।
বরং পদার্থের ক্ষুদ্রতা সম্পর্কে মানুষের একটি স্বাধারণ অনুমান এই আয়াতটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। মানুষ যেমন না জেনেই বলতে পারে যে অনুর চেয়ে ক্ষুদ্র কিছু যদি থাকে তবে সেটা আমরা না জানলেও সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই জানে কারণ সে সর্বজ্ঞানী। এখন তাই বলে আমরা দ্বাবী করতে পারবো না যে মানুষটি অনু বা পরমানুর চেয়ে ক্ষুদ্র কিছুর অস্তিত্ব সম্পর্কে জেনেই উক্ত দ্বাবীটি করেছে।
কেউ যদি বলে যে, "আমি অনু বা পরমানুর চেয়ে ক্ষুদ্র কোন কিছুকে নিজের চোখে দেখিনি।" এই কথাটি যদি কোন মানুষ দুই হাজার বছর আগে বলে থাকে তবে কি তার এই বাক্যটি দিয়ে অনুর চেয়ে ক্ষুদ্র কোন কিছুর অস্তিত্বের প্রমাণ হিসেবে দেওয়া যাবে? নাকি সে নিশ্চিত নয় যে আসলে অনু পরমানুর চেয়ে ছোট কিছু আছে নাকি নেই সেটাই এই বাক্যটি দিয়ে প্রকাশিত হবে।
ঠিক একই ভাবে কুরআনের এই আয়াতটি প্রাচীণকালের কোন স্বাধারণ মানুষের একটি স্বাধারণ কথা বলেছে। মানুষ প্রাচীণকাল থেকেই জানতো বা কল্পনা করতো যে সৃষ্টিকর্তা বিশ্বজগতের সব কিছুর জ্ঞানই রাখেন। আর তাই তারা বলতো যে, অনু বা পরমানুর চেয়ে ক্ষুদ্র কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তার জ্ঞানের বাইরে নয়। তিনি সব কিছু সম্পর্কেই জানেন।

এই ধারণাটি প্রায় সব ধর্মের মানুষের মধ্যেই প্রাচীণকাল থেকে প্রচলিত হয়ে আসছিল। মানুষের এই স্বাধারণ কথাটিই কুরআন উল্লেখ করেছে। আমরা জানি পদার্থের ক্ষুদ্রতম অংশকে পরমানু বলা হয়। আরবিতে যাকে যাররা বলা হয় বলে জাকির নায়েক দ্বাবী করেছে। অর্থাৎ পদার্থের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ থাকবে (কুরআন তৈরী হবার অনেক আগেই মানুষ শব্দটি তৈরী করেছিল) এই অতি ক্ষুদ্র অংশকে অনু বা পরমানু বলে যদি সম্বোধন করা হয় এবং কোন নতুন ধর্ম এসে এই শব্দটি তার ধর্মগ্রন্থে লিখে দেয় তবে তার মানে এটা হয়ে যায় না যে সেই ধর্মগ্রন্থটি বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক আবিষ্কারের কথাই বলেছে। অথচ কুরআনের কোথাও বলা হয়নি যে আসলেই অনু বা পরমানুর চেয়ে ক্ষুদ্র কিছুর অস্তিত্ব আছে নাকি নেই। কুরআন লেখক একজন স্বাধারণ মানুষ বলেই সে স্বাধারণ মানুষের মতো করে অনুমানমূলক দ্বাবী করেছে। যে দ্বাবী মুহাম্মদের আগেই মানুষ করে গেছে। সুতরাং এই আয়াতটি দিয়ে পরমানুবাদের আধুনিক আবিষ্কারের সাথে কুরআনের সাদৃশ্য খোজা জাকির নায়েকের মতো মিথ্যাবাদী, ভন্ড প্রতারকের দ্বারাই সম্ভব।

যদি তা নাই হয় তবে প্রতারক জাকির নায়েক যে আয়াতের উল্লেখ করেছে সেটি সম্পূর্ণভাবে কেন তুলে ধরলো না? কুরআনে অনু বা পরমানুর থেকে ছোট কোন কিছুর অস্তিত্ব আছে কিনা সেটি আয়াতটির শেষের অংশটুকুতে এর ধারণা পাওয়া যায়। অথচ ভন্ড জাকির নায়েক আয়াতটির শেষ অংশটুকু বর্ণনা করেনি। কারণ তাহলে সে পরমানুবাদ নিয়ে প্রতারণাটুকু করতে পারতো না।
আয়াতটি আরেক বার লক্ষ করুন-
সূরা সাবা, আয়াত ৩
"কাফিররা বলেঃ আমাদের উপর কিয়ামত আসবে না। বলঃ হ্যাঁ আসবেই, শপথ আমার প্রতিপালকের, নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট ওটা আসবে। তিনি অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে তাঁর অগচর নয় অণু পরিমাণ কিছু কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ কিছু; বরং এর প্রত্যেকটি লিপিবদ্ধ আছে সুস্পষ্ট কিতাবে।"

লক্ষ করুন "আল্লাহর অগচর নয় অনু পরিমান কিছু তদপেক্ষা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ কিছু" এই কথার পরেই বলা হয়েছে, "বরং এর প্রত্যেকটি লিপিবদ্ধ আছে সুস্পষ্ট কিতাবে। অর্থাৎ অনু পরিমান কিছুর ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ কিছুর অস্তিত্ব আছে কি নেই সেটি সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা আছে। কিন্তু সেই সুস্পষ্ট কিতাবটি কোনটা। সেই কিতাবটি কি কুরআন?
অথচ কুরআনের কোথাও অনু পরিমানের চেয়ে ছোট কিছুর অস্তিত্বের কথা উল্লেখ নেই। কিন্তু ভন্ড এবং প্রতারক জাকির নায়েক আয়াতটির এই অংশটুকু গোপন করে গেছে। কেন সে এমনটি করেছে সেটি বুঝতে বুদ্ধিমান মানুষের বাকী নেই। কারণ এই অংশটিতে খুব স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে যে অনু পরিমানের ছেয়ে ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ সব কিছুর কথাই সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা আছে। কিন্তু কুরআনের কোথাও অনু পরিমানের চেয়ে ক্ষুদ্র বা বৃহৎ কিছুর অস্তিত্বের কথা লেখা নেই। অর্থাৎ ভন্ড প্রতারক জাকির নায়েকের মতই কুরআন লেখক মিথ্যা কথা বলেছে। আর এই আয়াতটির সুবিধামত কিছু অংশ তুলে ধরে প্রতারক জাকির নায়েক মিথ্যে দ্বাবী করেছে। আসলে কুরআনের ওই আয়াতটিতে আধুনিক পরমানুবাদের সাম্প্রতিক ধারণাটি (অনু বা পরমানুকে ভাঙ্গা যায়) উল্লেখ নেই। আর তাই জাকির নায়েকের কথাটি সম্পূর্ণরুপে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।

জাকির নায়েক কুরআনের অন্য যে আয়াতটি উল্লেখ করেছে সেটি হলো-
সূরা ইউনুসের ৬১ নাম্বার আয়াত
"(হে নবী) তুমি যে কাজেই থাকো না কেন এবং সে (কাজ) সম্পর্কে কোরআন থেকে যা কিছু তেলাওয়াত করো না কেন (তা আমি জানি, হে মানুষেরা), তোমরা যে কোনো কাজ করো, কোনো কাজে তোমরা যখন প্রবৃত্ত হও, আমি তার ব্যাপারে তোমাদের ওপর সাক্ষী হয়ে থাকি, তোমার মালিকের (দৃষ্টি) থেকে একটি অণু পরিমাণ জিনিসও গোপন থাকে না, আসমানে ও যমীনে এর চাইতে ছোট কিংবা এর চাইতে বড়ো কোনো কিছুই নেই যা এ সুস্পষ্ট গ্রন্থে লিপিবদ্ধ নেই।"  (অনুবাদ- হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ)

এই আয়াতটিতে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে যে মানুষ যা কিছুই করুক না কেন আল্লাহ (সৃষ্টিকর্তা) সব কিছুই দেখে বা জানে। আল্লাহর জানার বাইরে কোন কিছুই নয়। আল্লাহ সব কিছু সম্পর্কে এতটাই জ্ঞাত যে তার দৃষ্টির বাইরে এক চিলতে অনুও নেই। এমন কি অনুর চেয়ে ক্ষুদ্র বা বৃহৎ কিছু সম্পর্কেও সে জানে। আর অনু বা পরমানুর চেয়ে ক্ষুদ্র বা বৃহৎ সব কিছুর বর্ণনা একটি গ্রন্থে লেখা আছে।
কিন্তু কুরআনের কোথাও অনুর চেয়ে ছোট বা বড় কিছু আছে কিনা সেটা লেখা নেই। কুরআনের এই আয়াতটি দিয়ে অনু বা পরমাণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কিছু আছে কি নেই সেটি বর্ণনা করেনি। বরং এই আয়াতটি দিয়ে আল্লাহর সর্বজ্ঞান ক্ষমতা বা সর্বজ্ঞাত ক্ষমতা তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ এই আয়াতটি দিয়ে আল্লাহ যে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকেও দেখতে পায় তাই তার দৃষ্টির পরিসীমা অসীম এই কথাটিই তুলে ধরেছে। এই আয়াতটি দিয়ে পরমাণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কোন কিছু সত্যিই আছে কি নেই সেটা বর্ণনা করা হয়নি। তাহলে আয়াতটিতে একথা লেখা থাকতো যে অনুর চেয়ে ক্ষুদ্র যা কিছু আছে তা আল্লাহ দেখতে পান। বরং আয়াতটি দিয়ে কুরআন লেখক বুঝাতে চেয়েছে আল্লাহর দৃষ্টি ক্ষমতা এতই প্রখন যে আল্লাহ অতি ক্ষুদ্র বস্তুও দেখতে পায় যদি তা অণুর চেয়ে ক্ষুদ্রও হয়।
অর্থাৎ আয়াতটি দিয়ে একজন স্বাধারণ মানুষের একটি স্বাধারণ অনুমান যে, অণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কণিকা থাকলেও থাকতে পারে। আর যদি থেকে থাকে তবে সৃষ্টিকর্তা সেটাও জানেন এবং তা দেখতে পান।

জাকির নায়েকের উল্লেখ করা দুটি আয়াতেই বলা হয়েছে অনুর চেয়ে ক্ষুদ্র কিছু যদি থেকে থাকে তবে তা সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা আছে। কিন্তু কুরআনের কোথাও এসম্পর্কে কোন কিছুই লেখা নেই। তাহলে এই সুস্পষ্ট কিতাবটি কোথায় বা এর কোন জায়গাটিতে অনুর চেয়ে ক্ষুদ্র কিছুর অস্তিত্ব আছে কি নেই সেটি বর্ণনা করা রয়েছে? অথচ সমস্ত কুরআন ঘেটেও এ সম্পর্কে কোন আয়াত বা বাণী পাওয়া যায় না। কিন্তু জাকির নায়েক প্রতারণার উদ্দেশ্য এই আয়াত দুটোর কিছু অংশ উপস্থাপন করেছে আর বাকী অংশটুকু গোপন রেখেছে। সে কেন এমনটি করেছে তা বুঝা কষ্টকর নয়। এজন্যই মিথ্যাবাদী প্রতারক জাকির নায়েক এমনটি করেছে যাতে তার মিথ্যা দ্বাবী এবং চতুরতা সম্পর্কে কেউ কিছু না বুঝতে পারে।
কুরআনের যে আয়াতটি দিয়ে একজন স্বাধারণ মানুষের অনুমান মূলক একটি কথা বলা হয়েছে (যে আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তা অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কেও জানেন, তার জানার বাইরে কিছুই নয়। তিনি অণু পরিমান কিছুও দেখতে পান এবং অণুর চেয়ে যদি কোন ক্ষুদ্র কিছু থেকে থাকে তবে তাও তিনি দেখতে পান। তার জ্ঞান এতটাই বিস্তৃত।) সেই আয়াতটি উদ্দেশ্যমুলক ভাবে কিছু অংশ তুলে ধরে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেছে মিথ্যাবাদী এবং প্রতারক জাকির নায়েক।

আমি আগেই বলেছি যে, আয়াতটি একটি দ্বিঅর্থ বোধক বাক্য। এ ধরনের বাক্য দিয়ে আসলে কোন কিছুর নির্দিষ্ট বা প্রকৃত অর্থ পাওয়া যায় না। এরকম দ্বিঅর্থ বোধক বাক্য দিয়ে হ্যাঁ বোধক এবং না বোধক এই দু ধরণের অর্থই প্রকাশ পায়। যেমনটি ওই আয়াত দুটোতে এটা স্পষ্ট করে উল্লেখ নেই যে অণুর চেয়ে ছোট কিছুর অস্তিত্ব আসলেই আছে নাকি নেই। আয়াতটিতে সৃষ্টিকর্তার দৃষ্টি ক্ষমতা বা জ্ঞানের অসীমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। কিন্তু আসলেই অণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কোন কিছুর অস্তিত্ব আছে নাকি নেই সেটি বলা হয়নি। বরং বাক্যটি দিয়ে এটাই বোঝানো হয়েছে যে যদি অণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কোন কিছুর অস্তিত্ব থেকে থাকে তবে সেটাও সৃষ্টিকর্তা জানেন বা দেখতে পান।

সূরা সাবার ৩ নং আয়াতটি লক্ষ করলে দেখা যায় সেখানে বলা হয়েছে,
"আল্লাহ অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে তাঁর অগচর নয় অণু পরিমাণ কিছু কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ কিছু; বরং এর প্রত্যেকটি লিপিবদ্ধ আছে সুস্পষ্ট কিতাবে।"
এই বাক্যটিতে আল্লাহর সর্বজ্ঞাত'তা সম্পর্কে নিশ্চিত করে উল্লেখ থাকলেও অণু বা অণুর চেয়ে কোন ক্ষুদ্র কিছু আছে কি নেই সেটা স্পষ্ট করে উল্লেখ নেই। যদি বাস্তবতা এমন হতো যে আসলে অণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কিছুর কোন অস্তিত্ব নেই তবে জাকির নায়েকের মতো লোকেরাই (যারা সত্যকে গোপন করে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়) দ্বাবী করতো যে, যেহেতু এই আয়াতটিকে অনুর চেয়ে ক্ষুদ্র কিছু আছে সেটি স্পষ্ট করে উল্লেখ নেই তাই কুরআন ভূল নয়।
কারণ বাক্যটি দ্বিঅর্থ বোধক। তাই যেহেতু অনুর চেয়ে ক্ষুদ্র কিছুর অস্তিত্ব বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে তাই জাকির নায়েক তার সুবিধা মতো এই আয়াতের হ্যাঁ বোধক অর্থটি সবার সামনে তুলে ধরেছে। কিন্তু এই আয়াতের যে একটি না বোধক অর্থ হতে পারে (অণুর চেয়ে ছোট কিছুর অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে) সেটি এড়িয়ে গেছে সঙ্গত কারণেই।

অণু বা পরমানু বাদ বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার নয়। বিজ্ঞান জগতে পরমাণুবাদ বা অণু পরমাণুর গঠন প্রমাণির ধারণা বিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্তত একশ বছর পুরনো। এই পরমাণুকে কেন্দ্র করে বিজ্ঞানের একটি নতুন শাখার উন্মোচন হয়েছে। সেটা হলো কোয়ান্টাম ফিজিক্স। পরমাণুর অভ্যন্তরের জগত নিয়েই কোয়ান্টাম ফিজিক্সের কাজ কারবার। অর্থাৎ বিজ্ঞানের জগতে পরমাণু সম্পর্কিত জ্ঞান খুবই আধুনিক কালের আবিষ্কার। আধুনিক বিজ্ঞান পরমাণুর অভ্যন্তরের ব্যাপারগুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করে চলেছে। কিন্তু পরমাণু বা অণুর ধারণাটি প্রাই দুই হাজার বছর পুরনো বলা চলে। প্রাচীণ গ্রীক দার্শনিকগণ পরমাণু বা অণুর ধারণা দুই হাজার বছর পূর্বেই দিয়েছিলেন। যদিও তাদের অনেক ধারণাই ভূল ছিল। গ্রীক দার্শনীকগণ ধারণা করেছিল যে প্রত্যেক পদার্থকে ভেঙ্গে যেহেতু ছোট ছোট অংশে ভাগ করা যায় তাহলে নিশ্চয় এগুলোকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে ছোট করতে করতে এক সময় এগুলো এমন অবস্থায় পৌছবে যেখানে এগুলোকে আর ভেঙ্গে ছোট করা যাবে না। এই অতিক্ষুদ্র অংশকেই তারা অণু নাম দিয়েছিল। তারা ভেবেছিল পদার্থের এই অতিক্ষুদ্র অংশকে আর ছোট অংশে ভাগ করা যায় না। এভাবেই অনু পরমানুর ধারণার সুত্রপাত হয়েছিল গ্রীক দার্শনীকদের হাত ধরে। যদিও গ্রীক দার্শনীকদের অণু সম্পর্কে ধারণা অভ্রান্ত ছিল না। ফলে দুই হাজার বছর পরে বিজ্ঞানীগণ আবিষ্কার করেন যে অণুকে তো ক্ষুদ্র অংশে পরমাণুতে ভাগ করা যায়ই উপরন্তু এই পরমাণুকেও আরো অতি ক্ষুদ্র কণিকায় ভাগ করা যায় (ইলেক্ট্রন, প্রোটন নিউটন প্রভৃতি আকারে)। ফলে অণু সম্পর্কিত গ্রীক দার্শনীকদের ভূল ধারণাটি মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে। এখানে গ্রীক দার্শনীকদের ভূল ধরাটা অযৌক্তিক। কারণ আমাদের মনে রাখা উচিত যে আজ থেকে দুই হাজার বছর পূর্বের জ্ঞান ও প্রযুক্তি দিয়ে তাদের পক্ষে অণু বা পরমাণুকে নিয়ে গবেষণা করা সম্ভব ছিল না বলেই অণু-পরমাণু সম্পর্কে তাদের ধারণা সঠিক হয়নি। এতে তাদের কিছু করার ছিল না।

অণু এবং পরমাণুকেও যে আরো ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করা সম্ভব এটি অষ্টাদশ শতকের আগে কেউ আবিষ্কার করেনি। পৃথিবীর সব মানুষ এবং ধর্মগুলো গ্রীকদের ওই প্রাচীণ ধারণাটিকেই সত্য ভেবে এসেছে। ফলে জাকির নায়েকের দ্বাবী অনুযায়ী যদি আসলেই কুরআনে অণু পরমাণুর ক্ষুদ্রতম অংশের কথা উল্লেখ থাকতো তবে অবশ্যই মানুষ সেটা অনেক আগেই জানতো। আর সেটা মুসলমানদের মধ্য থেকে হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু আমরা জানি অণু বা পরমাণুর ক্ষুদ্রতর অংশের কথা মুসলমানদের কাছ থেকে আসেনি।
একটি কথা না বললেই নয়, যদি ধরে নেই যে অনুকে ভাঙ্গা যায় না এই কথাটি যদিও গ্রীকরা বলেছিল তবে তাদের অনু সম্পর্কিত ধারণাগুলো কিন্তু মিথ্যে ছিল না। পদার্থকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে অতি ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করলে একটি উপাদান আসলেই পাওয়া যায়। আর এই ক্ষুদ্রতম অংশকে ভাংলে পদার্থের মুল বৈশিষ্ট আর অবশিষ্ট থাকে না। আবার গ্রীক দার্শনীকরা যেমনটি ধারণা করেছিল যে পদার্থকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে এক সময় এমন এক অবস্থা তৈরী হয় যে একে আর ভাঙ্গা যায় না; এই কথাটিও কিন্তু একেবারে মিথ্যে নয়। কারণ আমরা জানি পরমাণুকে ভেঙ্গে ইলেক্ট্রন, প্রোটন এবং নিউটন পাওয়া যায়; যাদেরকে আবার ভাঙ্গলে কোয়ার্ক পাওয়া যায়। মনে করা হতো এদের আর ভাঙ্গা যায় না। কিন্তু আধুনিক স্ট্রিং থিউরী বলছে এই সব কোয়ার্কগুলোকেও ভাঙ্গলে এক ধরনের অতি অতি ক্ষুদ্র অংশ পাওয়া যাবে যাকে স্ট্রিং বলা হচ্ছে। অর্থাৎ গ্রীকদের ধারণা অনুযায়ী একটি অতি ক্ষুদ্র কণিকা পাওয়া যাচ্ছেই যাদেরকে আর ভেঙ্গে ছোট করা যাবে না। যদি আবার দেখা যায় যে এই স্ট্রিং-গুলোকেও ভেঙ্গে ছোট করা যায় তবে ধারণা করা যায় অবশ্যই একটা অতি অতি অতি ক্ষুদ কিছু পাওয়া যাবে যাকে আর ছোট করা যাবে না। কারণ ক্ষুদ্র হতে হতে একসব এই সব অতি অতি অতি ক্ষুদ্র উপাদানগুলোকে একেবারে শেষ অবস্থায় ক্ষুদ্র করলে সেটি শুন্যে মিলিয়ে যাবে। আর তাই শূন্যতায় মিলিয়ে যাওয়ার আগে এটির একটি অতি অতি অতি ক্ষুদ্র অবস্থা অবশ্যই থাকবে বলে আমরা ধরে নিতে পারে যাকে আর ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করা যাবে না।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে গ্রীকদের ধারণা পুরোপুরি মিথ্যে নয়। পদার্থকে ভেঙ্গে ছোট করতে করতে আসলেই একটি অবস্থা চলে আসে যেটাকে আর ছোট করা যায় না। এই অর্থে গ্রীকরা ভূল ছিল না।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে শব্দে, শব্দ প্রয়োগে। গ্রীকরা পদার্থের অতি ক্ষুদ্র অংশকে অণু নাম দিয়েছিল। কিন্তু অণু এবং পরমাণুকে ভেঙ্গে যে উপাদান পাওয়া গেছে তাদের নাম দেওয়া হয়েছে ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউটন প্রভৃতি। এছাড়াও আছে নিউট্রিনো, মেসন, পজিট্রন। এদেরকে একেকটি নাম দেওয়া হয়েছে। আবার এদেরকেও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করে বেসন এবং কোয়ার্ক পাওয়া যাবে। আবার এদেরকেও যদি ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করা যায় তবে স্ট্রিং-এর মতো এক ধরণের তন্তুর মতো উপাদান পাওয়া যাবে। ফলে গ্রীকরা যে পদার্থের অতি ক্ষুদ্র অংশের (যাকে আর ভাগ করা যায় না ) নাম দিয়েছিল এটম সেটি এটম না হয়ে স্ট্রিং হলেই কিন্তু গ্রীকদের ধারণাকে আর মিথ্যে বলা যাবে না। অর্থাৎ সমস্যা হচ্ছে নামে। একথা ঠিক যে গ্রীকরা পদার্থের অতি ক্ষুদ্রতর অংশকে এটম নাম দিয়েছিল এবং এর কিছু বৈশিষ্ট্যও তারা উল্লেখ করেছিল। কিন্তু পদার্থের অতি অতি ক্ষুদ্র অংশকে যদি আমরা কোয়ার্ক বা বেসন কণা বলি অথবা স্ট্রিং নাম দিই তাহলে গ্রীকদের বর্ণিত পদার্থের অতি ক্ষুদ্রতম অংশকে আমরা পেয়ে যাব যাদেরকে আর ভেঙ্গে ছোট করা যাবে না।

তাহলে দেখা যাচ্ছে গ্রীকরা যেমনটি ধারণা করেছিল যে পদার্থকে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আসলেই একটি অবস্থায় আসবে যখন তাকে আর ভাঙ্গা যাবে না সেই কথাটি মিথ্যে নয়। কারণ পদার্থের অভ্যন্তরের অতি ক্ষুদ্র অংশকে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে যদি সত্যিই শেষ অবস্থায় যাওয়া যায় তবে অবশ্যই আমরা একটি অতি অতি অতি ক্ষুদ্র অংশ পাব যেটাকে আর ভাঙ্গা যাবে না। কারণ তাহলে সেই অতি অতি অতি ক্ষুদ্র অংশটিকে শুন্যতায় মিলিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমরা জানি যে কোন কণা ভেঙ্গে ভেঙ্গে শুণ্য হয়ে যাবে না বরং এটি একটি নির্দিষ্ট ক্ষুদ্রতায় যেয়ে শুন্য আকৃতির কাছাকাছি হবে ফলে একে আর ক্ষুদ্র অংশে ভাঙ্গা যাবে না।
ফলে গ্রীকদের ধারণা এই অংশটিতে এসে সত্য প্রমাণিত হবে। (যদিও গ্রীকদের অণু ধারণার সাথে এর সম্পূর্ণ মিল হবে না।)

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে সমস্যা গ্রীকদের ধারণায় নয়। সমস্যা শব্দ প্রয়োগে। কুরআনেও যে শব্দটি দিয়ে অণু বুঝানো হয়েছে সেই শব্দটির একটি নির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে। ওই শব্দটি দিয়েও এমন কিছুকে বুঝানো হয়েছে যা অণু বা পদার্থের ক্ষুদ্রতম (যার চেয়ে কিছু ছোট হতে পারে না) অংশ। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী কুরআন বর্ণিত সেই অণু বা ক্ষুদ্রতম অংশটিকেও ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব হয়েছে।

স্বাধারণত প্রত্যেক ভাষাতেই অতি ক্ষুদ্র বুঝাতে তাদের নিজস্ব কিছু শব্দ আছে। আর সেই শব্দটি দিয়ে এমন ক্ষুদ্র কিছুকে বুঝানো হয় যাকে আর ভাঙ্গা যায় না। কুরআনে একটি ক্ষুদ্র বস্তুকে বুঝিয়েছে যার অর্থ ক্ষুদ্র পদার্থ বা ক্ষুদ্র বস্তু। এখন আমাদের দেখতে হবে যে কুরআন কি অণু বলতে এমন একটি শব্দকে বেছে নিয়েছে যার মানে দিয়ে এমন কিছুকে বুঝায় যাকে আর ভেঙ্গে ছোট করা যাবে না? নাকি কুরআনে এমন একটি শব্দকে ব্যবহার করা হয়েছে যার মানে ক্ষুদ্র কণিকা যাকে ভাগ করা যায়। আমাদের বুঝা উচিত অণু এবং ক্ষুদ্র বস্তু কিন্তু এক শব্দ বা একই জিনিস নয়। ক্ষুদ্র বস্তু যেকোন কিছুই বা যেকোন পরিমানই হতে পারে। কিন্তু অণুর একটি নির্দিষ্ট অর্থ বা পরিমাণ রয়েছে। গ্রীকরা অণু নাম দিয়েছিল পদার্থের এমন একটি অবস্থা বা পরিমাণকে যাকে আর ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করা যায় না। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানে অণু হলো কোন পদার্থের ক্ষুদ্রতম সেই অংশটি যার মধ্যে পদার্থের নিজস্ব ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য থাকে। কিন্তু সেই অণুকে ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করা যায় কিন্তু একে ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করার পর আর সেই পদার্থটি অবশিষ্ট থাকে না। পদার্থটি বদলে যেয়ে অন্য কিছুতে পরিণত হয়। অর্থাৎ গ্রীকদের অণু এবং আধুনিক বিজ্ঞানের অণু একই শব্দ কিন্তু অর্থ এবং প্রয়োগ ভিন্ন। আসলে গ্রীকদের অণু এবং আধুনিক বিজ্ঞানের অণু একই অর্থ বোঝায় না এবং একই ধরণের জিনিসকেও বোঝায় না। গ্রীকদের অণু মানে হচ্ছে যাকে আর ভাগ করা যায় না। কিন্তু এই অণু শব্দটিকে আজকের যুগের বোসন, কোয়ার্ক অথবা স্ট্রিং-কে বুঝানো যেতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানে অণুর একটি স্বতন্ত্র অর্থ রয়েছে যেটি গ্রীকদের কাছ থেকে আসলেও এর অর্থের পরিবর্তন হয়েছে।

এজন্যই আমি বলতে চেয়েছি যে কুরআনে বর্ণিত অণু বোঝাতে যে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তার অর্থ এবং আধুনিক বিজ্ঞানের অণু একই জিনিস কিনা সেটি আগে জানতে হবে। যদি না হয়ে থাকে তবে কুরআনের অনুবাদের অণু আর বিজ্ঞানের অণু এক হবে না। ফলে জাকির নায়েকের দ্বাবীও এক হবে না।

জাকির নায়েক যাররা শব্দটি উল্লেখ করেছে। এখন আমাদের দেখতে হবে যাররার প্রকৃত অর্থটি আসলে কি? যাররা-এর অর্থ যদি হয় কোন অতি ক্ষুদ্র পদার্থ তবে এর অর্থ অণু এর বদলে অতি ক্ষুদ্র কণা (যেমন বালির কণা) এই অর্থটিই অক্ষুণ্য রাখতে হবে। কিন্তু যেহেতু গ্রীকরা এবং বিজ্ঞান অণু শব্দটির ব্যবহার করেছে তাই যাররা শব্দটির অর্থ অনুবাদকগণ বর্তমান সময়ের সাথে মিল রেখে অণু করেছেন। ফলে কুরআনের এই আয়াত দুটোতে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে কুরআন বুঝি অণুর থেকে ক্ষুদ্র কিছুর অস্তিত্ব থাকার কথা বলছে। কিন্তু যাররা-এর অর্থ যদি কোন ক্ষুদ্র কণা (যেমন বালুর কণা) হয় তবে একে ভেঙ্গে ছোট করা যাবে এটাই স্বাভাবিক। আর তাই কুরআনের এই আয়াতটি দ্বারা কখনই আধুনিক অণু পরমাণুর ক্ষুদ্রতর কণাগুলোকে বুঝাবে না। ফলে জাকির নায়েকের দ্বাবীটি ভিত্তহীন হবে।

কিন্তু কুরআনের কোথাও অণু বা পরমাণুর সংজ্ঞা দেওয়া নেই। আবার অণু বা পরমাণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কোন কিছুর অস্তিত্ব আসলেই আছে নাকি নেই তার সম্পর্কে কিছু্ই বলেনি। কুরআনের আয়াতটি শুধু একটি অনুমান মূলক কথা বলেছে। অনেকটা অন্ধের ঢিল ছুড়ার মতো। যদি লেগে যায় তবে আম পড়বে কিন্তু না লাগলে কোন ক্ষতি নেই।
ফলে এই আয়াতটি মোটেও আধুনিক পরমাণুবিদ্যার কথা বলেনি যেমনটি প্রতারক জাকির নায়েক দ্বাবী করেছে। কুরআনের এই আয়াত দুটোতে শুধু মাত্র আল্লাহর ক্ষমতা বর্ণনা করতে যেয়ে একটি অনুমান মুলক বক্তব্য পেশ করেছে। প্রাচীণকালের মানুষ যেমন অনুমান করেছিল যে সৃষ্টিকর্তার সর্ব বিষয়ে জ্ঞান রয়েছে এবং সৃষ্টিকর্তা অতি ক্ষুদ্র জিনিস (যা মানুষ দেখতে পায় না) সেটাও দেখতে পায়। সেটা যদি অণুর চেয়ে ছোট কিছু হয়ে থাকে অর্থাৎ যদি অনুর চেয়ে ছোট কিছু থেকে থাকে তবে সৃষ্টিকর্তা তাও দেখতে পায়। কুরআন লেখক আল্লাহর সর্বজ্ঞাততা প্রকাশ করতে যেয়ে উপরুক্ত আয়াতে তার অনুমান মূলত দ্বিঅর্থ বোধক কথাটি বলেছে।

এবার জাকির নায়েকের বকৃতাটি পর্যালোচনা করে দেখি যে সে কি কি পদ্ধতিতে প্রতারণা করেছে।
জাকির নায়েক পরমানুবাদ সম্পর্কে বলতে যেয়ে বলেছে যে, গ্রীকরা যে অণুর ধারণা প্রদান করেছিল সে সম্পর্কে আরবদেরও ধারণা ছিল।
জাকির নায়েক এজন্যই এই কথাটি বলেছে যাতে বোকা মুসলমানরা ধরতে না পারে যে অণুর চেয়ে কোন কিছু থাকা সম্ভব নয় গ্রীকদের এই ধারণাটি মুহাম্মদের জানা ছিল। কিন্তুতারপরেও কুরআনে একথা লেখা আছে তার মানে মুহাম্মদ জানার পরেও যেহেতু এটি কুরআনে উল্লেখ নেই তাই কুরআন মুহাম্মদ লেখেনি বরং কুরআন আল্লাহ লিখেছে।
প্রথমত. কুরআন আল্লাহ লিখে পৃথিবীতে পাঠায়নি। বরং মুহাম্মদের বলা কথাগুলোকে তার অনুসারীরা নিজের হাতে লিখে রেখেছে আর সেটিই কুরআন আকারে গ্রন্থিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত. মুহাম্মদেরও পৃথিবীর তাবৎ মানুষের মতো গ্রীকদের অণু সম্পর্কিত এই কথাটি জানা ছিল না। আর তাই সে জানতো না যে গ্রীকরা মনে করেছিল যে অণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়।
ফলে মুহাম্মদ ভেবেছে অবশ্যই কণা বা অণুর চেয়ে কোন কিছু থাকতে পারে (যেমনটি গ্রীক দার্শনিকরা বাদে পৃথিবীর তাবৎ মানুষ এমনটিই ভেবেছিল। ফলে মুহাম্মদ তার নিজের ধারণাটিকে কুরআনে ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো করে দ্বিঅর্থ বোধক বাক্যের দ্বারা লিখে রেখেছে। এতে অস্বাভাবিকত্বের কিছু নেই। কিন্তু ভন্ড এবং মিথ্যাবাদী প্রতারক জাকির নায়েক এজন্য এই কথাটি বলেছে যাতে স্বাধারণ মানুষ সহজেই প্রতারিত হয়।

জাকির নায়েক দ্বাবী করেছে যে পরমাণুর আরবী শব্দ 'যাররা'। যেহেতু জাকির নায়েক একজন প্রমাণিত মিথ্যাবাদী তাই আমি তার কথাটি বিশ্বাস করলাম না। এই আয়াতটির অনুবাদগুলোতে অণুর কথা লেখা আছে। আমি সেটাকেই সত্য বলে ধরে নিচ্ছি। (মিথ্যাবাদীর কথাকে বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই।)

জাকির নায়েক আরও বলেছে, আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে পরমাণু হল কোন পদার্থের বৈশিষ্ট্য রক্ষাকারী ক্ষুদ্রতম উপাদান কিন্তু একে আলাদা করা যায় ইলেক্ট্রন, প্রোটন অংশে। জাকির নায়েকের এই কথাটি সত্য। (জাকির নায়েক মাঝে মাঝে সত্য কথাও বলে।) এই কথাটির পরেই জাকির নায়েক বলেছে, 'পরমাণুকে আলাদা করা যায় তাই লোকে ভাবতে পারে যে কুরআন সেকেলে হয়ে গেছে।' সাধে কি আর মানুষ জাকির নায়েককে জোকার নায়েক বলে! পরমাণুকে আলাদা করা যায় বলে কেন কুরআনকে সেকেলে ভাবা হবে? কেউ কি এমনটা দ্বাবী করেছে নাকি যে জাকির ভন্ড নায়েক এমন গর্ধব মার্কা কথা বলে উঠলো। স্বভাবতই ধারনা করতে পারি যে মানুষকে বোকা বানানোর জন্য এটি একটি "ইলি বিলি ঘাঁ" মার্কা প্রতারণামূলক কথা। জাকির নায়েক এমন অযৌক্তিক দাবীটা এজন্যই করেছে যাতে বোকা মুসলমানদেরকে খুব সহজেই (আরো) বোকা বানাতে পারে। প্রকৃতপক্ষে পরমাণুকে আলাদা করার সাথে কুরআনের সেকেলে হয়ে যাবার কোন সম্পর্ক নেই। এটি প্রতারক জাকির নায়েক এজন্যই বলেছে যাতে সে সহজেই তার মিথ্যা দ্বাবীকে সবার সামনে সত্য হিসেবে দেখাতে পারে।

এরপর জাকির নায়েক বলেছে, পবিত্র কুরআন ‘যাররা সম্পর্কে বলেছে; আর বলেছে, এটি একটি ক্ষুদ্রতম অংশ। কিন্তু কোথাও একথা লেখা নেই যে এটাকে আলাদা করা যায় না।
কথাটার মানেটা কি ঠিক বুঝলাম না। কুরআন যাররা সম্পর্কে কোথায়; কি বলেছে? কুরআনতো যাররা সম্পর্কে কিছুই বলেনি। বরং কুরআন আল্লাহর ক্ষমতা দেখাতে যেয়ে যাররা শব্দটি ব্যবহার করেছে। কুরআনতো কোথাও যাররা সম্পর্কে কিছু বলেনি! বরং কুরআন আল্লাহর সর্বজ্ঞাতা ক্ষমতা সম্পর্কে বলতে যেয়ে বলেছে যে আল্লাহ অণু পরিমাণ ক্ষুদ্র জিনিসও দেখতে পায়; এতটাই ক্ষমতাশালী সে। এমনকি অণুর চেয়ে যদি কোন ক্ষুদ্র কিছু থাকে তবে আল্লাহ সেটাও দেখতে পায় (এটা একটি অনুমাণমূলক কথা)। অর্থাৎ কুরআন যাররা সম্পর্কে নয়; বরং আল্লাহর ক্ষমতা দেখাতে যাররা শব্দটি ব্যবহার করেছে মাত্র। কুরআনের কোথাও যাররা সম্পর্কে কিছুই বলা নেই। জাকির নায়েকের এই দ্বাবীটি তার সব মিথ্যা দ্বাবীর মধ্যে একটা মিথ্যা দ্বাবী মাত্র।

জাকির নায়েকের কথাটি লক্ষ করুণ, সে বলেছে যে কুরআনে যেহেতু যাররা মানে ক্ষুদ্রতম অংশ (অর্থাৎ কিনা যার চেয়ে ক্ষুদ্র কিছু হয় না। ছোট বা ক্ষুদ্র, তার চেয়ে ছোট ক্ষুদতর এবং সব চেয়ে ছোট ক্ষুদ্রতম।) বলেছে এবং কুরআনের কোথাও একথা লেখা নেই যে এটাকে আলাদা করা যায় না তাই কুরআনের এই কথাটির অর্থ অবশ্যই একে আলাদা করা যায় এই অর্থটিই হবে। অন্য কিছু হতেই পারবে না।
প্রতারণার এক আশ্চর্যজনক উদাহরণ। যা কিছু কুরআনে বলা নেই যে সেটা হতে পারে না তার মানেটা (ভন্ড জাকির নায়েকের যুক্তি অনুযায়ী) হল কুরআন বলেছে সেটা অবশ্যই হবে। যদি কুরআনে ইন্টারনেটে পর্ন দেখতে না মানা করে থাকে তবে জাকির নায়েকের কুযুক্তি অনুযায়ী অবশ্যই অনলাইনে পর্ণ দেখা হালাল। ভাবটা এমন কুরআন যা কিছু হতে পারবে না বলে কুরআনে উল্লেখ করেনি, সেগুলোই কুরআনে বর্ণনা করা আছে।

জাকির নায়েকের এই কুযুক্তি অনুযায়ী কুরআন যেহেতু বলেনি যে বিজ্ঞানের আবিষ্কার গুলো হতে পারবে না, তাই যা কিছু বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে তা কুরআন বর্ণনা করেছে।
কুযুক্তিটা রক্ষ করুন যা কিছু কুরআনে উল্লেখ করা নেই সেটিই কুরআনে উল্লেখ আছে।
তাহলে আমি যদি একটা ছোট বই লেখি এবং তাতে মাত্র কয়েকটা বিষয় উল্লেখ করি তবে জাকির নায়েকের দ্বাবী অনুযায়ী যেহেতু আমি আমার বইয়ে লেখিনি যে পৃথিবীর অনেক ঘটনা যেগুলো ঘটেছে বা ঘটবে তা ঘটতে পারবে না, তাই আমি আসলে এগুলো আমার বইয়ে লিখেছি।
অদ্ভুত জাকির প্রতারক নায়েক।

কুরআনে যেমন বলা নেই যে যাররাকে ভাগ করা যাবে না ঠিক তেমনি এটিও বলা নেই যে এটাকে ভাগ করা যাবে। কুরআনে কোথাও অনুকে ভাগ করা যাবে এমনটি উল্লেখ করা নেই। এবং অনুর চেয়ে ক্ষুদ্র কিছুর অস্তিত্ব আসলেই আছে কিনা সেটাও কুরআনে উল্লেখ নেই। বরং কুরআনের আয়াতটিতে এমন ভাবে কথাটি লেখা রয়েছে যে এটি দ্বারা কেউ বুঝতে পারবে না যে আসলেই অণুর চেয়ে ক্ষুদ্রতর কিছুর অস্তিত্ব আছে নাকি নেই। কুরআন এ সম্পর্কে কোন কিছুই বলেনি যেমনটা প্রতারক জাকির নায়েক মিথ্যা দ্বাবী করেছে। আর তাই কুরআনে লেখা নেই বলে সেটাকে সত্যি হতেই হবে এমন কোন কথা নেই। তাই ভন্ড প্রতারক জাকির নায়েকের এরকম কুযুক্তি দেওয়া অর্থহীন এবং প্রতারণামুলক।  

এর পরেই জাকির নায়েক সূরা সাবা'র ৩ নাম্বার আয়াতের উল্লেখ করে বলেছে,
যেহেতু কুরআন বলা হয়েছে যে, "আল্লাহ অণু সম্পর্কেও সব জানেন ও দেখেন বা অণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কিংবা বৃহৎ কিছু সম্পর্কেও জানেন" সুতরাং কুরআন এটা দিয়ে বলেছে যে অনুর চেয়ে ক্ষুদ্র কিছুর অস্তিত্ব আছে।
জাকির নায়েক যদি সত্যবাদী হতো তবে এই আয়াতটি দিয়ে এটা দ্বাবী করতে পারতো যে কুরআন অনুযায়ী অণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কিছুর অস্তিত্ব থাকাতে কোন বাধা নেই। কিন্তু জাকির নায়েক অসৎ, ভন্ড প্রতারক বলে সে এই আয়াতটি দিয়ে সরাসরি দ্বাবী করে বসেছে যে এই আয়াতটিতে অণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কিছুর অস্তিত্ব আছে সেটিই বলা হয়েছে।
কিন্তু আয়াতটি ভালো করে লক্ষ করলেই দেখা যায় যে এতে অণুর চেয়ে ক্ষুদ্রতর কিছু থাকতে পারে বলে অনুমানমূলক কথা বলেছে। এই আয়াতটিতে এটা বলা নেই যে অনুর চেয়ে ক্ষুদ্রতর কিছু আছে। বাক্যটি লক্ষ করুণ বলা হচ্ছে আল্লাহর অগচর নয় অনু পরিমাণ কিছু অথবা তার চেয়ে ছোট বা বড় কিছু। এর অর্থ এটাই যে আল্লাহ অনুপরিমাণ কিছু সম্পর্কে জানেন এবং তার চেয়ে ছোট বা বড় কিছু যদি থেকে থেকে তবে সেটাও তিনি জানেন। অর্থাৎ এটি একটি অনুমানমূলক দ্বিঅর্থবোধাক বাক্য। যার নির্দিষ্ট একটি অর্থ নেই এর অর্থে যেমন আছে ব্যবহার করা যায় ঠিক সেভাবেই নেই এটিও ব্যবহার করা যায়। এটি একটি স্বাধারণ মানুষের অনুমানমূলক দ্বিঅর্থবোধক কাব্যিক কথা যা কুরআনের স্বাধারণ (মানুষ) লেখক কুরআনে উল্লেখ করেছে।
অর্থাৎ জাকির নায়েক যেমনটি দ্বাবি করেছে যে এই আয়াতটি অণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কিছুর অস্তিত্ব আছেই এটা বলেছে সেটি পুরোপুরি মিথ্যা এবং প্রতারণামুলক। বরং এই আয়াতটি দিয়ে অণুর চেয়ে ক্ষুদ্রতর কিছু থাকতে পারে এমন একটি অনুমান ফুটে উঠেছে। বলা হয়েছে, তার অগচর নয় অনু বা অনুর চেয়ে ক্ষুদ্র বা বৃহৎ কিছু। অর্থাৎ অনুর চেয়ে যদি কিছু থেকে থাকে তবে তিনি সেটাও জানে।
কিন্তু একথা লেখা নেই যে, তিনি অনু সম্পর্কে যেমন জানেন তেমনি তার চেয়ে ক্ষুদ্র বা বৃহৎ যা কিছু রয়েছে তার সম্পর্কেও জানেন। বরং বলা হয়েছে তার অগচর নয় অণু পরিমাণ কিছু অথবা তার থেকে ক্ষুদ্র বা বৃহৎ কিছু। এখানে কাব্যিকভাবে দ্বিঅর্থবোধক বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে যার নির্দিষ্ট কোন অর্থ নেই বরং হ্যাঁ বা না দুটি অর্থই বহন করে।
প্রতারক জাকির নায়েক শুধু তার সুবিধামত হ্যাঁ বোধক অর্থটি নিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে।
কুরআনের সব কিছুই শুধু সেকেলে এটিই নয় বরং প্রাচীণ মানুষের মিথ্যা, ভ্রান্ত, প্রাচীণ ধ্যাণধারণা সম্পন্ন একটি প্রাচীণ বই।

জাকির নায়েক যেভাবে কুরআনের একটি আয়াতের নির্দিষ্ট সুবিধাজনক অংশ তুলে ধরে এবং মিথ্যা বলে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর অপচেষ্টা করে মানুষকে প্রতারিত করেছে তাতে জাকির নায়েকের সব সময়ের ভন্ড মিথ্যাবাদী প্রতারকের চেহারাটাই স্পষ্ট হয়েছে। অন্য আর কিছুই হয়নি।


বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- কেন জাকির নায়েকের প্রতারণা প্রকাশ করার প্রয়াস?
জাকির নায়েক একজন বিখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব। ফলে তার অনেক ভক্ত আছে যারা তাকে অন্ধের মতো অনুসরণ করে চলে। ফলে মানুষের একটা বড় অংশ জাকির নায়েকের প্রতারণার স্বীকার হয়ে অপবিজ্ঞান এবং অপযুক্তি, অযুক্তি, কুযুক্তির দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে মানুষ বাস্তব জ্ঞান অর্থাৎ বিজ্ঞান থেকে পিছিয়ে পড়ছে। মানুষ বিজ্ঞান শেখার পরিবর্তে অপবিজ্ঞান শিখছে। তাই জাকির নায়েকদের মতো ভন্ড প্রতারকদের মুখোশ উন্মুক্ত করা প্রতিটি সচেতন মানুষের আবশ্যিক দায়িত্ব।

3 comments:

  1. Vi whoever you are you are quite intelligent.
    I am really impressed by your researchful thought. & I wanna talk to you. Wanna get some vast knowledge from you. My messenger name is Mcgyver Megh.
    A little question that is what is life?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ara Boka choda ..tor moto school fel kora scientists quaran explain korbe? Arabic grammar moulana mufti then u explain Korte parbe...Hindu religion Moto haoaso kor religion Ami dekhi nai...christen to masaallah .

      Delete
  2. Vi, আইনস্টাইন বলেছেন বিজ্ঞান এর গভীর জ্ঞান মানুষকে আস্তিক করে তোলে, আর স্বল্প জ্ঞান করে নাস্তিক । do you believe that?

    ReplyDelete