Translate

Search This Blog

বিশেষ সতর্কবার্তাঃ

এই ব্লগটি নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সন্দেহবাদী, মুক্তমনা এবং স্বাধীনচেতা মানুষদের জন্য। যারা যেকোন বিষয়ের সমালোচনা সহ্য করার মত ক্ষমতা রাখে। যদি কোন ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিক এই ব্লগটিতে আসে তবে তার ধর্মানুভূতি নামের অদ্ভূত দূর্বল অনিভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্লগ লেখক দায়ী থাকবে না। ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিকদের নিজ দায়িত্বে তাদের দূর্বল ধর্মানুভূতিকে সংরক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে। কারো ধর্মানুভূতি নামের অযৌক্তিক অনুভূতি আহত হবার জন্য কোন ক্রমেই ব্লগার বা লেখককে দায়ী করা যাবে না। যদি কোন অতি দুর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগে ভূল করে ঢুকে পরেন এবং তিনি তার অনুভূতিকে দূর্বল ভাবেন অর্থাৎ যিনি তার ধর্মের উপযুক্ত সমালোচনা সহ্য করতে অপারগ, তাকে বিনীত ভাবে এই ব্লগটি থেকে প্রস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পরেও যদি কোন দূর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগটিতে ঘুরাফেরা করেন এবং তার ফলে তার দূর্বল ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হন তবে কোন ক্রমেই এবং কোন ক্রমেই ব্লগের মালিক, 'আমি নাস্তিক' দায়ী থাকবে না।

Tuesday, January 26, 2016

একজন মৃত্য পথযাত্রি ধার্মিকের শেষ ইচ্ছা



শৈশবে সব মানুষের ক্ষেত্রে যেটা ঘটে আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল। আমার বাবা মা আমাকে তাদের ধর্ম বিশ্বাস আমার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। আর তাই আমি বাবা মার বিশ্বাস করা ধর্মটিকেই একমাত্র সত্য বলে বিশ্বাস করে এসেছি সারা জীবন। আমার বাবা মা যেমন তাদের ধর্মকে একমাত্র সত্য বলে বিশ্বাস করে ঠিক সেভাবে আমিও সেই ধর্মটিকে একমাত্র সত্য ধর্ম বলে বিশ্বাস করি। শৈশবে আমাকে বাবা মা যে সব শিক্ষা দিয়েছিল সেগুলোকেই আমি একমাত্র নৈতিক কর্তব্য হিসেবে গ্রহন করেছি। ধর্মহীনদের ধারণা আমি আমার ধর্মবাদী আস্তিক কারণ আমার বাবা মা আমাকে চিন্তার এবং বিশ্বাস করার স্বাধীনতা দেয়নি। ধর্মহীনদের দাবী আমি আমার বাবা মার অন্ধবিশ্বাসগুলোকেই অন্ধের মতো বিশ্বাস করে আসছি। কিন্তু আমি জানি আমি অন্ধবিশ্বাসী নই। আমার বাবা মা যদিও তাদের ধর্মটিকেই আমার উপর চাপিয়ে দিয়েছিল যেভাবে পৃথিবীর সব শিশুকে তার বাবা মা তাদের ধর্ম চাপিয়ে দেয় সেভাবেই। কিন্তু আমি জানি আমি অন্ধবিশ্বাসী নই।
বাবা মা আমাকে ধর্ম বিশ্বাসের সুযোগ না দিলেও বড় হয়ে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে সৃষ্টিকর্তা বলে অবশ্যই একজন আছে। যদিও আমি সৃষ্টিকর্তার কোন প্রমাণ নিজে পাইনি তবে আমি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে সব সময় অনুভব করেছি। আমি বুঝতে পারতাম যে সৃষ্টিকর্তা বলতে কেউ একজন এই বিশ্বজগতে অস্তিত্বশীল। যদি তাই না হবে তবে আমি কেন একজন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সব সময়ই উপলব্ধি করি? আমি আমার ব্যক্তিগত অনুভুতি বা উপলব্ধি দিয়ে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সব সময়ই উপলব্ধি করি। সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্ব না থাকলে নিশ্চয়ই আমার এমনটা অনুভব হতো না! ধর্মহীনরা যাই বলুক না কেন আমি আমার উপলব্ধিকে তো কখনও অস্বীকার করতে পারি না! যদিও ধর্মহীন এবং ধর্মবিদ্বেষীরা সব কিছুকে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে এবং তারা দাবী করে যে ব্যক্তিগত উপলব্ধি ভূল হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী। ব্যাক্তিগত উপলব্ধি মানুষকে ধোঁকা দেয় বলে ধর্মহীন বস্তুবাদী মানুষদের দাবী। কিন্তু আমি এটা কখনই বিশ্বাস করতে রাজী নই যে আমার সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের উপলব্ধিটি সত্য নয়। যদিও্র তাদের দাবী যে, আমি এরকম উপলব্ধি করছি কারণ আমার বাবা মা আমার উপলব্ধিগুলোকে তাদের অন্ধবিশ্বাস দিয়ে তৈরী করেছেন। তাই আমার এরকম ভ্রম হচ্ছে। কিন্তু আমি কখনই এই যুক্তিকে গ্রহন করতে পারবো না- সত্যি বলতে কি আমি এই যুক্তিকে গ্রহন করতে চাই না যে আমার উপলব্ধিগুলো আমার শৈশবের শিক্ষা দ্বারা প্রবাহিত। যদিও জ্ঞান বিজ্ঞানের দাবী যে মানুষের শৈশবের শিক্ষাই মানুষের উপলব্ধি বা বিশ্বাসগুলো নিয়ন্ত্রন করে। তবুও আমার উপলব্ধিটিই আমার কাছে একমাত্র সত্য। যুক্তি বা বিজ্ঞান যে সীদ্ধান্তই নিক না কেন আমি কথা কখনই মেনে নিতে পারবো না। আমি আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি এবং বিশ্বাসকে ভূল বা ভ্রান্তযুক্ত ভাবতে পারি না। আমার বিশ্বাস যদিও আমার বাবা মা আমার উপর তাদের ধর্মকে চাপিয়ে দিয়েছে তবুও আমার বিশ্বাস আমি এই ধর্মটিই বেছে নিয়েছি আমার যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে। আর তাই আমি আমার বাবা মার ধর্মবিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত নই। আমি সম্পূর্ণ নিজের বিশ্বাসে আমার ধর্মকে বেছে নিয়েছি।
শৈশবে যখন বন্ধুরা মিলে ধর্ম এবং সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে আলাপ করতাম তখন আমরা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য আমাদের ব্যক্তিগত সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব উপলব্ধিকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতাম। বলতাম, সৃষ্টিকর্তার অবশ্যই অস্তিত্ব আছে কারণ আমি তার অস্তিত্বকে উপলব্ধি করি। যদি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নাই থাকবে তবে আমি সৃষ্টিকর্তাকে কিভাবে উপলব্ধি করি? যদিও সে সময় আমাদের শিশু মন ছিল তবুও এই যুক্তিটিকে খুব জোড়ালো যুক্তি বলে মনে হতো।
কিন্তু আরেকটু বড় হয়ে কৈশরে পদার্পন করার পর চিন্তাধারাগুলো আমাদের কিছুটা পরিপক্ক হয়েছে। তখন যখন আমরা সৃষ্টিকর্তা বিষয়ে আলাপ করতাম তখন আমাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলে উঠতো, সৃষ্টিকর্তাকে কেউ দেখেনি। তখন আমরা বাকীরা প্রতিবাদ করে উঠতাম, বলতাম সৃষ্টিকর্তাকে কেউ দেখেনি কথাটি সত্য হলেও সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে আমরা উপলব্ধি করেছি। আর তাই সৃষ্টিকর্তাকে না দেখলেও সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অস্বীকার করা যাবে না। বরং আমাদের উপলব্ধিই সৃষ্টিকর্তার প্রমাণ। কিন্তু যখন আমরা কৈশর পেরিয়ে যুবক হলাম তখন কিন্তু আমাদের চিন্তাধারার আমুল পরিবর্তন হয়েছে। শুধু সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কিত বিশ্বাস ছাড়া। আমরা যখন সেই বয়সে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে আলাপ করতাম তখন কেউ কেউ বলেছে যে যেহেতু আমরা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত নই তাই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে।
আমরা প্রতিবাদ করে বলে উঠতাম অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ নিশ্চিত। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে আমরা প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করি। এটাই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
আমাদের উত্তর শুনে কেউ কেউ বলতো, উপলব্ধি মাঝে মাঝে ভূল হয়। আমরা অনেক সময়ই ভূল উপলব্ধি করে বসি। এই যেমন একা একা বসে থাকতে থাকতে মাঝে মাঝে মনে হয় কেউ একজন আমার পিছনে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পাই কেউ নেই। অথচ আমি স্পষ্ট উপলব্ধি করেছিলাম যে কেউ একজন পিছনে দাড়িয়ে আছে।
আমরা তখন প্রতিবাদ করে বলতাম- কিন্তু সৃষ্টিকর্তাকে অনেকে দেখেছে।
তারাও প্রতিবাদ করে বলতো- মানুষের দৃষ্টিও মাঝে মাঝে মানুষকে ধোঁকা দেয়। দৃষ্টিভ্রম নামে বিজ্ঞানে একটি কথা আছে। কিছু কিছু মানুষ হেলোসিনেশনে ভুগে থাকে; তারা অনেক দৃষ্টিভ্রম জনীত অনেক অবাস্তব কিছু দেখে যা অন্য কেউ দেখে না। কারণ তাদের হেলোসিনেশন বা দৃষ্টিভ্রম হয়। আবার মরুভূমিতে মরিচিকা দেখা যায় দৃষ্টি ভ্রমের কারণে। তাই যারা সৃষ্টিকর্তাকে দেখেছে বলে দাবী করে তারা হয় মিথ্যা বলে নয়তো তাদের হেলোসিনেশন বা দৃষ্টিভ্রম হয়।
তখন আমরা প্রতিবাদ করে বলে উঠতাম- তাহলে সৃষ্টিকর্তার উপলব্ধি আর সৃষ্টিকর্তাকে কেউ কেউ দেখাটা যদি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণ না হয় তবে কি প্রমাণ আনলে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণ দেওয়া হবে?
তারা বলতো, যদি বস্তুগত কোন প্রমাণ আনা যায়, যেমন সৃষ্টিকর্তা অনেকগুলো মানুষের মধ্যে উপস্থিত হবে, নয়তো কোন একজন মানুষের সামনে সৃষ্টিকর্তা উপস্থিত হবে এবং সেই মানুষটি সৃষ্টিকর্তাকে ভিডিও করে রাখবে এবং পরে সেটা সবাইকে দেখাতে পারবে। অথবা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কিত কোন কিছু যেমন- অতিপ্রাকৃতিক কিছু ঘটবে যা প্রাকৃতিক ভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না যেমন- কোন মানুষ অভিকর্ষ বলকে উপেক্ষা করে শুন্যে ভেসে থাকে এরকম বস্তুবাদী প্রমাণ আনতে হবে।

যৌবনে এসব নিয়ে আমরা তর্ক বিতর্ক করতাম। এক দল দাবী করতো সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে কারণ তার অস্তিত্বের কোনই প্রমাণ নেই। আবার অন্যদলে থেকে আমরা দাবী করতাম সৃষ্টিকর্তাকে যেমন উপলব্ধি করা যায় তেমনি সৃষ্টিকর্তার প্রমাণও দেখানো সম্ভব।
যৌবনের বয়সে আমাদের সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কিত আলোচনাগুলো শুধু তর্কের মধ্যেই স্বীমাবদ্ধ থাকতো। কিন্তু বড় হবার পরে বুঝতে পারলাম, একটা দল তৈরী হয়েছে যারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব কে সরাসরি অস্বিকার করছে। নিয়ে তারা নানা মুখোরুচক যুক্তি এবং প্রমাণ উপস্থাপন করতে চাইছে। তাদের দাবী বিজ্ঞান এতো এতো উন্নতি করেছে অথচ কাল্পনিক কোন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বই প্রমাণিত হয়নি। এমনকি বিজ্ঞান সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের নানা প্রমাণকে সরাসরি অস্বীকার করেছে। তাদের বর্ণনা মতে বিজ্ঞান আত্বা সম্পর্কিত সব ধারণাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে; বিজ্ঞান আদম হাওয়ার জন্ম পদ্ধতিকে মিথ্যা বলে প্রমাণ করেছে এবং মানুষ আদম হাওয়ার মাধ্যমে নয় বরং প্রাকৃতিক নিয়মে অন্যান্য প্রাণীগুলোর সাথে একই ভাবে বিবর্তিত হয়ে পৃথিবীতে এসেছে। তাদের দাবী যে বিজ্ঞান আজ আবিষ্কার করেছে যে বিশ্বজগত বিগ ব্যাং-এর মাধ্যমে কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে। স্থান কাল বা স্পেস এবং টাইমের অস্তিত্ব বিগ ব্যাং এর আগে ছিল না বলে কোন সৃষ্টিকর্তার পক্ষে বিশ্বজগত সৃষ্টির আগে অস্তিত্বশীল থাকা সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীদের দাবী বিশ্বজগত শুন্য থেকে সৃষ্টি হযেছে বলে কোন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বশীল থাকা সম্ভব নয়।  

বিজ্ঞানের এতো এতো উন্নতির সাথে সাথে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব  উপলব্ধি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টাটা মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। আমি যদিও সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে আমার উপলব্ধি দিয়েই বিবেচনা করি কিন্তু ধর্মকে রক্ষা করতে হলে সৃষ্টিকর্তার উপযুক্ত প্রমাণ উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা কতটা বেশী সেটা প্রথম উপলব্ধি করলাম আমি। আর তাই যুক্তি তর্কের বাইরে যেয়ে কিভাবে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে প্রমাণ করা যায় সেটি নিয়ে উঠে পড়ে লাগলাম।
প্রথমে আমি কিভাবে কোন কিছু প্রমাণ করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। কিন্তু কোন ভাবেই বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে প্রমাণ করার কোন পথ পেলাম না। তখন একটা যুক্তি দাড় করালাম যা বৈজ্ঞানিক পর্যায়ে উন্নিত হতে পারে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান বিভিন্ন জটিলতার দিকে ইঙ্গিত করতে থাকলাম। দাবী করতে থাকলাম যে, বিশ্বজগত এতো জটিল যে এটি প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি হতে পারে না।  কারণ শুন্য থেকে কোন কিছু এমনি এমনি সৃষ্টি হতে পারে না। আর আমাদের বিশ্বজগতের মতো এমন জটিল কিছু এমনি এমনি সৃষ্টি হতে পারবে না। তাই বিশ্বজগতকে সৃষ্টি করার জন্য অবশ্যই একজন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকতে হবে।
কিন্তু ধর্মহীন নাস্তিকরা পাল্টা যুক্তি দিতে থাকলো যে যদি জটিল কিছু এমনি এমনি সৃষ্টি হতে নাই পারে তবে নিশ্চয় এই জটিল বিশ্বজগত সৃষ্টিকারী সৃষ্টিকর্তাও অনেক জটিল। সেই জটিল সৃষ্টি কর্তা তাহলে কি করে এমনি এমনি সৃষ্টি হতে পারলো?
বুঝতে পারলাম তাদের যুক্তিটি অভ্রান্ত এবং এই যুক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক কঠিন। তাই আমরা আমাদের যুক্তিকে আরো বলিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করে যেতে থাকলাম। এক সময় বিবর্তনবাদকে প্রশ্নবিদ্য করতে থাকলাম। বললাম- বিবর্তনবাদ কখনই সত্যি হতে পারে না। কারণ মানুষের শরীর বিশেষ করে মানুষের চোখ এতো জটিল যে এটি কখনই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হতে পারে না। এটি অবশ্যই কোন সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। তাছাড়া বিগ ব্যাং-এর যে উপাদানটা থেকে বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে সেই উপাদানটা কোথা থেকে আসলো? বিগ ব্যাং যদিও একটি প্রাকৃতিক ঘটনা এবং বিগ ব্যাং-এর আগে কি ছিল সেটা বিজ্ঞান জানে না তাই এটা নিসন্দেহ যে এগুলো সৃষ্টিকর্তাই নিজের হাতে ঘটিয়েছেন। আর তাই সৃষ্টিকর্তা একটি প্রমাণিত সত্য বিশ্বজগত সৃষ্টিতে এবং মানুষ সৃষ্টিতে।
কিন্তু আমাদের যুক্তিকে পাত্তা না দিয়ে কিছু মানুষ বলতে থাকলো যে, সৃষ্টিকর্তা কিভাবে বিগ ব্যাং-এর উপাদানটা সৃষ্টি করেছে? সেটি কি শুন্য থেকে সৃষ্টি করেছে নাকি এটি আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল? এছাড়াও তারা দাবী করলো যে মানুষের দেহ এবং মানুষের চোখকে যত জটিলই মনে হোক না কেন এগুলো প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি হওয়া সম্ভব। অপেক্ষাকৃত সরল কোষ এবং সরল চোখ থেকে  বিবর্তনের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে এমন জটিল দেহ এবং চোখ তৈরী হওয়া সম্ভব। শুধু তাই নয় তারা এর স্বপক্ষে নানা প্রমাণ দিতে থাকলো। প্রকৃতপক্ষে আমি এবং আমরা সবাই লক্ষ করলাম বিবর্তনের পক্ষে এতো এতো প্রমাণ বিজ্ঞানীরা হাজির করছে যে কোন ভাবেই সৎ ভাবে বিবর্তনকে উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। যদিও কিছু ধর্মাচ্ছন্ন গোঁড়া ধার্মিক মানুষ বিবর্তন সম্পর্কে নানা প্রশ্ন তুলে বিবর্তনের অসাড়তা তুলে ধরছে মানুষের কাছে যারা বিজ্ঞান জানতো না; তবুও সেই পদ্ধতিটি খুব কার্যকরী ছিল না। কারণ তারা বিবর্তনবাদকে মিথ্যা প্রমাণ করতে নানা ছলনার আশ্রয় নিচ্ছে। কিন্তু সেই ছলনাময় পদ্ধতিগুলো আমার মতো কারো কারো কাছে গ্রহন যোগ্য বলে মনে হচ্ছে না। আমরা আসলে এমন একটি প্রমাণ খুজছিলাম যা দিয়ে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে বাস্তবিক ভাবে এবং বৈজ্ঞানিক ভাবেই প্রমাণ করা যায়। যেমন ফেরেশতা বা দেবদুতের অস্তিত্ব প্রমাণ করা, আত্মার অস্তিত্ব প্রমাণ করা, অলৌকিক এবং অতিপ্রাকৃত কিছু প্রমাণ করা, আদম হাওয়ার ফসিল প্রমাণ করা এবং সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের সরাসরি প্রমাণ উপস্থাপন করা। কিন্তু কোন ক্রমেই আমরা সৃষ্টিকর্তাকে প্রমাণ করা যায় এমন কোন তথ্য প্রমাণই পাচ্ছিলাম না। কিন্তু বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীরা বিবর্তনের পক্ষে সব ধরণের প্রমাণ উপস্থাপন করছিল। যেমন বিভিন্ন ধরণের ফসিল, জেনেটিক সামঞ্জস্যতা, ডিএনএ ম্যাচিং ইত্যাদি। ফলে বিবর্তনবাদ ক্রমেই প্রমানিত সত্য হিসেবে সবার কাছে উপস্থাপিত হচ্ছিলো। এদিকে সৃষ্টিতত্বের পক্ষে কোন প্রমাণই হাজির করা যাচ্ছে না সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে প্রমাণ করার জন্য। আর তাই আমাদের একটি সমন্বিত থিউরীর দরকার হয়ে পড়েছিল যা আসলে বৈজ্ঞানিক থিউরী হবে এবং একই সাথে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণ দিবে। তাই আমরা পৃথিবীর নানা প্রান্তের জ্ঞানী মানুষেরা একত্রিত হয়ে প্রথম বৈজ্ঞানিক গুন সম্পন্ন একটি থিউরীর অবতারণা করেছি যা অনেকটা বৈজ্ঞানিক থিউরীর মতো এবং এই থিউরী মতে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে সরাসরি প্রমাণ করা না গেলেও এর মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। তাই আমরা ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন নামের একটি থিউরী প্রতিষ্ঠিত করি যা আজও বৈজ্ঞানিক মহলে স্বীকৃত নয় কিন্তু আমাদের কাছে অর্থাৎ সৃষ্টিবাদীদের কাছে প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক থিউরী।

আমার একথা স্বীকার করতে কোন দ্বিধা নেই যে আই ডি বা ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন পুরোপুরো বিজ্ঞানের থিউরীর মতো হয়ে উঠেনি। কারণ এই তত্ত্বটি কোন গবেষণা মুলক ভাবে উঠে আসেনি। বরং এই তত্ত্বটি দাড় করানো হয়েছে কোন পূর্ব নির্ধানিত সিদ্ধান্তকে সত্য ধরে নিয়ে। অর্থাৎ আমরা আইডিকে দাড় করেছি আমাদের পূর্বের বিশ্বাস “সৃষ্টিকর্তাই এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছে” এটিকে পরম সত্য ধরে নিয়ে। কিন্তু বিজ্ঞানের থিউরী তৈরী হয় পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ এবং তথ্য প্রমাণ যাচাই বাঁছাই করে নেওয়া সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ বিজ্ঞানের তত্ত্ব যেমন পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ এবং তথ্য প্রমাণ যাচাই বাঁছাই করার পর যে সিদ্ধান্ত তারা পায় সেটাকে সত্য বলে ধরে নেয়। কিন্তু আইডি বা ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের সিদ্ধান্তটি আগে নেওয়া হয়েছে এবং তারপরে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হয়েছে। অর্থাৎ ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন বিজ্ঞানের পদ্ধতির বিপরিত ধর্মি আচরণ করেছে। এজন্যই মূল ধারার বিজ্ঞানীরা এই থিউরীটিকে বিজ্ঞান বলতে নারাজ। কিন্তু আমরা যারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে উপলব্ধি করেছি তাদের কাছে এটিকে সব চেয়ে বড় বিজ্ঞান বলে মনে হয়।
ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের বিরুদ্ধে বস্তুবাদী বিজ্ঞানী এবং নাস্তিকরা যে অভিযোগগুলো তুলে তার মধ্যে আই ডি'র প্রবক্তাদের দ্বিমুখী আচরণকেউ বড় করে দেখা হয়। যেমন জ্যোতির্পদার্থবিদ আইডি'র প্রবক্তাগণ বলেন যে, আমাদের বিশ্বজগত প্রাণ সৃষ্টি করার জন্য খুব উপযুগি করে সৃষ্টি হয়েছে। কারণ পদার্থ বিজ্ঞানে প্রচলিত নানা ধ্রুবকগুলোর মান এতো সুক্ষভাবে সমন্বিত যে এই মানের বাইরে গেলেই আর প্রাণ সৃষ্টি হতে পারতো না। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তাই এই ধ্রুবকগুলোর মান এরকম সুক্ষ সমন্বিত করে সৃষ্টি করেছে যাতে প্রাণ সৃষ্টির উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কিন্তু অন্য দিকে আইডি'র জীববিজ্ঞানীরা বলে তার বিপরীত করা। তাদের মতে আমাদের বিশ্বজগত প্রাণ সৃষ্টির একদম অনুপযুক্ত। তাই যদি সৃষ্টিকর্তা নিজে না প্রাণ সৃষ্টি করে দেন তবে পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব। অর্থাৎ জ্যোতির্পদার্থবিদরা বলে বিশ্বজগত প্রাণ সৃষ্টির একেবারে উপযুক্ত। পক্ষান্তরে জীববিজ্ঞানীরা বলে যে আমাদের বিশ্বজগত প্রাণ সৃষ্টির একদম অনুপযুক্ত। ফলে এই দুই পরস্পর বিরোধী ভাষ্য কখনই সত্য নয় বলে প্রকৃত বিজ্ঞানীরা আইডি বা ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনকে বিজ্ঞান বলতে নারাজ। সব চেয়ে বড় কথা হলো, ইন্টেলিজেন্ট বা আইডির স্বপক্ষে কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি বলে এটাকে বিজ্ঞানের জগতে কোন স্থানই দেওয়া হয় না। কিন্তু তারপরও আমাদের কাছে অর্থাৎ ধর্ম বিশ্বাসীদের কাছে আইডি বা ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনকেই প্রকৃত বিজ্ঞান বলে মনে হয়। আমাদের মনে হয় এটিই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে একমাত্র বৈজ্ঞানিক প্রমাণ।  
বস্তুবাদী বিজ্ঞানী এবং নাস্তিকরা এটা বলে চেচামেচি করতে থাকে যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হলে আইডির মতো ছদ্ব বিজ্ঞানের অপযুক্তি আউড়িয়ে কোন লাভ নেই। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য সৃষ্টিকর্তার সরাসরি কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দাড় করাতে হবে। না হলে এগুলো রুপকথা হিসেবেই পড়ে থাকবে; বিজ্ঞানের জগতে আসতে পারবে না। আমরা যারা ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করি তারা অনেক ভাবে মানুষের কাছে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনকে গ্রহন করার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। এবং এটি ধার্মিক মহলে ব্যপক জনপ্রিয়ও হয়েছে। কিন্তু আমরা আইডি নিয়ে কাজ করা এবং বিজ্ঞানের নীতিগুলো জানা মানুষেরা ঠিকই বুঝতে পারছি যে বিবর্তনের পক্ষে এতো বেশী প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে যে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন থিউরীটিরও ক্রিয়েশন বা সৃষ্টিতত্ত্বের মতো বিলুপ্তি হয়ে যাবে। আর তাই আমাদের অত্যাধুনিক কর্মকান্ডটি হলো সৃষ্টিকর্তার বস্তুবাদী প্রমাণ হাজির করা। ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন এখনও ধার্মিকদের কাছে সব চেয়ে বড় বিজ্ঞান এবং সৃষ্টিকর্তার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হলেও বস্তুবাদী বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের সাথে সাথে ধার্মিকরাও যেকোন সময় ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন থিউরীটির উপর বিশ্বাস হাড়িয়ে ফেলবে। তাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব হলো যে করেই হোক, সৃষ্টিকর্তার বাস্তব অস্তিত্ব খুজে বের করা এবং এটি মানুষের কাছে বস্তুগত ভাবে প্রমাণ করা।
এছাড়া আমরা বিকল্প কোন পদ্ধতি খুজে পাচ্ছি না। ধর্ম এবং ইশ্বর বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার কোন বাস্তবিক বা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হাজির করতে হবে যে প্রমাণ পেলে বস্তুবাদী বিজ্ঞানীরা আর সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারবে না বরং  সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে নিয়ে গবেষণা করতে পারবে এবং সৃষ্টিকর্তাকে বৈজ্ঞানিক ভাবে স্বীকৃতি দিবে।
আমরা দীর্ঘ দিন ধরে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের স্বপক্ষে প্রমাণ সংগ্রহ করার বহু চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই কোন বস্তুনিষ্ট কোন প্রমাণ পেলাম না। ফলে অনেকে হতাশ হয়ে পড়লো। তারা বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করলো। তারা বিজ্ঞানের আধুনিক আবিষ্কারের সাথে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনকে জুড়ে দেওয়া যায় কিনা তা ভাবতে লাগলো। কেউ কেউ দ্বাবী করতে থাকলো যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে মানুষ কখনই আবিষ্কার করতে পারবে না। কারণ তার অস্তিত্ব বিজ্ঞান দিয়ে আবিষ্কার করা সম্ভব নয়। কিছুদিন তারা এই কথাটি প্রচার করতে লাগলো। কিন্তু বস্তুবাদী বিজ্ঞানীরা যখন বললো যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয় কারণ স্থান এবং কালও সৃষ্টি হয়েছে বিগ ব্যাং-এর মাধ্যমে তাই বিগ ব্যাং-এর আগে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয় স্থান কালের বাইরে থেকে। ফলে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ নতুন করে সৃষ্টিকর্তার স্বরুপকে পরিবর্তন করলো। তারা দ্বাবী করলো, সৃষ্টিকর্তা বিগ ব্যাং এর পূর্বে অবস্থান করে বিগ ব্যাং ঘটিয়েছে বলে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব। কারণ সৃষ্টিকর্তা হলো স্থান কালের উর্ধ্বের কোন স্বত্বা। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা স্থান কালের উর্ধ্বে গিয়ে অবস্থান করতে পারে তাই তার পক্ষে বিশ্বজগত সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেও বিরাজমান থাকা সম্ভব হয়েছে এবং বিশ্বজগত, স্থান, কাল সৃষ্টি হওয়া সম্ভব হয়েছে।
সৃষ্টিকর্তার স্থান কালের উর্ধ্বে বা স্থান কালের প্রভাবমুক্ত হওয়ার ধারণাকে আধুনিক শিক্ষিত ধার্মিকরা খুব ভালো ভাবেই গ্রহন করলো। তারা বস্তুবাদী নাস্তিকদের বিরোদ্ধে যেন উপযুক্ত অস্ত্র খুজে পেলো। এবং প্রচার করতে থাকলো যে সৃষ্টিকর্তা এমন একটি স্বত্বা যার উপর পদার্থ এবং শক্তিরতো কোন প্রভাব নেইই উপরন্তু তার উপর স্থান এবং কালেরও প্রভাব নেই। সৃষ্টিকর্তা স্থান কালের উর্ধ্বের কোন অস্তিত্বশীল স্বত্বা। ধার্মিকদের কাছে সৃষ্টিকর্তার এমন অস্তিত্বশীলতা আধুনিক শিক্ষিত ধার্মিকরা খুব ভালো ভাবেই গ্রহন করলো। এবং এগুলো সর্বত্র প্রচার করতে থাকলো।
কিন্তু সমস্যা করলো বস্তুবাদী বিজ্ঞানীরা এবং নাস্তিকরা। তারা বলতে থাকলো বিশ্বজগতের কোন কিছুই স্থান এবং কালের উর্ধ্বে থাকতে পারে না। কারো পক্ষেই স্থান এবং কালের উর্ধ্বে থেকে অস্তিত্বশীল থাকা সম্ভব নয়। কারণ পদার্থ, শক্তি, স্থান, কাল বিহীন যে অবস্থাটির তৈরী হয় সেটি হলো পরম শুন্যতা। আর পরম শুন্য অবস্থাটিতে কোন অস্তিত্বশীল কিছুর পক্ষে বিরাজমান থাকা সম্ভব নয়। পরম শুন্যতা মানে হলো অস্তিত্বহীনতা। এই কথাটি আমরাও বুঝতে পারতাম। কিন্তু বিজ্ঞান না জানা ধার্মিকগুলো ব্যাপারটা ধরতে পারছে না বলে এরকম অবৈজ্ঞানিক কথাগুলো আওড়াচ্ছে। আমরা বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা এবং সৃষ্টিকর্তার বস্তুবাদী প্রমাণ নিয়ে গবেষনা করা মানুষগুলো ঠিকই জানতাম যে সৃষ্টিকর্তা পরম শুন্যতার মধ্যে বিরাজমান থাকতে পারবে না। কারণ পরম শুন্যতার মানেই হচ্ছে অস্তিত্বহীনতা। আর তাই যদি আমরা সৃষ্টিকর্তার স্থান কালের উর্ধ্বে থাকার ধারণাটিকে সত্য বলে মেনে নেই তবে বস্তুবাদীরা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে ভিত্তিহীন করে দেবে। কারণ তাদের মতো আমরাও জানি যে কোন কিছুই স্থান কাল শুন্য পরম শুন্যতায় বিরাজমান থাকবে না। ফলে এমনিতেই সৃষ্টিকর্তার ধারণাটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। অল্প শিক্ষিত ধার্মিকগুলো যা কিছুই বলুক না কেন, আমাদের প্রধান দায়িত্ব সৃষ্টিকর্তার বস্তুবাদী প্রমাণ খুজে যেতেই হবে। তা না হলে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের উপর বিশ্বাস সব মানুষই হাড়াতে শুরু করবে।
ফলে এতো কিছুর পরেও আমাদের প্রধান দায়িত্ব সৃষ্টিকর্তার বস্তুবাদী অস্তিত্বের প্রমাণ বের করাটা থেকেই যাচ্ছে। সর্বপরী আমরা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণ খুজেই যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।

সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে প্রমাণ করার জন্য আমরা সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর যাবৎ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা কিছুতেই সৃষ্টিকর্তার কোনরুপ অস্তিত্বের প্রমাণই পাচ্ছি না। আমাদের মধ্যে অনেকেই হাল ছেড়ে দিয়েছে। কেউ কেউ অবিশ্বাসী হয়ে গেছে। কেউ কেউ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে যে সৃষ্টিকর্তার আসলে কোন অস্তিত্বই নেই। তা না হলে সৃষ্টিকর্তার কোনরুপ অস্তিত্বই কেন পাওয়া যাবে না? শয়তান, দেবদুত, ফেরেশতা, জ্বীন, পরী প্রভৃতি সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কিত সব  কিছুই বাস্তবতার নিরীখে মিথ্যা প্রমাণিত হচ্ছে দিন দিন। আর আমরা এগুলোর সম্পর্কেও কোনরুপ প্রমাণ পাচ্ছি না। যদিও কিছু ধর্ম ব্যবসায়ীরা এবং কিছু অন্ধবিশ্বাসীরা নানা অপকৌশল করে, নানা মিথ্যা কথা বলে ধর্মকে টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু আমরা জানি এভাবে মানুষকে বেশী দিন বোঁকা বানিয়ে রাখা যাবে না। মানুষ এক সময় জ্ঞান বিজ্ঞানের সব খবরই পেয়ে যাবে। তখন আর মানুষকে ছেলে ভোলানো কথা বলে ধার্মিক করে রাখা যাবে না। বিজ্ঞান যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আমরা প্রচন্ড ভয় নিয়ে বেঁচে আছি যে সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাস হয়তো পৃথিবী থেকে বিলুপ্তই হয়ে যায়। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ধারণাকে টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদেরকে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে প্রমাণ করতেই হবে। যে করেই হোক না কেন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সন্ধান চালিয়ে যেতেই হবে। আমরা সৃষ্টিকর্তাকে খুজে খুজে আমাদের জীবন বিসর্জন দিয়ে দিয়েছি। আমাদের জীবনের শেষ পর্যায়ে এসেও আমরা সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্ব খুজে পাচ্ছি না। জীবনের অন্তিম প্রান্তে এসে মাঝে মাঝেই আমার মনে হয় যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব হয়তো আসলেই নেই। যদি থাকতো তবে আমরা বৈজ্ঞানিক ভাবে এতো এতো অনুসন্ধান করেও কেন তার অস্তিত্বের পক্ষে কোনরুপ প্রমাণই পেলাম না? শুধু আমাদের ব্যক্তিগত উপলব্ধি আর বিশ্বাস ছাড়া সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্বেরই প্রমাণ পাওয়া যায় না কেন? তবে কি সৃষ্টিকর্তার সত্যই কোন অস্তিত্ব নেই?
জরাজীর্ণ শরীরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি শুধু ভাবি, সারা জীবন ধরে যে সৃষ্টিকর্তাকে অনুভব করেছি, যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে উপলব্ধি করেছি এবং যে সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে এসেছি অন্ধভাবে, তার কি কোনই অস্তিত্ব নেই? সত্যিই কি আমার বিশ্বাসটি অন্ধবিশ্বাস ছিল? আমার উপলব্ধি কি সত্যই মিথ্যা ছিল? হয়তো তারাই সত্যি কথা বলেছে যারা বলতো যে ব্যক্তিগত উপলব্ধিও মানুষকে ধোঁকা দিতে পারে!

আমার এই লেখাটি যদি কোন ধার্মিক পেয়ে থাকেন তবে তার কাছে আমার অনুরোধ, সে যেন আমাদের সারা জীবনের গবেষনাকে সত্য বলে প্রমাণ করে। যেইই আমার লেখাটি পড়ছেন তার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, দয়া করে আপনি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণ বের করুন। আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের অনুসন্ধানকে যে পর্যায়ে এনে শেষ করেছি কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে পারিনি; আপনার কাছে অনুরোধ রইলো আপনি আমাদের সারাজীবনের শ্রমকে স্বার্থক করে তুলুন। আমরা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছি; কিন্তু আপনি সেই গবেষনাটি চালিয়ে যান। এবং যে পর্যন্ত সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণিত না হয় সে পর্যন্ত সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা থেকে বিরত হবেন না। একজন মৃত্য পথযাত্রি হিসেবে এটি আপনার কাছে করা আমার শেষ ইচ্ছা। আমার শেষ ইচ্ছাকে পুরণ করুণ; দয়া করুন! ঈশ্বর আপনাকে পুরস্কৃত করবেন। আমিন!

No comments:

Post a Comment