যেসব ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দল নিজেদের মতাদর্শটিকেই
একমাত্র সত্য বলে বিশ্বাস করে এবং অন্য সব মতাদর্শকে ভূল মনে করে তারাই আসলে পৃথিবীতে
শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে সব অশান্তি সৃষ্টি করে থাকে।
প্রতিটি ধর্ম এবং রাজনৈতিক দলই দাবী করে একমাত্র
তাদের দলটি যদি পুরো পৃথিবী জুড়ে ক্ষমতা লাভ করে তবেই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত
হবে। প্রত্যেকটি ধর্ম ও রাজনৈতিক দলই দাবী করে একমাত্র তাদের মতাদর্শটিই সঠিক। বাকী
পৃথিবীর সমস্ত দলের মতাদর্শই ভূল।
তারা সব সময়ই এমনটা প্রচার করে যে একমাত্র তাদের
দলই পৃথিবীতে শান্তি এনে দিতে পারে। অন্য কোন দলই পৃথিবীতে শান্তি আনতে পারবে না।
বরং বাকী সব দলই অশান্তিময়।
প্রতিটি ধর্ম ও রাজনৈতিক দল যেমন তাদের মতাদর্শকে
পৃথিবীর শ্রেষ্ট মতাদর্শ মনে করে ঠিক একই ভাবে তারা দাবী করে পৃথিবীতে যেদিন তাদের
মতাদর্শটি প্রতিষ্ঠিত হবে সম্পূর্ন পৃথিবী জুরে তখনই পৃথিবীতে শান্তি নেমে আসবে। তারপর
পৃথিবীতে কোনই অশান্তি থাকবে না।
তারা যে শুধু এটা দাবী করে তাই নয় বরং তারা তাদের
মতাদর্শটি প্রতিষ্ঠিত করতে জীবন পর্যন্ত দিয়ে দেয়। এমন উদাহরণের অভাব নেই পৃথিবীতে।
কিন্তু তাতে করে আজ পর্যন্ত কোন ধর্ম ও রাজনৈতিক
দলই পৃথিবীতে শান্তি বয়ে আনতে পারেনি। বরং শত শত অশান্তি ঘটিয়েছে যুগ যুগ ধরে। এর প্রমাণগুলোকে
অস্বীকার করা যাবে না।
কেন কোন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মতাদর্শ এখনও পর্যন্ত
পৃথিবীতে শান্তি আনতে পারেনি বরং অগণিত অশান্তি এনেছে ? এই প্রশ্নটি যখনই কোন ধর্মীয়
বা রাজনৈতিক দলকে করা হয় তখন তারা দাবী করে, পৃথিবীতে তাদের মতাদর্শটি পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত
হয়নি এবং তাদের মতাদর্শ ছাড়া বাকি সবগুলো মতাদর্শ পৃথিবীতে অস্তিত্বশীল থাকাতেই পৃথিবী
থেকে অশান্তি দূর হচ্ছে না। উপরন্তু ঐসব ভিন্ন মতাদর্শের কারণেই সেসব ধর্মীয় বা রাজনৈতিক
দলগুলোর দ্বারা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ সেসব ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মাতদর্শের
দলগুলো কখনই নিজেদের দোষ ত্রুটিগুলো স্বীকার করতে চায় না।
সেসব ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিতর্ককে যদি বাদও দেওয়া
হয় তবুও একটি প্রশ্নকে পাশ কাটিয়ে যাবার উপায় নেই। "যদি পৃথিবীতে সত্যিই সেসব
ধর্মীয় বা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোন একটি সম্পূর্ণরুপে পুরো পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত
হয় তবে কি পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে?"
এই প্রশ্নের উত্তরে যদিও প্রতিটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক
দল "হ্যা" সূচক উত্তর দিবে তবুও তাদের দাবীটি যে সত্য নয় তার প্রমাণ ইতিহাস
ঘাটলেই পাওয়া যায়। সত্যিটি হলো পৃথিবীতে যদি কোন একটি ধর্ম বা রাজনৈতিক দল ক্ষমতা
লাভ করে তবে পৃথিবীতে কখনই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না।
এই কথাটি কোন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলই মেনে নিবে
না। বরং তারা দাবী করবে যদি তাদের দলই ক্ষমতা পায় তবে অবশ্যই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত
হবে। যেহেতু প্রতিটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলের অনুসারীরা তাদের ধর্ম বা রাজনৈতিক দলটিকে
মনে প্রাণে বিশ্বাস করে তাই তারা ধরেই নিতে পারে যে তাদের দলটি পুরো পৃথিবীর ক্ষমতা
পেলে অবশ্যই পৃথিবীজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। সুতরাং সেই সব ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলগুলোর
অন্ধবিশ্বাসী অনুসারীদের অন্ধ দাবীকে পাত্তা না দিয়ে ইতিহাস ও বাস্তব প্রমানের ভিত্তিতে
এই প্রশ্নের উত্তরটি বিবেচনা করে দেখা যাক।
ধরি কোন একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠি পুরো
পৃথিবীর ক্ষমতা পেলো। তখন পুরোপৃথিবীতেই শুধু তাদের দলের অনুসারী। এবং শুধু তাদের
মতাদর্শটিই রয়েছে বাকী সবগুলো মতাদর্শ জাদুঘরে চলে গেছে। তারপর কি হলো? প্রতিটি মানুষই
একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শকে দিন রাত অনুসরণ করছে। দিনের পর দিন বছরের পর বছর। পৃথিবীতে
কি শাস্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ? ভেবে দেখুন! প্রতিটি দলেরই তাদের মতাদর্শের মধ্যে দন্দ
রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে একটি ধর্মকে বেছে নিন। ধরুন সেটি ইসলাম। যদি পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত
হয় এবং পুরো পৃথিবীর সব মানুষই এই ধর্মকে অনুসরণ করে তবে কি পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত
হবে?
ইতিহাস ঘাটলে আমরা পাবো ইসলাম ধর্মের মধ্যে
নানা রকম মত পার্থক্য জনীত দল উপদল রয়েছে। যেমন শিয়া, সুন্নি, ইত্যাদি ইত্যাদি। সবাই
ইসলামকে অনুসরণ করে এবং মনে প্রাণে প্রত্যেকেই ইসলামের একনিষ্ট অনুসারী। এখন পৃথিবীতে
যদি এই ধর্মটি ক্ষমতা প্রাপ্ত হয় তবে এই যে শিয়া ও সুন্নির মধ্যে শত শত বছর ধরে চলে
আসা দ্বন্দটি সেটি বিদ্যমান থাকবে এবং তারা একে অন্যের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধে লিপ্ত
থাকবে। যেহেতু প্রত্যেকেই নিজেদের দলকেই একমাত্র সত্য এবং বাকী সব মতাদর্শকে পুরোপুরি
মিথ্যা বলে রায় দেয় তাই তাদের মধ্যে দ্বন্দ বা যুদ্ধটি কখনই শেষ হবে না। বরং তারা একদল
আরেকদলকে আক্রমন করতে থাকবে সব সময়ই। অর্থাৎ পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলেও কখনও পৃথিবীতে
শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। এর কারণটি হলো পরস্পরের প্রতি ঘৃণা এবং নিজেদের মতাদর্শকে
যুক্তি তর্ক ছাড়া সম্পূর্ণ অন্ধভাবে একমাত্র সত্য বলে বিশ্বাস করা। যেহেতু প্রত্যেকেই
শুধুমাত্র নিজেকে সঠিক মনে করে এবং অন্য সবাই ভূল মনে করে তাই তাদের মধ্যে যুদ্ধ কখনই
শেষ হবে না। অর্থাৎ প্রকৃত সত্য হলো যেকোন দলই সমস্ত পৃথিবীর ক্ষমতা পাক না কেন পৃথিবীতে
কখনই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না, যেমনটা প্রতিটি দলই দাবী করে। কারণ তাদের অভ্যন্তরেই
নতুন নতুন মতদর্শজনীত উপদল তৈরি হয় এবং সেসব উপদল একজন আরেকজনকে কোন রকমের ছাড় দেয়
না। সেটা যেকোন ধর্ম বা রাজনৈতিক দলই হোক না কেন।
আমরা জানি আওমালীগ বা বিএনপি এই রাজনৈতিক দলগুলো
প্রত্যেকেই নিজেদের দলকে সঠিক এবং অপর দলকে ভূল মনে করে সম্পূর্ণ যুক্তি প্রমানকে বুড়ো
আঙ্গুল দেখিয়ে। প্রতিটি দলই দাবী করে একমাত্র তারা ক্ষমতায় গেলেই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত
হবে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণবই ভিন্ন। যেকোন দলই ক্ষমতায় যাক না কেন দেশে কখনই শান্তি
প্রতিষ্ঠিত হয় না। এর কারণ বিরোধী রাজনৈতিক দল নয়; এর কারণ দলের অভ্যন্তরিত রেষারেষির
কারণে ঘটা দ্বন্দযুদ্ধ। এই উপদলজনিত রেষারেষি মাঝে মাঝে যুদ্ধের রুপ নিয়ে দেশে অশান্তি
সৃষ্টি করে। যদি একটা দলই অস্তিত্বশীল থাকে ভিন্ন দলকে নিঃশেষ করে তবুও আসলে দেশে কখনই
শাস্তি ফিরে আসবে না। কারণ সব রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দলই শুধুমাত্র নিজেদেরকে নির্ভূল মনে
করে এবং বিরোধী দলকে সমস্ত অশান্তির কারণ বলে দাবী করে। অর্থাৎ আমিই সঠিত বাকী সব
ভূল এই মনোভাবটিই আসলে পৃথিবীতে যত অশান্তির মুল কারণ। তাই প্রতিটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক
দল যতই দাবী করুক না কেন, তাদের দলটিই একমাত্র সত্য ও সঠিক বাকী সব দলই মিথ্যা ও ভূল"
আসলে তাদের দাবীটি পুরোপুরিই মিথ্যা।
পৃথিবীতে প্রতিটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলই নিজেদেরকে
সঠিক মনে করে বিরোধী মতাদর্শের মানুষকে শায়েস্তা করতে চেয়ে এসেছে। এবং এটা করতে যেয়ে
যুগ যুগ ধরে পৃথিবীতে নানা অশান্তি বয়ে নিয়ে এসেছে।
অর্থাৎ তথ্য
প্রমাণকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে যারাই নিজেদেরকে একমাত্র সত্য বলে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে এসেছে এবং তারা তাদের মতাদর্শকে পৃথিবীর বাকী সব মানুষের উপর চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে
তারাই যুগ যুগ ধরে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করেছে তাদের দাবীকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠার নাম করে। পৃথিবীতে এমন ধর্ম ও রাজনৈতিক দলের উদাহরণ রয়েছে
ভুরি ভুরি। বর্তমানেও এরকম ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দল রয়েছে
যারা নিজেদেরকে একমাত্র সত্য
এবং বাকীদেরকে একাধারে ভূল সাব্যস্ত করে। আসলে
"একমাত্র আমি সঠিক
তুমি ভূল " এই মতবাদটির গোড়াতেই গন্ডগোল আছে। যারাই এরকমটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে এবং তাদের মতাদর্শটি অন্যের উপর চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে তারাই পৃথিবীতে যত অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আমি একমাত্র সঠিক তুমি বা তোমরা সবাই ভূল তাই তোমাদেরকে আমার মতবাদকেই মানতে হবে",
এই মতবাদটিই একমাত্র ভূল মতবাদ। আর এসব মতবাদের যত দলই আছে তারা প্রত্যেকেই পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করেছে এবং এখনও
পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছে।
আসলে যারা
নিজেকে সঠিক বলে দাবী করে এবং অন্যকে ভূল বলে বিশ্বাস করে সম্পূর্ণ প্রমাণ ছাড়া তারা
কখনই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে
না। বরং তাদের
হাত ধরেই পৃথিবীতে যত অশান্তি সৃষ্টি হবে। বরং ‘আমিও
ভূল করতে পারি,
তুমিও সঠিক হতে পারো’ এমন ধারণা
করার সক্ষমতা এবং নিজের মতবাদকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেবার
চেষ্টা না করে প্রত্যেকের দাবীকে তথ্য
প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার করে দেখা এবং প্রত্যেকের মতাদর্শকে পালনের অধিকার দেবার মধ্যেই শান্তি রয়েছে। অন্ধের মতো নিজেকে একমাত্র সঠিক মনে করে নিজের ধ্যাণ ধারণাগুলো অন্যের উপর চাপিয়ে দেবার চেষ্টাগুলো আর যাই হোন কখনই
শান্তিপূর্ণ বিষয় হতে পারে না।
মজার ব্যাপার হচ্ছে পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলই নিজেদেরকে একমাত্র সঠিক
বলে দাবী করে। এটা রাজনৈতিক দলের মধ্যে যদিও তুলনামূলক ভাবে অনেক কম তবে প্রতিটি ধর্মের মূল ভিত্তিই হচ্ছে
একমাত্র সেই ধর্মটিই সঠিক এবং বাকী
সবগুলো ধর্মই ভূল। কোন তথ্য প্রমান ছাড়াই নিজেকে সঠিক
বলে দাবী করা এবং অন্যকে ভূল বলে রায় দেওয়াটা একমাত্র অন্ধবিশ্বাসের মধ্যেই পড়ে। এজন্যই পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মই কিছু প্রমাণহীন কুসংস্কারের প্রতি অন্ধবিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু প্রতিটি ধর্মই তাদের
ধ্যান ধারণাগুলোকে একমাত্র সত্য
বলে দাবী করে এবং ভিন্ন ধর্মের ধ্যাণ ধারণাকে মিথ্যা বলে রায় দেয় কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই শুধু মাত্র
অন্ধবিশ্বাসের শিকার হয়ে তাই বলা যায় তাদের কারো দ্বারাই পৃথিবীতে কখনই শান্তি প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব
নয়। যে মতাদর্শটি নিজেকে একমাত্র সঠিক
মনে করে এবং বাকী সব মতাদর্শকে ভূল মনে করে কোন প্রমাণ ছাড়াই
এমনকি তারা তাদের
সেসব প্রমাণহীন অন্ধমতাদর্শগুলোকে অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে
চায়, তাই বলা যায় পৃথিবীর এসমস্ত মতাদর্শের মধ্যে কোন
মতাদর্শই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে
না। বরং যুগযুগ ধরে এরা নিজেরা যেরকম শত শত অশান্তি ঘটিয়েছে সেরকম
অশান্তিই যুগ যুগ ধরে ঘটিয়ে চলবে
যে পর্যন্ত না এগুলো বিলুপ্ত হয়ে যায়।
তাই এসব ‘নিজেদের সত্য বাকীদের মিথ্যা’ বলে অন্ধভাবে বিশ্বাস করা মতাদর্শগুলো যতই দাবী করুন না কেন একমাত্র তারাই
পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, তারা
কখনই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে
না। বরং তাদের
মতাদর্শকে অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে গিয়ে
তারাই পৃথিবীতে অশান্তি প্রতিষ্ঠিত করে চলবে। যেভাবে ইতিপূর্বে তারা শান্তির নামে অশান্তি প্রতিষ্ঠিত করে এসেছে সেভাবেই এরা পৃথিবীতে থেকে অশান্তি দূর হতে দিবে না। বরং এরাই পৃথিবীর অশান্তির কারণ।
যদিও এসব ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলগুলো দাবী করে পৃথিবীতে তারা ক্ষমতায় গিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করবে কিন্তু তারা
আসলে পৃথিবীতে শুধু অশান্তিই বনে নিয়ে
আসে। অতীতেও এনেছে
এবং ভবিষ্যতেও অশান্তি আনবে।
কারণ তারা
প্রত্যেকেই নিজেদেরকে সত্য ও সঠিক মনে করে এবং অন্যকে অসত্য ও ভূল মনে করে সম্পূর্ণ অন্ধভাবে। তাদের মধ্যে
সহনশীলতা নেই, নেই অন্যের প্রতি মহমর্মিতা বা অন্যের মতাদর্শকে সম্মান জানানোর মন মানুষীকতা। বরং তারা
একে অপরকে ঘৃণা
করতে থাকে। এজন্যই এসব ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলগুলো সারা
পৃথিবী জুড়েই অশান্তি বয়ে নিয়ে এসেছে
এযাবতকাল ধরে।
প্রকৃতপক্ষে সহনশীলতা, সহমর্মিত, এবং পরস্পরের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা না থাকলে পৃথিবীতে কখনই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। যদি পৃথিবীর সমস্ত
মানুষ একে অন্যের মতাদর্শ অন্যের উপর চাপিয়ে না দিতে
চায়, বরং প্রত্যেকেই একে অন্যের ভূল ত্রুটিগুলোকে শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনা সমালোচনা করার পরিবেশ তৈরি
করতে পারে তবেই
পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব। ‘আমি যা কিছু করি বা বিশ্বাস করি তাই সঠিক এবং অন্যরা যা কিছুই
করুক বা বিশ্বাস করুকনা কেন তার সবগুলোই ভূল’ এমন মনোভাব রাখা এবং নিজের মতাদর্শকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেবার
মন মানুষীকতা কখনই পৃথিবীতে শান্তি বয়ে আনতে পারে না। বরং নানা রকমের
অশান্তির সৃষ্টি করতে
পারে। যুক্তি প্রমাণ দিয়ে যদি নিজেদের মতাদর্শকে যাচাই বাছাই
করাই না যায় তবে সেই মতাদর্শটি কখনই সঠিক হয় না। ফলে সেটি
অন্যের উপর জোর
করে চাপিয়ে দিতে
চাওয়ার মনোভাবটি কখনই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করবে না। বরং পৃথিবীতে সব সময়ই
অশান্তি সৃষ্টি করে যাবে।
এজন্যই আমাদের সবারই উচিত একে অন্যের মতাদর্শগুলোকে সমালোচনা করার পথ খোলা রাখা। যাতে যুক্তি তর্কের আঘাতে সেগুলো পরিশুদ্ধ হবার সুযোগ পায়। এবং যুক্তি প্রমাণকে প্রাধান্য দিতে শেখাটাও শান্তি প্রতিষ্ঠিত করার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এবং অতি অবশ্যই নিজের মতাদর্শকে অন্যের উপর জোর
করে চাপিয়ে দেবার
চেষ্টাটা কখনই পৃথিবীতে শান্তি আনবে না। পৃথিবীর সব ধর্ম
এবং অনেক রাজনৈতিক দলই নিজেদের মতাদর্শকে অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে যেয়ে পৃথিবীতে শত শত অশান্তি ডেকে এনেছে। ইতিহাস তার প্রমাণ হয়ে আছে। যারা নিজেদেরকে একমাত্র সঠিক এবং বাকী সবার মতাদর্শকে মিথ্যা ও ভূল বলে বিশ্বাস করে কোন প্রমাণ ছাড়াই
তারাই পৃথিবীতে অশান্তির প্রধাণ কারণ হয়ে এসেছে
যুগ যুগ ধরে। বরং যারা নিজেদের চিন্তা ভাবনাকে একমাত্র সত্য মনে করে ও অন্যের মতাদর্শকে ভূল মনে করে সম্পূর্ণ অন্ধভাবে তারাই তাদের মতাদর্শকে অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে
চায় এবং পৃথিবীতে অশান্তি ডেকে আনায়
কারণ হয়। ফলে সেসব ধর্ম ও রাজনৈতিক দল আসলে
শান্তি আনার নামে
পৃথিবী জুড়ে নানা
অশান্তি ঘটিয়ে চলে। অপরদিকে সেসব ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলগুলোকে যদি বিলুপ্ত করা না যায় তবে পৃথিবী থেকে অশান্তি কখনও
দূর করা যাবে
না।
নিজেদেরকে একমাত্র সঠিক
ও অন্যদেরকে ভূল মনে করা ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলগুলো যে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না তার প্রমাণ অতীতে
তাদের দ্বারা সংঘটিত নানা যুদ্ধ, হত্যা,
বর্বরতা, ঘৃণা, এবং শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব। একদল
যখন নিজেদেরকে একমাত্র সঠিক
মনে করে এবং ভিন্ন দলকে ভূল ও মিথ্যা মনে করে তাদের উপর জোর
করে নিজের মতাদর্শকে চাপিয়ে দিতে চায়;
অপরদিকে এসব করতে
যেয়ে পৃথিবীতে নানা রকম অশান্তির কারণ ঘটায় এবং বলে তারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করছে, তাদের
মতো খারাপ দল পৃথিবীতে আর নেই। আর তাই তারা
যখন দাবী করে তারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করবে পরস্পরের মধ্যে ঘৃনা ও যুদ্ধ করার মাধ্যমে তারাই আসলে পৃথিবীর সব অশান্তির কারণ। এদেরকে বিলুপ্ত করার
মাধ্যমেই আসলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। অন্যথায় এরা ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলে পৃথিবীতে কখনই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। বরং তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে ক্ষমতায় যাবার পরে নিজেদের মধ্যে উপদলে বিভক্ত হবে এবং নিজেদের মধ্যেই খুনাখুনি যুদ্ধ বিগ্রহ করে পৃথিবীকে অশান্তির নরক বানিয়ে ফেলবে। কারণ এরা নিজেদেরকে সঠিক মনে করতে শিখেছে অন্ধভাবে। ফলে তারা অন্যের মতাদর্শকে সম্মান করতে
শিখেনি এবং নিজেদের মতাদর্শ যে ভূল সেটা শোনার মতো
সহনশীলতাও এদের মধ্যে
নেই।
যারা নিজেদের মতাদর্শের বিরুদ্ধে কোন সমালোচনা শোনার মতো
ক্ষমতা রাখে না বরং তারা কোন
প্রমাণ ছাড়াই নিজেদের মতাদর্শকে শ্রেষ্ট মনে করে তারাই ভিন্ন
মতাদর্শের মানুষদের প্রতি ঘৃণা বোধ করে। তারা পরস্পরে বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব রাখে বলেই তারা
একে অপরের সাথে
যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এবং পৃ্থিবীর যত অশান্তির কাজ আছে সবগুলো পূর্ণদমে করে যায়। ফলে পৃথিবীতে অশান্তি কখনই দূর হয় না। তারা
আসলে শান্তির কথা বলে সব অশান্তির কাজ করে যায়।
তাই যতদিন
মানুষ নিজেকে ‘একমাত্র সঠিক’ মনে করার
মনোভাব ত্যাগ না করবে, যতদিন নিজের
মতাদর্শের সমালোচনা সহ্য করার সক্ষমতা না অর্জন করবে, যতদিন
অন্যের মতাদর্শের প্রতি সম্মান দেখাতে না জানবে, যতদিন ভিন্ন
মতাদর্শের মানুষকে সম্মান করতে না শিখবে
এবং যতদিন নিজের
মতবাদকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেবার চেষ্টা থেকে বিরত না হবে ততদিন পর্যন্ত পৃথিবীতে কোন ভাবেই
শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। কখনও সেটা
সম্ভবও না।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মই দাবী করে একমাত্র তাদের ধর্মটিই সত্য, বাকী সব ধর্মই মিথ্যা। পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মই দাবী
করে একমাত্র তাদের
ধর্মটিই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। পৃথিবীর অন্য কোন
ধর্মই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না। তারা দাবী
করে যদি তাদের
ধর্মটি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত না হয় তবে পৃথিবীতে কখনই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। এসব দাবী করে তারা
তাদের ধর্মটি অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে
চায়। তারা একে অন্যের সাথে যুদ্ধ
করে, হত্যা করে,
বর্বরতা চালিয়ে সর্বত্র তাদের ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তারা
বলে তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ
করছে। অথচ এসব যুদ্ধই আসলে পৃথিবীর সব অশান্তির মূলে রয়েছে যা তারা
স্বীকার করতে চায় না। বরং তারা
নিজেরা অশান্তি সৃষ্টি করে ভিন্ন ধর্মের নিরীহ অনুসারীদেরকে দোষ দিয়ে তাদের উপরই
অত্যাচার করতে থাকে
শান্তি প্রতিষ্ঠার নাম করে। উপরন্তু সেসব
ধর্মের প্রতিটিরই উপদল তৈরি হয়ে একে অন্যের উপর যুদ্ধ,
হত্যাকান্ড, বর্বরতা চালাতে থাকে। অর্থাৎ তারা
নিজেরাই নিজেদের মধ্যেই অশান্তি সৃষ্টি করে চলে। তাই বলা যায় তারা যদি পুরো পুথিবীর ক্ষমতা পায় তবে নিজেদের মধ্যেই যুদ্ধ করতে
থাকবে, একদল আরেকদলের উপর অত্যাচার করতে থাকবে, বর্বরতা কখনই
শেষ হবে না। ফলে পৃথিবীতে অশান্তি দূর করা সম্ভব নয় এসব শান্তি প্রতিষ্ঠা করার দাবীদার ধর্মগুলোর পক্ষে। যেহেতু ধর্মের প্রধান ভিত্তিই হলো
অন্ধভাবে কিছু কাল্পনিক বা কুসংস্কারময় বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস করা তাই তারা নিজেরাই নিজেদেরকে একমাত্র সত্য
বলে মনে করে এবং ভিন্ন মতের
মানুষের উপর তাদের
সেসব অন্ধবিশ্বাসময় কুসংস্কারের মতাদর্শগুলোকে চাপিয়ে দিতে চায়। যেহেতু তারা শুধু নিজেদেরকেই সঠিক মনে করে তাই তারা ভিন্ন
মতের মানুষদের উপর অত্যাচার, হত্যাকান্ড ঘটাতে দ্বিধা বোধ করে না। এজন্যই এসব ধর্মগুলো পৃথিবী জুড়ে
নানা রকমের অশান্তি প্রতিষ্ঠা করে চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার নাম করে।
তাই যদি এসব কুসংস্কারের প্রতি অন্ধবিশ্বাসী মনোভাবের ধর্মগুলোকে দূর করা না যায় তবে পৃথিবীতে কখনই শান্তি প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে না। বরং এসব ধর্মগুলোই শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে পৃথিবীকে অশান্তির নরকে পরিণত করবে। কারণ
তারা নিজেদের ধর্মের সমালোচনা সহ্য করতে
পারে না, অন্যের মতাদর্শকে গুরুত্ব দিতে
জানে না, এবং অন্য মানুষকে সম্মান জানাতেও এরা শিখেনি। এজন্য পৃথিবীতে এসব ধর্মীয় মতাদর্শের মানুষগুলো পৃথিবী জুড়ে অশান্তি ঘটিয়েছে এবং ঘটিয়েই চলেছে। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠান নামে এরা পৃথিবীর অশান্তি সৃষ্টি করার
প্রধান কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে সব সময়ই। তাই তাদের মতাদর্শকে বিলুপ্ত না করে পৃথিবীতে কখনই শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
No comments:
Post a Comment