প্রায়ই
এই প্রশ্নটি আসে অন্ধবিশ্বাসী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন আস্তিক মহল থেকে -
প্রশ্নঃ
বিজ্ঞান সর্বদা পরিবর্তনশীল। আজ এক কথা বলে তো কালই ভিন্ন কথা বলে। বিজ্ঞানে শেষ বলে
কিছু নেই। যে বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয় এবং কোন সিন্ধান্তেই আস্থাশীল থাকতে পারে
না সেই বিজ্ঞানের উপর আস্থা রাখা বা বিজ্ঞানের সিদ্ধান্তকে বিশ্বাস করার কোনই যুক্তিকতা
নেই।
উত্তরঃ
যদি বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল হওয়াতে বিজ্ঞানের উপর আস্থা রাখা অযৌক্তিক হতো তবে অফিস আদালতে
বিজ্ঞানকে প্রমাণের মাপকাঠি ধরা হতো না। আমরা
সবাই জানি আদালতে প্রমাণ হিসেবে বিজ্ঞানের থিউরীগুলোকে সব থেকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
কেন?
কারণ
বিজ্ঞানের প্রমাণগুলো বাস্তবিক। এবং বিজ্ঞানের প্রতিটি থিউরী বা প্রমাণই পরীক্ষিত।
পৃথিবীর নানা স্থানের নানা ধরণের মানুষ দ্বারা বিজ্ঞানের থিউরী বা প্রমাণগুলো পরীক্ষা
করা হয়েছে। অর্থাৎ বিজ্ঞানের থিউরী বা প্রমাণগুলো পরীক্ষা করে যাচাই করে দেখা হয়েছে
বলেই আদালতে বিজ্ঞানের প্রমাণকেই সবার উপর স্থান দেওয়া হয়।
বুঝাই
যাচ্ছে যারা বলে বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল বলে বিজ্ঞানের উপর আস্থা রাখাটা বোঁকামী তারা
এসব বিষয়গুলোকে না বিবেচনা করেই এই দাবীগুলো করে।
এখন
প্রশ্ন আসতে পারে বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল হওয়া সত্তেও কেন মানুষ বিজ্ঞানকেই প্রমাণের সব
থেকে শ্রেষ্ট পন্থা হিসেবে বিবেচনা করে?
এই
প্রশ্নটির উত্তরও খুব সহজ যা অনেকের পক্ষে বোধগম্য হয় না।
বিজ্ঞান
পরিবর্তনশীল এ কথাটি সত্য। বিজ্ঞানের থিউরীর দাবীগুলোও সদাপরিবর্তিত, পরিমার্জিত এবং
পরিশোধিত হয়। আজ যেটা বিজ্ঞানের দাবী কাল সেটা পরিবর্তন হয় একটি বিশেষ পদ্ধতিতে। আর
সেটা হলো তথ্য প্রমাণ। যখনই বিজ্ঞানের কোন ত্রুটি দেখা যায় বা বিজ্ঞানের থিউরীগুলোর
কোন অংশের ভূল ধরা পরে সাথে সাথেই সেই ভূলটিকে বিজ্ঞান সঠিক করে ফেলে। অর্থাৎ বিজ্ঞান
প্রতিনিয়ত নিজেকে পরিশুদ্ধ করে তুলে। এজন্যই মানুষ বিজ্ঞানকে প্রমাণের সর্বোচ্চ আসনে
রেখেছে।
কেন
বিজ্ঞান পরিবর্তন হওয়াতেই এটি প্রমাণের মাপকাঠি হিসেবে উপযুক্ত?
কারণ
বিজ্ঞান সব সময়ই প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়। নানা রকমের হাইপোথিসিস (যাকে সাধারণ
ভাবে আমরা থিউরী বলি সেসব হাইপোথিসিস) বা নানা রকম ধারণাগুলো বিজ্ঞান পরীক্ষা করে
দেখে। যদি সেটা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মিথ্যে প্রমাণিত হয় তবে সে হাইপোথিসিস বা ধারণাগুলোকে
বিজ্ঞান বাতিল করে দেয়। আবার যেসব হাইপোথিসিস বা ধারণা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এবং
নানা পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে সত্য বলে প্রমাণিত হয় সেগুলোকে থিউরীর মর্যাদা দেওয়া
হয়। অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক থিউরী গুলো হলো প্রমাণিত সত্য ধারণা বা প্রমাণিত সত্য হাইপোথিসিস।
এখন
ধরি কোন একটি থিউরীর একটি অংশ ভূল প্রমাণ হলো (লক্ষ করুণ সম্পূর্ণ থিউরীটি নয়) তখন
সেই থিউরীটির ভূল অংশটুকুকে সংশোধন করা হয় নানা রকম তথ্য প্রমাণ এবং পরীক্ষা নিরিক্ষার
মাধ্যমে। এই যে বিজ্ঞান তার ভূলগুলোকে সনাক্ত করে এবং তারপর পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে
এটিকে সংশোধন করে নেওয়া হয় এটাই হলো বিজ্ঞান যে সত্য নির্ণয়ের মাপকাঠি সেটার কারণ।
বিজ্ঞানকে প্রমাণের মাপকাঠি এজন্যই বিবেচনা করা হয় কারণ বিজ্ঞান নিজেকে প্রতিনিয়ত পরিশুদ্ধ
করে।
তাহলে
কি বিজ্ঞান পরিবর্তন হয় না? বিজ্ঞানতো প্রতিনিয়তই তার দাবীগুলোকে বদলায়। তাহলে বিজ্ঞানকে
কিভাবে বিশ্বাস করবো? যেমন বিজ্ঞান একসময় দাবী করেছিল সূর্য, চাঁদ তারা এগুলো পৃথিবীকে
কেন্দ্র করে ঘুরে। আবার বিজ্ঞান তার দাবী বদলে নতুন দাবী করেছিল সূর্য চন্দ ও তারকাগুলো
পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে না। বরং পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘুরে আর সূর্য কেন্দ্রে স্থির
থাকে। কিন্তু শেষে আবার দাবী করেছে সূর্য স্থির থাকে না সূর্যও ঘুরে। এই যে বিজ্ঞানের
দাবীগুলো সব সময় পরিবর্তন হয় তাহলে বিজ্ঞানতো নিজেই কোন বিশেষ সিদ্ধান্তে থাকতে
পারে না তাহলে বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করা বোঁকামী নয় কি?
প্রথমত,
প্রাচীন কালের বিজ্ঞান দিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানকে বিচার করা অযৌক্তিক। কারণ প্রাচীন কালের
মানুষের কথাগুলো বর্তমানের বিজ্ঞানের দাবীগুলোর মতো প্রমাণিত ছিল না। তবে মোটামুটি
কিছু তথ্যের উপর নির্ভর করে তারা সিদ্ধান্তগুলো নিত। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের থিউরীগুলো
বহুল ভাবে পরীক্ষিত এবং পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে প্রমাণিত। তাই বর্তমানের যেসব থিউরী সেগুলোর
সাধারণত ভূল হয় না। তবে অনেক সময় থিউরীগুলোর কিছু কিছু অংশের স্বীমাবদ্ধতা বা ভূল
পাওয়া যায়। আর সেই অংশগুলোর পরিবর্তন করে সংশোধন করা হয় তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে।
আর তাই বলা যাবে না যে আধুনিক বিজ্ঞানের থিউরীগুলোও সম্পূর্ণরুপেই পরিবর্তিত হয়ে যায়।
যেমন
যখন মানুষ সিদ্ধান্তে এসেছে যে পৃথিবীর চারপাশে সূর্য ঘুরে সেটি ছিল প্রাচীনকালের কিছু
মানুষের দেওয়া মতবাদ। সেটি কিন্তু বিজ্ঞান ছিল না। বা আধুনিক বিজ্ঞানের সমপর্যায়ের
ছিল না। কারণ তখন আধুনিক বিজ্ঞানের মতো প্রমাণ করার মাধ্যম ছিল না। কিন্তু আধুনিক
বিজ্ঞান প্রতিটি দাবীকেই পর্যায়ক্রমে পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে নেয়।
এজন্যই
পৃথিবী কেন্দ্রিক জগতের ধারণাটি ভূল প্রমাণিত হওয়াকে আধুনিক বিজ্ঞানের থিউরীর ভূল প্রমাণিত
হওয়ার সাথে তুলনা করা অযৌক্তিক।
আবার
মধ্যযুগের সূর্য কেন্দ্রিক সৌরজগতের মডেলও ব্যাপক ভাবে আধুনিক বিজ্ঞানের মতো পরিক্ষিত
ছিল না। তখন মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না যে সূর্যের চারপাশে পৃথিবী সহ গ্রহগুলোর
ঘূর্ণনের মতো করে সূর্যও গ্যালাক্সির চারপাশে ঘুরছে। কারণ সূর্য যে আমাদের গ্যালাক্সিকে
কেন্দ্র করে ঘুরছে সেটা বুঝার মতো বা দেখার মতো প্রযুক্তি মানুষের ছিল না। সে সময়
মানুষ গ্যালাক্সির ধারণাই রাখাতো না।
এই
যে প্রথমে বিজ্ঞানীরা দাবী করেছিল যে সূর্য স্থির থাকে এবং সূর্যের চারপাশে পৃথিবী
সহ অন্যান্য গ্রহগুলো ঘুরছে সেই পুরো থিউরীটিই কিন্তু বদলে যায়নি। এই সূর্য কেন্দ্রিক
সৌরজগত মডেলের শুধুমাত্র সেই অংশটুকুই সংশোধন হয়েছে যে অংশটুকুর স্বীমাবদ্ধতা ছিল
বা ভূল ছিল। কিন্তু যে অংশটি সঠিক ছিল যেমন পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহগুলোও
সূর্যের চারপাশে ঘুরে সেটি কিন্তু বদলে যায়নি। যেহেতু সেটি সঠিক ছিল তাই সে অংশগুলো
অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। এটাই হলো বিজ্ঞানকে বিশ্বাসের মুল কারণ।
লক্ষ
করুন সূর্য কেন্দ্রিক সৌরজগতের যে ধারণা বা মডেলটি বিজ্ঞানীরা দিয়েছিল সেটি কিন্তু
মিথ্যে প্রমাণিত হয়নি। বরং কালে কালে সেটির পক্ষে বিপুল সংখ্যক প্রমান পাওয়া গেছে।
কিন্তু যেহেতু সূর্যের ঘূর্ণন সম্পর্কে কোন প্রমাণ বা নতুন ধারণা যতক্ষন পাওয়া যায়নি
ততক্ষনতারা সূর্যের ঘূর্ণনের কোন দাবী করা হয়নি। এটাই হলো বিজ্ঞানের বিশ্বস্ততার
কারণ। বিজ্ঞান যতটুকু তথ্য প্রমাণ পায় ঠিক ততটুকুই দাবী করে। বিজ্ঞান যখনই জানতে পেরেছে
সূর্যও গতিশীল সাথে সাথে সে সিদ্ধান্তের পরিমার্জন করেছে। সেটা করেছে তথ্য প্রমাণের
ভিত্তিতে।
এখন
কেউ যদি দাবী করে যে বিজ্ঞান তার থিউরীগুলো সম্পূর্ণরুপেই পরিবর্তন করে বা বিজ্ঞান
তার দাবীগুলো সম্পূর্ণরুপেই পাল্টে ফেলে তবে তার অজ্ঞতা থেকেই এই দাবীটি করে। বিজ্ঞান
কখনই তার দাবী সম্পূর্ণ রুপে পাল্টে ফেলেনি। বিজ্ঞানের সেসব তত্ত্বকে (হাইপোথিসিসকে)
থিউরীর মর্যাদা দিয়েছে সেগুলোর কোনই পরিবর্তন করেনি। যেমন সৌর মডেলের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান
দাবী করেছিল যে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহগুলো সূর্যকে কেন্দ্র করেই ঘুরছে। বিজ্ঞান কিন্তু
তার সেই দাবীটি বদলে ফেলেনি। সেই চারপাঁচশত বছর আগেই বিজ্ঞান বলেছে পৃথিবী সূর্যের
চারপাশে ঘুরে আজও বলছে পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরে। এবং এটি পরিবর্তিত হবে না ততদিন
পর্যন্ত যতদিন পৃথিবী সত্যি সত্যিই সূর্যের চারপাশে ঘুরবে। এখন কোনদিন যদি পৃথিবী
সূর্যের চারপাশে ঘুরা বাদ দেয় বরং এটি স্থির হয়ে যায় এবং তখন যদি বিজ্ঞানীরা বলে যে
পৃথিবী ঘুরে না। আর তখন যদি কোন মানুষ দাবী করে যে বিজ্ঞান তার দাবী বদলে দিয়েছে তাই
বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করা যাবে না; তবে যেমনটি শুনাবে ঠিক তেমনি আজকে যারা বিজ্ঞান সম্পর্কে
এসব রটনা রটায় তাদের দাবীটিও সেরকম অযৌক্তিক শুনায়।
বিজ্ঞানের
দাবী কখনই আমুল বদলে যায় না। বিজ্ঞান যেমন অনেক আগে দাবী করেছিল সে পৃথিবীর চারপাশে
সূর্য ঘুরে না বরং পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘুরে ঠিক একই ভাবে আজও তার দাবী অপরিবর্তিত
রয়েছে। এবং যতদিন পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরবে ততদিনই বিজ্ঞানের দাবীটি অপরিবর্তিত
থাকবে। কারণ বিজ্ঞান কাজ করে প্রমাণের ভিত্তিতে। বাস্তবতার দাবীর ভিত্তিতে। এজন্যই
বিজ্ঞানের থিউরী কখনই বদলে যায় না। তবে থিউরীর কোন অংশ ভূল প্রমাণিত হলে সেই ভূল অংশটুকু
পরিবর্তিত হয়।
উদাহরণ
হিসেবে বলা যায় মহাকর্ষ থিউরীর কথা। এই যে মহাকর্ষ বলের ধারণাটি নিউটন দিয়েছিল সেটি
কি নিউটনের মতো মহা জ্ঞানী মানুষ দিয়েছিল বলেই কি বিজ্ঞান সেটিকে সত্য বলে রায় দিয়েছিল?
নিউটন মহা জ্ঞানী বলেই কি তার দেওয়া মহাকর্ষ হাইপোথিসিসটিকে থিউরীর মর্যাদা দিয়েছিল
বিজ্ঞান? যারা বিজ্ঞান সম্পর্কে নুন্যতম ধারণাও রাখেন তারাও জানেন যে মহাকর্ষ হাইপোথিসিসকে
থিউরীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে কারণ এটির পক্ষে হাজার হাজার প্রমাণ পাওয়া গেছে। মহাকর্ষ
থিউরীটি নানা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে বলেই সেটি একটি থিউরী বা প্রমাণিত সত্য।
এখন যদি দেখা যায় বিশ্বজগতের কোথাও মহাকর্ষ বলটি আর কাজ করছে না এবং তখন যদি বলা হয়
মহাকর্ষ বল নেই তবে কি বিজ্ঞানের উপর বিশ্বস্ততা কমে যাবে? মোটেও তা নয়। বরং যতদিন
মহাকর্ষ বল থাকবে ততদিন এই থিউরীটি অপরিবর্তিত থাকবে। কারণ মহাকর্ষ বল একটি প্রমাণিত
বাস্তব সত্য। তাই বিজ্ঞান মহাকর্ষ বলের ধারণাটিকে বিজ্ঞানের থিউরীর মর্যাদা দিয়েছে।
আবার
ধরি নিউটনের মহাকর্ষ সুত্র বা গতি সুত্রের অনেক দাবীই বিগ ব্যাব্যাং-এর সিঙ্গুলারিটি
বা ব্ল্যাক হোলের ক্ষেত্রে কাজ করে না। তাই বলে কি নিউটনের মহাকর্ষ সুত্র বা গতিসুত্রগুলো
ভূল? মোটেও না। যেসব প্রশ্নের উত্তর নিউটনের সুত্র বা থিউরীগুলো দিয়ে ব্যাখ্যা করা
যায় না সেসব উত্তর আইস্টাইনের থিউরীগুলো দিয়ে করা যায়। তাই বলে কি নিউটনের দাবীগুলো
ভূল? মোটেও কিন্তু তা নয়। বরং যেটা যেখানে প্রযুজ্য সেটা সেখানে সত্য। যেমন ধরি যদি
আমরা শুধু আমাদের সৌরজগতের ভিতরের অংশগুলোকে নিয়ে কাজ করি যেমন পৃথিবী, চাঁদ, সূর্য
বা তারকা তবে কিন্তু সূর্য স্থির নাকি গতিশীল সেটা বিবেচনা না করলেও চলে। আমরা সূর্যকে
স্থির ধরেই এসব হিসেব খুব ভালো ভাবেই করতে পারবো। অর্থাৎ সূর্যকে স্থির হিসেবে ধরা
যায়। কিন্তু আমরা যখন আমাদের গ্যালাক্সির হিসেবে পৃথিবী, চাঁদ-তারা এবং সূর্যকে বিবেচনা
করবো তখন কিন্তু সূর্যকে স্থির ধরলে চলবে না। বরং তখন সূর্যকেও গতিশীল ধরতে হবে। তাই
বলে কিন্তু পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে এবং পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্য স্থির থাকে
এই দাবীটি কিন্তু মিথ্যে হয়ে যায় না। পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্য আগেও স্থির ছিল, এখনও
স্থিরই আছে। তাই বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল এই কথাটির কোনই ভিত্তি নেই। বরং বিজ্ঞানের যেসব
কিছু প্রমাণিত সেসব কখনই পরিবতর্ন হয় না। মহাকর্ষ বল যেমন আগেও বিজ্ঞানে দাবী করা হয়েছিল
এখনও এই দাবী অপরিবর্তিত আছে। অর্থাৎ বিজ্ঞান কখনও পরিবর্তন হয় না বরং বিজ্ঞানের কিছু
কিছু স্বীমাবন্ধতামুলক ভূলগুলো সংশোধন হয়।
এজন্যই
মানুষ বিজ্ঞানকে সত্যের মাপকাঠি ধরে। পৃথিবীর আর কোন কিছুকে বিজ্ঞানের উপর সত্যতার
মাপকাঠি হিসেবে স্থান দেওয়া হয় না। সেটা যেকোন অফিসেই হোক অথবা যেকোন আদালতেই হোক।
বিজ্ঞান
সদা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে বলেই মানুষ বিজ্ঞানকেই সব থেকে বেশী বিশ্বাস করে। বিজ্ঞানই
সব থেকে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত বলেই আমরা সব কিছুর থেকে বিজ্ঞানের উপরই সব চেয়ে বেশী
আস্থাশীল থাকি।
বিশেষ
দ্রষ্টব্যঃ বিবর্তনবাদকে মিথ্যা প্রমাণ করতে যেয়েই আস্তিকরা দাবী করে বিজ্ঞানতো সব সময়ই পরিবর্তিত
হতে থাকে তাই বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করা যাবে না। বরং ধর্মগুলো বা ধর্মগ্রন্থগুলো যেহেতু শুরু
থেকেই অপরিবর্তিত থাকে তাই ধর্মগ্রন্থগুলোকেই বিশ্বাস করতে হবে। বিজ্ঞানকে ধর্মগ্রন্থের চেয়ে বিশ্বাস করা যাবে না।
আসলে
আস্তিকরা তাদের অন্ধবিশ্বাসের জন্যই তাদের ধর্মগ্রন্থগুলোকে সত্য বলে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। বাস্তবে ধর্মগ্রন্থগুলোতে নানা রকমের ভূল তথ্য দেওয়া থাকে। পৃথিবীর সব ধর্মগ্রন্থগুলোতে নানা রকম
অবৈজ্ঞানিক কথাবার্তা বলা থাকে যা সেই ধর্মগ্রন্থগুলোকে
মিথ্যা প্রমাণ করে দেয়। বিজ্ঞানের সত্যগুলো যখন ধর্মগ্রন্থগুলোকে মিথ্যা প্রমাণ করে দেয় তখনই আস্তিকরা তাদের অন্ধবিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখতে এই অপযৌক্তিক দাবীগুলো
করে। তাদের দাবী পুরোপুরিই মিথ্যা কারণ বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল বলেই এটি সব থেকে বিশ্বস্ত
হয়। আস্তিকদের দাবী অনুযায়ী বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল বলেই বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করা যাবে না এই দাবীটির
কোনই ভিত্তি নেই। বরং তাদের দাবীকে মিথ্যা প্রমান করে দিয়ে পৃথিবীর সব দেশের অফিস
আদালতগুলো বিজ্ঞানকেই সব থেকে বিশ্বস্ত
এবং আস্থাশীল হিসেবে দেখে। এবং আদালতের কার্যাবলী নির্ভর করে বিজ্ঞানের তথ্য প্রমাণকে ভিত্তি করেই। তাই আমরা দৈনন্দিন জীবনে দেখতে পাই বিজ্ঞানই সব থেকে বিশ্বস্ত।
যেমন কম্পিউটার, ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তিগুলো সবগুলোই বিজ্ঞানের বিশ্বস্ততা বা আস্থাশীলতাই প্রমাণ
করে। বিজ্ঞানই যে পৃথিবীতে সব
থেকে বিশ্বস্ত এবং আস্থাশীল একমাত্র মাধ্যম তার সব চেয়ে উপযুক্ত
প্রমাণ হলো চিকিৎসা বিজ্ঞান। আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগেই
যে সব রোগের চিকিৎসা
পৃথিবীর কোন ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ এবং সেই সব ধর্মের সৃষ্টিকর্তাগুলো
সম্মিলিত ভাবেও চিকিৎসা করতে পারতো না সেগুলো চিকিৎসা
বিজ্ঞানের উন্নত চিকিৎসা আবির্ভাবের ফলে চিকিৎসা করতে পেরেছে। এজন্যই মানুষ বিজ্ঞানের উপরই সব থেকে বেশী
আস্থাশীল থাকে। পৃথিবীর কোন ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ এবং সমস্ত সৃষ্টিকর্তাগুলো যেসব রোগের চিকিৎসা করতে পারে না সেগুলো চিকিৎসা
বিজ্ঞান করে। আর যেসব রোগের
চিকিৎসা করতে পারে না সেসব রোগের
চিকিৎসা করা পৃথিবীর কোন ধর্মের কোন ধর্মগ্রন্থের এবং কোন সৃষ্টিকর্তার পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই সব কিছুর উপর
বিজ্ঞানই হলো বিশ্বস্ত এবং আস্থাশীল সত্য।
বিবর্তন
ঘটে এটা প্রমানিত বিষয়। তাই আস্তিকরা যতই বলুক না কেন বিজ্ঞান
পরিবর্তনশীল বলেই বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করা যাবে না এসব দাবী
পুরোপুরিই মিথ্যা এবং ভ্রান্তিকর। বরং বিজ্ঞান প্রতিনিয়তই প্রমান দিয়ে যাচ্ছে যে বিজ্ঞানই পৃথিবীর
সব থেকে বিশ্বাসময় কিছু। সবার উপরেই বিজ্ঞানকে স্থান দিতে হয়। প্রকৃতির পরেই বিজ্ঞানের স্থান। অন্যকিছুর নয়।
বিজ্ঞানের
থিউরীগুলো পরিবর্তিত হয় আরো সত্য
হবার জন্য। বিজ্ঞানে যে কোন ভূল
নেই তার প্রমাণই হলো বিজ্ঞানের ভূলভ্রান্তিগুলো বিজ্ঞান নিজেই পরিবর্তিত হয়। পৃথিবীর কোন কিছুই তার ভূল গুলো ধরতে পারে না আর সেই
ভূল থেকে বের হয়ে আসাতো অনেক পরের ব্যাপার। ধর্মগুলো পুরোটাই অন্ধবিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল। অপরদিকে বিজ্ঞান হলো তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিশ্বস্ত এবং আস্থশীল মাধ্যম।
পৃথিবীর
প্রাচীণ এবং প্রমাণিত ধারণাগুলো যেমন এখনও সত্য ঠিক তেমনি যেসব ধারণা বিজ্ঞান প্রমাণের ভিত্তিতে সত্যের মর্যাদা (তথা থিউরীর মর্যাদা) দিয়েছে সেগুলোর কখনই কোন পরিবর্তন হয় না। মহাকর্ষ
বল বিজ্ঞানের একটি প্রমাণিত বিষয় তাই এর কোন পরিবর্তন
হয় না। প্রকৃতিতে মহাকর্ষ বল অস্তিত্বশীল আছে।
একই ভাবে বিশ্বজগত বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে এটি একটি প্রমাণিত বিষয়। আর তাই বিগ
ব্যাং-এর থেকে উন্নত
থিউরী আসলেও বিগ ব্যাং-এর সত্যতাকে মিথ্যা
প্রমাণ করে দেবে না। যেমন বিগ ব্যাং-এর থেকে উন্নত
থিউরী ইনফ্লেশন থিউরী এবং স্থিং থিউরী (এটি এখনও থিউরীর মর্যাদা পায়নি। বিজ্ঞানে এটিকে এখনও হাইপোথিসিসের মর্যাদা দেওয়া হয় কারণ এটি
প্রমাণিত হয়নি।) এই দুটো থিউরীও
বিগ ব্যাংকে সীকৃতি দিয়েছে। কারণ বিগ ব্যাং-এর মাধ্যমেই যে
আমাদের মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে এটি প্রমাণিত বিষয়। যদি বিগ ব্যাং থিউরী (লক্ষ করুন বিগ ব্যাং নয় বরং বিগ
ব্যাং থিউরী) মিথ্যা প্রমাণিতও হয় তবুও যে
প্রকৃতিতে বিগ ব্যাং-এর মাধ্যমেই আমাদের
বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে সেটি মিথ্যে প্রমান হয়ে যাবে না। যেমন ধরুন ইনফ্লেশন থিউরীটি বলছে প্রথমে ইন্ফ্লেশন হয়েছিল এবং পরে বিগ ব্যাং ঘটেছিল। অর্থাৎ নতুন এবং উন্নত থিউরী এসেছে কিন্তু প্রকৃতিতে যে বিগ ব্যাং
ঘটেছে সেটিকে অস্বীকার করছে না।
আবার
ধরুন যেটা থেকে বিগ ব্যাং থিউরীকে সত্য বলে আবিষ্কার করা হয়েছে সেটা হলো মহাবিশ্ব প্রসারণশীল। এর থেকেই বিগ
ব্যাং-এর ধারণাটির উৎপত্তি।
এখন যদি দেখা যায় প্রকৃতিতে বিগ ব্যাং ঘটেনি (কথার কথা বললাম, কারণ আমরা বিগ ব্যাংকে নিজের চোখে দেখিনি) তাহলে কি বলবো যে
মহাবিশ্ব প্রসারণশীল নয়? মোটেও না। কারণ মানুষ নিজের চোখে দেখেছে (তথ্য প্রমাণের মাধ্যমে) মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে।
বিজ্ঞানের
থিউরীগুলো কাজ করে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে। যখনই কোন তথ্য সামনে আসে বিজ্ঞান সেটা দেখে, পরীক্ষা করার পরেই সেটিকে থিউরী বা সত্য বলে
রায় দেয়। তাই বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল কথাটি পরিপূর্ণ ভাবে সত্য নয়। কারণ বিজ্ঞান কখনই কোন দাবী রাতারাতি বদলায় না। এর প্রমাণ উপরেই
দেওয়া আছে। আইনস্টাইনের থিউরী অফ রিলেটিভিটি এসে
বিজ্ঞানের নতুন ধারনার জন্ম দিয়েছে মাত্র। কিন্তু এটি এসে আগের ধারণাগুলোকে ভূল প্রমাণিত করেনি। কারণ আমরা জানি আইনস্টাইনের থিউরী একটি বিশেষ পরিস্থিতির জন্য (যেমন বিগ ব্যাং-এর সিঙ্গুলারিটিতে অথবা
ব্লাকহোলের ভিতরে) কাজ করে যেখানে নিউটনের থিউরীগুলো কাজ করে না। কিন্তু এই বিশেষ পরিস্থিতির
বাইরে কিন্তু নিউটনের সুত্রগুলো পুরোপুরিই কাজ করে। আবার কোয়ান্টাম ফিজিস্কের থিউরীগুলো আমাদের চেনা পৃথিবীতে খাটে না। যেমন একটি ইলেক্ট্রনের বা ফোটনের অবস্থান
এবং ভরবেগ একই সাথে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। এটা প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু চেনা পৃথিবীতে একটি ক্রিকেট বলের অবস্থান এবং ভরবেগ আমরা এক সাথে নির্ণয়
করতে পারি। তাহলে কি বিজ্ঞান দুই
রকম কথা বলছে? বিজ্ঞানকে কি তবে বিশ্বাস
করা যাবে না?
মোটেও
তা নয়। বরং কোয়ান্টাম ফিজিক্স কাজ করে কুয়ান্টাম লেভেলে বা অতি ক্ষুত্র
স্থানে যেমন পরমানুর অভ্যন্তরে। অপরদিকে সাধারণ পদার্থবিজ্ঞান বা ক্লাসিক্যাল ফিজিক্স
কাজ করে আমাদের চেনা জানা অপেক্ষাকৃত বৃহৎ বস্তু বা অবস্থানে। অর্থাৎ
এই দুটো অবস্থাই কাজ করছে সমান ভাবেই। তাইতো দুটোই সত্যি। তাই বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল এই কথাটি পুরোপুরিই
অর্থহীন।
একই
ভাবে বিবর্তনবাদ প্রকৃতিতে ঘটেছে। এর প্রমাণ চারদিকেই
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পৃথিবীর নানা প্রান্তের নানা ধরণের বিজ্ঞানীরাই নানা রকমের পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমেই দেখেছে প্রকৃতিতে বিবর্তন ঘটে। এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। বিজ্ঞান প্রমাণ দেখেছে বলেই বিবর্তনাবাদকে থিউরীর মর্যাদা দিয়েছে। যদি বিবর্তনবাদ সত্য না হতো তবে
একে হাইপোথিসিস হিসেবেই রাখা হতো। একে থিউরীর মর্যাদা দেওয়া হতো না।
বিজ্ঞান
শুধু ততটুকুই পরিবর্তন করে থিউরীর মধ্যে যেটুকুর ভূল বের হয়। বিজ্ঞান কখনই প্রমাণিত থিউরীর ধারণাকে বদলায় না। যেমন সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর ঘূর্ণনের দাবী বিজ্ঞান কখনই পরিবর্তন করেনি আর করবেও না।
কারণ এটি একটি প্রমাণিত সত্য ঘটনা। একই ভাবে মহাকর্ষ বল প্রকৃতিতে কাজ
করে এই ধারণাটিও কোনদিন
বিজ্ঞান বদলায়নি এবং বদলাবেও না। কারণ এটি প্রমাণিত সত্য। একই ভাবে আপেক্ষিকতাবাদ বা বিগ ব্যাং
থিউরীর ধারণা অথবা গতিশীল মহাবিশ্বের ধারণা বিজ্ঞান কখনই পরিবর্তন করবে না। বিজ্ঞান কখনই তার প্রমাণিত থিউরীকে বদলায় না। শুধুমাত্র এর মধ্যে কোন
অংশে ক্ষুদ্রতম ভূল বা ত্রুটি পেলে
সেটা সংশোধন করে মাত্র। এজন্যই বিজ্ঞানই হলো পৃথিবীর সব চেয়ে শ্রেষ্ট
অবস্থানে অধিষ্ঠিত বিশ্বস্ত বিষয়।
বিজ্ঞানের
পরিবর্তন শুধু ক্ষুদ্র অংশে বিদ্যমান এবং বিজ্ঞানের সব থেকে ভালো
দিকটিই হলো বিজ্ঞান নিজেই নিজের ভূল ধরে নিজেকে সংশোধন করে নেয়। যা পৃথিবীর অন্য
কোন মাধ্যম করতে পারে না। ধর্মতো তার মধ্যে বিদ্যমান মিথ্যা এবং কুসংস্কারগুলোকেও আকড়ে ধরে রাখে। এমনিক নানা রকম প্রমাণ দেখিয়ে ধর্মের ভূলকে বের করে দেখালেও ধর্ম সেগুলোকেই সত্য বলে অন্ধের মতোই বিশ্বাস করে। ধর্ম নানা রকমের মিথ্যা ধারণা, মিথ্যা গালগল্পগুলোকেই সত্যের আসনে বসিয়েছে। যদি ধর্মের ভূল বের করে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েও দেওয়া হয় তবুও ধর্ম
ঘাড়ত্যাড়া মানুষের মতো দাবী করতেই থাকে ধর্মই একমাত্র সত্য। বাকী সব মিথ্যা।
অপরদিকে
বিজ্ঞান তার ভূল অন্য কাউকে বের করার সুযোগই দেয় না। বিজ্ঞান নিজেই নিজের ভূল বের করে নিজেকে সংশোধন করে নেয়। এজন্যই সারা পৃথিবীর মানুষ সমস্ত মাধ্যমকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বিজ্ঞানকেই সত্যের মাপকাঠি হিসেবে আস্থাশীল মনে করে। বিজ্ঞানকেই মানুষ সব থেকে সত্য
বলে বিশ্বাস করে। কারণ বিজ্ঞান সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। ধর্মগুলোর মতো মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। ধর্মতো মিথ্যাকেই আকড়ে ধরে রাখে। আর ধার্মিকদেরকে মিথ্যার
উপর অন্ধের মতো বিশ্বাস রাখতে বলে। এজন্য পৃথিবীর মানুষ ধর্মকে নয় বরং বিজ্ঞানকেই
সর্বোচ্চ বিশ্বাস এবং আস্থার একমাত্র মাধ্যম বলে বিশ্বাস করে চলেছে।
No comments:
Post a Comment