Translate

Search This Blog

বিশেষ সতর্কবার্তাঃ

এই ব্লগটি নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সন্দেহবাদী, মুক্তমনা এবং স্বাধীনচেতা মানুষদের জন্য। যারা যেকোন বিষয়ের সমালোচনা সহ্য করার মত ক্ষমতা রাখে। যদি কোন ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিক এই ব্লগটিতে আসে তবে তার ধর্মানুভূতি নামের অদ্ভূত দূর্বল অনিভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্লগ লেখক দায়ী থাকবে না। ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিকদের নিজ দায়িত্বে তাদের দূর্বল ধর্মানুভূতিকে সংরক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে। কারো ধর্মানুভূতি নামের অযৌক্তিক অনুভূতি আহত হবার জন্য কোন ক্রমেই ব্লগার বা লেখককে দায়ী করা যাবে না। যদি কোন অতি দুর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগে ভূল করে ঢুকে পরেন এবং তিনি তার অনুভূতিকে দূর্বল ভাবেন অর্থাৎ যিনি তার ধর্মের উপযুক্ত সমালোচনা সহ্য করতে অপারগ, তাকে বিনীত ভাবে এই ব্লগটি থেকে প্রস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পরেও যদি কোন দূর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগটিতে ঘুরাফেরা করেন এবং তার ফলে তার দূর্বল ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হন তবে কোন ক্রমেই এবং কোন ক্রমেই ব্লগের মালিক, 'আমি নাস্তিক' দায়ী থাকবে না।

Thursday, December 24, 2015

জগতের অন্তিম প্রশ্নের মুখোমুখি: কেন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকতে পারবে না? কেন শুন্যতার মধ্যে জগত বিলীন হয়ে যাবে? এবং কেন কোন কিছু না থাকার পরিবর্তে কিছু আছে?




কয়েক বছর আগেও মানুষ ভেবেছে শুণ্যতা থেকে কিছু সৃষ্টি হতে পারে না। কোন কিছু সৃষ্টি হতে হলে একজন সৃষ্টিকর্তাকে লাগবেই। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের জানিয়েছে যে শুন্য থেকেও বিশ্বজগত সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণ মানুষের কাছে এটা অসম্ভব ব্যপার যে শুণ্য থেকে কিছু সৃষ্টি হতে পারে। তাই তারা বিশ্বজগত সৃষ্টিতে একজন সৃষ্টিকর্তাকে মুক্ষম অস্ত্র ভেবে নেয়। পৃথিবীর প্রায় সব মানুষই এটা মানতে পারে না যে কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া এই বিশ্বজগত সৃষ্টি হতে পারে। তাদের মতে কোন কিছুই একজন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে না। যদিও তারা এটা ভাবে না যে, সেই সৃষ্টিকর্তাটি কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই কিভাবে সৃষ্টি হতে পারলো? তারা তাদের বুদ্ধিমত্তাকে এই বলে সান্তনা দেয় যে, সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই কারণ সে নিজেই সৃষ্টিকর্তা আর সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তার দরকার নেই। এতে অবশ্য তাদের মনের সৃষ্টিকর্তাহীন জগতের ভয় থেকে সাময়িক মুক্তি ঘটে। কিন্তু বাস্তবতা তো আর সাময়িক মনোশান্তির কথা ভাবে না; তাকে তথ্য প্রমাণের উপর নির্ভর করতে হয়।
বিশ্বজগতের কোন সৃষ্টিকর্তার কোন রকমের কোন প্রমাণই পাওয়া যায়নি। বরং বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বমুহুর্ত থেকে কোন সৃষ্টিকর্তার কোন ভুমিকা বা অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ তথ্য প্রমাণগুলো প্রমাণ দিচ্ছে কোন সৃষ্টিকর্তা নেই এই বিশ্বজগতের। তাহলে কি কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া এই বিশ্বজগত সৃষ্টি হতে পারে?
বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নের উত্তরে বলে থাকেন যে বিশ্বজগতের সৃষ্টিতে সৃষ্টিকর্তার কোন ভূমিকা নেই। বিশ্বজগত কোন সৃষ্টিকর্তার হস্তক্ষেপ ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে এবং এটি পদার্থ বিজ্ঞানের নীতি মেনে কার্যকর রয়েছে। মানব সৃষ্টি বা অন্যান্য প্রাণী বা জীব সৃষ্টিতে কোন সৃষ্টিকর্তার কোনরুপ ভূমিকা নেই এটি প্রমাণিত সত্য। বিজ্ঞানের কিছু নীতি মেনে (এবাইয়োজেনেসিস এবং বিবর্তন তত্ব) প্রকৃতির নিজস্ব ধর্ম মোতাবেক জড় পদার্থ থেকে পর্যায়ক্রমে জৈব জড় এবং পরে জীবনের উৎপত্তি ঘটেছে। পরবর্তীতে এই জীবনের বিবর্তনের মাধ্যমে পৃথিবী জুড়ে পুরো জীবজগত তৈরী হয়েছে। একই ভাবে মানুষের উৎপত্তি ঘটেছে জিপ্পাঞ্জী, গরীলা প্রভৃতি প্রাণীর পূর্বপুরুষের থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে।
অর্থাৎ জীবজগত সৃষ্টিতেও কোন কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তার কোনরুপ ভূমিকা নেই।

আবার বিশ্বজগতের সৃষ্টি হয়েছে ইনফ্লেশনের ধারার মধ্য দিয়ে বিগ ব্যাং-এর মাধ্যমে। আর এই পদ্ধতিতে সৃষ্টিকর্তার কোন রুপ ভূমিকারই দরকার পড়েনি। পদার্থবিজ্ঞানের সাধারণ কিছু সুত্র মেনে এই বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে।
অর্থাৎ জগতের কোথাও কোন সৃষ্টিকর্তার কোনরুপ অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি।
আবার বিজ্ঞানের কিছু তত্ব সৃষ্টিকর্তাকে জগত থেকে একরকম ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। যেমন বিগ ব্যাং এবং ইনফ্লেশন তত্ব অনুযায়ী বিশ্বজগত সৃষ্টির পুর্বে যেমন কোন শক্তি (এনার্জি) এবং পদার্থের অস্তিত্ব ছিল না তেমনি স্থান (স্পেস) এবং কালের (টাইম) অস্তিত্বও ছিল না। অর্থাৎ বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বে কোন পদার্থ শক্তিতো ছিলই না উপরন্তু স্থান সময়ও ছিল না। আর তাই বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বে কোন সৃষ্টিকর্তার বেঁচে থাকার মত স্থান বা সময় কোনটিই ছিল না। এক কথায় বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বে কোন সৃষ্টিকর্তাও ছিল না। সৃষ্টিকর্তাকে অস্তিত্বশীল থাকতে হলে যে স্থান এবং কালের প্রয়োজন ছিল সেই স্থান কালটাও বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বে ছিল অনুপস্থিত। বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বে ছিল এক স্থান কাল বিহীন পরম শুন্যতা। যেখানে কেবল পরম শুন্যতাই বিরাজমান ছিল। আর তাই কোন অস্তিত্বশীল সৃষ্টিকর্তাও থাকতে পারেনি পরম শুন্যতার জগতে। পরম শুন্যতার জগতে কেবল এবং কেবলমাত্র পরম শুন্যতাই অস্তিত্বশীল থাকতে পারে; অন্য কিছুই নয়। কারণ পরম শুন্যতা মানেই হলো অস্তিত্বহীনতা। অর্থাৎ কোন কিছু অস্তিত্বশীল হওয়ার পূর্বে সব কিছুই অস্তিত্বহীন ছিল। অর্থাৎ পরম শুন্যতার জগতে কোন সৃষ্টিকর্তার পক্ষেও অস্তিত্বশীল হওয়া সম্ভব নয়। আর তাই সৃষ্টিকর্তার কল্পকাহিনীটিও ভিত্তিহীন হয়ে যায় অস্তিত্বহীন পরম শুন্যতার জগতে।
সুতরাং এই বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বে কিছু ছিল না; সৃষ্টিকর্তাও নয়। অর্থাৎ পৃথিবীর মানুষ যে সৃষ্টিকর্তাকে তার কল্পনার মাধ্যমে সৃষ্টি করেছে সেই সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্ব নেই এই বিশ্বজগতে। এটা প্রমাণিত।
দেখা যাচ্ছে এই বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে শুন্য থেকে। (কোন সৃষ্টিকর্তাহীন জগত থেকে।) এই ধারণাটিকে সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারে না কারণ সাধারণত দৈনন্দিন জীবনে মানুষ এটা দেখে অব্যস্ত যে কোন কিছু শুন্য থেকে সৃষ্টি হতে পারে না। সাধারণ পদার্থবিজ্ঞান অনুযায়ী দৃশ্যমান জগতে শুন্য থেকে কোন কিছু সৃষ্টি হয়ও না। কিন্তু বিজ্ঞানে কুয়ান্টাম ফিজিক্সের জগতটা তৈরী হবার পরে দেখা যায় যে সাধারণ অনেক অসম্ভব ঘটনাও কুয়ান্টাম জগতে ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন নামের কুয়ান্টাম বিজ্ঞানের কঠিন এক পদ্ধতির মাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য শক্তি বা পদার্থ শুন্য থেকে তৈরি হতে পারে যা খুব অল্প সময় ব্যবধানে আবার বিলীন হয়ে যায়। এজন্য আমরা সাধারণ পদার্থবিজ্ঞানের জগতে বসে এসব ঘটনা দেখতে পাইনা। তাই আমাদের কাছে শুন্য থেকে কোন কিছু সৃষ্টি হবার ব্যপারটিকে অসম্ভব বলে মনে হয়। কিন্তু কুয়ান্টাম জগতে এসব ঘটনা হরহামেশাই ঘটে চলেছে। অর্থাৎ দৃশ্যমান জগতে কোন কিছু শুন্য থেকে সৃষ্টি হতে না পারলেও কুয়ান্টাম জগতে সব সময়ই কিছু না কিছু প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে এবং ধ্বংশ হচ্ছে। অর্থাৎ কুয়ান্টাম জগতের ক্ষেত্রে শুন্য থেকে কিছু সৃষ্টি হওয়া সম্ভব এবং হয়ও তাই।
এখানে কুয়ান্টাম জগত বলাতে এটা ধরে নেওয়াটা বোকামী হবে যে এটি কোন ভিন্ন জগত। প্রকৃতপক্ষে কুয়ান্টাম জগত হলো আমাদের জগতের অতিপরিচিত পরমানুর অভ্যন্তের অতি ক্ষুদ্র জগতকে বুঝানো হয়। অন্য ভাবে অতি ক্ষুদ্র স্থানে পদার্থবিজ্ঞানের সে ঘটনাগুলো ঘটে তাকেই কুয়ান্টাম ফিজিক্সের জগত বা কুয়ান্টাম জগত বলা যায়। এই অতিক্ষুদ্র জগতটি পরমানুর অভ্যন্তে হতে পারে এমনকি শুন্যস্থানেও হতে পারে। যেখানে কোন শক্তি বা পদার্থ নেই কিন্তু স্থান (স্পেস) আছে সেখানেও কুয়ান্টাম জগতের অবস্থান। অর্থাৎ অতিমাত্রায় (অসীম) ক্ষুদ্রতার জগতটাই হলো কুয়ান্টাম জগত।

কুয়ান্টাম জগতে এমন কিছু কান্ড ঘটতে পারে যা সাধারণ দৃশ্যমান জগতে ঘটতে দেখা যায় না। আর তাই দৃশ্যমান জগতে না ঘটলেও কুয়ান্টাম জগতে শুন্য থেকে কোন কিছু সৃষ্টি হয়।

তাহলে একটা সমস্যা শুন্য থেকে বিশ্বজগত সৃষ্টিতে হতে পারে। শক্তির নিত্যতা সুত্র মতে বিশ্বজগতের শক্তির পরিমান অপরিবর্তনীয়। নতুন কোন শক্তি সৃষ্টি করা যায় না এবং বিদ্যমান শক্তিকে ধ্বংসও করা যায় না। তাহলে যদি শুন্য থেকে বিশ্বজগত সৃষ্টি হয় তবেতো এই শক্তির নিত্যতা শক্তির কার্যকারিতা হারিয়ে যায়। যেহেতু এটি একটি সত্য ঘটনা তাই শক্তির নিত্যতা সুত্রের বাইরে যেয়ে বিশ্বজগতের শুন্য থেকে সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। বলে রাখা ভালো সৃষ্টিকর্তা যদি শুন্য থেকে বিশ্বজগত সৃষ্টি করে থাকে তবে তাকেও  শক্তির নিত্যতা সুত্রের বাইরে যেতে হবে। যা আসলে ঘটা ততটাই অসম্ভব যতটা সৃষ্টিকর্তাহীন শুন্যতা থেকে বিশ্বজগত সৃষ্টি হওয়াটা।  
প্রকৃতপক্ষে শুন্য থেকে বিশ্বজগত সৃষ্টির মধ্যে শক্তির নিত্যতার সুত্রের কোন ব্যত্যয় ঘটে না।
বিশ্বজগতের সমস্ত পদার্থ ধনাত্বক শক্তি দিয়ে তৈরী। আবার মহাকর্ষের রয়েছে পদার্থকে আকর্ষের ক্ষমতা; অর্থাৎ মহাকর্ষ বল ঋনাত্বক শক্তি দিয়ে তৈরী। যদি বিশ্বজগতের মোট পদার্থের ভর এবং মহাকর্ষীয় শক্তিকে পরিমাপ করা যায় তবে ধনাত্বক শক্তি এবং ঋনাত্বক শক্তির পরিমান সমান পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে বিশ্বজগতের মোট শক্তির পরিমান হবে শুন্য।
আমরা জানি, = (-) + (+) = ০ আবার  (+অসীম) + (-অসীম) = ০
অর্থাৎ শুন্য থেকে কোন অসীম মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়া সম্ভব।
সুতরাং বিশ্বজগতের সমস্ত ধনাত্বক(+) শক্তি এবং বিশ্বজগতের সমস্ত ঋনাত্বক(-) শক্তি = শুন্য
অর্থাৎ ধনাত্বক এবং ঋনাত্বক শক্তি বিশিষ্ট বিশ্বজগত শুন্য থেকে তৈরী হওয়া সম্ভব। বিজ্ঞানীরা মনে করেন শুন্য থেকেই বিশ্বজগত সৃষ্টি  হয়েছে। আর এতে কোন সৃষ্টিকর্তার দরকার পড়েনি এবং সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের জন্য কোন জায়গা বা সময় কোনটিও অবশিষ্ট  ছিল না।
আমাদের বিশ্বজগতের দিকে তাকালো আমাদের কাছে এটিকে স্থির বলে মনে হয়। কিন্তু বিশ্বজগত আসলে স্থির নয়। বরং এটি সম্প্রসারণশীল। বিশ্বজগত প্রচন্ড বেগে প্রসারিত হচ্ছে। অর্থাৎ এই বিশ্বজগত এক সময় সংকুচিত অবস্থায় ছিল। আর বিগ ব্যাং-এর মাধ্যমে এটি সম্প্রসারিত হওয়া শুরু করেছিল। এবং প্রতিনিয়ত বিশ্বজগত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এখন যদি কল্পনা করা হয় যে বিশ্বজগত সম্প্রসারিত না হয়ে সংকুচিত হচ্ছে। তাহলে দেখা যাবে যে একসময় সমগ্র বিশ্বজগত সংকুচিত হয়ে এক বিন্দুতে মিলিত হবে। এই এক অতি ক্ষুদ্র বিন্দুটিতেই বিগ ব্যাং সংঘটিত হয়েছিল। এই অতি ক্ষুদ্র বিন্দুটিতে সমস্ত শক্তি একত্রিত অস্থায় থাকে। এই বিন্দুটিতে কোন পদার্থ থাকে না। যেমনটি বিগ ব্যাং-এর সময়ে কোন পদার্থের অস্তিত্ব ছিল না। তাহলে এই অতি ক্ষুদ্র বিন্দুটিতে বিশ্বজগতের সমগ্র ধনাত্বক শক্তি এবং সমস্ত ঋনাত্বক শক্তি পরস্পরের সংস্পর্শে আসবে এবং পরস্পরের সাথে মিলে শুন্য শক্তি হয়ে যাবে অর্থাৎ সম্পূর্ন বিশ্বজগত শুন্যতায় মিলিয়ে যাবে।  অতি ক্ষুদ্র বিন্দুতে যেহুতু শুধু ঋনাত্বক এবং ধনাত্বক শক্তিই বিরাজ করবে তাহলে এটি ধরে নেওয়া যায় যে ঋনাত্বক শক্তি এবং ধনাত্বক শক্তি পরস্পরের সাথে মিলবে এবং শুন্যতায় বিলীন হয়ে যাবে। ফলে সেখানে এক শুন্যতা সৃষ্টি হবে। আবার আমরা জানি যে বিশ্বজগত শুধু পদার্থ এবং শক্তিকে নিয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে না বরং শুন্যস্থান এবং কাল উভয়কে নিয়েই সম্প্রসারিত হচ্ছে। কারন আমাদের জগতটি হল স্থান কালের চতুর্মাত্রিক জগত। তাহলে অতিক্ষুদ্র সেই বিন্দুটিতে স্থান এবং কালও হবে অতি ক্ষুদ্র। (এটি বিগ ব্যাং-এর বিপরীত প্রক্রিয়া হিসেবে কল্পনা করা যায়।) ফলে শক্তি এবং পদার্থের সাথে সাথে স্থান এবং কালও বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। স্থার কালের জগত প্রসারিত হলে এটি সংকুচিতও হতে পারে। ফলে সমস্ত শক্তি বিলিন হয়ে যাবার সাথে সাথে স্থান এবং কালও বিলীন হয়ে যাবে। তখন যে জগতের সৃষ্টি হবে সেটি স্থান কাল বিহীন এক পরম শুন্যতার জগত। সেখানে কোন কিছুরই অস্তিত্ব থাকবে না (স্থান এবং কালও নয়)

এখন আবার যদি এই প্রক্রিয়াটিকে পুনরায় ঘটতে দেওয়া হয় তবে পরম শুন্য জগত থেকে প্রথমে স্থান এবং কালের সৃষ্টি হবে এবং কুয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে ঋনাত্বক শক্তি এবং ধনাত্বক শক্তি উৎপন্ন হবে কুয়ান্টাম ফিজিক্সের নিয়ম মেনে। ফলে আরেকটি ইনফ্লেশন ঘটে আরেকটি বিগ ব্যাং সংঘটিত হবে। এবং সম্প্রসারণশীল বিশ্বজগতের সৃষ্টি হবে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে সাধারণ পদার্থবিজ্ঞান এবং কুয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের সুত্র মেনে বিশ্বজগত শুন্য থেকে সৃষ্টি হতে পারছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা এভাবে শুন্য থেকেই বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে যেটি পরবর্তীতে ইনফ্লেশনের মধ্য দিয়ে বিগ ব্যাং সংঘটিত হয়ে সম্প্রসারণশীল বিশ্বজগতের সৃষ্টি হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে শুন্য থেকে যেমন বিশ্বজগত সৃষ্টি হওয়া সম্ভব সেভাবেই শুন্য থেকেই এই বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে।

আর শুন্যতা থেকেই যেহুতু বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে তাই বিশ্বজগতকে কে সৃষ্টি করলো এই ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি আর হতে হচ্ছে না। আবার আস্তিকদের কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তা কোথা থেকে এলো ধরণের প্রশ্নও আর তৈরী হচ্ছে না। ফলে শূন্যতা থেকে বিশ্বজগত সৃষ্টিই হলো প্রকৃত জ্ঞানের চুড়ান্ত ফলাফল। শুন্যতার আগে কি ছিল এমন কোন প্রশ্ন করতে হচ্ছে না। কারণ আমরা সবাই বুঝতে পারি যে শুন্যতার পূর্বে কিছু থাকা সম্ভব নয়। কারণ সেটা ইতি মধ্যেই শুন্যতা হয়ে গেছে। ফলে শুন্যতার পূর্বে কিছু থাকে না। শুন্যতাই চুড়ান্ত পরিনতি।
শুন্য থেকে বিশ্বজগত সৃষ্টি হলে পরিনতিটা হবে,
শুন্য = ঋনাত্বক এবং ধনাত্বক শক্তির জগত = শুন্য
বা = (+অসীম) + (-অসীম) =
অথবা = (+) + (-) =
অর্থাৎ বিশ্বজগতের পূর্বে ছিল পরম শুন্যতা; মাঝে সাময়িক সময়ের জন্য বিশ্বজগতের সৃষ্টি এবং সর্ব শেষে আবার শুন্যতা। অর্থাৎ শুন্যতাই চরম সত্য। শুন্যতাই জগতের ধর্ম। শুন্যতাই বাস্তব সত্য এবং চিরস্থায়ী (সময় অর্থে নয়) জগত সাময়িক; শুন্যতাই চরম পরিনতি।
পরম শুন্যতাই জগতের প্রকৃত বাস্তবতা, পরম শুন্যতাই জগতের চুড়ান্ত পরিণতি, কিছু দিনে আগেই বিজ্ঞানীরা এমনটি ধারণা করতেন। কিন্তু তারপরেও একটি প্রশ্ন থেকে যেতো। যদি শুন্যতাই চুড়ান্ত পরিণতি হয়ে থাকে, জগতের বাস্তবতা যদি পরম শুন্যতাই তবে কেন কোন কিছু না থাকার চেয়ে কিছু আছে? অর্থাৎ শুন্যতাই যদি চুড়ান্ত পরিনতি হয়ে থাকে তবে কেন জগত অস্তিত্বশীল হলো? জগত সৃষ্টি না হয়ে পরম শুন্যতা থাকলে কি সমস্যা ছিল? পরম শুন্যতাই যদি চুড়ান্ত পরিনতি হয় তবে জগত সৃষ্টি না হয়ে কি থাকতে পারতো না? তবে কেন বিশ্বজগতের সৃষ্টি হলো?

সাম্প্রতিক কালে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে শুন্যতা বা পরম শুন্যতা স্থায়ী নয়। অস্তিত্বশীলতাই স্থায়ী। অর্থাৎ উপরের শুন্য থেকে জগত সৃষ্টির যে সমীকরণটি দেখানো হয়েছে যেখানে জগত সৃষ্টির আগে ও পরে শুন্যতা ছিল এবং মাঝে কিছু সময়ের জন্য জগত সৃষ্টি হয়েছে, সেটা ঘুরে যাবে। অর্থাৎ সমীকরণটিতে আগে এবং পরে অস্তিত্বশীল জগত হবে এবং মাঝে শুন্য বসবে।
যেমন সমীকরণটি ছিল,
০ = (+১) + (-১) = ০
অথবা
০ = (+অসীম) + (-অসীম) = ০
এই সমীকরণটিতে দেখা যাচ্ছে জগত পরম শুন্যতা থেকে উৎপত্তি হয়ে আবার পরম শুন্যতায় মিলিয়ে যায়। সমীকরনের আগে এবং শেষে শুন্য মাঝ খানে কিছু সময়ের জন্য জগতের উপস্থিতি।
বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক কালের গবেষণায় উঠে আসা সাম্প্রতিক আবিষ্কার যে শুন্যতা চুড়ান্ত পরিনতি নয় বরং জগতের অস্তিত্বশীলতাই চুড়ান্ত পরিনতি। অর্থাৎ সমীকরণটি বদলে হবে,
(+১) + (-১) = ০ = (+১) + (-১)
অথবা
(+অসীম) + (-অসীম) = ০ = (+অসীম) + (-অসীম)
অর্থাৎ জগতের অস্তিত্বশীলতা চুড়ান্ত পরিনতি এবং সাময়িক সময়ের জন্য জগত শুন্যে মিলিয়ে যায় এবং পুনরায় জগত শুন্য থেকে অস্তিত্বশীল হয়। অর্থাৎ আগে যেমন ভাবা হতো শুন্যতা চুড়ান্ত পরিণতি বা শুন্যতাই সুস্থির আর জগত সাময়িক কিন্তু বাস্তবতা আসলে সেরকম নয়। বরং বাস্তবতা হলো জগতই হলো চুড়ান্ত পরিনতি বা সুস্থির এবং শুন্যতাই হলো সাময়িক বা অস্থির। অর্থাৎ অস্তিত্বশীলতাই হলো চুড়ান্ত পরিনতি। শুন্যতা চুড়ান্তপরিণতি নয়। আর তাই শুন্যতা থেকে জগত সৃষ্টি হলেও জগত অস্তিত্বশীল থাকতে পছন্দ করে আর তাই জগতের অস্তিত্ব না থেকে পরম শুন্যতার অস্তিত্ব থাকার পরিবর্তে জগতের অস্তিত্ব আছে এবং শুন্যতা সাময়িক। আর তাই জগত অস্তিত্বশীল না থাকার চেয়ে জগত অস্তিত্বশীল হয়েছে। শুন্যতা থেকে সৃষ্টি হলেও জগতই সুস্থির। আর তাই কোন কিছু না থাকার বদলে কোন কিছুর অস্তিত্ব আছে।

(আর এতে অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্ব নেই। প্রকৃতপক্ষে শুন্য থেকে বিশ্বজগতের সৃষ্টি এবং শুন্যতা অস্থিতিশীল বলে বিশ্বজগত অস্তিত্বশীল। এতে সৃষ্টিকর্তার জন্য কোন দরজা খোলা নেই। আর তাই জগত অস্তিত্বশীল হলেও সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্ব নেই। থাকা সম্ভাবও নয়। )

No comments:

Post a Comment