Translate

Search This Blog

বিশেষ সতর্কবার্তাঃ

এই ব্লগটি নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সন্দেহবাদী, মুক্তমনা এবং স্বাধীনচেতা মানুষদের জন্য। যারা যেকোন বিষয়ের সমালোচনা সহ্য করার মত ক্ষমতা রাখে। যদি কোন ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিক এই ব্লগটিতে আসে তবে তার ধর্মানুভূতি নামের অদ্ভূত দূর্বল অনিভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্লগ লেখক দায়ী থাকবে না। ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিকদের নিজ দায়িত্বে তাদের দূর্বল ধর্মানুভূতিকে সংরক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে। কারো ধর্মানুভূতি নামের অযৌক্তিক অনুভূতি আহত হবার জন্য কোন ক্রমেই ব্লগার বা লেখককে দায়ী করা যাবে না। যদি কোন অতি দুর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগে ভূল করে ঢুকে পরেন এবং তিনি তার অনুভূতিকে দূর্বল ভাবেন অর্থাৎ যিনি তার ধর্মের উপযুক্ত সমালোচনা সহ্য করতে অপারগ, তাকে বিনীত ভাবে এই ব্লগটি থেকে প্রস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পরেও যদি কোন দূর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগটিতে ঘুরাফেরা করেন এবং তার ফলে তার দূর্বল ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হন তবে কোন ক্রমেই এবং কোন ক্রমেই ব্লগের মালিক, 'আমি নাস্তিক' দায়ী থাকবে না।

Wednesday, December 2, 2015

কোরআনের বর্ণনায় সমতল পৃথিবী - পর্ব ৯

পর্ব ৮-এর পর থেকে

 

চতুর্থ অধ্যায়
আকাশ, সমতল পৃথিবী জান্নাত
আকাশ সমতল পৃথিবীর সমান জান্নাত

আসুন, পৃথিবী সমতল প্রমানের জন্য আরো কিছু আয়াত উপস্থাপন করি l

০৩) সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৩৩ :
    "তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান জমিন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য l"
০৩) সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৩৩ :
    "তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমা জান্নাতের দিকে ধাবিত হও, যার প্রসারতা বিস্তৃতি নভোমন্ডল ভু-মন্ডল সদৃশ, ওটা আল্লাহ ভীরুদের জন্যে নির্মিত হয়েছে l" (অনুবাদ- প্রফেসর : মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান)
০৩) সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৩৩ :
    "আর তৎপর হও তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে পরিত্রান লাভের জন্য এবং স্বর্গদ্যানের জন্য যার বিস্তার হচ্ছে মহাকাশমন্ডল পৃথিবী জুড়ে- তৈরী হয়েছে ধর্মপরায়ণদের জন্য- " (অনুবাদ:- : জহুরুল হক)


SURA 3. Al-i-Imran,
133. Be quick in the race for forgiveness from your lord, and for a Garden whose width is that [of the whole] of the heavens and of the earth, prepared for the righteous,-  (Translation by Abdullah Yusuf Ali)

SURA 3. Al-E-IMRAN
133. And vie one with another for forgiveness from your lord, and for a paradise as wide as are the heavens and the earth, prepared for those who ward off [evil];  (Translation by Mohammad Marmaduke Pickthal)

SURA 3. Al-i-Imran
133. “And hasten to forgiveness from your lord and a garden [i.e., Paradise] as wide as the heavens and earth, prepared for the righteous “ (Saheeh International)

এই আয়াতটিতে বলা হয়েছে যে আল্লাহ মানুষকে বলছেন মানুষ যেন আল্লাহর ক্ষমা জান্নাতের জন্য প্রতিযোগিতা করে যে জান্নাতের পরিমান বা প্রসারতা বা বিস্তার অথবা প্রশস্ততায় আকাশমন্ডলী পৃথিবীর বিস্তারের বা প্রশস্ততার অথবা পরিমানের সমান হয় l
অর্থাত আল্লাহ মানুষকে তার ক্ষমা জান্নাতের দিকে যেতে বলছেন যেটা আকাশ পৃথিবীর মত প্রশস্ত বা বিস্তৃত বা আকাশ পৃথিবীর সমান প্রশস্ত অথবা আকাশ পৃথিবীর পরিমানের সমান l
লক্ষ করুন বলা হচ্ছে যে জান্নাত আকাশ পৃথিবীর মত প্রশস্ত বা বিস্তৃত l অর্থাত পৃথিবী এবং আকাশ যেরকম বিস্তৃত বা প্রশস্ত তার মত বা তার সমান প্রশস্ত বা বিস্তৃত জান্নাত l এখানে সমতল পৃথিবী এবং ছাদ বা চাদোয়ার মত আকাশের কথা বলা হয়েছে l এখানে বলা হচ্ছে যে আকাশ পৃথিবীর বিস্তার বা প্রশস্ততা অর্থাত আকাশ পৃথিবী যতটুকু বিস্তৃত তার মত বা সমান বিস্তৃত হচ্ছে জান্নাত l অর্থাত পৃথিবী আকাশ যতটুকু বিস্তৃত ঠিক সেরকম বা সমান বিস্তৃত হচ্ছে জান্নাত l


এখন আকাশের বর্ণনা কোরআনে যেরকম দেয়া আছে তাতে আকাশ হচ্ছে ঘরের ছাদের মত এবং এটি শক্ত কঠিন পদার্থের তৈরী l আর ছাদ বা তাবুর চাদোয়া কিছুটা অর্ধ উপবৃত্তাকার হয় l আর কোরানে পৃথিবীর বর্ণনা দেয়া হয়েছে সমতল হিসেবে l তাহলে সমতল পৃথিবী আর ছাদের মত আকাশ যতটুকু জায়গা দখল করে আছে অর্থাত যতটুকু বিস্তৃত, ঠিক সেই পরিমান বিস্তৃত হচ্ছে জান্নাত l আর এটাই এই আয়াতে বলা হয়েছে l অর্থাত আকাশ পৃথিবী যতটুকু বিস্তৃত বা প্রসারিত ঠিক সেইরকম বিস্তৃত বা প্রসারিত হচ্ছে পৃথিবী l তাহলে এই আয়াত অনুযায়ী সমতল পৃথিবীর চারপাশে বিস্তৃত আকাশ এবং সেই পরিমান বিস্তৃত জান্নাত l
আর তাই পৃথিবী সমতল l
এটা গোলক আকার পৃথিবীর ক্ষেত্রে সম্ভব নয় কারণ গোলক আকার পৃথিবীর ছাদ থাকা সম্ভব নয় l কিন্তু সমতল পৃথিবীর জন্য ছাদ থাকা সম্ভব l কারণ আমরা সমতল মেঝের ঘরেই ছাদ তৈরী করি l গোলাকাকার কিছুতে ছাদ থাকা অসম্ভব l সুতরাং এখানে সমতল পৃথিবী এর উপর মজবুত শক্ত আকাশ অর্থাত ছাদ-এর সমান বিস্তৃতির সমান জান্নাতের কথা বলা হয়েছে l


৬৫) সুরা আত্ব-তালাক্ব; আয়াত ১২ :
     "আল্লাহ সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই পরিমানে, এসবের মধ্যে তার আদেশ অবতীর্ণ হয়, যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সবকিছু তার গোচরীভূত l"
৬৫) সুরা আত্ব-তালাক্ব; আয়াত ১২ :
     "আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্ত আকাশ এবং পৃথিবীও ওগুলোর অনুরূপভাবে, ওগুলোর মধ্যে নেমে আসে তার নির্দেশ; ফলে তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞানে (দ্বারা) আল্লাহ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন l" (অনুবাদ- প্রফেসর : মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান)
৬৫) সুরা আত্ব-তালাক্ব; আয়াত ১২ :
    "আল্লাহই তিনি যিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আসমান, আর পৃথিবীর বেলায়েও তাদের অনুরূপ l বিধান অবতরণ করে চলেছে তাদের মধ্যে, যেন তোমরা জানতে পার যে আল্লাহ সব-কিছুর উপরে সর্বশক্তিমান; আর এই যে আল্লাহ সব-কিছুকে ঘিরে রেখেছেন জ্ঞানের দ্বারা l " (অনুবাদ:- : জহুরুল হক)

SURA 65. Talaq
12. Allah is He Who created seven Firmaments and of the earth a similar number. Through the midst of them [all] descends His Command: that ye may know that Allah has power over all things, and that Allah comprehends, all things in [His] Knowledge.  (Translation by Abdullah Yusuf Ali)

SURA 65. AT-TAlAQ
12. Allah it is who hath created seven heavens, and of the earth the like thereof. The commandment cometh down among them slowly, that ye may know that Allah is Able to do all things, and that Allah surroundeth all things in knowledge.  (Translation by Mohammad Marmaduke Pickthal)

SURA 65. AT-TAlAQ
12. ‘It is Allah who has created seven heavens and of the earth, the like of them. [His] command descends among them so you may know that Allah is over all things competent and that Allah has encompassed all things in knowledge.” (Saheeh International)
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে আল্লাহ সপ্ত আকাশ তৈরী করেছেন এবং পৃথিবীও অনুরূপ ভাবে l আল্লাহর আদেশ সেগুলোর উপর অর্পিত হয় যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে আল্লাহ সবকিছুর উপর সর্ব শক্তিমান l আর আল্লাহর জ্ঞানের আওতার মধ্যে সবকিছুই l
অর্থাত আল্লাহ সাত আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবী অনুরূপ ভাবে l আর ওগুলোর মধ্যে অর্থাত আকাশসমূহে এবং পৃথিবীতে আল্লাহর আদেশ বা নির্দেশ অর্পিত হয় l যেন মানুষ বুঝতে পারে যে আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সবকিছুই তার জ্ঞানের মধ্যে l
লক্ষ করুন এখানে বলা হচ্ছে যে সাত আকাশের কথা এবং পৃথিবী তৈরী হয়েছে সেই সাত আকাশের অনুরূপ করে l
এখানে অনেকে বলে থাকে যে এখানে আকাশের সংখ্যা সাতটা এবং তাহলে পৃথিবী সাতটা হবে l অর্থাত আকাশের সংখ্যা এবং পৃথিবীর সংখ্যা সমান হবে l কিন্তু আমরা জানি পৃথিবীর সংখ্যা সাতটা নয় l আর তাই এখানে সাত আসমানের মত সাত পৃথিবীর কথা বলা হয়নি l বরং বলা হয়েছে যে আকাশ সাতটা এবং পৃথিবী তাদের অনুরূপ করে বানানো হয়েছে l অর্থাত আকাশগুলোর মত করেই বানানো হয়েছে l আবার কোরানের অনেক আয়াতে বলা হয়েছে আকাশ স্তরে স্তরে স্থাপন করা হয়েছে l অর্থাত এক আকাশের উপর আরেক আকাশ স্থাপন করা হয়েছে l এভাবে সাতটা আকাশ একটার উপর আরেকটা স্থাপন করা হয়েছে l
কিন্তু পৃথিবী এভাবে একটার উপর আরেকটা স্থাপির নেই l একটাই পৃথিবী l
তাই এখানে এর অর্থ হবে আকাশের সমান আয়তনের বা সমান বিস্তৃতির যেটা এর আগের আয়াতটিতে বলা হয়েছে l  অর্থাত আল্লাহ সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই আয়তনে বা বিস্তৃতিতে l অর্থাত আকাশ পৃথিবীর আয়তন বা বিস্তৃতি সমান l এখানে আকাশের সমান সংখ্যাক পৃথিবীর কথা বলা হয়নি l উপরে বর্ণিত প্রত্যেক অনুবাদেই (আব্দুল্লা ইউসুফ আলী বাদে) এর অর্থ করা হয়েছে সপ্তাকাশের অনুরূপে পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে l
অর্থাত সপ্ত আকাশের অনুরূপ আয়তন বা বিস্তৃতির পৃথিবী তৈরী করা হয়েছে l 
অর্থাত আকাশগুলোর অনুরূপ বিস্তৃতির পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে l মানে আকাশ পৃথিবীর বিস্তৃতি সমান l মানে সমতল পৃথিবী এবং ছাদ আকৃতির (অর্ধ-উপবৃত্তাকার) আকাশ স্থাপন করা হয়েছে অনুরূপ বিস্তৃতির বা আয়তনের l


(৫৭) সুরা আল হাদীদ; আয়াত ২১ :
            "তোমরা অগ্রে ধাবিত হও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা সেই জান্নাতের দিকে যা আকাশ পৃথিবীর মত প্রশস্ত l এটা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহ তার রাসূলগণের উপর বিশ্বাস স্থাপন কারীদের জন্যে l এটা আল্লাহর কৃপা, তিনি যাকে ইচ্ছা এটা দান করেন l আল্লাহ মহান কৃপার অধিকারী l"

(৫৭) সুরা আল হাদীদ; আয়াত ২১ :
              "তোমরা অগ্রণী হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা সেই জান্নাত লাভের প্রয়াসে যা প্রশস্ততায় আকাশ পৃথিবীর মত, যা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহ তার রাসূলগণে বিশ্বাসীদের জন্যে l এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি এটা দান করেন; আল্লাহ বরই অনুগ্রহশীল l"  (অনুবাদ- প্রফেসর : মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান)

(৫৭) সুরা আল হাদীদ; আয়াত ২১ :
                   "তোমরা প্রতিযোগিতা করো তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে পরিত্রান লাভের জন্য এবং এমন এক জান্নাতের জন্য যার বিস্তার হচ্ছে মহাকাশ পৃথিবীর বিস্তৃতির মতো,- এটি তৈরী করা হয়েছে তাদের জন্য যারা আল্লাহতে তার রসুলের প্রতি ঈমান আনে l হচ্ছে আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাচুর্য, তিনি তা প্রদান করেন যাকে ইচ্ছা করেন l বস্তুত আল্লাহ বিরাট করুনাভান্ডারের অধিকারী l" (অনুবাদ:- : জহুরুল হক)

SURA 57. Hadid
21. Be ye foremost [in seeking] Forgiveness from your lord, and a Garden [of Bliss], the width whereof is as the width of heaven and earth, prepared for those who believe in Allah and His messengers: that is the Grace of Allah, which He bestows on whom he pleases: and Allah is the lord of Grace abounding. (Translation by Abdullah Yusuf Ali)

SURA 57. Al-HADID
21. Race one with another for forgiveness from your lord and a Garden whereof the breadth is as the breadth of the heavens and the earth, which is in store for those who believe in Allah and His messengers. Such is the bounty of Allah, which He bestoweth upon whom He will, and Allah is of Infinite Bounty.  (Translation by Mohammad Marmaduke Pickthal)

এই আয়াতটিতে বলা হয়েছে যে আল্লাহ মানুষকে একে অন্যের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতে বলছেন যাতে তারা আল্লাহ ক্ষমা সেই জান্নাতের দিকে অগ্রগামী হয় যেটা আকাশসমূহ পৃথিবীর প্রশস্ততার বা বিস্তারের মতো প্রশস্ত বা বিস্তৃত অথবা সমান l এটি তৈরী করা হয়েছে মুসলমানদের জন্যে l আল্লাহর অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তাকে দিতে পারেন l আল্লাহ সর্বোচ্চ অনুগ্রহশীল l
অর্থাত মানুষ ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমা জান্নাত লাভ করে যে জান্নাত আকাশ পৃথিবীর অনুরূপ বা সমান প্রশস্ত বা বিস্তৃত l আর এটি তৈরী করা হয়েছে মুসলমানদের জন্য l
লক্ষ করুন এখনে বলা হচ্ছে যে জান্নাত প্রশস্ততায় বা বিস্তারে আকাশ পৃথিবীর সমান l
তাহলে জান্নাতের বিস্তৃতি বা প্রশস্ততা আকাশের বা পৃথিবীর অনুরূপ বা আকাশ পৃথিবীর সমান l অর্থাত আকাশ পৃথিবীর সমান প্রশস্ত বা বিস্তৃত হচ্ছে জান্নাত l
তাহলে সমতল পৃথিবী ছাদের মতো আকাশের সমান প্রশস্ত জান্নাত l
এখানে পৃথিবী সমতল এবং আকাশ ছাদ আকৃতির কিন্তু এদের বিস্তার অনুরূপ l এগুলোর অনুরূপ প্রশস্ত হচ্ছে জান্নাত l


এখন এই আয়াত গুলোতে কি বুঝানো হয়েছে সেটা জানার জন্য আয়াতগুলোতে উল্লেখিত সপ্ত আকাশ সম্পর্কে কোরআনে কি বলা হয়েছে সেটা আগে জানতে হবে l
আসুন দেখি কোরআনে আকাশ সম্পর্কে কি বলা হয়েছে l
০২:২২ অনুযায়ী
আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানা করেছেন আর আকাশকে ছাদ বা চাদোয়া স্বরূপ l
১৩:০২ অনুযায়ী
আল্লাহ উর্ধদেশে স্থাপন করেছেন আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতিত মানুষ সেটা দেখে l
১৫:১৪ অনুযায়ী
যদি আল্লাহ আকাশের দুয়ার খুলেও দেন এবং তাতে ওরা (অবিশ্বাসীরা) দিনভর আরোহন করতে থাকে; (তবুও ওরা বলবে আমাদের দৃষ্টির বিভ্রম করা হয়েছে , আমরা জাদুগ্রস্থ হয়েছি) l
১৭:৯২ অনুযায়ী
অথবা তুমি যেমন বল তেমনি ভাবে আকাশকে খন্ড-বিখন্ড করে আমাদের মাথার উপর ফেলবে !
১৯:৯০ অনুযায়ী
(তাদের কথা শুনে) আকাশসমূহ বিদীর্ণ বা ফেটে পরার উপক্রম হয়ে যাবে ;
২১: ৩২ অনুযায়ী
আল্লাহ আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছেন l
২১:১০৪ অনুযায়ী
কেয়ামতের দিন আল্লাহ আকাশ কে গুটিয়ে নেবেন যেভাবে গুটানো হয় লিখিত কাগজ-পত্র l তিনি আবার তৈরী করবেন আগের মত করে l
২২:৬৫ অনুযায়ী
আল্লাহ আকাশকে স্থির রাখেন যেন এটি তার আদেশ ছাড়া ভূমিতে না পরে যায় l
৩৪:০৯ অনুযায়ী
(আল্লাহ ইচ্ছা করলে) আকাশের কোনো খন্ড বা অংশকে তাদের (মানুষের) উপর ফেলে দেবেন l
৩৯:৬৭ অনুযায়ী
কেয়ামতের দিন পৃথিবী থাকবে আল্লাহর হাতের মুঠোয় আর আকাশসমূহ থাকবে তার ডান হাতে ভাজ করা অবস্থায় বা গুটিয়ে নেওয়া অবস্থায় l
৪২:০৫ অনুযায়ী
আকাশসমূহ উপর থেকে ফেটে পরার উপক্রম হয় আর ফেরেস্তারা আল্লাহর প্রশংসা সহ পবিত্রতা ঘোষনা করে এবং পৃথিবীবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে l
৫০:০৬ অনুযায়ী
মানুষ কি তাদের উপরের আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে না আল্লাহ কিভাবে তা তৈরী করেছেন এবং সুশোভিত করেছেন ? তাতে কোনো (সূক্ষ) ফাটলও নেই l
৫২:০৯ অনুযায়ী
কেয়ামতের দিন আকাশ কম্পিত হবে বা দুলিত হবে অথবা আলোড়িত হবে l
৫২:৪৪ অনুযায়ী
যদি অবিশ্বাসীরা আকাশের কোন খন্ডকে পতিত হতে দেখে তবে বলে "এটাতো পুঞ্জিভূত মেঘ " l
৫৫:৩৭ অনুযায়ী
যেদিন (কেয়ামতের দিন) আকাশ বিদীর্ণ (ভেঙ্গে) হয়ে যাবে সেটি লাল চামড়ার মত রক্তবর্ণ ধারণ করবে l
৬৫:১২ অনুযায়ী
আল্লাহ সাত আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই পরিমানে l
৬৭:০৩ অনুযায়ী
আল্লাহ সপ্ত আকাশ (সাত আকাশ) স্তরে স্তরে (অর্থাত একটার উপর আরেকটা) সৃষ্টি করেছেন l আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো খুত বা অসামঞ্জস্য দেখা যাবে না l আবার তাকিয়ে ভালো ভাবে দেখলেও কোনো ত্রুটি বা ফাটল পাওয়া যাবে না l
৬৯: ১৬ ১৭ অনুযায়ী
কেয়ামতের দিন আকাশ চূর্ণ-বিচূর্ণ বা বিদীর্ণ হবে এবং সেটি বিক্ষিপ্ত হবে বা ভঙ্গুর হয়ে যাবে l
আর ফেরেস্তারা এর (আকাশের) প্রান্তগুলোতে থাকবে l আর আটজন ফেরেস্তা আল্লাহর আরশ বহন করবে l
৭০:০৮ অনুযায়ী
সেদিন (কেয়ামতের দিন) আকাশ হয়ে যাবে গলিত তামার বা পিতলের অথবা রুপার মত l
৭১:১৫ অনুযায়ী
মানুষ কি লক্ষ করেনা, আল্লাহ কিভাবে সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে (একটার উপর আরেকটা) সৃষ্টি করেছেন ?
৭৭:০৯ অনুযায়ী
যখন (কেয়ামতের দিন) আকাশ বিদীর্ণ হবে বা ভেঙ্গে পড়বে অথবা ফেড়ে যাবে l
৭৮:১২ অনুযায়ী
আল্লাহ মানুষের মাথার উপর (উর্ধে) সৃষ্টি করেছেন সুদৃঢ় (শক্ত) বা মজবুত সাত আকাশ l
৭৮:১৯ অনুযায়ী
(কেয়ামতের দিন) আকাশকে বিদীর্ণ করা হবে (ভেঙ্গে ফেলা হবে), তাতে ওটা হবে বহু দরজা বিশিষ্ট l

উপরের আয়াত গুলো ভালো ভাবে লক্ষ করলে দেখা যায় যে এখানে বলা হয়েছে পৃথিবীর উপর আকাশ স্থাপিত হয়েছে ছাদ হিসেবে l যেমন ঘরের ছাদ থাকে সেভাবেই আকাশকে সৃষ্টি করা হয়েছে l এবং সাতটা আকাশ একটার উপর আরেকটা এভাবে স্তরে স্তরে স্থাপন করা হয়েছে l
এবং এই আকাশগুলোকে শক্ত কঠিন করে তৈরী করা হয়েছে l এগুলো এমন কঠিন ছাদের মত যে এগুলো যেকোনো সময়ে ভেঙ্গে যেতে পারে l যখন এগুলো ভেঙ্গে পরার উপক্রম হয় তখন ফেরেস্তারা আল্লাহর গুনগান গায় এবং মানুষের পক্ষ থেকে ক্ষমা চায় l আর তাই আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে না l আবার এই মজবুত শক্ত আকাশ কেয়ামতের দিন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে l
আবার আল্লাহ এত ভালো করে মজবুত শক্ত আকাশ তৈরী করেছেন যে আকাশে কোনো ফাটল বা ছিদ্রও নেই l আল্লাহ চাইলে আকাশের কোনো টুকরো মাটিতে ফেলে দিতে পারেন l কিন্তু মহান আল্লাহ সেটা কখনো করেন না l আবার এই মজবুত-শক্ত আকাশটা কেয়ামতের দিন গলিত তামা, রুপা অথবা পিতলের মত হয়ে যাবে l এবং আকাশ ভেঙ্গে যেয়ে সেখানে বহু দরজা সৃষ্টি করা হবে l
তাহলে উপরের আয়াত গুলো অনুযায়ী, আকাশকে সম্পূর্ণ রূপে শক্ত কোনো পদার্থ দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে l আর পৃথিবীর উপরে আকাশকে ছাদের মত করে স্থাপন করা হয়েছে এবং এগুলোকে একটার উপর একটা এভাবে স্তরে স্তরে সাতটা আকাশ স্থাপন করা হয়েছে পৃথিবীর উপর l

(চলবে....)

 
(বি.দ্র.: লেখাটি এমকেএ আহমেদ রচিত "কোরআনের বর্ণনায় সমতল পৃথিবী- ১ম খন্ড" থেকে ধারাবাহিক ভাবে নেওয়া হচ্ছে।)

No comments:

Post a Comment