Translate

Search This Blog

বিশেষ সতর্কবার্তাঃ

এই ব্লগটি নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সন্দেহবাদী, মুক্তমনা এবং স্বাধীনচেতা মানুষদের জন্য। যারা যেকোন বিষয়ের সমালোচনা সহ্য করার মত ক্ষমতা রাখে। যদি কোন ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিক এই ব্লগটিতে আসে তবে তার ধর্মানুভূতি নামের অদ্ভূত দূর্বল অনিভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্লগ লেখক দায়ী থাকবে না। ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিকদের নিজ দায়িত্বে তাদের দূর্বল ধর্মানুভূতিকে সংরক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে। কারো ধর্মানুভূতি নামের অযৌক্তিক অনুভূতি আহত হবার জন্য কোন ক্রমেই ব্লগার বা লেখককে দায়ী করা যাবে না। যদি কোন অতি দুর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগে ভূল করে ঢুকে পরেন এবং তিনি তার অনুভূতিকে দূর্বল ভাবেন অর্থাৎ যিনি তার ধর্মের উপযুক্ত সমালোচনা সহ্য করতে অপারগ, তাকে বিনীত ভাবে এই ব্লগটি থেকে প্রস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পরেও যদি কোন দূর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগটিতে ঘুরাফেরা করেন এবং তার ফলে তার দূর্বল ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হন তবে কোন ক্রমেই এবং কোন ক্রমেই ব্লগের মালিক, 'আমি নাস্তিক' দায়ী থাকবে না।

Tuesday, January 6, 2015

ধর্ম বা প্রার্থনা ধর্ম (Religion) আর বাস্তবতা এক নয় । (পর্ব ২) ধর্মের সত্য আর বাস্তব সত্য এক নয় ।


সত্য মিথ্যার বিচার বাস্তব জীবনে যেভাবে করা হয় ধর্মে সেভাবে করা হয় না । বাস্তব সত্য হচ্ছে যেটা বাস্তবিক অর্থেই সত্য । কিন্তু ধর্ম যেটাকে সত্য বলে প্রচার করে সেটা আসলে বাস্তব সত্য নয় ।
পৃথিবী সূর্যের চার পাশে ঘুরে এটা একটা বাস্তব সত্য । কিন্তু ধর্ম আগে বলতো সূর্য ও চন্দ্র পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে । মানুষ আগে এটাই ধারনা করতো যে সূর্য চন্দ্রই পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে । কিন্তু এই ধারনাটা ছিল ভুল বা মিথ্যা । কিন্তু বর্তমানে প্রমানিত সত্য (বাস্তব সত্য) যে পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘুরে । অর্থাৎ ধর্ম প্রাচীণ মানুষের মিথ্যে ধারনাই সত্য হিসেবে গ্রহন করেছিল । এবং এটাকেই সত্য হিসেবে মেনে নিয়েছিল । পরে যখন প্রমান হলো সূর্য নয় পৃথিবীই ঘুরে তখন ধর্মও এটাকে পরিবর্তন করে নিয়েছে (যেহেতু এটা সবাই জেনে গেছে) ।
ধর্ম বলে মানব জাতি এসেছে একজনমাত্র মানুষ থেকে । কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে মানুষ একজন মানুষ থেকে আসেনি, এসেছে অন্য কোন প্রাণী হতে বিবর্তিত হয়ে (বিবর্তনের মাধ্যমে) । অর্থাৎ ধর্মের কাছে চির সত্য হলো মানুষ একজন মানুষ থেকে সৃষ্ট হয়েছে; যেমন ইহুদী, খৃস্টান ও ইসলাম ধর্ম মতে মানব জাতি সৃষ্টি হয়েছে আদম হাওয়া থেকে । আর তারা এটাকেই পরম সত্য বলে মনে করে । কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে মানবজাতি আদম হাওয়া নামের কাল্পনিক চরিত্র থেকে উদ্ভুত হয়নি, হয়েছে বিবর্তনের মাধ্যমে অন্য কোন প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়ে । অর্থাৎ ধর্ম যেটাকে সত্য বলে মনে করছে সেটা আসলে মিথ্যে ।

সব ধর্মের ধার্মিকরা বলে শুধু মাত্র তাদের ধর্মই একমাত্র সত্য ধর্ম । মুসলিমরা বলে তারাই একমাত্র সত্য পথে আছে আর বাকীরা মিথ্যে পথে আছে । তাদের মতে আল্লাহ হচ্ছে চির সত্য । আর বাকী যত ইশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা আছে সেগুলো মিথ্যে ।
আবার হিন্দু ধর্মের মানুষ মনে করে তাদের ধর্মই চির সত্য বাকী সব ধর্মই মিথ্যে । তাদের ইশ্বর, ভগবানই হচ্ছে সত্য সৃষ্টিকর্তা, বাকী সব সৃষ্টিকর্তা মিথ্যে । তাদের কাছে এটাই চির সত্য ।
কিন্তু খৃস্টান বা ইহুদীরা আল্লাহ বা ভগবানকে সৃস্টিকর্তা মানে না । তারা তাদের সৃষ্টিকর্তাকে (গড) একমাত্র সত্য বলে মনে করে । অর্থাৎ এটাই তাদের কাছে চির সত্য ।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিশ্বজগতে কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । আর তাই কোন ধর্মের কোন সৃষ্টিকর্তাই সত্য নয় । (এক সাথে সবগুলো ধর্মের সবগুলো ভিন্ন ইশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা সত্য হতে পারে না ।) অর্থাৎ ধার্মিকদের কাছে যেটা সত্য সেটা আসলে বাস্তব জগতে সত্য নয় । ইসলাম মতে আল্লাহই সত্য বাকী সব (ভগবান, গড) মিথ্যা । হিন্দু ধর্ম মতে ভগবানই সত্য বাকী সব ( আল্লাহ, গড) মিথ্যা ।
অর্থাৎ ধর্মগুলোর সত্য-মিথ্যা আসলে আপেক্ষিক । ধর্মগুলোর সত্য-মিথ্যা আসলে বাস্তব সত্য বা মিথ্যা নয় ।
ধর্ম মতে আত্মা সত্য । কিন্তু বিজ্ঞান মতে আত্মা মানুষের কল্পনা মাত্র যার বাস্তব কোন অস্তিত্ত্ব নেই ।
ধর্ম মতে মৃত্যুর পরে পুনরায় জীবিত হওয়া সম্ভব এবং এটিই চিরসত্য । কিন্তু বিজ্ঞান মতে এটা অসম্ভব এবং মিথ্যা ।
ধর্ম মতে অলৌকিকতা সত্য । যেমন ধর্ম মতে ইশ্বরের অলৌকিক ক্ষমতা আছে । কিন্তু বাস্তবজগতে অলৌকিকতা বলে কিছু নেই । এগুলো মানুষের বানানো মিথ্যে ধারনা । অর্থাৎ ধর্মের সত্য আর বাস্তব  সত্য এক নয় ।
এক ধর্ম যেটাকে সত্য মনে করে অন্য ধর্ম সেটাকে মিথ্যে মনে করে । অর্থাৎ ধর্মের সত্য মিথ্যা কাল স্থান এবং পাত্র বেধে পরিবর্তিত হয় । কিন্তু বাস্তব সত্য চিরন্তন এবং এটি সব কালে সব স্থানে সব পাত্রে একই রকম । যেমন সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হয় এবং পশ্চিম দিকে অস্ত যায় । এটা একটা বাস্তব সত্য এবং এটি সব ধর্মের সব মানুষের সব সময়ের জন্য সত্য । কিন্তু যদি ইসলাম বলে আল্লাহর গুনগান গাওয়া বা ইবাদত করা ভালো কাজ তবে হিন্দুরা বলে ভগমানের পুজা করা বা গুনগান গাওয়া ভালো কাজ । মুসলমানরা বলে আল্লাহ সত্য, ভগমান মিথ্যে কিন্তু হিন্দুরা বলে আল্লাহ সত্য সৃষ্টিকর্তা নয়, ভগবান সত্য সৃষ্টিকর্তা । অর্থাৎ সত্য মিথ্যে পরিবর্তনশীল বা আপেক্ষিক ।
ইহুদীরা যে সৃষ্টিকর্তাকে সত্য মনে করে খৃস্টানরা করে ভিন্ন সৃষ্টিকর্তাকে (খৃস্টানরা ইহুদীদের সৃস্টিকর্তাকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছে - পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা) । আবার মুসলমানরা আরব পেগান দেবতা আল্লাহকেই (কিছুটা পরিবর্তন করে) ইহুদী-খৃস্টানদের সৃষ্টিকর্তা বলে মনে করে । অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার ধারনা স্থান বা পাত্র বেধে ভিন্ন ভিন্ন রকমের হয় । কেও এক ইশ্বরকে সত্য মনে করে আবার কেই বহু ইশ্বরকে সত্য মনে করে । অর্থাৎ ইশ্বরের অস্তিত্ত্ব আপেক্ষিক সত্য । বাস্তব সত্য নয় ।
কিন্তু বাস্তব সত্য সেটাই যেটা সবার কাছেই সত্য । যেমন পানি তরল এটা একটি বাস্তব সত্য আর তাই এটা সবার কাছেই সমান ভাবে সত্য । পানি জমে বরফ হয় এবং বাষ্প হয়ে উড়ে যায় এটা একটা বাস্তব সত্য হওয়ায় এটা সবার কাছেই একই রকম ।
কিন্তু ধর্মের সত্য সবার কাছেই সত্য নয়, কারণ সেগুলো বাস্তব সত্য নয় । এগুলো মানুষের কল্পনার ভিন্নতার সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় । যেমন - মুসলমানদের কাছে যিশু খৃস্ট (ইসা নবী) একজন স্বাধারণ মানুষ । এটাই তাদের কাছে সত্য । কিন্তু খৃস্টানদের কাছে যিশু খৃস্ট (ইসা নবী) একজন গড বা সৃষ্টিকর্তা । আর তারা এটাকেই পরম সত্য বলে মনে করে ।
আবার মুহাম্মদকে মুসলমানরা সৃষ্টিকর্তা প্রেরিত রাসুল বা নবী মনে করে । কিন্তু ইহুদী, খৃস্টানরা মুহাম্মদকে একজন প্রতারক মনে করে । অর্থাৎ মুসলমানেদের কাছে যেটা চিরসত্য সেটাই ইহুদী খৃস্টানদের কাছে চিরমিথ্যা । আবার খৃস্টানদের কাছে যেটা চিরসত্য সেটাই ইহুদী ও মুসলমানদের কাছে চির মিথ্যা ।
সুতরাং ধর্মের সত্য মিথ্যের সাথে বাস্তব জগতের সত্য মিথ্যার কোনই মিল নেই ।
আবার ধর্ম যেটাকে সত্য মনে করে সেটা বাস্তবে মিথ্যে । যেমন আব্রাহামিক ধর্মগুলো আদম হাওয়া সৃষ্টির গল্পকে সত্য বলে মনে করে । কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আদম হাওয়ার গল্প সত্য নয় । এটি একটি রুপকথা মাত্র ।
বাস্তব সত্য কারো বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে না । কে বিশ্বাস করলো কে করলো না তার উপর নির্ভর করে সত্য মিথ্যা নির্ধারিত হয় না । যেমন বিবর্তনবাদকে ইহুদী, খৃস্টান এবং মুসলমানরা বিশ্বাস করে না । কিন্তু তাই বলে তাদের বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে বিবর্তনবাদ মিথ্যে হয়ে যায়নি । বরং নানা তথ্য প্রমানের মাধ্যমে বিবর্তনবাদ আরো সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । আবার মানুষ ভাবতো সূর্য-চন্দ্র পৃথিবীর চারপাশে ঘূর্ণায়মান । কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘুরে । আর এই সত্যটি প্রকাশ করার পরে ধার্মিকগুলো এই সত্যটিকে মেনে নিতে পারেনি । তারা জোর করে দাবী করেছে সূর্যই পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে । কিন্তু তাদের এই দাবীর জন্য পৃথিবী সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিন করা বন্ধ করে দেয়নি । সত্য সত্যই থেকে গেছে । এখন যেসব আস্তিক দাবী করছে বিবর্তনবাদ মিথ্যে তাদের এই মিথ্যে দাবীর জন্য বিবর্তনবাদ মিথ্যে হয়ে যাবে না । সত্য সত্যই থাকবে । কারণ সত্য মিথ্যা কারো বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে না । বাস্তব সত্য সব সময়ই সত্য ।
কিন্তু ধর্মের সত্য নির্ভর করে বিশ্বাসের উপর । কেই যদি সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে তবেই তার মনে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব আছে । আর যে বিশ্বাস করে না তার কাছে সৃষ্টিকর্তার কোনই অস্তিত্ব নেই । এখানে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নির্ভর করছে কারো বিশ্বাস করা না করার উপর । বাস্তব ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্ব তৈরী হচ্ছে না । সৃষ্টিকর্তার ধারণা যেমন কাল্পনিক তেমনি তার অস্তিত্বও কাল্পনিকই থেকে যাচ্ছে ।
আমরা সবাই জানি সৃষ্টিকর্তার কো্নই বাস্তব অস্তিত্ব নেই । কেও কোনদিনই সৃষ্টিকর্তাকে অস্তিত্বশীল হিসেবে দেখেনি । একটা ইলেক্ট্রনেরও অস্তিত্ব আছে এবং তার অস্তিত্ব নির্নয় করা যায় । কি্ন্তু ইশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই বলেই কেও কখনই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব পায়নি । সৃষ্টিকর্তার ধারনা সম্পূর্নই কল্পনার উপর নির্ভর করে । বাস্তবে এর কোন অস্তিত্বই নেই ।
অক্সিজেনের অস্তিত্ব আছে আর অক্সিজেন চিরকালই অক্সিজেনের মতো আচরন করে । এটি বাস্তব সত্য । সব মানুষ ও সব সময়ের জন্যই ।
কিন্তু সৃস্টিকর্তার অস্তিত্ব, বিচিত্র ভংগিতে প্রার্থনা এগুলো বাস্তব সত্য নয় । এগুলো লোক বেধে, সময় বেধে ভিন্ন ভিন্ন রকমের ।
আর তাই ধর্মের সত্য এবং প্রকৃত সত্যের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে । ধর্মের সত্যই বাস্তব সত্য নয় আবার ধর্মের মিথ্যেই বাস্তব মিথ্যে নয় । ধর্ম যেটাকে সত্য বলে মনে করে, দেখা যায় সেটা আসলে মিথ্যে । আবার ধর্ম যেটাকে মিথ্যে বলে দাবী করে, দেখা যায় সেটাই প্রকৃত সত্য ।
সুতরাং ধর্ম বা প্রার্থনা ধর্মের সত্য আর বাস্তব সত্য এক নয় ।

No comments:

Post a Comment