অন্ধ বিশ্বাস, বিশ্বাস ও অবিশ্বাস :
মানুষ জন্মের পর থেকে তার বাবা-মার বিশ্বাস
অন্ধভাবে বিশ্বাস করে চলে l এই অন্ধবিশ্বাসগুলো
পরিবার এবং সমাজ মানুষের উপর চাপিয়ে দেয় যখন মানুষ বিশ্বাসের ক্ষমতা অর্জন করতে পারে
না তার পূর্বেই l ফলে এই বিশ্বাসগুলো কাজ করে অন্ধ-বিশ্বাস রূপে l শৈশবের এই অন্ধ-বিশ্বাসগুলো
মানুষের মনকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে l ফলে সেই মানুষটি
আর এই অন্ধবিশ্বাসের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না l বড় হয় বুদ্ধি বিবেক জাগ্রত হয় কিন্তু সেই বুদ্ধি দিয়ে মানুষ যখন কোন কিছু পর্যবেক্ষণ
করে তখন সেই পর্যবেক্ষণগুলো সেই অন্ধবিশ্বাসের জাল দিয়ে ছেকে মানুষের মনে ঢুকে l
এরফলে মানুষটি বাস্তব সত্য দেখতে পেয়েও তার অন্ধবিশ্বাসের বাইরে
যেয়ে অন্য কিছু বিশ্বাস করতে পারে না l
বিশ্বাস এবং অন্ধবিশ্বাসের মধ্যে সবসময় একটা যুদ্ধ চলতে থাকে
প্রত্যেক মানুষের মনে l কিন্তু অন্ধবিশ্বাস
যেহেতু মানুষের মনকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখে তাই বিশ্বাস কখনো মানুষের মনকে স্পর্শ করতে
পারে না l ফলে যুক্তি বুদ্ধি সম্পর্ণ কোন মানুষ তার
অন্ধবিশ্বাসের বাইরে যেতে পারে না l
মানুষের শৈশব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ l মানুষ যখন শিশু অবস্থায়
পৃথিবীতে আসে তখন তার সবকিছু থাকে শূন্য l তার জ্ঞান থাকে
শুন্য, যুক্তি-বুদ্ধি থাকে শূন্য, বিশ্বাস থাকে শূন্য l শিশু তার চারপাশের
পরিবেশের কাছ থেকে জ্ঞান নেয় l তার মস্তিষ্কের গঠন
হতে থাকে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে l সেই সাথে তৈরী হয় জ্ঞান, যুক্তি-বুদ্ধি, এবং বিশ্বাস l শিশু যা তার বাবা
- মা পরিবার এবং সমাজে ঘটতে দেখে তাই সে সত্যি বলে ধরে নেয় l তার চারপাশের মানুষ যা করে সেও সেটাকেই অবশ্য কর্তব্য হিসেবে
শেখে l পরিবার এবং সমাজ মিলে তাদের কৃষ্টি কালচার
প্রত্যেক শিশুর মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় l প্রত্যেক শিশু শিক্ষা
নেয় পরিবার ও সমাজ থেকে l আর এই শিক্ষা গুলোই
সে সারাজীবন পরম সত্য হিসেবে বিশ্বাস করে চলে l পরিবার শিশুকে বিশ্বাস করতে শেখায় যে বিশ্বাস সে পরিবার পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে
উত্তরাধিকার সুত্রে পায় l প্রকৃত পক্ষে সেই বিশ্বাসগুলোকেও
তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় l ফলে তারা সেই বিশ্বাস
গুলোকে বিশ্বাস করে অন্ধের মত l তখন আর সেই বিশ্বাস
গুলো আর বিশ্বাস থাকে না l সেগুলো হয়ে যায় অন্ধ বিশ্বাস l বাবা-মা সেই অন্ধবিশ্বাসগুলোকেই বিশ্বাস মনে করে শিশুকে শেখায় বিশ্বাস করতে l
যখন শিশুর বিশ্বাস করার ক্ষমতা তৈরী হয়ে উঠেনি তখন শিশুটি তার
বাবা-মা এবং সমাজের অন্ধ-বিশ্বাসগুলোকে নিজের মধ্যে ধারণ করে চলে l শিশু বুঝতে পারে না সে কি ধারণ করছে l সে সত্যিটা শিখছে কিনা সেটা সে জানে না; কারণ তখনও তার যুক্তি-বুদ্ধি হয়ে উঠে না l সে নিজের অজান্তেই
বিশ্বাস করে চলে যখন তার বিশ্বাস করার শক্তিই ঠিক ভাবে তৈরী হয়ে উঠেনি l আর এই বিশ্বাস গুলোই সারাজীবন অন্ধের মত বিশ্বাস করে চলে সে
l সে এই বিশ্বাসগুলোর বাইরে যাবার ক্ষমতা রাখে না l পরিবার সমাজ তার সেই ক্ষমতা নষ্ট করে দেয় l সে তার বিশ্বাসের স্বাধীনতা
পায় না কোনদিন l সে বড় হয়, যুক্তি বুদ্ধি তৈরী হয় কিন্তু সে আর তার অন্ধবিশ্বাসের বাইরে যেয়ে যুক্তি বুদ্ধি
খাটাতে পারে না l তার মন অন্ধবিশ্বাসে ছেয়ে গেছে তার অনেক আগেই
l আর তাই সে অন্ধ-বিশ্বাসী হয়ে জীবন কাটিয়ে দেয় l
সে জানে না সে বিশ্বাস করছে নাকি অন্ধ-বিশ্বাস
করছে l যে অন্ধ-বিশ্বাস তার মনকে ঘিরে রেখেছে সেই
অন্ধ-বিশ্বাসগুলো তাকে বুঝতে দেয়না তার বিশ্বাস অথবা অন্ধ-বিশ্বাস সম্পর্কে l
আর তাই একজন মানুষ শূন্য বিশ্বাস নিয়ে পৃথিবীতে
এসে অন্ধ-বিশ্বাস নিয়ে বেচে থাকে সারাজীবন l এই অন্ধবিশ্বাসগুলোই নিয়ন্ত্রণ করে সে কি বিশ্বাস করবে কি বিশ্বাস করবে না l
তার যুক্তি-বুদ্ধি এবং জ্ঞান কোন কাজ করতে পারে না সেই অন্ধ-বিশ্বাসের
বিরুদ্ধে l
শিশু নিজে বিশ্বাস করার সুযোগ পায় না l
পরিবার এবং সমাজ তার উপর তাদের বিশ্বাসকে চাপিয়ে দেয় l
যখন তার বিশ্বাস করার ক্ষমতা তৈরীই হয়নি তখন l ফলে মানুষ হয় অন্ধবিশ্বাসী l বঞ্চিত হয় বিশ্বাস করার অধিকার থেকে l সারাজীবন সে
অন্ধ-বিশ্বাসগুলোকে বিশ্বাস করে চলে অন্ধভাবে l কারণ বিশ্বাসগুলো সে নিজে বিশ্বাস করেনি l পরিবার এবং সমাজ তাকে
বিশ্বাসগুলো বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে যখন সে বিশ্বাস করার ক্ষমতাই অর্জন করতে পারেনি
l ফলে অন্ধ-বিশ্বাস গুলো তার মনকে অন্ধকারে ঢেকে রাখে l
সে পরবর্তিতে আর বিশ্বাস করতে পারে না স্বাধীনভাবে l তার বিশ্বাস গুলো নিয়ন্ত্রণ
করে তার উপর চাপিয়ে দেয়া অন্ধ-বিশ্বাসগুলো l
আর এভাবেই মানুষ অন্ধ-বিশ্বাসগুলোকে বিশ্বাস
করে চলেছে যুগ যুগ ধরে l এবং অন্ধ বিশ্বাসগুলোই
মানুষের বিশ্বাসগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে যুগ যুগ ধরে l
বিশ্বাস তৈরী হয় বাস্তব জ্ঞান থেকে l
যুক্তি-বুদ্ধি এবং বাস্তব জ্ঞান নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্বাসকে l
অন্ধ-বিশ্বাস চাপিয়ে দেয়া হয় মানুষকে l এবং মানুষ থাকে অন্ধ-বিশ্বাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে l
অন্ধ-বিশ্বাস মানুষের মনকে ঘিরে রাখে এক শক্ত প্রাচীরের মধ্যে
l মানুষ এই প্রাচীর ভেদ করে বাইরে আসতে পারে না l শৈশবের অন্ধ-বিশ্বাস
কাজ করে ছাকনির মত l মানুষ চারপাশ থেকে বাস্তব জ্ঞান নিয়ে তার
মনে পাঠায় l কিন্তু জ্ঞান মনে ঢুকার আগেই অন্ধবিশ্বাসের
প্রাচীর বাধা দেয় l ছেকে নেয় ইচ্ছে মত l ফলে সেই ছাকনি ভেদ করে বিশ্বাস ঢুকতে পারে না মনে l ঢুকে ছেকে ছেকে l ফলে মন বুঝতে
পারে না সত্যি মিথ্যের পার্থক্য l অন্ধ-বিশ্বাসগুলো মিথ্যেকেই
সত্যি হিসেবে দেখায় মনকে l ফলে মন থেকে যায় অন্ধ
বিশ্বাসের মিথ্যে মায়াজালে l
অন্ধ-বিশ্বাসের কাছে মন থাকে অসহায় অবস্থায়
l মন তাই বুঝে অন্ধ-বিশ্বাস যা বুঝায় তাকে l মন থেকে যায় অন্ধকারে l সত্যের আলো সেখানে পৌছাতে পারে না অন্ধ-বিশ্বাসের প্রাচীর ভেদ করে l ফলে মন চিরকাল মিথ্যের অন্ধকারেই থেকে যায় l আর মানুষ হয় অন্ধ-বিশ্বাসী, কুসংস্কার বিশ্বাসী l
এভাবেই অন্ধ-বিশ্বাস মানুষকে ধোকা দিয়ে এসেছে
চিরকাল l মানুষ থেকেছে মিথ্যের মায়া জালে l
অন্ধ-বিশ্বাসের গোলাম হয়ে l বিশ্বাসের কোন স্থান নেই সেই অন্ধ-বিশ্বাসের রাজত্বে l
এভাবেই বিশ্বাস পরাজিত হয়েছে অন্ধ-বিশ্বাসের
কাছে চিরকাল ধরে l এভাবেই চলবে অন্ধ-বিশ্বাসের রাজত্ব চিরকাল
ধরে l মুক্তি মিলবে না অসহায় মনের l মানুষ থেকে যাবে অন্ধ-বিশ্বাসের দাস হয়ে l
মুক্তি মিলবে অবিশ্বাসে l অবিশ্বাস দিতে পারবে মুক্তি অন্ধ-বিশ্বাসের দাসত্ব থেকে l
অন্ধ-বিশ্বাসকে ভেঙ্গে চুরে মনকে রক্ষা করতে পারে একমাত্র অবিশ্বাস
l অবিশ্বাস করতে পারে সত্য মিথ্যের পার্থক্য l মনকে করতে পারে জাগ্রত
l অন্ধ বিশ্বাস হয় পরাজিত অবিশ্বাসের কাছে l রাজত্ব এনে দেয় বিশ্বাসের l মন বিশ্বাস করতে পারে
স্বাধীনভাবে l যে বিশ্বাস পরাজিত থাকে অন্ধ-বিশ্বাসের কাছে;
সেই বিশ্বাসকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পারে একমাত্র অবিশ্বাস l
অবিশ্বাস অন্ধ-বিশ্বাসকে পরাজিত করে প্রতিষ্ঠিত করে বিশ্বাসের
রাজত্ব l মন পায় মুক্তি এবং বিশ্বাস করার স্বাধীনতা l অন্ধ-বিশ্বাসের মিথ্যের রাজত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে মন পায় বিশ্বাসের রাজত্ব l
প্রতিষ্ঠিত হয় সত্য l আলোকিত হয় মন l স্বাধীন হয় মন l মুক্তি মেলে মানুষের l
সত্য হয় প্রতিষ্ঠিত l
No comments:
Post a Comment