মুসলমানদের দাবি তাদের ধর্মীয়গ্রন্ত কুরআন-এর কথাগুলো স্বয়ং আল্লাহ লিখেছে। অর্থাৎ কুরআনের বাণী সবগুলোই আল্লাহর বলা বা লেখা বাণী বা কথা। কিন্তু যখন আমরা পৃথিবীর সবাই (মুসলমান বাদে) কুরআন পড়ি তখন দেখতে পাই কুরআনে ভূল কথা, ভূল উদৃতি, ভ্রান্ত ধ্যান ধারণা সম্পন্ন বাণী এবং সর্বপরি বিজ্ঞান ও বাস্তবতা বহির্ভুত কথা বার্তা। ফলে খুব সহজেই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে কুরআন কোন অতিক্ষমতাবাণ সৃষ্টিকর্তা লিখেনি বরং পৃথিবীর সব ধর্মগ্রন্থের মত প্রাচীণ ধ্যান ধারনার মানুষ লিখেছে। পৃথিবীর সব ধর্মগ্রন্থ পড়লে যেমন সেই সব ধর্মগ্রন্থ রচয়িতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় ঠিক তেমনি কুরআন পড়লে কুরআন লেখকের ধ্যান ধারনা পাওয়া যায়। এবং এটা স্পষ্ট ভাবেই বুঝা যায় যে, কুরআন লেখকের ধ্যান ধারনাগুলো ছিল সেই সময়ের মানুষের সাধারণ চিন্তা ভাবনার প্রতিফলন। সেই সময়ের মানুষ যেমনটি চিন্তা করতো, কুরআন লেখকও সেভাবেই চিন্তা করতো। আর তাই কুরআনে ঔতিহাসিক ভুল, ভৌগলিক ভূল, এবং বৈজ্ঞানিক ভুলের ছড়াছড়ি দেখতে পাওয়া যায়। এমনকি কুরআনের ভাষা গুনও সেই সময়ের মানুষের ভাষার প্রতিফলন।
সুতরাং এটা প্রমাণিত যে কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী নয়। পৃথিবীর তাবৎ ধর্মগ্রন্থের মতই কুরআন মানুষের লেখা একটা প্রাচীণ বই।
কুরআনের ভুল ইতিপূর্বে অনেকেই দেখিয়েছে, এবং আমিও এই সিরিজের আগের পর্বগুলোতে
দেখিয়েছি।
এই পর্বে আরো একটি প্রমান উপস্থাপন করছি।
বলা হয়ে থাকে কুরআন আল্লাহর কথা বা বাণীর বই। কিন্তু আল্লাহ কুরআনে রাত-দিন সম্পর্কে উদ্ভট কিছু কথা বলেছে যার সাথে বাস্তবতার
কোন মিলই নেই; উপরন্তু অবাস্তব ধ্যান ধারণা উপস্থাপন করা হয়েছে।
কুরআনে বলা আছে,
সূরা আন আম, আয়াত ১
"যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্যে যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি
করেছেন আলো ও অন্ধকার;..."
লক্ষ করুন বলা হচ্ছে, আল্লাহ আলো ও অন্ধকারকে
সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ আলো আর অন্ধকারকে সৃষ্টি করা যায়।
কিন্তু বিজ্ঞান আমাদের বলে আলোর বাস্তব অস্তিত্ব থাকলেও
অন্ধকারের বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই। আলো হলো এক প্রকার
শক্তি, যা ফুটন নামের অতি ক্ষুদ্র উপাদান দিয়ে গঠিত। অর্থাৎ আলোকে সৃষ্টি করা যায়। কারণ যার অস্তিত্ত্ব
আছে তাকেই সৃষ্টি করা সম্ভব। কিন্তু অন্ধকারকে সৃষ্টি
করা যাবে না। কারণ অন্ধকার বলে বাস্তব কোন কিছুর অস্তিত্ত্ব
নেই। অন্ধকার হলো আলোর অনুপস্থিতি। আর তাই অন্ধকারকে কখনই সৃষ্টি করা যাবে না। যার কোন অস্তিত্ত্বই নেই তাকে সৃষ্টি করার কথাটা অবাস্তব।
যেকোন মাধ্যমে (কঠিন, তরল, বায়বীয় বা শুন্য) আলো উপস্থিত না থাকলে মস্তিষ্কে আলোর অনুপস্থিতির জন্য এক ধরণের
প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সেই প্রতিক্রিয়াই অন্ধকার হিসেবে প্রাণীর
কাছে দেখা দেয়। কিন্তু বাস্তবে অন্ধকারের কোন অস্তিত্ত্ব
নেই। এটা শুধুই মস্তিষ্কের একটা প্রতিক্রিয়া বা কাল্পনিক ইমেজ
মাত্র।
অন্ধকারের যেহেতু কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই তাই তাকে সৃষ্টি
করা কারো পক্ষেও সম্ভব হবে না। সৃষ্টিকর্তার পক্ষেও
নয়।
ফলে কুরআনের এই আয়াতটি ভুল প্রমানিত হয় যখন এটি দাবি করে
যে আলোকে যেভাবে সৃষ্টি করা যায় ঠিক একই ভাবে অন্ধকারকেও সৃষ্টি করা যায়। আয়াতটিতে বলা হয়েছে, "আল্লাহ আলো ও অন্ধকারকে
সৃষ্টি করেছেন।"
এটি একটি অবৈজ্ঞানিক কথা। এটা একটা মানুষের পক্ষেই বলা সম্ভব যে জানে না আলো অন্ধকার আসলে কি? কুরআন লেখক মুহাম্মদের পক্ষে সেই সপ্তম শতাব্দিতে বসে জানা সম্ভব ছিল না আলো ও
অন্ধকার সম্পর্কে বাস্তব ধারণা সম্পর্কে। তাই মুহাম্মদ মনে করেছিল আলোর যেমন অস্তিত্ব আছে ঠিক একই
ভাবে অন্ধকারেরও অস্তিত্ব আছে। আর তাই সে কুরআনে লিখেছে
আলোকে যেমন সৃষ্টি করা যায় তেমনি অন্ধকারকেও সৃষ্টি করা যায়।
অর্থাৎ কুরআনের আলো ও অন্ধকারের সৃষ্টির এই আয়াতটি মুহাম্মদের
মতো কোন এক আদিম মানুষের লেখা। কোন সৃষ্টিকর্তার নয়।
যারা এ কথা বিশ্বাস করবে না
তাদের জন্য উক্ত আয়াতের অন্যান্য অনুবাদগুলো উপস্থাপন করছি।
"যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্যে যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি
করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন আলো ও অন্ধকার;..." (অনুবাদ- প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান)
"সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্যে, যিনি আকাশমালা ও ভূমন্ডল পয়দা করেছেন। তিনি অন্ধকার ও আলো
সৃষ্টি করেছেন;..." (অনুবাদ- হাফেজ মুনির
উদ্দীন আহমদ)
"সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি
করেছেন, আর তিনি তৈরি করেছেন অন্ধকার ও আলো। ...." (অনুবাদ- ডঃ জহুরুল হক)
"Praise be Allah, Who created the heavens and the earth, and made the
darkness and the light." (অনুবাদ- Abdullah Yusuf Ali)
"[All] praise is [due] to Allah, who created the heavens and the earth
and made the darkness and the light...."
(অনুবাদ- Saheeh International)
উপরের সবগুলো অনুবাদে বলা হয়েছে আলোকে সৃষ্টি করার মত করে
অন্ধকারকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু আলোর নিজস্ব
অস্তিত্ত্ব আছে বলে আলোকে সৃষ্টি করা যাবে, অন্ধকারকে নয়।
সুতরাং উপরিউক্ত আয়াতে ভুল বা অবাস্তব কথা বলা হয়েছে।
কুরআনে বলা আছে,
সূরা নামল, আয়াত ৮৬
"তারা কি অনুধাবন করে না যে, আমি রাত্রি সৃষ্টি করেছি
তাদের বিশ্রামের জন্যে এবং দিবসকে করেছি আলোকপ্রদ? ..."
এই আয়াতে রাতকে সৃষ্টি করার কথা বলা হয়েছে। আর রাত হলো অন্ধকারের জন্য বা আলোর অনুপস্থিতির জন্য তৈরী
হওয়া একটা ব্যবস্থা বা অবস্থা। কিন্তু রাতেরও কোন বাস্তব অস্তিত্ত্ব
নেই যেহেতু রাত হলো অন্ধকারের ফল। আর তাই অন্ধকারের যেমন
অস্তিত্ব নেই ঠিক একই ভাবে রাতেরও বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই। রাত হলো দিনের অনুপস্থিতি বা আলোর অনুপস্থিতিতে প্রাণি বা জীবের মস্তিষ্কে সংঘটিত
হওয়া একটা প্রতিক্রিয়া। কিন্তু এর বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই। এর অস্তিত্ব শুধুই প্রাণীর মস্তিষ্কে, প্রাণীর মনে সৃষ্টি হওয়া একটা প্রতিচ্ছবি।
আর তাই 'আমি রাত্রি সৃষ্টি করেছি' কথাটা অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক। এটা কোন সর্বজ্ঞানী
সৃষ্টিকর্তার বাণী হতে পারে না, এটি প্রাচীন আমলের অজ্ঞ কোন মানুষের।
বুঝা যাচ্ছে কুরআন লেখকের রাত দিন বা আলো অন্ধকার সম্পর্কে
কোন বাস্তব জ্ঞান ছিল না। সে প্রাচীণ ধ্যান ধারণার
একজন সাধারণ মানুষ ছিল। ফলে আলো অন্ধকার সম্পর্কে এমন কথা কুরআনে
উল্লেখ করেছে। কুরআনের লেখকের আরো একটি অজ্ঞতা নিচে
উল্লেখ করা হলো-
সূরা নাযি'আত, আয়াত ২৯
"এবং তিনি এর রজনীকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন এবং স্পষ্ট করেছেন
তার দিবসকে।"
এই আয়াতে বলা হয়েছে রাতকে অন্ধকার করা হয়েছে এবং দিনকে স্পষ্ট
করা হয়েছে বা আলোকময় করা হয়েছে। এটি একটি বাচ্চা শোলভ
কথা। কারণ রাত হলো অন্ধকার জনীত বা আলোর অনুপস্থিতি জনীত মস্তিষ্কের
একটা সাধারণ প্রতিক্রিয়া। অর্থাৎ আলোর অনুপস্থিতির
জন্য রাত হয় এবং অন্ধকার থাকাকেই রাত বলে। অর্থাৎ অন্ধকারই রাত। তাই কুরআন লেখক যখন বলে "রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করা হয়েছে"
তখন বুঝতে হবে কুরআন লেখক আসলে জানেই না রাত আসলে কি? অন্ধকার নিজেই যে রাত
সেটা না বুঝতে পারাতেই কুরআন লেখক লিখেছে রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করা হয়েছে। অন্ধকার কি নিজেকেই নিজে অন্ধকার করবে? এটা একটা বাচ্চাশূলভ কথা বা অজ্ঞতাপূর্ণ কথা। রাত কোন বাস্তব অস্তিত্বশীল কিছু নয়; তাই রাতকে কোন কিছু করা যায় না। আবার অন্ধকারের কোন অস্তিত্ব নেই; তাই কোন কিছুকে অন্ধকারাচ্ছন্ন
করা যাবে না বা অন্ধকার দিয়ে পূর্ণ করা যাবে না।
কুরআন লেখকের এরকম বক্তব্যে এটা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, তার দিন-রাত এবং আলো-অন্ধকার সম্পর্কে আধুনিক কালের বাস্তব সম্মত ধারণা ছিল না। ফলে সে ধরেই নিয়েছে যে রাতের বা অন্ধকারের বাস্তব অস্তিত্ব
আছে। কিন্তু আলোর যেমন নিজস্ব অস্তিত্ব আছে সেরকম অন্ধকারের যে
নিজস্ব কোন অস্তিত্ব নেই সেটা সেই সময়ের মানুষের জানা সম্ভব ছিল না। কুরআন লেখকের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না যে রাত দিন আসলে একই
কারণে হয়। আলোর উপস্থিতিতে হয় দিন। আর আলোর অনুপস্থিতির জন্য হয় রাত। আলোর অনুপস্থিতিই হলো অন্ধকার। কিন্তু অন্ধকারের নিজের
কোন অস্তিত্ব নেই। এটি আলোর অনুপস্থিতি মাত্র।
কুরআন লেখকের এই সব আধুনিক কালের বিজ্ঞানের আবিষ্কার সম্পর্কে
ধারণা ছিল না। কারণ আলো অন্ধকার সম্পর্কে সেই সময়ের
মানুষ স্পষ্ট ধারণা রাখতো না।
ফলে এটা স্পষ্ট বুঝা যায় কুরআন লেখক একজন সাধারণ মানুষ ছিল
বলে সেই সময়ের মানুষের মতই অন্ধকারকে বাস্তব অস্তিত্বশীল বলে মনে করেছে। আর কুরআনে সেটা লিখে দিয়েছে।
কুরআন লেখকের যে আলো অন্ধকার সম্পর্কে বাস্তব কোন ধারনাই
ছিল না নিচের আয়াতটিতে সেটা আরো স্পষ্ট হওয়া যাবে।
সূরা শামস্, আয়াত ৩ ও ৪
"শপথ দিবসের যখন তা' (সূর্যকে) প্রকাশ করে,"
"শপথ রজনীর, যখন তা' সূর্যকে ঢেকে দেয়,"
এই আয়াত দুটিতে বলা হচ্ছে যে, দিন সূর্যকে প্রকাশ
করে, এবং রাত সূর্যকে ঢেকে দেয়।
প্রথম আয়াতটি মতে দিনের জন্য সূর্যকে দেখা যায়। এবং দ্বিতীয় আয়াত অনুযায়ী রাত সূর্যকে ঢেকে দেয়।
কিন্তু দিন সূর্যকে প্রকাশ করে কথাটি অজ্ঞতাপূর্ন। সূর্য ও দিন সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় এটা বলা হয়েছে। কারণ দিন হলো সূর্যের আলোর ফসল। সূর্যের আলোর জন্যই দিনের সৃষ্টি। অর্থাৎ দিনের সৃষ্টিকর্তা
হলো সূর্য। সূর্যই তার আলো দিয়ে দিনকে তৈরী করে। ফলে দিন সূর্যকে প্রকাশ করতে পারবে না। বরং সূর্যের প্রকাশের জন্যই দিন হবে। সূর্য যখন প্রকাশিত হবে বা উন্মুক্ত হবে তখন দিনের সৃষ্টি
হবে। তাই দিন সূর্যকে প্রকাশ করতে পারবে না বরং সূর্যই দিনকে প্রকাশ
করবে। কিন্তু কুরআন লেখক ‘দিন যে সূর্যের কারনেই হয়’ এটা স্পষ্ট করে জানতো না। সে ভেবেছিল দিন আর সূর্য
দুটো আলাদা জিনিস। কিন্তু সূর্যই যে দিনকে সৃষ্টি করে আর
তাই দিন সূর্যকে প্রকাশ করে না বরং সূর্যই দিনকে প্রকাশ করে এটা কুরআনের লেখক জানতো
না। তাই কুরআনে বলেছে দিন সূর্যকে প্রকাশ করে। সুতরাং এটি একটি ভ্রান্তিপূর্ন কথা।
আবার রাত হলো অন্ধকারের ফসল, যেটা আলো উপস্থিত না থাকলে প্রাণী মস্তিষ্কে তৈরী হয়। কিন্তু রাত বা অন্ধকার বলে বাস্তব কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। সুতরাং রাতের পক্ষে সম্ভব হবে না সূর্যকে ঢেকে দিতে। রাত যার কোন অস্তিত্বই নেই সেটি কিভাবে সূর্যকে ঢেকে দেবে?
কুরআন এখানে মারাত্বক ভূল করেছে। অর্থাৎ কুরআন লেখক একজন অজ্ঞ মানুষ যে জানে না রাতের পক্ষে সূর্যকে ঢেকে দেওয়া
সম্ভব নয়। কুরআন লেখক ভেবেছে রাত বা অন্ধকারের অস্তিত্ব
আছে এবং রাত সূর্যকে ঢেকে দিতে পারে। তাই সে কুরআনে এমন কথা
বলেছে।
কুরআন লেখক এখানে রাতকে অস্তিত্বসম্পন্ন কিছু একটা ভেবেছে। ফলে সে ধরেই নিয়েছে দিনের আলো সূর্যকে প্রকাশ করে এবং রাত
সূর্যকে ঢেকে দেয়।
প্রকৃতপক্ষে কুরআন লেখক এখানে তার অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে।
কুরআনের লেখক রাতকে বা অন্ধকারকে যে অস্তিত্বশীল কিছু মনে
করেছে তার আরোও একটি প্রমাণ নিচের আয়াতটি,
সূরা নাবা, আয়াত ১০
"আর রাত্রিকে করেছি আবরণ,"
এখানে বলা হচ্ছে যে, রাতকে আবরণ করা হয়েছে। আবার পূর্বে উল্লেখিত আয়াতে বলা হয়েছে রাত সূর্যকে ঢেকে দেয়। অর্থাৎ কুরআন লেখকের ধারণা রাত বা অন্ধকারের বাস্তব অস্তিত্ব
আছে এবং সেই রাত বা অন্ধকারকে দিয়ে কোন কিছুকে ঢেকে দেওয়া যায়। স্পষ্টতই কুরআন লেখক ভুল ধারণা পোষন করতো রাত বা অন্ধকার
সম্পর্কে।
কুরআন লেখক কুরআনে বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্ন ভাবে রাত বা অন্ধকারকে
বাস্তব অস্তিত্বশীল কিছু বলে ধরে নিয়ে কুরআন লিখেছে। ফলে রাত বা অন্ধকার সম্পর্কে কুরআন লেখকের ভ্রান্তিকর ধারণাই প্রকাশ পেয়েছে।
কিন্তু রাতের কোন অস্তিত্ব নেই এটি কুরআন লেখক জানতো না। আর তাই কুরআনে বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্ন ভাবে রাতকে অস্তিত্বশীল
হিসেবে দেখিয়েছে।
সুরা রাদ, আয়াত ০৩
"...তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আবৃত করেন ...।"
এখানে বলা হয়েছে রাত এমন একটি জিনিস যা দিয়ে দিনকে ঢেকে দেওয়া
যায়। অর্থাৎ কুরআন মতে রাত বা অন্ধকারের নিজের অস্তিত্ব আছে।
আবার সুরা আন-নমলের ৩৯ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে,
"তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি
দ্বারা আচ্ছাদিত করেন।"
এখানেও বলা হচ্ছে দিন এবং রাত একে অন্যকে ঢেকে দিতে পারে। অর্থাৎ কুরআন লেখক রাতকে বা অন্ধকারকে এমন একটি জিনিস ধরে
নিয়েছে যেটা কোন কিছুকে ঢেকে দিতে পারে। আর তাই কুরআনে বলেছে
রাত দিনকে ঢেকে দিচ্ছে আর দিন রাতকে ঢেকে দিচ্ছে। কিন্তু বাস্তব জগতে দিন রাতকে ঢেকে দেয় না (এটা অসম্ভব একটা ধারনা) আর রাতও দিনকে
ঢেকে দেয় না। কিন্তু দিন যার বাস্তব অস্তিত্ব আছে (কারণ দিন সূর্যের আলোর ফলে উৎপন্ন হয়) সেটা
রাতের মতো কোন অস্তিত্বহীন কিছুকে ঢেকে দিতে পারবে না। কারণ যার কোন অস্তিত্বই নেই তাকে ঢেকে দেওয়া যায় না। আবার রাত যার কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই (কারণ রাত হলো অন্ধকারের ফল আর অন্ধকার
হলো আলোর অনুপস্থিতিতে মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া কিন্তু অন্ধকার বলে বাস্তব জগতে কিছু
নেই) সেটা দিনকে কখনই ঢেকে দিতে পারবে না। কারণ অস্তিত্বহীন কোন
কিছু অন্য কোন কিছুকে ঢেকে দিতে পারে না। ফলে কুরআন লেখক এখানে
ভুল কথা বলেছে। সে রাতকে বা অন্ধকারকে অস্তিত্বশীল কিছু
ধরে নিয়েছে।
কুরআনের সূরা আলে ঈমরান-এর ২৭ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে,
"তুমি রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করাও এবং দিনকে রাতের ভেতর
প্রবেশ করিয়ে দাও ।"
একই কথা বলা হয়েছে সুরা হাদীদ-এর ০৬ নাম্বার আয়াতে, সুরা লোকমান-এর ২৯ নাম্বার আয়াতে এবং সুরা ফাতির-এর ১৩ নাম্বার আয়াতে।
কুরআনের ধারনা মতে রাত এমন একটি জিনিস যাকে দিনের ভেতরে প্রবেশ
করানো যায় বা ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। আর দিনকেও সেই রাতের
ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো
রাত বা অন্ধকারের কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই তাই রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করানো যাবে
না। আবার দিনকেও রাতের ভেতরে প্রবেশ করানো যাবে না। যার কোন অস্তিত্বই নেই তাকে কিভাবে কোন অস্তিত্বশীল কিছুর
ভেতরে প্রবেশ করানো যাবে? আবার কোন অস্তিত্বশীল কিছুকে কিভাবে কোন
অস্তিত্বহীন কিছুতে ঢুকিয়ে দেওয়া সম্ভব? স্পষ্টতই কুরআন লেখক রাত বা অন্ধকারকে কোন অস্তিত্বশীল কিছু মনে করেছে এবং ভেবেছে
রাত বা অন্ধকার কোন কিছুর ভিতরে প্রবেশ করতে পারে। তাই সে কুরআনে দিনকে রাতের ভেতরে এবং রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশের কথা বলেছে। সেটা বাস্তব জগতে কখনই হয় না এবং সেটা হওয়া সম্ভবও নয়। কুরআন লেখক রাত সম্পর্কে কোন স্পষ্ট ধারনা রাখতো না বলে
এবং অন্ধকার ও আলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতো না বলেই কুরআনে এমন অবাস্তব এবং মনগড়া
কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে।
সূরা ইয়াসীন, আয়াত ৪০
"সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলেনা
দিনের, প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।"
সূরা আল আম্বিয়া, আয়াত ৩৩
"তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।"
উপরিউক্ত আয়াত দুটোতে বলা হয়েছে সূর্য ও চন্দ্র যেমনটি আপন
আপন কক্ষপথে বিচরণ করে বা ঘুরে ঠিক তেমনিভাবে রাত দিনও আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে। অর্থাৎ রাত ও দিন সূর্য ও চন্দ্রের মতই গতিশীল।
কিন্তু আমরা জানি রাত দিন গতিশীল নয়। যদিও আমাদের কাছে রাত দিনের পরিবর্তনের জন্য মনে হয় রাত দিন
বুঝি গতিশীল, কিন্তু বিজ্ঞান আমাদের বলে যে, রাত দিন গতিশীল নয়। পৃথিবী গতিশীল বলে রাত দিনের পরিবর্তন হয়। কিন্তু কুরআন লেখক মনে করেছে সূর্য ও চন্দ্র যেমনটি গতিশীল
থাকে ঠিক একই ভাবে রাত দিনও গতিশীল থাকে। কিন্তু বাস্তবে রাত
বা দিন গতিশীল নয়। প্রকৃতপক্ষে রাত দিনের পক্ষে গতিশীল থাকা
সম্ভব নয়। কারণ সূর্যের আলো উপস্থিত থাকায় দিন হয়
আর সূর্যের আলো অনুপস্থিত থাকায় রাত হয়। যেখানে সূর্যের আলো
পৌছায় না সেখানেই রাত আর যেখানে সূর্যের আলো পৌছায় সেখানে হয় দিন। অর্থাৎ রাত দিন হলো সূর্যের আলোর উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতির
ফল। আর তাই রাত দিনের পক্ষে গতিশীল হওয়া সম্ভব নয়।
আবার রাত বা অন্ধকারের অস্তিত্ব না থাকায় তার পক্ষে গতিশীল
হওয়া অসম্ভব এবং অবাস্তব।
কুরআনে রাত দিনকে গতিশীল মনে করায় বুঝা যায় কুরআন লেখক মুহাম্মদের
সময়ে আরবের একজন সাধারণ মানুষ ছিল বলে কুরআনে রাত দিনের এমন উদ্ভট বর্ণনা দিয়েছে। সে ভেবেছিল রাত দিন নিজেরা গতিশীল থাকে বলে রাত দিনের পরিবর্তন
হয়। আর তাই কুরআনে লিখেছে সূর্য ও চন্দ্র যেমনটি গতিশীল ঠিক একই
ভাবে রাত দিনও গতিশীল।
আবার রাতের নিজের কোনই অস্তিত্ব নেই সেটা কুরআন লেখক জানতো
না। আর তাই সে ধরে নিয়েছিল দিনের মত রাতেরও বুঝি বাস্তব অস্তিত্ব
আছে। তাই সে মনে করেছে দিন বা রাতের পক্ষে গতিশীল হওয়া সম্ভব।
অর্থাৎ কুরআন লেখক ভেবেছে রাতের বাস্তব অস্তিত্ব আছে। এজন্যই সে রাতকে গতিশীল কল্পনা করেছে।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, কুরআন লেখকের ধারণা মতে অন্ধকারের নিজের বাস্তব অস্তিত্ব আছে যেমনটি আলোর বাস্তব
অস্তিত্ব আছে। কিন্তু কুরআন লেখক জানতো না যে, আলোর অস্তিত্ব থাকলেও অন্ধকারের কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই। তাই সে বলেছে যে, আল্লাহ আলোকে যেমন সৃষ্টি করেছে ঠিক তেমনিভাবে অন্ধকারকেও সৃষ্টি করেছে। কিন্তু কুরআন লেখক জানতো না অন্ধকারের কোন অস্তিত্ব নেই
তাই তাকে সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। কারণ যার কোন অস্তিত্বই
নেই তাকে সৃষ্টি করা যায় না।
আবার বলেছে যে রাত সূর্যকে ঢেকে দেয়। রাত যার কোন অস্তিত্বই নেই তার পক্ষে যে সূর্যকে ঢেকে দেওয়া
সম্ভব নয় এই কথাটি কুরআন লেখক জানতো না।
কুরআন লেখক আরোও বলেছে, রাত দিনের ভিতরে ঢুকে
যায় এবং দিন রাতের ভিতরে ঢুকে যায়। কিন্তু রাতের নিজের
কোন অস্তিত্ব না থাকায় তার পক্ষে কারো ভিতরে ঢুকে যাওয়া সম্ভব নয়। আবার দিনের পক্ষেও সম্ভব নয় অস্তিত্বহীন রাতের ভিতরে ঢুকে
যাওয়া। কারণ যার কোন অস্তিত্বই নেই তার ভিতরে কোন কিছু ঢুকে যেতে
পারবে না।
আবার কুরআন লেখক বলেছে, রাত দিনকে ঢেকে দেয়
এবং দিন রাতকে ঢেকে দেয়। কিন্তু অস্তিত্বহীন
রাতের পক্ষে কোন কিছুকে ঢেকে দেওয়া সম্ভব নয়।
এবং কুরআন লেখক এটাও বলেছে যে, সূর্য চন্দ্রের মত রাত
দিনও বিচরণশীল থাকে বা ঘুর্ণায়মান থাকে। কিন্তু বাস্তবে রাত
দিন বিচরণশীল থাকে না এবং রাতের বাস্তব অস্তিত্ব না থাকায় তার পক্ষে সম্ভব নয় বিচরণশীল
থাকা বা ঘুর্ণায়মান থাকা।
অর্থাৎ রাত দিন এবং আলো অন্ধকার সম্পর্কে কুরআন লেখক অবান্তর, অবাস্তব এবং অবৈজ্ঞানিক কথা বার্তা বলেছে বিভিন্ন আয়াতে। ফলে এটা স্পষ্ট ভাবে বুঝা যায় যে, কুরআনের লেখক জানতো না রাত দিন বা আলো
অন্ধকার আসলে কি? কুরআন লেখক ভেবেছে রাত বা অন্ধকারের বাস্তব অস্তিত্ব আছে
এবং এটি আলোর মতই কোন একটা কিছু। আর তাই কুরআনে তার এই
মন গড়া কথা বর্ণনা করে রেখেছে। যেটা প্রাচীনকালের কোন
এক সাধারণ মানুষের অজ্ঞতাপূর্ণ ধারনা মাত্র।
এই ধারণা কোন ক্রমেই কোন অতি ক্ষমতাবাণ কারোও হতে পারে
না। এটি কোন সৃষ্টিকর্তার ধারনা নয়। এটি মুহাম্মদের সময়ের মানুষের ভ্রান্ত ধারনা। আর এই ভ্রান্ত ধারনাই কুরআন লেখক কুরআনে লিখে রেখেছে।
অর্থাৎ কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তার বানী বা কথা নয়। কুরআন প্রাচীন কোন সাধারণ মানুষের লেখা একটা সাধারণ বই ছাড়া
আর কিছুই নয়।
অর্থাৎ কুরআন মানুষের লেখা বা তৈরী করা বই।
যেহেতু কুরআনের প্রত্যেকটি কথা বা বাণীই মুহাম্মদের মুখ থেকে
এসেছে বলে দাবী করা হয়, তাই একথা প্রমাণিত হয় যে, কুরআন মুহাম্মদের লেখা বা তৈরি করা।
অর্থাৎ কুরআন আল্লাহর বাণী নয়। কুরআন মুহাম্মদের বাণী।
No comments:
Post a Comment