বেদ হিন্দু ধর্মের
অনুসারীদের ধর্মীয় গ্রন্থ। বেদই হলো হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর মধ্যে প্রাচীণতম
গ্রন্থ। বেদে নানা স্তুতি বা প্রার্থনা বাণী সংকলিত হয়েছে। বেদকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঋগ , সাম, যজুর ও অথর্ব নামে। আবার যজুর বেদের ২
টি ভাগ যেমনঃ শুক্ল ও কৃষ্ণ। কথিত আছে বেদ শ্রী কৃষ্ণ কর্তৃক কংকলিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে শ্রী কৃষ্ণ
বলে আদোও কেউ ছিল কিনা সেটাই বিতর্কিত। তবে ধনে নেওয়া যায় কৃষ্ণ নামে কেউ একজন বেদকে সংকলিত করেছে।
বেদের প্রতিটি ভাগে
রয়েছে আবার চারটি প্রধান ধাপ। যেমনঃ সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ।
এই পর্বগুলোতে বেদের
সবগুলো খন্ডকে পর্যায়ক্রমে বিশ্লেষন করে দেখা হবে বেদের কথাগুলো আসলে কি কোন বাস্তব
জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ লিখেছে নাকি এটি আদিম কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ লিখেছে?
বেদের কথাগুলো কি
মানুষের অন্ধবিশ্বাস থেকে রচিত নাকি অজ্ঞতা থেকে এগুলো মানুষ লিখেছে সেটাই বিশ্লেষন
করে দেখা হবে এই পর্বগুলোতে।
প্রথমে বেদের প্রথম
খন্ড ঋগ বেদ সংহিতা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
তারপূর্বে যজ্ঞ কি
সেটা দেখে নেওয়া যাক-
যজ্ঞঃ হিন্দুধর্মের অন্যতম কৃত্যানুষ্ঠান। দেবতার অনুগ্রহ লাভের উদ্দেশ্যে
বেদমস্ত্র উচ্চারণপূর্বক অগ্নিতে আহুতি প্রদান অনুষ্ঠানই যজ্ঞ। এর মাধ্যমে সম্পদ বা সমৃদ্ধি লাভ, শত্রু ক্ষয়, যুদ্ধ জয়, রোগারোগ্য ও স্বর্গ লাভ ইত্যাদি কামনা করা হতো। বৈদিক যুগে এর
উদ্ভব ঘটে এবং ক্রমশ তা সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
বুঝাই যাচ্ছে যজ্ঞ
হলো প্রার্থনা করার মাধ্যম। হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা যজ্ঞের মাধ্যমে অগ্নিকে সাক্ষ্য মেনে
বা পুরোহিত ধরে প্রার্থনা করে থাকে।
ঋগ্বেদ সংহিতা
প্রথম মণ্ডল : বিভিন্ন
ঋষি
১ সুক্ত
১। "অগ্নি যজ্ঞের পুরোহিত
এবং দীপ্তিমান; অগ্নি দেবগণের আহ্বানকারী ঋত্বিক এবং প্রভূতরত্নধারী:
আমি অগ্নির স্তুতি করি।"
সাদামাঠা এই কথাটি
থেকে সহজেই বুঝা যাচ্ছে যে, কোন প্রাচীণ মানুষ
যজ্ঞ করতে বসে আগুনের প্রসংশা করছে। আগুনকে যজ্ঞের পুরোহিত বলে অভিবাদন করা হয়েছে। বলা হয়েছে আগুনই হলো
দেবগণকে আহবান করার ঋত্বিক বা পুরোহিত এবং আগুনই ধনসম্পদের ভান্ডার। আর তাই যজ্ঞকারী বা
প্রার্থনা কারী আগুনের গুনগান করে বা প্রসংশা করে।
এই কথাটি দিয়ে সহজেই
বুঝা যাচ্ছে এটি কোন প্রাচীণ অজ্ঞ মানুষের দ্বারা তৈরী হওয়া কোন স্তুতি বা মন্ত্র। মানুষ আগুনকে প্রাচীনকালে
দেবতা মনে করতো। আগুনের পুঁজো করতো। তারই ধারাবাহিকতায় হিন্দু পুরোহিতগণ এই মন্ত্রগুলোকে ধারণ
করে রেখেছিল এবং পরবর্তীতে বেদে সংযুক্ত করেছিল।
কিন্তু প্রাচীনকালের
মানুষ জানতো না যে আগুন আসলে কি জিনিস? জানতো না বলেই আগুনকে দেবতা ভেবে এর পুজা করতো। কালক্রমে সেগুলোই বেদে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
অর্থাৎ বেদ প্রাচীণ
কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের দ্বারাই তৈরী করা কিছু কথা মালা। আর কিছুই নয়।
যদি প্রাচীণ মানুষ
জানতো যে আগুন কোন দেবতা নয়, কোন প্রাণ যুক্ত কিছুও
নয় তবে তারা কখনই আগুনের স্তুতি গাইতো না। আগুন একটা স্বাধারণ শক্তি বা এনার্জি মাত্র। এর কোন প্রাণ নেই, এটি কোন স্বত্বা নয়। তাই এটি কারো কথা
শুনতে পারবে না।
তাই তারা আগুনের বন্ধনা
করেছে, আগুনের কাছে প্রার্থনা করেছে। বস্তুত বেদের এই কথাটি
প্রাচীণকালের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের দ্বারা তৈরী হওয়া একটি প্রাচীন ধারনার বহিঃপ্রকাশ।
২। অগ্নি পূর্ব ঋষিদের
স্তুতিভাজন ছিলেন, নুতন ঋষিদেরো স্তুতিভাজন; তিনি দেবগণকে এ যজ্ঞে আনুন,
এখানে আগুনের কাছে
প্রার্থনা করে বলা হয়েছে, আগুন যেন দেবতাদেরকে
যজ্ঞ বা প্রার্থনার স্থানে নিয়ে আসে। আগুনকে প্রাচীণ এবং বর্তমান হিন্দু পুরাহিতদের শ্রদ্ধাভাজন বলে
সম্বোধন করা হয়েছে।
এটা একটি প্রাচীণ কালের
মানুষের প্রাচীণ প্রার্থনা বাক্য মাত্র। আগুন কোনদিনই কোন দেবতা বা অতিক্ষমতাবান কাইকে ডেকে আনতে পারবে
না। প্রাচীণ কালের মানুষের
ধারণা যে, আগুন কোন একটি বুদ্ধিমান স্বত্বা, যে কিনা দেবতাদেরকে ডেকে আনার ক্ষমতা রাখে। প্রাচীণ কালের মানুষের
ধ্যান ধারণা এরকমই ছিল যে, আগুন দেবতাদেরকে ডেকে আনতে সক্ষম।
কিন্তু আগুন কখনই কাউকে
ডেকে আনার ক্ষমতা রাখে না সেটা প্রাচীণ কালের মানুষ না জানলেও বর্তমানের একটা বাচ্চাও
সেটা জানে। যেহেতু বেদ হলো প্রাচীণ মানুষের ধ্যাণ ধারনার প্রতিফলন তাই এখানে এরকম কথা বলা
হয়েছে।
আগুনকে বলা “দেবতাদেরকে ডেকে আনুন” কথাগুলো বাচ্চাদের পুতুল খেলায় ব্যবহৃত
বাচ্চাশোলভ কথা মাত্র।
৩। অগ্নিদ্বারা যজমান
ধনলাভ করেন, সে ধন দিন দিন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও যশোযুক্ত হয়
ও তা দিয়ে অনেক বীরপুরুষ নিযুক্ত করা যায়।
বলা হচ্ছে, আগুন পুঁজাকারী বা যার জন্য যজ্ঞ করা হয় তাকে ধন সম্পদ দান করে। সে ধন দিন দিন বেড়ে
যায়।
আগুন কখনই ধন সম্পদ
দিতে পারে না। আগুন ব্যবহার করে নানা কাজ করা যেতে পারে কিন্তু আগুন নিজে কাউকেই কোন কিছু দিতে
পারবে না। সে এক প্রকার শক্তি মাত্র। বড় জোর সেই শক্তি ব্যবহার করে মানুষ অনেক কাজ সম্পাদন করতে
পারবে। প্রকৃত পক্ষে মানব
ইতিহাসে আগুন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন উপাদান। কিন্তু তাই বলে আগুনের কাছে কোন কিছু চেয়ে
প্রার্থনা করা বোকামী, অজ্ঞতা এবং এটি একটি
কুসংস্কার। প্রাচীন মানুষের ভ্রান্ত ধারনা।
৪। হে অগ্নি! তুমি যে
যজ্ঞ চারদিকে বেষ্টন করে থাক সে যজ্ঞ কেউ হিংসা করতে পারে না এবং সে যজ্ঞ নি:সন্দেহেই
দেবগণের নিকটে গমন করে।
আগুনকে বলা হচ্ছে, আগুন যজ্ঞকে (প্রার্থনার স্থানকে) বেষ্টন করে রাখে বলে সেই যজ্ঞকে
নাকি কেউ হিংসা করতে পারে না। আগুন দিয়ে বেষ্টিত থাকে বলে সেই যজ্ঞ নাকি নিঃসন্দেহে দেবদের
কাছে পৌছে।
আগুনের আলোকে ব্যবহার
করে তথ্য বা সংবাদ পাঠানো যেতে পারে। কিন্তু তাই বলে আগুন দিয়ে প্রার্থনার স্থানকে চারদিক থেকে বেষ্টন
করে রাখলেই সেই যজ্ঞের প্রার্থনা দেবতাদের কাছে চলে যাবে এটা হাস্যকর দাবী। মন্ত্র পাঠ করলে সেই
মন্ত্র বড়জোর করেক মিটার পর্যন্ত শোনা যাবে। মাইক ব্যবহার করলে সেটা হয়তো বা কয়েক কিলোমিটার
পর্যন্ত শোনা যাবে। কিন্তু তাই বলে আগুন দিয়ে বেষ্টন করে রাখলেই সেই প্রার্থনা দেবতা বা সৃষ্টিকর্তার
কাছে পৌঁছবে এমনটা ভাবা পাগলামী। আগুন যজ্ঞ বা প্রার্থনাকে কোথাও পাঠাতে পারবে না। প্রার্থনা বা যজ্ঞের
কাছে আগুন থাকলেও যেটা ফল হবে আগুন না থাকলেও একই ফল আসবে।
যেহেতু প্রার্থনা একটা
অকার্যকর প্রক্রিয়া তাই প্রার্থনার ফলে কিছু হয় না যজ্ঞে আগুন থাকা না থাকা একই কথা।
আগুন যজ্ঞের চারপাশে
থাকে বলেই কেউ যজ্ঞকে হিংসা করতে পারে না একথাটার মানে কি? কেউ যদি হিংসা করে তবে আগুন কোনই ভুমিকা রাখতে পারে না।
এখানে যদি আগুন শয়তানকে
যজ্ঞে প্রবেশ করতে দেয় না সেটা বুঝিয়ে থাকে তবে বলতে হয়, শয়তান হলো একটা প্রাচীণ মানুষের কুসংস্কার মাত্র, তাই শয়তান যজ্ঞ বা প্রার্থনার স্থানে আসার প্রশ্নই উঠে না। আবার আগুন শয়তানকে
প্রার্থনার জায়গা থেকে তাড়িয়ে দেবার ক্ষমতাও রাখে না। আগুন শুধু তাপ এবং আলো ছড়াতে পারে।
৫। অগ্নি দেবগণের আহ্বানকারী; সিদ্ধকর্মা, সভ্যপরায়ণ ও প্রভূত
ও বিবিধ কীর্তিযুক্ত; সে দেব দেবগণের সঙ্গে
এ যজ্ঞে আগমন করুন।
আগুন নাকি দেবতাদেরকে
আহবান করে, আগুন কর্মঠ, আগুন সভ্য, আগুন নিজেই দেবতার
মতো এবং আগুন নানা রকম কাজ করতে সক্ষম। তাই তার কাছে প্রার্থনা করে বলা হচ্ছে সে যেন অন্যান্য দেবতাদেরকে
সঙ্গে নিয়ে যজ্ঞ তথা প্রার্থনার স্থানে আসে।
অদ্ভুত কথা বলা হয়েছে
এখানে। আগুন দেবতাদেরকে আহবান
করে সেটা সম্ভব নয়। “আগুন সিদ্ধকর্মা, সভ্য” কথাটি আগুনকে তেল মারার জন্য বলা হয়েছে। যেহেতু প্রাচীন কালের
মানুষ আগুনকে দেবতা মনে করতো তাই তারা দেবতার কাছে প্রার্থনা করতো এবং দেবতাকে খুশি
করার জন্য নানা গুনগান করতো। তাই আগুনকে দেবতা ভেবে তাকে খুশি করার জন্য একের পর এক প্রশংসাসূচক
কথা বলে তাকে খুশি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আগুন যে তাদের তেল মারা ধরতে পারবে না সেটা তারা বুঝতো
না। তবে আগুন কর্মঠ এটা
স্বীকার করতেই হয়। আগুন খুব কাজের, তাই সে সব কিছুকেই
সুযোগ পেলে পুঁড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু আগুন সভ্য কথাটা পুরিপুরি মিথ্যা। আগুনের মত অসভ্য আর
কিছুই নেই। আগুন নিমিশেই সব কিছুকে পুঁড়িয়ে দিতে পারে। তার কোন দয়ামায়া নেই। কারণ আগুন কোন জীবন্ত
স্বত্বা নয়। আগুন শুধু একটা কাজই করতে জানে তা হলো পুঁড়িয়ে দেওয়া।
তাই আগুনকে সভ্য, প্রভুত ইত্যাদি বলা বোকামী।
আগুনকে হাজার বার ডাকা
হলেও সে কারো কাছে আসতে পারবে না।
তাই আগুনকে ডাকা, আগুনের কাছে প্রার্থনা করা এবং আগুনকে কাউকে ডেকে আনতে বলাটা
পাগলামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রাচীণ মানুষ এতটাই
বোকা ছিল যে তারা আগুনকে দেবতা ভাবতো এবং তাকে পুঁজা করতো। আর সেটাই বেদে তুলে ধরা হয়েছে।
৬। হে অগ্নি! তুমি হব্যদাতা
যজমানের যে কল্যাণ সাধন করবে, হে অঙ্গিরা সে কল্যাণ
প্রকৃত তোমারই।
এটা একটা তেল মারা
মার্কা কথা। যাতে আগুন প্রার্থনাকারী বা যার জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে তার উপকার আগুন করে তাই
তাকে তোষামোদ করছে। আগুনকে তেল মেরে বলা হচ্ছে আগুন যদি প্রার্থনা শুনে প্রার্থনাকারীর বা যার উদ্দেশ্যে
প্রার্থনা করা হচ্ছে তাকে উপকার করে তবে সেটা নাকি আগুনেরই উপকার হবে।
আগুন কিইবা উপকার করতে
পারবে আর তাতে আগুনেরই বা কি উপকার হবে সেটা অবশ্য ভাববার বিষয়। আগুনকে ব্যবহার করে
মানুষ নানা কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে আগুন ছাড়া সভ্যতাই টিকে থাকতে পারতো না। কিন্তু তাতে করে আগুনের নিজের কোন উপকার
হয় না। সে শুধু জ্বলতে থাকে। এটাই তার কাজ। সে উপকার অপকার কিছু
বুঝার ক্ষমতা রাখে না।
৭। হে অগ্নি! আমরা
দিনে দিনে দিনরাত মনের সাথে নমস্কার সম্পাদন করে তোমার সমীপে আসছি।
প্রাচীন মানুষের প্রাচীণ
কর্মকান্ড, অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারের প্রতিফলন হলো
এই স্তবকগুলো। বর্তমানে এসবকে একজন পাগলের প্রলাপ বলা চলে।
আগুনকে নমস্কার করা, আগুনের কাছে প্রার্থনা করা চরম অজ্ঞদের কাজ। আর সেটা প্রাচীণ মানুষদের
দ্বারাই সম্ভব।
৮। তুমি দীপ্যমান, তুমি যজ্ঞের রক্ষক, যজ্ঞের অতিশয় দীপ্তিকারক, এবং যজ্ঞশালায় বর্ধনশীল।
আগুন দীপ্তিমান সেটা
প্রাচীন কালের মানুষ জানতো তাই এটাতে কোন ভুল নেই। কিন্তু আগুন যজ্ঞের রক্ষক হতে পারবে না। ঝড় বা বৃষ্টি আসলে
আগুন যজ্ঞকে রক্ষা করতে পারবে না। তবে আগুনের উপর যদি কেউ হামলা না করে তবে যজ্ঞের কোন ক্ষতি
হবে না। কারণ এসবে আগুনের কোন ভুমিকা নেই। আগুন আপন বৈশিষ্ট্যে জ্বলতে থাকে শুধু। এর আর কিছু করার ক্ষমতা নেই। আর এসব প্রাচীন মানুষ
জানতো না।
তাই এই কথাটিতে তুমি
দীপ্যমান, দীপ্তিকারক কথাটি সঠিক আছে। কিন্তু আগুন যজ্ঞের
রক্ষক কথাটি প্রাচীন অজ্ঞতা সম্পন্ন। জালানী দিলে আগুন বেড়ে যাবে কিন্তু তাতে আগুনের নিজের কোন ভুমিকা
নেই। আগুনের কাজ শুধুই জ্বলতে
থাকা, আর কিছুই নয়।
৯। পুত্রের নিকট পিতা
যেরূপ অনায়াসে অধিগম্য, হে অগ্নি! তুমি আমাদের নিকট সেরূপ হো; মঙ্গলার্থ আমাদরে নিকটে
বাস কর।
এই কথাটি সব থেকে হাস্যকর। আগুনকে পিতার সাথে
তুলনা করা হয়েছে। আগুন নাকি পিতার মতো মানুষকে নিরাপত্তা দেয়। এমন হাস্যকর কথা আমি জীবনে দ্বিতীয়টি আর শুনিনি। প্রাচীন মানুষ আগুনকে
ভয় করে এবং ভক্তি করে একের পর এক তেল মাখানো কথা বলেই যাচ্ছে। কিন্তু তারাতো আর
বুঝতে পারেনি যে আগুন তাদের এসব কথা শুনতে পায় না।
প্রাচীন মানুষগুলো
আগুনকে খুশি করার জন্য তাদের পিতার সাথে আগুনকে তুলনা করেছে। বলেছে পিতার কাছে যেমন আবদার নিয়ে যাওয়া যায়
ঠিক তেমনিভাবে তারা আগুনের কাছেও আবদান নিয়ে আসে। আর আগুন নাকি মানুষের মঙ্গলের জন্য মানুষের
পাশে থাকে।
কিন্তু প্রাচীণ মানুষগুলোতো
আর জানতো না যে আগুন শুধু একটা কাজই করতে জানে, আর সেটা হলো পুঁড়িয়ে দেওয়া; সে যা সামনে পায় সেটাই পুড়িয়ে দেয়। মানুষ আগুনকে নিজেদের কল্যাণে ব্যবহার করে। তাই এখানে আগুনের কোন
ভুমিকা নেই। বরং মানুষই ভয়ংকর আগুনকে নিজেদের কল্যাণে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। এটাতে আগুনের কোন
ভুমিকা নেই। কারন আগুনের প্রাণ নেই, আগুন কোন কিছু বুঝতেও পারে না। তাই সে কারো কল্যাণ করার ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু সে মানুষের
ক্ষতি করতে পারে। আগুন নিজের ইচ্ছেতে কিছু করতে পারে না। কারণ তার কোন ইচ্ছাশক্তি নেই। সে কোন জীবন্ত কিছু নয়। সে একটা প্রাণহীন এনার্জি
বা শক্তি মাত্র।
তাই আগুনের কাছে কিছু
চাওয়া, আগুনের কাছে প্রার্থনা করা পৃথিবীর শ্রেষ্ট
বোকামীর একটা। প্রাচীণ মানুষ জানতো না আগুন আসলে কি? তারা ধরেই নিয়েছিল আগুন হলো কোন একটা বুদ্ধিমান স্বত্ত্বা। তাই তারা আগুনকে দেবতা
ভেবেছে, আগুনের পুঁজা করেছে। এবং আগুনের কাছে অর্থহীন প্রার্থনা করেছে। সেই ধারাটাই প্রাচীণ
হিন্দু ধর্মে চলে এসেছে এবং তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ বেদ-এ সেটা সংকলিত হয়েছে। এইসব প্রাচীণ ধ্যান
ধারণা এবং আচার অনুষ্ঠানে প্রাচীণ অজ্ঞতা পরিলক্ষিত হয়। প্রাচীণ মানুষের অজ্ঞতা, অন্ধিবশ্বাস এবং কুসংস্কারগুলো বংশ পরাম্পরায় মানুষের মাঝে
ঔতিহ্য হিসেবে চলে এসেছে।
প্রাচীণ মানুষের হাজারো
কুসংস্কারের মধ্যে আগুনকে পুঁজা করা অন্যতম প্রথা। সেই কুসংস্কারগুলো যুগের পর যুগ ধরে টিকে
থেকে আধুনিক কালেও সেগুলো টিকে গেছে। এসবে মানুষের কুসংস্কার প্রধান ভুমিকা রেখেছে। এই কুসংস্কারগুলো
ধর্মে ঢুকে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ নিয়েছে। এভাবেই এই প্রাচীণ অজ্ঞতাগুলো টিকে থেকেছে। কুসংস্কার হিসেবে সবার
মাধ্যমে জিইয়ে আছে।
আগুন একটি বুদ্ধিহীন
স্বত্ত্বা। সে কারো প্রার্থনা শুনতে পারে না। এবং তার পক্ষে কারো উপকার করা সম্ভব নয়। আগুনের একটাই ধর্ম
বা কাজ; সব কিছুকে পুড়িয়ে দেওয়া। সে যা সামনে পায় পুড়িয়ে
দেয়। এটাই আগুনের ধর্ম বা
গুন। তাই আগুন কারো প্রার্থনা
শুনার ক্ষমতা রাখে না এবং প্রার্থনা পুরণ করার সাধ্য তার নেই।
কিন্তু প্রাচীণ মানুষের
আগুন সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকায় তারা আগুনকে দেবতা ভেবেছে এবং আগুনকে খুশি করার
জন্য তার পুজা করেছে। আর সেগুলোকেই হিন্দু ধর্মের প্রাচীণ অজ্ঞ পুরোহিতরা তাদের ধর্মে স্থান দিয়েছে
আর যুগ যুগ ধরে এসব কুসংস্কারকে তাদের সমাজে টিকিয়ে রেখেছে।
বেদের এই অংশটি পড়লে
এটাই বুঝা যায় যে, প্রাচীণ কালের অজ্ঞ
মানুষরা আগুনকে দেবতার আসনে বসিয়ে দিয়েছে এবং আগুনকে প্রার্থনার কৌশল হিসেবে ব্যবহার
করেছে।
এই কুসংস্কারগুলো
এখনও কিছু কুসংস্কারাচ্ছন্ন হিন্দু আস্তিক অন্ধের মতো বিশ্বাস করে এবং এই অর্থহীন
কথা বা স্তবকগুলো তোতা পাখির মতো পাঠ করে।
আর তাই এইসব ধর্মীয়
অর্থহীন প্রার্থনাগুলো এখনও সমাজে টিকে আছে। কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসগুলো মানুষকে অন্ধ
বানিয়ে রেখেছে।
বেদের কথাগুলো প্রাচীন
মানুষের অজ্ঞতা এবং অন্ধবিশ্বাসজনীত কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। এবং সর্বপরী আধুনিক
মানুষের কাছে কৌতুক সৃষ্টিকারী।
বেদ হিন্দুদের একটি
ধর্মগ্রন্থ, প্রার্থনা মন্ত্র এবং জ্ঞানীদের নিকট একটি কৌতুক গ্রন্থ ও অজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষের
নানা স্তুতি বা কথার সংকলন মাত্র।
No comments:
Post a Comment