আল মুরআল
সূরা মালাওন, আয়াত ১৬৯৯,
"তারা কি বলে যে ওরা
মালাওন ? প্রকৃতপক্ষে তারাই
মালাওন। ওদের মধ্যে এবং তাদের মধ্যে কোন পার্থক্যতো নেই? তারা সবাই অন্ধবিশ্বাসী
ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। ওরা করে মূর্তি পুঁজা আর তারা করে পাথর পুঁজা। গোবরে আর বিষ্ঠাতে কি খুব বেশী পার্থক্য? যদি তারা বুঝতো!"
"তারা ভাবে তারা ওদের
চেয়ে উৎকৃষ্ট, তারা শ্রেষ্ট জাতি এই বিশ্বজগতের। কিন্তু তারা কি জানে তারা কতটা তুচ্ছ এই বিশ্বজগতের কাছে ? বস্তুত তারা একটি পিছিয়ে
পড়া মানব গোষ্ঠি মাত্র। মালুদের থেকে তুচ্ছ মালাওন তারাই। এর চেয়ে বড় নিদর্শন আছে কি?"
ব্যাখ্যাঃ পৃথিবীর
কিছু কিছু কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ ভাবে তারাই বড় মাপের মানুষ। পৃথিবীতে তারাই শ্রেষ্ট জাতি। তারা এটা ভাবে আর নিজেরাই
গর্ববোধ করে। পৃথিবীর অন্যান্য মানব জাতিকে তারা তুচ্ছ জ্ঞান করে। তারা একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্টিকে নিচু শ্রেণীর
মানুষ বলে মনে করে। তারা ভাবে, তারা ওই মানুষদের থেকে উন্নত জাতি। তাই তারা অহংকারে ওদেরকে মালাওন বলে ডেকে তৃপ্তি পায়। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা
বলছেন, তারা উন্নত জাতি নয়। তারাও সেই সব মালাওনদের
মতই নিকৃষ্ট জাতি। যারা অন্ধবিশ্বাস এ কুসংস্কারকে আকড়ে ধরে বসে থাকে এবং নিজেদের কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে
সব চেয়ে বড় করে দেখে তাদের থেকে নিকৃষ্টপ্রাণী বিশ্বজগতে আর নেই। মুলত তারাও (সেই অহঙ্কারী
জাতি) তাদের মতই মালাওনের চেয়েও বড় মালাওন, নিকৃষ্টের চেয়েও বড় নিকৃষ্টতর।
যারা নিজেদেরকে অন্য
মানুষ থেকে শ্রেষ্ট মনে করে এবং তাদের কুসংস্কারকে এবং অন্ধবিশ্বাসকে বড় করে দেখে সৃষ্টিকর্তার
ভাষায় তাদের থেকে বড় নিকৃষ্ট বিশ্বজগতে আর নেই।
তারা (সেই অহঙ্কারী
মানুষগুলো) ভাবে তারা যে কুসংস্কারগুলোকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে চলেছে সেই কুসংস্কারগুলোই
হল বিশ্বজগতের সব থেকে বড় জ্ঞান। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা বলছেন তারা যেটাকে সব চেয়ে বড় জ্ঞান মনে
করছে সেটা সব চেয়ে বড় কুসংস্কার।
কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান
পৃথিবীতে এসে গেছে আর প্রমাণিত হয়ে গেছে প্রকৃত জ্ঞান কোনটা আর কুসংস্কার কোনটা। যারা প্রকৃত জ্ঞানকে
না মেনে কুসংস্কারকে মেনে নেয় তারাই সব থেকে নিকৃষ্ট, তারাই মালাওন (ঘৃনিত জাতি)।
অথচ তারা কুসংস্কারকে
অন্ধবিশ্বাস করে নিজেদেরকে শ্রেষ্ট মনে করছে; ভাবছে তারাই বিশ্বজগতের সব থেকে শ্রেষ্ট জাতি। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা
তাদেরকে বলছেন যে তারা বিশ্বজগতের কাছে কিছুই না। তারা বিশ্বজগতের কাছে তুচ্ছ গোবর বা বিষ্ঠার
মতই তুচ্ছ।
তারা অন্যদেরকে তুচ্ছ
মনে করে কিন্তু সৃষ্টিকর্তা বলছেন তারাওতো ওদের মত (অন্যদের মতো) কুসংস্কারের চর্চা
করে, তারাওতো ওদের মতই
অন্ধবিশ্বাসী কুসংস্কারাচ্ছন্ন। ওরা যেমন মুর্তি পুজার মত ফাল্তু কাজ করে ঠিক তারাওতো একটা
তুচ্ছ পাথরকে পুজা করে। প্রকৃত পক্ষে তারাইতো সব থেকে বড় কুসংস্কারাচ্ছ এই বিশ্বজগতে। তাই সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে
গোবরের সাথে তুলনা করে নিদর্শন স্বরুপ বলেছেন, তারা যাদেরকে নিকৃষ্ট মনে করে তারাও ওদের মতই গোবর বা বিষ্টার
মতই নিকৃষ্ট। এখানে সৃষ্টিকর্তা অহঙ্কারীদেরকে বলছে, তারা যাদেরকে নিকৃষ্ট মনে করে ওরা যদি গোবর হয়ে থাকে তবে তারাও
(অহঙ্কারীরা) বিষ্ঠার সমতুল্য। এই উদাহরনের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা দেখাতে চেয়েছেন যে পৃথিবীর
সব মানুষই একই রকম, একই সম্মান ও মর্যাদার এবং একই রকম শ্রেষ্ট। অর্থাৎ পৃথিবীর সব মানুষই সমান।
সৃষ্টিকর্তা সেই অহঙ্কারীদেরকে
বলছেন তারা বিশ্বজগতের তুলনায় অত্যন্ত তুচ্ছ। আর তাই তাদের অহঙ্কার করা এবং কাউকে তুচ্ছ
মনে করা আসলে তাদের নিজেদেরকে নিকৃষ্ট প্রমাণ করারই সমতুল্য।
সৃষ্টিকর্তা সেই অহঙ্কারী
কুসংস্কারাচ্ছন্ন গোষ্ঠিকে বিশ্বজগতের বিশালতার সাথে নিজেদেরকে তুলনা করে দেখতে বলেছেন তারা আসলে কতটা তুচ্ছ। প্রকৃত জ্ঞানকে তারা
পরিত্যাগ করে তাদের প্রাচীনকালের কুসংস্কারের অজ্ঞানকে আকড়ে ধরে বসে আছে। ফলে তারা পৃথিবীর প্রকৃত জ্ঞানী মানুষদের
থেকে পিছিয়ে পড়ছে। যেখানে পৃথিবীর সব মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে যাচ্ছে, মানুষ পৃথিবী পাড়ি দিয়ে বিশ্বজগতের দিকে হাত বাড়াচ্ছে, সেখানে তারা পড়ে আছে প্রাচীনকালের কিছু অন্ধবিশ্বাসী ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন
জ্ঞানহীন মানুষদের তৈরী করা কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে আকড়ে ধরে। ফলে তারা পিছয়ে পড়ে
গেছে সেই সব জ্ঞান বিজ্ঞানে অগ্রগামী মানুষদের তুলনায়। তারা এই অবস্থা থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করছে
না এমনকি তারা তাদের কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস নিয়ে অহঙ্কার করছে। এজন্যই সৃষ্টিকর্তা
তাদেরকে মালাওনদের থেকেও মালাওন বলে সম্বোধন করেছেন। তাদেরকে সৃষ্টিকর্তা সব থেকে বড় মালাওন বা
নিকৃষ্ট বলছেন।
আর এটাকেই তাদের জন্য
সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে নিদর্শদস্বরুপ দেখিয়েছেন।
এটাই হলো এই দুই আয়াতের
ব্যাখ্যা।
আল মুরআল
সূরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন, আয়াত ৯৪৯, ৯৫০ ও ৯৫১
"যখন তাদের কাছে সত্য জ্ঞানকে (বিজ্ঞানকে) উপস্থাপন করা হয় তখন
তারা বলে, এ সবতো অসম্ভব, সৃষ্টিকর্তা কখনই আমাদেরকে এত নিকৃষ্টতা থেকে সৃষ্টি করেনি। বরং আমরাই জগতের শ্রেষ্ট
সৃষ্টি।"
"বিশ্বজগতের যাবতিয় সব কিছুই আমাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদেরকেই সৃষ্টিকর্তা
সৃষ্টির শ্রেষ্ট রুপে সৃষ্টি করেছেন।"
"কিন্তু তারা জানে না বিশ্বজগতের বিশালতা সম্পর্কে। বস্তুত তারা হল এক
কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধবিশ্বাসী জাতি। তারাই অজ্ঞতায় নিকৃষ্ট জাতি; কুসংস্কারে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি।"
ব্যাখ্যাঃ এই আয়াত
তিনটিতে সৃষ্টিকর্তা বলেছেন যে যখন কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও অন্ধবিশ্বাসীদের কাছে বিজ্ঞানের
প্রমাণিত সত্য সম্পর্কে বলা হয় তখন তারা সেই সত্যকে অস্বীকার করে বলে, "তারা কখনই এটা বিশ্বাস করবে না। তারা কখনই নিকৃষ্ট প্রাণী থেকে বিবর্তিত হতে
পারে না। কারণ তারা বিশ্বজগতের শ্রেষ্ট সৃষ্টি। তাই তারা কখনই কোন নিকৃষ্ট প্রানী থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে আসেনি। তাদেরকে সৃষ্টিকর্তা
শ্রেষ্ট করে সৃষ্টি করেছে।"
তারা আরও দাবী করে
বলে যে, তাদেরকে সৃষ্টিকর্তা শ্রেষ্ট করে সৃষ্টি করেছেন
এবং তাদের জন্যই সমস্ত বিশ্বজগতকে সৃষ্টি করেছেন।
কিন্তু সৃষ্টিকর্তা
বলছেন যে, যারা এমনটা দাবী করে এবং নিজেদেনকে শ্রেষ্ট
সৃষ্টি ভেবে অহংকার করে এবং তারা ভাবে তাদের জন্যই সমস্ত বিশ্বজগতকে সৃষ্টিকরা হয়েছে, তারা আসলে জানে না বিশ্বজগতটা আসলে কত বিশাল, বলেই তারা এমনটা দাবী করে। আসলে বিশ্বজগত অনেক
বিশাল এবং এই বিশ্বজগতকে সৃষ্টি করার মূল উদ্দেশ্য শুধু মানুষ নয়।
তাই সৃষ্টিকর্তা সেই
সব কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও অন্ধবিশ্বাসী মানুষগুলোকে পিছিয়ে পড়া মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত
করেছেন।
এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন
মানুষগুলোকেই সৃষ্টিকর্তা নিকৃষ্ট অজ্ঞ মানুষ বলে সম্বোধন করেছেন।
আমরা যখন পুথিবীতে
তাকাই তখন আসলেই দেখতে পাই যে, যারা কুসংস্কারাচ্ছন্ন
ও অন্ধবিশ্বাসী তারা প্রকৃতই পিছিয়ে পড়া মানুষদের কাতারে প্রথম। অর্থাৎ কুসংস্কারাচ্ছন্ন
ও অন্ধবিশ্বাসী মানুষগুলোই যে সব সময় পিছিয়ে পড়া মানুষ হবে এবং তারাই হবে সব চেয়ে
বেশী অজ্ঞ এটা সৃষ্টিকর্তা অনেক আগেই বলে রেখেছেন। আর আমরা আসলেই দেখতে পাই যে, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষগুলোই জগতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি।
তাই যারা নিজেদেরকে
শ্রেষ্ট সৃষ্টি ভেবে অহংকার করে তারা যেন বিশ্বজগতের বিশালতা সম্পর্কে জেনে রাখে আর
বুঝতে পারে যে তারা নিকৃষ্টতা থেকেই উদ্ভুত হয়েছে। ফলে তারা আর বিজ্ঞানকে অস্বীকার করতে পারবে
না।
এটাই এই আয়াত তিনটির
ব্যাখ্যা।
আল মুরআল
সূরা পিছিয়ে পড়া
জনগোষ্ঠি, আয়াত ১৮৪৬, ১৮৪৭ ও ১৮৪৭
"তাদেরকে যদি
প্রকৃত জ্ঞান দেখানো হয় তবে তারা বলে, এগুলো মিথ্যে কথা বইতো কিছু নয় ! আমরা কখনই এসব মেনে
নেবো না
! আমাদের সৃষ্টিকর্তার
জ্ঞানই সর্ব শ্রেষ্ট জ্ঞান। বাকী সব মিথ্যা। যত প্রমাণই দেখাও সেগুলো কখনই সত্য হবে না। কারণ আমরাই সৃষ্টির
শ্রেষ্ট।"
"যখন তাদের সামনে
দিয়ে অন্য গোষ্ঠির মানুষ যায় তখন তারা বলে, ওরাই পৃথিবীর নিকৃষ্ট মানবগোষ্ঠি,
আর আমরাই মানুষদের
মধ্যে শ্রেষ্ট জাতি।"
"বস্তুত আমি এদেরকে
মূর্খ করে রেখেছি প্রকৃত জ্ঞানীদের জন্য; যেন তারা এদেরকে দেখে অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস সম্পর্কে অবগত থাকে। এই মূর্খ মানুষদেরকে
আমি এজন্য সৃষ্টি করেছি যেন তারা পিছিয়ে পড়া কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও অন্ধবিশ্বাসী মানুষ
হিসেবে যুগ যুগ ধরে মানুষের হাসির পাত্র হয়ে থাকে। এরাই কুসংস্কারে অন্ধবিশ্বাসের ও অজ্ঞতায়
জগতের সব চেয়ে নিকৃষ্ট মানব জাতি।"
ব্যাখ্যাঃ কুসংস্কারাচ্ছন্ন
ও অন্ধবিশ্বাসীদের সামনে যদি বিজ্ঞানের প্রমাণিত সত্যকে দেখানো হয় তবে এরা এটা মেনে
নিতে চায় না। তারা তাদের কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তার মিথ্যে ধারনাকেই একমাত্র সত্য বলে মনে করে। হাজার প্রমাণ হাজির
করলেও তারা তাদের কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসে না।
তাদের সামনে দিয়ে যখন
ভিন্ন মতের বা ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষ যায় তখন তারা অহংকার করে বলে, ওই ভিন্ন ধর্মের মানুষগুলো
নিকৃষ্ট জাতি আর তারা শ্রেষ্ট জাতি।
কিন্তু সৃষ্টিকর্তা
বলছেন তারা বিশ্বজগত সম্পর্কে সঠিক ধারনা রাখে না বলে নিজেদের কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে
নিয়ে অহংকার করে। তারা অজ্ঞ বলেই তাদের কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস নিয়ে তারা নিজেদেরকে শ্রেষ্ট জাতি
মনে করে গর্ব করে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা বলছেন এরা হল জগতের নিকৃষ্টতম জাতি। আর এদেরকে সৃষ্টি করার কারণ হল এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন
ও অন্ধবিশ্বাসী জাতিদের দেখে যেন প্রকৃত জ্ঞানীরা (বাস্তববাদী ও বিজ্ঞান মনষ্করা) কুসংস্কার
ও অন্ধবিশ্বাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।
সৃষ্টিকর্তা এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন
ও অন্ধবিশ্বাসীদেরকে হাসির পাত্র করে রেখেছেন জ্ঞানীদের কাছে। কারণ তারা তাদের কুসংস্কারে ও অন্ধবিশ্বাসে
যেভাবে মগ্ন হয়ে থাকে সেটা জ্ঞানীদের হাসির খোরাক যোগাবে। আর সৃষ্টিকর্তা এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও অন্ধবিশ্বাসী
মানুষগুলোকেই জগতের নিকৃষ্ট সৃষ্টি বলে সম্বোধন করেছেন।
এটাই হলো এই তিনটি
আয়াতের ব্যাখ্যা।
No comments:
Post a Comment