মুসলমানদের আরবীয় সৃষ্টিকর্তা
আল্লাহকে মুসলমানরা সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা বলে দাবী করে। মুসলমানদের দাবী আল্লাহ অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সবকিছুই জানে। বিশ্বজগতের এমন কোন
জ্ঞান নেই যে আল্লাহ সেটা জানে না। অর্থাৎ মুসলমানদের দাবী অনুযায়ী তাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সব
বিষয়েই সব চেয়ে বেশী জ্ঞানী তথা সর্বজ্ঞানী।
কিন্তু দুঃখের বিষয়
যে আল্লাহ বিশ্বজগত সম্পর্কে এবং মানুষের সৃষ্টি, কর্ম এবং আচার আচরণের ব্যাপারে সম্পূর্ণ ভুল
কথা বলেছে। সে পৃথিবী, সূর্য, চন্দ্র ও তারকাদের নিয়ে ভুল কথা বলেছে। আকাশ ও পাহাড় সম্পর্কে
ভুল বলেছে। এমনকি মানব সৃষ্টি ও মানব গঠন সম্পর্কেও ভুল কথা বলেছে।
আল্লাহ কর্তৃক কৃত
ভুলগুলো বিশ্লেষণ করলে এটা বুঝা যায় যে, তার জ্ঞানের সাথে মুহাম্মদের সময়ে আরবের মানুষের জ্ঞানের অবিশ্বাস্য
সাদৃশ্য রয়েছে। যেসব বিষয় মুহাম্মদের সময়ে মানুষ জানতো আল্লাহ কেবল সেসব বিষয় সম্পর্কেই জানতো। আর তারা যেসব বিষয়
জানতো না সেসব আল্লাহর পক্ষেও বলা সম্ভব হয়নি। এমনকি মুহাম্মদের সময়ে মানুষ যেসব ভ্রান্ত
ধারণা পোষন করতো ঠিক সেগুলোই আল্লাহ কুরআনে বর্ননা করেছে। মুহাম্মদ যেসব ভুল ধারণা রাখতো এবং যেসব
ভ্রান্ত ধারণা রাখতো সেসব কথাই আল্লাহ কুরআনে ব্যাক্ত করেছে।
সুতরাং এসব ভুল দেখে
এটা বুঝা যায় যে, আল্লাহর জ্ঞান তৎকালীন আরবের মানুষের জ্ঞানের মতই। আল্লাহ তৎকালীন মানুষের মতই অজ্ঞ ছিল। ঠিক মুহাম্মদের মত
অজ্ঞতা আল্লাহরও ছিল। হয়তোবা মুহাম্মদের থেকেও আল্লাহ বেশী অজ্ঞ।
আমি আগের পর্বগুলোতে
দেখিয়েছি যে, আল্লাহ মুহাম্মদের মতই (বা মুহাম্মদের চেয়েও বেশী) অজ্ঞ। এপর্বেও আরেকটা প্রমাণ দেব যে, আল্লাহ অজ্ঞতায় মহাম্মদকেও
হার মানায়।
কুরআনে বর্ণিত আছে,
সূরা তারিক,
আয়াত ৫, ৬ ও ৭
"সুতরাং মানুষের
লক্ষ করা উচিত যে, তাকে কিসের দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে।"
"তাকে সৃষ্টি
করা হয়েছে প্রবল বেগে নিঃসৃত পানি হতে,"
"যা বের হয় পিঠ
ও বুকের হাড়ের মধ্য হতে।"
এই আয়াতে বলা হয়েছে
মানুষের জন্ম এমন বস্তু থেকে হয় যা প্রবল বেগে নির্গত হয়। আর এই বস্তুটা মানুষের পিঠ ও বুকের হাড়ের
মধ্য থেকে নির্গত হয়। কুরআন এখানে পুরুষের শুক্রানুর কথা বলেছে। কুরআনের দাবী অনুযায়ী শুক্রানু নির্গত হয়
বুক ও পিঠের হাড় থেকে।
এই আয়াতগুলোর অন্যান্য
অনুবাদগুলো হল-
"মানুষ যেন (ভালো করে) দেখে, তাকে কোন জিনিস দিয়ে বানানো হয়েছে; বানানো হয়েছে সবেগে স্থলিত (এক ফোঁটা) পানি থেকে, যা বের হয়ে আসে (পুরুষদের) পিঠের মেরুদন্ড ও (নারীর) বুকের
(পাঁজরের) মাঝখান থেকে।" (অনুবাদ- হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ)
"সুতরাং মানুষ ভেবে দেখুক কিসে থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে
সবেগে স্থলিত পানি থেকে, যা নির্গত হয় মেরুদন্ড
ও বুকের পাঁজরের মধ্য হতে।" (অনুবাদ- ডঃ জহুরুল হক)
"Now let man but think from what he is
created! He is created from a drop emitted- Proceeding from between the
backbone and the ribs:"(অনুবাদ- Abdullah
Yusuf Ali)
"So let man consider from what he is created.
He is created from a gushing fluid. That issued from between the loins and
ribs. (অনুবাদ- Mohammad Marmaduke
Pickthal)
"So let man observe from what he was created.
He was created from a fluid, ejected, Emerging from between the backbone and
the ribs." (অনুবাদ- Saheeh International)
উপরের সবগুলো অনুবাদই
বলছে শুক্রানু নির্গত হয় পিঠের মেরুদন্ড ও বুকের পাঁজরের হাড় থেকে। অর্থাৎ আল্লাহর দাবী
অনুযায়ী শুক্রানু নির্গত হয় পিঠ ও বুকের মাঝের হাড় থেকে। আল্লাহর দাবী অনুযায়ী শুক্রানু তৈরী হয় এবং
নির্গত হয় পিঠ ও বুকের হাড়ের মাঝ থেকে।
কিন্তু আমরা সবাই জানি
শুক্রানু হাড় থেকে নির্গত হয় না এমনকি শুক্রানু তৈরীও হয় না হাড় থেকে। আর পিঠের মেরুদন্ড
ও বুকের পাঁজরের মাঝখানে শুক্র তৈরীর কোন অঙ্গ বা ব্যবস্থাও মানুষের শরীরে নেই। শুক্রানু তৈরী হয় পুরুষের
শুক্রাশয়ে। এবং সেখান থেকেই নির্গত হয়। শুক্রাশয় থাকে মানুষের দেহের নিচের দিকে, কোমরের নিচের অংশে। আর শুক্রাশয় থেকে বুক ও পিঠের মেরুদন্ড ও পাঁজরের হাড় অনেক উঁচুতে
অবস্থান করে। সেখান থেকে শুক্রানু তৈরী হওয়া সম্ভব নয়; আর নির্গত হওয়াতো অনেক দুরের ব্যাপার।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের
ভাষায়, শুক্রানু তৈরী হয় শুক্রাশয়ে। টেস্টিকলে (অন্ডকোষে)
শুক্রানু তৈরীর কার্যক্রম শুরু হয়। টেস্টিকলদুটোতে প্যাঁচানো বা আঁকাবাঁকা তারের মত বা রক্তনালীর মত নালী থাকে। এই নালিকে সেমিনিফেরাস টিউবিউলস্ বলে। এই নালিগুলোতেই মুলত
শুক্রানু তৈরী হয়। সেমিনিফেরাস টিউবিউলস্-এর ঠিক উপরেই অবস্থিত ইপিডিমিস নামের একটা অঙ্গ। এটাকে শুক্র থলি বলা
যায়। কারণ সেমিনিফেরাস টিউবিউলস্
(অর্থাৎ অন্ডকোষ) থেকে শুক্রানু ওই শুক্র থলিতে যায়। এখানেই শুক্রানু পরিপক্ক হয় এবং সন্তান জন্ম
দেবার উপযুক্ত হয়ে উঠে। এখানেই শুক্রানু জমা হয়ে থাকে। আর এই ইপিডিমিস বা শুক্র থলি প্রশ্রাব নালীর সাথে সংযুক্ত থাকে
এবং শুক্রানু এই পথেই বেড়িয়ে যায়। যখন এটি যথেষ্ট উত্তজিত হয়ে উঠে (যৌনক্রিয়ার সময়) তখন এখান থেকে
শুক্রানু নিঃসৃত হয় এবং পুরুষ যৌনাঙ্গ হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। এই শুক্রানু নারীর দেহে প্রবেশ করে এবং ডিম্বানুর
সাথে মিলিত হয়ে ভ্রুন তৈরী করে।
এভাবেই শুক্রানু শুক্রাষয়ে
তৈরী হয়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে
শুক্রানু তৈরী বা নির্গত হওয়ার সাথে বুকের পাঁজর বা পিঠের হাড়ের কোন সম্পর্ক নেই। আবার এদুটোর মাঝের
এমন কোন অঙ্গও নেই যা শুক্রানু তৈরী করতে পারে।
কিন্তু কুরআনে আল্লাহ
বলছে শুক্রানু নির্গত হয় বুকের পাঁজর ও পিঠের মেরুদন্ডের মাঝখান থেকে। অর্থাৎ আল্লাহ সম্পূর্ণ
ভুল ও ভ্রান্ত কথা বলছে।
মুহাম্মদের সময়ে মানুষের
পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না কিভাবে বীর্য তৈরী হয়। সে সময় মানুষ দেখতে পেত বীর্য বেরিয়ে আসে। কিন্তু তারা এটা জানতো
না আসলে এই বীর্য কোথা থেকে আসে। সে সময তাদের পক্ষে সেটা জানা সম্ভবও ছিল না। কিন্তু সে সময়ও মানুষ
ভেবেছে আসলে শুক্রানু কোথায় তৈরী হয় আর কোথা থেকে নির্গত হয়? এসব প্রশ্নের উত্তর
সেই সময়ের মানুষের পক্ষে বের করা সম্ভব ছিল না। কারণ তখন মানুষ মানুষের দেহের গঠন ও কার্যাবলী
সম্পর্কে কিছুই জানতো না।
তাই তারা নিজেদের মত
করে এসব প্রশ্নের কারণ কল্পনা করে নিয়েছে। তারা কল্পনা করেছে যে বুকের মাঝের কোন এক জায়গা থেকেই শুক্রানু
তৈরী হয় এবং সেখান থেকেই বেরিয়ে আসে। কেউ কেউ কল্পনা করেছে শুক্রানু হয়তো বুকের হাড় ও পাঁজরের হাড়
থেকেই হয় এবং সেখান থেকেই নির্গত হয়।
মুহাম্মদও এসব প্রচলিত
ধারণাগুলোর সাথে পরিচিত ছিল। তাই কুরআনের শুক্রানু তৈরীর বর্ণনা এরকম অদ্ভুত হয়েছে। কুরআনের এই ধারণার
সাথে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোন মিল নেই। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে শুক্রানু তৈরী সম্পর্কে
স্পষ্ট বর্ণনা আছে কিভাবে শুক্রানু তৈরী হয়, কোথায় জমা হয় আর কীভাবে শুক্রানু বাইরে বেরিয়ে আসে। এসব কিছু মানুষ সম্পূর্ণভাবে আবিষ্কার করে
ফেলেছে। কিন্তু এসব কথা মুহাম্মদের জানা সম্ভব ছিল না। আর তাই এসব তথ্য আল্লাহর পক্ষে কুরআনে বর্ণনা
করাও সম্ভব হয়নি। বরং আল্লাহ কুরআনে মুহাম্মদের সময়ের মানুষের কল্পনা করা কথাগুলোকেই লিখেছে।
অর্থাৎ মানুষের শুক্রানু
তৈরীর প্রক্রিয়া সম্পর্কে আল্লাহর কোন বাস্তব ধারনাই ছিল না। তাই সে দেড় হাজার বছর আগের ধ্যান ধারণাই কুরআনে
বর্ননা করেছে। আল্লাহ কুরআনে মুহাম্মদের ভ্রান্ত ধারণাগুলোই লিখে দিয়েছে।
শুক্রানু তৈরী ও নির্গত
হওয়া সম্পর্কে কুরআন সম্পুর্ন ভুল কথা বলেছে। কুরআনে মিথ্যে কথা বলা হয়েছে, বাস্তবতা বহির্ভুত কথা লেখা হয়েছে কুরআনে। অর্থাৎ আল্লাহ শুক্রানু
তৈরীর প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখে না। তাইতো সে মুহাম্মদের ভ্রান্ত ধারনাই কুরআনে
লিখে রেখেছে যেটা সম্পূর্ন বিজ্ঞান বিরোধী। অর্থাৎ যে আল্লাহ কুরআন লিখেছে সে সম্পূর্ণ অজ্ঞ বলে সম্পূর্ণ
উল্টাপাল্টা কথা বলেছে কুরআনে। আল্লাহ আসলে অজ্ঞ শুক্রানু তৈরীর প্রক্রিয়ার ব্যাপারে। সে মুহাম্মদের মতই
অজ্ঞতা সম্পন্ন।
অর্থাৎ আল্লাহ আসলে
অজ্ঞতায় মুহাম্মদের মতই।
বি.দ্র.: কুরআন যদি
আল্লাহ নামের কোন অতি বুদ্ধিমান সত্ত্বা লিখতো তবে তাতে এতো ভুল থাকতো না। কুরআন মুহাম্মদ নামের
কোন এক সাধারণ মানুষ লিখেছে বলে এতে এই ভূল তথ্যটি দেওয়া হয়েছে। আর প্রমাণিত হয়েছে
যে, আল্লাহ আসলে মুহাম্মদের মতই অজ্ঞ কেউ। অর্থাৎ অজ্ঞতায় আল্লাহ
মুহাম্মদের সমতুল্ল; হয়তো আরো বেশী অজ্ঞ
সে।
হিরক ন্যায় যুক্তি
ReplyDelete