মুসলমানদের আরবীয় সৃষ্টিকর্তা
আল্লাহ কুরআনে সূরা লোকমান-এর ৩৪ নাম্বার আয়াতে বলেছে,
"নিশ্চয় আল্লাহর
কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রহিয়াছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ
করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকল্য
সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।"
এই আয়াতটিতে অনেকগুলো
ভুল রয়েছে। এই ভূলগুলো লক্ষ করলে বোঝা যায় কুরআনের আল্লাহর জ্ঞান মুহাম্মদের
মতো। আল্লাহ এবং মুহাম্মদ সমান বুদ্ধিমান।
এই আয়াতে কি কি ভূল
আছে সেটা দেখার আগে আয়াতটির অন্যান্য অনুবাদে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।
"নিশ্চয় কিয়ামতের
জ্ঞান শুধু আল্লাহর নিকট রয়েছে, তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যা জরায়ুতে আছে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে তার মৃত্যু
ঘটবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ব বিষয়ে অবহিত।" (অনুবাদ- প্রফেসর ডঃ
মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান)
"নিঃসন্দেহ আল্লাহ্-
তার কাছেই রয়েছে ঘড়িঘন্টার জ্ঞান; আর তিনি বর্ষন করেন বৃষ্টি, আর তিনি জানেন কি আছে
জরায়ুর ভেতরে। আর কোনো সত্ত্বা জানে না কী সে অর্জন করবে আগামীকাল। আর কোনো সত্ত্বা জানে না কোন দেশে সে মারা যাবে। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সর্বজ্ঞাতা, পূর্ণ-ওয়াকিবহাল।" (অনুবাদ- ডঃ জহুরুল
হক)
"কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকট রহিয়াছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যাহা জরায়ুতে আছে। কেহ জানে না আগামীকল্য সে কি অর্জন করিবে এবং কেহ জানে না কোন স্থানে তাহার মৃত্যু
ঘটিবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত।" (অনুবাদ- Ministry of Religious
Affairs)
"Verily the knowledge of
the Hour is with Allah (alone). It is He Who sends down rain, and He Who knows
what is in the wombs. Nor does any one know what it is that he will earn in the
morrow: Nor does any one know in what land he is to die. Verily with Allah is
full knowledge and He is acquainted (with all things). ( অনুবাদ- Ministry of
Religious Affairs)
"Lo! Allah! With Him is knowledge of the Hour. He
sendeth down the rain, and knoweth that which is in the wombs. No soul knoweth
what it will earn to-morrow, and no soul knoweth in what land it will die. Lo!
Allah is Knower, Aware." (অনুবাদ- Mohammad Marmaduke Pickthal)
"Verily the knowledge of the Hour is with Allah
[alone]. It is He Who sends down rain, and He Who knows what is in the wombs.
Nor does any one know what it is that he will earn on the morrow: Nor does any
one know in what land he is to die. Verily with Allah is full knowledge and He
is acquainted [with all things]." (অনুবাদ- Abdullah Yusuf Ali)
"Indeed, Allah (alone) has knowledge of the Hour and
sends down the rain and knows what is in the wombs. And no soul perceives what
it will earn tomorrow, and no soul perceives in what land it will die. Indeed,
Allah is Knowing and Acquainted." (অনুবাদ- Saheeh International)
সবগুলো অনুবাদ বলছে, একমাত্র আল্লাহর কাছে কিয়ামতের বা (অন্যান্য) সময়ের জ্ঞান রয়েছে। আল্লাহই বৃষ্টি পাঠায় বা বর্ষণ করে। কেউ জানে না মায়ের
গর্ভে কি আছে? মায়ের পেটে ছেলে আছে নাকি মেয়ে আছে সেটা কেউ আগে থেকে জানে না একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। কেউ জানে না আগামীকাল অর্থাৎ ভবিষ্যতে সে কি উপার্জন করবে। আর কেউই জানে না কোন স্থানে বা কোন দেশে সে মারা যাবে। আর এই সব কিছু এক মাত্র আল্লাহ জানে বলে সে সর্বজ্ঞ, সর্বজ্ঞানী।
প্রাচীণ কালে মানুষের
জীবন ছিল অনিশ্চিত। যুদ্ধ-বিদ্রোহ, মারামারি-খুনখুনি, যুলুম-ধর্ষন এবং নানা
রকমের রোগে আক্রান্ত হওয়া প্রভৃতি সব রকমের দুর্ঘটনা ও খারাপ কাজ সর্বচ্চ মাত্রায়
সংঘটিত হত। আর তাই মানুষের জীবন ছিল একেবারে অনিশ্চিত। ফলে কারো পক্ষেই জানা সম্ভব ছিল না আগামীকাল বা ভবিষ্যতে সে কি উপার্জন করবে। তখন জন্ম মৃত্যু ছিল অনিশ্চিত, ফলে কেই জানতো না কোথায় সে মারা যাবে। সেই সময় মানুষ এতোটা
উন্নত ছিল না । আর তাই তারা জানতো না সময় সম্পর্কে, ঝড়-বৃষ্টি সম্পর্কে জানতো না কোন কিছুই। ফলে সেই সময়ের জন্য এই আয়াতের কথাগুলো প্রযোজ্য ছিল সম্পূর্ন সত্যি রুপে। যেমন সে সময়ের মানুষ সত্যিই জানতো না মায়ের পেটে বাচ্চা ছেলে নাকি মেয়ে; সন্তান নাকি অন্য কিছু। সেই সময়ে মানুষ সত্যি জানতো না বিশ্বজগতের সৃষ্টি প্রক্রিয়া এবং এর ধ্বংস প্রক্রিয়া। আর তাই মানুষ ভাবতো সৃষ্টিকর্তাই এক মাত্র এই সব কিছু সম্পর্কে জানে। আর কেউ জানে না।
আর তাই এটাকে তারা
সৃষ্টিকর্তার সর্বশক্তিমত্ত্বা হিসেবে ধরে নিতো। তারা সৃষ্টিকর্তাকে সর্বজ্ঞ এবং সর্বজ্ঞানী হিসেবে কল্পনা করতো।
ফলে মুহাম্মদের সময়ে
কুরআনের এই কতাগুলোকে মানুষ সত্যি মনে করতো।
কিন্তু এই কতাগুলো
সেই সময়ের জন্য প্রযোজ্য হলেও বর্তমান সময়ের জন্য সত্যি নয়। কারণ বর্তমানে মানুষ জানে সময় সম্পর্কে, বিশ্বজগত সম্পর্কে। কখন বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে এবং কখন ধ্বংস হবে সেটা মানুষ অনুমান
করতে পারে। এবং ভবিষ্যতে মানুষ একদম ঠিকঠাক ভাবে বিশ্বজগত ধ্বংস হবে কিনা
সেটা সঠিক ভাবে বলতে পারবে। আর তাই বর্তমান যুগে
কুরআনের এই কথাটি সত্যি নয়।
আবার বর্তমান সময়ে
মানুষ জানে কেন বৃষ্টি হয় এবং বিভাবে হয়। মানুষ জানে, কোন অতিক্ষমতাবাণ সৃষ্টিকর্তা আকাশ থেকে বৃষ্টি পাঠায় না বা
বর্ষণ করে না। বৃষ্টি হয় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নিয়মে কারো হস্তক্ষেপ ছাড়াই। ফলে আল্লাহই বৃষ্টি পাঠায় বা বর্ষণ করে কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যে। মানুষ বর্তমানে আগে থেকেই বলে দিতে পারে কখন বৃষ্টি হবে, কখন ঝড় হবে। আবহাওয়া বিভাগ অনেক
আগে থেকেই বলে দিতে পারে কখন ঝড়-বৃষ্টি হবে সেই কথা। আবার ভবিষ্যতে বিজ্ঞান যখন আরো অনেক বেশী উন্নত হবে তখন কখন ঝড়-বৃষ্টি হবে সেটা
অনেক আগে থেকেই বলে দিতে পারবে। এমনকি এক বছর বা দশ
বছর পরে কখন বৃষ্টি হবে সেটাও জানা মানুষের জন্য খুব সহজ হয়ে যাবে। আর তাই কুরআনের এই কথাটি মুহাম্মদের সময়ের জন্য সত্যি হলেও এই সময়ের জন্য সম্পূর্ণ
মিথ্যে।
আবার বর্তমানের মানুষ
জানে সে আগামীকাল কি উপার্জন করবে। আধুনিক বিজ্ঞান ব্যবহার
করে মানুষ আগামীকালের উপার্জনতো জানতে পারেই বরং পাঁচ বছর বা দশ বছর পরে কি পরিমান
উপার্জন করবে সেটা হিসেব করে বলে দিতে পারে। আর যারা চাকরি করে
তারা জানে তারা সামনের মাসে অথবা এক বছর বা পাঁচ বছর পরে কি পরিমান উপার্জন করবে। কিন্তু কুরআনে বলা হয়েছে এটা কেউই জানতে পারবে না। কথাটা মুহাম্মদের সময়ে সত্যি ছিল । কারণ তখন বর্তমানের
মত আধুনিক জ্ঞান ছিল না । আর মানুষের জীবন ছিল অনিশ্চিত। ফলে কারোই পক্ষে এটা আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব ছিল না যে সে ভবিষ্যতে কি পরিমান
উপার্জন করবে। আর তাই কুরআনের এই কথাটি মুহাম্মদের সময়ে সত্যি হলেও এই সময়ের
জন্য সম্পূর্ণ মিথ্যে।
আবার মায়ের গর্ভে কি
আছে সেটা আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক আগে থেকেই মানুষ জানতে পারে । আল্ট্রাসনোগ্রাম টেকনোলজি ব্যবহার করে মানুষ আগেই বলে দিতে পারে সন্তান ছেলে
হবে নাকি মেয়ে হবে। কিন্তু মুহাম্মদের সময়ে মানুষ এটা জানতে পারতো না বলে কুরআনের
কথাটি সেই সময়ের জন্য প্রযোজ্য হলেও বর্তমানের জন্য সম্পূর্ণ মিথ্যে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের যেভাবে অগ্রগতি হচ্ছে তাতে আগামী ৫০ বছর বা ১০০ বছর পরে মানুষ
অনেক আগে থেকেই জন্ম-মৃত্যু নিয়ন্ত্রন করতে পারবে সম্পূর্ণ ভাবে। আর মায়ের গর্ভের সন্তান দেখতে কেমন হবে, তার আচরণ কেমন হবে সেটাও অনেক আগে থেকে বলতে পারবে। ফলে কুরআনে বর্ণিত এই আয়াতের কথাগুলো সম্পর্নরুপেই মিথ্যে কথা।
আবার মুহাম্মদের সময়ে
যুদ্ধ বিগ্রহ এবং নানাবিধ রোগের কারণে মানুষের মুত্যু কখন কিভাবে হবে সেটা কেউ বলতে
পারতো না। কেউই জানতো না কোথায় কোন অবস্থায় সে মারা যাবে। কিন্তু বর্তমানে মানুষের সমাজ ব্যবস্থা অনেক নিরাপদ হওয়ায় মানুষ এখন আগে থেকেই
জানতে পারে কোথায় তার মৃত্যু হবে। এমন কি চিকিৎসকরা মানুষের
মৃত্যুর দিনক্ষনও বলে দিতে পারে। ফলে কেউ জানে না কোন
দেশে বা স্থানে তার মৃত্যু হবে কথাটি মিথ্যে। এমনকি চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর্যপরি উন্নতির কারণে অচিরেই এমন দিন আসবে যখন মানুষ
জন্ম মৃত্যুর দিন ও ক্ষন তো বলতে পারবেই উপরন্তু মানুষের জীবন মৃত্যু নিয়ন্ত্রনও করতে পারবে। বর্তমানে আইসিইউ ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষের মৃত্যুকে অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রন করা যায়। ভবিষ্যতে এটা আরো বেশী মাত্রায় সম্ভব হবে। আর তাই কুরআনের কথাটি একদম মিথ্যে।
কুরআনে বর্ণিত এই আয়াতটি
মুহাম্মদের সময়ের জন্য পুরোপুরি সত্য ছিল। কারণ সেই সময়ে মানুষ
ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান বঞ্চিত এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রোগশোকে জর্জরিত।
ফলে মুহাম্মদের সময়ের
জন্য উপরিউক্ত আয়াতটি ছিল পুরোপুরি সত্য ।
কিন্তু বর্তমানে এই
আয়াতটি সময়ের সাথে সাথে সব কিছু পরিবর্তরের কারণে একেবারে মিথ্যে হয়ে গেছে। এবং ভবিষ্যতে মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আরো উন্নত হলে এই আয়াতটি মিথ্যে
হয়ে যাবে সম্পূর্নরুপে।
কুরআনের এই আয়াতটি
ইতি মধ্যেই মিথ্যে প্রমাণিত হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে সম্পূর্ণরুপে মিথ্যে হয়ে যাবে।
অর্থাৎ কুরআনের আয়াতটি
সব সময়ের জন্য সত্যি নয়। এই আয়াতটি দিয়ে মুহাম্মদের সময়ের মানুষের ধারনা প্রতিফলিত হয়েছে। সেই সময়ে মুহাম্মদ যেটাকে মানুষের পক্ষে অসম্ভব মনে করেছে সেটাই কুরআনে উল্লেখ
করা হয়েছে। কিন্তু কুরআনের আল্লাহ জানতো না যে এক সময় এই কথাটি সত্যি থাকবে
না। মানুষ এক সময় এই আয়াতের সব কিছুই জানতে পারবে ঠিক আল্লাহ যেভাবে
দাবী করেছে সেভাবেই। ফলে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না ওই আয়াতের এই অংশটুকু সম্পূর্ণরুপে
মিথ্যে হয়ে গেছে।
কিন্তু যদি আল্লাহ
আসলেই সর্বজ্ঞাতা বা সব কিছু সম্পর্কেই জানতো তবে সে একথা বলতো না যে, কেউ জানে না এগুলো। মুহাম্মদ যেমন ধারণা
করতে পারেনি যে মানুষ আল্লাহর ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে ঠিক সেভাবে কুরআনের আল্লাহর
পক্ষেও জানা সম্ভব ছিল না যে মানুষ সত্য সত্যই এই ক্ষমতাগুলো অর্জন করবে, আর আল্লাহর
কথা মিথ্যে হয়ে যাবে।
কুরআন মুহাম্মদ লিখেছে
বলে সে যেটা জানতো না আল্লাহর পক্ষেও সেটা জানা সম্ভব ছিল না। মুহাম্মদ যেটা জানতো কুরআনে সেটাই বলা হয়েছে। আল্লাহ মুহাম্মদের মতই অজ্ঞ ছিল বলে মুহাম্মদ যেটা জানতো না সেটা আল্লাহও জানতো
না। এর একমাত্র কারণ মুহাম্মদ নিজেই হল আল্লাহ।
ফলে মুহাম্মদ যেমন
অজ্ঞ, আল্লাহও সে রকম অজ্ঞ।
আপনার এই ভুল ধারণার উত্তর আমার কাছে আছে। আপনি চাইলে আমার সাথে আলোচনা করতে পারেন। ( লাইভে)
ReplyDeleteভাই এখানেই উত্তর দেন না।তাইলে সবাই জানতে পারতাম কে ভুল কে সঠিক।
Delete