আস্তিকদের দাবী বিশ্বজগত, প্রাণীজগত ও জড়জগতকে একজন সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা
সৃষ্টি করেছে। কিন্তু সেই সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তাকে কেউ
সৃষ্টি করেনি। কারণ হলো সেই সৃষ্টিকর্তাকে সৃষ্টি করার
প্রয়োজন হয়নি কিন্তু বিশ্বজগতের সব কিছুকে সৃষ্টি করার প্রয়োজন হয়েছে।
বিশ্বজগতের সব কিছুকে
কেন সৃষ্টি করার দরকার পরলো? সৃষ্টি না করলে কি
এগুলো থাকতে পারতো না? সৃষ্টি করা ছাড়া কি
এদের অস্তিত্ব থাকতো না?
আস্তিকরা এই প্রশ্নের খুব হাস্যকর উত্তর দেয়। তারা বলে, সৃষ্টি থাকলে সেই সৃষ্টির অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা
থাকতে হবে। কোন কিছুকে সৃষ্টি করা ছাড়া সেটা অস্তিত্বশীল
হতে পারে না। সৃষ্টি থাকলে অবশ্যই সেই সৃষ্ট বস্তু বা উপাদানকে
সৃষ্টি হতেই হবে। সৃষ্টি করা ছাড়া কোন কিছুই সৃষ্ট হতে পারবে
না।
কোন অস্তিত্বশীল জিনিসকে
কেন সৃষ্টি করতে হবে? সৃষ্টি করা ছাড়া কোন
জিনিস চিরকাল থেকে অস্তিত্বশীল থাকতে পারে না কি?
আস্তিকদের উত্তর- না পারে না। কোন কিছুকে অস্তিত্বশীল
থাকতে হলে অবশ্যই তাকে সৃষ্টি করতে হবে। বিশ্বজগতের সব অস্তিত্বশীল
উপাদানই সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছেন। সে যদি এসব সৃষ্টি
না করতো তবে কোন কিছুই থাকতো না। কারণ সৃষ্টি করা ছাড়া
কোন কিছু এমনি এমনি সৃষ্টি হতে পারে না।
কেন পারবে না? কোন কিছু সৃষ্টি হওয়া ছাড়া চিরকাল ধরে অস্তিত্বশীল
থাকলে সমস্যা কি? এমনটা কি হতে পারে
না যে, বিশ্বজগতের সব উপাদান
চিরকাল ধরে সৃষ্ট হওয়াই ছিল; কেউ এগুলোকে সৃষ্টি
করেনি; তাই কোন সৃষ্টিকর্তারও
দরকার পরেনি?
আস্তিকদের উত্তর- না চিরকাল ধরে বিশ্বজগতের উপাদান অস্তিত্বশীল
থাকতে পারবে না। অবশ্যই তার একজন সৃষ্টিকর্তা থাকতে হবে। তা না হলে এসব কিছু
সৃষ্টি হতে পারবে না।
কিন্তু এসব কিছুকে
সৃষ্টি করার প্রয়োজনটাই বা কি? এসব উপাদান চিরকাল
ধরে থাকলে সমস্যা কোথায়?
আস্তিকদের উত্তর- সমস্যা
আছে। কোন কিছু সৃষ্টি করা ছাড়া কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। তাই যা কিছু অস্তিত্বশীল
তার সব কিছু কাউকে অবশ্যই সৃষ্টি করতে হবে এবং এজন্যই একজন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকবে।
কিন্তু কেন কোন কিছু
সৃষ্টি করা ছাড়া অস্তিত্বশীল হতে পারবে না সেটাইতো জানতে চাচ্ছি?
আস্তিকদের উত্তর- কারণ
সৃষ্টি করা ছাড়া কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। অস্তিত্বশীল থাকলে
তাকে অবশ্যই সৃষ্টি হতে হবে। আর সৃষ্টিকর্তা সব
কিছুকে সৃষ্টি করে থাকে।
তাহলে আপনি বলছেন কোন
কিছু সৃষ্টি করা ছাড়া সেটি অস্তিত্বশীল হতে পারে না। অর্থাৎ সব কিছুকে সৃষ্টি
হতেই হবে?
আস্তিকদের উত্তর- হ্যা
ঠিক তাই। আর যিনি সব কিছুকে সৃষ্টি করেন তিনিই হলো
সৃষ্টিকর্তা।
তাহলে সেই সৃষ্টিকর্তার
সৃষ্টিকর্তা কে? আপনি বলেছেন সৃষ্টি
থাকলে তার সৃষ্টিকর্তা থাকবেই; অস্তিত্বশীল হতে হলে
তাকে সৃষ্টি হতেই হবে; তাহলেতো সেই সৃষ্টিকর্তারও একজন সৃষ্টিকর্তা
থাকতে হবে। তা না হলেতো সেও সৃষ্টি হতে পারবে না; তাই সে অস্তিত্বশীলও হতে পারবে না।
এ পর্যায়ে এসে আস্তিকরা
আমতা আমতা করতে থাকে। তারা আমতা আমতা করে বলে- না সৃষ্টিকর্তার
কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। কারণ সে সৃষ্টিকর্তা। আর তাই সৃষ্টিকর্তার
কোন সৃষ্টিকর্তা থাকতে পারে না।
আমি ভেবেছি আপনি বলেছেন, যা কিছু অস্তিত্বশীল তার সব কিছুকেই সৃষ্টি
করতে হবে তা না হলে সেটা অস্তিত্বশীর হতে পারবে না।
তখন আস্তিকরা বলতে
থাকে, না সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। সৃষ্টিকর্তা অন্য কোন
সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই অস্তিত্বশীল হয়েছেন। এবং তার সৃষ্টি হবার
প্রয়োজন নেই।
কিন্তু কেন সৃষ্টিকর্তার
সৃষ্টি হবার প্রয়োজন নেই সেই প্রশ্নের উত্তর তারা দিতে পারে না।
যদি সৃষ্টিকর্তা কোন
সৃষ্টিকর্তার হস্তক্ষেপ ছাড়াই সৃষ্টি হতে পারে তবে বিশ্বজগতের সব কিছু কেন কোন সৃষ্টিকর্তা
ছাড়া অস্তিত্বশীল হতে পারবে না? কেন তার একজন সৃষ্টিকর্তা
থাকতেই হবে যেখানে সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই?
আজ পর্যন্ত এই প্রশ্নটির
কোন যৌক্তিক উত্তর আস্তিকরা দিতে পারেনি। তারা শুধু বলেছে, সৃষ্টিকর্তা হলো স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা তাই তার
কোন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই।
কিন্তু যুক্তিবাদী
ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ মনে করে যদি সৃষ্টিকর্তা ছাড়া বিশ্বজগত সৃষ্টি হতে না পারে তবে
সেই সৃষ্টিকর্তাও কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারবে না। আর যদি সেই সৃষ্টিকর্তা
কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই সৃষ্টি হতে পারে তবে বিশ্বজগতের সব উপাদানেরও সৃষ্টিকর্তা ছাড়া
সৃষ্টি হতে কোন সমস্যা নেই।
এখন প্রশ্ন হলো, সত্যিই কি কোন কিছু
সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক সৃষ্টি হওয়া ছাড়া সৃষ্ট হতে পারে না অথবা অস্তিত্বশীল থাকতে পারে
না?
আস্তিকদের দাবী অনুযায়ী
সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি হয়নি। সে চিরকাল ধরেই বিরাজমান ছিল কোন সৃষ্টিকর্তা
ছাড়াই। তাহলে যদি সৃষ্টিকর্তা অন্য কোন সৃষ্টিকর্তা
ছাড়াই সৃষ্টি হতে পারে এবং বিরাজমান থাকতে পারে তবে অবশ্যই বিশ্বজগত কোন সৃষ্টিকর্তা
ছাড়াই সৃষ্টি হতে পারবে অথবা বিরাজমান থাকতে পারবে।
যদি বিশ্বজগতের সব
উপাদান চিরদিন ধরে বিরাজ মান থাকে তবে আর সৃষ্টিকর্তার দরকার হয় না; যেমনটা আস্তিকরা সৃষ্টিকর্তার
ক্ষেত্রে বলে থাকে যে সৃষ্টিকর্তা কোন সৃষ্টিকর্তার সাহায্য ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে এবং
বেঁচে থাকতে পারছে। ঠিক একই ভাবে বিশ্বজগতও সৃষ্টিকর্তার হস্তক্ষেপ
ছাড়াই সৃষ্ট হতে পারবে অথবা বিরাজমান থাকতে পারবে এবং সৃষ্টিকর্তার কোনরুপ সাহায্য
ছাড়াই বিশ্বজগত তার আপন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চলতে পারবে। যেমনটা আস্তিকদের দাবী
অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তা নিজে নিজেই সৃষ্ট হয়ে নিজে নিজে বিরাজমান থাকে এবং সব রকম ক্রিয়া
সম্পাদন করে থাকে, ঠিক একই ভাবে বিশ্বজগত তার নিজস্ব গুন বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী
চিরকাল যাবৎ বিরাজমান থেকেছে এবং চিরকাল ধরে বিরাজমান থাকবে।
আর তাই বিশ্বজগতের
সব ক্রিয়া সম্পাদনেও সৃষ্টিকর্তার হস্তক্ষেপের কোন প্রয়োজন নেই।
আমরা জানি বিশ্বজগত
বিরাজমান থাকে এবং সব রকমের কাজ সম্পাদন করে বিশ্বজগতের উপাদানের নিজস্ব ধর্ম, গুণ এবং বৈশিষ্ট্য
অনুযায়ী। অর্থাৎ বিশ্বজগত চলে তার নিজের গুনাবলী বা
ধর্মের জন্য এবং এই গুন বা ধর্ম পদার্থবিজ্ঞানের সুত্র অনুযায়ী ঘটে। পদার্থবিজ্ঞানের সুত্র
মতেই বিশ্বজগতের যাত্রা শুরু হয়েছিল। পদার্থের একটি ধর্ম
হলো শক্তি বা এনার্জির সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই। সব এনার্জি বা শক্তি
সর্বদা বিরাজমান থাকে এবং তাদের মধ্যে যত ক্রিয়া কলাপই ঘটুক না কেন সেগুলো ধ্বংস হয়
না, এমনকি এনার্জি বা শক্তিকে
সৃষ্টিও করা যায় না।
আবার এনার্জি বা শক্তি
মিলিত হয়ে পদার্থ তৈরী করতে পারে এবং পদার্থ ভেঙ্গে যেয়ে শক্তিতে রুপান্তরিত হতে পারে।
আর সেভাবেই বিশ্বজগত
সৃষ্টি হয়েছিল। শক্তি জমাট বাধা অবস্থায় বৃহৎ বিষ্ফোরণ ঘটেছিল
সৃষ্টির আদিতে। আর সেই বিষ্ফোরনের ফলে শক্তি চার দিকে ছড়িয়ে
পরেছিল এবং একটা নির্দিষ্ট গতিতে চারদিকে ছুঠে যাচ্ছে। এই শক্তি শীতল হয়ে
পদার্থের সৃষ্টি করেছিল। আর এই পদার্থগুলো একত্রিত হয়ে তারকা, গ্রহ উপগ্রহ সৃষ্টি
করেছিল। এমনই এক গ্রহ পৃথিবীতে প্রকৃতির নিয়মে এবং
বিজ্ঞানের সুত্র মেনে জড় পদার্থ থেকে প্রথমে জৈব জড় এবং পরে জীব বা প্রাণের সৃষ্টি
হয়েছিল। আর সেই জীব থেকে আজকের জীবজগত সৃষ্টি হয়েছিল
কোন সৃষ্টিকর্তার হস্তক্ষেপ ছাড়াই।
অর্থাৎ বিশ্বজগতের
সৃষ্টির আদি মুহুর্ত থেকে বর্তমান পর্যন্ত সময়ে সৃষ্টিকর্তা কোন ভুমিকাই রাখেনি। এবং বিশ্বজগতের বিরাজমান
থাকায় সৃষ্টিকর্তার কোন ভুমিকাই নেই।
তাহলে একথা বলাই যায়
যে, সৃষ্টিকর্তা বলে আসলে
কেউ নেই। যদি থাকতোই তবে বিশ্বজগত সৃষ্টির সময় থেকে
শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত সৃষ্টিকর্তা কোন ভুমিকা রাখেনি কেন?
এর উত্তর একটাই, সেটা হলো আসলে সৃষ্টিকর্তার
কোন অস্তিত্ব নেই, তাই সে বিশ্বজগত সৃষ্টি
থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কোন ভুমিকাই রাখতে পারেনি।
যেহেতু আস্তিকদের দাবী
অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তা অন্য কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই সৃষ্টি হতে পারে এবং বিরাজমান হতে
পারে তবে সেই একই শর্ত অনুযায়ী বিশ্বজগতের মোট উপাদানও কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি
হতে পারে এবং সৃষ্টিকর্তার সহযোগিতা ছাড়াই বিরাজমান হতে পারে।
আবার যেহেতু বিশ্বজগত
সৃষ্টিতে এবং বিশ্বজগতের সব কার্য সমাধানে সৃষ্টিকর্তার কোন ভুমিকা নেই অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা
কোন ভুমিকা রাখতে পারেনি তাই একথাটাই প্রমাণিত হয় যে, সৃষ্টিকর্তা বলে আসলে
কেউ নেই। মানুষ সৃষ্টিকর্তার মতো এক কাল্পনিক চরিত্রকে
সৃষ্টি করে সর্বশক্তিমাণ সৃষ্টিকর্তার আসনে বসিয়েছে। কিন্তু এই সৃষ্টিকর্তার
বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই। এই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব
শুধুই মানুষের মনের কল্পনার জগতেই আছে। বাস্তব জগতে নেই।
আস্তিকরা দাবী করে
থাকে যে, তাদের কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তা
সর্বশক্তিমান, পরম দয়ালু, সর্বজ্ঞানী বা সর্বজ্ঞাতা
অর্থাৎ অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সব কিছুই সৃষ্টিকর্তা জানে।
এই দাবীগুলো অবাস্তব
এবং হাস্যকর।
প্রথমে সর্ব শক্তিমান
বিষয়টিকে নিয়ে আলোচনা করা যাক। কেউ কি সর্বশক্তিমাণ
হবার ক্ষমতা রাখে? উত্তরটি হবে না কেই
সর্বশক্তিমান হবার ক্ষমতা রাখতে পারবে না। কেননা সর্বশক্তিমান
বিষয়টিই অবাস্তব, অযৌক্তিক এবং অবৈজ্ঞানিক।
যদি কেউ সর্বশক্তিমান
হয় তবে তাকে সব কিছুই করতে সক্ষম হতে হবে। যদি সে কোন একটি কাজও
করতে না পারে তবে সে আর সর্বশক্তিমান থাকতে পারবে না।
কিন্তু কোন স্বত্বার
পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব নয়। একটা উদাহরণের মাধ্যমে
বিষয়টা বুঝা যাক। সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা কি তার থেকেও অধিক
ক্ষমতাবাণ কাউকে সৃষ্টি করতে পারবে?
এই প্রশ্নটির উত্তর
যেটাই হোক না কেন, সেটা সর্বশক্তিমান
সৃষ্টিকর্তার বিপক্ষেই যাবে। যদি এর উত্তরে বলা
হয় যে, হ্যাঁ, সৃষ্টিকর্তা তার থেকেও
অধিক ক্ষমতাবাণ কাউকে সৃষ্টি করতে সক্ষম। তাহলে দেখা যাবে যে
সৃষ্টিকর্তার থেকেও কেউ বেশী ক্ষমতাবাণ হতে পারে। অর্থাৎ সেই সর্বশক্তিমান
সৃষ্টিকর্তাটি আসলে সর্বশক্তিমান নয়।
আবার যদি প্রশ্নটির
উত্তরে বলা হয় যে, না সৃষ্টিকর্তা তার
থেকে অধিক ক্ষমতাবাণ কাউকে সৃষ্টি করতে পারে না। তবুও প্রমাণিত হবে
যে সেই সৃষ্টিকর্তা আসলে প্রকৃত সর্বশক্তিমান নয় কারণ সে তার থেকে অধিক ক্ষমতাবান কাউকে
সৃষ্টি করতে পারে না। তাই সে সর্বশক্তিমান নয়।
ঠিক একই ভাবে বলা যায়, সৃষ্টিকর্তা কি এমন
ভারী জিনিস তৈরী করতে পারে যেটা সে নিজেই তুলতে পারবে না? এক্ষেত্রেও সৃষ্টিকর্তা
সর্বশক্তিমান হতে পারবে না।
সৃষ্টিকর্তা কি এমনটা
করতে পারে যে তার কোন অস্তিত্বই কখনও ছিল না। এক্ষেত্রেও সৃষ্টিকর্তার
সর্বশক্তিমানত্বকে মিথ্যে প্রমাণ করে।
অর্থাৎ সর্বশক্তিমান
সৃষ্টিকর্তার ধারণাটাই অযৌক্তিক, অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক।
ঠিক একই ভাবে সৃষ্টিকর্তার
পক্ষে পরমদয়ালু বা সর্বজ্ঞাতা হওয়াও সম্ভব নয়। কারন সৃষ্টিকর্তা যে
দয়ালু নয় সেটা বাস্তব ইতিহাসই প্রমাণ। হাজার হাজার অসহায়
মানুষ দুর্যোগে, দুর্ভোগে, অত্যাচারে, যন্ত্রনায়, না খেতে পেয়ে মারা
যায় কিন্তু কোন সৃষ্টিকর্তার কোন রুপ দয়া, সাহায্য আসে না। যদি সৃষ্টিকর্তা বলে
কেউ থেকেই থাকতো যে কিনা দয়ালু তবে কি মানুষ এমন করে নিষ্ঠুরভাবে মরতে পারতো?
এগুলোই প্রমাণ করে
যে কোন দয়ালু সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নেই।
আবার যৌক্তিক ক্ষেত্রেও
কোন সৃষ্টিকর্তার পক্ষে দয়ালু হওয়া সম্ভব নয় যদি সে সর্বজ্ঞাতা বা সর্বজ্ঞ হয়ে থাকে। ধরি সৃষ্টিকর্তা জানে
যে ১৩.৫ বিলিয়ন বছর পর একটি ঝড় এসে অনেক মানুষকে মেরে ফেলবে। যদি সৃষ্টিকর্তা দয়ালু
হয়ে থাকে তবে সে সেই ঝড় থেকে মানুষকে বাঁচাবে। ফলে কোন মানুষই মরতে
পারবে না। কারণ মরণ বিষয়টিই যন্ত্রনার। যদি সৃষ্টিকর্তা পরম
দয়ালুই হয় তবে সে কখনই কোন মানুষকে মেরে ফেলতে পারে না। আবার যেহেতু সৃষ্টিকর্তা
নিজে সেই ঝড় সৃষ্টি করেছে তাই সৃষ্টিকর্তা নিজেই হিংস্র, দয়ামায়াহীন।
অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা
আসলে দয়াময় নয়।
আবার সৃষ্টিকর্তা জানে
যে একটা ঝড় এসে সব মানুষকে মেরে ফেলবে, বা একটা মানুষকে নৃসংশ ভাবে হত্যা করা হবে
অথবা একটা মেয়েকে অনেকে ধর্ষন করে মেরে ফেলবে কারণ সৃষ্টিকর্তা সর্বজ্ঞানী। তাহলে সে অসহায় মানুষকে
বাঁচাতে এগিয়ে আসেনা কেন? যেহেতু সব জানার পরেও সৃষ্টিকর্তা অন্যায় চুপচাপ দেখে কিন্তু
কিছু বলে না তাই সে পরম দয়ালু নয়।
সৃষ্টিকর্তার পক্ষে
কি সর্বশক্তিমান হওয়া সম্ভব যখন সে নিজেই সর্বজ্ঞাতা বা সর্বজ্ঞানী। সর্বজ্ঞাতা মানে হলো
সৃষ্টিকর্তা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের
সব কিছুই আগে থেকেই জানে। তাহলে যদি সৃষ্টিকর্তা আগে থেকেই জানে যে, প্রতিটা ঘটনা কিভাবে
ঘটবে তবে সে সেই ঘটনাটিকে অন্য ভাবে ঘটানোর ক্ষমতা রাখতে পারবে না। কারণ এক্ষেত্রে ঘটনা
বদলে যাবে যেটা সৃষ্টিকর্তার আগে থেকে জানাটাকে ভুল প্রমাণ করবে। ফলে সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান
হলে সর্বজ্ঞাতা হতে পারবে না। আবার যদি একটি ঘটনা
এক ভাবে ঘটে বলে সৃষ্টিকর্তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখে, তবে সেই সৃষ্টিকর্তার
পক্ষে সম্ভব হবে না সেই ঘটনাটিকে বদলে দিতে। কারণ যদি সৃষ্টিকর্তা
কোন ঘটনাকে বদলে দেয় তবে সৃষ্টিকর্তা সেই ঘটনাকে যে ভাবে ঘটবে বলে আগে থেকেই জানতো
সেটি পরিবর্তিত হয়ে যাবে। আবার যদি কোন ঘটনাকে সৃষ্টিকর্তা পরিবর্তিত
করে দিতে না পারে তবে সে আর সর্বশক্তিমান থাকতে পারবে না। কারণ তখন সে কোন নির্দিষ্ট
ঘটনাকে পরিবর্তন করতে অক্ষম, অর্থাৎ সে আর সর্বশক্তিমান নেই। আবার যদি সে সর্বশক্তিমান
হয় অর্থাৎ কোন ঘটনাকে যে কোন মূহুর্তে বদলে দিতে পারে তবে তার পক্ষে আর সেই ঘটনাটিকে
আগে থেকেই জানা সম্ভব হবে না। কারণ তখন সেই ঘটনাটি
বদলে যাবে যেটা সৃষ্টিকর্তা আগে থেকে জানতে পারবে না।
অর্থাৎ সর্বজ্ঞানী
হলে সৃষ্টিকর্তার পক্ষে সর্বশক্তিমান হওয়া সম্ভব নয় আবার সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান
হলে সর্বজ্ঞানী হওয়াও সম্ভব নয় সৃষ্টিকর্তার পক্ষে। অর্থাৎ সর্বশক্তিমান
ও সর্বজ্ঞানী (বা সর্বজ্ঞাতা) বিষয়টি পরস্পরের বিরোধী।
আবার সৃষ্টিকর্তা যদি
সর্বশক্তিমান হয় তবে তার পক্ষে পরম দয়ালু বা সর্বজ্ঞাতা হওয়া সম্ভব নয়। আবার সৃষ্টিকর্তা সর্বজ্ঞাতা
হলে তার পক্ষে পরম দয়ালু বা সর্বশক্তিমান হওয়াও সম্ভব নয়। যেমনটি পরম দয়ালু হলে
সৃষ্টিকর্তার পক্ষে আর সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞাতা হওয়া সম্ভব হবে না।
একটি যুদ্ধে যদি দুই
পক্ষই সৃষ্টিকর্তার সাহায্য চায় তবে সৃষ্টিকর্তা সেই প্রার্থনা কবুল করে পরম দয়ালু
হতে পারবে না যেহেতু দুই দলই সৃষ্টিকর্তার সাহায্য চেয়েছে। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা
সর্বশক্তিমান হলেও পরম দয়ালু হতে পারবে না। আর যদি সে পরম দয়ালু
হয় তবে তার পক্ষে সর্বশক্তিমান হওয়াও সম্ভব হবে না। কারণ তখন তাকে দুই
দলকেই জিতিয়ে দিতে হবে যেটা সম্ভব নয়। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা
যদি পরমদয়ালু হয় তবে সে সর্বশক্তিমান হতে পারবে না। আর যদি সর্বশক্তিমান
হয় তবে তার পক্ষে পরমদয়ালু হওয়া সম্ভব নয়।
পরম দয়ালু সৃষ্টিকর্তা
ন্যায় বিচার করতে অক্ষম। কারণ ন্যায় বিচার করতে হলে কারো উপর নিষ্ঠুর
হতে হবে। ফলে তখন আর সৃষ্টিকর্তা পরম দয়ালু থাকতে পারবে
না। আবার যদি সৃষ্টিকর্তা পরম দয়া করে অপরাধির শাস্তি লাঘব করে দেয়
তবে সে অপর পক্ষের উপর অবিচার করবে। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার
পক্ষে একই সাথে পরম দয়ালু এবং ন্যায় বিচারক হওয়া অর্থাৎ সর্বশক্তিমান হওয়া সম্ভব নয়।
যেহেতু সৃষ্টিকর্তার
পক্ষে ন্যায় বিচারক ও পরম দয়ালু হওয়া সম্ভব নয় তাই সে পরম দয়ালু ও সর্বশক্তিমান নয়।
আবার যদি সৃষ্টিকর্তা
সর্বজ্ঞানী বা সর্বজ্ঞাতা হয় তবে সে সর্বশক্তিমান হতে পারবে না এবং পরম দয়ালু হওয়াও
তার পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ সৃষ্টিকর্তা যদি আগে থেকেই জানে যে কখন
কে মারা যাবে এবং কখন কে কাকে হত্যা, ধর্ষন বা অত্যাচার করবে তবে সৃষ্টিকর্তা পরম
দয়ালু হলে অবশ্যই তাকে সে সব অসহায় মানুষকে রক্ষা করতে হবে। কিন্তু যেহেতু সৃষ্টিকর্তা
ঐসব অসহায় মানুষদেরকে রক্ষা করে না তাই সৃষ্টিকর্তা পরম দয়ালু নয়। যদি সে পরম দয়ালু হয়ে
থাকে কিন্তু অসহায়কে রক্ষা করে না বা করতে পারে না যদিও সে সর্বজ্ঞাতা অর্থাৎ পূর্বে
থেকেই সব কিছু জানে তাহলে সে সর্বশক্তিমান নয়। আবার যদি সৃষ্টিকর্তা
সর্বশক্তিমান হয় এবং পরম দয়ালু হয় তবে সে সর্বজ্ঞাতা নয় যেহেতু সে অসহায়দেরকে রক্ষা
করে না।
আর তাই বাস্তব যুক্তি
অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার সর্বশক্তিমান হওয়া, পরম দয়ালু হওয়া এবং সর্বজ্ঞানী বা সর্বজ্ঞাতা
হওয়া কখনই সম্ভব নয়। আর তাই সর্বশক্তিমান, পরম দয়ালু এবং সর্বজ্ঞাতা
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অবাস্তব, অসম্ভব এবং অবৈজ্ঞানিক।
আর তাই সর্বশক্তিমান, পরম দয়ালু এবং সর্বজ্ঞাতা
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়।
আস্তিকরা দাবী করে
থাকে তাদের সৃষ্টিকর্তা পরম সত্য। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে
পৃথিবীর সব আস্তিক ভিন্ন ভিন্ন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। কেউ বিশ্বাস করে সৃষ্টিকর্তা
সাদা, আবার কেউ বিশ্বাস করে
সৃষ্টিকর্তা কালো। কেউ বিশ্বাস করে সৃষ্টিকর্তা পুরুষ, আবার কেউ বিশ্বাস করে
সৃষ্টিকর্তা নারী। কেউ বিশ্বাস করে সৃষ্টিকর্তা একজন, আবার কেউ বিশ্বাস করে
সৃষ্টিকর্তা অনেকগুলো। কেউ বিশ্বাস করে সৃষ্টিকর্তার বৌ ছেলেমেয়ে
আছে, আবার কেউ বিশ্বাস করে
সৃষ্টিকর্তা নপুংসক বা হিজড়া।
কিন্তু সব রকমের সৃষ্টিকর্তার
অস্তিত্ব বিশ্বাসী আস্তিকদের একটা কমন ব্যপার আছে; এরা সবাই নিজেদের সৃষ্টিকর্তাকেই একমাত্র
সত্য সৃষ্টিকর্তা বলে বিশ্বাস করে এবং বাকী সব সৃষ্টিকর্তাকে মিথ্যা সৃষ্টিকর্তা বলে
রায় দেয়।
খ্রিস্টান আস্তিক দাবী
করে একমাত্র তার গড জেহোবা হলো একমাত্র সত্য সৃষ্টিকর্তা। খ্রিস্টানরা আবার জেহোবার
সন্তান আছে বলে বিশ্বাস করে। খ্রিস্টানদের দাবী
অনুযায়ী জেহোবা থেকে তার সন্তান যিশু বা জেসাস ক্রাইস্টের জন্ম হয়েছে। জেসাস ক্রাইস্ট বা
যিশু খ্রিস্টের মাতা মেরী বা মরিয়মের মধ্যে পবিত্র আত্মা ছিল বলে সৃষ্টিকর্তা জেহোবার
নির্দেশে সে যিশু খ্রিস্টকে গর্ভে ধারণ করেছিল।
ফলে খ্রিস্টানরা সৃষ্টিকর্তার
তিনটি অস্তিত্বে বিশ্বাস করে, পিতা (ফাদার), পুত্র (সান) এবং পবিত্র আত্মা (হোলি স্পিরিট)। খ্রিস্টানদের এক সৃষ্টিকর্তা
হলো এই তিন সৃষ্টিকর্তার মিলিত রুপ।
কিন্তু ইহুদিরা আবার
সৃষ্টিকর্তার বিভাজনে বিশ্বাস করে না। ইহুদিরা বিশ্বাস করে
সৃষ্টিকর্তা জেহোভা একজনই। এবং তার কোন সন্তান
নেই। আর ইহুদীরাও দাবী করে একমাত্র তাদের সৃষ্টিকর্তাই হলো সত্য
সৃষ্টিকর্তা। বাকী দুনিয়ার সব ধর্মের সব সৃষ্টিকর্তাই মিথ্যে
ও ভুয়া।
মুসলমানরা আবার জেহোভাকে
সৃষ্টিকর্তা মানতে নারাজ। তারা পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার তিত্ব সৃষ্টিকর্তার
ফর্মোলাকে মানে না। মুসলমানরা বিশ্বাস করে আরবের পৌত্তলিক ধর্মের
প্রধান দেবতা আল্লাহ হলো ইহুদী খ্রিস্টানদের সেই সৃষ্টিকর্তা; কিন্তু আল্লাহ একজনই। আল্লাহর কোন ছেলেপেলে
নেই এবং আল্লাহ বিয়েও করেনি। মুসলমানরা তাদের সৃষ্টিকর্তা
আল্লাহকে একমাত্র সত্য সৃষ্টিকর্তা মনে করে। আর বাকী সব ধর্মের
সবগুলো সৃষ্টিকর্তাকে মিথ্যে বলে মনে করে।
কিন্তু হিন্দু ধর্মের
আস্তিকরা আবার আল্লাহ, জেহোভা, পিতা-পুত্র-পবিত্র আত্মা প্রভৃতি সৃষ্টিকর্তাকে
বিশ্বাস করে না। তারা বিশ্বাস করে তাদের সৃষ্টিকর্তা হলো
ভগবান (ভগমান)। ভগমানই হলো পৃথিবীর একমাত্র সত্য সৃষ্টিকর্তা। আর বাকী সব ধর্মের
সবগুলো সৃষ্টিকর্তাই (আল্লাহ, জেহোভা ইত্যাদি) মিথ্যে ও ভুয়া।
এরকম পৃথিবীতে প্রায়
চার হাজারের মতো ধর্ম আছে। আর এই চার হাজার ধর্মের
প্রায় দশ হাজার সৃষ্টিকর্তা আছে। কিন্তু সবগুলো ধর্মই
দাবী করে যে একমাত্র তাদের নির্ধারিত সৃষ্টিকর্তাই একমাত্র সত্য সৃষ্টিকর্তা এবং বাদবাকী
সব সৃষ্টিকর্তা মিথ্যে ও ভুয়া।
এখন প্রশ্ন হলো এদের
সবগুলো পরস্পর বিরোধী সৃষ্টিকর্তা কি সত্য হতে পারে?
এর উত্তরে আস্তিকরা
বলবে যে, না সবগুলো সৃষ্টিকর্তা
সত্য নয় তবে একমাত্র তাদের ধর্মের তাদের সৃষ্টিকর্তাই একমাত্র সত্য সৃষ্টিকর্তা আর
বাকীগুলো মিথ্যে সৃষ্টিকর্তা।
কিন্তু যুক্তি বলে
পরস্পর বিরোধী সবগুলো সৃষ্টিকর্তা সত্য হতে পারে না। তবে পরস্পর বিরোধী
সবগুলো সৃষ্টিকর্তাই মিথ্যে হতে পারে।
যেহেতু পরস্পর বিরোধী
সব সৃষ্টিকর্তা এক সাথে সত্য হতে পারবে না কিন্তু তারা সবগুলোই এক সাথে মিথ্যে হতে
পারবে তাই পৃথিবীর পরস্পর বিরোধী কোন সৃষ্টিকর্তাই সত্য হয়।
অর্থাৎ পৃথিবীতে মানুষের
কল্পনার দ্বারা সৃষ্টি হওয়া যতগুলো সৃষ্টিকর্তা আছে তারা সবাই এক সাথে মিথ্যে এবং
ভুয়া।
আর তাই পরস্পর বিরোধী
কোন সৃষ্টিকর্তার পক্ষেই সত্য হওয়া সম্ভব নয়। ফলে পৃথিবীর কোন সৃষ্টিকর্তাই
সত্য নয়।
যুক্তি অনুযায়ী কোন
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। কারণ যদি সব কিছু সৃষ্টি
করতে একজন সৃষ্টিকর্তার একান্তই দরকার হয় তবে সেই সৃষ্টিকর্তাটিরও একজন সৃষ্টিকর্তা
থাকবে। আর যদি সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তার দরকার
না হয় তবে কোন কিছুরই সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই। সৃষ্টিকর্তা কোন সৃষ্টিকর্তা
ছাড়াই যদি সৃষ্টি হতে পারে তবে বিশ্বজগতের সব উপাদানও সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে
পারবে। ফলে সৃষ্টিকর্তার কোন প্রয়োজন নেই বিশ্বজগতের। সে ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার
একজন সৃষ্টিকর্তা থাকবে এবং তার আরেকজন সৃষ্টিকর্তা থাকবে এভাবেই অসীম সংখ্যক সৃষ্টিকর্তার
আমদানী হবে যেটা আবার সৃষ্টিকর্তার ধারণাকে মিথ্যে করে দেবে।
আর তাই বিশ্বজগতের
কোন সৃষ্টিকর্তা থাকা সম্ভব হবে না।
বাস্তব জ্ঞান বা বিজ্ঞান অনুযায়ী বিশ্বজগত কোন
সৃষ্টিকর্তার হস্তক্ষেপ ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে নিজে নিজেই। ফলে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বটা
অ-দরকারী বা অপ্রয়োজনীয় বাহুল্যমাত্র।
সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার
অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয় বলে কোন সৃষ্টিকর্তা নেই এই বিশ্বজগতের।
আবার পমর দয়ালু সৃষ্টিকর্তার
কোন অস্তিত্ব নেই মানব ইতিহাসে। কারণ পরম দয়ালু সৃষ্টিকর্তা
বলে যদি কেউ থাকতোই তবে সে জগতের শত অন্যায়, অত্যাচার, যুলুম, হত্যা, ধর্ষনের মতো হিংস্র জঘন্য অন্যায়ের বিরোদ্ধে
থেকে অসহায় মানুষদেরকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতো। যেহেতু এসব জঘন্য অন্যায়
জগতে ঘটে আসছে সেই প্রাচীণ কাল থেকে এবং কোন সৃষ্টিকর্তাই তাদের বাঁচাতে আসেনি, তাই কোন পরম দয়ালু
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নেই এই বিশ্বজগতে।
যদি সর্বজ্ঞাতা সৃষ্টিকর্তা
বলে কেউ একজন থাকবেই তবে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছে বলে কিছু থাকবে না। কিন্তু মানুষের স্বাধীন
ইচ্ছে আছে বিধায় কোন সর্বজ্ঞাতা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়।
আবার যদি সৃষ্টিকর্তা
সর্বশক্তিমান হয়, পরম দয়ালু হয় এবং সর্বজ্ঞাতা
হয় তবে সে মানুষকে সাহায্য করে না কেন?
আসলে সর্ব শক্তিমান
সৃষ্টিকর্তার পক্ষে সর্বজ্ঞাতা হওয়া সম্ভব নয়। ঠিক তেমনি সর্বজ্ঞাতা
সৃষ্টিকর্তার পক্ষে সর্বশক্তিমান ও পরম দয়ালু হওয়াও সম্ভব নয়।
আর তাই বিশ্বজগতে কোন
সর্বশক্তিমান, পরম দয়ালু ও সর্বজ্ঞাতা
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নেই।
পৃথিবীতে পরস্পর বিরোধী
বহু সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব বিদ্যমান। আস্তিকদের দাবী মতো
তারা সবাই সত্য হতে পারবে না কিন্তু সবাই মিথ্যে হতে পারবে। আর তাই সব সৃষ্টিকর্তাই
মিথ্যে।
অর্থাৎ কোন সৃষ্টিকর্তারই
অস্তিত্ব নেই।
যুক্তি, বাস্তবতা এবং বিজ্ঞান
অনুযায়ী কোন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। আর তাই বিশ্বজগতে কোন
সৃষ্টিকর্তা নেই। সৃষ্টিকর্তা আছে শুধুই আস্তিকদের মনের জগতে। বাস্তব জগতে সৃষ্টিকর্তা
বলে কিছু নেই।
আপনার পোস্ট গুলো পড়ে বেশ মজাই পাই। খুবই চিন্তাশীল পোস্ট। তবে আপনি যেমন নাস্তিক শ্রেনীর বলে ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিরোধী তত্ব প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস করেন, তেমনি আমার প্রয়াস থাকে ইশ্বর আছেন এমন কোনো তত্ব প্রতিষ্ঠিত করা।
ReplyDeleteআপনার যেহেতু ঈশ্বর কে নিয়ে এলার্জি আছে তাই প্রথমে ধরেই নেন যে ঈশ্বর আসলে সর্বশক্তিমান না। আমাদের জগৎসংসার যে পরিচালনা করছে সে ও আমাদের মত কিন্তু আমাদের চেয়ে উন্নত শ্রেনীর প্রানী। এবং সে আমাদের সৃষ্টিই করেছেন তার স্বার্থ হাসিলের জন্য। তার গুনগান শোনার জন্য।
তো এমন কি হওয়ার সম্ভবনা নেই, যে আমরা ওই অতি উন্নত প্রানীর তৈরী একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের একটি অংশ? খুব সুন্দর গ্রাফিক্স এর একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম। আমরা সেই প্রোগ্রামের কিছু এলিমেন্ট যাদের নিজের ই সবরকমের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীন ক্ষমতা আছে। এভাবে চিন্তা করলে কিন্তু ঈশ্বর সম্পর্কে সহজাত একটা ধারনা করা যায়। আর এই জগৎ নামক প্রোগামে তার যে সব কিছু করার ক্ষমতা থাকতে পারে তার একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। আর এরকম ঈশ্বরও যদি থেকে থাকে তাহলে যারা যারা তার কথামত চলবে না তাদের জন্য সে ভয়াবহ শাস্তি রাখতেই পারে।
এবার একটু অন্যভাবে চিন্তা করি।
ঈশ্বর কিন্তু কখনওই কাউকে দেখা দেন না। বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। তার আকার আকৃতি নেই। মৃত্যু নেই। সে সবখানে আছে। কি এমন জিনিস যার এরকম বৈশিষ্ঠ্য থাকতে পারে?
একটা জিনিসের কথা কিন্তু আপনি ভাবতেই পারেন। তা হল শক্তি। হতে পারে জগতের সমগ্র/মোট শক্তি ই আসলে ঈশ্বর।
এবার বলেন তো
শক্তি পুরূষ না স্ত্রী?
তার আকার কেমন?
তার কি বিনাশ সম্ভব?
সে কোথায় নেই?
বিগ ব্যাং থিওরী অনুযায়ী আমরা তো শক্তি থেকেই উৎপন্ন। তার মানে আমরা শক্তির অংশ। আমরা ঈশ্বরের অংশ।
আরও অনেকভাবে হয়ত ইশ্বরকে চিন্তা করা যায়। কিন্তু এইভাবে চিন্তা করলে ঈশ্বর নামক সত্বা সম্পর্কে একটা ধারনা হয় আর সত্যিই প্রমান হয় যে ঈশ্বর আছেন।
তবে প্রশ্নের মধ্যে একটা প্রশ্ন আমি করতে চাই,
বিজ্ঞানীদের মতে বিগ ব্যাং থেকে সব কিছুর উৎপত্তি। এখন বিগ ব্যাং সংগঠিত হওয়ার জন্য একটা যায়গা বা স্পেসের নিশ্চই প্রয়োজন হয়। যেখানে বিগ ব্যাং হয়েছে। ঐ যায়গা বা স্পেস কিভাবে সৃষ্টি হল আর কে ই বা সৃষ্টি করলো?
বিগ ব্যাং নির্দিষ্ট কোন স্থানে হয়নি। বিগ ব্যাং এর আগে তো স্থান জিনিসটার অস্তিত্বই ছিল না। এমনকি বিগ ব্যাং এর আগে বলেও কিছু নেই। কারণ সময় এবং স্থান উভয়ই বিগ ব্যাং এর পরে উৎপন্ন হয়েছে। তাহলে বিস্ফোরণ ঘটল কোন স্থানে ? বিগ ব্যাং কোন ঘটনা নয়। ঐ বিস্ফোরণকে বিগ ব্যাং বলে না। বিস্ফোরণ ঘটার মুহূর্তকে ( ঐ সময়কে ) বিগ ব্যাং বলে। বিস্ফোরণ সব স্থানে ঘটেছে। কেননা, স্থান সময় পদার্থ শক্তি সব মিলেমিশে একাকার হয়েছিল একটি বিন্দুতে। সেই বিন্দুই স্থানের জন্মদাতা। তাহলে বিন্দুটা কোন স্থানে ছিল ? ঐ বিন্দুর কোন outside নাই, বাহির বলে কিছু নাই। বিন্দুটাই সব কিছু। যা কিছু ছিল, যা কিছু বর্তমানে আছে এবং যা কিছু ভবিষ্যতে থাকবে। সবই ঐ বিন্দু। কল্পনা করা কঠিন। কিন্তু প্রকৃতির বাস্তবতা কল্পনাকেও হার মানায়। ঐ বিন্দুকে বলা হয় সিঙ্গুলারিটি।
Deleteখুবই হাস্যকর পোস্ট,,,খুবই নিম্মমানের সস্তা চিন্তা ভাবনা।
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDelete