বিশ্বাসের
ভাইরাসের কোন আকার নেই! আছে শুধু ভয়াবহতা! এই ভাইরাস জীবানু ভাইরাসের মতো নয়। এটি কম্পিউটার
ভাইরাসের মতো অদৃশ্য, কিছু তথ্য বা ইনফরমেশনের সমন্বিত রুপ বা ফল। কম্পিউটার ভাইরাস
হলো কিছু তথ্য বা সংকেত; যে সংকেতগুলো অন্য কোন সংকেতকে আক্রান্ত করতে পারে ঠিক
জীবানু ভাইরাসের মতো করে, সেগুলোই হলো কম্পিউটার ভাইরাস। ঠিক একই ভাবে কিছু
তথ্য বা সংকেত (ভাষা বা শব্দ) যখন মানুষের মনে (মস্তিষ্কে) প্রবেশ করে এবং মানুষের
বুদ্ধিমত্তা ও যুক্তিকে আক্রান্ত করে ঠিক ভাইরাসের মতো, সেরকম তথ্য বা
সংকেত বা বিশ্বাসগুলোই হলো বিশ্বাসের ভাইরাস।
বিশ্বাস বা
অন্ধবিশ্বাসের ভাইরাসগুলো যখন মানুষের মনকে আক্রান্ত করে তখন মানুষটি হয়ে যায়
বিশ্বাসের ভাইরাসের গোলাম। বিশ্বাস বা
অন্ধবিশ্বাসগুলো তখন মানুষকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করতে পারে এবং করে। মানুষ বিশ্বাসের
ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে, হয়ে উঠে ভয়ংকর ঠিক যেভাবে ভাইরাস ক্ষতি
করে ঠিক সেভাবেই। প্রতিটি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী যেমন অন্য
সুস্থ মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে, যেভাবে একটা
ভাইরাস আক্রান্ত কম্পিউটার অন্য একটা কম্পিউটারকে আক্রান্ত করতে পারে ঠিক সেভাবেই
বিশ্বাসের ভাইরাস আক্রান্ত মানুষটিও অন্য সুস্থ মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ
হলো সাম্প্রতিক সংঘঠিত হওয়া ওয়াশিকুর বাবুর হত্যাকারী দুজন গ্রেফতার হওয়া আসামী
জিকরুল্লাহ এবং আরিফুল ইসলাম। এদেরকে বিশ্বাসের
ভাইরাসে আক্রান্ত করার প্রধান দায়িত্ব পালন করেছে যথাক্রমে জিকরুল্লাহকে
চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষকগন এবং আরিফুল ইসলামকে ঢাকার মিরপুরের
দারুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষকগন এবং তাদেরকে হিংস্রতা সম্পন্ন বিশ্বাসের ভাইরাসে
আক্রান্ত করার জন্য দায়িত্ব পালন করেছে নাম না জানা বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত
কিছু মানুষ।
ধরা পড়া দুজন
বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া সন্ত্রাসীর বক্তব্যটিও ছিল বিশ্বাসের ভাইরাসের
প্রধান প্রমাণ। তাদের নিজের মুখে বলা বক্তব্যটি হলো-
“ব্লগ কী বুঝি না। আর তার লেখাও আমরা
দেখিনি। হুজুরেরা বলেছেন, সে
(বাবু) ইসলামবিরোধী। তাকে হত্যা করা ইমানি দায়িত্ব। ইমানি দায়িত্ব
পালন করলে বেহেশতে যাওয়া যাবে। সেই ইমানি দায়িত্ব
পালন করতেই ওয়াশিকুরকে হত্যা করেছি।”
এই হলো বিশ্বাসের
ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষদের প্রকৃতি।
কোন তথ্য প্রমাণের দরকার নেই, শুধু (অন্ধ) বিশ্বাস থাকলেই হলো, যাকে তাকে হত্যা করা যায় যদি সে
বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত না হয়ে থাকে। (প্রতিটা বিশ্বাসের
ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষই যেন এক একটি জম্বি !)
এর পরও কেউ কেউ
বলবে, “এরা (জিকরুল্লাহ
এবং আরিফুল) প্রকৃত মুসলমান নয়, তাদের
হত্যাকান্ডটি প্রকৃত ইসলাম সমর্থিত নয়”। এর পরও কেউ কেউ
বলবে, না বিশ্বাস কোন ভাইরাস নয়, বিশ্বাসের ভাইরাসের কোন শারীরিক গঠন নেই; তাই বিশ্বাস কোন
ভাইরাস নয়। আবার কেউ কেউ বলবে, হত্যাকান্ডটি
অবশ্যই জঘন্য অপরাধ কিন্তু মুক্তমনাদেরও উচিত কারো অনুভুতিতে আঘাত না করা।
এই শ্রেণীর
মানুষদেরকে বলা হয় মডারেট মুসলিম। এরা বিশ্বাসের
ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নয়। তবে এরা বিশ্বাসের
ভাইরাসটিকে বহন করে চলে যাতে অন্য কোন সুস্থ মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। এরা কাজ করে
ভাইরাসের বাহক হিসেবে। বাহক হলো এমন পোষক যারা ভাইরাসের
দ্বারা আক্রান্ত হয় না কিন্তু ভাইরাসকে বহন করে এবং একজন থেকে অন্য জনকে আক্রান্ত
করতে পারে।
মডারেট
মুসলমানগুলোকে আবার ভন্ড মুসলমানও বলা যায়; এরা ইসলাম মেনে চলে না ঠিক ভাবে কিন্তু
মুসলমান হিসেবে নিজেকে নিয়ে গর্ব করে। নামাজ, রোজা করে না এবং
ইসলামের কোন কিছুই মেনে চলে না। মদ খায় আবার
পরকিয়ার মতো কাজও করে এবং অনেক অনৌসলামিক কাজ কারবারও করে। কিন্তু শুক্রবারের
নামাজ পড়ে মাঝে মাঝে,
রোজাও রাখে মাঝে মাঝে এবং শেষ বয়সে হজ করে হাজী খেতাবও নিয়ে থাকে। এরাই হলো মডারেট
মুসলমান, এরাই হলো
বিশ্বাসের ভাইরাসের বাহক।
এই ভন্ড মডারেট
মুসলমানগুলো ইসলামকে ঠিক ভাবে জানে না, কুরআন হাদিসও পড়ে না, কিন্তু কোথাও
ইসলাম ধর্মের ভাইরাসে আক্রান্ত সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ডকে ডিফেন্ড করে "ইহা
ছহী ইসলাম নহে, ইহারা প্রকৃত
মুসলমান নহে" জাতিয় কথা বলে। আবার এই ভন্ড
মডারেট মুসলমানগুলো ইসলাম ধর্মের ভাইরাসে আক্রান্ত সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ডের
ছাফাই গেয়ে এটাও বলে যে, এই সব কর্মকান্ড অবশ্যই নিন্দনীয় কিন্তু এটাও ঠিক যে কারো
বিশ্বাসের অনুভুতিতে আঘাত করলে সে এ ধরণের হত্যাকান্ড করতেই পারে।
এই ভন্ড মডারেট
মুসলমানগুলো বিশ্বাসের অনুভুতি বা ধর্মীও অনুভুতিতে আঘাত করা বলতে আসলে কি বুঝায়
সেটা বুঝতে পারা অবশ্য কঠিন। কিন্তু তাদের
চিন্তা চেতনা খুব সহজেই ধরে ফেলা যায়। তারা আসলে জানে না
যে ধর্মীয় বিশ্বাসগুলো থেকে কেন একজন মানুষ ভয়ংকর হয়ে যায়? ধর্ম যে এক একটা
বিশ্বাসের ভাইরাসের কারখানা সেটা ধর্মগুলোর গঠন প্রনালী দেখলেই বুঝা যায়।
বিশ্বাসের ভাইরাসে
আক্রান্ত সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ডকে যারা এরপরও “ইহা সহী ইসলাম নহে” জাতীয় কথা বলবে, যারা এখনও দাবী
করবে যে, বিশ্বাস বা
অন্ধবিশ্বাস কোন ভাইরাস নয় তাদেরকে কুরআনের আয়াত থেকে দেখানো যায় যে, কেন ধর্মের
বিশ্বাস একটি ভাইরাস।
আর তাদেরকে হত্যা
কর যেখানে পাও সেখানেই। (২:১৯১)
আর তোমরা তাদের
সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না
ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহ্র দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়| অত:পর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো
প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা যালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা)| ২-১৯৩
"তোমাদের উপর যুদ্ধ
ফরয করা হয়েছে" (২-২১৬)
যারা আল্লাহ ও
তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি
হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা
হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে
অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। (৫:৩৩)
আমি কাফেরদের মনে
ভীতির সঞ্চার করে দেব। কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে
কাট জোড়ায় জোড়ায়।(৮:১২)
আর তাদের সাথে
যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহ্র সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়| (৮-৩৯)
যুদ্ধ কর ওদের
সাথে, আল্লাহ তোমাদের
হস্তে তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত
করবেন, তাদের বিরুদ্ধে
তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন। (৯:১৪)
তোমরা যুদ্ধ কর
আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর
রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম। (৯:২৯)
হে নবী, কাফেরদের সাথে
যুদ্ধ করুন এবং মুনাফেকদের সাথে তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করুন। (৯:৭৩)
আল্লাহ্ ক্রয় করে
নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে
জান্নাত| তারা যুদ্ধ করে
আল্লাহ্র রাহে: অত:পর মারে ও মরে| (৯-১১১)
হে ঈমানদারগণ, তোমাদের
নিকটবর্তী কাফেরদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাও এবং তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা অনুভব
করুক আর জেনে রাখ, আল্লাহ
মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন। (৯:১২৩)
দেখাই যাচ্ছে
বিশ্বাসের ভাইরাসের মুল ভিত্তি কুরআনেই যুদ্ধ করা বা হত্যা করা এবং অবিশ্বাসীদেরকে
(অর্থাৎ বিশ্বাসের ভাইরাসে যারা আক্রান্ত নয় তাদেরকে) হত্যা করার ভাইরাস রয়েছে। আর এতে করে
বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া মানুষগুলো বিশ্বাসের ভাইরাস মুক্ত মানুষদেরকে
আক্রান্ত করবে এবং আঘাত করবে এটাইতো স্বাভাবিক।
এখানে ধর্মীয়
অনুভুতি বা বিশ্বাসের অনুভুতিতে আঘাত করা না করাটা গুরুত্বপূর্ন কতটুকু? আইএস,
বোকো হারাম, তালেবান বা আল
কায়েদার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মূলে কোন ধর্মানুভুতিতে আঘাত কাজ করেছিল? সারা পৃথিবীতে অনেক ধর্ম রয়েছে এবং
হুমায়ুন আজাদ, অভিজিৎ রায়, রাজীব হায়দার বা ওয়াশিকুর বাবুর মতো
বিশ্বাসের ভাইরাস মুক্ত মানুষগুলো শুধু ইসলাম ধর্মের বিরোদ্ধেই কথা বলেনি
পৃথিবীর তাবৎ ধর্মের বিরোদ্ধেই কথা বলেছে। কিন্তু বারবার
অন্য কোন ধর্মের অনুসারীরা সন্ত্রাসীর মতো হত্যাকান্ডে জড়াইনি। শুধু ইসলামের
ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষগুলোই সন্ত্রাসীর মতো হত্যার মতো জঘন্য কাজগুলো ঘটিয়েছে।
তারা যে সম্পূর্ণ
ইসলাম অনুযায়ীই এই কাজ গুলো করেছে সেটা উপরে উল্লেখিত আয়াতগুলোই প্রমাণ। এরপরও যে মডারেট
মুসলমানগুলো বলে যে এটা প্রকৃত ইসলাম নয়, এরা প্রকৃত
মুসলমান নয়, তারা ভন্ড মডারেট মুসলমান এবং বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত
না হওয়া ভাইরাসের বাহক। তাদেরকে শুধু ঘৃনাই করা যায়। কারণ তারা প্রকৃত
ইসলামকে না জেনে প্রকৃত মুসলমানদেরকেই (বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত মুসলমানদেরকেই)
দোষী বানাচ্ছে কিন্তু সেই সব মুসলমানকে যে ভাইরাস ইসলাম আক্রান্ত করেছে সেই
ইসলামকেই বাঁচানোর জন্য একই কথার পুনরাবৃত্তি করে "এগুলো প্রকৃত
ইসলাম নয়" এসব বলে।
জিকরুল্লাহ
এবং আরিফুল যে কুরআন এবং তাদের শিক্ষক ও
গুরুদের থেকেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ওয়াশিকুরকে খুন করেছে এটা নিয়ে কোন সন্দেহ
নেই। কুরআনের আয়াতগুলো এবং পরকালের হুরপরীর লোভ থেকেই তারা
হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে। তারা নিজের মুখেই বলেছে এই হত্যাকান্ডটি
তারা করেছে তাদের ইমানী দায়িত্ব থেকে এবং বেহেশতের লোভে।
সুতরাং মডারেট
মুসলমান ভন্ডগুলো যতই বলুক না কেন "এটা সহী ইসলাম নয়, এরা সহী মুসলিম নয়" তাতে করে সত্য
মিথ্যে হয়ে যাবে না।
বিশ্বাস একটি
ভাইরাস। এই ভাইরাসে আক্রান্ত যে কেউ যে কোন
ধরনের অন্যায় কাজ করতে দ্বিধা বোধ করে না। তারা ভালো
খারাপের পার্থক্য করতে পারে না। মানুষ হত্যা করা
জঘন্য খারাপ কাজ এই কথাটাই বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষগুলো বুঝতে পারে না। ইসলাম ধর্মের
বিশ্বাসের ভাইরাসগুলো (যেমন কুরআনের আয়াতগুলো) মুসলমানদেরকে অন্ধ করে রাখে। তারা ভালো
খারাপের পার্থক্য করতে পারে না। ফলে নিরীহ
মানুষদেরকে হত্যা করে। জঘন্য অপরাধ করেও তারা অনুশুচনা বোধ করে
না। বাংলা ভাইয়ের কথাই ধরুন,
সে মৃত্যু দন্ড পাবার পরেও মৃত্যু ভয়ে ভীতু ছিল না। হাজার হাজার
আত্মঘাতী বোমারুরা মৃত্যুকে ভয় পায় না। তারা জান্নাতের
অনন্ত সুখের লোভে বিভোর থাকে। (অনেকটা মাতালের
সুখের মতো।)
কেন তারা মৃত্যুকে
ভয় পায় না? কারণটা খুব সহজ, তারা জানে যে আত্মঘাতী হয়ে বিধর্মী মানুষ
মেরে জান্নাতে যাওয়া যাবে, আত্মঘাতী হয়ে
মৃত্যুবরণ করাটাই হলো জান্নাতে যাবার টিকিট। আত্মঘাতী হয়ে
মানুষ মারলে সৃষ্টিকর্তা খুশি হবে। আত্মঘাতী হয়ে
মরলেই সাথে সাথে জান্নাতের হুর রেডি।
এই বিশ্বাসের
ভাইরাসটিই মুসলমানদেরকে মৃত্যু ভয় শুন্য করে তুলে। ফলে একেকজন ইসলাম
ধর্মের ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষগুলো হয়ে যায় ভয়ংকর সন্ত্রাসী।
সব মুসলমানরা
ভয়ংকর সন্ত্রাসী না হবার কারণ হলো তাদের মধ্যে বড় অংশই ইসলামকে ভালো ভাবে জানে
না এবং তারা ইসলামের চেয়ে আধুনিক শিক্ষাকে বেছে নিয়েছে বেশী করে। আর তাই বড় অংশই ধর্ম
থেকে দুরে থাকে বলে বিশ্বাসের ভাইরাস তাদেরকে খুব বেশী আক্রান্ত করতে পারে না। ফলে তারা
বিধ্বংশীও হয় না।
আল কায়েদা, তালেবান, আইএস, বোকো হারামের
মতো সন্ত্রাসীরা কুরআন পড়ে মানুষ হত্যার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং নবীর দেখিয়ে দেওয়া
পথেই জিহাদ (যুদ্ধ) করে ও মানুষ হত্যা করে। ইসলামের ইতিহাস , হাদীস এবং কুরআনকে অনুসরণ করেই তারা
সন্ত্রাসীর পথকে বেছে নিয়েছে। এরাই প্রকৃত
মুসলমান। এদের কাজই প্রকৃত ইসলামের কাজ।
বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমান এবং এ কালের
জিকরুল্লাহ এবং আরিফুল ইসলাম এরা সবাই
প্রকৃত ইসলাম থেকেই শিক্ষা নিয়ে প্রকৃত ইসলামের বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই
হত্যাকান্ডগুলো ঘটায়।
সুতরাং মডারেট
মুসলমানদের এটা বলার সুযোগ নেই যে, "এগুলো প্রকৃত
ইসলামের কাজ নয়, এরা প্রকৃত
মুসলমান নয়"।
পৃথিবীতে এতো
ধর্ম আছে; কোন ধর্মের
আস্তিকরাই মুসলমানদের মতো সন্ত্রাসীর পথ বেছে নেয় না। যত ধর্মীয়
সন্ত্রাসী আছে সবগুলোই ইসলামের অনুসারী। কিন্তু কেন? কেন অন্য ধর্মের অনুসারীরা সন্ত্রাসী হয়
না কিন্তু শুধু মুসলমানরাই হয়? কেন অন্য ধর্ম
সম্পর্কে সমালোচনা করলেও (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) কেউ হত্যা করে না সমালোচনা
কারীকে? শুধু ইসলামের
সমালোচনা করলেই মুসলমান সন্ত্রাসীগুলো এসে সমালোচনাকারীকে হত্যা করবে আর মডারেট
মুসলমানগুলো মহান বানী ঝাড়বে, "এটা প্রকৃত ইসলাম
নয়, এরা প্রকৃত
মুসলমান নয়। হত্যাকান্ডকে আমরা সমর্থন করি না কিন্তু
ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করাও ঠিক নয়"।
যেখানে পৃথিবীর সব
ধর্মীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠিই মুসলমান এবং কুরআন হাদীস অনুযায়ী সন্ত্রাসীপনা বৈধ, সেখানে মডারেটগুলো এসব ভন্ডামী মার্কা
কথা কোথায় পায়?
প্রকৃত ইসলাম
অনুসরণ করে এই সব সন্ত্রাসীরাই। কুরআন হাদীস মেনে
চলে এরাই। কুরআনের আয়াত অনুযায়ী এবং হাদীস অনুযায়ী
এরাই প্রকৃত মুসলমান। কুরআন হাদীসে বলা হয়েছে বিধর্মীদেরকে এবং
বিশ্বাসের ভাইরাস মুক্ত মানুষদেরকে হত্যা করাতে কোন পাপ নেই, এটি কোন অন্যায়ও নয়। বরং বিধর্মী ও
বিশ্বাসের ভাইরাস মুক্ত মানুষদেরকে হত্যা করা এই সব ইসলাম ধর্মের ভাইরাসে আক্রান্ত
মানুষগুলোর ইমানী দায়িত্ব। তাই তারা হত্যা
কান্ডগুলো ঘটায় সম্পুর্ণই ইসলাম তথা কুরআন হাদীস মেনে। আর তাই পৃথিবীতে
বাকী ধর্মগুলো থেকে সন্ত্রাসীগোষ্ঠি তৈরী হয় না। সব সন্ত্রাসী
গোষ্ঠিগুলো প্রকৃত ইসলাম অনুসারীরাই। মডারেট ভন্ডগুলো
বললেইতো আর হবে না! ইসলাম কি, ইসলাম কেন
সন্ত্রাসী তৈরী করে সেগুলো খতিয়ে দেখলেই তা প্রমাণ হয়।
ধর্মীয় অনুভুতিটাই
বা কি জিনিস? মডারেট মুসলমানরা
অহরহ এই অনুভুতিটির কথা বলে থাকে। ধর্মীয অনুভুতি
বলে কি আসলেই কিছু আছ?
ধর্ম গুলো হলো
কুসংস্কারের কারখানা। পৃথিবীর সব কুসংস্কারকে রক্ষা করার
দায়িত্ব ধর্মগুলো একক ভাবে পালন করে যাচ্ছে। বিজ্ঞান যেখানে
একেকটা কুসংস্কারকে সমাজ থেকে বিদায় করে দিচ্ছে সেখানে ধর্মীয় ভাইরাসে আক্রান্ত
মানুষগুলো শক্ত ভাবেই কুসংস্কারকে লালন করে চলেছে। আত্মা, ভুত,
প্রেত, জ্বীন-পরী, শয়তান-ফেরেশতা, ইশ্বর-আল্লাহ-বিধাতা-ভগমান প্রভৃতি নানা
রং বেরং-এর কুসংস্কারকে বাঁচিয়ে রেখেছে ধর্মগুলোই। বিশ্বাসের
ভাইরাসগুলোই ধর্মকে বাঁচিয়ে রেখেছে, বাঁচিয়ে রেখেছে
কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাসের মতো অজ্ঞতাকে। আর তাই পৃথিবীতে
ধর্মের বর্বরতা চিরকাল ধরে চলে এসেছে। মানুষ যখন আধুনিক
হয়েছে, হয়েছে সভ্য মানুষ, তখনও কিছু ধর্মীয় বিশ্বাসের ভাইরাসে
আক্রান্ত মানুষ বিশ্বাসের ভাইরাসগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেছে। কুসংস্কারকে তারা
জিইয়ে রেখেছে বিশ্বাসের ভাইরাস যাতে মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে খুব সহজে। সেই সাথে আধুনিক
কিছু ভন্ড আস্তিক যোগ হয়েছে যারা কুসংস্কারের ধারক বাহক ধর্মগ্রন্থগুলোকে
বিজ্ঞানময় বানাতে। আর এটা করতে যেয়ে তারা বিজ্ঞানের বারোটা
বাজিয়ে দিয়ে অপবিজ্ঞান এবং অপযুক্তির অবতারনা করছে। আর এই অপবিজ্ঞান
এবং অপযুক্তিগুলো বিশ্বাসের ভাইরাসের অক্সিজেন হিসেবে কাজ করছে। এছাড়াও মডারেট
মসলমানদের মতো লোকদের বানানো ধর্মীয় অনুভুতি নামের এক অদ্ভুত অনুভুতির অবতারনা
বিশ্বাসের ভাইরাসকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করছে। ফলে ধর্ম নিরপেক্ষ
বাংলাদেশেও বাংলা ভাইদের মতো বিশ্বাসের ভাইরাসকে উপড়ে ফেলার পরেও বিশ্বাসের
ভাইরাসকে ধ্বংস করা যাচ্ছে না। তৈরী হচ্ছে জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের মতো সন্ত্রাসী
সংগঠনগুলো। এরা একের পর এক হত্যা করেছে মুক্তবুদ্ধির
মানুষদেরকে, এরা হত্যা করছে
বিশ্বাসের ভাইরাস মুক্ত মানুষগুলোকে। এরাই হত্যা করেছে
হুমায়ুন আজাদ-এর মতো লেখককে, হত্যা করেছে
অভিজিৎ রায়ের মতো বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগারকে এবং রাজীব ও ওয়াশিকুরের মতো বিশ্বাসের
ভাইরাস মুক্ত মুক্তমনের অধিকারীদেরকে।
যতদিন পর্যন্ত
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, ধর্মের ভাইরাসে
আক্রান্ত মানুষগুলো এবং মডারেট ভন্ড মুসলমানগুলো বিশ্বাসের ভাইরাসকে ধারণ, বাহন এবং বাঁচিয়ে রাখবে ততদিন পর্যন্ত
বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত সন্ত্রাসীরা তৈরী হতেই থাকবে। বিধর্মী ও
বিশ্বাসের ভাইরাস মুক্ত মুক্তমনাদেরকে হত্যা করে তাদের ইমানী দায়িত্ব তারা পালন
করতেই থাকবে। আর এসব হত্যাকান্ডের বিচার না হলে, ধর্মীয় গোঁড়ামীকে সুযোগ করে দিলে এবং
মুক্তবুদ্ধির চর্চা করার সুযোগ না করতে দিলে বিশ্বাসের ভাইরাস বহাল তবিয়তে বেঁচে
থাকবে এবং মানুষকে আক্রান্ত করতে থাকবে। এর ফলে রাজিব, অভিজিৎ ও ওয়াশিকুরের মতো বিশ্বাসের
ভাইরাস মুক্ত মানুষগুলোকে অকারনে প্রাণ দিতে হবে বিশ্বাসের ভাইরাস আক্রান্ত
সন্ত্রাসীগুলোর হাতে।
আর ধর্মীয়
অনুভুতির মতো অপযুক্তি ও অপবিজ্ঞানের আমদানী হতে থাকবে।
ধর্মীয় অনুভুতি
বলে কিছু নেই। আছে শুধু ধর্মান্ধতা। ধর্মান্ধ
মানুষগুলো ধর্মীয় সন্ত্রাসীপনাকে বাঁচিয়ে রাখতে তৈরী করেছে ধর্মীয় অনুভুতি নামের
অদ্ভুত এক অবাস্তব অনুভুতির। এর কোন বাস্তব
ভিত্তি নেই। হাসি কান্না, ঘৃনা ভালোবাসা হলো বাস্তব অনুভুতি। এগুলো মস্তিষ্কের
কিছু স্বাভাবিক ক্রিয়া। কিন্তু ধর্মীয় অনুভুতির ভিত্তি কি? এটি কি কোন স্বাভাবিক কিছু?
মুটেও তা নয়। ধর্মীয় অনুভুতি
শুধু কিছু ধর্মান্ধ মানুষের আছে। পৃথিবীর অন্য কোন
মানুষের ধর্মীয় অনুভুতি বলে কিছু নেই। কারণ এসব অনুভুতি
ভিত্তিহীন, তাই শুধু কিছু
সংখ্যক মানুষের থাকে। ঠিক মাতালের মতো বা ভাইরাসে আক্রান্ত
রোগীদের মতো বাড়তি অনুভুতি। কিন্তু আবেগ
অনুভুতি হলো সার্বজনীন অনুভুতি যা সব মানুষের মধ্যেই থাকে। কিন্তু ধর্মীয়
অনুভুতি শুধু ধর্মান্ধ কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও অন্ধবিশ্বাসী মানুষের থাকে। অর্থাৎ ধর্মীয়
অনুভুতি শুধু মাত্র ধর্মের বিশ্বাসের ভাইরাস আক্রান্তদেরই থাকে। অন্য কারোও থাকে
না।
যদি তাই না হবে, তবে পৃথিবীর সব
ধর্মকে সমালোচনা করলে তারা কেউই মানুষকে হত্যা করে না; শুধু মাত্র ইসলাম
ধর্মের সমালোচনা করলেই কেন এই ধর্মের ভাইরাস আক্রান্ত মানুষগুলো মানুষকে হত্যা
করে?
এটি কোন অযৌক্তিক
প্রশ্ন নয়। পৃথিবীর কোন ধর্ম থেকেই মানুষ
সন্ত্রাসীর পথ বেছে নেয় না। শুধুমাত্র ইসলাম
ধর্মের অনুসারীদের মধ্য থেকেই সন্ত্রাসীর পথ বেছে নেয়। কারণটি কুরআন
হাদীসে স্পষ্ট করে লেখা আছে। ইসলামের সমালোচনা
কারীদেরকে হত্যা করার নির্দেশ এবং চর্চা আছে কুরআন হাদীসেই। যেমন- ২:১৯১, (৫:৩৩, ৮:১২, ৯:১৪, ৯:২৯, ৯:৭৩ এবং ৯:১২৩
নাম্বার আয়াতগুলো। এছাড়াও হাদীসের বিভিন্ন জায়গায় বিধর্মী
বা ইসলাম সমালোচনাকারীদেরকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া আছে।
তালেবান, আল কায়েদা, বোকো হারাম, আইএস এবং জেএমবি
বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম কিন্তু দাবী করে তারা আল্লাহর কথা মতই জিহাদ (যুদ্ধ) করে
এবং বিধর্মী ও বিশ্বাসের ভাইরাস মুক্ত মুক্তমনাদেরকে হত্যা করে।
কিন্তু এতকিছুর
পরও মডারেট মুসলিমরা চোখ কান বন্ধ করে বকের মতো মাথা মাটিতে পুঁতে রেখে বলতে
থাকে- "এটা সহী ইসলাম নয়, এরা সহী মুসলমান নয়। হত্যা করা জঘন্য
অপরাধ; আবার কারো ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করাটাও উচিত নয়।"
এই মডারেট
মুসলমানগুলো হয় অজ্ঞ, না হয় ভন্ড।
সেই সব মডারেট
মুখোশ ধারী মুসলমানদেরকে একটা কথাই বলা যেতে পারে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের
বিপক্ষে। মডারেট ভাই ও বোনেরা, আপনাদের কথিত
ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করা ছাড়া আধুনিক সভ্যতা গঠিত হতে পারে না। যদি ধর্মীয়
অনুভুতি নামের অযৌক্তিক ও অদ্ভুত অনুভুতিতে আঘাত করা না হয় তবে মানুষ সেই আরবীয়
বর্বর জীবনে চলে যেতো। এখনও সতীদাহ্ নামের ভয়ংকর অমানুবিক প্রথা
চালু থাকতো। এখনও ডাইনী বা শয়তান আখ্যা দিয়ে নিরীহ
মহিলা ও শিশুদেরকে পুঁড়িয়ে মারা হতো।
এই ভয়ংকর অমানুবিক
অপরাধগুলো চলতেই থাকতো যদি না কিছু আধুনিক মুক্তমনা মানুষ সেই সব ধর্মীয়
কুসংস্কারে থাকা মানুষগুলোর ধর্মীয় অনুভুতি নামের অদ্ভুত অনুভুতিতে আঘাত না করতো।
কিছু মানুষকে সেই
সময়ের মানুষের ধর্মীয় অনুভুতি নামের অদ্ভুত অযৌক্তিক অনুভুতিতে আঘাত করেই সমাজের
এই সব কুসংস্কারকে দুর করতে হয়েছে। যদি ধর্মীয়
অনুভুতিতে আঘাত করা না হতো তবে এখনও ওই সব বর্বর অপরাধগুলো সমাজে ধর্মীয় আচার
হিসেবে টিকে থাকতো বহাল তবিয়তে। যেভাবে জিহাদের
মতো জঘন্য হত্যাকান্ড এখনো মুসলমানদের মধ্যে টিকে আছে। মডারেট মুসলমানগুলো
ধর্মকে রক্ষা করার জন্য “সহী ইসলাম, সহী মুসলমান, ধর্মীয় অনুভুতি”র মতো
অযুক্তিগুলো হাজির করে।
এতে কি হয়? ধর্মীয় ভাইরাস কি
সমাজ থেকে দুর হয়, নাকি ইসলাম
শান্তির ধর্ম সেটা প্রমাণ হয়?
আসলে কিছুই হয় না। মডারেট মুসলমানগুলোর
অজ্ঞতা ও ভন্ডামী প্রমাণিত হয়।
ধর্মের ভুলগুলো, বর্বরতাগুলো এবং
ধর্মীয় সন্ত্রাসীপণাগুলোকে সমাজ থেকে বিদায় করার জন্য অবশ্যই ধর্মের সমালোচনা
করতে হয়। আর এতে যদি কেউ তার ধর্মীয় অনুভুতি নামের
কাল্পনিক অনুভুতিতে আঘাতের অযুহাত তুলে মানুষ হত্যা করে, সেটা বিশ্বাসের
ভাইরাসের প্রমাণ হিসেবে মানুষের কাছে হাজির হয়।
মডারেট মুসলমানরা
কি বলবেন ধর্মীয় অন্যায় অবিচার গুলো সমাজ থেকে দুর করতে কি ধর্মীয় অনুভুতি নামের
ভিত্তিহীন অনুভুতিকে আঘাত করতে হয়নি? একবার চিন্তা করে দেখুনতো সতীদাহ্ প্রথা, ডাইনী পুড়িয়ে
মারার প্রথা, শিশু হত্যার প্রথা, নারীদেরকে পাথর
মেরে হত্যা করার প্রথা কি সমাজ থেকে দুর করার জন্য সেই সব ধর্মের মানুষের ধর্মীয়
অনুভুতিতে আঘাত করতে হয়নি? নাকি সেই সময়ের মানুষের ধর্মীয় অনুভুতি ছিল না কিন্তু এখন
তৈরী হয়েছে?
সমাজ থেকে ধর্মীয়
অত্যাচার, অনাচার দুর করতে
অবশ্যই ধর্মের সমালোচনা করতে হয়। আর তাতে কে কোন
অনুভুতিতে আঘাত পেল সেটা চিন্তা করলে সমাজ থেকে ধর্মীয় বর্বরতা দুর হতো না।
সাদাকে সাদা বলা
যেমন কোন অপরাধ নয়, কালোকে কালো
বলাতে যেমন কোন অন্যায় হয় না, ঠিক একই ভাবে ধর্মের খারাপগুলোর
বিরোধিতা করাটাও অপরাধ নয়। যুক্তি দিয়ে যদি
প্রমাণ করা যায় যে ধর্ম সত্য নয়, ধর্ম দাড়িয়ে আছে মিথ্যের উপর ভর করে, তবে সেটা কেন
অপরাধ হবে? কেন ধর্মীয়
অনুভুতি নামের অযৌক্তিক, অবৈজ্ঞানিক অনুভুতিতে আঘাত করার অযুহাত তুলা হবে এবং ধর্মীয়
সন্ত্রাসীপণাকে বৈধ করার চেষ্টা করা হবে?
অন্যায়কে অন্যায়
এবং নেয়কে নেয় বলাতে অন্যায়টা কি? ভালোকে ভালো এবং খারাপকে খারাপ বলাতে অপরাধ কি? এবং মিথ্যাকে
মিথ্যা ও সত্যকে সত্য বলাতে অপরাধটা কোথায়? এতে যদি কেউ তার কোন অদ্ভুত অনুভুতিতে
আঘাত পায় (কারণ তার অনুভুতি শক্তি খুবই দুর্বল) তবে কার কি করার আছে?
ঠিক একই ভাবে
মুক্তমনা এবং বিশ্বাসের ভাইরাস মুক্ত মানুষগুলো সব সময়ই ধর্মের সমালোচনা করে এবং
সব সময়ই ধর্মের মিথ্যেবাদীতা প্রমাণ করে থাকে। এটা প্রাচীন কাল
থেকেই চলে এসেছে। ধার্মিকগুলো যদি তাদের মিথ্যে ধর্মকে
সত্য বলে প্রচার করার অধিকার রাখে এবং তাতে যদি কারও কোন অদ্ভুত অনুভুতিতে আঘাত
না লাগে, তবে অধার্মিক ও
বিশ্বাসের ভাইরাস মুক্ত মানুষগুলোরও অধিকার রয়েছে ধর্মের ভুল ও মিথ্যেবাদিতা
প্রকাশ করার। আর এতে কারো অনুভুতিতে আঘাত পাওয়াও উচিত
নয়। কারণ মত প্রকাশের অধিকার সবারই আছে। যদি ধার্মিকরা
মিথ্যেবাদিতা প্রচার করার অধিকার রাখে তবে নি-ধার্মিকেরও অধিকার রয়েছে ধর্মের
মিথ্যেবাদিতা ধরিয়ে দেবার। এতে কে কোন
অনুভুতিতে আঘাত পেল সেটা দেখার দায়িত্ব সত্য প্রচারকারীর নয়।
যদি পৃথিবীর সব
ধর্মকে সমালোচনা করা যায় এবং এতে তাদের অনুভুতিতে আঘাত না লাগে এবং এর জন্য যদি
কোন ধর্মের অনুসারীরাই কোন মানুষকে হত্যা না করে তবে কেন শুধু ইসলাম ধর্মের
অনুসারীদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত লাগবে? অনুভুতি কি শুধু মুসলমানদেরই আছে? অন্য কারও নেই? তবে তারা কেন
মানুষকে হত্যা করে না সমালোচনা করার দায়ে। যদি সবাই সমালোচনাকে
অনুভুতিতে আঘাত হিসেবে দেখে হত্যাকে বৈধ মনে করে, তবে পৃথিবীতে কেউ
কোন ভিন্ন মতই প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না। কারণ যেকোন ভিন্ন
মতের আবির্ভাবই ঘটে অন্য একটা মতকে সমালোচনা করার মাধ্যমে। পৃথিবীতে এটাই
স্বাভাবিক এবং এটাই ঘটেছে সব সময়। আর যারা
সমালোচনার জবাবে মানুষকে অত্যাচার করেছে, হত্যা করেছে ইতিহাস তাদেরকে সন্ত্রাসী
হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ঠিক তেমনি ধর্মীয়
মতবাদের বিপক্ষে যদি কোন মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, তবে অবশ্যই সেই
মতবাদটিকে ধর্মীয় মতবাদের সমালোচনা করতে হবে। আর এতে যদি কেউ
কোন অদ্ভুত অনুভুতিতে আঘাত পায় তবে সেটার দায় সেই সমালোচনাকারীর নয়। সেটার দায়
সম্পূর্ণই সেই অতি অদ্ভুত ও দুর্বল অনুভুতিশীল ধার্মিকের।
আর তাই ধর্মের ভুল
ত্রুটির সমালোচনা করলে যদি কারো ধর্মীয় অনুভুতি নামের অদ্ভুত দুর্বল অনুভুতিতে
আঘাত লাগে এবং তার জন্য কোন মানুষকে হত্যা করতে হয় তবে সেটা অবশ্যই অপরাধ এবং
হত্যাকারী একজন সন্ত্রাসী।
কারো অনুভুতিতে
যদি সমস্যা থাকে তবে সেই অনুভুতিশীল মানুষটিই তার জন্য দায়ী, অন্য কেউ নয়। কারোও অনুভুতি
যদি মানুষকে হত্যার পথে নিয়ে যায় তবে সেই অতি অনুভুশীল মানুষটি অসুস্থ। তার অনুভুতিশীলতায়
সমস্যা আছে। সমস্যাটা তার মগজে, মাথায়। আর তার জন্য
চিকিৎসা দরকার।
ধর্মীয় অদ্ভুত ও
অতি দুর্বল অনুভুতিটা হলো বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের ভাইরাসে আক্রান্ত
হবার প্রতিক্রিয়া। বিশ্বাসের ভাইরাসটিই ধর্মীয় অতি দুর্বল
অনুভুতিশীল মানুষের মনে আঘাত লাগার পরিবেশ তৈরী করে। ফলে সে আর কোন
সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। এটি বিশ্বাসের
ভাইরাসে আক্রান্ত হবার একটি প্রতিফল। এর চিকিৎসা অবশ্যই
বিশ্বাসের ভাইরাসটিকে মেরে ফেলা।
যেহেতু (অন্ধ)
বিশ্বাসের ভাইরাসটি ধর্মকে ও ধার্মিককে কেন্দ্র করে বেড়ে উঠে তাই ধার্মিকদেরকে
অবিশ্বাসী করতে হবে এবং ধর্মের ভাইরাসগুলোকে উচ্ছেদ করতে হবে।
আর এর ফলে কেউ আর
বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মানুষ হত্যা করতে পারবে না।
ফলে হুমায়ুন আজাদ, অভিজিৎ রায়, রাজিব ও
ওয়াশিকুরের মতো বিশ্বাসের ভাইরাস মুক্ত মুক্তমনাদেরকে অকাতরে প্রাণ দিতে হবে না
কিছু বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া সন্ত্রাসীর হাতে। শরীরের ক্যানসার
হলে বা ভাইরাস আক্রান্ত হলে যেমন শরীরের অঙ্গকে কেটে ফেলতে হয় ঠিক সেভাবেই
বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিঃশেষ হওয়া ধার্মিকটিকেও সমাজ থেকে নির্মুল করতে
হবে। তবেই বিশ্বাসের ভাইরাস আর ছড়াতে পারবে না এবং অন্যকে
আক্রান্ত করতে পারবে না। এবং হুমায়ুন আজাদ, অভিজিৎদের মতো
প্রতিভাবানদেরকে প্রাণ দিতে হবে না। এবং রাজিব হায়দার
বা ওয়াশিকুর বাবুর মতো বিশ্বাসের ভাইরাস প্রতিরোধী মানুষদেরকে অকাতরে প্রাণ দিতে
হবে না। পৃথিবী থেকে ধর্মীয় সন্ত্রাসীপনাও দুর
হবে। পৃথিবী হবে বিশ্বাসের ভাইরাস মুক্ত মুক্তবুদ্ধির মানুষদের
বসবাসের উপযোগি।
আর তাই "ইহা
সহী ইসলাম নহে, ওহারা সহী মুসলিম
নহে" জাতিয় কথা বলে ইসলামকে বাঁচানো যাবে না। “বিশ্বাস কোন
ভাইরাস নয়, বিশ্বাসের
ভাইরাসের ফলে ধর্মীয় সন্ত্রাসীপনা হয় না” বলার কোন উপায়
নেই।
বি.দ্র.: বিশ্বাস
একটি ভাইরাস। এটি জীবানু ভাইরাসের মতো নয়। এটি কম্পিউটার
ভাইরাসের মতো অদৃশ্য সংকেত ভাইরাস। কম্পিউটার ভাইরাস
সচল থাকে পোগ্রামিং লেঙ্গুয়েজের মাধ্যমে। কিন্তু বিশ্বাসের
ভাইরাস সচল থাকে প্রাচীণ গল্পগাথা ও প্রাচীণ কালের ভ্রান্ত বিশ্বাসের রুপকথার
কথামালার মাধ্যমে। বিশ্বাসের ভাইরাসগুলো তাই ছড়িয়ে পড়ে
ধর্মীয় বাণী হিসেবে একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষের মধ্যে। জীবানু ভাইরাস
মানুষের শরীরকে আক্রান্ত করে, কম্পিউটার ভাইরাস কম্পিউটারের সিপিইউকে আক্রান্ত করে এবং
বিশ্বাসের ভাইরাস মানুষের মনকে আক্রান্ত করে।
বিশ্বাসের ভাইরাস
যেহেতু কিছু কথার সংকেত তাই এটিকে দেখা যায় না। ঠিক মানুষের
অনুভুতিগুলোর মতো, যেগুলোর অস্তিত্ব
আছে শুধুই মানুষের মনে মানুষের মস্তিষ্কে, কিন্তু বাইরে
থেকে এদেরকে দেখা যায় না। বিশ্বাসের ভাইরাসগুলোও ঠিক তেমনি ভাবে
মানুষের মনে অর্থাৎ মস্তিষ্কে বসবাস করে কিন্তু বাইরে থেকে দেখা যায় না। মানুষের অনুভুতি
গুলো যেমন দেখা যায় না কিন্তু এটির অস্তিত্ব প্রকাশ পায় হাসি, কান্না, রাগ অভিমানের মধ্য
দিয়ে, ঠিক একই ভাবে বিশ্বাসের ভাইরাসের অস্তিত্ব প্রকাশিত হয়
ধর্মীয় উন্মাদনার মাধ্যমে। ধার্মিকগুলোর
হিংস্রতা, বর্বরতা নৃসংশ
হত্যাকান্ডগুলোই বিশ্বাসের ভাইরাসের প্রমাণ।
No comments:
Post a Comment