সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা আছে। কারণ সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কোন কিছুই নিজে নিজে সৃষ্টি হতে পারে না। তাই এই বিশ্বজগতের অবশ্যই একজন সৃষ্টিকর্তা আছে। কারণ যেহেতু কোন কিছু সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে না তাই এই বিশ্বজগতও কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারবে না। আর তাই অবশ্যই একজন সৃষ্টিকর্তা আছে যে বিশ্বজগতের সব কিছুকে সৃষ্টি করেছে।
আস্তিকরা এই যুক্তিকে
সব চেয়ে সঠিক ও সত্য যুক্তি হিসেবে বিশ্বাস করে। তাদের কাছে এর উপরে
আর কোন যুক্তি হয় না। কিন্তু যুক্তিবাদী মানুষ যখন এই যুক্তিটি
নিয়ে ভাবে তখন তারা খুব সহজেই এই যুক্তিটির অসাড়তা ধরে ফেলে।
এটি কোন যুক্তি নয়। এটি একটি অপযুক্তি
বা কুযুক্তি। এটাকে ইংরেজীতে বলে আর্গুমেন্ট অফ স্পেসাল
প্লিডিং। এর বাংলা অনেকটা এরকম, নিজের সুবিধামত যুক্তি।
আস্তিকদের যুক্তি হলো
কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া নিজে নিজে সৃষ্টি হতে পারবে না। এই যুক্তিটির অসাড়তা
হলো, কোন কিছুই যে সৃষ্টিকর্তা
ছাড়া সৃষ্টি হতে পারবে না এটি কোন প্রমাণিত সত্য নয়। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তাকে
প্রমাণ করার জন্য একটি সুবিধাজনক যুক্তি দাড়া করানো হয়েছে যেটা দিয়ে সৃষ্টিকর্তার
অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায়। কিন্তু এটি কোন যুক্তি নয় বলে এর অসাড়তা
পরিলক্ষিত হয়। যেমন- যদি বলা হয়, এই যুক্তি অনুযায়ী যেহেতু কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা
ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে না তাহলে সৃষ্টিকর্তাও কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারবে
না। কারণ কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে না। ফলে সেই সৃষ্টিকর্তারও
একজন সৃষ্টিকর্তা থাকবে, এবং সেই নতুন সৃষ্টিকর্তারও
আরেকজন সৃষ্টিকর্তা থাকবে। এভাবে অসীম সংখ্যক
সৃষ্টিকর্তা আসবে। ফলে সৃষ্টিকর্তার ধারণাটি ভিত্তিহীন হয়ে যাবে। কারণ তখন প্রত্যেকটি
সৃষ্টিকর্তাও একেকটি সৃষ্টি হবে যা সৃষ্টিকর্তার ধারণাকে মিথ্যে করে দেবে।
কিন্তু আস্তিকরা এই
যুক্তিটিকে মানতে চায় না। তারা দাবী করে সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা
আছে কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। কারণ সে সৃষ্টিকর্তা
তাই তার কোন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই। সে সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই
বিরাজমান রয়েছে। সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি হয়নি তাই তার কোন সৃষ্টিকর্তারও
প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ সব কিছুকেই সৃষ্টি হতে হয় কিন্তু সৃষ্টিকর্তাকে
সৃষ্টি হতে হয় না। সে সৃষ্টি হওয়া ছাড়াই অস্তিত্বশীল হতে পারে।
আস্তিকদের এই দাবী
যে তাদের প্রথম দাবীকে মিথ্যে প্রমাণ করে তারা সেটাও মানতে চায় না। আস্তিকদের প্রথম দাবী
হলো, সব কিছুকে অবশ্যই সৃষ্টি
হতে হবে। সৃষ্টি হওয়া ছাড়া কোন কিছুই বিরাজমান বা
অস্তিত্বশীল থাকতে পারবে না। যেহেতু সৃষ্টি আছে
অর্থাৎ বিশ্বজগত বিদ্যমান তাই অবশ্যই একে সৃষ্টি হতে হয়েছে। তাই অবশ্যই এর একজন
সৃষ্টিকর্তা রয়েছে। তাকেই আস্তিকরা সর্বশক্তিমান ও চিরন্তন সৃষ্টিকর্তা
বলে দাবী করে।
কিন্তু আস্তিকরা যেহেতু
প্রথমেই দাবী করছে যে, সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা
প্রয়োজন; সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কোন
কিছুই সৃষ্টি হতে পারে না বা অস্তিত্বশীল থাকতে পারে না; তাহলে তাদের দাবী অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তারও একজন
সৃষ্টিকর্তা থাকবে; যেহেতু কোন কিছুই
সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে না বা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কোন কিছুই অস্তিত্বশীর থাকতে
পারে না।
অর্থাৎ আস্তিকদের যুক্তি, “কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে
না”, এই যুক্তিটি তাদের
আরেকটি যুক্তি, “সৃষ্টিকর্তার কোন
সৃষ্টিকর্তা নেই”, এদুটো পরস্পর বিরোধী
যুক্তি।
যুক্তি অনুযায়ী, যদি সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তার একান্তই
প্রয়োজন হয় তবে সৃষ্টিকর্তারও একজন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন হবে। আবার যদি সৃষ্টিকর্তা
অন্য কোন সৃষ্টিকর্তার হস্তক্ষেপ ছাড়াই সৃষ্টি হতে পারে তবে আস্তিকদের প্রথম
দাবী, "কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা
ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে না এই যুক্তিটি সম্পূর্ণ ভূল।
যুক্তি অনুযায়ী, কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে
না", আস্তিকদের এই যুক্তিটি
সৃষ্টিকর্তার ক্ষেত্রে সঠিক নয়। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা
অন্য কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে। আর তাই কোন কিছুই
সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারবে না এই যুক্তিটি মিথ্যে।
আস্তিকরা দাবী করে, কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে
না কিন্তু সৃষ্টিকর্তা পারে। অর্থাৎ তাদের নতুন
সংজ্ঞা অনুযায়ী, সব কিছুই সৃষ্টি হতে
একজন সৃষ্টিকর্তার একান্ত প্রয়োজন কিন্তু সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি হবার এবং তার অন্য কোন
সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই।
এটি আরেকটি অপযুক্তি। প্রথমত, কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে
না, তাই একজন সৃষ্টিকর্তা
অবশ্যই আছে", এই যুক্তিটি আস্তিকদের
নিজেদের তৈরী করা একটা কথা। এর কোন বাস্তব প্রমাণ
নেই। অর্থাৎ এটি একটি অপ্রমাণিত বিষয়। কিন্তু আস্তিকরা এই
অপ্রমাণিত কথাটিকেই আরেকটা অপ্রমাণিত বিষয়ের (সৃষ্টিকর্তার) প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপণ
করছে।
"সব কিছুরই একজন
সৃষ্টিকর্তা থাকতে হবে", এটি একটি অপ্রমাণিত
কথা। আবার "সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই" এটি আরেকটি
অপ্রমাণিত বিষয়। সুতরাং সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছে
কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই এই পরস্পর বিরোধী দুটো কথাই অপ্রমাণিত। কেউ প্রমাণ দিয়ে বলতে
পারবে না যে, কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা
ছাড়া সৃষ্টি হতে পারবে না। মানব ইতিহাসে এমন কোন
প্রমাণ নেই যা থেকে মানুষ সিদ্ধান্তে আসতে পারে যে কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি
হতে পারবে না। আবার মানুষ কখনও দেখেনি যে কোন কিছু সৃষ্টি
হয়েছে। (যদিও কোয়ান্টাম লেভেলে সাময়িক সময়ের জন্য
ধনাত্বক শক্তি ও ঋনাত্বক শক্তি তৈরী হয় এবং সাথে সাথে বিলিন হয়ে যায়, কিন্তু এটি নিজে নিজেই সৃষ্টি হয় আবার নিজে
নিজেই ধ্বংশ হয়ে যায়।)
আবার মানুষের কাছে
এমন কোনই প্রমাণ নেই যা দিয়ে সে সিদ্ধান্তে আসতে পারে যে সৃষ্টিকর্তা অন্য কোন সৃষ্টিকর্তার
হস্তক্ষেপ ছাড়াই সৃষ্টি হতে পারবে কিন্তু অন্য কিছু সেটা পারবে না।
আর তাই, "কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে
না" এটা যেমন অপ্রমাণিত বিষয় ঠিক তেমনি "সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই"
সেটিও একটি অপ্রমাণিত বিষয়। আর তাই "সব কিছুরই
একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছে" এবং সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই" এই দুটো
পরস্পর বিরোধী অপ্রমাণিত বিষয় দিয়ে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণ দেওয়াটা অযৌক্তিক।
প্রথমত, "সব কিছুকে অবশ্যই সৃষ্টি হতে হবে আর তাই সব
কিছুর অবশ্যই একজন সৃষ্টিকর্তা থাকবে" এই দাবীটি করে আস্তিকরা নিজেরাই। আবার তারাই যখন দাবী
করে যে "সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই" তখন এই দাবীটা তাদেরই
প্রথম দাবীকে মিথ্যে প্রমাণ করে দেয়। যদিও দুটোই তাদের
দাবী।
এখন প্রশ্ন করাটা যৌক্তিক
যে, তাদের দাবী অনুযায়ী
"কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারবে না বা সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা
থাকতে হবে" আস্তিকরা এই দাবীটি করে আবার পরক্ষনেই কেন সম্পূর্ণ ভিন্ন দাবী করে
যে "সৃষ্টিকর্তা অন্য কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে বা সৃষ্টিকর্তার
কোন সৃষ্টিকর্তা নেই"? তারাই কোন প্রমাণ
ছাড়া দাবী করছে যে কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারবে না" আবার তারাই
দাবী করছে যে, সৃষ্টিকর্তা অন্য কোন
সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে। আস্তিকদের প্রথম অপ্রমাণিত
দাবী যে দ্বিতীয় অপ্রমাণিত দাবীর বিপরীত এটা কি তারা বুঝতে পারছে না?
যদি সৃষ্টিকর্তা অন্য
কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই সৃষ্টি হতে পারে তবে কেন অন্য কিছু সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি
হতে পারবে না? যদি সৃষ্টিকর্তার কোন
সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন না হয় তবে বাকী সব কিছুর কেন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন হবে?
কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা
ছাড়া সৃষ্টি হতে পারবে না" এটা যেমন একটি অপ্রমাণিত কথা ঠিক তেমনি “সৃষ্টিকর্তার কোন
সৃষ্টিকর্তা নেই” এটিও অপ্রমাণিত কথা। আর তাই আস্তিকদের দাবী
অনুযায়ী যদি সৃষ্টিকর্তা অন্য কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে তবে বাকী সব কিছুর
কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে কোন সমস্যা নেই। কারণ কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা
ছাড়া সৃষ্টি হতে পারবে না এটা কোন প্রমাণিত কথা নয়। আর সৃষ্টিকর্তার কোন
সৃষ্টিকর্তা না থেকে সৃষ্টিকর্তা অস্তিত্বশীল হতে পারলে অন্য সব কিছুরও কোন সৃষ্টিকর্তা
ছাড়া অস্তিত্বশীর হওয়া সম্ভব হবে।
ফলে যেসব আস্তিকরা
অতিউৎসাহী হয়ে দাবী করে যে, "সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা
থাকতে হবে কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই কারণ সে সৃষ্টিকর্তা
তাই সে সৃষ্টির উর্ধ্বে", তাদের কে প্রশ্ন করা
যায় যে “কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে না” এই অপ্রমাণিত দাবীটি
আস্তিকদের নিজেরই। এবং সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছে কিন্তু
সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই এই অপ্রমাণিত দাবীটিও আস্তিকদের নিজেদের। আর তাই দুটো পরস্পর
বিপরীত দাবীকে একই সাথে সত্য বলে দাবী করা এবং সৃষ্টিকর্তা সব কিছুরই উর্ধ্বে বলে আরেকটি
অপ্রমাণিত বিষয় এনে আগের দুটো বিপরীত অপ্রমাণিত দাবীকে সত্য প্রমাণ করার চেষ্টা করাটা
সম্পূর্ণ ভাবে অযৌক্তিক।
“সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা
রয়েছে কারণ কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে না। কিন্তু সেই সৃষ্টিকর্তার
কোন সৃষ্টিকর্তা নেই কারণ সে সৃষ্টির উর্ধ্বে এবং সে সৃষ্টিকর্তা বলে তার কোন সৃষ্টিকর্তার
প্রয়োজন নেই। কারণ সেই হলো সৃষ্টিকর্তা। সুতরাং সৃষ্টিকর্তার
কোন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই”।
এটিকে আপাত দৃষ্টিতে
যুক্তি বলে মনে হলেও এটি একটি অপযুক্তি বা কুযুক্তি।
কারণ প্রথমত, “সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছে কারণ কোন
কিছুই একজন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে না”, এটিকে যদি সত্য বলে
ধরে নেই তাহলে "সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা আছে" এই অনুসিদ্ধান্তটি আমাদের
মুল যুক্তি ধরে নিতে হবে। অর্থাৎ যুক্তি অনুযায়ী সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা
থাকবে। কিন্তু আমরা যখন দেখবো বলা হয়েছে "কিন্তু
সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই" এই অনুসিদ্ধান্তটি প্রথম অনুসিদ্ধান্তটিকে
ভুল প্রমাণ করছে। কারণ প্রথম অনুসিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব কিছুরই
একজন সৃষ্টিকর্তা থাকবে। ফলে যুক্তি অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তারও একজন সৃষ্টিকর্তা
থাকবে। কিন্তু দ্বিতীয় অনুসিদ্ধান্তে বলা হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার
কোন সৃষ্টিকর্তা নেই, যেটি প্রথম অনুসিদ্ধান্ত
"সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা আছে" এটির বিপরীত বা বিরোধী। অর্থাৎ প্রথম অনুসিদ্ধান্ত
অনুযায়ী দ্বিতীয় অনুসিদ্ধান্ত ভূল। আবার দ্বিতীয় অনুসিদ্ধান্ত
অনুসায়ী প্রথম অনুসিদ্ধান্ত ভূল।
আবার পরে যখন বলা হচ্ছে
যে, সৃষ্টিকর্তা সব সৃষ্টির
উর্ধ্বে তখন এই তৃতীয় অনুসিদ্ধান্তটি প্রথম অনুসিদ্ধান্তকে ভূল প্রমাণ করে। "কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা
ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে না" কিন্তু "একটা কিছু সৃষ্টির উর্ধ্বে যেতে পারে"
অর্থাৎ একটা কিছু সৃষ্টি না হয়ে বিরাজমান থাকতে পারে বা একটা কিছুর সৃষ্টি হবার দরকার
পরে না অর্থাৎ একটা কিছুর সৃষ্টিকর্তা নেই", এই অনুসিদ্ধান্তদুটো
পরস্পরের বিপরীত। অর্থাৎ প্রথম অনুসিদ্ধান্ত যদি সত্য হয় অর্থাৎ
"সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছে" এই দাবীটা যদি সত্য হয় তবে দ্বিতীয় অনুসিদ্ধান্ত
অর্থাৎ "সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই" এটি মিথ্যে হয়ে যায়; কারণ এক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তা
কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই সৃষ্টি হতে পেরেছে যেটা প্রথম অনুসিদ্ধান্তের বিপরীত। আবার যদি তৃতীয় অনুসিদ্ধান্ত
সত্য হয় অর্থাৎ "সৃষ্টিকর্তা সব সৃষ্টির উর্ধ্বে" এটি সত্য হয় তবে সব কিছুরই
একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছে এই প্রথম অনুসিদ্ধান্তটি মিথ্যে হয়ে যায়। কারণ তখন সৃষ্টিকর্তা
সৃষ্টির উর্ধ্বে চলে যায় এবং সে সৃষ্টি না হয়েই অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তাহীন অবস্থায় থাকে
যেটা প্রথম অনুসিদ্ধান্তের বিপরীত অর্থাৎ সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছে এটি মিথ্যে
হয়ে যায়।
আর তাই এই দাবীটিকে
আস্তিকরা যুক্তি বলে দাবী করলেও এটি একটি অপযুক্তি বা কুযুক্তি।
আর তাই আস্তিকরা যখন
দাবী করে, "সৃষ্টিকর্তা সব কিছুর
সৃষ্টিকর্তা বলে তার কোন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই। কারণ সেই হলো সৃষ্টিকর্তা। সুতরাং সৃষ্টিকর্তার
কোন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই" এটি একটি তালগাছ আমার জাতিয় যুক্তি। সৃষ্টিকর্তার কোন
সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই কারণ সে সৃষ্টিকর্তা। আর তাই সৃষ্টিকর্তার
অন্য কোন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই। আস্তিকদের এই দাবীটি
যদি সত্য হয়ে থাকে তবে প্রথম অনুসিদ্ধান্ত যেখানে বলা হয়েছে সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা
রয়েছে সেটি আর সত্য থাকে না। কারণ তখন সৃষ্টিকর্তার
কোন সৃষ্টিকর্তা থাকে না যা প্রথম অনুসিদ্ধান্তের বিপরীত।
আর তাই আস্তিকদের পরস্পর
বিরোধী এসব দাবীর কোন ভিত্তি নেই। তারা তাদের সুবিধামত
একের পর এক অপ্রমাণিত বিষয় হাজির করে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণ দিবে যেগুলো
ভূল ও অযৌক্তিক। তারা প্রথমে দাবী করবে সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই
রয়েছে। যখন তাদের কাছে প্রমাণ চাওয়া হবে তখন তারা
বলবে, “অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা
বলে একজন রয়েছে, কারণ কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা
ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে না”। কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা
ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে না এই দাবীর কোন ভিত্তি নেই। এটি একটি অপ্রমাণিত
দাবী। আর যখন আস্তিকদেরকে বলা হবে যে যদি কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া
সৃষ্টি হতে না পারে তবে সৃষ্টিকর্তাও কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারবে না। তখন আস্তিকরা আরেকটা
নতুন দাবী করে বলবে যে, “সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা
আছে কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই”। সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা
রয়েছে কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই, এই দাবীটাও একটি অপ্রমাণিত
দাবী। আর এই অপ্রমাণিত দাবীটি দিয়ে প্রথম অপ্রমানিত দাবীটির সত্যতা
যাচাই করার চেষ্টা করে হচ্ছে। দ্বিতীয় এই দাবীটি
প্রথম দাবীর বিপরীত চলে যাচ্ছে। কারণ যদি সৃষ্টিকর্তার
কোন সৃষ্টিকর্তা নাই থাকে তবে সব কিছুর একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছে এটি মিথ্যে হয়ে যায়।
আবার প্রশ্ন আসে যদি
সৃষ্টিকর্তা অন্য কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে তবে অন্য সব কিছু কেন সৃষ্টিকর্তা
ছাড়া সৃষ্টি হতে পারবে না।
আস্তিকরা আবার নতুন
করে দাবী করে, "সৃষ্টিকর্তার কোন
সৃষ্টিকর্তা নেই কারণ সে সৃষ্টিকর্তা। আর সৃষ্টিকর্তার কোন
সৃষ্টিকর্তার দরকার হয় না।" প্রথমে আস্তিকরা দাবী
করেছে সব কিছুর একজন সৃষ্টিকর্তার দরকার হয়। তাই একজন সৃষ্টিকর্তা
আছে। পরে আবার দাবী করে যে,
“সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই” যেটা প্রথম দাবীর
বিপরীত। আবার আস্তিকরা নতুন করে দাবী করে যে, সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন
নেই, কারণ সে সৃষ্টিকর্তা। তাহলে যদি সৃষ্টিকর্তার
কোন সৃষ্টিকর্তা নাই থাকে তবে সব কিছুর একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছে এই দাবীটি সত্য নয়। কারণ সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টিকর্তা
হবার কারণে তার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। অর্থাৎ “সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা
আছে” এই দাবীটা সত্য নয়। আবার “সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকর্তার
দরকার হয় না কিন্তু বাকী সব কিছুর সৃষ্টিকর্তার দরকার হয়” এই দাবীটিও অপ্রমাণিত।
মোট কথা সৃষ্টিকর্তার
অস্তিত্বের যেসব প্রমাণ (অযুক্তি, কুযুক্তি ও অপযুক্তি)
আস্তিকরা উপস্থাপণ করে সেগুলোর সব গুলোই অপ্রমাণিত। কিন্তু আস্তিকরা এই
অপ্রমাণিত দাবীগুলো উপস্থাপন করে একটা অপ্রমাণিত দাবী দিয়ে আরেকটা অপ্রমাণিত দাবীর
সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করে। এবং সেই অপ্রমাণিত
দাবীর সত্যতা প্রমাণ করতে যেয়ে আবার নতুন আরেকটা অপ্রমাণিত বিষয় হাজির করে।
যেহেতু সৃষ্টিকর্তা
ব্যাপারটিই অপ্রমাণিত তাই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণের জন্য এই অপ্রমাণিত দাবীগুলো
উপস্থাপন করা ছাড়া আস্তিকদের আর অন্য কোন পথ খোলা থাকে না। সৃষ্টিকর্তার ধারণা
ভিত্তিহীন বলেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণের জন্য ভিত্তিহীন ও অপ্রমাণিত দাবী
হাজির করতে হয় যেগুলো অযৌক্তিক কুযৌক্তিক ও অপযৌক্তিক।
সৃষ্টিকর্তার ধারণা
ভিত্তিহীন বলেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য উপস্থাপিত দাবীগুলোও হয় অযুক্তিপূর্ণ, কুযুক্তিপূর্ণ ও অপযুক্তিপূর্ণ।
No comments:
Post a Comment