পৃথিবীর সব আস্তিকদের
মত খ্রিস্টানরাও তাদের ধর্মকে পৃথিবীর একমাত্র সত্য ধর্ম বলে বিশ্বাস করে। তারা বিশ্বাস করে যে
তাদের সৃষ্টিকর্তা হলো পৃথিবীর একমাত্র সত্য সৃষ্টিকর্তা আর তাদের ধর্ম গ্রন্থ হলো
একমাত্র সত্য ধর্মগ্রন্থ। পৃথিবীর সব ধর্মের আস্তিকদের মত খ্রিস্টানরাও
মনে করে শুধুমাত্র তাদের ধর্মই সত্য আর বাকী সবার ধর্ম মিথ্যা। তারা বিশ্বাস করে শুধু
তাদের সৃষ্টিকর্তা ব্যাতিত পৃথিবীর সব সৃষ্টিকর্তাই মিথ্যা। এবং তাদের অন্ধবিশ্বাস
যে তাদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলই হলো পৃথিবীর একমাত্র সত্য সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ধর্মগ্রন্থ
আর বাকী সবার ধর্মগ্রন্থ হলো মানুষের তৈরী করা।
কিন্তু বাইবেল-এ নানা
রকম ভূল ভ্রান্তি থেকে একথা স্পষ্ট ভাবে প্রমানিত হয় যে এটি কোন ক্রমেই সৃষ্টিকর্তা
প্রদত্ত কোন গ্রন্থ হতে পারে না। আর তাই পৃথিবীর সব
ধর্মের আস্তিকদের মতই খ্রিস্টানদের দাবীরও কোন ভিত্তি নেই। পৃথিবীর সব ধার্মিক
যেমন তাদের ধর্মগ্রন্থকে একমাত্র সত্য সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ধর্মগ্রন্থ বলে দাবী করে
কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই, ঠিক সেভাবে খ্রিস্টানরাও বাইবেলকে সত্য সৃষ্টিকর্তা
প্রদত্ত ধর্মগ্রন্থ বলে বিশ্বাস করে কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই।
আর এজন্যই বাইবেল পড়লে
নানা পরস্পর বিরোধী কথা, নানা ভূল ভ্রান্তিপূর্ণ তথ্য এবং ধারণা পাওয়া যায় পুরো বাইবেলে।
এই পর্বগুলো শুরু
করা হয়েছে বাইবেলকে বিশ্লেষণ করে দেখার জন্য এবং প্রমাণ করার জন্য যে এটা সৃষ্টিকর্তা
প্রদত্ত গ্রন্থ, নাকী এটি মানুষের মন গড়া একটা সাধারণ মানের বই।
গত পর্বে বাইবেলের
কিছু বৈজ্ঞানিক ভূল দেখানো হয়েছে। প্রমাণ করা হয়েছে যে
বাইবেলে প্রাচীণ মানুষের প্রাচীণ এবং ভ্রান্ত ধ্যান ধারনা বর্ণনা করা হয়েছে যাতে নানা
ভূল ও ভ্রান্তিকর কথা বলা হয়েছে। আর তাই এটি কোন ক্রমেই
কোন সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত গ্রন্থ নয়।
এই পর্বটিতেও বাইবেলের
কিছু মিথ্যে ও ভ্রান্তিপূর্ণ ধারণা বর্ণনা করা হবে।
পুস্তক জেনেসিস
(সৃষ্টির বিবরণ), অধ্যায় ১
১.১৪
তারপর ঈশ্বর বললেন, “দিন থেকে রাত্রিকে পৃথক করার জন্য আকাশে আলো
ফুটুক| এই আলোগুলি বিশেষ সংকেত
হিসেবে ব্যবহৃত হবে| আর দিন ও বছর বোঝাবার
জন্য এই আলোগুলি ব্যবহৃত হবে|
আলোচনাঃ বাইবেলে বিতর্কীত
বিষয়গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এর পূর্বের ভার্সগুলো
অনুযায়ী ইশ্বর (সৃষ্টিকর্তা) প্রথমে পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টি করেছে। প্রথম দিন পৃথিবী আকাশকে
সৃষ্টি করে তাতে আলোর ব্যবস্থা অর্থাৎ রাত ও দিন সৃষ্টি করেছে (পূর্বের পর্ব দ্রষ্টব্য)। কিন্তু তখনও পর্যন্ত
সূর্য বা চাঁদ-তাঁরা কোন কিছুই তৈরী করা হয়নি। দ্বিতীয় দিনে পৃথিবীর
উপরে জমে থাকা জলকে দুই ভাগ করে আকাশ তৈরী করেছে। আর এটা করতেই সৃষ্টিকর্তার
দুই দিন লেগে গেছে। তৃতীয় দিনে নিচের পৃথিবীকে মহাসাগর ও ভুমি
তৈরী করেছে। এবং তাতে নানা জাতের উদ্ভিত ও ঘাস তৈরী করেছে। এতোটুকু করতেই মহাশক্তিশালী
সৃষ্টিকর্তার তিন দিন লেগে গেছে। সৃষ্টিকর্তা একটু আলসে
প্রকৃতির বলে মনে হয়।
চতুর্থ দিনে এসে মহান
সৃষ্টিকর্তা দিন থেকে রাত্রিকে পৃথক করার জন্য আকাশে আলো ফুটার ব্যবস্থা করেছে।
বাইবেল যে প্রাচীন
কালের অজ্ঞ মানুষ দ্বারা লিখিত হয়েছে এই অংশটুকুই তার বড় প্রমাণ। বিজ্ঞান বলে আলো সৃষ্টি
হয়েছে বিশ্বজগত সৃষ্টির প্রাথমিক অবস্থাতেই। তার অনেক অনেক পরে
তারকাগুলো সৃষ্টি হয়েছে। তারও বিলিয়ন বছর পরে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু খ্রিস্টানদের
আদরের গ্রন্থ বলছে পৃথিবী প্রথমে সৃষ্টি হয়েছে তারপর আকাশে (মানে কি মহাশুন্যে?) আলোর ব্যবস্থা হয়েছে।
প্রাচীণকালের মানুষের
দ্বারা এটা জানা সম্ভব ছিল না যে পৃথিবী আগে তৈরী হয়নি বরং তারকাগুলো (মানে আলো)
আগে সৃষ্টি হয়েছে। তাও বিলিয়ন বছর আগে।
সুতরাং এটা বুঝাই যাচ্ছে
খ্রিস্টানদের মহা পবিত্র গ্রন্থ মিথ্যার হাড়ি নিয়ে বসে আছে। আর একের পর এক মিথ্যা
বুলি আওড়িয়ে যাচ্ছে।
১.১৫
এবং পৃথিবীতে আলো
দেবার জন্য এগুলো আকাশে থাকবে। এবং সেরকমই হলো।
আলোচনাঃ বাইবেল অনুযায়ী
প্রথমে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে এবং পরে আকাশে তারকাগুলো তৈরী হয়েছে। এমনকি চাঁদ ও সূর্যও
পৃথিবী সৃষ্টি হবার পরে সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু বিজ্ঞান অনুযায়ী
প্রথমে সূর্য সহ তারকাগুলো তৈরী হয়েছে এবং তার কোটি কোটি বছর পরে পৃথিবী তৈরী হয়েছে।
অর্থাৎ পৃথিবীর সব
ধর্মগ্রন্থের মতো বাইবেলও প্রাচীণকালের আজগুবি কথা গুলোকে সত্য হিসেবে বর্ণনা করেছে। যেহেতু বাইবেল প্রাচীণকালের
মানুষের দ্বারা রচিত হয়েছে তাই সেই প্রাচীণ মানুষদের ভ্রান্ত ধারনাই বাইবেলে বর্নিত
হয়েছে।
১.১৬
ঈশ্বর দুটি মহাজ্যোতি
বানালেন| ঈশ্বর বড়টি বানালেন
দিনের বেলা রাজত্ব করার জন্য আর ছোটটি বানালেন রাত্রিবেলা রাজত্ব করার জন্য| ঈশ্বর তারকারাজিও সৃষ্টি করলেন|
আলোচনাঃ খ্রিস্টানদের
ইশ্বর (সৃষ্টিকর্তা) বড়ই দয়াময়। বেচারা প্রথমে পৃথিবী
সৃষ্টি করেছে এবং তাতে নানা জাতের উদ্ভিদ তৈরী করেছে এবং তারপর আকাশে চাঁদ, সূর্য ও তারকারাজি সৃষ্টি করেছে।
আহা! কত মহান খ্রিস্টানদের
ইশ্বর!
কিন্তু বেচারা ইশ্বর
জানেই না যে প্রথমে সূর্য সহ সব তারকা তৈরী হয়েছে এবং তারপর সব শেষে পৃথিবী তৈরী হয়েছে। আর সূর্যের আলো ছাড়া
কিভাবে পৃথিবীতে গাছপালা উৎপন্ন হলো এটাও একটা মিরাকল বটে!
খ্রিস্টানদের সর্বজ্ঞানী
সৃষ্টিকর্তা নাকি দিনের বেলা রাজত্ব করার জন্য সূর্যকে সৃষ্টি করেছে আর রাতের বেলা
রাজত্ব করার জন্য চাঁদকে সৃষ্টি করেছে।
বেচারা সৃষ্টিকর্তা
কি জানে যে, সে হালুয়া মার্কা কথা
বার্তা বলেছে বাইবেলে?
বড়টি বেশী আলো দেয়
বলে এটাকে দিনের বেলাতে রাজত্ব করতে দিয়েছে ইশ্বর। ভাগ্যিস এটাকে দিনের
বেলাতে রাজত্ব করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে;
রাতের বেলা রাজত্ব করতে দিলেতো মানুষ এটাকে দেখতেই পেত না। আর ছোটটিকে (চাঁদকে)
যদি রাতে রাজত্ব করতে না দিতো তবে মানুষতো রাতে আরামে ঘুমাতেও পারতো না। কত মহান ইশ্বর! মারহাবা
মারহাবা!
খ্রিস্টানদের ইশ্বরের
যে কোন জ্ঞান বুদ্ধি নেই এই কথাগুলোই তার প্রমাণ। কোথাই বলবে যে, “ইশ্বর দিনকে সৃষ্টি করার জন্য সূর্য সৃষ্টি
করেছে এবং রাতে যেন মানুষ মৃদু আলো পায় তাই চাঁদকে রাখা হয়েছে”, তাহলেও হতো। কিন্তু মহাম ইশ্বর
বলেছে, দিনের বেলা রাজত্ব
করার জন্য সূর্যকে সৃষ্টি করেছে। মূর্খ ইশ্বর ভেবেছে
যে দিন আর সূর্য বুঝি আলাদা। কিন্তু বাস্তবে দিন
তৈরি হয় সূর্যের কারণে। আর তাই সূর্য আছে বলেই দিন আছে। আর তাই সূর্য দিনের
বেলা রাজত্ব করার জন্য নয় বরং দিনকে তৈরী করার জন্য তৈরী হয়েছে। অন্যভাবে বললে সূর্যই
দিনের জনক।
আবার চাঁদের কোন আলো
নেই। তাই চাঁদ রাতের বেলা রাজত্ব করে না। চাঁদ সূর্যের আলোকে
প্রতিফলিত করে বলে পৃথিবীতে হালকা আলো আসে। আবার চাঁদ দিনের বেলাতেও
রাজত্ব করে থাকে। তাই বাইবেলের কথাটা একেবারে ফালতু কথা ছাড়া
আর কিছুই নয়।
১.১৭, ১.১৮ এবং ১.১৯
পৃথিবীকে আলো দেওয়ার
জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে স্থাপন করলেন|
দিন ও রাত্রিকে কর্তৃত্ত্ব
দেবার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে সাজালেন|
এই আলোগুলি আলো আর অন্ধকারকে পৃথক করে দিল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে|
সন্ধ্যা হল এবং সকাল
হল| এভাবে চতুর্থ দিন হল|
আলোচনাঃ বাইবেলের
ভাষ্য মতে আকাশে সূর্য, চাঁদ ও তারকাগুলো
তৈরী করা হয়েছে শুধুমাত্র পৃথিবীতে আলো দেবার জন্যই। এই বাক্যগুলো এটাই
প্রমাণ করে যে, পুরো বাইবেল প্রাচীণকালের
স্বাধারণ মানুষের দ্বারা তৈরী হওয়া এক প্রাচীণ ভ্রান্ত ধারণার বই। প্রাচীণ মানুষ বিশ্বজগত
সম্পর্কে কিছুই জানতো না বলে তারা খোলা চোখে যতটুকু দেখা যায় ঠিক ততটুকুকেই বিশ্বজগত
ভেবেছে। পৃথিবী, চাঁদ-সূর্য এবং তারকাগুলোকে মানুষ আকাশে স্থাপিত দেখেছে। আর ভেবে নিয়েছে যে
এগুলোকে শুধু মাত্র পৃথিবীকে আলো দেবার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। সেই প্রাচীণকালে বসে
তাদের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না যে, দৃশ্যমান আকাশের বাইরেও
বিশ্বজগতের এক বিরাট অংশ রয়েছে। যা মানুষ তখনও আবিষ্কার
করেনি। আর তাই তারা বিশ্বজগত বলতে পৃথিবী এবং বায়ুমন্ডলে
প্রতিফলিত ও প্রতিসরিত হওয়া সূর্য, চাঁদ,
তাঁরা এবং নীল আকাশকেই সমগ্র বিশ্বজগত ভেবেছে। আর তাই তারা ধরে নিয়েছে
যে সূর্য ও তারকারাজি সৃষ্টি করার একটাই কারণ,
আর সেটা হলো পৃথিবীতে আলো দেওয়া।
কিন্তু তারা জানতো
না যে বিশ্বজগতের একটা বড় অংশে তারকারাজি ছাড়াও আলো অনেক কিছুই আছে যা তৈরীর উদ্দেশ্য
কখনই পৃথিবী নয়। যেমন ডার্ক ম্যাটার এবং লক্ষ কোটি গ্যালাক্সী। বাইবেলে বর্ণিত কথা
সত্য হলে শুধু একটা গ্যালাক্সী হলেই চলতো। লক্ষ কোটি গ্যালাক্সি
তৈরী করার কোনই মানে হতো না।
আর তাই বাইবেলের কথাগুলো
এটাই প্রমাণ করে যে বাইবেল শুধু এক স্বাধারণ মানুষের দ্বারাই তৈরী হওয়া এক প্রাচীণ
ভ্রান্ত ধারণার বই।
মজার ব্যপার হলো সর্বশক্তিমান
ইশ্বরের পৃথিবী ও সূর্য-তাঁরা তৈরি করতে পুরো চার দিন লেগে গেছে। আর কৌতুককর কথা হলো সূর্য-চন্দ্র চতুর্থ দিনে
এসে তৈরী করেছে ইশ্বর।
বোকা ইশ্বর এসব গাঁজাখুঁরি
কথা বলেছে বিনা দ্বিধায়। বেচারা জানেও না যে, দিন রাত হয় সূর্যের আলো এবং পৃথিবীর ঘূর্ণনের
ফলে। আর যদি সূর্য চন্দ্র নাই তৈরী হয়ে থাকে তবে দিন রাত হবে কিভাবে?
অথচ বোকা ইশ্বর ভেবেছে
যে, সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজি
তৈরি হবার আগেই পৃথিবীতে দিন রাত তৈরী হতে শুরু করেছিল।
বেটা কত বড় গর্ধব!
১.২০, ১.২১,
১.২২ এবং ১.২৩
তারপর ঈশ্বর বললেন, “বহু প্রকার জীবন্ত প্রাণীতে জল পূর্ণ হোক
আর পৃথিবীর ওপরে আকাশে ওড়বার জন্য বহু পাখী হোক|”
সুতরাং ঈশ্বর বড় বড়
জলজন্তু এবং জলে বিচরণ করবে এমন সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করলেন| অনেক প্রকার সামুদ্রিক জীব রয়েছে এবং সে
সবই ঈশ্বরের সৃষ্টি| যত রকম পাখী আকাশে
ওড়ে সেইসবও ঈশ্বর বানালেন| এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটি
ভাল হয়েছে|
ঈশ্বর এই সমস্ত প্রাণীদের
আশীর্বাদ করলেন| ঈশ্বর সামুদ্রিক প্রাণীদের
সংখ্যাবৃদ্ধি করে সমুদ্র ভরিয়ে তুলতে বললেন|
ঈশ্বর পৃথিবীতে পাখীদের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে বললেন|
সন্ধ্যা হয়ে গেল এবং
তারপর সকাল হল| এভাবে পঞ্চম দিন কেটে
গেল|
আলোচনাঃ উপরের ভার্সগুলো
সব ভুল ভাল হলেও বাইবেলের এই অংশটুকু কাকতালিয় ভাবে মিলে গেছে।
বিবর্তনবাদ অনুযায়ী
প্রথমে উদ্ভিদ তৈরী হবার পরেই প্রাণী তৈরী হয়েছে। কারণ প্রাণীদের বেঁচে
থাকার জন্য যে অক্সিজের দরকার হয় সেটা উৎপন্ন করেছে উদ্ভিদ। আর তাই উদ্ভিদ উৎপন্ন
হবার পরেই প্রাণীর উৎপত্তি ঘটেছে।
বিবর্তনবাদ অনুযায়ী
প্রথম প্রাণী জলে উৎপন্ন হয়েছে, বাইবেলও এটা সত্যি
বলেছে যে প্রথমে সমুদ্রেই প্রাণীর উৎপত্তি ঘটেছে। এবং তারপর স্থলের ও
আকাশে উড়ন্ত প্রাণীর উৎপত্তি ঘটেছে। এই ক্ষেত্রে বাইবেল
রচয়িতা সেই প্রাচীণ মানুষদের ধারণা সত্যি হয়েছে।
একথা সত্যি যে প্রথমে
প্রানীর আবির্ভাব সমুদ্রেই ঘটেছে এবং তারপরই স্থল ও উড়ন্ত পাখিদের উৎপত্তি ঘটেছে।
১.২৪, ১.২৫
তারপর ঈশ্বর বললেন, “নানারকম প্রাণী পৃথিবীতে উত্পন্ন হোক| নানারকম বড় আকারের জন্তু জানোয়ার আর বুকে
হেঁটে চলার নানারকম ছোট প্রাণী হোক এবং প্রচুর সংখ্যায় তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি হোক|” তখন যেমন তিনি বললেন সব কিছু সম্পন্ন হল|
সুতরাং ঈশ্বর সব রকম
জন্তু জানোয়ার তেমনভাবে তৈরী করলেন| বন্য জন্তু, পোষ্য জন্তু আর বুকে হাঁটার সবরকমের ছোট ছোট
প্রাণী ঈশ্বর বানালেন এবং ঈশ্বর দেখলেন প্রতিটি জিনিসই বেশ ভালো হয়েছে|
আলোচনাঃ এই ভার্সগুলো
কিছুটা বিবর্তনের সাথে মিলে গেলেও কিছুটা ভুলও আছে এতে। পূর্বের ভার্স অনুযায়ী
প্রথমে জলের প্রাণী উৎপন্ন হয়েছে এবং তারপর উড়ন্ত প্রাণী অর্থাৎ স্থলের পাখি উৎপন্ন
হয়েছে। আর স্থলের পাখি তৈরী হবার আগেই স্থলের কিছু
প্রাণী তৈরী হয়েছিল। আর তাই এই ভার্সটির জলের প্রাণীর পরে স্থলের
প্রাণী উৎপন্ন হবার কথাটা সঠিক থাকলেও পাখি সৃষ্টি হবার পরে অন্যান্য স্থলের প্রাণী
সৃষ্টি হয়েছে কথাটি মিথ্যে।
আর তাই এর আগের ভার্সগুলো
পড়ে যারা ভেবেছে যে বাইবেল হয়তোবা সৃষ্টিকর্তা মনোনিত গ্রন্থ তাদেরকে জানাতে চাই
যে বাইবেল সৃষ্টিকর্তা মনোনিত কোন গ্রন্থ নয়। পৃথিবীর সব ধর্মগ্রন্থের
মতো বাইবেলও মানুষের দ্বারা তৈরী হওয়া একটা প্রাচীন ধ্যান ধারণার বই।
কারণ বাইবেল বলছে যে, প্রথমে জলের প্রাণী তৈরী হয়েছে এবং পরে স্থলের
প্রানী তৈরী হয়েছে। এই কথাটি বিজ্ঞানের (বিবর্তনের) সাথে মিলে
গেলেও এই ভার্স বলছে যে প্রথমে পাখি সৃষ্টি হয়েছে এবং পরে স্থলের অন্যান্য প্রাণী সৃষ্টি
হয়েছে। আর এটি বিজ্ঞান বিরোধী কথা হওয়ায় এটাই প্রমাণিত
হয় যে বাইবেল কোন সৃষ্টিকর্তা মনোনিত গ্রন্থ নয়। বরং বাইবেল প্রাচীণ
কালের মানুষের দ্বারা তৈরীকৃত একটি স্বাধারণ মানের প্রাচীণ বই।
প্রকৃতিতে নানা রকম
সমস্যা থাকলেও ইশ্বরের কাছে ব্যবস্থাটা ভালো হয়েছে এমনটি মনে হয়েছে।
অথচ প্রকৃতিতে নানা
রকমের বিশৃংখলা সব সময়ই বিরাজমান রয়েছে প্রাণীদের মধ্যে। এক প্রাণী আরেক প্রাণীকে
মেরে খেয়ে ফেলে। আর এই ব্যবস্থাটি নাকি ইশ্বরের ভালো বলে
মনে হয়েছে।
(আমি নিশ্চিত ইশ্বর কোন সাইকো টাইপের মানুষ।)
১.২৬
তখন ঈশ্বর বললেন, “এখন এস, আমরা মানুষ সৃষ্টি করি|
আমাদের আদলে আমরা মানুষ সৃষ্টি করব| মানুষ হবে ঠিক আমাদের
মত| তারা সমুদ্রের সমস্ত
মাছের ওপরে আর আকাশের সমস্ত পাখীর ওপরে কর্তৃত্ত্ব করবে| তারা পৃথিবীর সমস্ত বড় জানোয়ার আর বুকে
হাঁটা সমস্ত ছোট প্রাণীর উপরে কর্তৃত্ত্ব করবে|”
আলোচনাঃ ছয় দিনের
দিন সৃষ্টিকর্তা প্রাণী তৈরী করার পর বললো এখন এসো আমরা মানুষ সৃষ্টি করি। ইশ্বর কাকে বললো? তাহলে কি এক ইশ্বর বাদেও আরো বহু ইশ্বর রয়েছে?
এবং ইশ্বর তার পরিকল্পনা
করে সীদ্ধান্ত নিলো যে সে বা তারা মানুষ তৈরী করবে ইশ্বরের মতো
করেই। অর্থাৎ মানুষ হবে ইশ্বরের মতই। এবং মানুষই পৃথিবীতে
সব কিছুর উপরেই কর্তৃত্ব করবে। মানুষ এমনই ক্ষমতাশালী
হবে।
১.২৭ এবং ১.২৮
তাই ঈশ্বর নিজের মতোই
মানুষ সৃষ্টি করলেন| মানুষ হল তাঁর ছাঁচে
গড়া জীব| ঈশ্বর তাদের পুরুষ
ও স্ত্রীরূপে সৃষ্টি করলেন|
ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ
করে বললেন, “তোমাদের বহু সন্তানসন্ততি
হোক| মানুষে মানুষে পৃথিবী
পরিপূর্ণ করো এবং তোমরা পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণের ভার নাও, সমুদ্রে মাছেদের এবং বাতাসে পাখিদের শাসন
করো| মাটির ওপর যা কিছু
নড়েচড়ে, যাবতীয় প্রাণীকে তোমরা
শাসন করো|”
আলোচনাঃ সুতরাং বাইবেল
মতে ইশ্বর তাদেরই মতো করে মানুষকে সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ মানুষ ইশ্বরের
মতোই দেখতে। ইশ্বরেরও নিশ্চয়ই দুটো হাত, দুটো কান, দুটো পা এবং একটি মুখ আছে। বাইবেল অনুযায়ী ইশ্বর
তার ছাঁচেই মানুষকে গড়েছে। অর্থাৎ মানুষ এবং ইশ্বর
দেখতে একই রকমের।
কী চমৎকার কারবার!!!
ইশ্বরের আশীর্বাদেই
যদি বহু সন্তানাদি হয়ে থাকে তবে সরকার কেন বলে যে একটি সন্তানই যথেষ্ট। সরকার ঠিক ইশ্বরের
বিরোদ্ধে কথা বলে। এটা মহা পাপ!
ইশ্বর মাছ পাখি এবং
সব প্রাণীর উপর শাসন করতে বলেছে। কিন্তু বদমাশ মানুষগুলো
কিছু প্রাণীকে শাসন করলেও সব প্রাণীকে শোসন করে সব সময়ই।
এটা মহা পাপই বটে!
১.২৯, ১.৩০,
এবং ১.৩১
ঈশ্বর বললেন, “আমি তোমাদের শস্যদায়ী সমস্ত গাছ ও সমস্ত
ফলদায়ী গাছপালা দিচ্ছি| ঐসব গাছ বীজযুক্ত ফল
উত্পাদন করে| এই সমস্ত শস্য ও ফল
হবে তোমাদের খাদ্য|
এবং জানোয়ারদের সমস্ত
সবুজ গাছপালা দিচ্ছি| তাদের খাদ্য হবে সবুজ
গাছপালা| পৃথিবীর সমস্ত জন্তু
জানোয়ার, আকাশের সমস্ত পাখি
এবং মাটির উপরে বুকে হাঁটে যেসব কীট সবাই ঐ খাদ্য খাবে|” এবং এই সব কিছুই সম্পন্ন হল|
ঈশ্বর যা কিছু সৃষ্টি
করেছেন সেসব কিছু দেখলেন এবং ঈশ্বর দেখলেন সমস্ত সৃষ্টিই খুব ভাল হয়েছে| সন্ধ্যা হল, তারপর সকাল হল| এভাবে ষষ্ঠ দিন হল|
আলোচনাঃ এই ভার্সগুলো
দেখে এটা বুঝা যাচ্ছে যে ইশ্বর যা কিছু পরিকল্পনা করেছিল সব কিছুই মানুষ এবং জানোয়ারেরা
ব্যার্থ করে দিয়েছে।
প্রথমত. ইশ্বর মানুষকে
বলেছে শুধু শস্য ও ফল খেতে; কিন্তু বদমাশ মানুষগুলো
ইশ্বরের আদেশ অমান্য করে শাক-সবজি অর্থাৎ ঘাস এবং মাছ মাংসও খায়। অর্থাৎ বেয়াদব মানুষগুলো
ইশ্বরের আদেশ অমান্য করে শাক তথা ঘাস ও সবজি এবং মাছ মাংস খেয়ে পাপ কাজ করে। আর তাই পৃথিবীর সব
মানুষই পাপী।
দ্বিতীয়ত. ইশ্বর জানোয়ারদের
জন্য ঘাস খাদ্য হিসেবে গ্রহন করার জন্য বলেছে;
কিন্তু বেত্ত্বমিস জানোয়ারগুলো মাংস খায় এবং ঘাস ছাড়া নানা রকমের খাদ্য খেয়ে
বেড়ায়। বেয়াদব জানোয়ারের বাচ্চাগুলো ইশ্বরের কথার
অবাধ্য হয়েছে। ইশ্বর নিশ্চিত এগুলোকে নরকে দেবে। আবার ইশ্বর বাঘ সিংহ
এবং পাখিদেরকেও গরু ছাগলের মতো করে ঘাস খেতে বলেছে। কিন্তু ফাজিল জানোয়ার
বাঘ-সিংহ কাঁচা মাংস খায় এবং স্টুপিড পাখিগুলো ঘাস না খেয়ে ফল-মূল
(যেটা মানুষের জন্য বরাদ্য করেছে ইশ্বর, সেগুলো) খায়। এই শয়তানগুলোও সাক্ষাৎ
নরকে যাবে।
ইশ্বর দেখলো ব্যবস্থাটি
খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু ইশ্বরতো আর জানতো না যে মানুষ সহ
সব জানোয়ার ইশ্বরের কথার অবাধ্য হয়ে যা খুশি তাই খাওয়া শুরু করবে। বেচারা ইশ্বর!
আর এসব কিছু করতে করতেই
ছয় দিন পার হয়ে গেলো। ইশ্বর মহা শক্তিশালী হওয়া সত্তেও বিশ্বজগত
সৃষ্টি করতে ছয় দিন লেগে গেলো।
একথা নিশ্চিত যে ইশ্বর
খুব বেশী রকমের অলস এবং কাজে খুব ঢিলেমীপূর্ণ মানুষ।
সুতরাং খ্রিস্টানদের
দাবী মতো বাইবেলে বর্ণিত বিশ্বজগত সৃষ্টির হাস্যকর গল্প শুধু বাচ্চাদেরকেই ঘুম পাড়ানী
গল্প হিসেবে বলা যায়। তা ছাড়া এর অন্য কোন গুরুত্ব নেই। কারণ বাইবেলে বর্ণিত
বিশ্বজগতের সৃষ্টি পদ্ধতি খুব বেশীই হাস্যকর, অবাস্তব এবং অবৈজ্ঞানিক। আর তাই বাইবেল কোন
ক্রমেই কোন সৃষ্টিকর্তা মনোনিত গ্রন্থ হতে পারে না। বরং বাইবেলে বর্ণিত
বিশ্বজগতের সৃষ্টির হাস্যকর বর্ণনা এটাই প্রমাণ করে যে বাইবেল হলো প্রাচীণ কালের প্রাচীণ
মানুষের ধ্যান ধারণার ফসল। অর্থাৎ বাইবেল প্রাচীণ
মানুষের ভ্রান্ত চিন্তা ধারার ফলে সেই প্রাচীণ মানুষের দ্বারা লিখিত এক সাধারণ প্রাচীন
বই।
অর্থাৎ “বাইবেল একটি কৌতুক
গ্রন্থ, গল্প গ্রন্থ, সন্ত্রাসী গ্রন্থ, রক্তপিপাসী গ্রন্থ এবং মিথ্যার সংকলন” এটি সত্য কথা।
No comments:
Post a Comment