পৃথিবী আমাদের সবার। এখানে সবারই সমান অধিকার নিয়ে বাঁচার অধিকার আছে। মানুষ বিবর্তনের মাধ্যমে বনের সাধারণ পশু থেকে আসা এক সাধারণ প্রাণী মাত্র। কিন্তু মানুষ বনের এক সাধারণ পশু থেকে আজকের আধুনিক সভ্য মানুষে উন্নিত হতে পেরেছে। তৈরী করতে পেরেছে একটি সভ্য সভ্যতা। মানুষ তার মানবতার জন্য শ্রেষ্ট; মনুষ্যত্ত্বের জন্যই সে মানুষ হিসেবে পৃথিবীর বুকে গর্বের সাথে টিকে আছে।
পৃথিবীতে মানুষ সহ
আরও হাজারও রকমের প্রাণী বাস করে। মানুষের যেমন বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে তেমনি অন্য প্রাণীদেরও
বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। কারণ পৃথিবীটা আমাদের সবার।
পৃথিবীতে সব মানুষের
সমান অধিকার রয়েছে। সব মানুষেরই বেঁচে থাকার সমান অধিকার আছে।
কিন্তু পৃথিবীতে মানুষরা
নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরী করে রেখেছে। উঁচুনিচু নানা স্তর সৃষ্টি করেছে। সাদা কালো, হিন্দু-খ্রিস্টান-মুসলমান ইত্যাদি নানা স্তরে
মানুষ বিভক্ত। আরও একটা বড় ভেদাভেদ হলে নারী-পুরুষে ভেদাভেদ। এদের সবাই একদল আরেক দলের চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ট
মনে করে। কিন্তু শ্রেষ্টত্বের মাপ কাঠি কি নিজের হাতেই যে, যে কেউ নিজেকে শ্রেষ্ট বলে দাবী করতে পারে?
নিজে নিজে যে সিদ্ধান্ত
নেওয়া হয় নিজেকে শ্রেষ্টত্ব নির্ণয়ে সেটা কি কখনও সঠিক হতে পারে? বিজয়ী নির্ণয় করতে হলে বিচারকের প্রয়োজন হয়। এটাই সত্য,
এটাই বাস্তবতা।
কিন্তু মানুষের মাঝে
ভেদাভেদ সৃষ্টিকারী মানুষগুলো কিন্তু নিজেরাই নিজেদেরকে শ্রেষ্ট বলে রায় দেয়। তারা সুষ্ঠ নির্বাচন
পদ্ধতির তুয়াক্কা করে না।
যেমন সাদা মানুষ নিজেদেরকে
কালো মানুষদের থেকে শ্রেষ্ট বলে রায় দিয়েছে। নিজেরাই বিচারক নিজেদের শ্রেষ্টত্ব নির্ণয়ের জন্য। পুরুষরা নারীদের থেকে নিজেকে শ্রেষ্ট বলে
রায় দিয়েছে। নিজেরাই নিজেদেরকে শ্রেষ্ট নির্বাচণ করেছে। আর সব থেকে ভয়ঙ্কর ভেদাভেদ হল হিন্দু,
মুসলমান ও খ্রিস্টান
ইত্যাদি ধর্মীয় ভেদাভেদ। এরা সবাই নিজেদেরকে অন্যদের থেকে শ্রেষ্ট মনে করে। নিজেরাই নিজেদেরকে
শ্রেষ্ট বলে রায় দিয়েছে।
ধর্মগুলো নানা বিধি
নিষেধ তৈরী করেছে; তৈরী করেছে কিছু আইন। তারা তাদের আইনকেই শ্রেষ্ট বলে মনে করে। এছাড়ায় ধর্মের মূল
ভিত্তি হলো সৃষ্টিকর্তা, নানা ধর্মে নানা রকমের সৃষ্টিকর্তা রয়েছে। এদের সব গুলোই আবার
নিজেকে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা দাবী করে। এখানেও নিজেরাই নিজেদেরকে শ্রেষ্ট নির্বাচিত করেছে।
সব ধর্মই নিজেদেরকে
একমাত্র সত্য বলে রায় দিয়েছে। আর বাকীদেরকে মিথ্যে বলে রায় দিয়েছে। এখানেও তারা নিজেদেরকে নিজেরাই শ্রেষ্ট নির্বাচন
করেছে।
ধর্ম নির্ধারন করে
দিয়েছে পুরুষ নারীদের থেকে শ্রেষ্ট। ধর্ম সৃষ্টি হয়েছে পুরুষের হাত ধরে; আর তাই পুরুষরা নিজেদেরকে শ্রেষ্ট বলে দাবী
করবে এটাতো জানা কথাই। কারণ সব কিছুতেই তো নিজেরা নিজেদেরকে শ্রেষ্ট নির্বাচন করেছে। এক্ষেত্রেও পুরুষ সৃষ্টিকর্তা
পুরুষদেরকে শ্রেষ্ট নির্বাচন করবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ সবাই নিজেরাই নিজেদেরকে শ্রেষ্টত্ত্বের
আসনে বসিয়ে দেয়। মানুষ নিজেরাই নিজেদের শ্রেষ্ট নির্বাচন করাকেই মানুষের বুদ্ধিমত্ত্বার বৈশিষ্ট্য
হিসেবে নির্বাচন করেছে। আর এটাও তারা নিজেরাই নির্ধারণ করে রেখেছে।
ধর্মগুলোর এরকম নিজেরাই
নিজেদেরকে সব ক্ষেত্রে শ্রেষ্ট দাবী করার কুফল পড়েছে খুবই খারাপ ভাবে। মানুষে মানুষে বিভেদ
সৃষ্টি হয়ে গেছে। কারণ যারা নিজেরাই নিজেদেরকে শ্রেষ্ট নির্বাচন করে আর নিজেদেরকে শ্রেষ্ট বলে দাবী
করে তাদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই। পৃথিবীর মানুষ বিভক্ত হয়ে গেছে সাদাতে কালোতে,
নারীতে পুরুষে,
হিন্দুতে মুসলমানে,
খ্রিস্টানে বৌদ্ধে। আর সবই হয়েছে নিজেরাই
নিজেদেরকে শ্রেষ্ট নির্বাচন ও নিজেদেরকে অন্যদের থেকে শ্রেষ্ট বলে দাবী করার কারণে।
সাদাতে কালোতে ভেদাভেদ
এক সময় খুবই ভয়ঙ্কর মাত্রায় ছিল। কিন্তু আধুনিক সভ্য সমাজে এই বিভেদ মানুষ দুর করতে পেরেছে। নারীতে পুরুষে ভেদাভেদও
কিছুটা দুর হয়েছে এবং সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে এটি দুর হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান
বিভেদ সহজে দুর হচ্ছে না। কারণ এই একটি মাত্র ক্ষেত্রেই মানুষ আপোষহীন । নিজেরা নিজেদেরকে শ্রেষ্ট
ধর্মের অনুসারী দাবীতে কোন ধর্মই পিছু হটে না। তারা নিজেরাই নিজেদেরকে শ্রেষ্ট নির্বাচন
করা থেকে বিরত থাকে না। ফলে ধর্মীয় ভেদাভেদটাই মানুষের সব চেয়ে বড় ভেদাভেদ। আর এই ভেদাভেদের মুল কারণে আছে মানুষের নিজেদেরকে
শ্রেষ্ট ভাবা।
এক ধর্মের মানুষ নিজেদেরকে
অন্য ধর্মের মানুষের থেকে শ্রেষ্ট মনে করে। এক ধর্মের মানুষ নিজেদেরকে সঠিক বলে রায় দেয়। আর অপরকে ভ্রান্ত বলে
রায় দেয়। আর এটা তারা করে তাদের নিজেদেরকে নিজেরাই শ্রেষ্ট নির্বাচন করার মত প্রাচীন মানবীয়
গুন বা বৈশিষ্ট্য থেকে। এর থেকে তারা কেউ বেরিয়ে আসতে পারে না।
মুসলমানরা পৃথিবীর
সব ধর্মের অনুসারীদের থেকে নিজেদেরকে শ্রেষ্ট মনে করে। কারণ তারা নিজেরাই নিজেদেরকে শ্রেষ্ট নির্বাচন
করে নিয়েছে। হিন্দুরা পৃথিবীর সব ধর্মের অনুসারীদের চেয়ে নিজেদেরকে শ্রেষ্ট মনে করে। তারাও নিজেরাই নিজেদেরকে
শ্রেষ্ট বলে রায় দিয়েছে। আবার খ্রিস্টান বৌদ্ধরাও নিজেদেরকে শ্রেষ্ট বলে দাবী করে। এক্ষেত্রে তারাও প্রত্যেকে
প্রত্যেককে শ্রেষ্ট নির্বাচন করে নিয়েছে।
আর তাই ধর্মীয় ভেদাভেদের
পিছনেও কাজ করে নিজেরাই নিজেদেরকে শ্রেষ্ট নির্বাচন করার মতো মানুষের স্বাধারণ বৈশিষ্ট্য। কারণ মানুষের একটা
বৈশিষ্ট্য হলো নিজেকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ট মনে করা বা নিজেকে শ্রেষ্ট বলে নিজেই রায়
দেওয়া।
এজন্য হিন্দুরা মনে
করে পৃথিবীতে তারাই শ্রেষ্ট আর তাই পৃথিবীতে শুধু তাদেরই বাস করার অধিকার রয়েছে। খ্রিস্টানরা মনে করে
পৃথিবী ও বিশ্বজগত সৃষ্টির উদ্দেশ্য এক মাত্র খ্রিস্টানরাই। ইহুদিরা মনে করে তারাই পৃথিবীর শ্রেষ্ট জাতি। আর তাই পৃথিবী তাদেরই। আবার মুসলমানরা মনে
করে তাদের ধর্মই সঠিক (বাকী সব ধর্মের মতই); পৃথিবীটা তাদেরই জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আর তাই পৃথিবীতে তারাই
রাজত্ত্ব করবে। আর অবাক করা কান্ড হলো সব ধর্মের মধ্যে মুসলমানরাই হলো বেশী হিংস্রতাপুর্ন এবং
অন্যদের প্রতি আক্রমনাত্বক। পৃথিবীর সব ধর্মের অনুসারিরাই তাদেরকে শ্রেষ্ট মনে করে আর অন্যদের
উপর যুলুম চালায়। কিন্তু মুসলমানরা সবার চেয়ে বেশী সন্ত্রাসী ভাবাপন্ন। আর তাই বর্তমানে ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের সবাই
ইসলামেরই। এই সন্ত্রাসীরা মনে করে পৃথিবী তাদেরই, আর তাই পৃথিবীতে তাদের আইন প্রতিষ্টা করার
জন্য তারা যা ইচ্ছা সেটাই করতে পারে। তারা দরকার হলে পৃথিবীর সব ভিন্ন ধর্মের মানুষকে মেরে ফেলবে
তবুও তারা তাদের বিধান প্রতিষ্টা করবেই। এটা করে তাদের নিজেদেরকে শ্রেষ্ট নির্বাচন করার মানুষিকতা থেকে। কারণ এটা মানুষের একটা
ভূল গুন বা বৈশিষ্ট্য যা সব মানুষের মধ্যেই থাকে।
তবে অন্য ধর্মের মানুষগুলো
অনেক বেশী মানবিক হয়ে গেছে প্রাচীনকালের বর্বরতার তুলনায়। কিন্তু মুসলমানরা আগের মতই বর্বর ও হিংসাত্ত্বক
রয়ে গেছে। ফলে তারা এখনও অন্য ধর্মের তুলনায় অনেক বেশী উগ্র, বর্বর ও সন্ত্রাসী ভাবাপন্ন।
কিন্তু খুশীর কথা হলো
মুসলমানদের এই সংখ্যাটা অত্যন্ত নগন্য্ যদি সব মুসলমানরা সেই প্রাচীন মুসলমানদের মত
থেকে যেতো তবে পৃথিবীতে তারা তান্ডব চালিয়ে যেত। কিন্তু মুসলমানদের বড় অংশই সেই প্রাচীন বর্বরতা
থেকে বেরিয়ে এসেছে। আর তাই তারা শান্তিপ্রিয় মানুষ। কিন্তু যারা সেই প্রাচীন মুসলমানদের মত থেকে গেছে তারা এখনও
সেই প্রাচীন মুসলমানদের মতই বর্বর ও সন্ত্রাসী ভাবাপন্ন। ফলে একমাত্র মুসলমানরাই সন্ত্রাসী ধর্মের
অনুসারী হিসেবে পৃথিবীতে এখনও সেই প্রাচীন ইসলামের চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্য কোন ধর্মই মুসলমানদের
(একটা ক্ষুদ্র অংশের) মতো এমন সন্ত্রাসী ও বর্বর নয়।
মুসলমানরা নিজেরাই
নিজেদেরকে শ্রেষ্ট বলে রায় দিয়েছে। আর তাই তারা মনে করে পৃথিবী তাদের। তাই তারা যা ইচ্ছে তাদের বিধান প্রতিষ্ঠার
জন্য তাই করবে। এটা কিন্তু তাদের অজ্ঞতার পরিচয়। তারা যে সেই প্রাচীন মানুষদের মত নিজেরাই নিজেদের শ্রেষ্ট দাবী
করার মানুষীকতা রেখেছে এটা তারই ফল। আর তাই তারা অন্য মানুষদের অধিকারকে অস্বীকার করে। সবারই যে পৃথিবীতে
বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে, সেটা সব ধর্মের মত মুসলমানরাও অস্বীকার করে। ফলে যখন কোন ভিন্ন
মতের মানুষ তাদের নিজের মতামত প্রকাশ করে তখন তারা ক্ষেপে উঠে। হিংস্র ও বর্বর হয়ে
উঠে। তারা অন্য মানুষের
মতামতের গুরুত্ব দিতে চায় না। তারা যদি নিজেরাই নিজেদেরকে শ্রেষ্ট বলার অধিকার রাখে তবে অন্য
কারও অধিকার রয়েছে তাকে নিম্ন মানের বলার। যদি সে অন্যদেরকে নিকৃষ্ট দাবী করার অধিকার রাখে তবে অন্য কারোও
অধিকার রয়েছে ওই মানুষটিকে নিকৃষ্ট বলার। কিন্তু ধার্মীকগুলো অন্যদেরকে নিকৃষ্ট বলায় মজা পেলেও তাদেরকে
কেউ নিকৃষ্ট বলবে সেটা তারা মেনে নিতে পারে না। আর তাই একজন মুসলমান সব ধর্মের মানুষ নিকৃষ্ট
দাবী করে এবং নিজেদেরকে শ্রেষ্ট দাবী করতে পারে কিন্তু অন্য কেউ যদি তাকে নিকৃষ্ট বলে তবে তেঁড়ে আসে মারতে। হিন্দু, খ্রিস্টান বৌদ্ধ সব
ধর্মেরই এই গুনটা অবাক করার মত কমন বা একই রকম। তবে মুসলমানরা বেশীই উগ্র ও হিংস্র।
তারা উগ্রতা দেখাতে
পারে হিংস্র আচরণ করতে পারে কিন্তু কেউ যদি তাদের আচরণের জন্য তাদেরকে উগ্র বা হিংস্র
বলে তবে তাকে মেরে ফেলতে উদ্দ্যত হয়। তারা সবার দুর্নাম করবে কিন্তু তাদের দুর্নাম সহ্য করবে না। এজন্যই সারা পৃথিবীতে
মুসলমান কর্তৃক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডই একমাত্র ধর্ম দ্বারা ঘটিত সন্ত্রাসী কর্ম কান্ড। পৃথিবীর মানুষ ধর্মীয়
বর্বরতা থেকে বেরিয়ে এসেছে ও সভ্য হয়েছে। কিন্তু ধর্মীয় অন্ধরা এখনও সেই প্রাচীন আমলের ধর্ম অনুসারীদের
মতই হিংস্র থেকে গেছে। অন্যান্য ধর্ম তাও কিছুটা সহনশীল হয়েছে কিন্তু মুসলমানরা এখনও সেই দেড় হাজার বছর
আগের তাদের ধর্মের অনুসারীদের বর্বরতা ও হিংস্রতা ১০০% ধরে রেখেছে এবং এখনও সেই প্রাচীনকালের
মতই বর্বর ও হিংস্র থেকে গেছে। তবে আমাদের সৌভাগ্য যে সেই প্রাচীন মুসলমানীয় বর্বরতা ও হিংস্রতা
ধরে রেখেছে শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক মুসলমান। আর বাকীরা তাদের ধর্মীয় বর্বরতা ও হিংস্রতা থেকে বেরিয়ে এসেছে।
মানুষের নিজেদেরকে
নিজেরাই শ্রেষ্ট নির্বাচন করার প্রাচীণ বৈশিষ্ট্যই ধর্মীয় বর্বরতা সৃষ্টি করেছে যুগ
যুগ ধরে। এখনও মানুষ নিজেরাই নিজেদেরকে শ্রেষ্ট বলে
রায় দেয় বলেই পৃথিবীতে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ রয়ে গেছে। মানুষ নিজেদেরকে নিজেরাই অন্যদের থেকে শ্রেষ্ট
বলে রায় দেয় বলেই এখনও মানুষের মধ্যে জাতিগত বিভেদ রয়েছে; রয়েছে সাম্প্রদায়িকতা। এই একই কারণে ধার্মিকগুলো
ধর্মীয় হিংস্রতা প্রদর্শন করে।
মানুষে মানুষে ভেদাভেদ
মানুষেরই সৃষ্টি।
No comments:
Post a Comment