বর্তমান সময়ে ধর্মানুভুতি নামের একটি অনুভুতির আমদানি হয়েছে এবং এই অনুভুতিটিই বর্তমানের সব থেকে আলোচিত এবং সমালোচিত অনুভুতি। ধার্মিকরা অনুভুতি বলতে শুধু ধর্মানুভুতিকেই বুঝে। আমি আসলে সঠিক ভাবে বুঝি না ধর্মানুভুতিটা আসলে কি ধরনের অনুভুতি? আর এই অনুভুতিটা পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল অনুভুতি কেন সেটাও একটা চিন্তার বিষয়।
পৃথিবীতে অনুভুতিতে
আঘাতজনীত অনেক জঘন্য কাজ প্রতিনিয়ত ঘটে চলে কিন্তু তাতে কারো অনুভুতিতে আঘাত লাগে
না। বোমা মেরে মানুষ মারা,
নৃশংসভাবে কাউকে খুন
করা এবং ধর্ষনের মতো অমানুবিক অন্যায় করা, এসবের কোনটিতেই কারো কোনরুপ অনুভুতিতে
আঘাত লাগে না। শুধু প্রাচীণ মানুষদের দারা তৈরী হওয়া প্রাচীণ কুসংস্কারের বিরোদ্ধে কিছু বললেই
একদল মানুষের ধর্মানুভুতি নামের অদ্ভুত অনুভুতিতে আঘাত লাগে। কেন এমনটি হয়?
রাজা রামমোহন রায়,
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
প্রভৃতি মানুষেরা যদি হিন্দু কুসংস্কারের বিরোদ্ধে না দাড়াতো তাহলে সতিদাহ্ প্রথার
মতো ভয়ংকর অমানবিক প্রথা কি কখনই রোধ হতো না। বিধবা বিবাহের মতো মহৎ কাজ কি সমাজে প্রচলিত হতো না। ধর্মীয় কুসংস্কার বদলাতে সেই সময়ের মানুষের তথাকথিত ধর্মানুভুতিতে
আঘাত না করা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না।
যদি রাজা রামমোহন
রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
প্রভৃতি মানুষেরা যদি সাধারণ মানুষের মতো করে ভাবতো যে, কারো ধর্মানুভুতিতে আঘাত করা যাবে না তাই
সতিদাহ্ প্রথা রোধ করার কথা বলা যাবে না। তাতে কিছু মানুষের ধর্মানুভুতিতে আঘাত লাগবে; তাই এসব কুসংস্কার চলতেই থাকুক, তাহলে কোন দিনও হিন্দু
সমাজে মানবিকতা আসতো না। তারা এখনও বর্বর থেকে যেতো।
ঠিক তেমনি আজকের দিনে
মুসলমানরা পুরো পৃথিবী জুড়ে যে ধর্মীও সন্ত্রাসী কাজ করে যাচ্ছে, ধর্মানুভুতিতে আঘাত
হানার নামে যদি এই সব সন্ত্রাসী কাজের বিরোধীতা মানুষ না করে তবে পুরো পৃথিবীতে ধ্বংসলীলা
চলতে থাকবে। এখন যদি সবাই ধর্মানুভুতিশীল মানুষদের মতো করে চিন্তা করে বলে, “না, এই সব সন্ত্রাসী কাজের বিরোধীতা করা যাবে
না; তাতে তাদের ধর্মানুভুতিতে
আঘাত লাগবে”। তারা দাবী করে, “পৃথিবীতে তাদের ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে তারা সবাইকে আক্রমন করার
ধর্মীয় অধিকার রাখে; তাই তাদেরকে তাদের ধর্মীয় অধিকার পালন করতে দেওয়া হোক। তাদেরকে এসব কাজের বিরোধীতা করে তাদের ধর্মানুভুতিতে
আঘাত করার অধিকার কারো নেই”; তবে সেটি কি মানবিক হবে?
মুসলিমরা মনে করে মেয়েদের
অধিকার পুরুষদের চেয়ে কম। তাদেরকে পুরুষের কথা মতো সারা জীবন কাটিয়ে দিতে হবে। তারা সারা জীবন পুরুষের
চেয়ে কম মর্যাদার মানুষ হিসেবে কাটিয়ে দেবে। তারা পুরুষের যৌন দাসি হিসেবে তাদের জীবন কাটিয়ে দেবে। পুরুষরা চাইলেই তার
স্ত্রীকে আঘাত করতে পারবে (শারীরিক ও মানুষিক ভাবে)। এবং পুরুষরা তাদের স্ত্রীদেরকে ইচ্ছানুযায়ী
ধর্ষন করতে পারবে।
মুসলিমরা মেয়েদেরকে
ঘরে বন্দি করার পক্ষপাতি। তাদেরকে বস্তাবন্দি করে রাখতে চায় তারা। এমনকি মেয়েদের প্রতি
তাদের হিংসাত্বক মনোভাব কাজ করে সব সময়। তারা মেয়েদেরকে মানুষ মনে করতে চায় না। এবং মেয়েদের প্রতি মানবিকতাও দেখাতে চায় না।
এসব প্রচলিত হয়ে আসছে
ইসলাম ধর্ম আবিভাবের প্রথম থেকেই।
কিন্তু মানুষ এখন আধুনিক
যুগের সভ্য জগতে বসবাস করে। তারা প্রাচীন বর্বরতা মেনে নিতে চায় না। আধুনিক যুগে মানুষ
মেয়েদেরকে পুরুষের সমান মর্যাদা দেয়। আধুনিক মানুষের কাছে একজন নারীর অধিকার এবং মর্যাদা একজন পুরুষের
সমান। তাই মানুষ আর প্রাচীণ
আমলের কিছু মানুষের তৈরী করা বর্বর নিয়ম মানতে চায় না। তাই তারা ধর্মের এসব ভুল নিয়মের বিরোধীতা
করে। ইসলাম ধর্মের যেসব
কালো দিক, যেসব অন্যায় অনাচার আছে সেসবের বিরোধীতা না করে যদি সেগুলোকে চুপচাপ মেনে নেওয়া
হয় এটা বলে যে, কিছু কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের ধর্মানুভুতিতে আঘাত লাগব, তবে কোন দিনও এই সব
বর্বর নিয়ম সমাজ থেকে দুর হবে না। কুসংস্কারের বিরোদ্ধে কথা যদি না বলা হয় কিছু ধর্মান্ধদের ধর্মানুভুতি
নামের অদ্ভুত এক অনুভুতিতে আঘাত লাগবে এই ভয়ে তবে সমাজের কুসংস্কারগুলো থেকেই যাবে। নারীর সম্মানের অবমাননা
করাতে যদি কারো কোন অনুভুতিতে আঘাত না লাগে তবে নারীর প্রতি অবজ্ঞা, অত্যাচান এবং অবিচারের বিরোদ্ধে
কথা বললে কেন সেটা ধর্মানুভুতিতে আঘাত লাগবে বলে দাবী করা হবে?
বোমা মেরে যেসব ধর্মান্ধ
সন্ত্রাসীরা নিরীহ মানুষ মেরে ফেলে তখন কারো অনুভুতিতে যদি আঘাত না লাগে তবে কেন এর
প্রতিবাদ করলে সেটা কোন এক শ্রেণীর মানুষের ধর্মানুভুতিতে আঘাত লাগবে?
কই কখনইতো শুনিনি
যে মুসলমান জঙ্গী কর্তৃক আঘাতপ্রাপ্ত কারো জন্য কোন মুসলমানের মানবতাবোধে আঘাত লেগেছে। বরং মাথা নিচু করে
সবাই সেটাকে মেনে নেয়। কোন মুসলমানরাইতো তাদের ধর্মকে বিকৃত করে তাদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত লেগেছে বলে
সেই সব জঙ্গী মুসলমানের বিরোদ্ধে কিছুই বলে না। প্রতিবাদতো তারা করেই না। কেন এমন ভন্ডামী?
আর এসব কথা বললেই তখন
তাদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত লাগে। কিন্তু কেন?
মুসলমানরা ঠিকই জানে
আই এস, বোকো হারামের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠি যা করছে সেটা ইসলাম রক্ষার নামেই করছে। মনে মনে এটা তারা সমর্থনও
করে। আর তাই এসব সন্ত্রাসী
সংগঠনের বিরুদ্ধে কোন কথাই মুসলমানরা কোন দিন বলে না। আই এস, বোকো হারামের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠি মডারেট
মুসলমানদের থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন ইসলমের চর্চা করে। সাধারণ মানুষ সভ্য হয়েছে, ফলে ইসলামের যেসব অসভ্য,
বর্বর কাজ আছে সেগুলোকে
পরিত্যাগ করে সভ্য মানুষের জীবন যাপন করে। এটা করে তাদের সভ্যতার উন্নতির জন্য। ধর্মের প্রভাবে নয়। কারণ যদি তারা প্রকৃত ইসলাম যেটা মুহাম্মদ
প্রতিষ্ঠা করেছে সেটা পালন করতো তবে তারা সেই আরবীয় বর্বরতা এখনও ধরে রাখতো। যেটা আই এস বা বোকো
হারামের মতো মুসলিম সংগঠন একনিষ্ট ভাবে পালন করে এবং বর্বরতা চালায়।
সভ্য মুসলমানরা তো
সেই আমলের মুসলমানদের মতো বর্বর প্রথাগুলো পালন করে না। বরং তারা সেই সময়ের বর্বর অসভ্য প্রথাগুলো
থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং শান্ত ও সভ্য হয়েছে। আর এতে সমাজ সংস্কারকারীদের অবদানই মুখ্য ছিল।
এই পরিবর্তন করাতে
অনেকের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত লেগেছে। কিন্তু তাই বলে কেউ হাত গুটিয়ে বসে থাকেনি। মানুষ ঠিকই ধর্মের
অসভ্যতাকে ত্যাগ করে সভ্য হয়েছে। এতে কার ধর্মানুভুতিতে আঘাত লাগলো সেই ভয়ে কেউই পিছু হটেনি। এই সব সমাজ সংস্কার
করার জন্য এক শ্রেণীর মানুষের ধর্মানুভুতি নামের অদ্ভুত অনুভুতিতে আঘাত করতে হয়েছে। এর ফলেই আজকের সভ্য
সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সমাজ সংস্কার করার
জন্য ধর্মানুভুতি নামের অদ্ভুত অনুভুতিতে আঘাত করা ছাড়া অন্য কোন পথ নেই।
সাদাকে সাদা বলাতে
যদি কারো কোন অদ্ভুত অনুভুতিতে আঘাত লাগে তবে কার কি করার আছে? কালো কে কালো বললে
কেউ যদি তার অনুভুতিতে আঘাত পায় তবে কার কি করার আছে?
রাজা রাম মোহন রায়,
ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের
মতো মানুষ যদি সমাজের কুসংস্কারের বিরোদ্ধে কথা বলতে পারে তবে আমরা কেন সমাজের কুসংস্কারের
বিরোদ্ধে কিছু বলতে পারবো না কিছু ধর্মান্ধ মানুষের ধর্মানুভুতি নামের অদ্ভুত অনুভুতিতে
আঘাত লাগার কারণে?
বেগম রোকেয়া যদি প্রচলিত
ধর্মের বিরোদ্ধে না যেতো তবে আমাদের সমাজের মেয়েরা এখনও ঘরের কোনায় তাদের সারাটি
জীবন কাটিয়ে দিতো।
ঠিক সেই সময়েও ধর্মানুভুতি
সম্পন্ন কিছু মানুষ এর প্রতিবাদ করে বলেছিল আমাদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত করা যাবে না। কিন্তু তাই বলে কেউ
থেমে থাকেনি কুসংস্কারের বিরোদ্ধে সোচ্চার হওয়া থেকে।
আজকে সব মানুষ নারী
অধিকার নিয়ে কথা বলে; কিন্তু একদিন বর্তমানের ধর্মানুভুতিশীল মানুষদের মতো ধর্মান্ধরা তাদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত করা
হচ্ছে বলে চিৎকার চেচামেচি করেছে। কিন্তু কেউ সেসব কুসংস্কার সংস্কার করা থেকে দুরে সরে যায়নি।
ধর্মের নামে শত অন্যায়
অবিচার হলে কোন ধার্মিকের ধর্মানুভুতিতে আঘাত লাগে না, কিন্তু যখনই ধর্মের অসাড়তা সম্পর্কে বলা হয়
তখনই ধর্মান্ধ কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষগুলোর ধর্মানুভুতিতে আঘাত লাগে। কিন্তু ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের
সন্ত্রাসী কাজের জন্য কারো কোন অনুভুতিতে আঘাত লাগে না। তখন কেন তাদের অনুভুতি নির্লিপ্ত থাকে?
বহু বিবাহ,
বাল্য বিবাহ এসবতো
সমাজ থেকে মানুষ ঝেটিয়ে বিদায় করেছে। তাতে করে আজকের ধর্মানুভুতি সম্পন্ন মানুষদের মতো মানুষগুলো
ঠিকই রেঁ রেঁ করে উঠেছিল (এখনও হেফাজতে ইসলামরা প্রতিবাদ করে)। কিন্তু তাই বলে কুসংস্কারমুক্ত
মানুষগুলো থেমে থাকেনি। তারা ঠিকই ভুল নিয়মের বিরোদ্ধে কথা বলেছে। ধর্মানুভুতিশীল মানুষদের
মতো ধর্মান্ধ মানুষদেরকে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করা ছাড়া সমাজ সংস্কার করা সম্ভব হয়নি।
এখনও যখন আমরা ধর্মের
অন্যায় অবিচারগুলো নিয়ে কথা বলি তখনই একদল মানুষ বলে উঠে, “আমাদের অনুভুতিতে আঘাত করা হয়েছে;
ওরা নাস্তিক,
ওরা কাফের। আর কাফেরকে হত্যা করাতে
কোন দোষ নেই। চলো যাই কাফের হত্যা করি। সুন্নত পালন করি।“ এই বলে ধর্মীয় সন্ত্রাসীরা সমাজ সংস্কারকারী কুসংস্কারমুক্ত
মানুষের উপর হামলা করে। মেরে ফেলা হয় সমাজ সংস্কারকারী কুসংস্কারমুক্ত মানুষদেরকে।
আর এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের
বিরোদ্ধে কিছু বললে আবার তারা বলে উঠে, “আমাদের ধর্মানুভুতিতে কেন আঘাত করা হয়েছে? এর জবাবে উচিৎ কাজটিই
করা হয়েছে। আমাদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত করার অধিকার কারো নেই। যদি কেউ করে তবে তাকেও মেরে ফেলা হবে”।
ব্যাপারটা যেন এমন,
শুধু ধর্মান্ধদেরই
অনুভুতি আছে। পৃথিবীর আর কারো কোন অনুভুতি নেই।
সমাজ সংস্কার মানুষই
করেছে। কুসংস্কার থেকে সমাজকে
মুক্ত করেছে কুসংস্কারমুক্ত মানুষগুলোই।
কার কোন অনুভুতিতে
আঘাত লাগলো তার জন্য সমাজ সংস্কার থেমে থাকেনি কোন দিন। আমরা কাউকে ভয় দেখাই না। শুধু বলি তুমি যেটা
করছো সেটা কুসংস্কার, সেটা ভুল। সত্যকে সত্য বলা এবং মিথ্যেকে মিথ্যে বলাতে যদি কারো অনুভুতিতে
আঘাত লাগে তবে কি করার আছে আমাদের? অন্যায়কে অন্যায় বলাতে কার কোন অনুভুতিতে আঘাত লাগলো সেই ভয়ে
বসে থাকলে অন্যায় সব সময়ই চলতে থাকবে।
কোন মুক্ত মনের মানুষই
কাউকে আঘাত করে না। মানুষিক ভাবেও না, শারীরিক ভাবেও না।
কোন মুক্ত মনের মানুষই
কারো উপর তার বিশ্বাস বা ধারণা চাপিয়ে দেয় না। তারা কাউকে আক্রমনও করে না। তারা শুধু বলে তোমরা
যেটা করছো সেটা ভুল। তোমাদের ধারণা বা বিশ্বাস সত্যি নয়। তোমরা কুসংস্কারকে আকড়ে ধরে বসে আছো। তোমরা অন্ধবিশ্বাসী হয়ে আছ। তোমরা এটা করোনা
এটা ঠিক নয়। তোমরা সত্যটি জান এবং মিথ্যাকে পরিত্যাগ করো। কুসংস্কারমুক্ত হও, অন্ধবিশ্বাসী হইয়োনা। ব্যাস এতটুকুই।
কে তাদের ডাকে সাড়া
দিল কে দিল না সেটা নিয়ে মুক্ত মনাদের কোন চিন্তা নেই। তারা এটা নিয়ে বাড়াবাড়িও করে না। তারা শুধু সত্য কথা
বলে। এমনটাও নয় যে,
তারা কাউকে তাদের কথা
শুনতে বাধ্য করে। তারা তাদের কথা বলে; যে শুনতে চায় সে শুনে। আর যে শুনতে চায় না তাকেও তারা বাধ্য করে
না। মুক্তমনারা কুসংস্কারের
বিরোদ্ধে, অন্ধবিশ্বাসের বিরোদ্ধে। কিন্তু অন্ধবিশ্বাসী বা কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষদের বিরোদ্ধে
নয়। আর তাই তারা কারো
কোন অনুভুতিতেই আঘাত করে না। তারা শুধু সত্যকে সত্য বলে এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলে। ব্যাস এতোটুকুই।
কিন্তু এতে যদি কারো
কোন অনুভুতিকে আঘাত লাগে তবে তাদের কি করার আছে?
সত্যকে সত্য এবং মিথ্যে
কে মিথ্যে বলা এবং এটা প্রমাণ করা কি অন্যায়?
এতে যদি কেউ কোন অনুভুতিতে
আঘাত পায় তবে সে দায় কার? বাক স্বাধীনতাতো সবারই আছে। তবে একজন কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ তার কুসংস্কারের
পক্ষে কথা বলতে পারবে এমনকি তারা ভিন্ন মতের মানুষকে তুলোধুনা করতে পারবে কিন্তু অন্য
কেউ তাদের কুসংস্কারের বিরোদ্ধে কিছু বললেই তাদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত লাগবে এটা কেমন
বিচার? অনুভুতি কি শুধু তাদের একারই আছে? পৃথিবীর আর কারো কোন অনুভুতি থাকতে নেই? এক ধর্ম যখন অন্য ধর্মকে
গালাগালি করে, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে তখন কারো অনুভুতিতে আঘাত লাগে না? ধর্মগুলো যখন নাস্তিকদেরকে গালাগালি করে,
অভিশাপ দেয়,
তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে
তখন তাদের অনুভুতিতে আঘাত লাগে না? অনুভুতি কি শুধু ধার্মীকদেরই আছে? অন্য কারো নেই? অনুভুতি কি শুধু মুসলমানদেরই আছে?
অন্য কোন মানুষের
নেই?
ধর্ম সমাজের জন্য ক্ষতিকর। ধর্ম মানুষকে আর্থিক
ভাবে ক্ষতি করে। মানুষের মুল্যবান সময় অপচয় করে। কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাসের মতো দোষ গুলোকে টিকিয়ে রাখে
ধর্মগুলোই। ফলে মানুষ কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং অন্ধবিশ্বাসী থেকে যায়। ধর্ম নানা অনাচার, বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা সমাজে টিকিয়ে রাখে। আর মানুষকে তার মানবিকতা
দিয়ে ধর্মের কুপ্রভাবগুলোকে সমাজ থেকে বিদায় করে দিতে হয়। ধর্ম যে অন্যায় করেছে সেগুলোকে সবাইকে জানানো
এবং বর্তমানে ধর্ম সমাজে কি কি অন্যায়, অবিচার এবং বর্বরতা করে যাচ্ছে সেটা সবাইকে জানানো প্রত্যেকটি
মানুষেরই দায়িত্ব। পৃথিবীতে বহু মানুষ এসেছে যারা সমাজ থেকে ধর্মীয় বর্বরতা দুর করে সমাজকে সভ্য ও
মানবিক করেছে। ইতিহাস এমনটিই সাক্ষ্য দেয়। এখনও কিছু সমাজ সংস্কারকারী মানুবতাবাদী মানুষ আছে যারা ধর্মীয়
বর্বরতার বিরোদ্ধে কথা বলে সমাজ থেকে ধর্মীয় বর্বরতা দুর করার চেষ্টা করছে।
কিন্তু কিছু ধর্মান্ধ
মানুষ তাদের ধর্মানুভুতি নামের এক অদ্ভুত অনুভুতিতে আঘাত করা হচ্ছে এই দাবী করে সমাজ
সংস্কারমুলক কাজকে বাধা দিতে চায়। তারা তাদের কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখতে হিংস্র হয়ে
উঠে। অমানবিক ও সন্ত্রাসী
কার্যক্রম চালায়। আর এর প্রতিবাদ করলেই চেচামেচি শুরু করে দেয়, তাদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত করা হচ্ছে এটা বলে।
সত্যকে সত্য বলাতে
যেমন কোন অন্যায় নেই। মিথ্যাকে মিথ্যা বলাতে এবং ভুলকে ভুল বলাতে যেমন কোন অন্যায় নেই ঠিক একই ভাবে
ধর্ম যে সমাজের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে, ধর্ম যে মিথ্যা এবং কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের ব্যবহৃত একটা
হাতিয়ার মাত্র সেটা বলাতেও কোন অপরাধ নেই। বরং এটা প্রত্যেকটা সভ্য মানুষের দায়িত্ব।
এতে কার কোন অনুভুতিতে
আঘাত লাগলো সেটা ভেবে বসে থাকলে মানুষ সভ্য থেকে সভ্যতর হতে পারবে না। ধর্মান্ধদের ধর্মানুভুতিতে
আঘাত লাগার ভয়ে চুপচাপ বসে থাকলে সমাজ থেকে কখনই কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস এবং ধর্মীয় বর্বরতা দুর হবে না। সমাজকে সভ্য ও মানবিক
করতে হলে, সমাজ থেকে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস দুর করতে হলে এবং ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ও বর্বরতা
দুর করতে হলে কিছু ধর্মান্ধ মানুষের ধর্মানুভুতি নামের অদ্ভুত অনুভুতিতে আঘাত করা ছাড়া
অন্য কোন উপায় নেই।
No comments:
Post a Comment