বিশ্বাস একটা ভাইরাস। তবে এটি জীবানু ভাইরাসের মত ভাইরাস নয়। এটি কম্পিউটার ভাইরাসের মত। জীবানু ভাইরাস,
কম্পিউটার ভাইরাস এবং
বিশ্বাসের ভাইরাস এগুলোর কাজ একই রকম; পোষক দেহে প্রবেশ করা এবং পোষক দেহকে দখল করে নেওয়া।
কম্পিউটার ভাইরাস কিন্তু কোন জীবানু ভাইরাস নয়। তেমনি বিশ্বাসের ভাইরাসও কোন জীবানু ভাইরাস
নয়। বিশ্বাসের ভাইরাস হলো
কিছু কথা বা কিছু তথ্য যেগুলো মানুষের মনে প্রবেশ করে এবং মনকে দখল করে নেয়। তখন আর মানুষটার নিজের
ইচ্ছে বলে কিছু থাকে না। সে হয়ে যায় বিশ্বাসের ভাইরাস আক্রান্ত একটা রোবট।
এবং তার কাজ বা আচার আচরণ হয়ে যায় অমানবিক। তখন সে আর মানুষ থাকে না।
বিশ্বাসের ভাইরাসগুলোর মধ্যে ধর্ম হলো প্রধান ভাইরাস। এই ভাইরাস মানুষের মনে প্রবেশ করিয়ে দেয়া
হয় শৈশবেই। ফলে সেই বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষটি সারা জীবন ধর্মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত
থাকে। ধর্ম যা তাকে করতে
বলে সে তাই করে। যদি কাজটা অমানবিকও নয় তবু সে সেই কাজ থেকে সরে আসতে পারে না।
আর তাই কোন ধর্মের ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষটি সারা জীবন ধর্মের গোলাম হয়ে কাটিয়ে
দেয়।
এই ভাইরাসের ভয়াবহতা আবার একেক রকম। যার মধ্যে ভাইরাসটি কম দেয়া হয়েছে সে কমই আক্রান্ত হয় এবং কমই
অমানবিক হয়। কিন্তু বিশ্বাসের ভাইরাস যার মধ্যে বেশী পরিমানে প্রবেশ করে সে হয়ে উঠে ভয়াবহ।
ইসলামী সন্ত্রাসীরা বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত ভয়ঙ্কর মানুষদের একটি উপযুক্ত উদাহরণ।
এর কারণ আর কিছুই নয়, তারা ইসলামের বিধি
বিধানগুলো বেশী জানে এবং তারা এই ভাইরাস দ্বারা সব চেয়ে বেশী আক্রান্ত হয়। ফলে তারা সেই ভাইরাসের
বদৌলতে সারা পৃথিবীর সব মানুষকে সেই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে উঠে পরে লাগে।
এটি একটি ভাইরাসের স্বাধারণ স্বভাব যে, ভাইরাস (জীবনু ভাইরাস) প্রথমে কোন শরীরে ঢুকে পড়ে এবং আস্তে আস্তে সেই শরীরের
সব কোষকে দখল করে নেয় (এখানে মেরে ফেলাটা উপযুক্ত শব্দ নয় বরং প্রতিস্থাপর করা উপযুক্ত
হতে পারে, কারন ভাইরাসটি পোষক কোষের ডিএনএ-কে সরিয়ে
ফেলে নিজের ডিএনএ বা আরএনএ ঢুকিয়ে দেয়)। এবং আস্তে আস্তে ভাইরাসটি শক্তিশালী হয়ে বংশ
বিস্তারের মাধ্যমে শরীরের সব কোষকেই দখন করে নেয়। এভাবেই ভাইরাস তার স্বভাব প্রকাশ করে।
আবার কম্পিউটার ভাইরাসও একই ভাবে প্রথমে কোন কম্পিউটারে প্রবেশ করে (ইন্টারনেটের
মাধ্যমে বা অন্যান্য মাধ্যমে) এবং সেই কম্পিউটারের কোন ফাইলকে দখল করে নেয়। পরে এটি অন্যান্য ফাইলকেও
আস্তে আস্তে দখল করে নেয়। এর ফলে কম্পিউটারের প্রোগ্রামগুলো আর তাদের মত করে কাজ করতে
পারে না। বরং ভাইরাসগুলোতে যে প্রাগ্রাম করা থাকে সেই কাজটাই কম্পিউটার বাধ্যগত ভাবে পালন
করে। অর্থাৎ কম্পিউটারটা
তখন ভাইরাসের নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। আর জীবানু ভাইরাসের কাজও কম্পিউটার ভাইরাসের অনুরুপ। এখানে জীবানু ভাইরাস
কোন পোষক জীব কোষকে দখন করে আর কম্পিউটার ভাইরাস কম্পিউটারের মেমরি বা হার্ডডিক্সকে
ব্যবহার করে। (কম্পিউটার ভাইরাসের আক্রমনের ফলে হার্ডডিক্সের ম্যামরী ভাইরাস কর্তৃক দখল হয়ে যায়।) কম্পিউটার ভাইরাসের
জীবানু ভাইরাসের মত কোন শারীরিক কাঠামো নেই তবে এটি ইলেক্ট্রিক সিগনাল বা মাইক্রোওয়েব, ব্লু-রে বা ব্লু টুথওয়েব, ইন্ফ্রারেড ওয়েব ইত্যাদি শক্তির মাধ্যমে কিছু সিগনাল বা তথ্য
এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হতে পারে (যেমনটা পুরো ইন্ফরমেশন টেকনোলজির
জগত টিকে আছে)। জীবানু ভাইরাস যেমন পোষক দেহে শুধু তার ডিএনএ প্রবেশ করায় আর ডিএনএ-টি পোষক কোষের
ডিএনএ-কে আক্রমন করে ঠিক সেভাবে কম্পিউটার ভাইরাসও অন্য কম্পিউটারে (ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, মোবাইল ইত্যাদি) শুধু
সিগনাল হিসেবে তথ্য প্রবেশ করায় এবং সেই সিগনাল-তথ্যটি কম্পিউটারের কোন এক সফ্টওয়ারকে (প্রাগ্রামকে) আক্রমন
করে এবং সেই সফ্টওয়ারের পোগ্রামিং কোডকে বদলে দিয়ে নিজের পোগ্রামকে সক্রিয় করে তুলে। এভাবে পুরো কম্পিউটারের
সব পোগ্রামকেই বদলে দিয়ে নিজের প্রাগ্রাম আপলোড করে সম্পুর্ণ সিস্টেমকেই দখল করে
নেয়। অর্থাৎ জীবানু ভাইরাস
আর কম্পিউটার ভাইরাস আসলে একই স্বভাবের । তাই এদের দুটোকেই ভাইরাস বলে সম্বোধন করা হয়।
আবার বিশ্বাসের ভাইরাসটিও জীবানু ভাইরাসের মত কোন বস্তু বা জীবানু নয়। এটি কম্পিউটার ভাইরাসের
মত মানুষের মনে ঢুকে পড়ে কিছু তথ্য হিসেবে। সেই তথ্যটি মানুষের মনের যুক্তি বা বিচার বিবেচনা করার অংশটিকে
নিয়ন্ত্রন করে। যেমন কোন একটা যুক্তি ধরি বলা হলো, মহাকর্ষ শক্তি আমাদেরকে টেনে ধরে রাখে বলে আমরা পৃথিবী থেকে কোন দিকে ছিটকে পড়ে
যাই না । এখন এই বাক্যটি যেটা কিছু শব্দ দ্বারা তৈরী একটা ম্যাসেজ বা বার্তা যা একটা তথ্য
বহন করছে। আর সেই তথ্যটা হলো যে মানুষ পৃথিবী থেকে ছিটকে পড়ে না যাবার কারণ মহাকর্ষ শক্তি। এই তথ্যটির কোন আকার
নেই, এটি কোন শারীরিক অস্তিত্ব নেই, শুধু শব্দ শক্তির মাধ্যমে বক্তার কাছ থেকে
শ্রোতার কাছে স্থানান্তরিত হয়। এবং এই তথ্যটি শ্রোতার মস্তিষ্কে ঢুকে এবং মস্তিষ্কের কিছু
জায়গা দখল করে এবং স্মৃতি হিসেবে মস্তিষ্কে থেকে যায়। আর পরবর্তীতে সেই শ্রুতা ব্যক্তিটি এই তথ্যটিকে
তার দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে পারে (ভাইরাসের সাথে এই তথ্যের পার্থক্য হলো যে, এই তথ্যটি মানুষটিকে দখল করে নিতে পারে না বলে এটি কোন ভাইরাস
নয়)। অর্থাৎ এই তথ্য আদান
প্রদান পদ্ধতিটি একেবারে কম্পিউটার প্রযুক্তির মত।
বিশ্বাসের ভাইরাস যখন কোন মানুষ থেকে বা অন্য কোন মাধ্যম থেকে (যেমন- বই) মানুষের
মনে প্রবেশ করে তখন সেই ভাইরাসটি মানুষটির মস্তিষ্কের কিছু জায়গা দখল করে নেয়। ভাইরাসটি মানুষের মনের
কার্যপ্রণালীকে প্রভাহিত করে এবং সেই মানুষটির চিন্তা শক্তির উপর প্রভাব ফেলে।
যেমন কোন মানুষকে যদি (শৈশবেই) বলা হয় যে, "কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে না; তাই সব কিছুরই একজন সৃষ্টিকর্তা আছে" এই তথ্যটি মানুষের
মস্তিষ্কে জমা হয়ে থাকবে এবং সারা জীবন এই তথ্যটিই তার চিন্তা শক্তিকে নিয়ন্ত্রন করবে। ফলে যদি কেউ তাকে বলে
যে কেন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কোন কিছু সৃষ্টি হতে পারবে না? তবে উত্তরে সে বলবে, কারণ কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়।
তাকে যতই বোঝানো হোক না কেন যে,
যদি কোন কিছু সৃষ্টিকর্তা
ছাড়া সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নাই হয় তবে সৃষ্টিকর্তাও কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে
পারবে না; সেক্ষেত্রে ‘কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হওয়া
সম্ভব নয়’ এই তথ্যটি মিথ্যে
হয়ে যাবে।
কিন্তু তবু সেই মানুষটি এই যুক্তিটি বুঝতে পারবে না। এর কারণ হলো ওই মানুষটি "কোন কিছু
সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে না" এই ভাইরাসটি দ্বারা আক্রান্ত। ফলে সে তার যুক্তি
খাটাতে পারছে না। একজন সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আছে এই বিশ্বাসটি তার মনকে পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে। ফলে এটি যে যুক্তিহীন
একটি অপ-যুক্তি (গোজামিলের যুক্তি) সেটা ওই ভাইরাসটি তাকে বুঝতে দেয় না। মানুষটি তখন থাকে সম্পূর্ণরুপে
সেই ভাইরাসের নিয়ন্ত্রনে।
কম্পিউটার ভাইরাস হল কিছু লজিকের উলট-পালট প্রোগ্রামিং । এবং এটিও একটা চতুর প্রোগ্রাম (প্রোগ্রামিং
কোড দ্বারা সৃষ্ট) ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু এটির বৈশিষ্ট্য হলো এটি অন্য প্রোগ্রামকে দখল করে নিজের
মত করে কাজ করাতে পারে। ঠিক তেমনি বিশ্বাসের ভাইরাসও অন্যান্য তথ্যের মতো কিছু তথ্য ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু এগুলো কাজ
করে বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে, যুক্তিকে কাজে লাগিয়ে
নয়। লক্ষ করলে দেখা যায়, সব বিশ্বাসের ভাইরাসগুলোই অপ্রমানিত এবং মিথ্যে তথ্য ছাড়া কিছুই
নয়। এবং এই তথ্যগুলো বিশ্বাস
ছাড়া কাজ করতে পারে না। যেমন কোন শিশু যখন মেনে নেয় যে "কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে
পারে না" তখন কিন্তু সে এই তথ্যটিকে যাচাই করে নিতে পারে না (কারণ তার সে ক্ষমতা
তখনও তৈরীই হয়নি)। সে শুধু অন্ধের মত
সেটাকে মেনে নেয় বা বিশ্বাস করে। কিন্তু বড় হবার পড়ে কিন্তু সে পুরোপুরি এই অপ-যুক্তিটি দ্বারা
সম্পূর্ণরুপে নিয়ন্ত্রিত একজন ভাইরাস আক্রান্ত মানুষ। ফলে সে যখন অন্যান্য যুক্তির সাথে পরিচিত
হয় তখন সেই অপ-যুক্তিটি (অর্থাৎ ভাইরাসটি) তার উপস্থিত যুক্তিটিকে ভুল হিসেবে দেখায়
বলে সে ভাবে যে, যুক্তিটি সঠিক নয়। এখানে সে নিজে স্বাধীন
ভাবে চিন্তা করতে পারছে না; কারণ সেই অপ-যুক্তিটি
যেটা বিশ্বাসের ভাইরাস হিসেবে কাজ করছে, সেই মানুষটিকে ওই যুক্তিটি বুঝতে দিচ্ছে না অর্থাৎ তার চিন্তা শক্তি নিয়ন্ত্রন
করছে। অর্থাৎ সেই অপ-যুক্তিটি
সম্পূর্ন ভাইরাসের মত করে আচরণ করছে। আর এজন্যই দেখা যায় বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষগুলো স্বাভাবিক
ভাবে চিন্তা করতে পারে না। সারা বিশ্ব যেটাকে এক রকম করে দেখে, সেই বিশ্বাসের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত মানুষটি
সেটাকেই দেখে অন্য রকম করে। যেমন - মুসলমানরা বিশ্বাস করে পৃথিবীটা আল্লাহ সৃষ্টি করেছে
আর তারাই আল্লাহর মনোনিত বান্দা, ফলে তাদেরই অধিকার
রয়েছে পৃথিবীকে শাসন করার। এতে যদি সব মানুষকে মেরেও ফেলতে হয় তবুও তারা আল্লাহর বিধান
প্রতিষ্টার জন্য সেটা করবে ।
এটি কোন প্রমানিত তথ্য নয়। এটি শুধুই তাদের একান্ত বিশ্বাস । আর এই বিশ্বাসটাই তাদেরকে নিয়ন্ত্রন করছে
ঠিক ভাইরাসের মত করে। এই তথ্যটি তাদের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা এটাকে বিশ্বাস করে নিয়েছে । আর এই ভাইরাসটি তাদের
মনকে সম্পূর্নভাবে নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হয়েছে ।
কিন্তু তাদের বিশ্বাসের কোন প্রমাণ নেই, কোন যুক্তি নেই; আছে শুধু অন্ধবিশ্বাস। আর এই বিশ্বাসটাই হল
একটা ভাইরাস যেটা মানুষের মনে প্রবেশ করে, সেই মনকে দখন করে এবং সম্পূর্ণরুপে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়। সেই মানুষটা তখন তার নিজস্বতা হাড়ায়, সে হয়ে যায় সেই ভাইরাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত। তার স্বাধীন চিন্তা-ভাবনা
বা যুক্তি-বুদ্ধির ক্ষমতা নিয়ন্ত্রন করে সেই ভাইরাসটি।
এর ফলেই সেই বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষগুলো আল্লাহর বিধান পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত
করার জন্য বোমা মেরে মানুষ মেরে ফেলে। আত্মঘাতী বোমা দিয়ে সে নিজেকে শেষ করে হলেও অনেক নিরীহ মানুষকে
অকারণে হত্যা করে।
এই কাজগুলো কোন সুস্থ মানুষের কাজ নয়। বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত না হলে কেউ এভাবে অকারণে মানুষ হত্যা
করতে পারে না।
তার মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া ভাইরাস যে, "পৃথিবী আল্লাহর, তাই পৃথিবীতে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করাই
মুমিনদের প্রধান কাজ, তার জন্য নিজের জীবন দিলেই বেহেস্ত নিশ্চিত" এই ভাইরাসটিই মানুষকে আত্মাহুতির
দিকে ধাবিত করে। যে মানুষটি বিশ্বাস করে যে পৃথিবী আল্লাহ নামের এক সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। সুতরাং আল্লাহর বিধান
যেহেতু তাদেরই, তাই তারা পৃথিবীর মানুষকে হত্যা করে পৃথিবীতে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করবার অধিকার
তাদের আছে। এতে যদি সব মানুষকে হত্যাও করতে হয়, সেটা তারা করবে। তবুও আল্লাহর বিধান পৃথিবীতে তারা প্রতিষ্ঠিত করবেই।
অর্থাৎ এক্ষেত্রে বিশ্বাসটি শুধু মাত্র ভাইরাস হিসেবেই কাজ করছে। যেটার কোন প্রমাণ
নেই, যেটা সত্যি নয় কেবল
সেটার ক্ষেত্রেই বিশ্বাসের প্রয়োজন হয়। যেটা সত্যি, যেটা বাস্তব, এবং প্রমানিত সেসব কিছুর ক্ষেত্রে বিশ্বাসের প্রয়োজন হয় না। তাই অন্যান্য তথ্যগুলো
কোন ভাইরাস নয়। ‘সূর্য পূর্ব দিকে উঠে’ এটি একটি সত্য, তাই এটিতে বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই। সবাই জানে সূর্য পূর্ব
দিক থেকেই উঠে। আর তাই এখানে কোন বিশ্বাসের ভাইরাস তৈরী হতে পারে না।
সব মানুষ মারা যায়, এটি সত্য; তাই এতে বিশ্বাসের প্রয়োজন হয় না। মানুষ জানে সব মানুষই মারা যায়। ফলে এই তথ্যটি কোন
ভাইরাসের জন্ম দেয় না।
এরকম হাজারটা তথ্য আছে যেগুলো সত্য, তাই এগুলোতে বিশ্বাসের দরকার হয় না। সবাই জানে বা প্রমাণ পায় যে ওগুলো সত্য। তাই ওই তথ্যগুলো বিশ্বাসের
ভাইরাস তৈরী করতে পারে না।
কিন্তু যেসব তথ্য সত্য নয়, সেগুলোকে বিশ্বাস করতে হয়। কেউ জানে না সেগুলো সত্য নাকি মিথ্যে। সবাই শুধু মাত্র বিশ্বাস
করে চলে। যেহেতু এটি শুধু বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল তাই এটি বিশ্বাসের ভাইরাস তৈরী করে।
ধর্ম এবং যাবতীয় ধর্মীয় শিক্ষাগুলো গড়ে উঠে বিশ্বাসের উপর ভর করে। বাস্তব সত্যের উপর
ভর করে নয়। সব কিছুতে আসলেই সৃষ্টিকর্তা লাগে কিনা তার কোন প্রমাণ কোন ধর্মই দিতে পারেনি
আজ পর্যন্ত। পৃথিবীর সব ধর্মই কোন প্রমাণ ছাড়াই দ্বাবী করেছে তাদের ধর্মই সত্য। ধর্মের কাল্পনিক ধারণা
যেমন- আত্মা, পরম আত্মা, ইশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা এগুলোর বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই। মানুষ এগুলো কল্পনা করেছে এবং সেগুলোকে
বইয়ে লিখে রেখেছে। পৃথিবীর সব মানুষই এসব বিশ্বাস করে কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়াই। অর্থাৎ পৃথিবীর সব
ধর্ম গুলোই বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে টিকে আছে। কোন ধর্মের কোন ধার্মিকই সৃষ্টিকর্তা বা
অন্যান্য অতিপ্রাকৃতিক বিষয়গুলোর কোন প্রমানই দাড় করাতে পারেনি আজ পর্যন্ত। সৃষ্টিকর্তা, আত্মা, পরম আত্মা এগুলো মানুষের
কল্পনা শক্তি দ্বারা সৃষ্ট এক সাধারণ সৃষ্টি মাত্র। এগুলোর বাস্তব কোনই অস্তিত্ব নেই, এগুলো প্রমানিত কিছু নয়, অর্থাৎ এগুলো সত্য নয়। এদের অস্তিত্ব শুধু মানুষের বিশ্বাসের উপর ভর করে টিকে আছে। ফলে এই ধারণাগুলোই
তৈরী করছে বিশ্বাসের ভাইরাসের। মানুষ এগুলোকে বিশ্বাস করছে এবং এই বিশ্বাসগুলোই তাদেরকে নিয়ন্ত্রন
করছে। সবাই এই বিশ্বাসের
ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া এক একটি বিশ্বাসের ভাইরাস আক্রান্ত রোগীতে পরিণত হয়েছে। এজন্য তাদের বিশ্বাসের
উপর কেউ কোন কথা বললেই তারা ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করে। তারা হিংস্র প্রানীর মত মানুষ মারতে আসে। আত্মঘাতী হয়ে নিরীহ
মানুষ হত্যা করে। এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষকে মেরে ফেলে, অত্যাচার করে। এগুলো কোন সুস্থ মানুষের কাজ নয়। এরা সবাই বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত এক একটি রোগী।
যার কোন অস্তিত্ব নেই, যার অস্তিত্বের কোন
প্রমাণই নেই, শুধুমাত্র বিশ্বাসের উপর ভর করা কতগুলো ধারণা
বা তথ্য একটা সাধারণ মানুষকে হিংস্র করে তুলে, খুনি উন্মাদ বানিয়ে দেয়। এটি বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াটারই প্রমান বহন করে।
বিশ্বাস ভাইরাস বলেই এটি মানুষকে তার মানবিক গুনাবলি ধ্বংস করে দিয়ে তাকে পশুতে
পরিনত করে। মিথ্যে ধারনাগুলোই মানুষের চিন্তা ভাবনাগুলোকে নিয়ন্ত্রন করে বলেই মানুষ হত্যাকারীতে
পরিনত হয়।
বিশ্বাসের ভাইরাসগুলোর মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস বা ধর্মীয় ভাইরাসই প্রধান এবং সব
থেকে শক্তিশালী। ফলে ধর্মীয় ভাইরাসের দ্বারাই মানুষ সব থেকে বেশী আক্রান্তু হয়।
বিশ্বাস কিছু তথ্য মাত্র। সেই তথ্যগুলোর কোন বাস্তব প্রমাণ নেই বলে এগুলোকে বিশ্বাস
করতে হয় অন্ধভাবে। আর এই বিশ্বাসগুলো মানুষের মনে ঢুকে মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়। তখন সেই মানুষটি সেটাই
করে যেটা সেই ভাইরাসটি তাকে করতে বলে। এক একটি বিশ্বাস আসলে এক একটি ভাইরাস। আর এজন্যই একজন মানুষ ইসলাম ধর্মের বিশ্বাসের
ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মনে প্রানে একজন মুসলিম হয়ে জীবন কাটায়। আবার একজন মানুষ হিন্দু
ধর্মের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মনে প্রানে একজন হিন্দু হয়ে জীবন কাটায়। আবার একজন খ্রিস্টান
ধর্মের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মনে প্রানে একজন খ্রিস্টান হিসেবে তার জীবন কাটিয়ে দেয়।
কিন্তু সব মানুষই কিন্তু একই রকম। সব মানুষের আবেগ, অনুভুতি, শারীরিক গঠন সব কিছুই
একই রকমই থাকে। শুধু তারা ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাসের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত থাকে মাত্র্।
সেই ভাইরাসগুলোই একই রকমের মানুষের মধ্যে পার্থক্য তৈরী করে দেয়। এরা সবাই বিশ্বাসের
ভাইরাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকে । যে যত বেশী বিশ্বাসের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত সে তত বেশী ভাইরাস
দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
বিশ্বাসের ভাইরাস মানুষটিকে সম্পূর্নরুপে নিয়ন্ত্রন করতে পারে যদি সেই ভাইরাসটি
সেই মানুষটিকে সম্পূর্ণরুপে দখল করে নিতে পারে। তখন মানুষটি হয়ে উঠে ভয়ঙ্কর।
তবে অন্যান্য ভাইরাসের মত বিশ্বাসের ভাইরাসেরও এন্টি ভাইরাস আছে। সেটি হলো অবিশ্বাস।
মানুষ যখন অবিশ্বাস করতে শিখবে তখন পৃথিবীর কোন বিশ্বাসের ভাইরাসই তাকে কাবু করতে
পারবে না। কারণ অবিশ্বাস মানুষকে নিয়ে যায় সত্যের কাছাকাছি। আর সত্য বিশ্বাস মুক্ত। ফলে ভাইরাস মুক্ত।
বিশ্বাসের ভাইরাস জীবানু ভাইরাসের মত শারীরিক কাঠামো না থাকলেও এটি কম্পিউটার
ভাইরাসের মতই জীবানু ভাইরাসের অনুরুপ ক্ষতিকর।
No comments:
Post a Comment