বিজ্ঞানের সত্যের কাছ
থেকে ধার্মিকরা তাদের ধর্মকে বাঁচাতে নানা কর্ম সূচি হাতে নিয়ে এসেছে। প্রথমে তারা পৃথিবীকে
সূর্যের চারপাশে ঘুরা বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ব্যার্থ হওয়ায় আবার তারা দাবী করেছে
পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরছে এটা তাদের ধর্মগ্রন্থেই লেখা আছে। এসব বলে তারাই আবার
তাদের ধর্মগ্রন্থগুলোকে বিজ্ঞানময় বানানোর নানা পায়তারা করেছে।
আবার যখন বিজ্ঞান রায়
দিয়েছে যে, বিবর্তনবাদ সত্য; ধার্মিকদের আদম হাওয়া রুপকথা মিথ্যে, তখন আবার এই ধার্মিকরাই মিলিত হয়ে বিজ্ঞানের মুন্ডুপাত করতে
উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু বিজ্ঞান কারো ধার ধারে না। সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে সব সময়। ফলে বিজ্ঞান যখন বিবর্তনবাদের সপক্ষে হাজার
হাজার প্রমাণ হাজির করেছে তখন এই ধার্মিকরাই বিবর্তনবাদকে মিথ্যা প্রমাণের জন্য নানান
কর্ম সূচি হাতে নিয়েছে। এর ফলেই তারা দাড় করেছে ক্রিয়েশনিজম ও ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন বা সৃষ্টিতত্ত্ব নামে
অপবিজ্ঞানের। বিজ্ঞান হলো বিজ্ঞানীয় পদ্ধতি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জ্ঞান আর অপ-বিজ্ঞান হলো বিজ্ঞানের
মত দেখতে কিন্তু বিজ্ঞান নয় এমন মতবাদ। বিজ্ঞান থেকে অপ-বিজ্ঞানকে খুব সহজেই পৃথক করা যায়।
বিজ্ঞানের তত্ত্ব বা
থিউরীগুলোকে নানা পরীক্ষার মাধ্যমে তার সত্যতার প্রমাণ দিতে হয়। যে তত্ত্বগুলো সত্য
সেগুলো সহজেই সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ন হতে পারে। এবং প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে বুক উচু করে দাড়িয়ে
থাকে। আর যেসব তত্ত্ব মিথ্যে
সেগুলো সেই সত্যতা প্রমাণের পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়। ফলে বিজ্ঞান সেই তত্ত্বকে ছুড়ে ফেলে দেয়। কোণ তত্ত্ব বারবার
সত্যতা পরীক্ষা দিয়ে সেই তত্ত্বের ভুলগুলো সংশোধন করে আবার নতুন করে সেই তত্ত্বকে
যাচাইয়ের মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এভাবেই কোন তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। আর কোন তত্ত্বকে সত্যতা পরীক্ষা দিতে যে
প্রমাণগুলো উপস্থিত করা হয় সেগুলোকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় ফ্যাক্ট বা প্রমাণ বলে।
যেমন - আপেল উপরের
দিকে না গিয়ে পৃথিবীর পৃষ্ঠে পড়ে যায়। এমনকি কোন কিছুকে উপরের দিকে নিক্ষেপ করলেও সেটি নিচের দিকে
পতিত হয়। এটি একটি ফ্যাক্ট বা প্রমাণ। বিজ্ঞান এই ফ্যাক্টটিকে ব্যাখ্যা করার জন্য একটি তত্ত্ব বা থিওরী
গ্রহন করেছে। সেটি হলো, নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব বা থিওরী। নিউটনের মহাকর্ষ সুত্র দারা পৃথিবীতে কোন কিছুর পতন যেমন ব্যাখ্যা
করা যায় তেমনি গ্রহ, নক্ষত্রের একে উপরকে কি কারণে পরিভ্রমন করছে সেটিও ব্যাখ্যা করা যায়।
অর্থাৎ গ্রহ,
উপগ্রহের পরিভ্রমন
এবং পৃথিবীতে বস্তুগুলোর (আপেল, বা ঢিলের) পতনকে ব্যাখ্যা করা যায় নিউটনের মহাকর্ষ সুত্র বা
তত্ত্বের মাধ্যমে। অর্থাৎ নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র একটি প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব।
কিন্তু কোথাও কোথাও
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র বা তত্ত্বটি বিশ্বজগতের সব কিছু ব্যাখ্যা করতে পারে না। যেমন- কৃষ্ণ গহ্বরে
কি ঘটে সেটা নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র বা তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। কিন্তু তার মানে এই
নয় যে, নিউটনের মহাকর্ষ সুত্র বা তত্ত্বটি মিথ্যে। মহাকর্ষ বল ঠিকই আপেলকে বা পৃথিবীর অন্য কোন
বস্তুকে আকর্ষন করে নিজের দিকে ধরে রাখছে। এজন্যই পৃথিবীর কোন কিছু পৃথিবীর বাইরের মহাকাশে ছিটকে পড়ে
না। মাহকর্ষ বল ঠিকই সব
বস্তুকে আকর্ষন করে নিজের দিকে।
কৃষ্ণ গহ্বরে বস্তুর
আচরণকে ব্যাখ্যার জন্য আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ সব থেকে উপযুক্ত থিওরী বা তত্ত্ব। কিন্তু তাই বলে নিউটনের
মহাকর্ষ থিওরী মিথ্যে নয়। এটি কেবল কিছু কিছু ক্ষেত্রে অকার্যকর।
ঠিক একই ভাবে বিবর্তনবাদ
যদি প্রানীর আবির্ভাবের কোন ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে না পারে তবে বিবর্তনবাদ থিওরীটি
মিথ্যে হয়ে যাবে না। এক্ষেত্রে বিবর্তনবাদের চেয়ে ভালো কোন থিওরী প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই বলে পৃথিবীতে ঘটে
যাওয়া জীব ও প্রাণীর বিবর্তন মিথ্যে হয়ে যাবে না।
ফলে বিবর্তনবাদের বিরোদ্ধে
ধার্মিকরা যত প্রপাগান্ডা বা ষড়যন্ত্র করুক না কেন সেগুলো তাদের ধর্মের মৃত্যু থামাতে
পারবে না।
ধার্মিকরা তাদের ধর্মকে
বাঁচাতে ‘আদম হাওয়া’ রুপকথাকে সত্য প্রমাণের জন্য বিবর্তনবাদের
সাথে পাল্লা দিতে তৈরী করে অপ-বিজ্ঞান ক্রিয়েশনিজম ও ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন বা সৃষ্টিতত্ত্ব।
ক্রিয়েশনিজম ও ইন্টেলিজেন্ট
ডিজাইন বা সৃষ্টিতত্ত্বের মূল কথা হলো বিশ্বজগতের এবং জীবজগতের এক অতিবুদ্ধিমান সৃষ্টিকর্তা
বা পরিকল্পনাকারী আছে।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের
সংঙ্গে জানানো যাচ্ছে যে, বিজ্ঞানীগন সৃষ্টি তত্ত্বের এই ভ্রান্ত ধারণা প্রথম পদক্ষেপেই
ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। বিজ্ঞানীয় সত্যতা পরীক্ষার অযোগ্য বলে সৃষ্টি তত্ত্ব বা ক্রিয়েশনিজম ও ইন্টেলিজেন্ট
ডিজাইন পরিত্যাক্ত হবার পরেও সৃষ্টিবাদীরা কিন্তু থেমে থাকেনি। তারা নানা অপ-প্রচার করে মানুষকে বুঝাতে চেয়েছে যে বিবর্তনবাদ
মিথ্যে এবং সৃষ্টি তত্ত্ব সত্য। কিন্তু যতই দিন গেছে ততই বিবর্তনবাদের স্বপক্ষে প্রমাণের সংখ্যা
বেড়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানীগণ অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করেছে বিবর্তনবাদের সত্যতা। ডারউইনের যুগান্তকারী
গ্রন্থ "অরিজিন অফ স্পিসিস" বের হবার পর থেকেই পৃথিবীর নানা প্রান্তের বিজ্ঞানীগন
নানা প্রকারে বিবর্তনবাদের সত্যতা যাচাই করে চলেছেন। আজ একবিংশ শতাব্দিতে এসে সব বিজ্ঞানীই এক
মত যে সারা পৃথিবীর সব প্রাণী একটি মাত্র অনুজীব থেকে বিবর্তনের মাধ্যমেই আজকের প্রাণী
জগত সৃষ্টি করেছে। হাজার হাজার ফসিল, শত শত ডিএনএ টেস্ট যেন সবাইকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বিবর্তনবাদ
কতটা সত্য। অর্থাৎ বিবর্তনবাদ আজ প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব।
বিবর্তনের স্বপক্ষে
এই যে এতো এতো প্রমাণ, তাতে কি ধার্মিকরা
মানে সৃষ্টিতত্ত্ববাদীরা কি তাদের অপবিজ্ঞানের চর্চা থামিয়ে দিয়েছে ? উত্তর হলো - না, বিবর্তনের বিরোদ্ধে তারা তাদের অপপ্রচার বন্ধ করে দেয়নি। বরং সাধারণ মানুষের মাঝে প্রচার করে বেড়াচ্ছে
যে, বিবর্তনবাদ কোন প্রমানিত সত্য নয়; বিবর্তবাদ কোন ফ্যাক্ট নয়।
যারা এই দাবীটা করছে
তারা হয় অজ্ঞ না হয় ধান্দাবাজ। হয় তারা জানে না 'বিজ্ঞানের ভাষায় ফ্যাক্ট
কাকে বলে অথবা তারা তাদের ধর্ম ব্যবসাকে টিকিয়ে
রাখতে এসব অপ-প্রচার করছে।
ফ্যাক্ট বা প্রমাণ
হলো কোন থিওরী যেটাকে ব্যাখ্যা করে সেটা। কোন প্রমাণকে ব্যাখ্যা করার জন্য একটি থিওরীর প্রয়োজন হয়ে
পড়ে। যেমন আপেল মাটিতে পড়ে
বা ঢিল পৃথিবীর দিকে ফিরে আসে এটি একটি ফ্যাক্ট। এই ফ্যাক্টটিকে ব্যাখ্যা করার জন্য দুটো
থিওরী আছে বিজ্ঞানী মহলে। এক- নিউটনের মহাকর্ষ সুত্র ও দুই- আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ
সুত্র।
এখন যদি এই দুই থিওরী
বা তত্ত্ব যদি মিথ্যে হয়ে যায় তবে কি আপেল মাটিতে পড়া বন্ধ করে দেবে? এদুটো থিওরী থাক বা না থাক আপেল মাটিতে পড়েছে, মাটিতে পড়ে এবং পড়তেই থাকবে।
ঠিক সেভাবে বিবর্তনবাদ
যদি মিথ্যেও হয়ে যায়, তবুও পৃথিবীতে এতো
এতো ফ্যাক্ট বা প্রমাণ আছে যে, চোখ বন্ধ করে বলা যায় প্রাণীর বিবর্তন হয়েছে, বিবর্তন হচ্ছে এবং বিবর্তন হতেই থাকবে।
অর্থাৎ বিবর্তন হলো
একটি পরম সত্য প্রক্রিয়া । আর বিবর্তনবাদ একটি প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব
বা থিওরী।
ফলে প্রতিদিনই বিবর্তনের
প্রমাণের সংখ্যা বেড়ে চলেছে এবং ভবিষ্যতেও আরো অনেক অনেক প্রমাণ হাজির হবে।
আর তাই ধার্মিকরা তাদের
ধর্মকে বাঁচাতে যে প্রপাগান্ডা বা অপ-প্রচার চালাচ্ছে সেগুলো তাদের ধর্মকে বাঁচাতে
পারবে না। ক্রিয়েশনিজম ও ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন বা সৃষ্টিতত্ত্ব অনেক আগেই পরিত্যাক্ত হয়েছে
এবং সৃষ্টিবাদীরা যতই লাফালাফি, কাঁদাকাঁদি করুক না
কেন তাদের অপ-বিজ্ঞানের অপ-চেষ্টা ধুলিস্বাৎ হয়েছে, হচ্ছে এবং বারবার হবে।
ধর্মের আদম হাওয়া গালগপ্পের
দিন শেষ হয়ে গেছে। মানুষ আজ জানতে শুরু করেছে আসল সত্য কোনটা। ফলে ধার্মিকদের ঝারিঝুরি শেষ হয়ে আসছে।
বিজ্ঞান সত্য, বিগ ব্যাং সত্য এবং বিবর্তনবাদ সত্য। ঠিক তেমনি আদম হাওয়ার গল্প মিথ্যা, পৃথিবী কেন্দ্রীক বিশ্বজগত মিথ্যা, ছয় দিনে বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে সেটি মিথ্যা এবং ক্রিয়েশনিজম
ও ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন বা সৃষ্টিতত্ত্বও মিথ্যা।
বিজ্ঞানের অগ্রগামিতা
এটাই প্রমাণ করে ধর্মের দিন শেষ । তাই ক্রিয়েশনিজম নামের অপ-বিজ্ঞান ধর্মকে বাঁচাতে ব্যর্থ হচ্ছে
প্রতিনিয়ত। বিবর্তনবাদের এতো এতো তথ্য প্রমাণ যে এসব শত শত, হাজার হাজার প্রমাণের বৃষ্টিতে ক্রিয়েশনিজম ও ইন্টেলিজেন্ট
ডিজাইন এবং ক্রিয়েশনিজমের ছায়ায় বেঁচে থাকা ধর্মগুলো ভেসে যাবে অচিরেই।
বিবর্তনবাদের বৈজ্ঞানিক
প্রমাণের বৃষ্টি থেকে ক্রিয়েশনিজম ও ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন বা সৃষ্টিবাদের ভাঙ্গা ছাতা
দিয়ে রক্ষা পাবে না ধর্মগুলো। বিবর্তনবাদের তথ্য-প্রমাণের বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে ধর্মগুলো।
No comments:
Post a Comment