ধর্ম আর বাস্তবতা এক নয়। ধর্মের ধ্যান ধারণা এবং বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। দেখা যায় যে, যেসব ব্যাপার ধর্ম বলে এক ভাবে বাস্তব ক্ষেত্রে ঘটে অন্য ভাবে। যেমন আগের পর্বে দেখানো হয়েছে যে ধর্মে যা ভালো তা বাস্তবে খারাপ। আবার ধর্মে যেটা খারাপ সেটাই বাস্তবে ভালো। তাই ধর্ম আর বাস্তব ধ্যান ধারণা সব সময়ই ভিন্ন ভিন্ন হয়। অর্থাৎ ধর্মের ধ্যাণ ধারণা আর বাস্তবতা সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা। ধর্ম আর বাস্তবতা এক নয়।
ধর্মে পাপ পুন্য নামের কাল্পনিক এক ধারণার আমদানী করা হয়েছে। ধর্মে যা পাপ, ধর্ম মতে সেগুলো খারাপ কাজ। আবার ধর্মে যা পূণ্যের কাজ সেগুলোকেই ধর্ম ভালো বলে সজ্ঞায়িত করেছে। অর্থাৎ ধর্মে যা কিছু পাপের কাজ সেগুলোকেই খারাপ কাজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবার ধর্মে যা কিছু পূণ্যের কাজ সেগুলোকেই ভালো কাজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আসলে পাপ পূণ্যের ধারণা মতে ভালো ও খারাপের যে মূল্যায়ন করা হয়েছে তার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। দেখা গেছে ধর্মে যা কিছুকে পূন্যের কাজ বলেছে সেগুলো আসলে ভালো কাজ নয়। আবার যেগুলোকে পাপের কাজ বলেছে সেগুলো প্রকৃত পক্ষে খারাপ কাজ নয়।
ধর্মের পাপ-পূন্যের ধারণা যে বাস্তবতা বহির্ভুত সেটা প্রমাণ করার আগে পাপ পূন্যেকে বাস্তবতার সাথে তুলনা করে দেখা যাক।
ধর্মে পাপ পুন্যের কাল্পনিক ধারনা করা হয় কিন্তু বাস্তবে পাপ পূন্য বলে কিছু নেই। প্রাচীণ কালের মানুষ কল্পনা করেছিল বাস্তবে যেমন আদার প্রদানের বা ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যম হিসেবে মানুষ মুদ্রা বা টাকার আমদানি করেছিল ঠিক একই ভাবে ঈশ্বর এমন একটা কিছু ব্যবহার করে থাকে। আর সেটাই হলো পাপ পুন্যে। যে ভালো কাজ করবে সে পুন্য পাবে। আর যে খারাপ কাজ করবে সে পাপ পাবে। এই পাপ যাদের কাছে থাকবে তারা বাধ্যগত ভাবে নরক পাবে। আর অন্য দিকে যারা পূন্য অর্জন করবে তারা স্বর্গ ক্রয় করতে পারবে।
যদি কল্পনা করা যায় যে পৃথিবীতে দুই ধরনের মুদ্রার প্রচলন রয়েছে একটি পজেটিভ আর অন্যটি নেগেটিভ অথবা একটি কালো মুদ্রা অন্যটি সাদা মুদ্রা। সাদা বা ধনাত্মক মুদ্রাগুলো বর্তমান পৃথিবীর টাকা বা ডলারের মতো হবে; যা দিয়ে মানুষ যে কোন কিছু ক্রয় করতে পারবে তার পছন্দ মত। এই মুদ্রাগুলো সে তার ভালো কাজগুলোর মাধ্যমে অর্জন করবে যেমন- কোন উন্নয়ন মুলক কাজ, উৎপাদনশীল কোন কাজ যেমন কারো উপকার করা, কারো জীবন বাঁচানো, কৃষি কাজ থেকে যে কোন উন্নয়নমুলক কাজ যা মানুষ বর্তমান পৃথিবীতে করে থাকে।
কিন্তু কালো বা ঋনাত্মক মুদ্রাগুলো সে উপার্জন করবে তার খারাপ কাজ গুলো দ্বারা। যেমন কাউকে হত্যা করা, কারো বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া, বা কারো জিনিস চুরি করে বা ডাকাতি করে তার ক্ষতি করা। অর্থাৎ অপকারমুলক এবং ক্ষতিকারক কিছু করার মাধ্যমে কালো বা ঋনাত্বক মুদ্রা পাওয়া হয়। আর ঋনাত্বক বা কালো মুদ্রা সবাইকে নিতে বাধ্য করা হয়।
ফলে পাপ পুন্যের একটি বাস্তব ধারনা পাওয়া যায়। এখানে সাদা বা ধনাত্বক মুদ্রা পূন্যের কাজ করে এবং কালো বা ঋনাত্বক মুদ্রা পাপের কাজ করবে। ফলে যে ভালো কাজ করতে থাকবে তার একাউন্টে সাদা মুদ্রা যোগ হতে থাকবে। এবং একটা সময় তার একাউন্টে বড় মাপের সাদা মুদ্রা জমা হবে। অপর দিকে যে খারাপ বা ক্ষতিকর কাজ করবে তার একাউন্টে কালো টাকা জমা হতে থাকবে। ফলে একটা সময় তার একাউন্টে বড় মাপের কালো টাকা বা ঋনাত্বক মুদ্রা জমা হয়ে যাবে। এখন যদি খারাপ কাজ করা মানুষটি কখনও ভালো কাজ করে তবে তার একাউন্টে সাদা বা ধনাত্বক টাকা জমা হবে। ফলে এই সাদা বা ধনাত্বক টাকা তার অর্জিত কালো টাকার সাথে যোগ হবে বীজগণিতীয় নিয়মে। অর্থাৎ সাদা টাকা কালো টাকার সাথে যোগ হয়ে ফলাফল হিসেবে কালো টাকার পরিমাণ করতে থাকবে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক কারো একাউন্টে ১০০ কালো টাকা যোগ হয়েছে। এবং পরবর্তীতে সে কিছু ভালো কাজ করায় তার একাউন্টে ২৫ সাদা টাকা যোগ হলো। এখন ফলাফল হিসেবে আমরা গননা করে পাবো,
১০০ কালো টাকা বা ঋনাত্বক টাকা=(-১০০)
২৫ সাদা টাকা বা ধনাত্বক টাকা= (+২৫)
ফলাফল = (-১০০+২৫) = (-৭৫) কালো টাকা।
এভাবে সে যত ভালো কাজ করতে থাকবে তার কালো টাকার পরিমান কমে যেয়ে এক সময় সাদা টাকা যোগ হতে থাকবে।
আবার যে ভালো কাজ করে বড় মাপের সাদা টাকা জমিয়েছে পরবর্তীতে সে যদি খারাপ কাজ করে তবে তার একাউন্টের হিসাবও আমরা গাণিতীক ভাবে বের করতে পারবো।
যে ভালো কাজ করে বেশী সাদা টাকা অর্জন করবে সে সমাজে ধনবান হিসেবে বেঁচে থাকবে। সে দামি বাড়ী, দামি গাড়ী ইত্যাদি কিনতে থাকবে। পক্ষান্তরে যে কালো টাকা অর্জন করবে তার স্থান হবে সমাজের সব চেয়ে নিচের পর্যায়ে। সে অমানবিক জীবন যাপন করবে এবং তার দিন কাটবে কষ্টের মধ্যে।
আস্তিকদের কাল্পনিক স্বর্গ-নরকও ঠিক এই কাল্পনিক সাদা টাকা, কালো টাকার জগতের মতই কাজ করে। যে পৃথিবীতে ভালো কাজ করে তার একাউন্টে পূন্য যোগ হতে থাকে আর যে খারাপ কাজ করে তার একাউন্টে পাপ যোগ হতে থাকে। পরকালে এই পাপ পূন্য ভাঙ্গিয়ে সবাই সবার মতো করে কেনা কাটা করবে। যে বেশী পুন্য অর্জন করেছে পৃথিবীতে সে পরকালে দামী স্বর্গের বাড়ী কিনতে পারবে এবং স্বর্গের যাবতীয় সুবিধা সে তার পূন্যের সাদা টাকা দিয়ে কিনতে পারবে।
অপরদিকে যে পৃথিবীতে খারাপ কাজ করেছে সে তার পাপের কালো টাকার দায়ে নরকে যাবে। যার পাপ যত বেশী তার নরক তত জঘন্য। ঠিক পূন্যের বিপরীত। যার পূন্য যত বেশি সে ততো দামী বেহেশতে যাবে। আর বিপরীতক্রমে যার পাপ যতো বেশী সে ততো নিম্ন মানের নরকে যাবে।
এভাবেই পাপ-পূন্যের মুল্য নির্ধারণ করা হবে।
ফলে দেখা যাচ্ছে মানুষের তৈরী করা স্বর্গ নরক মানুষের জীবন ব্যবস্থার মতই কাজ করে। তবে মানুষ স্বর্গ নরকের ক্ষেত্রে কাল্পনিক পাপ-পূন্যের মুদ্রার আমদানী করেছে যেটা বাস্তব
জগতে
নেই।
ঠিক একই ভাবে ধর্মের পাপ-পুন্যের অর্জনও বাস্তব ভালো খারাপের উপর নির্ভর করে না। ধর্মে পাপ পূন্য অর্জন করতে হলে ধর্মের নির্ধানিত করে দেওয়া ভালো খারাপের উপর নির্ভর করতে হয়। ধর্ম যেটাকে ভালো হিসেবে নির্ধারিত করে দিয়েছে সেসব কাজ যত নিকৃষ্টই হোক না কেন তা করার মাধ্যমেই পূন্য অর্জিত হবে। আর ধর্ম সে সব কাজ করতে নিষেধ করেছে সেগুলো যত মানবিক বা ভালো কাজই হোক না কেন সেগুলো করার মাধ্যমে পাপ অর্জিত হবে। যেমন- ধর্মে বিধর্মী মানুষদেরকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কিন্তু মানুষ হত্যা করা খারাপ কাজ। মানুষ হত্যা খারাপ কাজ হওয়া সত্বেও ধার্মিকরা মানুষ হত্যাকে পূন্যের কাজ মনে করে যদি সে বিধর্মী হয়ে থাকে।
এজন্যই দেখা যায় ,মানুষ পরকালের জন্য পূন্য জমানোর আশায় একের পর এক ধর্ম বর্ণিত পূন্যের কাজ করে যায়। যদিও অনেক ক্ষেত্রে অনেক জঘন্য খারাপ কাজ তাকে করতে হয়। তবুও তারা পরকালের কাল্পনিক স্বর্গের আশায় ধর্মের নির্ধারিত করে দেওয়া ভালো বা পূন্যের কাজ করে যেগুলো বাস্তবতার নিরিখে ঘৃণ্য খারাপ কাজ।
যেমন ধর্ম বর্ণিত সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে পশু বলি বা কুরবানি। কোন প্রাণী, হোক সেটা গরু, ছাগল বা মহিষ প্রত্যকেরই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। বিবর্তন অনুযায়ী মানুষের সাথে সাথে প্রত্যেক প্রাণীই একই সাথে বিবর্তিত হয়েছে। এখন মানুষ বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে গিয়েছিল বলে আজ পৃথিবীতে মানুষই রাজত্ব করছে অন্য সব প্রাণীর মধ্য থেকে। কিন্তু এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, মানুষ অন্যান্য প্রাণীর মতই বিবর্তনের ধারায় একটা স্বাধারণ প্রাণী। এক কথায় পৃথিবীর সব প্রাণীই মানুষের ভাই; কারণ মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে।
কিন্তু যেহেতু মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে এগিয়ে গেছে তাই সে অন্যান্য প্রাণীকে শাসন করতে পারে। আর তাই বলি বা কুরবানীর প্রশ্ন উঠলে তারা পশুকে বেছে নেয় তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে। নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে মানুষ অসহায় পশুকে বলী বা কুরবাণী দেয় কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে। তাদের অন্ধ বিশ্বাস যে, এতে সৃষ্টিকর্তা খুশি হয়ে তাদের উপকার করবে। অর্থাৎ নিজেদের স্বার্থে মানুষ অসহায় প্রাণীকে হত্যা করতেও দ্বিধা করে না।
কিন্তু বলী বা কুরবাণীতে পশু কেন? কেন মানুষকে কুরবাণী বা বলি দেওয়া হয় না? বলি বা কুরবাণীর উদ্দেশ্য হলো সব চেয়ে প্রিয় জিনিস বলি বা কুরবাণী দেওয়া। তাহলে বলী বা কুরবাণীতে পশুকে বেছে নেওয়া কেন? সব চেয়ে প্রিয় যেহেতু নিজের প্রাণ তাই বলি বা কুরবাণীতে নিজেদেরকে উৎসর্গ করাটাই কি সব থেকে যুক্তিযুক্ত নয়?
কিন্তু মানুষ নিজেদেরকে উৎসর্গ না করে অসহায় পশুকে নিজেদের শক্তি প্রয়োগ করে বলি বা কুরবাণীর নামে তাদেরকে হত্যার অনুষ্ঠান করে। মানবতার কাছে এটা এক নির্মম পরিহাস।
অসহায় প্রাণীদেরকে ধরে ধরে হত্যার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যে পুন্য অর্জিত হয় সেটা বাস্তবতার নিরিখে ঘৃণ্য-জঘন্য। আর তাই এই ঘৃন্য জঘন্য নিষ্ঠুরতা কখনই কোন ভালো কাজ হতে পারে না। ফলে কাল্পনিক পূণ্যের আশায় বলি বা কুরবাণীর মত জঘন্য অপরাধ মানবিকতার ভিত্তিতে কখনই ভালো কাজ নয়।
পশুরা সেচ্ছায় বলি বা কুরবাণী হয় না। বরং তাদেরকে জোর করে বাধ্য করা হয় কুরবাণী বা বলির জন্য। আর এটা কখনই মানবিকতার নিরিখে ভালো কাজ হতে পারে না।
প্রকৃতির কোন প্রাণ নেই,। প্রকৃতি যা করে নিজের ইচ্ছায় করে না। কোন কিছু ইচ্ছা বা পরিকল্পনা করার মতো সামর্থ তার নেই। আর তাই এই নিষ্ঠুর জগতে প্রকৃতি বাধ্য হয়েই বড় নিষ্ঠুরের মতো আচরণ করে। আমরা সবাই জানি প্রকৃতি হলো এক প্রাণহীন জড় জগত। আর তাই প্রাণীর খাওয়ার জন্য প্রাণীকে বেছে নেবার ক্ষেত্রে প্রকৃতিকে দোষ দেওয়া যায় না।
পক্ষান্তরে এক প্রাণী অন্য প্রাণীকে শুধু বেঁচে থাকার তাগিদেই হত্যা করে বক্ষন করে থাকে। এতে প্রাণীদেরকে দোষ দেওয়া যায় না। কারণ বেঁচে থাকার অধিকার সব প্রাণীরই আছে। আর তাই এক প্রাণী যদি বেঁচে থাকার জন্য অন্য প্রাণীকে হত্যা করে তাতে তাদের কোন দোষ নেই। এটি প্রকৃতি নির্ধারিত। (আগেই বলেছি প্রকৃতি কোন ব্যক্তি স্বত্বা নয়; বরং জড় স্বত্বা)। ফলে প্রাকৃতিক এই নিয়ম যত অমানবিকই মনে হোক না কেন এতে কারো কিছু করার নেই। কিন্তু যখন নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের উদ্দেশ্যে অসহায় পশুদেরকে হত্যার উৎসব করা হয় সেটা আর প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা থাকে না। মানুষের নিজেদের উদ্দেশ্য রক্ষার্থে যে হত্যাকান্ড চালায় সেটা নিষ্ঠুর নির্মমতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর তাই এটি কখনই ভালো কাজ নয়।
কিন্তু পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মই তাদের কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্য
এই জঘন্য বলি বা কুরবানী প্রথার উৎপত্তি ঘটিয়েছে। পরকালের জন্য কিছু পূন্য জমা করার
উদ্দেশ্যেই এই ঘৃন্য খারাপ কাজটি মানুষ করে থাকে। এতে কোন মহত্ব নেই বরং মানুষের হিংস্রতা
ফুটে উঠে এই কাজের মধ্য দিয়ে।
একবার ভেবে দেখেছেন কি হাজার হাজার অসহায় পশুকে ধরে বেঁধে যে হত্যা করছেন তাতে
তাদের কাছে মানুষের ভাবমুর্তিটি কেমন ফুটে উঠছে? তারা কি মানুষকে হিংস্র দানব মনে করছে
না? মানুষের থেকে যদি বুদ্ধিমান প্রাণী থাকতো এই পৃথিবীতে তবে তারা মানুষকে ধরে বেঁধে
কুরবাণী বা বলি দিত। তখন কি মানুষের কাছে সেই সব বুদ্ধিমান প্রাণীগুলো হিংস্র দানব
হয়ে দাড়াতো না? ঠিক একই ভাবে পশুরাও মানুষকে হিংস্র দানব হিসেবেই দেখে। (বলে রাখা
ভালো, পশুরাও কিছুটা বুদ্ধি জ্ঞান রাখে যদিও সেটা মানুষের তুলনায় নগন্য।)
দেখা যাচ্ছে ধর্মগুলো বলী বা কুরবাণীর মতো নির্মম র্নিষ্ঠুর প্রথাকে পুণ্যময়
করে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে এটি মোটেও ভালো কাজ নয়। বেঁচে থাকার তাগিয়ে বাধ্য
হয়ে পশু হত্যা করা আর নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনার লক্ষে অসহায় পশুদেরকে হত্যা করার উৎসব
করার মধ্যে অনেক ব্যবধান রয়েছে।
আর তাই বলা যায় ধর্মে পূন্যের আশায় বলি বা কুরবাণী দেওয়াটা ধর্মের কাছে যত
পূন্যময় বা ভালো কাজই হোক না কেন বাস্তব ক্ষেত্রে এটি মোটেও ভালো কাজ নয়। বরং এটি
জঘন্য নির্মম নিষ্ঠুরতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আবার ধর্মে ভিন্ন ধর্মাবলম্বিদেরকে শত্রু হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতার
নিরিখে পৃথিবীর সব মানুষই একে অন্যের ভাই। মানবতার নিরিখে পৃথিবীর সব মানুষই সমান।
আর তাই পৃথিবীর সব মানুষের রয়েছে সমান অধিকার। কিন্তু ধর্মগুলো সব সময়ই নিজেদের অনুসারীদেরকে
শ্রেষ্ট মনে করে আর ভিন্ন ধর্মাবলম্বিদেরকে নিকৃষ্ট বলে রায় দেয়।
কিন্তু বাস্তবতার ক্ষেত্রে পৃথিবীর কোন ধর্মাবলম্বিই শ্রেষ্ট নয় কোন একটা
বিশেষ ধর্ম বেছে নেবার জন্য। বরং যে যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন প্রত্যেক মানুষই
সমান এবং সম মর্যাদার। আর তাই নিজেদেরকে শ্রেষ্ট ভেবে অন্যকে নিকৃষ্ট ভাবার মধ্যে কোন
ভালো কিছু নেই। কিন্তু ধর্ম মতে নিজেদেরকে শ্রেষ্ট ভাবাটা পুন্যময় আর ভিন্নধর্মাবলম্বিদেরকে
শ্রেষ্ট ভাবাটা পাপের কাজ।
ধর্মে ভিন্নমতাবলম্বিদেরকে মেরে ফেলাকে বৈধতা দিয়েছে। কোন কোন ধর্ম নিজেদের
ধর্ম রক্ষা করতে যুদ্ধ করা বা নিজেদের ধর্ম প্রতিষ্ঠা করার জন্য মানুষ হত্যা করাটা
বৈধতা দিয়েছে এবং এটা করাকে পুণ্যের কাজ বলে নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বাস্তবতার ক্ষেত্রে
কোন হত্যাই ভালো কাজ নয়। সেটা ধর্ম রক্ষার্থে হোক অথবা ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার্থে
হোক। অর্থাৎ ধর্মে কোন কোন হত্যাকে পূন্যের কাজ মনে করলেও বাস্তবতায় সব হত্যাই খারাপ।
হাজার হাজার টাকা খরচ করে মসজিদ মন্দির স্থাপন করে সেখানে দিন রাত সৃষ্টিকর্তার
উদ্দেশ্যে প্রার্থনাকে পুন্যের কাজ মনে করা হলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এর কোন উপযোগিতা
নেই। অর্থাৎ এতো এতো টাকা খরচ করে প্রচুর সময় ব্যায় করে মানুষের কোন কল্যাণই হয়
না। পরিত্যাক্ত জমিতে গাছ লাগানোতে প্রচুর উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু সারা দিন রাত ধরে
প্রার্থনায় কোন উপকারই মানুষের হয় না। বরং সময়ের অপচয় হয়।
কিন্তু ধর্ম মতে প্রার্থনা অনেক বড় মাপের পূন্যের কাজ। এমনকি প্রার্থনা বাদ
দিয়ে অন্য কোন কাজ করাটা বড়ই পাপের কাজ। কিন্তু বাস্তবতায় প্রার্থনায় কোন উপকার মানুষের
হয় না। কিন্তু যদি মানুষ প্রার্থনা না করে বৃক্ষ রোপনেও সময় ব্যয় করে তবে সেটা মানুষের
জন্য অনেক উপকারী হবে। আর তাই প্রার্থনা না করে বৃক্ষরোপন করাটা একটা ভালো কাজ। অর্থাৎ
বৃক্ষরোপনে অনেক কল্যান রয়েছে কিন্তু প্রার্থনায় কোন কল্যাণ নেই (আত্মতৃপ্তি ছাড়া)।
আর তাই প্রার্থনার মাধ্যমে পরকালের জন্য কাল্পনিক পূন্য জমা করাটা বাস্তবতার
নিরিখে একটি অর্থহীন কাজ।
ধর্মে কৃতদাস প্রথাকে কোন অন্যায় বলেনি যদিও এটি একটি জঘন্য অপরাধ। অর্থাৎ
ধর্মে কৃতদাস রাখাটা কোন খারাপ কাজ নয়। কিন্তু বাস্তবে মানুষকে কৃতদাস করে রাখাটা
জঘন্য রকমের অপরাধ অর্থাৎ খারাপ কাজ। তাই ধর্মে এটিতে কোন পাপ না থাকলেও বাস্তব ক্ষেত্রে
এটি খুব খারাপ কাজ।
ধর্মে নারীদেরকে পুরুষের থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখিয়েছে কিন্তু বাস্তবে
নারী পুরুষ সমান গুরুত্বপূর্ণ। নারী পুরুষের মধ্যে কিছু বিশেষ পার্থক্য অবশ্য আছে,
কিন্তু ধর্ম যেভাবে পুরুষকে নারীর উপরে মর্যাদা দিয়েছে সেটা অমানবিক অর্থাৎ খারাপ।
ধর্মকে যেহেতু পুরুষরা নিয়ন্ত্রন করতো তাই ধর্মে সব রকমের সুযোগ সুবিধাগুলো পুরুষের
দিকে গেছে। সব ধর্মই নারীকে পুরুষের চেয়ে কম মর্যাদাপূর্ণ দেখিয়েছে। এর কারণ ছিল ধর্মের
শাসকবর্গরা ছিল পুরুষ। নারীর প্রতি এই বৈষম্য কখনই ভালো নয়। কিন্তু ধর্মে এটাকেই পুন্যের
কাজ হিসেবে দেখিয়েছে। আর তাই নারীরা পুরুষের গোলামী করাকে পূন্যের কাজ বলে মনে করে।
কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে এর কোন ভিত্তি নেই।
কিছু কমন ব্যাপার সব ধর্মেই মোটামুটি একই রকম থাকে যেমন- মিথ্যা বলা মহা পাপ,
সদা সত্য কথা বল, হত্যা করো না, চুরি করো না ইত্যাদি। কিন্তু সমাজে প্রচলিত এই সব
ভালো কাজগুলো ধর্ম তৈরী করে দেয়নি। বিবর্তনের ধারায় মানুষই এক সময় টিকে থাকার তাগিয়ে
এই ভালো কাজগুলোকে তৈরী করেছিল এবং লালন পালন করেছিলো। কারণ মানুষ বুঝতে পেরেছিল
যে পরস্পরে সহযোগিতা, সহমর্মিতা এবং সত্য কথা বলা, মিথ্যাকে পরিহার করা, হত্যা-খুন,
চুরি ডাকাতির মতো অপরাধগুলোকে বন্ধ না করা হলে মানুষ সমাজে ভালো ভাবে টিকে থাকতে
পারবে না। আর এজন্যই সমাজের ভালো ভালো কাজ গুলো অনুসরণ করা হয়েছে ধর্ম তৈরী হবার
আগেই। আর ধর্ম এসে সমাজের এই নিয়মগুলোকে নিজেদের ধর্মে ঢুকিয়ে নিয়েছে সমাজের মানুষগুলোকে
ধর্মে আকৃষ্ট করার জন্যই। আর তাই ধর্মে ভালো ভালো কাজ গুলোকে করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ধর্ম সমাজে প্রচলিত হয়ে থাকা ভালো কাজগুলোকে নিজেদের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছে
ঠিকই কিন্তু এর একটা ধর্মীয় রুপ দিয়েছে। ধর্মগুলো ভালো এবং খারাপ কাজকে কাল্পনিক
পূন্য এবং পাপের মোড়কে আবৃত করে নিয়েছে।
কিন্তু বাস্তব জগতে পূন্য বা পাপের কোন অস্তিত্ব নেই। সমাজে যা কিছু সবার
জন্য উপকারি সেগুলোই হলো ভালো কাজ। আর সমাজে যা কিছু সবার জন্য ক্ষতিকর সেগুলোই
হলো খারাপ কাজ।
কিন্তু ধর্মে ভালো কাজ হলো সেগুলোই যেগুলো করলে পূন্য পাওয়া যায়। আর খারাপ
কাজ হলো সেগুলোই যা করলে পাপ হয়। কিন্তু ধর্ম মতে অনেক খারাপ কাজ করলেও কোন পাপ
হয় না; যেমন- পশুহত্যা, নারী অবমাননা, বিধর্মীদের ঘৃণা করা, বিধর্মী হত্যা, জিহাদ বা
ক্রুসেড, ইত্যাদি। অথচ এই কাজ গুলো খুব খারাপ কাজ। তাছাড়া ধর্ম কৃতদাস প্রথাকে বৈধ
করেছে যেটা শুধু খারাপ কাজই নয় বরং অমানবিক।
এই কাজগুলো করলেতো পাপ হয়ই না বরং এসব অমানবিক খারাপ কাজগুলো করলে পূন্য পাওয়া যায়।
এছাড়া সতিদাহ্ প্রথা, পাথর মেরে হত্যা, ডাইনী বা পিশাচ বানিয়ে নারী ও শিশুকে
পুড়িয়ে মারা ইত্যাদি নির্মম নিষ্ঠুর কাজগুলোকে ধর্ম পরম পূন্যের কাজ বলে মনে করে।
মানবতা বিরোধী এই নিষ্ঠুর কাজ করলে ধার্মীকদের পরকালের একাউন্টে পুন্য জমা হতে থাকে।
এসব জঘন্য খারাপ কাজ করার পরেও ধার্মিকরা তাদের কাল্পনিক পরকালের একাউন্টে পূন্য জমা
হতে থাকে যেগুলো খরচ করে তারা স্বর্গের দামী গাড়ি-বাড়ী এবং হুর-পরী-মদ ক্রয় করবে।
অনেক খারাপ কাজকে ধর্মে পুন্যময় করে দেওয়া হয়। এসব খারাপ কাজ করার পরও ধার্মীকদের একাউন্টে পূন্য জমা হতে থাকে। কিন্তু বাস্তব জগতে এসব জঘন্য অমানবিক কাজ হবার কারণে মানুষ এগুলোকে খারাপ হিসেবে চিহ্ণিত করেছে। বাল্য বিবাহকে অনেক ধর্মই বৈধতা দিয়েছে। এক সময় বিধবা বিবাহ ছিল জঘন্য পাপের কাজ। বিধবাদেরকে তার স্বামীর সাথে পুড়িয়ে হত্যা করে পূন্য কামাই করা হতো। দল বেধে মানুষ এই হত্যাজজ্ঞ ঘটিয়ে ধার্মীকগণ তাদের একাউন্টে পূন্য জমা করতো। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে এগুলো চরম খারাপ কাজ। তবুও এ কাজগুলো মানুষ করে কাল্পনিক পূন্য কামাই করেছে। এবং পরকালের জন্য বিশাল পরিমাণ পূন্যের টাকা জমা করেছে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে এসব পূন্যের কোন মূল্যই নেই।
দেখা গেছে কয়েকশো বছর আগেও যে কাজগুলোকে পরম পূণ্যময় কাজ বলে মনে করা হতো (যেমন-সতীদাহ্, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি) বর্তমানে সেগুলোকে খুব খারাপ কাজ বলা হয় এবং ধর্মগুলোও সব সময়ের মতো এসব কাজকে তাদের ধর্মে জুড়ে দিয়ে এগুলোকে পাপের কাজ করে নিয়েছে। অর্থাৎ ধার্মীকগণ সমাজের তৈরী করা ভালো কাজগুলোকে তাদের ধর্মে ঢুকিয়ে নেয় এবং এগুলোকে তাদের ধর্মের সাথে জুড়ে দিতে পাপ পূণ্যের মতো কাল্পনিক ধারণার অবতারণা করে।
প্রকৃত পক্ষে ভালো খারাপ মানুষ তার বাস্তব জ্ঞান দিয়ে তৈরী করেছে। আর সেগুলোই ধর্ম তাদের ধর্মে ঢুকিয়ে দিয়ে এগুলোর উপর কাল্পনিক পাপ-পূণ্যের লেভেল লাগিয়ে নিয়েছে।
কিছু কিছু পূণ্যের কাজ যেমন প্রার্থনা করাতে সমাজের কোন উপকারই হয় না। শুধু মাত্র ধার্মিকদের ব্যাক্তিগত মনের প্রশান্তি ঘটে। কিন্তু এগুলো দ্বারা সমাজের তথা মানুষের কোন উপকার হয় না। ধর্ম প্রার্থনাকে সব থেকে পূন্যের কাজ বলে মনে করে। কিন্তু এই পূন্যময় প্রার্থনার বাস্তব কোন উপযোগিতা নেই। বাস্তব ক্ষেত্রে এসব পূণ্যময় কাজ অর্থহীন সময় ও সম্পদ অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। আর বাস্তবতার নিরিখে অপচয় করা খারাপ কাজ। অর্থাৎ প্রার্থনার পিছনে ব্যয় হওয়া সম্পদ ও সময় অপচয় করা ক্ষতিকর তথা খারাপ কাজ। ফলে দেখা যাচ্ছে প্রার্থনার ক্ষেত্রে যেটা পূন্যময় সেটাই সমাজের জন্য স্বার্বিক ভাবে ক্ষতিকর বা খারাপ।
ধর্মে অনেক খারাপ কাজকে বৈধতা দিয়েছে। অনেক খারাপ কাজকে পূন্য বা ভালো কাজ বলে রায় দিয়েছে। অনেক অমানবিক, নিষ্ঠুর নির্মম কাজকে পূন্যের বলেছে। বাল্যবিবাহ, বিধর্মী খুন-হত্যা, যুদ্ধ, কৃতদাস প্রথা, পশুহত্যা ইত্যাদি খারাপ কাজগুলোকে ভালো বা পূণ্যের কাজ বলেছে। নারীর প্রতি বিদ্বেষ, বিধর্মীদের প্রতি বিদ্বেষ, সমকামীদের প্রতি বিদ্বেষ প্রভৃতিকে ধর্ম পূন্যময় কাজ বলে মনে করে। কিন্তু বাস্তবিকতার নিরীখে এসব কাজ অমানবিক, ঘৃণ্য-জঘন্য কাজ অর্থাৎ খারাপ কাজ। কিন্তু এই কাজগুলো করেই ধর্ম তার অনুসারীদেরকে পূন্য কামাই করতে বলেছে যাতে তারা কাল্পনিক পরকালে যেয়ে এই পূণ্যের মূদ্রাগুলোকে খরচ করতে পারে। তারা যেন স্বর্গে যেয়ে পূন্য খরচ করে স্বর্গের একটি ভালো এপার্টমেন্ট কিনতে পারে। সর্বপরী স্বর্গীয় নারী, মদ ইত্যাদি কিনে চিরকার সুখে থাকতে পারে। আর তাই ধর্ম এই খারাপ কাজগুলো ধার্মিকদেরকে দিয়ে করিয়ে কাল্পনিক পূণ্য দানের অঙ্গীকার করেছে। মানুষ দলে দলে হাজার হাজার খারাপ কাজ (যা ধর্মের চোখে ভালো বা পূণ্যের কাজ) করে পরকালের স্বর্গ কেনার জন্য কাল্পনিক পূণ্য জমা করছে।
আবার অনেক ভালোকাজ কে ধর্ম খারাপ হিসেবে দেখায় এবং সেগুলো করা থেকে মানুষকে বিরত রাখতে কাল্পনিক পাপের ভয় দেখায়। (বিধর্মীর প্রতি ভালোবাসা)। নিজের ধর্মের অপরাধীদের থেকে ভিন্ন ধর্মের ভালো মানুষকে ধর্মে ভালো হিসেবে দেখা হয় না। এমনকি ধর্মে এমন মন্তব্য করা হয় যে স্বধর্মে মন্দ কাজ করা ধার্মিকরাও ভিন্নধর্মের ধার্মিক ভালো মানুষের থেকেও ভালো এবং পূণ্যবাণ। ফলে জাতি বিদ্বেষের মতো কাজটি ধার্মিকরা করেও তাদের কাল্পনিক পূণ্য কামাই করে। কিন্তু এটা বাস্তব ক্ষেত্রে একটা খারাপ কাজ হিসেবে বিবেচিত।
অপর দিকে ধর্ম প্রার্থনাকে পরম পূণ্যের কাজ বলে আর প্রার্থনা না করাকে পরম পাপের কাজ বলা হয়। কিন্তু বাস্তবতার নিরীখে প্রার্থনা কোন অর্থপূর্ণ কাজ নয় বরং এটি অর্থহীন অপচয় মুলক কাজ অর্থাৎ খারাপ কাজ। আর তাই প্রার্থনা না করাটা কোন খারাপ কাজ নয়। বরং প্রার্থনার পিছনে সময় ও সম্পদ না খরচ করে সেই সময়কে কোন গঠনমূলক কাজে ব্যয় করাটাই ভালো কাজ, মঙ্গলময় কাজ। প্রার্থনায় সময় অপচয় না করে বৃক্ষরোপন করা মহৎ কাজ। কিন্তু ধর্মে প্রার্থনাটাই প্রধান পূণ্যের কাজ; বাকীগুলো কম পূণ্যের কাজ। যেহেতু প্রার্থনা একটি অপচয় মুলক কাজ আর তাই এটি বাস্তবতার নিরীখে একটি মন্দ কাজ; আবার বৃক্ষরোপন সমগ্র মানব জাতির জন্য মঙ্গলজনক বলে প্রার্থনার চেয়ে বৃক্ষরোপন অনেক অনেক গুন বেশী ভালো কাজ। কিন্তু ধর্মের ক্ষেত্রে প্রধান পূণ্যের কাজটি হলো প্রার্থনা করা। আর তাই প্রার্থনা বাদ দিয়ে অন্য কোন কাজই পাপের বলে গন্য করা হয়। অর্থাৎ বাস্তব ক্ষেত্রে একটি মহৎ কাজও অর্থহীন প্রার্থনার জন্য পাপময় বা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে ভালো এবং খারাপ কাজ এভাবে কাজ করে না। যা কিছু ভালো তা সব সময়ের জন্যই ভালো। আর যা কিছু খারাপ তা সব সময়ের জন্যই খারাপ। যেমন মানুষ হত্যা করা সব সময়ই খারাপ কাজ। চুরি ডাকাতি বা অন্য কোন উপায়ে মানুষের ক্ষতি করা খারাপ কাজ। আবার কারো উপকার করা, কাউকে ক্ষতিকর কিছু করা থেকে বিরত রাখা, কোন ধ্বংসাত্বক কাজ বন্ধ করা ইত্যাদি ভালো কাজ। আর এগুলো সব সময়ের জন্যই ভালো কাজ।
দেখা যাচ্ছে ধর্মগুলো যেসব কাজকে পূণ্যময় অর্থাৎ ভালো মনে করে এমন অনেক কাজ বাস্তবতার নিরীখে খারাপ কাজ এমনকি জঘন্য খারাপ কাজ। আবার যেসব কাজকে পাপের কাজ বা খারাপ কাজ বলে মনে করে সেগুলোই দেখা যায় ভালো কাজ। এবং ধর্ম যে পাপ পূণ্যের ধারণা দেয় সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবতা থেকে ভিন্ন রকমের। বাস্তবে যেহেতু কল্যাণময় ও অন্যের উপকার মূলক কাজগুলোই হলো ভালো কাজ এবং ক্ষতিকর বা ধ্বংসাত্বক ও অপকারমূলক কাজগুলো হলো খারাপ কাজ, আর তাই ধর্মে ভালো কাজ আর খারাপ কাজের সাথে অথবা পূণ্য ও পাপের সাথে বাস্তব জগতের ভালো কাজ বা খারাপ কাজের কোন মিল নেই। দেখা যায় ধর্মে ভালো এবং সত্যিকারের ভালো এক নয়। আবার ধর্মের খারাপ এবং সত্যিকারের খারাপ এক নয়। আর তাই ধর্মের কাল্পনিক পূণ্যময় কাজ সব সময় ভালো নয় বরং ধর্মের পূণ্যময় কাজ সত্যিকারের ভালো কাজের বিপরীত। আবার ধর্মের পাপময় কাজ বাস্তবতার খারাপ কাজ থেকে ভিন্ন। দেখা যায় যা কিছু ধর্মে খারাপ সত্যিকার ভাবে সেগুলোই ভালো কাজ।
আর তাই বলা যায় পাপ-পূণ্যের সাথে ভালো খারাপের কোন সম্পর্ক নেই।
বাস্তব ভালো খারাপ আর ধর্মীয় ভালো খারাপ যেমন এক নয় ঠিক তেমনি ধর্মের পাপ পূণ্যের সাথে বাস্তবের ভালো খারাপের কোন সম্পর্ক নেই। পাপ পূণ্যের ধারণা একটি কাল্পনিক ভিত্তিহীন ধারণা যার সাথে বাস্তব জগতের কোন মিল নেই। প্রাচীণ মানুষেরা তাদের প্রাচীণ জ্ঞানের ভিত্তিতে প্রাচীণ সভ্যতা এবং সমাজ ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে যে পাপ পূণ্যের সজ্ঞা নির্ধারণ করে দিয়েছিল সেগুলোর বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই। কারণ বাস্তবতা প্রাচীণ ধ্যাণ ধারণা থেকে অনেক এগিয়ে গেছে আর এগিয়ে গেছে ভালো মন্দের স্বীমা রেখা। ধর্মের ভালো মন্দ বা পাপ-পূণ্য প্রাচীণ বলে সেগুলোর সাথে বাস্তব ভালো মন্দের এতো বিরোধ। মানুষ উন্নত হচ্ছে বলে ভালো মন্দের ধারণাও উন্নত হচ্ছে। কিন্তু ধর্মগুলো প্রাচীণ বলে পাপ পূণ্যও প্রাচীণ রয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে পাপ বা পূণ্যের কাল্পনিক ধারণা খুব প্রাচীণ এবং ভিত্তিহীন হওয়ায় এর উপযোগিতা আর অবশিষ্ট্য নেই।
প্রাচীণকালের মানুষ দ্বারা তৈরী হওয়া কাল্পনিক পরকালের কাল্পনিক মুদ্রা অচল হয়ে গেছে, বর্তমানের ভালো আর খারাপের কাছে।
তাই ধর্মের কাল্পনিক পাপ-পূণ্য এবং বাস্তবের সত্যি ভালো মন্দ এক নয়।
ধর্ম বা প্রার্থনা
ধর্ম (Religion)
আর
বাস্তবতা এক নয় । (পর্ব 5)
ধর্মের ধ্যান ধারণা এবং বাস্তবতা সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
ধর্মের নৈতিকতা এবং বাস্তবের নৈতিকতা এক নয়।
No comments:
Post a Comment