স্বর্গের
দেবদূত নেমে এলো পৃথিবীতে। এক কুখ্যাত খুনির সামনেই দাড়ালো। খুনি একটুও ভয় পেলো
না। তার সামনে দাড়ানো অতি সুন্দর দেবদুতকে উদ্দেশ্য করে কোমল স্বরে বললো- “কি চাও?”
দেবদুত
একটু ভড়কে গেল। এমনটা সে আশা করেনি। সে ভেবেছিল পৃথিবীর সবার মতো খুনিটাও চমকে যাবে।
কিন্তু ঘটনা অন্যরকম ঘটলো। দেবদুত খুনিকে ভয় দেখানোর জন্য উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠলো।
স্বরটাকে ভয়ংকর করে বলে উঠলো- “আমি তোমাকে খুন করতে এসেছি। ঈশ্বর আদেশ দিয়েছেন তোমাকে
হত্যা করার জন্য। জীবনে তুমি অনেক পাপ করেছে। মরার জন্য তৈরী হয়ে নাও।“
খুনি
ভয় পেলো না একটুও। পকেট থেকে সিগারেট বের করে লাইটার খুজতে লাগলো পকেটে। দেবদুতকে
উদ্দেশ্য করে তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো- “তোমার কাছে আগুনের ব্যবস্থা আছে?”
দেবদুত
অবাক হয়ে খুনির দিকে তাকিয়ে রইলো। শান্ত স্বরে বললো- “আমাকে তোমার ভয় পাওয়া উচিত।
আমি তোমার প্রান নিতে এসেছি।“
ক্রুদ্ব
হয়ে উঠলো খুনি। ভরাট কন্ঠে বলে উঠলো- “আমি কাউকেই ভয় পাই না। আমাকে ঘাটিও না। তোমাকে
গুলি করতে আমার এক সেকেন্ডও লাগবে না।“
দেবদুত
শান্ত কন্ঠেই বললো- “আমাকে তুমি মারতে পারবে না। তোমার গুলি আমার কিছুই করতে পারবে
না।“
শান্ত
হয়ে এলো খুনির কন্ঠ। - “জানি আমি। কিন্তু গুলি করে তোমাকে যন্ত্রনা দিতে তো পারবো!
তাতেই হবে।“
ভয়
পেয়ে গেল দেবদুত। মনে পড়লো এক ভয়ংকর সন্ত্রাসীর কথা। দু হাজার মানুষ হত্যার দায়ে তাকে
খুন করতে পৃথিবীতে নেমে এসেছিল দেবদুত। সেও তাকে ভয় পায়নি। সেকেন্ডে পঞ্চাশটা গুলি
করে তাকে অমানুষীক যন্ত্রনা দিয়েছিল সেই সন্ত্রাসীটা। সেটা ছিল দু'শ বছর আগে। এই খুনিটার
সেটা জানার কথা নয়। কিন্তু সে যদি গুলি করে দেয় তবে তাকে আবারও ভয়ংকর যন্ত্রনার মধ্যে
যেতে হবে। ভয়টা বুঝতে দেওয়া যাবে না খুনিকে। দেবদুত আগের মতই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা
করলো। রাগী ভাব নিয়ে বললো- “তুমি বড় শয়তান হয়ে গেছ। তোমাকে হত্যা না করলে তুমি ঠিক
হবে না। মরার জন্য তৈরী হয়ে নাও।“
দেবদূতের
হাতে আগুলের গোলা দেখা গেল। খুনি আগের মতই ভয়হীন। পকেট থেকে রিভলবারটি বের করে আস্তে
আস্তে দেবদূতের দিকে এগিয়ে গেল। দেবদুত কি করবে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলো না। হাত
উপরের দিকে উঠিয়ে নিলো আগুনের গোলা নিক্ষেপ করার জন্য। অমানুষের মতো হেসে উঠলো
খুনি। ঠোঁট বাঁকা করে দেবদুতের দিকে তাকালো।
-“তুমি
জানো আগুনের গোলা ছুড়লে কি হবে তোমার। আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। শৈশব থেকেই প্রাণটা
হাতের মুঠোয় নিয়ে খেলছি। তোমার আগুলের গোলা আমার দেহ ছোঁয়ার আগেই পাঁচশো গুলি
তোমার গায়ে পাঠিয়ে দেবো। পদার্থ বিজ্ঞানের স্বাধারণ সত্যগুলো তুমি নিশ্চয় জানো?
আগুনের গোলা ছুঁড়ে মারার আগেই গুলি তোমার গায়ে লেগে যাবে। প্রাচীণ কালের অস্ত্র দিয়ে
কিছুই করতে পারবে না তুমি। সাহস থাকলে ছুঁড়ে দাও গোলা।“
দেবদূত
যেন ভয় পেয়ে গেলো। খুনিটার সাহস দেখে অবাক হতে হলো দেবদুতকে। কন্ঠ স্বাভাবিক রেখে
বললো- “তুমি জানো না যে তোমার গুলি আমাকে কিছুই করতে পারবে না।“
খুনিটা
হা হা করে হেসে উঠলো। -“তুমি জান না আমি তোমাকে কিভাবে যন্ত্রনা দিতে পারি।“
ততক্ষনে
দেবদূতের কাছে চলে এসেছে খুনি। আগুনের গোলা থেকে সিগারেট ধরালো খুনিটা।
দেবদুত
বোকার মতো তাকিয়ে রইলো খুনির দিকে। “এতো সাহস পেলো কোথা থেকে খুনিটা? ভাবলো
দেবদুত।“ খুনি যেন দেবদুতের মনের কথা পড়তে পারলো। -তুমি কি ভেবেছো আমি তোমার সম্পর্কে
জানি না। তুমি আর তোমার ঈশ্বরকে খুব ভালো ভাবেই চেনা আছে আমার। হুকুমের গোলাম তুমি।
দু'শ বছর আগে এক ভয়ংকর খুনিকে হত্যা করেছিলে তুমি। তুমি কি ভেবেছো সেটা জানি না আমি।
খুব ভালো করেই জানি। অনেক দিন থেকেই আমি অপেক্ষা করে আছি তুমি কবে নেমে আসবে পৃথিবীতে।
তোমার ঈশ্বর কি বলে দেয়নি আমরা তোমার মোকাবেলায় প্রস্তুত হয়ে রয়েছি। নাকি সে বৃদ্ধ
হয়ে গেছে?”
চোখ
বড় বড় হয়ে গেলো দেবদূতের। আমতা আমতা করে বললো- “তুমি এতো কিছু জানো কিভাবে?”
ক্রুদ্ব
ভাবে হেসে নিলো খুনি- “তোমার কথা আমরা সব অপরাধীরাই জানি। কোড আছে আমাদের মধ্যে
যোগাযোগের জন্য। আদান প্রদানের মাধ্যম হিসেবে আমরা কোডগুলো ব্যাবহার করি। কি সেগুলো
জানো কি তুমি?”
চুপ
করে রইলো দেবদূত। জানে না সে।
নিজেই
নিজের প্রশ্নের উত্তর দিল খুনি- “'দেবদূত আসবে' এই কোডটি আমরা অন্ত্র কেনার জন্য ব্যবহার
করি। 'তোমাদের খুনি দেবদূত' এই কোডটি আমরা টাকা আদান প্রদানে ব্যবহার করি। 'দেবদুতকে
ভয় পেয় না' এটি দিয়ে আমরা হত্যার কন্ট্রাক্ট নেই। 'তুমিও পার দেবদূতকে শাস্তি দিতে'
এই কোডটি আমরা পরস্পরের শুভেচ্ছা হিসেবে ব্যবহার করি।“
বোবা
হয়ে গেছে দেবদূত। তাকিয়ে আছে খুনির দিকে। কি বলবে খুনি সেটা শুনতে চায় সে।
-“তুমি
ভেবেছো তোমার কথা কেউ জানে না? অপরাধির দল তোমার বিরোদ্ধে যুদ্ধের জন্য তৈরী রয়েছে।
তোমার ঈশ্বরের উচিৎ ছিল তোমাকে জানানোর। কিন্তু সে কেন তোমাকে জানায়নি তুমি জান?”
চোখ
লাল হয়ে উঠলো দেবদূতের। ক্রুদ্ধ হয়ে উঠছে সে।
খুনিটা
লক্ষ করলো দেবদূতকে। অবহেলা করে বলতে লাগলো- "কারণ সে সব চেয়ে বড় শয়তান। তোমার
মায়া করে না সে। তুমি যন্ত্রনা পেলেও তার কিছু এসে যায় না। তার মত বড় শয়তান কেউ নেই
এই জগতে।"
রাগে
জ্বলে উঠলো দেবদূত। চিৎকার করে বলে উঠলো- "মেরে ফেলবো আমি তোমাকে! আর একটা
যদি কথা বলো ঈশ্বরের নামে!"
-"চুপ
থাকো!" ধমক দিয়ে উঠলো খুনিটা। "তুমি কি ভেবেছ মহা দয়াময় তোমার ঈশ্বর?
মোটেও তা নয়। তোমার চিন্তা নেই বিন্দুমাত্র তার। সে তোমাকে ব্যবহার করছে। তোমার
যন্ত্রনার কোন মুল্য নেই তার কাছে। বিশ্বাস না হয় জিঙ্গেস করো তাকে, ভালো মানুষকে
মারতে সে আমাদের মতো শয়তানদের কেন তৈরী করেছে? তোমার ঈশ্বর না সর্বজ্ঞানী; তবে কেন
শয়তানকে সৃষ্টি করেছে ভালো মানুষদেরকে মারার জন্য?
-"যাতে
তোমাদের মতো শয়তানদের শাস্তি দিতে পারে। নরকে পুঁড়ার জন্য তোমাদের সৃষ্টি করেছেন
তিনি।" চিৎকার করে বললো দেবদূত। রাগ তার বেড়েই চলেছে।
-"মিথ্যে
কথা!" ধমকে উঠলো খুনিটা। "সে মৃত্যু নিয়ে খেলছে। মানুষকে যন্ত্রনা দিয়ে
সুখ পায় শয়তান ঈশ্বরটা। তুমি কি ভাবো ইচ্ছে করে খুন করি আমরা? খুন করার আদেশ দিয়ে
দিয়েছে শয়তানটা। আমাদের ডিএনএ’কে শয়তান করে তৈরী করেছে সে। তুমি কি বুঝবে খুন করার
মজাটা! ঘুমাতে পারি না এক রাত। অমানুষিক যন্ত্রনা নিয়ে বেঁচে আছি আমরা। মরনকে ভয় পাই
না আর। এই যন্ত্রনার জীবন থেকে মৃত্যু অনেক ভালো। এই জীবন কি আমরা চেয়েছিলাম? আমরাও
ভালো মানুষদের মতো বাঁচতে চাই। তুমি কি করে বুঝবে আমাদের যন্ত্রনা। তোমাকেও তো
রোবট বানিয়ে দিয়েছে শয়তান ঈশ্বরটা। ভালো মন্দের বিচার করার ক্ষমতা তোমাদের নেই।
রক্তের খেলা কতটা যন্ত্রনার তোমাকে বুঝাতে পারবো না আমি। আমরা এমন ভাবে জন্মাতে চাইনি।
তোমার ঈশ্বর আমাদের এমন করে সৃষ্টি করেছে। ঘৃনা করি আমি শয়তানটাকে।
-"চুপ করো!"
আবারও চিৎকার করে উঠলো দেবদুত। "আর শুনতে চাই
না আমি।" কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে চাইলো দেবদূত। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো- “তোমরা জাহান্নামের কিট্, মিথ্যে বলা তোমাদের ধর্ম। ঈশ্বর কখনও এমনটি করতে পারে না। তোমরা তোমাদের ভাগ্যকে নরকের দিকে নিয়ে গেছ। শয়তান তোমরা। নরকের শাস্তিই তোমাদের প্রাপ্য।"
খেঁকিয়ে
উঠলো খুনিটা। টিটকারী দিয়ে বললো- “আচ্ছা! তবে আমাদের ভাগ্যটা লিখেছে কে? আমি কি আমার ভাগ্য
লিখে রেখেছি আমার জন্মের আগেই? নাকি শয়তান ঈশ্বরটা আমার জন্মের আগেই আমার ভাগ্যটা লিখে রেখেছে? আমিতো ঈশ্বরের ছক করা পথে
চলছি। আমাদেরকে নিয়ে খেলছে শয়তানটা। বোঝার ক্ষমতা তোমার নেই। নওতো তুমিও বুঝতে, আমরা শুধু খেলার গুটি। খেলোয়ার শুধু একজনই; শয়তান ঈশ্বরটা।“
-"অসম্ভব!" শান্ত
হয়ে আসছে দেবদূতের কন্ঠ। "ঈশ্বর কখনও এমনটা করতে পারে না। তিনি সর্বচ্চ দয়ালু। তিনি কি করে মানুষকে
কষ্ট দিতে পারে? তার সৃষ্টিকে খুব ভালোবাসে সে। আমরাতো তার সন্তান সমান। এত দয়াবাণ তিনি
ভালো মানুষদের জন্য স্বর্গের ব্যবস্থা করেছে। কত বড় দয়ালু
হলে সে এমনটা করে!"
-"আচ্ছ! নরকের
ব্যবস্থা করেছে কে? নিরীহ মানুষকে অনন্তকাল যন্ত্রনার ব্যবস্থা যে করে সে
কি সর্বচ্চ দয়ালু হতে পারে? আমরা যদি ঈশ্বরের সন্তানই হতাম তবে কেন এক জাতের মানুষকে
স্বর্গে যাবার ব্যবস্থা করে দিয়েছে সম্পূর্ণ নিজে আবার অন্য জাতের মানুষকে অনন্তকালের জন্য নরকের অমানুষিক যন্ত্রনার ব্যবস্থা করে দিয়েছে যাতে অসহায় মানুষগুলো কোন অন্যায় না করেই অনন্তকাল
ধরে সাইকোপ্যাথ ঈশ্বরের যন্ত্রনা ভূগ করতে পারে। আমরা কি শয়তান নাকি
তোমার ঈশ্বরই বড় শয়তান। একবার
ভেবে দেখেছো কি?"
-তোমরা
খুনিরা কিভাবে বুঝবে ঈশ্বরের দয়াময়তা। সে শুধু খারাপ
মানুষদেরই শাস্তি দেন ভালো মানুষদের কখনই ঈশ্বর শাস্তি দেন না।"
-"চুপ করো
শয়তানের চেলা!" রেগে উঠেছে খুনিটা। "ঝড়, তুফান, সাইক্লোনে মানুষ মারা যাচ্ছে হাজারে হাজার; লক্ষ লক্ষ মানুষ মরছে ভুমিকম্প, সুনামী আর না খেতে
পেরে। কে মারছে এসব
নিরীহ মানুষদেরকে? প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো কি মানুষের তৈরী,
নাকি শয়তান ঈশ্বরটার তৈরী? মানুষকে কষ্ট দেবার জন্য শয়তানটা এসব ব্যবস্থা করে দিয়েছে। যাতে মানুষ অমানুষীক যন্ত্রনায় মারা যেতে পারে। ভয়ংকর যন্ত্রনা দিয়ে যে প্রতিনিয়ত মানুষ
মারা যাচ্ছে তার জন্য দায়ী কে? মৃত্যুকে কে তৈরী করেছে?
ঈশ্বর কি জানতো না
মৃত্যু অনেক যন্ত্রনার? তবে কেন সে মৃত্যুকে সৃষ্টি
করেছে মানুষকে কষ্ট দেবার জন্য? এসব দেখেও কি তোমরা বুঝতে
পারো না ঈশ্বর কতটা
ভয়ংকর শয়তান? ইশ্বরের শয়তানীর কাছে আমাদের শয়তানির মূল্য কতটুকু? আমাদের যেভাবে প্রোগ্রাম করে দিয়েছে আমরা সেভাবেই কাজ করে চলেছি। আমাদের কোন স্বীদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা নেই। আমাদের মধ্যে খুনির আচরণ কে সৃষ্টি করেছে?
তোমার ঈশ্বর কি চাইলে আমাদেরকে
ভালো মানুষ করে সৃষ্টি করতে পারতো না? তবে কেন আমাদেরকে খুনি বানিয়েছে? আমরা তো চাইনি খুনি হতে! একটা স্বাধারণ মানুষের মতো একটা শান্তির জীবন কাটানোর জন্য যেকোন মূল্য দিতে রাজি আছি। অথচ কত যন্ত্রনা নিয়ে
আমাদের দিন রাত কাটাতে হয়। সব সময়ই মানুষিক
যন্ত্রনার এই জীবন আমরা
বেছে নেইনি। তোমার সাধের সৃষ্টিকর্তা আমাদের এমন করে বানিয়েছে।"
-"আমি বিশ্বাস
করি না তোমাকে!" শান্ত
হয়ে বললো দেবদুত। "তুমি মিথ্যা কথা বলছো। তোমরা কখনই ভালো মানুষ হতে চাও না। তোমরা শয়তান কারণ তোমরা তোমাদের অপরাধ করতে আনন্দ পাও।"
-"যা জান
না তা বলতে এসো
না!" রাগে গজগজ করতে থাকে খুনি। "আমাদের আচরণ নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে আমাদের ডিএনএ কোডিং করে। আর আমাদেরকে খারাপ
পরিবেশে রেখে আমাদেরকে করেছে আরো বেশী খারাপ। আমরা আমাদের জন্মকে নিয়ন্ত্রন করতে পারি না। কিন্তু তোমার ঈশ্বরের হাতে সব থাকা সত্তেও
সে আমাদের এভাবে তৈরী করেছে যাতে আমরা তার পরিকল্পনা মাফিক চলি। যাতে তার পরিকল্পনা সফল হয়। সে নিজেই মানুষ
সৃষ্টি করেছে আবার নিজেই মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য শয়তান তৈরী করেছে। শয়তানকে ঈশ্বরই ক্ষমতা দিয়েছে যাতে সে মানুষকে বিভ্রান্ত
করতে পারে। নিরীহ বোকা মানুষগুলো না বুঝে অসহায়
ভাবে শয়তানের কথা মতো কাজ করে চলে। এসব কিছুই সবচেয়ে বড় শয়তান ঈশ্বরটার
কাজ। সে সব কিছুই
নিয়ন্ত্রন করে তার পরিকল্পনা মাফিক ঘটায়, আর তার দায়
বর্তায় নিরীহ অসহায় মানুষদের উপর। অথচ মানুষের
ক্ষমতা না থাকায় তারা
সেই শয়তান ইশ্বরের পরিকল্পনার অংশ হয়ে যায় আর ভুল করে
বসে। সেই অসহায়ত্বের কারণে শয়তান ঈশ্বর আবার নিরীহ অসহায় মানুষদেরকেই নরকের শাস্তির ব্যবস্থা করে। সবচেয়ে বড় শয়তান না
হলে কি ঈশ্বর এমনটি
করতে পারতো? মানুষ যদি ঈশ্বরের সন্তানই হবে তবে মানুষের সাথে এই নিষ্ঠুর খেলাটা
ঈশ্বর কেন খেলেছে? কোন পিতা কি তার সন্তানকে
এভাবে অমানুষিক কষ্ট দিতে পারে? তুমি কল্পনাও করতে পারবে না তোমার ঈশ্বর
কত বড় মাপের শয়তান।
আমরাতো শয়তানটার হুকুম মতো কাজ করে চলছি। আমাদের এর থেকে কোন
মুক্তি পাওয়ার ক্ষমতা নেই। তুমি কি বুঝতে পারবে
আমাদের অসহায়ত্বের কথা? আমরা কেউই এভাবে জন্মাতে চায়নি। শয়তান ঈশ্বরটাই আমাদেরকে এভাবে সৃষ্টি
করেছে। আমরা কি আমাদের ভাগ্যের
নির্মাতা নাকি ঈশ্বর এসব করেছে? তুমি সেসব বুঝবে না কখনই।
-"তোমার কর্ম
দ্বারাই তোমাদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। তোমরা এমন কর্ম করবে তাই ঈশ্বর তোমাদেরকে এভাবে সৃষ্টি করেছে।" কৈফিয়তের সুরে বললো দেবদূত।
-"বোকা রোবট!"
রাগে গজ গজ করে
উঠলো খুনি। "যদি ঈশ্বর সবার ভাগ্য লিখে রাখে পৃথিবী সৃষ্টির আগেই তবে আমার ভাগ্য লিখে রাখায় আমার দোষটা কোথায়? আমি কি আমার জন্মের
আগেই আমার কর্ম ঠিক করে রেখেছিলাম নাকি শয়তান ঈশ্বরটা আমার ভাগ্য লিখে রেখেছিল আমার জন্মের আগেই।"
-"কিন্তু তুমি
তোমার ভাগ্যকে বদলাতে পারতে তোমার ভালো কর্মের দ্বারা।" আবারও কৈফিয়তের সুরে জবাব দিলো দেবদুত।
হেঁসে
উঠলো খুনি। তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো- “তুমি কি জান না
ঈশ্বরের বিধান কেউ বদলাতে পারে না? আমি সেভাবেই কাজ করি যেখাবে ঈশ্বর আমার ভাগ্যে লিখে রেখেছে। আমার কি ক্ষমতা আছে
ঈশ্বরের প্ল্যানের বাইরে যাবার! ঈশ্বর যে ভাবে প্লেন
করেছিল আমি সেভাবে চলছি। আমি খুনি হতে চাইনি। আমাকে খুনি করে পাঠিয়েছে শয়তান ঈশ্বরটা।"
-"মোটেও না।"
প্রতিবাদ করে উঠলো দেবদূত। তুমি তোমার কর্মের দ্বারাই তোমার ভাগ্য লিখেছ। ঈশ্বর তোমার মনের কথা জানতেন। তুমি ভবিষ্যতে কেমন হবে ঈশ্বর সেটা আগেই জানতে পেরেছিল আর তাই তোমাকে
খুনি করে সৃষ্টি করেছে। তুমিই খুনি হতে চেয়েছিল। ঈশ্বর শুধু তোমার ইচ্ছা পুরণ করেছেন মাত্র।"
-"চুপ করো
তুমি!" চেঁচিয়ে উঠলো খুনি। "বুদ্ধি সুদ্ধি গুলিয়ে ফেলেছো নাকি? আমি কি আমার জন্মের
আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম আমি খুনি হবো? যখন আমার জন্মই হয়নি তার আগে আমার পক্ষে কি আমার কর্ম
নির্ধারণ করা সম্ভব ছিল? নাকি ঈশ্বরই আমাকে এভাবে তৈরী করেছে? যাতে আমি তার পরিকল্পনাকে বাস্তবে রুপান্তর করতে পারি। আসল শয়তান কে? আমরা নাকি তোমার ঈশ্বর? কারো পক্ষেই কি ঈশ্বরের প্ল্যানের
বাইরে যাবার ক্ষমতা আছে? ঈশ্বরই এমন করে সব কিছু ঘটিয়েছে
আর আমাদের খুনি করে তৈরী করেছে। ঈশ্বরই আমাদের নিয়ে খেলছে। আমরা খেলার গুটি মাত্র, আসল খেলোয়াল শয়তান ইশ্বরটাই। ঈশ্বর চাইলেই আমাদেরকে ভালো মানুষ করে বানাতে পারতো। কিন্তু সে সেটা করেনি।
আমাদেরকে খুনি বানিয়েছে যাতে আমরা তার পরিকল্পনাকে বাস্তবে রুপ দেই। আমাদের স্বভাব চরিত্রের সৃষ্টিকর্তা কি আমরা নাকি
তোমার ঈশ্বর? ঈশ্বর চাইলেই আমাদের স্বভাব চরিত্র বদলিয়ে আমাদেরকে ভালো মানুষ করে পাঠাতে পারতো। কিন্তু সে সেটা করেনি।
আমাদেরকে খুনি বানিয়ে পাঠানোর একটাই উদ্দেশ্য, শয়তান ঈশ্বরটা চেয়েছিল আমরা ভালো মানুষদেরকে খুন করি এবং তাদেরকে যন্ত্রনা দেই। যাতে শয়তান ইশ্বরটা সব কিছু চেয়ে
চেয়ে দেখে মজা নিতে পারে। আমরা আমাদের বিধাতা নই। তাই আমাদের কর্মের পরিকল্পনাও আমাদের নয়। সব কিছুর পরিকল্পনাকারী
শয়তান ঈশ্বরটাই। আমরা খুনি হয়ে জন্মাতে চাই না। আমরা স্বাভাবিক হয়ে বাঁচতে চাই। কিন্তু শয়তান ইশ্বরটা সেটা হতে দেয়নি। কারো পক্ষেই ঈশ্বরের প্ল্যানের বাইরে যাবার ক্ষমতা নেই।"
-"তাহলে তুমি
বলতে চাইছো তুমি ভালো মানুষ হতে চাও কিন্তু পার না। তাহলে খুন করতে যাবার সময় এই কথাটা ভাবো
না কেন? তাহলেইতো তুমি খুন করতে না।" উপদেশ দেবার মত করে বললো
দেবদুত।
-“তুমি
এখনও বুঝতে পারছো না ব্যাপারটা? আমরা
খুন করতে চাই না। কিন্তু আমাদের রক্তের মধ্যে খুনের নেশা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। আর সেই নেশাটা
দিয়ে দিয়েছে তোমার সৃষ্টিকর্তা। ভালো মানুষ দেখলে আমাদের রক্ত টগবগ করে উঠে রক্তের নেশায়। আমরা নিজেদের কন্ট্রোল করে রাখতে পারি না। নেশায় বোঁধ হয়ে খুন করি আমরা। যন্ত্রনা দেই অসহায় মানুষদের। যন্ত্রনা কাতর মুখটি দেখলে খুব আনন্দ লাগে আমাদের। এক কুৎসিত ঐশ্বরিক
আনন্দ। এই আনন্দ পাবার
জন্যই শয়তান ঈশ্বরটা এই জগত সৃষ্টি
করেছে আর কুৎসিত খেলায়
মেতে উঠেছে। সে মানুষকে বানিয়েছে
যন্ত্রনা পাবার জন্য। স্বর্গে নরক বানিয়ে রেখেছে যাতে কিছু মানুষ স্বর্গে যায় আর কিছু মানুষ
নরকের যন্ত্রনা ভোগ করে। সেই যন্ত্রনা দেখে সুখ পাবার জন্যই শয়তার ঈশ্বরটা মানুষকে নিয়ে এমন নিষ্ঠুর খেলা খেলছে। আমরা শুধু গুটি হিসেবে চলছি। আসল খেলোয়ার শয়তান ইশ্বরটা।"
চোখ
ছোট করে ফেললো দেবদূত কিন্তু কিছু বললো না খুনিটাকে। তাকিয়ে
মন পড়ার চেষ্টা করলো খুনির।
-"আমরা খুনি
হতে চাইনি কিন্তু ঈশ্বর আমাদের খুনি বানিয়েছে।" বললো খুনি। "আমরা আমাদের ভাগ্য তৈরী করিনি; ঈশ্বর করেছে। আমরা আমাদের চরিত্র নির্ধারণ করিনি, ঈশ্বর করেছে। আমরাতো পুতুলের মতো করে কাজ করছি। ঈশ্বরের পরিকল্পনার বাইরে যাবার ক্ষমতা নেই বলেই এমন বিভীষিকাময় জীবন কাটাচ্ছি। খুন কররার সময় যেমন স্বর্গের সুখ অনুভব করি ঠিক তেমনি খুন করার পরে নরকের যন্ত্রনায় পুড়ি। আমাদের বিবেক আমাদেরকে অমানুষিক যন্ত্রনা দিতে থাকে প্রতিক্ষণ। কিন্তু এই যন্ত্রনা থেকে
আমাদের মুক্তি কোথায়? আমাদের কোন ক্ষমতা নেই এই যন্ত্রনার জীবন
থেকে মুক্তি পাবার। তুমি আমাকে হত্যা করে ফেলো; তবেই আমাদের মুক্তি মিলবে।"
হতবাক
হয়ে শুনতে থাকে খুনিটার কথা। কিছু বলতে পারে না দেবদুত। আস্তে
আস্তে বলে- "আমিতো তোমাকে মারতেই এসেছি। ইচ্ছা ছিল প্রচন্ড এক যন্ত্রনা দিয়ে
তোমাকে হত্যা করবো। মরার সময় তুমি যন্ত্রনায় ছটফট করবে; সেটা দেখতে খুব আনন্দ লাগে আমার। সেই আনন্দ পাবার জন্যই আমি তোমাদের মত পাপীদেরকে হত্যা
করি ঈশ্বরের আদেশে। এসব খুনের জন্য আমার কখনও অনুসুচনা হয়নি। আমি সবসময় ভেবে এসেছি আমি ঈশ্বরের আদেশ পালন করছি। একটা মহৎ কাজ করছি। কিন্তু এখনতো দেখতে পাচ্ছি তুমিও আমার মতই হত্যা করে আনন্দ পাও। ঈশ্বরই তোমাদের দিয়ে মানুষ হত্যা করান। যেমনটি আমাদেরকে দিয়ে তোমাদেরকে হত্যা করান। আমরা দুজনই কি তাহলে ঈশ্বরের
হুকুমের গোলাম?
-"এইতো বুঝতে
পেরেছো তুমি। এবার মেরে ফেলো আমাকে। মুক্তি দাও এই যন্ত্রনার জীবন
থেকে। আমাকে যেন আর কোন ভাইকে
হত্যা করতে না হয়। মানুষ
হয়ে মানুষ হত্যার যন্ত্রনা থেকে মুক্তি চাই আমি।"
দ্বিধান্বিত
হয় দেবদূত। কি করবে বুঝতে
পারে না যেন। আকাশ
থেকে বিকট কন্ঠে কেউ বলে উঠে "মেরে ফেল খুনিটাকে।" দেবদূত চিনতে পারে কন্ঠটিকে। ঈশ্বর তাকে আদেশ নিচ্ছেন খুনিকে হত্যা করার।
জ্বলে
উঠে দেবদুতের চোখ। হাতের আগুনের গোলাটি আবার জ্বলে উঠে। উপরের দিকে উঠে যায় হাত। গোলা ছুড়ে মারার আগে দেখে নেয় খুনিটাকে। একে হত্যা না করা পর্যন্ত
যেন শান্তি নেই দেবদুতের। খুনিটার যন্ত্রনাদায়ক মৃত্যুকে দেখতে পায় দেবদুত। এক ঐশ্বরীক আনন্দে
ভরে উঠে তার মন।
“আহ্
কি আনন্দের হত্যাকান্ড। কাউকে ভয়ংকর যন্ত্রনা দিয়ে হত্যা করার মজাটা বড়ই মধুর।“ ভাবে মনে মনে। "অসীম যন্ত্রনার মৃত্যু উপহার দেবো তোমাকে।" খুনিকে উদ্দেশ্য করে বলে দেবদুত।
খুনি
সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে যায়। রিভলভারটি দেবদূতের দিকে তাক করে। সেকেন্ডে পাঁচশটি বুলেট গিয়ে দেবদুতকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেবে। প্রচন্ড যন্ত্রনা হবে দেবদূতের। ভাবতেই এক অমানুষিক প্রশান্তি
বোধ করে খুনি। "জীবনটা বড়ই স্বার্থক আর সুখের ছিল।"
মনে মনে ভাবলো খুনিটা। হত্যা করে কত আনন্দের জীবন
কাটিয়েছে সে। আজ এই দেবদূতকে
যন্ত্রনা দিয়ে আনন্দকে পরিপূর্ণ করবে সে। সব খুনিরই প্রধান
লক্ষ থাকে দেবদূতকে যন্ত্রনা দেবার। কিন্তু ক’জন সেই সৌভাগ্য লাভ করে! একমাত্র সেই এই সৌভাগ্যটি লাভ
করেছে। আজ এক অমানুষিক
যন্ত্রনা দিতে পারবে দেবদুতকে। ভাবতেই এক ঐশ্বরীক সুখ
অনুভব করে খুনিটা। দেবদূত আগুনের গোলা ছুড়ে মারার সাথে সাথেই টিগারটি টেনে ধরে খুনি। আগুনের গোলা খুনি পর্যন্ত আসার আগেই কয়েক হাজার গুলি দেবদুতকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়। প্রচন্ড এক যন্ত্রনায় মাটিতে
পড়ে যায় সে। জ্ঞান হারিয়ে ফেলে দেবদুত।
খুনিটা
দেখে অসহ্য যন্ত্রনায় কাঁতরাতে কাঁতরাতে দেবদুত মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। কুৎসিত ভাবে হেঁসে উঠে খুনি। তাকে শয়তানের মতই দেখাচ্ছে এখন। হাসি শেষ হবার আগেই আগুনের গোলাটি খুনিকে গ্রাস করে ফেলে। অসীম যন্ত্রনায় কাঁতরাতে থাকে সে। এতো যন্ত্রনা কখনও পায়নি আগে।
-"দেবদুত এই
যন্ত্রনাটি দেখতে পায়নি।" ভেবে সুখ পায় খুনি। দেহ ছিন্ন ভিন্ন হবার আগেই চেতনাহীন হয়ে পড়ে খুনিটা।
কতক্ষন
পরে জ্ঞান ফিরেছে জানে না সে। মনে
করার চেষ্টা করে কি হয়েছিল তার।
পাশেই একজন মানুষের ছিন্ন ভিন্ন লাশ পড়ে রয়েছে। ঝলকেই সব মনে পড়ে
যায় দেবদূতের। সে পৃথিবীতে নেমে
এসেছে এক ভয়ংকর খুনিকে
হত্যা করার জন্য। খুনিটাকে সে অসহ্য যন্ত্রনা
দিয়ে হত্যা করেছে। খুনিটার মৃত্যু যন্ত্রনাটা যেন এখনও দেখতে পাচ্ছে সে। যন্ত্রনায় কাঁতরাতে কাঁতরাতে মারা যাচ্ছে খুনিটা। -“ওফ্ কি মধুর দৃশ্য!"
ভাবে দেবদুত। এক ঐশ্বরীক সুখ
সে অনুভব করতে থাকে। তাকেও অবশ্য গুলি করে যন্ত্রনা দিয়েছিল খুনিটা। "কিন্তু তার যন্ত্রনাকাতর অবস্থা দেখতে পায়নি খুনিটা।" মনে মনে ভাবে দেবদূত। অথচ
সে খুনিকে যন্ত্রনায় মরতে দেখেছে। আর ঐশ্বরীক আনন্দ
উপভোগ করেছে। বেঁচারা খুনি, জীবনে কত খুন করেছে।
মানুষকে যন্ত্রনা দিয়ে আনন্দ পেয়েছে। শেষে কিনা আমার হাতে যন্ত্রনার মৃত্যু পেতে হলো। হেসে উঠে দেবদুত।
মনটা
হঠাৎ করেই উদাস হয়ে উঠে দেবদুতের। "আচ্ছা ওদের মধ্যে কি কোন কথা
হয়েছে খুনিটাকে হত্যা করার আগে?" নিজেকেই প্রশ্ন করে সে।
-“না
কোন কথাই হয়নি খুনির সাথে।“ ভাবে মনে মনে। সে আকাশ থেকে নেমে খুনিটার সামনে দাড়ায়। প্রচন্ড ভয়ে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে থাকে খুনিটা। দেখে খুব আনন্দ হয়েছিল তার। সে প্রাণ ভিক্ষা
না দিয়ে প্রচন্ড যন্ত্রনায় হত্যা করে খুনিকে। তাদের মধ্যে আর কোন কথাই
হয়নি। সব
মনে পড়ে দেবদূতের। প্রশান্তি নেমে আসে তার।
খুনিটার
যন্ত্রনা কাতর মুখটি মনে হয়ে আবার ঐশ্বরীক সুখ অনুভব করে দেবদুত।
"নরকের কিট!
জাহান্নামে যাও!" খুনিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে দেবদূত। আকাশে আগুনের পাখা মেলে উড়াল দেয় দেবদূত। এবারের মতো পৃথিবী ভ্রমনের এখানেই সমাপ্তি" ভাবে মনে মনে।
No comments:
Post a Comment