Translate

Search This Blog

বিশেষ সতর্কবার্তাঃ

এই ব্লগটি নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সন্দেহবাদী, মুক্তমনা এবং স্বাধীনচেতা মানুষদের জন্য। যারা যেকোন বিষয়ের সমালোচনা সহ্য করার মত ক্ষমতা রাখে। যদি কোন ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিক এই ব্লগটিতে আসে তবে তার ধর্মানুভূতি নামের অদ্ভূত দূর্বল অনিভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্লগ লেখক দায়ী থাকবে না। ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিকদের নিজ দায়িত্বে তাদের দূর্বল ধর্মানুভূতিকে সংরক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে। কারো ধর্মানুভূতি নামের অযৌক্তিক অনুভূতি আহত হবার জন্য কোন ক্রমেই ব্লগার বা লেখককে দায়ী করা যাবে না। যদি কোন অতি দুর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগে ভূল করে ঢুকে পরেন এবং তিনি তার অনুভূতিকে দূর্বল ভাবেন অর্থাৎ যিনি তার ধর্মের উপযুক্ত সমালোচনা সহ্য করতে অপারগ, তাকে বিনীত ভাবে এই ব্লগটি থেকে প্রস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পরেও যদি কোন দূর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগটিতে ঘুরাফেরা করেন এবং তার ফলে তার দূর্বল ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হন তবে কোন ক্রমেই এবং কোন ক্রমেই ব্লগের মালিক, 'আমি নাস্তিক' দায়ী থাকবে না।

Sunday, December 20, 2015

সিমা এবং সহী মুসলমান

সিমা
সিমা খুব ভালো মেয়ে বাবা মার আদেশ কখনও অমান্য করে না মুসলিম পরিবারে জন্ম নেবার কারণে তাকে সব সময় ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে থাকতে হয় ফলে স্বভাবতই সে খুব ধার্মিক পরিবারের বাইরে কোন মানুষের সাথে ভালো করে কথাও বলেনি কোন দিন সব সময়ই বুরখা পরে বাইরে বের হয় চোখ বাদে শরীরের সম্পুর্ণ অংশই থাকে সব সময় কাপরের অন্তড়ালে এক ওয়াক্ত নামাজও কোন দিন বাদ দেয়নি জীবনে ফলে সবার কাছেই খুব আদরের মেয়ে হলো এই সিমা স্কুল কলেজের গন্ডি পার হতে না হতেই পর্দার উপর খুব গুরুত্ব দিতে শিখেছিল সে কলেজ পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও কোন দিন ধর্মীয় আচারের বাইরে যায়নি খোদা তাআয়াল ভয়ে সব সময়ই থেকেছে তটস্থ সর্বপরি সবার কাছেই এক আদর্শ মুসলিম নারী হিসেবে ছিল সম্মানিত পাড়ার সব বাবা মা' তাদের সন্তানদেরকে সিমার উদাহরণ টেনে বকা ঝকা দিত ফলে পাড়ার বাকী মেয়েদের কাছে সিমা ছিল হিংসার পাত্র
কৈশর পার না হতেই তার বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল তার পরিবারের কাছে কিন্তু সিমার বাবা মা ধার্মীক হলেও মেয়েকে এত তারাতারি বিয়ে দিতে চায়নি সিমার ছোট ভাই আসাদকে দেখা শুনার জন্য সিমার গুরুত্ব ছিল অনেক বেশী সিমার মা এক এক্সিডেন্টে দু পা হারিয়ে ফেলেছিল আর তাই সিমাকে এক কথায় মায়ের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে আসাদকে মানুষ করতে ছোট ভাইকে মায়ের মমতা দিয়ে মানুষ করেছে সিমা পাঁচ বছর পর্যন্ত আসাদ সিমাকে মা বলে ডাকতো জন্মের পরে সিমাকেই আসাদ মা মনে করেছিল একটু বুদ্ধিমান হবার পরে অবশ্য তাকে আর মা বলে ডাকেনি কখনও

সিমা আসাদকে তার আদর্শেই বড় করেছিল ফলে সিমা জেনারেল স্কুলে পড়লেও আসাদের সুযোগ হয়েছিল দুরের মাদ্রাসায় পড়াশুনা করার ধার্মীক বোনের আদরের ছোট ভাইটিও যে ধার্মীক হবে এটা পাড়ার সকলেই অনুমান করেছিল হয়েছিলও তাই স্কুলে পড়ার সময়ই আসাদ দাড়ি রাখা শুরু করেছিল কখনই কাটেনি আসাদের প্রিয় পোশাকও হয়েছিল পান্জাবী পায়জামা আসাদ দেখতে সুদর্শন হলেও পান্জাবী পায়জামা পড়াতে তাকে কেমন যেন বেকুপের মত লাগতো সিমার বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক প্রায়ই ভাবতো ছেলেকে জিন্স প্যান্ট কিনে দেবেন কিন্তু ধর্মের জন্য এবং সিমার ইচ্ছায় কখনই এমনটি করতে হয়নি পাড়ার ছেলেরা যখন জিন্স টি সার্ট পরে বাইরে ঘুরে বেড়াতো তখন তিনি মুগ্ধ হয়ে দেখতেন আর ভাবতেন আসাদ এসব আধুনিক জামা কাপড় পড়লে ভালোই লাগতো যদিও সে এসব পশ্চিমা ফ্যাশনকে মনে মনে ঘৃণা করতেন তবুও নিজের আদরের ছেলের জন্য একটু আধুনিক পোশাকের চিন্তা তিনি প্রায়ই করেছেন

সিমা জেনারেল লাইনে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যায় এবং ভাইকে নিয়ে একটা বাসা ভাড়া করে থাকে শহরের একটি নাম করা মাদ্রাসাতে আসাদকেও ভর্তি করিয়ে দেয় ফলে নিজের পড়াশুনার পাশাপাশিও আসাদের দেখা শোনা করতে কোন সমস্যাই হয় না সিমার ভালো ভাবেই আসাদ আলিম পাস করে কামিলে ভর্তি হয় জীবনের এই সময়টাতে আসাদকে তার সব থেকে প্রিয় বোনের কাছ থেকে দুরে থাকতে হয় কিছু দিন মন খারাপ করে থাকলেও তার অনেক ধার্মিক বন্ধু জুটে যাবার পর আর কোন  কষ্ট হয়নি অপর দিকে সিমা আদরের ছোট ভাইটিকে ছাড়া অনেক মন খারাপ করে দিন কাটাতে থাকে ততদিনে সিমার এম.. শেষ হয়ে গেছে এবং ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজারের সাথে তার বিয়ে হয়ে যায় তার ছয় মাস পরেই ফলে ভাই বোন একে অপরের থেকে দুরে গিয়েও ভালো ভাবেই দিন পার করতে থাকে
এদিকে সিমার স্বামী বরকত উল্লাহ সিমাকে কোন চাকরী করতে দেয়নি যদিও সিমার খুব ইচ্ছা ছিল চাকরী করার আজকালতো কত ধার্মিক মহিলারাও চাকরী করছে সিমার চাকরীর ইচ্ছার কারণটা আসলে এটাও ছিল না সিমা চাকরী করতে চেয়েছে ছোট ভাইটা যেন একটু ভালো ভাবে থাকতে পারে যুগ বদলে গেছে আর দৈনন্দিন জীবনের নুন্যতম চাহিদা মেটাতেও যে টাকার দরকার তার পরিমানও আগের থেকে অনেক বেড়ে গেছে সন্তান সম ভাইটার জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকার করতেও রাজী ছিল সিমা কিন্তু স্বামীর জন্য সেটা করতে পারেনি সে
সিমার স্বামী ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজারের পোস্টে আছে লোকটা খুব ভালো হলেও কিছু অদ্ভুত আচরণ তার মধ্যে লক্ষ করেছে সিমা সে দাড়ী রাখে কিন্তু পায়জামা পান্জাবী পড়ে না   সার্ট প্যান্ট পড়ে অথচ সিমা জানে যে এগুলো মুসলমানদের পোশাক না তার স্বামীর পান্জাবী পায়জামা পড়া উচিত কিন্তু সে পান্জাবী পায়জামা খুবই কম পড়ে যদিও সব সময় পাথায় টুপি থাকে নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত না পড়লেও দুই তিন ওয়াক্ত নামাজ পড়ে নিয়মিত তবুও তার মুখে সব সময়ই আল্লাহ খোদার নাম থাকেই ধর্মীয় বিষয়ে দু চারটে বইও আছে তার লেখা তার লেখা কুরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞান বিষয়ে লেখা বইটি বাংলাদেশের সব থেকে বেশী বিক্রিত বই দেশে ইসলামী পন্ডিত হিসেবে ভালো নাম হয়েছে তার যদিও সিমা কখনই কুরআনকে আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে মেশানোকে ভালো চোখে দেখেনি সিমার দৃষ্টিতে কুরআন হলো পৃথিবীর সব চেয়ে সম্মানীয় গ্রন্থ স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার লেখা সম্মানীয় পবিত্র গ্রন্থ আর তাই কুরআনের সাথে পৃথিবীর অন্য কোন গ্রন্থের তুলনা করাটা সিমার দৃষ্টিতে ভালো কাজ হিসেবে গন্য ছিল না কিন্তু ধার্মীক সিমা জানে স্বামীর উপরে কথা বলাটা বড় অধর্মের কাজ স্বামী যেটা ভালো মনে করেছে সেটাই করেছে স্বামীর কাজে হস্তক্ষেপ করা বা স্বামীর উপর কথা বলাটা খুব পাপের কাজ আর তাই সিমার আপত্তি থাকলেও স্বামীর উপরে কথা বলেনি
সিমা যেমনটি বাবার বাড়ীতে ধর্ম পালন করেছে স্বামীর বাড়িতে এসে তার অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে সারা দিন ধর্মকর্ম করে আর স্বামীর সেবাসুশ্রুশা করে স্বামী অবশ্য সিমার ব্যবহাসে খুব খুশী এমন গুনবতী বউ তার কপালে মিলবে সেটা সে কল্পনাও করেনি ফাজিল পড়ার সময় বরকত সাহেবের ভালোবাসা হয়েছিল এক মেয়ের সাথেবরকত যে বাড়ীতে লজিং থাকতো সেই বাড়ীর মালিকের মেয়ের সাথে রাতে মাঝে মাঝে দেখাও করেছে সেফালীর সাথে বাড়ীতে থাকার পুরো সময়টিতে অসংখ্যবার সেফালীর সাথে রাতের বেলায় দেখা করেছে সেফালীকে বিয়েও করবে বলে ওয়াদা করেছিল বরকত উল্লাহ কিন্তু ব্যাংকে চাকরীটা হবার পরে সেফালীকে আর ভালো লাগেনি তার সিমার সাথে যখন বিয়ের আলাপ হচ্ছিল তখন সেফালী এসেছিল বরকত উল্লাহর সাথে দেখা করতে কিন্তু বরকত উল্লাহ তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে বের করে দিয়েছিল পরে জানতে পেরেছিল সেফালী আত্বহত্যা করেছে
ভালোই হয়েছে সেফালী আত্বহত্যা করায় প্রথমে সেফালীকে ভালো লাগলেও ফাজিল পাস করার পর সেফালীকে অসহ্য লেগেছিল বরকত উল্লাহর কাছে একেতো ধর্মকর্ম করে না, পর্দা দিয়ে চলে না তার উপর আবার মূর্খ নারী সেফালীকে বিয়ে করলে সিমার মত এমন ধার্মীক বউ পাওয়া যেত? সিমার কত ধার্মীক, তার সব কথাই মাথা পেতে মেনে নেয় অথচ মোনাফেক সেফালীটা মুখের উপর কথা বলতোআমি গরীব ছিলাম বলে তোদের বাড়ীতে লজিং থেকেছি তোর গাধা ভাইটিকে পড়িয়েছি এখন কি আমার সেই কষ্টের সময় আছে যে তোর কথা আমাকে মেনে নিতে হবে?” মরে গেছে সেটা ভালোই হয়েছে এমন ধর্মকর্মহীন রমনীকে বিয়ে করলে হাবিয়া দোজখ নিশ্চিত ছিল
সে দিক থেকে সিমা অনেক লক্ষি এমন ধার্মিক বউ পাওয়াতে তার বেহেশতে যাবার রাস্তাটাও অনেক সহজ হয়ে গেছে যে ঘরে ধার্মীক বউ থাকে সে ঘরে ফেরেশতার নূরের আলো থাকে
সিমা সব সময়ই চেষ্টায় থাকে স্বামী যেন কোন কারণে অসন্তুষ্ট হতে না পারে স্বামীর পায়ের নিচেই তো স্ত্রীর বেহেশত্ আর তাই স্বামীকে তুষ্ট করে রাখাটা খুব দরকার তা না হলে সব ধর্মকর্ম বিফলে যাবে আর তাই কোন ক্রমেই স্বামীর মন ভাঙ্গা যাবে না

অনেক দিন হলো আসাদের কোন খবর নেই ছেলেটা যে কেমন আছে সেটা জানাই যাচ্ছে না সব সময়ই প্রার্থনা করে যেন আল্লাহর রহমতে আসাদ ভালো থাকে আসাদের মধ্যে কিছু পরিবৎর্তন লক্ষ করেছিল বেশ কিছু দিন ধরেই কেমন যেন টেনশনে থাকে সব সময় একটা ব্যস্ততা সব সময়ই ওর মধ্যে কাজ করে সিমা কয়েক বার জিঙ্গেস করেছিল কোন সমস্যা আছে কিনা উত্তরে আসাদ বলেছিল যার সাথে আল্লাহর সহায়তা আছে তার আবার সমস্যা হয় কি করে?
কথাটি আসাদ মিথ্যে বলেনি আল্লাহর কাছে সিমা সব সময়ই আসাদের জন্য দোয়া করে তার মতো পরহেজগার মানুষের প্রার্থনা আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবেন তাই আসাদের কোন সমস্যাই হবে না বোনের দোয়া সব সময়ই ছোট ভাইটির কাছে থাকবে আর তাই সিমার বিশ্বাস আসাদের কোন ক্ষতিই হবে না
গত বার আসাদ বলেছিল তবলীগের কাজ বেশ কয়েক মাস ভারতে যাবে সিমার মনে হচ্ছে আসাদ হয়তো ভারতই গেছে গত দুই মাস সিমা আসাদের কোন খবরই জানে না আসাদের এক ঘনিষ্ট বন্ধু আছে আবু মালেক, ওকে ফোন করলে বলেছে যে ওর সাথে আসাদের দেখা হয়নি মাস খানেকের মতো গত সপ্তাতে বাবার কাছে অবশ্য ফোন করেছিল আসাদ বলেছে ভালো আছে সিমাকে নাকী কয়েকবার ফোন করেছিল কিন্তু সিমাকে পায়নি
সিমা নিয়ে আর চিন্তা করেনি কখনও
মাস ছয়েক পরে হুট করে আসাদ এক দিন সিমার বাসায় চলে আসলো চেহারায় টেনশনের ভাব সিমা জিঙ্গেস করলেও আসাদ কোন উত্তর দেয়নি বলেছে ওর শরীরটা নাকি ভালো নেই। সিমা বলেছিল ভালো ডাক্তার দেখাতে উত্তরে আসাদ ওর প্রিয় স্যার মির্জা সফি স্যারের শ্যালকের কাছে দেখাবে বললো সিমা কালকেই সেখানে যাবার জন্য আসাদকে অনুরোধ করলো
আসাদ যেন কেমন হয়ে গেছে কয়েক মাসের ব্যবধানে আগে প্রচুর কথা বলতো কিন্তু এবার এসে একটি কথাও বললো না খাওয়া দাওয়া করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো সিমার মনে হলো আসাদ কোন বিপদে পড়েছে

পর দিন সকালে আসাদ না খেয়েই তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে গেল ডাক্তার দেখাতে সিমা ওর সাথে যেতে চাইলো কিন্তু বরকত উল্লাহ বললো- তোমার যাবার দরকার নেই আমি ডাক্তার কে ফোন করে দিয়েছি কোন সমস্যা হবে না

বিকেলে হুট করে বরকত উল্লাহকে বাসায় আসতে দেখে সিমা ভয় পেয়ে গেলো কোন দিন তার স্বামী দুপুরে বাসায় আসে না আজ কেন আসলো অজান্তেই তার মনে একটি ভয় ঢুকে গেলো সিমা কিছু জিঙ্গেস করার আগেই বরকত উল্লাহ ধমকের সুরে বললো- তোমার ভাই একটা সন্ত্রাসী সিন সিটি মার্কেটে আত্মঘাতী বোমা হামলা করেছে অনেক মানুষকে মেরে ফেলেছে
স্বামীর কথা সিমা কিছু বুঝতে পারলো না ভয় পাওয়া গলায় বললো- আসাদের কি হয়েছে?
বরকত উল্লাহ এবার কোমল সুরে বললো- আসাদ নিজে বোমা মেরে মানুষ মারতে যেয়ে নিজেকেই মেরে ফেলেছে
সিমার বুকটা একবার ধঁক করে উঠে যেন থেমে যেতে চাইলো তার চারপাশটা ঘোলাটে হয়ে উঠলো মেঝেতে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারালো

পরের কয়টা দিন খুব ঝামেলার মধ্যে কাটলো সিমা আর বরকত উল্লাহর বাড়ীর চারপাশে পুলিশ পাহাড়া বসানো হয়েছে বারবার কি সব আজে বাজে জিঙ্গেস করছে পুলিশ কিছু ক্ষন পর পরই পুলিশ আর সাংবাদিক এসে নানা প্রশ্ন করছে আসাদের ব্যাপারে আসাদের আত্মঘাতী বোমা হামলার ব্যাপারে সিমা এবং বরকত উল্লাহকেও সন্দেহ করা হচ্ছে সিন সিটি মার্কেটে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোড়নের সময়ের সিসি টিভির ভিডিওতে আসাদকে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে আর তাই বরকত উল্লাহকে স্বীকার করতে হয়েছে যে তার শ্যালক একটা জঙ্গি সন্ত্রাসী ছিল
টিভি চ্যানেলে বরকত উল্লাহ সাক্ষাতকার দিয়ে বলে যে তার শ্যালকের জঙ্গি হবার কোন তথ্যই তাদের জানা ছিল না গত ছয় মাস আসাদ ভারতে তাবলীগে গিয়েছিল বলে তাদেরকে আসাদ বলে গিয়েছিল কিন্তু এর মধ্যে আসাদের সাথে তাদের কোন দেখা হয়নি ব্যাপারে তারা কিছুই জানে না

এর কয়েক দিন পর তাদের উপর থেকে পুলিশের সন্দেহ দুর হয় অবশেষে প্রমাণিত হয় যে আসাদের জঙ্গিবাদের সাথে বরকত উল্লাহ এবং সিমা জড়িত ছিল না আর তাই সব ঝামেলাই দুর হয়ে কিছুটা স্বত্বি ফিরে আসে কিন্তু সিমার মনে কোন স্বস্তি ছিল না তার সন্তানের মতো ছোট ভাইটা আত্মঘাতী বোমা হামলা করে মারা গেছে এটা যেন কিছুতেই তার বিশ্বাস হচ্ছে না সিমার কাছে মনে হচ্ছে সে কোন ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখছে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলেই আসাদ আবার সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে ভাই হারানোর ব্যাথা কিছুতেই ভুলতে পারছে না স্নেহময়ী সিমা
কিছু দিন যেতেই সিমা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলো নিজের মধ্যে সান্তনা খুজে পেল এটা ভেবে যে তার আদরের ভাইটি ইসলামের পথে প্রাণ দিয়েছে পবিত্র জিহাদ করে নিজেদে শহীদের মর্যাদায় উত্তির্ণ করেছে সিমা জানে জিহাদ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ আর জিহাদে প্রাণ দিয়ে শহীদ হলে আল্লাহ শহীদকে সরাসরি বেহেশতের ব্যবস্থা করবেন কয়জন পারে ধর্মের পথে প্রাণ দিতে? আসাদ পেরেছে সিমা আসাদকে নিয়ে আস্তে আস্তে গর্ব অনুভব করতে থাকে আর ভাবতে থাকে আসাদ মারা গেলেও এখন সে জান্নাতে প্রবেশ করেছে আর জান্নাতে আসাদ ভালোই আছে মুহাম্মদ সঃ বলেছেন, যে জিহাদ করে শহীদের মর্যাদা পাবে তাকে সরাসরি জান্নাতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে তাই সিমা জানে আসাদ এখন বেহেশতে অনেক সুখে আছে ভাবতেই আসাদকে হারানোর ব্যাথাটা তার মন থেকে ক্রমেই কমে যেতে থাকে
এক মাস হয়ে গেলো আসাদ মারা গেছে সিমার গর্ভে সন্তান এসেছে সিমার ইচ্ছা তার সন্তানের নাম আসাদ রাখবে বরকত উল্লাহ প্রথমে দ্বিমত করলেও পরে রাজী হয়েছে আসাদের মৃত্যুর পর সিমার মধ্যে কিছু মানুষীক পরবর্তন হয়েছে বলে বরকত উল্লাহর মনে হয়েছে তাই সে আর কিছু বলেনি সিমা মনে মনে ঠিক করে রেখেছে, তার সন্তান যদি ছেলে হয় তবে সে তাকে জিহাদী বানাবে সিমার মনে কাফেরদের জন্য এক অসীম ঘৃণার জন্ম হয়েছে যে মোনাফেক কাফেরদের জন্য তার ভাইয়ের প্রাণ গিয়েছে সেসব কাফের মোনাফেককে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ণ করে দিতে হবে এমন একটি ধারণা তার মনে ঘুরপাক খায় সব সময় তার ইচ্ছা তার সন্তানও আল্লাহর সত্যিকারের বান্দা হতে পারে ইসলামের জন্য প্রাণ দিয়ে শহীদ হতে পারে কাফেরদের হত্যা করার জন্য তার মনটা যেন কেমন করে উঠে
সিমা এখন আগের চেয়ে অনেক চিন্তাশীল হয়ে উঠেছে আগে টিভি দেখতো না, কিন্তু এখন টিভি দেখে টিভিতে ইসলামী বক্তব্য শুনে এবং বিশ্বে চলমান মুসলমানদের উপর নির্যাতনের খবর শুনার জন্য প্রায় সব চ্যানেলেরই খবর শুনে 
দুপুরের রান্না শেষ করে টিভিটা খুলে চ্যানেল ঘুরাতে থাকে একটা চ্যানেলে তার স্বামীর সাক্ষাতকার দেখে চ্যানেলটা আর পরিবর্তন করে না টিভিতে তার স্বামীর কথা শুনতে থাকে তার স্বামী বলে, ইসলাম কোন সন্ত্রাসীদের স্থান দেয় না ইসলাম শান্তির ধর্ম, যারা জঙ্গী, সন্ত্রাসী, তারা প্রকৃত মুসলমান নয় ইসলাম সন্ত্রাসীদেরকে স্থান দেয় না কোন সন্ত্রাসীই প্রকৃত মুসলমান নয় এরা বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠি এরা কেউই প্রকৃত মুসলমান নয়
স্বামীর সাক্ষাতকার শুনে সিমা স্তব্ধ হয়ে যায় একি কথা বলছে! যে ইসলামের জন্য মুসলমানরা প্রাণ দিচ্ছে তারা নাকি প্রকৃত মুসলমান নয়? যারা কুরআন হাদিস মেনে আল্লাহর রাস্তায় জীবন উৎসর্গ করছে তারা নাকী মুসলমান নয়! তারা নাকী সন্ত্রাসী! তাহলে প্রকৃত মুসলমান কে?

রাতে স্বামী এলে রাগান্বিত হয়ে প্রশ্ন করে, যারা জিহাদ করে মারা যায় তারা প্রকৃতি মুসলমান নয়?
স্ত্রীর অগ্নীমূর্তি দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায় বরকত উল্লাহ কখনও রুপ দেখেনি আগে আমতা আমতা করে বলে মিডিয়াতে এসব বলতে হয় আমি অবশ্যই মনে করি যারা মুসলমান তাদের প্রত্যেককে জিহাদ করা উচিত কিন্তু ইসলামের ভাব মূর্তি অক্ষুন্ন রাখতে মিডিয়াতে এসব কথা বলে ইসলামকে ডিফেন্ড করতে হয় ইসলামকে রক্ষা করতে যারা কাফের মোনাফেক হত্যা করে জেহাদ করছে তারা যেমন জিহাদী ঠিক তেমনি ইসলামকে সন্ত্রাসীর ধর্ম যেন না বলা হয় তার হাত থেকে ইসলমানকে বাঁচাতে আমরা মিডিয়াতে ইসলামকে ডিফেন্ড করছি এসব বলে এটাও এক ধরণের জিহাদ
স্বামীর জবাব শুনে সিমা একেবারে শান্ত হয়ে যায় বুঝতে পারে কোনটা কোন ধরণের জিহাদ আর কে প্রকৃত মুসলমান

No comments:

Post a Comment