আস্তিকদের অযৌক্তিক,
কুযৌক্তিক,
অপযৌক্তিক
এবং
অপ-বৈজ্ঞানিক
প্রশ্নঃ
জ্যোতির্বিদ
Laura Danly টিভি স্ক্রীনের Alex Fellopinco’র সাথে যোগাযোগ
করতে চাচ্ছে। তার নাম ধরে ডাকছে। অর্থাৎ Laura টিভি স্কিনের বাইরে দাড়িয়ে টিভির পর্দায় ফোটে ওঠা Alex-এর নাম ধরে
ডাকছে। কিন্তু Alex শুনছে না। তাই সাড়া দিচ্ছে না। এর কারণ Laura অবস্থান
করছে 3-dimension এ। কারণ তার
দৈর্ঘ্য, প্রশ্ন এবং উচ্চতা সবই আছে। অন্যদিকে Alex অবস্থান করছে 2-dimension এ। কারণ টিভি
স্ক্রীণে তার কেবল দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে।
Laura'র মত Alex-এর (যে টিভি স্কিনে
উপস্থিত) একটি মাত্রা “উচ্চাতা” নেই।
Alex এর ১টি ডাইমেনশান কম। তাই তাদের পরষ্পরের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে না। Alex, Laura-কে দেখতে পারছে
না। কারণ সে ২-মাত্রায়
বন্দী। আর Laura, Alex-কে দেখছে। এবং
তার কথা শুনতেও পাচ্ছে। সে আছে উপরের
মাত্রায়। আর Alex আছে নিচের মাত্রায়। সে Laura-কে দেখতে পারছে
না। শুনতেও পারছে না।
আর
এভাবেই পৃথিবীতে যত ফেরেশতা, জ্বীন-পরী, ভূত-প্রেত আছে সেগুলো মানুষ দেখতে পায় না। কারণ মানুষ বাস করে তিন মাত্রার জগতে। অপর দিকে জ্বীন-পরী, ভূত-প্রেত এবং ফেরেশতারা বাস করে চতুর্মাত্রার জগতে। আর তাই মানুষ
কোন দিনই জ্বীন-পরী, ভূত-প্রেত বা ফেরেশতাদেরকে দেখতে
পারবে না। কারণ মানুষের পক্ষে নিচু মাত্রায় বাস করে উচু মাত্রার জ্বীন-পরী, ভূত-প্রেত বা ফেরেশতাদেরকে দেখা
সম্ভব নয়। যেভাবে টিভির স্কিনের Alex টিভি স্কিনের বাইরের Laura-কে দেখতে এবং
শুনতে পাচ্ছে না ঠিক সেভাবেই
মানুষ কখনই ফেরেশতা, জ্বীন-পরী এবং ভূত-প্রেতকে দেখতে পারবে না। কিন্তু তাই বলে এগুলোর অস্তিত্ব নেই সেটা ভাবা বোকামী। এদের অস্তিত্ব অবশ্যই আছে কিন্তু মানুষ সেগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারে না। আর তাই জ্বীন-পরী, ভূত-প্রেত এবং ঈশ্বর-ফেরেশতার অস্তিত্ব নেই দাবী করাটা অযৌক্তিক।
যৌক্তির এবং
বৈজ্ঞানিক
উত্তরঃ
আপনার যুক্তি দেখে আমি যারপর নাই বিনোদিত । বিজ্ঞানের সাথে অজ্ঞানতা, অন্ধবিশ্বার আর কুসংস্কার মিলিয়ে অদ্ভুত হাইপোথিসিস দাড় করেছেন ।
আপনি কি কখনই স্কাইপিতে কথা বলেননি ? যদি বলে থাকেন তাহলে নিশ্চই দেখেছেন মোবাইল বা লেপটপ বা কম্পিউটারের স্কিন ২ ডাইমেনশনের । কিন্তু তবুও স্কাইপিতে মানুষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। কিন্তু আপনার দাবী অনুযায়ীতো এটা সম্ভব নয় কখনই । তাহলে কিভাবে হচ্ছে ?
কারন সেখানে দুরত্ব যতই থাক না কেন, কথা বা সাউন্ড আদান প্রদানের ব্যবস্থা আছে । ফলে স্কাইপি দিয়ে কথা বলা যায় বা যোগাযোগ করা যায় ।
টিভিতে আমরা কাউকে দেখতে পারি, তার কথাও শুনতে পারি কিন্তু আমাদেরকে সে দেখতে পারে না বা শুনতেও পারে না । কারন টিভি হচ্ছে ১ ওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর তাই আমরা চাইলেও টিভির স্কিনে ভেসে উঠা কথা বলা মানুষটির সাথে যোগাযোগ করতে পারি না । কিন্তু তার কথা এবং ছবি ঠিকই দেখতে পারি । কারন এটি এক মুখি যোগাযোগ ব্যবস্থা ।
কিন্তু স্কাইপি বা ভিডিও কলিং হচ্ছে দু মুখি যোগাযোগ ব্যবস্থা (২ ওয়ে কমিউনিকেশন) । ফলে স্কাইপি বা ভিডিও কলিং-এর মাধ্যমে দুজন মানুষ অনেক দুরত্বে থেকেও যোগাযোগ বা কথা বার্তা আদান প্রদান করতে পারে । যদিও একজন আরেকজনের কাছে ২ ডাইমেনশনে থাকে ।
টিভি শুধু এক মুখী যোগাযোগ রক্ষা করে। কিন্তু স্কাইপি বা ভিডিও কলিং টু ওয়ে বা দ্বিমুখী যোগাযোগা রক্ষা করে। তাই টিভির মাধ্যমে মানুষ এক পাশ থেকে তথ্য অন্য পাশে পেতে পারে কিন্তু অন্য পাশের মাধ্যমটি প্রথম মাধ্যমের সাথে যোগাযোগ করতে পারে না। কিন্তু স্কাইপি বা ভিডিও কলিং-এর সময় ভেসে উঠা স্কিনটি যদিও টু ডাইমেনশনাল তবুও এই টু ডাইমেনশনার মাধ্যমটির মাধ্যমে দ্বিমুখী যোগাযোগ রক্ষা করা যায় তিন মাত্রায় বসেও।
আপনার সমস্যা হচ্ছে আপনি ডাইমেনশনের ধারনাটা গুলিয়ে ফেলেছেন ।
২ ডাইমেনশনের প্রানী কখনই ৩ ডাইমেনশনের মানুষকে দেখতে পারবে না কিন্তু ৩ ডাইমেনশনের মানুষ ঠিকই ২ ডাইমেনশনের প্রানীকে দেখতে পাবে যদি তাদের মধ্যে যোগাযোগের কোন মাধ্যম থাকে তবে।
এক ডাইমেনশনের প্রানী কখনই অন্য ডাইমেনশনে বসবাস করতে পারবে না । ২ ডাইমেনশনের প্রাণী কখনই ৩ ডাইমেনশনে অবস্থান করতে পারবে না কারন তার আরেকটা ডাইমেনশন নেই । আবার ৩ ডাইমেনশনের প্রানীও ২ ডাইমেনশনে ঢুকতে পারবে না । কারন তার একটা ডাইমেনশন বেশি হওয়ায় অপেক্ষাকৃত কম ডাইমেনশনে প্রবেশের সুযোগ নেই । কারন একটা ডাইমেনশনই কম ।
ঠিক তেমনি ৪ ডাইমেনশনের প্রাণীর পক্ষে ৩ ডাইমেনশনে প্রবেশ করা সম্ভব নয় । আর ৩ ডাইমেনশনের প্রাণী কখনই ৪ ডাইমেনশনে প্রবেশ করতে পারবে না । কারণ তার সে যোগ্যতা নেই ।
কারণ অনেকগুলো ১ ডাইমেনশন মিলে ২ ডাইমেনশন তৈরী হয় । আবার অনেকগুলো ২ ডাইমেনশন মিলে ৩ ডাইমেনশন তৈরী হয় । আর অনেকগুলো ৩ ডাইমেনশন মিলে ৪ ডাইমেনশন তৈরী হয় । আর এজন্যই এক ডাইমেনশনের প্রাণীর পক্ষে কখনই অন্য ডাইমেনশনে যাওয়া সম্ভব নয় ।
ফেরেশতা, আত্বা, জ্বীন-পরী, শয়তান এগুলো মানুষের সাথে একই ডাইমেনশনে অবস্থিত । উল্লেখ্য, আমাদের এই বিশ্বজগত আমরা যেখানে বাস করি সেটা তিন মাত্রার (সময় দিয়ে চার মাত্রার) । আর এই তিন মাত্রার (বা চার মাত্রার) জগৎ তৈরী হয়েছে অনেকগুলো দুই (বা তিন) মাত্রার জগতের মাধ্যমে । আর এভাবেই আমাদের মতো অসংখ্য তিন (বা চার) মাত্রার জগতের সমষ্টিতে চার (বা পাঁচ) মাত্রার জগৎ তৈরী হয়েছে । আর তাই আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় চার বা পাঁচ মাত্রায় যাওয়া । আবার পাঁচ বা চার মাত্রার জগত থেকে আমাদের তিন মাত্রার জগতে আসা সম্ভব নয়।
কারণ সেক্ষেত্রে উঁচু মাত্রার প্রাণীকে একটি মাত্রা কমাতে হবে যেটা থিউরীটিক্যালি সম্ভব নয়। মানুষ কখনই একটি মাত্রা কমিয়ে দু মাত্রার কাগজে ঢুকতে পারবে না। ঠিক তেমনি যদি চার (সময় সহ পাঁচ) মাত্রার প্রাণী তিন (সময় সহ চার) মাত্রার জগতে আসতে চায় তবে তাকে তিন মাত্রার প্রাণীতে পরিনত হতে হবে। ডাইমেনশন বা মাত্রা সম্পর্কে যে বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে সেটি হলো পাশাপাশি অনেকগুলো ১ মাত্রা যোগ হয়ে ২ মাত্রা তৈরী করে। আর তাই একজন দুই মাত্রার প্রাণী (যদি থেকে থাকে) সব সময়ই ১ মাত্রার ভিতর দিয়ে আসা যাওয়া করে। কিন্তু তার দেহ ২ মাত্রার বলে সে এক মাত্রার মধ্যে অবস্থান করতে পারে না। আবার অনেকগুলো ২ মাত্রা মিলে ৩ মাত্রা গঠন করে। যেমন একটি বইয়ের পাতা যার শুধু দুটি মাত্রা রয়েছে। এরকম অনেকগুলো পাতা একটার উপর আরেকটা এভাবে স্তরে স্তরে যুক্ত হয়ে একটি বই তৈরী করে। বইয়ের পাতা বা পৃষ্ঠার শুধু দুটি মাত্রা (দৈর্ঘ্য এবং উচ্চতা) আছে কিন্তু একটি বইয়ের তিনটি মাত্রা (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা) আছে। আর তাই বইয়ের লেখা গুলো এক পৃষ্ঠা থেকে অন্য পৃষ্ঠায় যেতে পারে না। কিন্তু তিন মাত্রায় অবস্থান করা মানুষ চাইলেই যেকোন পৃষ্ঠায় যেতে পারে। অর্থাৎ মানুষ তিন মাত্রার প্রাণী বলে সে যেকোন সময় দু মাত্রার বইয়ের যে কোন স্তরে বা স্থানে যেতে পারে (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা হিসেবে)। কিন্তু মানুষের পক্ষেও সম্ভব হয় না দুই মাত্রার বইয়ের পাতার মধ্যে ঢুকে যেতে। তবে মানুষ দুই মাত্রার যেকোন আলাদা স্তর দেখতে পারে। মনে রাখতে হবে যে অনেকগুলো দুই মাত্রা পরস্পরের সাথে স্তরে স্তরে মিলে তিন মাত্রা তৈরী করে।
আবার অনেকগুলো তিন মাত্রার জগত স্তরে স্তরে সন্নিবেশিত হয়ে
চার মাত্রার জগত তৈরী করে। ফলে তিন মাত্রার জগতের প্রাণী কখনও চার মাত্রার জগতে যেতে
পারবে না। আমাদের এই তিন মাত্রার জগতকে যদি একটি বইয়ের পৃষ্ঠা হিসেবে কল্পনা করা হয়
তবে এরকম অনেকগুলো তিন মাত্রার জগত অর্থাৎ তিন মাত্রার জগতের পাতা বা পৃষ্ঠা মিলে
একটি চার মাত্রার বই তৈরী করবে। এই চার মাত্রার বইটির প্রতি পৃষ্ঠায় একটি করে তিন মাত্রা
অবস্থান করবে। ফলে তিন মাত্রার মানুষ তিন মাত্রার বইয়ের পাতা ভেদ করে চার মাত্রার বইয়ে
বা জগতে বিচরণ করতে পারবে না। কিন্তু চার মাত্রার বইয়ের জগতের প্রাণী ঠিকই প্রতিটি
তিন মাত্রার বইয়ের পাতা ভেদ করে চলাচল করতে পারবে। কিন্তু চার মাত্রার প্রাণী তিন মাত্রার
জগতের পাতায় ঢুকতে পারবে না। কিন্তু তিন মাত্রার জগতের ভিতর দিয়ে গমন করতে পারবে। আমরা
যখন হাটি বা চলাচল করি তখন প্রতিনিয়ত অনেকগুলো দুই মাত্রার ভিতর দিয়ে চলাচল করি। বুঝার
সুবিধার জন্য কল্পনা করে নেই যে আমরা যে পথে হাটছি বা চলছি সেই পথটিতে অনেক গুলো শুধু
দৈর্ঘ্য প্রস্থের ভিতর দিয়ে যাই অর্থাৎ দুই মাত্রার ভিতর দিয়ে যাই। মনে রাখতে হবে যে
শুধু দৈর্ঘ্য আর প্রস্থ সমৃদ্ধ বইয়ের পাতা স্তরে স্তরে রাখলে যেমন একটি অতিরিক্ত মাত্রা
উচ্চতা পাওয়া যায় ঠিক সেভাবেই অনেকগুলো তিন মাত্রা স্তরে স্তরে রাখলে একটি অতিরিক্ত
মাত্রা যোগ হয়ে চার মাত্রা তৈরী হবে। ফলে তিন মাত্রার মানুষ যেমন স্তরে স্তরে দুই
মাত্রার মধ্যে দিয়ে প্রতিনিয়ত চলে যেতে পারে ঠিক একই ভাবে একজন চার মাত্রার জগতের প্রাণী
স্তরে স্তরে তিন মাত্রাগুলোর ভিতর দিয়ে চলে যেতে পারবে। কিন্তু কখনই তিন মাত্রার ভিতরে
ঢুকতে পারবে না। আর তাই তিন মাত্রার জগতের মানুষ যেমন দুই মাত্রার জগতের ভিতর দিয়ে
চলতে পারবে কিন্তু দুই মাত্রার জগতে ঢুকতে পারবে না ঠিক একই ভাবে একজন চার মাত্রার
প্রাণী তিন মাত্রার ভিতর দিয়ে প্রতিনিয়ত যেতে পারলেও এর ভিতর ঢুকতে পারবে না। একটি
রুমের দৈর্ঘ্য (মেঝের এক পাশ থেকে অন্য পাশের দেয়াল পর্যন্ত একটি রেখা) এবং উচ্চতা
(মেঝে থেকে উপরের দিকে একটি রেখা) -কে যদি দুই মাত্রা ধরা হয় তবে আমরা যখন সামনের দিকে
যেতে থাকি তখন এরকম অনেকগুলো রেখা (পরস্পরের পাশে স্থাপিত) পাড় হয়ে যাই। কিন্তু আমরা
কোন রেখার ভিতরে ঢুকতে পারি না। ঠিক সেভাবেই চার মাত্রার জগতের প্রাণী তিন মাত্রার
জগতকে এরকম দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতার একটি রেখা হিসেবে দেখবে। তিন মাত্রার এরকম
হাজার হাজার রেখা পরস্পরের পাশে বসে যে চার মাত্রার জগত তৈরী করবে সেই জগতের প্রাণী
তিন মাত্রার এই দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতার জগতের রেখাগুলোর ভিতর দিয়ে একটা একটা
করে রেখা পাড় হয়ে যাবে কিন্তু সে এই তিন মাত্রার জগতে ঢুকতে পারবে না। আর তাই তিন মাত্রার
জগতের মানুষ যেমন চার মাত্রার জগতে যেতে পারবে না ঠিক তেমনি চারমাত্রার প্রাণীর পক্ষেও
তিন মাত্রার রেখার ভিতরে ঢুকা সম্ভব হবে না।
কিন্তু ফেরেশতা, শয়তান, আত্বা বা জ্বীন এগুলো আমাদের জগতে আসতে পারে এবং একই ডাইমেনশনের জগতে বাস করে । অর্থাৎ মানুষ, জ্বীন, শয়তান বা আত্বা একই ডাইমেনশনের জগতে অবস্থিত । এরা কেই অন্য ডাইমেনশনের নয় ।
আর তাই যদি এদের অস্তিত্ব থাকতোই তবে মানুষ অবশ্যই দেখতে পেতো । এদের অস্তিত্ব নেই বলেই মানুষ দেখতে পায় না বা অস্তিত্ব সনাক্ত করতে পারে না ।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে ধর্মে বর্ণিত শয়তান-ফেরেশতা, ভূত-প্রেত বা জ্বীন-পরীর অবস্থান আমাদের তিন মাত্রার জগতেই। আর তাই ধর্মগ্রন্থগুলোতে শয়তান-ফেরেশতা, ভূত-প্রেত বা জ্বীন-পরীগুলো নানা সময়ে মানুষের সাথে যোগাযোগ করেছে বলে উল্লেখ আছে। অর্থাৎ ধর্মের ধারণা মতে এগুলো মানুষের সাথে একই মাত্রার জগতে অবস্থান করছে। মানুষ যেমন তিন মাত্রার জগতে বসে দুই মাত্রার জগতের কারো সাথে দ্বিমুখী যোগাযোগ করতে পারে না ঠিক তেমনি যদি শয়তান-ফেরেশতা, ভূত-প্রেত বা জ্বীন-পরী চার মাত্রার জগতে বাস করতো তবে তারাও মানুষের সাথে দ্বিমুখী যোগাযোগ করতে পারতো না। কিন্তু ধর্মে এরকম অসম্ভব গল্পই বর্ণনা করেছে। আর তাই এসব কাহিনী কখনই সত্য হতে পারে না। এগুলো কল্পকাহিনীতেই সম্ভব; বাস্তবে সম্ভব নয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : টিভিতে যে মানুষকে দেখতে পাওয়া যায় সে কিন্তু তিন (বা চার) মাত্রার মানুষই । তার কথা বা ছবি যখন রেকর্ড করা হয় তখন সে একই মাত্রার জগতেই অবস্থান করে । ফলে তার সামনে দাড়িয়ে থাকা ক্যামেরা ম্যান যে কিনা তাকে ক্যামেরাতে দেখে এবং তাকে নির্দেশনাও দেয়। আর এই নির্দেশনা ওই টিভির মানুষটি ঠিকই শুনতে পায় যদিও ক্যামেরার স্কিন ২ মাত্রার । কারন এখানে দুরত্ব কম থাকে । কিন্তু টিভির দর্শক টিভির মানুষটি থেকে অনেক দুরত্বে থাকে বলে সে তার সাথে কথা বলতে পারে না । কারন তাদের মধ্যে দুরত্ব এবং টিভি ওয়ান ওয়ে কমিউনিকেশন বা এক মুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা হওয়ায় টিভির মানুষের সাথে টিভির সামনে দাড়ানো মানুষের যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু স্কাইপ বা ভিডিও কলিংয়ে মানুষ দুজনের দুরত্ব বেশী হবার পরেও এখানে দ্বিমুখী টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থা থাকে বলে দুজনই দুজনের কথা শুনতে পায় এবং দেখতে পায়; যদিও মোবাইল বা কম্পিউটারের স্কিন দুই মাত্রার ।
আপনি টিভির মানুষের সাথে দর্শকদের যোগাযোগ বা কমিউনিকেশনের সাথে শয়তান, জ্বীন, ফেরেশতা বা আত্বার যে উদাহরন দিয়েছেন সেটা সম্পুর্নই ভিত্তিহীন ।
আপনি বিজ্ঞানের সাথে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার এবং কল্পনাকে মিলিয়ে ফেলেছেন । আর আস্তিকদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন । কারন আস্তিকরা বিজ্ঞান বুঝে না । আর তাই তারা খুব সহজেই বিভ্রান্ত হবে ।
অথবা আপনি নিজেই ব্যাপারগুলো ভালো করে বুঝতে পারেননি ।
আস্তিকদের অযৌক্তিক,
কুযৌক্তিক,
অপযৌক্তিক
এবং
অপ-বৈজ্ঞানিক
প্রশ্নঃ
ভালো আর খারাপের সংজ্ঞা এবং এদের মধ্যে পার্থক্য শুধু ধর্মই করতে পারে। বিজ্ঞান এবং বাস্তব জ্ঞান দিয়ে কোন দিনই ভালো এবং খারাপের পার্থক্য করা যাবে না। ধর্মই নির্ধারণ করে দেয় কোনটা খারাপ এবং পাপের কাজ আর কোনটা ভালো বা পূণ্যের কাজ। তাই ভালো খারাপগুলো ধর্মই তৈরী করেছে। ভালো কাজ আর খারাপ কাজের পার্থক্য করার জন্য ধর্ম ছাড়া কোন উপায় নেই। ধর্মই আমাদেরকে ভালো এবং খারাপের ব্যাখ্যা দিয়েছে।
যারা আল্লাহর খেয়ে অন্য কাউকে স্রষ্টা মানে, সৃষ্টিকর্তার পুত্র বানায় তারা জাহান্নামী। তারা খারাপ। আর যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহর দেখানো পথে নামাজ রোজা করে তারাই ভালো মানুষ।
যৌক্তির এবং
বৈজ্ঞানিক
উত্তরঃ
এটা কি ভালো খারাপের মাপকাঠি হলো ? ইহুদিরা এক ইশ্বর মানে কিন্তু তারা মুহাম্মদকে ভন্ড মনে করে । আর আপনার মতো মুসলমানের কাছে তাদের সব কাজই খারাপ (ভালো কাজগুলোরও কোন দাম নেই) ।
আবার হিন্দু, খ্রিস্টানরা হাজার ভালো কাজ করলেও আপনারা সেগুলোকে ভালো মনে করেন না।
এক ইশ্বরকে মানাই ভালো কাজ হয় না। দুনিয়ার অনেক খারাপ মানুষই এক ইশ্বরকে মানে কিন্তু খারাপ কাজও করে। খারাপ-ভালো ইশ্বর এক বা দুইয়ের উপর অথবা ইশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস হীনতার উপর নির্ভর করে না । করে নৈতিকতার উপর । মানুষ খুন খারাপ বা কারো ক্ষতি করা খারাপ । আবার কারো উপকার করা ভালো । আর এই ভালো খারাপ কোন ইশ্বরের উপর নির্ভর করে না । আপনি এক নাকি দুই ইশ্বরকে বিশ্বাস করেন অথবা ইশ্বরকে বিশ্বাস করেন না তার উপর নির্ভর করে ভালো খারাপ বিচার হয় না । মিথ্যে বলা খারাপ কারণ মিথ্যে বললে কেউ প্রতারিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে । আর তাই সত্যবাদীতা কোন ইশ্বরের বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে না। ভালো কাজ ইশ্বরের বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে হয় না । তেমনি যা কিছু হীত বা কল্যাণকর তাই ভালো কাজ আর যা কিছু ক্ষতিকারক (নিজের বা অন্যের) সে কাজগুলোই খারাপ।
আপনারা যাদেরকে জাহান্নামে যাবে বলে মনে করেন তারাও অনেক ভালো কাজ করে (আপনাদের থেকেও বেশী) । কিন্তু তবুও আপনারা তাদেরকে জাহান্নামের অধিবাসী মনে করেন, অনেক ভালো কাজ করলেও আপনারা তাদেরকে খারাপ মনে করেন।
আর তাই আপনি যেটাকে ভালো কাজ মনে করেন সেটাই ভালো কাজ এই কথাটা ঠিক নয় । যুদ্ধ করা , বিধর্মীদের অত্যাচার করা, মেয়েদেরকে অর্ধেক মানুষ মনে করা এবং সেই রকম ব্যবহার করা, পশু হত্যা করা এগুলোকে আপনার ধর্ম খারাপ মনে করে না । কিন্তু বর্তমানে সব সভ্য মানুষই এসব কাজ কে খারাপ মনে করে এবং এর জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছে ।
আর তাই ভালো খারাপ ইশ্বর বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে না । করে ভালো কাজ বা ভালো আচার ব্যবহারের উপর ।
যা মানব জাতির জন্য কল্যাণকর এবং উন্নয়নমুখী সেগুলোই ভালো কাজ। আবার যা কিছু ধ্বংসাত্বক সেগুলোই খারাপ কাজ। অন্যের ক্ষতি করা খারাপ কাজ আবার উপকার করা ভালো কাজ। তেমনি কারো ক্ষতি না করাও ভালো কাজ। আর এসব বাস্তব সম্মত ভালো কাজগুলো কোন ঈশ্বর বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে না। কেউ ঈশ্বর বিশ্বাসী হোক বা না হোক অথবা এক ঈশ্বর মানুক বা বহুঈশ্বর মানুক তার উপর নির্ভর করে কেউ ভালো বা খারাপ হয়ে যায় না। বরং কেউ ভালো করলেই সে ভালো মানুষ হয়ে উঠে। আর কেউ খারাপ কাজ করার মাধ্যমেই নিজেকে খারাপের পর্যায়ে নিয়ে যায়। ভালো খারাপের এটাই হলো প্রকৃত সংজ্ঞা। এতে ধর্মের বিন্দুমাত্রও ভুমিকা নেই। আছে নৈতিক শিক্ষা এবং মানবিকতার। যা ধর্মের বাইরে থেকেও একজন মানুষ হতে পারে। ধর্ম এবং ঈশ্বর ভালো খারাপ নির্ধারণে একটি বাহুল্য মাত্র। ভালো খারাপ নির্ধারণে ঈশ্বর এবং ধর্মকে টেনে আনা একটি ফালতু এবং ভূল প্রক্রিয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
আস্তিকদের অযৌক্তিক,
কুযৌক্তিক,
অপযৌক্তিক
এবং
অপ-বৈজ্ঞানিক
প্রশ্নঃ
ধর্ম
মতে স্বধর্মের মেয়েকে বিয়ে করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এটি একটি যৌক্তিক এবং বাস্তব প্রক্রিয়া। যদি কোন এক ধর্মের ছেলে
ভিন্ন ধর্মের মেয়েকে বিয়ে করে তবে সন্তানের ধর্ম বেছে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর তাই প্রত্যেক
মানুষেরই স্বধর্মের ছেলে বা মেয়েকে বিয়ে
করা উচিৎ। তাহলে সন্তানের ধর্ম পালন করতে কোন সমস্যা হবে না। প্র্যাকটিকেল চিন্তা করেন। ভিন্ন ধর্মের মানুষের বিয়েতে বাচ্চারা কোন ধর্মের হবে?
যৌক্তির এবং
বৈজ্ঞানিক
উত্তরঃ
আমাদের সমাজে কোন মানুষকেই তার ধর্ম বেছে নেবার সুযোগ দেওয়া হয় না । শিশু অবস্থায় (যখন সে থাকে অসহায় তখন) তার উপর পরিবার ধর্ম চাপিয়ে দেয় । এমনকি তার ধর্ম বেছে নেবার ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়া হয় । ফলে মানুষ তার পরিবারের ধর্মকেই সারা জীবন মেনে চলে এবং এটাকেই সত্য বলে বিশ্বাস করে অন্ধ ভাবে । এভাবেই বংশানুক্রমে এক ধর্মের মানুষ তার পিতৃ পুরুষের ধর্মই মেনে চলে (মাঝে মাঝে এর ব্যতিক্রমও হয়) ।
কিন্তু কোন ধর্মের অনুসারীরাই তার সন্তানকে তাদের নিজের ধর্ম বেছে নেবার সুযোগ দেয় না ।
কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর ধর্ম যদি ভিন্ন হয় তবে একটা সন্তার দুইটি ভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারবে এবং বড় হয়ে (বিচার বুদ্ধি হবার পর) সে তার নিজের ধর্ম বেছে নেবার সুযোগ পাবে ।
সে তার বাবার ধর্ম মানবে নাকি তার মায়ের ধর্ম মানবে সেটা সে নিজে বেছে নিতে পারবে । ফলে তার বিশ্বাস করার ক্ষমতা (যেটা ধার্মিক পরিবার কেড়ে নেয়) প্রয়োগ করতে পারবে ।
সন্তানই নির্ধারণ করবে সে কোন ধর্ম বেছে নেবে; বাবা-মা নয়।
বিয়ে
একটি সামাজিক প্রক্রিয়া। যা ধর্ম সৃষ্টি
হবার আগে থেকেই মানুষ করে এসেছে। কিন্তু তখন ধর্মের কোন প্রয়োজন হয় নি। কালক্রমে
মানুষ যখন ধর্মকে সৃষ্টি করলো তখন ধর্ম বিয়েকে ধর্মে ঢুকিয়ে নিয়েছে এবং এর ভিন্ন ভিন্ন
প্রক্রিয়া বানিয়েছে। আর তাই দেখে
মনে হয় ধর্মই মানুষকে
বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করে। কিন্তু ধর্মের ভুমিকা ছাড়াই মানুষ বিয়ে করে সুখে জীবন কাটাচ্ছে; তার নজীর রয়েছে অগণিত। ফলে বিয়ের মধ্যে ধর্মকে ঢুকিয়ে দেওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। যারা ধর্ম মানে না, যারা নাস্তিক বা অজ্ঞেয়বাদী তারা
কোন ধর্ম না মেনেও রাষ্ট্রীয়
বিধী মেনে বিয়ে করে সুখেই বেঁচে আছে। তাদেরও সন্তান হচ্ছে এবং তারা নাস্তিক হয়ে অথবা কোন একটি ধর্ম বেছে নিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে ধর্ম ছাড়াও মানুষ বিয়ে করে জীবন কাটাতে পারে। বরং ধর্মই বিয়ের ক্ষেত্রে নানা কুপ্রথা প্রয়োগ করে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরী করেছে। একজন মুসলমান ছেলে একজন হিন্দু মেয়েকে রাষ্ট্রীয় বিধান মেনে বিয়ে করলে কোন ক্ষতি নেই। এমন অনেক উদাহরণ দেওয়া যায় যেখানে একজন মুসলমান ছেলে একজন হিন্দু মেয়েকে নিয়ে সুখে ঘর করছে। আবার
তাদের নিজেদের ধর্মগুলো আলাদা আলাদা ভাবে পালন করছে। তাদের সন্তানও হচ্ছে এবং সেসব সন্তান তাদের পছন্দ মত ধর্ম পালন
করছে। মানুষকে ধর্ম বেছে নেবার এমন সুযোগ স্বধর্মে বিবাহীত পরিবারে কোন সন্তান পায় না। বরং দেখা যায় ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষের পরিবারগুলোতেই সন্তানেরা নিজেদের পছন্দ মত ধর্ম বেছে
নেবার সুযোগ পায়; যা স্বধর্মে বিয়ে
হওয়া পরিবারের সন্তানেরা পাচ্ছে না। আর তাই মানুষকে
ধর্ম বেছে নেবার সুযোগ দেওয়ার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিয়ে হওয়াটা খুবই ভালো প্রক্রিয়া।
স্বধর্মেই
বিয়ে করতে হবে ভিন্ন ধর্মের মানুষকে বিয়ে করা যাবে না এমন অযৌক্তিক
আইন প্রনয়ণ করে ধর্মগুলো মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরী করে দিয়েছে। আর এটা মানবিকতার
বিচারে খুব জঘন্য রকমের অন্যায় কাজ। ধর্ম এই অন্যায়টা করতে
নির্লজ্জের মত আদেশ দিয়েছে।
পৃথিবীর সব মানুষই সমান।
আর তাই একজন মানুষ তার পছন্দ মত যে কাউকেই
বিয়ে করার অধিকার রাখে। বিয়ের মতো একটি সামাজিক বন্ধনে ধর্মের নাক না গলানোই মানব
জাতির জন্য মঙ্গলজনক। মানুষকে স্বধর্মে বিয়ে করতে বাধ্য করে ধর্মগুলো মানব গর্হিত কাজ করে এসেছে এবং করেই চলেছে। মানুষে মানুষে বিভেদ না রেখে সব
ধর্মের মানুষদের মধ্যে বিয়ের বিধান প্রতিষ্ঠা করা আজ বিশ্বমানবতার দায়িত্ব।
এতে করে যুগ যুগ ধরে মানুষের উপর ধর্মকে চাপিয়ে দেবার হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা যাবে। পৃথিবী হবে ভেদাভেদহীন স্বর্গীয় পৃথিবী।
No comments:
Post a Comment