জাকির নায়েক একজন বিখ্যাত ইসলামিক
বক্তা। দেশ বিদেশে তার অনেক সুনাম (এবং দুর্নাম) আছে। সে তার মধুন উপস্থাপনায় দর্শক
মাতিয়ে থাকেন। এবং তার অনুসারীরা তাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। কিন্তু আমরা যারা ভিন্ন
মতাবলম্বি তারা লক্ষ করে দেখেছি যে জাকির নায়েক তার বক্তব্যে অগণিত মিথ্যা কথা বলে
থাকে। প্রকৃত বক্তব্যকে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করে, বিভিন্ন অপযুক্তি ও কুযুক্তি হাজির
করে এমনকি নিজের মতো ব্যাখ্যা করে সর্বপরি অসংখ্য মিথ্যা কথা বলে মানুষের সাথে প্রতারণা
করে থাকে। ইতিমধ্যে জাকির নায়েককে অনেকেই মিথ্যাবাদী প্রতারক হিসেবে প্রমাণ করেছে।
আমিও আগের পর্বগুলোতে জাকির নায়েককে মিথ্যাবাদী, ভন্ড, প্রতারক হিসেবে প্রমাণ করে
দিয়েছি। এই পর্বটিতেও জাকির নায়েকের আরো একটি মিথ্যাবাদীতা, ভন্ডামী এবং প্রতারণা
প্রমাণ করবো।
জাকির নায়েকের 'কুরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞান- বিরোধ নাকি সাদৃশ্য' স্বীর্ষক বক্তৃতায় (লেকচারে) নিম্নোক্ত কথাগুলো বিশ্বজগতের গতিশীলতা প্রমাণ করতে বলেছে,
"পবিত্র কুরআনের সূরা যারিয়াতের ৪৭ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে যে,"একমাত্র আমিই এই আকাশ নির্মাণ করিয়াছি আমার ক্ষমতা বলে এবং আমি অবশ্যই এই বিশ্বজগতকে করিয়াছি মহা সম্প্রসারণকারী।"আরবি শব্দ 'মুসিইউনা' অর্থ সম্প্রসারণকারী মহাবিশ্ব, বিশ্বজগতের অসীমতা।অরবেনেহো একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছেন আর বলেছেন যে, 'এই বিশ্বজগত সম্প্রসারিত হচ্ছে, গ্যালাক্সীগুলো একটা থেকে আরেকটা দুরে সরে যাচ্ছে। যে কথাটা কুরআন বলে গিয়েছে ১৪০০ বছর আগে।এটা এমন কোন ব্যাপার না যে কুরআনে জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে বলা হয়েছে; কারণ আরববাসীরা তারা জ্যোতির্বিদ্যার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বরাবরি খুব উন্নত ছিল।আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, পবিত্র কুরআন নাজিল হবার কয়েকশ বছর পরে আরবরা জ্যোতির্বিদ্যায় বেশ উন্নতি সাধন করে। তাই পবিত্র কুরআন থেকেই আরবরা জ্যোতির্বদ্যা সম্পর্কে জেনেছিল, তার উল্টোটা হয়নি।"
এটাই ছিল জাকির নায়েকের বলা 'কুরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞান- বিরোধ নাকি সাদৃশ্য' বক্তব্যের মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ সম্পর্কে বলা কথাগুলো।
এখন দেখবো জাকির নায়েক বরাবরের মতো তার বক্তব্যে কি কি মিথ্যে কথা বলেছে এবং কিভাবে মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে।
প্রথমে জাকির নায়েকের উল্লেখ করা আয়াতটির আসল এবং সঠিক অনুবাদ দেখবো (যেটার অনুবাদ জাকির নায়েক তার নিজের মতো করে উল্লেখ করেছে),
সূরা যারিয়াত; আয়াত ৪৭,
"আমি আকাশ নির্মাণ করেছি আমার (নিজ) হাতে এবং আমি অবশ্যই মহা সম্প্রসারণকারী।"
অনুবাদ- প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান)
সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এই আয়াতটির কোথাও সম্প্রসারিত মহাবিশ্বের কথা বলা হয়নি। বরং আকাশ সৃষ্টির একটি প্রাচীণ পৌরাণিক ধারনা এখানে বর্ণিত হয়েছে। প্রাচীণ কালে মানুষ ভাবতো এই বিশাল সম্প্রসারিত আকাশ কে তৈরী করলো? এই প্রশ্নটি প্রাচীণ কালের মানুষকে খুব ভাবিয়ে তুলেছিল। কিন্তু তাদের কাছে এর কোন বাস্তব উত্তর জানা ছিল না। এমনকি তাদের কাছে আকাশ তৈরীর কাহিনী খুজে বের করার মতো প্রযুক্তিও ছিল না। ফলে তারা একেকজন একেক রকম করে এর উত্তর মন মতো তৈরী করেছিল। প্রাচীণ আরবেও এই প্রশ্নের উত্তর তারা তাদের সেই ততকালীন জ্ঞান থেকে দেবার চেষ্টা করেছে। তারা ভেবে নিয়ে ছিল এবং পূর্বপুরুষের কাছ থেকে শিখেছিল যে এই বিশাল আকাশ তাদের (কাল্পনিক) সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ (আরবের প্যাগান ধর্মের প্রধান দেবতা) তৈরী করেছিল। আর আল্লাহ এই বিশাল আকাশকে মহা সম্প্রসারিত করতে পেরেছিল বলে তাকে আরবরা মহা সম্প্রশারণকারী বলে আখ্যায়িত করেছে।
এখন এই একই কথা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে ইসলাম আবির্ভাব হওয়ার পরে। এটা একটা ততকালীন আরবদের সাধারণ বিশ্বাস ছিল; যেটা কুরআন লেখক কুরআনে অপরিবর্তিত ভাবে তুলে নিয়েছিল। এটা এক সাধারণ মানুষের সাধারণ কথা মাত্র। এতে অসাভাবিকতার কিছু নেই।
কিন্তু মহা বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক প্রতারক জাকির নায়েক এই আয়াতটির অর্থ সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে তার মনের মতো বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক আবিষ্কারের সাথে মিলে যায় এমন করে অর্থের পরিবর্তন করে, কুরআনকে সংস্কার মুলক ভাবে উপস্থাপন করে দেখাতে অপচেষ্টা করেছে যে, কুরআনে বিশ্বজগতের সম্প্রসারণশীলতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম কুরআন দেড় হাজার বছর আগেকার আরবীয়দের ধ্যান ধারনা হুবহু উল্লেখ করেছে।
কুরআনে স্পষ্ট করে বলা আছে যে আল্লাহ
তার নিজের হাতে আকাশ তৈরী করেছে। এই বিশাল মহাসম্প্রসারিত আকাশকে সে নিজের হাতে নিজের
ক্ষমতায় তৈরী করেছে বলে কুরআন লেখক তাকে মহাসম্প্রসারণকারী বলে আখ্যায়িত করেছে।
কিন্তু প্রতারক জাকির নায়েক এই আয়াতের
অর্থকে পরিবর্তন করে বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক আবিষ্কারের সাথে মিলিয়ে নিয়ে নতুন করে কুরআনের
অর্থ করে কুরআনের ভূলকে সংশোধন করেছে। ফলে কুরআন বিজ্ঞানময় হয়ে গেছে।
এখানে উল্লেখ্য কুরআনের আসল অর্থকে
পরিবর্তন করে যদি বিজ্ঞানের সাথে মিলে যায় এমন করে নতুন অর্থ করা হয় তবে সেই কুরআন
এমনিতেই বিজ্ঞানময় হয়ে যাবে। কারণ তাকে বিজ্ঞানের সাথে মিলিয়েই নতুন অর্থ করা হয়েছে।
এখানে কুরআনের কোন ভূমিকা নেই। এখানে সম্পূর্ণ ভূমিকা হলো তার যে কুরআনের আসল অর্থকে
বিজ্ঞানের সাথে মিলিয়ে নতুন অর্থ করেছে ।
ভালো করে লক্ষ করুন কুরআনের ওই আয়াতটিতে
স্পষ্ট করে লেখা আছে, আল্লাহ নিজের হাতে আকাশ নির্মাণ করেছে। (আল্লাহ নাকি হও বললেই
হয়ে যায়, তবে নিজের হাতে আকাশ তৈরী করার প্রয়োজনটা কি?) আবার বলছে আল্লাহ অবশ্যই মহাসম্প্রসারণকারী।
জাকির নায়েক যেভাবে দাবী করেছে যে এখানে বিশ্বজগতকে
মহাসম্প্রসারণকারী হিসেবে তৈরী করেছেন এই কথাটি বলা হয়েছে সে কথাটি কিন্তু সত্যি নয়।
এখানে বিশ্বজগতকে মহাসম্প্রসারনকারী বলা হয়নি বরং আল্লাহকে মহা সম্প্রসারণকারী বলা
হয়েছে।
যেখানে কুরআনে আল্লাহ নিজেকে মহা
সম্প্রসারণকারী বলে দাবী করছে, সেখানে জাকির নায়েক বিশ্বজগতকে মহাসম্প্রসারণকারী বলে
দাবী করেছে। আল্লাহ মহাসম্প্রসারণকারী এই কথাটির না হয় কোন অর্থ হতে পারে কিন্তু বিশ্বজগত
মহাসম্প্রসারণকারী এই কথাটির অর্থটি কি দাড়ায়? বিশ্বজগত কি কাউকে সম্প্রসারিত করেছে
নাকি বিশ্বজগত কাউকে সম্প্রসারিত করে যাচ্ছে? করলে বিশ্বজগত কাকে সম্প্রসারিত করছে?
বিশ্বজগতের কি হাত পা আছে নাকি যে সে অন্য কাউকে সম্প্রসারিত করবে?
জাকির নায়েকের দাবী মতো যদি বিশ্বজগত
মহা সম্প্রসারণকারী হয়, তবে কৃতিত্বটা যাবে বিশ্বজগতের নিজের কাঁধে। তবে আগের অংশে
কেন আল্লাহ দাবী করলো যে সে নিজেই আকাশকে নিজের হাতে সৃষ্টি করেছে? যদি সে নিজের হাতেই
আকাশকে সৃষ্টি করে থাকে তবে তো কৃতিত্বটা (আমিই মহাসম্প্রসারণকারী) তার কাঁধেই যাবে।
তবে জাকির নায়ক বিশ্বজগতকে সম্প্রসারণকারী বলে কৃতিত্বটা বিশ্বজগতকে দিতে চাইছে কেন?
একটু সুস্থ মাথায় চিন্তা করুন, যদি
আল্লাহই আকাশকে নিজের হাতে সৃষ্টি করে একে সম্প্রসারিত করে থাকে তবে এটাই কি যুক্তিযুক্তি
নয় যে আল্লাহই মহা সম্প্রসারণকারী। নাকি আল্লাহ আকাশকে নিজের হাতে তৈরী করেছে তাই কৃতিত্ব
যাবে অন্যকারো উপর অর্থাৎ বিশ্বজগতের উপর। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন আর জাকির নায়েকের
ভন্ডামী ধরার চেষ্টা করুন।
এখানে একটা কথা বলে নেওয়া ভালো যে
আয়াতটিতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহই আকাশকে সৃষ্টি করেছেন তাই সে মহা সম্প্রসারণকারী; এই
অর্থটি খুব প্রাসঙ্গীক। কিন্তু জাকির নায়েক যেভাবে অর্থকে পরিবর্তন করে বলেছে যে, আল্লাহ
আকাশকে নিজের হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং বিশ্বজগতকে নিজেই সম্প্রসারণকারী বানিয়েছেন। এখন
যদি আল্লাহ নিজেই বিশ্বজগতকে সম্প্রসারণকারী বানিয়ে থাকে অর্থাৎ কিনা সম্প্রসারণকারী
বিশ্বজগত তখন নিজেই আকাশকে তৈরী করতে পারবে মহাপ্রসারিত করে তাহলে আবার আলাদা করে কেন
বললো যে সে আকাশকে নিজের হাতেই তৈরী করেছে। এক বারেই বললে হতো না, যে আল্লাহ বিশ্বজগতকে
নিজের হাতে মহাসম্প্রসারণকারী বানিয়েছে আর বিশ্বজগত নিজেই আকাশকে সম্প্রসারিত করেছে।
অর্থাৎ কুরআনে আসলে জাকির নায়েকের
অর্থ পরিবর্তন করে নতুন অর্থ করে দাবী করার মতো করে বলা নেই যে আল্লাহ বিশ্বজগতকেই
মহাসম্প্রসারণকারী বানিয়েছে। বরং কুরআনে এটাই বলা হয়েছে যে, আল্লাহই নিজের হাতে আকাশ
নির্মান করেছে (মহাসম্প্রসারিত করে) আর তাই আল্লাহই মহাসম্প্রসারণকারী। বিশ্বজগত মহাসম্প্রসারণকারী
নয় বরং আল্লাহই মহা সম্প্রসারণকারী। কারণ বিশ্বজগত আকাশকে তৈরী করেনি বরং কুরআনের দাবি
অনুযায়ী আল্লাই বিশ্বজগত এবং আকাশকে সৃষ্টি করেছে। আর তাই আল্লাহই মহাসম্প্রসারণকারী;
বিশ্বজগত নয়।
অর্থাৎ জাকির নায়েকের করা কুরআনের
সম্পূর্ণ নতুন ও ভিন্ন অর্থ সঠিক নয়। বরং কুরআনের যে পূর্বের অর্থ অর্থাৎ প্রফেসর ডঃ
মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান কর্তৃক কুরআনের অনুবাদই সঠিক।
কুরআনের অন্যান্য অনুবাদকের অনুবাদ
দেখলেই বিষয়টি প্রমাণিত হয়ে যাবে যে জাকির নায়েকই মিথ্যা কথা বলেছে বাকীরা বলে নি।
কুরআনের সূরা যারিয়াত-এর ৪৭ নাম্বার
আয়াতটির অন্যান্য কিছু অনুবাদ হলোঃ
"আমি (আমার) হাত দিয়েই আসমান
বানিয়েছি, (নিসন্দেহে) আমি মহান ক্ষমতাশালী।" (অনুবাদ- হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ)
লক্ষ করুন, এখানেও বলা হয়েছে আল্লাহই
নিজের হাতে আকাশ তৈরী করেছে, আর তাই সে নিজেই মহা ক্ষমতাশালী; অন্য কেউ নয়।
"আর মহাকাশমন্ডল- আমরাই তা নির্মাণ
করেছি হাতে, আর আমরাই বিশালতার নির্মাতা।" (অনুবাদ- ডঃ জহুরুল হক)
লক্ষ করুন এই অনুবাদেও বলা হচ্ছে,
আমরা অর্থাৎ আল্লাহ এবং ফেরেশতারা (আমরা) আকাশ তৈরী করেছি নিজের হাতে তাই আল্লাহই এবং
ফেরেশতাই (আমরা) বিশালতার নির্মাতা। অর্থাৎ আকাশকে বিশাল ভাবে অর্থাৎ মহাসম্প্রসারিত
ভাবে তৈরী করা হয়েছে বলে বিশালতা বা মহাসম্প্রসারিত করার মালিক আল্লাহ এবং ফেরেশতারাই
(আমরাই), অন্য কেও নয়।
"আমি আকাশ নির্মাণ করিয়াছি আমার
ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহা-সম্প্রসারণকারী।"
“With power and skill did we
construct the firmament: for it is we who cteate the vastness of pace.” (ministry of religious affairs-Bd)
(অনুবাদ- মিনিস্ট্রি অফ রিলিজিওন
অফ বাংলাদেশ)
লক্ষ করুন খুব স্পষ্ট করে বলা আছে
যে, আল্লাহই আকাশ নির্মাণ করেছে তার নিজের ক্ষমতায় আর সেই মহা-সম্প্রসারণকারী; অন্য
কেউ নয়।
“We have built the heaven with
might, and We it is Who make the vast extent [thereof]. “(Translated by Mohammad
Marmaduke Pickthal)
“With power and skill did We
construct the Firmament: for it is We Who create the vastness of pace.
(Translated by Abdullah Yusuf Ali)
উপরের সবগুলো অনুবাদই বলছে যে, আল্লাহই
আকাশ নির্মাণ করেছে তার নিজের হাতে বা ক্ষমতায়। আর সে নিজেই মহাসম্প্রসারণ কারী। অন্য
কেউ বা বিশ্বজগত নিজেও মহাসম্প্রসারণকারী নয়।
তাহলে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে জাকির
নায়েক কেন কুরআনের অনুবাদ বদল করে নিজের মতো করে অনুবাদ করেছে। উত্তরটি উপরেই বলা
হয়েছে যে জাকির নায়েক দেখাতে চেয়েছে যে কুরআন খুব বিজ্ঞানময় গ্রন্থ। আর তাই কুরআনে
১৪০০ বছর আগেই বলা হয়েছে যেটা বিজ্ঞান মাত্র কিছু দিন আগে আবিষ্কার করেছে। আধুনিক বিজ্ঞান
মাত্র কয়েক দশক আগে আবিষ্কার করেছে যে বিশ্বজগত স্থির নয়; বরং প্রতিনিয়ত প্রসারণশীল।
আর তাই যেহেতু জাকির নায়েকের উদ্দেশ্য ছিল কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানো তাই সে কুরআনের
এই আয়াতের অর্থকে পরিবর্তন করে নতুন অর্থ দাড় করিয়েছে যে কুরআনে বলা হয়েছে (১৪০০ বছর
আগে), কুরআন বলেছে আল্লাহ আকাশ নির্মাণ করেছে আর সে বিশ্বজগতকে সম্প্রসারণশীল করে তৈরী
করেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কুরআনে আসলে এরকম কোন কথাই বলা হয়নি। বরং কুরআন ১৪০০ বছর
আগের একটা পৌরানিক ধারণাকে তুলে ধরেছে যে, আল্লাহ (প্যাগানদের দেবতা) বিশাল (মহা-সম্প্রসারিত)
আকাশ তৈরী করেছে এবং সে মহা সম্প্রসারণকারী বা মহা ক্ষমতাশালী।
এই আয়াতটি অত্যন্ত স্পষ্ট। অর্থাৎ
স্পষ্ট করে বলা আছে যে আল্লাহ এই বিশাল আকাশকে মহাসম্প্রসারিত করে তৈরী করা হয়েছে বলে
আল্লাহ মহাক্ষমতাশালী বা মহাসম্প্রসারণকারী।
কিন্তু প্রতারক জাকির নায়েক কুরআনকে
বিজ্ঞানময় বানাতে এই অর্থকে পরিবর্তন করে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে নতুন অর্থ বানিয়ে
মানুষের কাছে উপস্থাপন করেছে। অর্থাৎ জাকির নায়েক মিথ্যে বলে স্বাধারণ মানুষের সাথে
প্রতারণা করেছে। আর এটা সে করেছে ধর্মকে বাঁচাতে এবং ধর্মের ব্যবসার জন্য। তাই জাকির
নায়েক একজন ভন্ড-প্রতারক।
এবার জাকির নায়েকের বক্তব্যটি বিশ্লেষণ
করে দেখা যাক জাকির নায়েক আর কি কি প্রদ্ধতি প্রয়োগ করেছে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে?
প্রথমেই জাকির নায়েক সূরা যারিয়াতের
৪৭ নাম্বার আয়াতের উল্লেখ করেছে যা এতক্ষণে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে সে কুরআনের অর্থকে
বিকৃত করে কুরআনের সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ হাজির করেছে। অর্থাৎ কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে
কুরআনের আয়াতকে পরিবর্তন করে আল্লাহর সাথেই প্রতারণা করেছে।
পরে জাকির নায়েক বলেছে যে, আরবি শব্দ
"মুসিইউনা" যার অর্থ সম্প্রসারণকারী মহাবিশ্ব, বিশ্বজগতের অসীমতা।
অর্থাৎ জাকির নায়েক দাবী করেছে মুসিইউনার
অর্থ হলো সম্প্রসারণকারী মহাবিশ্ব অথবা মহাবিশ্বের অসীমতা।
আমি আগেই দেখিয়েছে কেন ওই আয়াতে সম্প্রসারিত
মহাবিশ্ব এই অর্থটি ব্যবহৃত হতে পারবে না। যদি এই অর্থটি ব্যবহার করা হয় তবে আয়াতের
অর্থ খিচুরী হয়ে যায়। তবে দ্বিতীয় অর্থটি হতে পারে। কারণ কুরআনের ওই আয়াতটিতে আল্লাহকে
মহাসম্প্রসারণকারী বা মহাক্ষমতাশালী বলা হয়েছে। আকাশকে বিশাল এবং মহাসম্প্রসারিত করে
স্থাপন করার ফলে মহাবিশ্ব ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়ে গেছে। ফলে মহাবিশ্বের বিশাল বিস্তৃতি
অর্থটি সেই সময়ের আরবের ধ্যান ধারণার সাথে মিলে যায়। কিন্তু তবুও আয়াতটির অর্থের সাথে
সঙ্গতিপূর্ণ হয় না। কারণ আয়াতটিতে আল্লাহর কথা বলা হয়েছে, আল্লাহর ক্ষমতার কথা বলা
হয়েছে যে আল্লাহ নিজে বিশাল আকাশকে মহাসম্প্রসারিত করে সৃষ্টি করেছে। আর তাই সে মহাসম্প্রসারণকারী
বা মহাক্ষমতাশালী। সুতরাং জাকির নায়েক বর্নিত মুসিইউনার অর্থ এই আয়াতটিতে কখনই সম্প্রসারণকারী
মহাবিশ্ব, বিশ্বজগতের অসীমতা অর্থটি ব্যবহৃত হতে পারবে না। তাহলে আয়াতের অর্থ অসঙ্গতিপূর্ণ
হয়ে যাবে। আর তাই জাকির নায়েকের দাবিটি সত্য নয় এক্ষেত্রে।
কুরআনের সবগুলো অনুবাদকই এই শব্দটির
অর্থ করেছেন সম্প্রসারণকারী অথরা ব্যাপক ক্ষমতাশালী। যেটা কুরআনের অর্থের সাথে মিলে
যায়। কারণ কুরআনের কথা অনুযায়ী আল্লাহ নিজের হাতে বা নিজের ক্ষমতায় আকাশ নির্মাণ করেছে
তাই সে মহা সম্প্রসারণকারী বা ব্যাপকক্ষমতাশালী। এখানে আল্লাহর ক্ষমতা দেখানো হয়েছে।
কিন্তু জাকির নায়েক এই শব্দটির অর্থ করতে চেয়েছে ক্ষমতাশীল মহাবিশ্ব বা সম্প্রসারণকারী
মহাবিশ্ব। যেহেতু আয়াতটিতে আল্লাহর নিজের হাতে আকাশ তৈরীর কথা বলা হয়েছে সুতরাং স্বাধারণ
জ্ঞান দিয়েই বুঝা যায় যে এখানে আল্লাহর ক্ষমতা বুঝানো হয়েছে; বিশ্বজগতের ক্ষমতাকে
বুঝানো হয়নি। আল্লাহ তৈরী করেছে তাই আল্লাহই মহাক্ষমতাশালী। আল্লাহ মহাসম্প্রসারিত
করেছে (আকাশকে) তাই আল্লাহই মহাসম্প্রসারণকারী; বিশ্বজগত নয়।
অর্থাৎ জাকির নায়েক ভিত্তিহীন দাবী
করেছে।
সূরা যারিয়াতের ৪৭ নাম্বার আয়াতটিতে
আকাশ নির্মাণের কথা বলা হয়েছে এবং তার পরেই আল্লাহর ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। যাকে জাকির
নায়েক বিশ্বজগতের সম্প্রসারনশীলতার দিকে ইঙ্গিত করেছে। যদিও আমরা জানি যে সম্প্রসারণকারী
এবং সম্প্রসারণশীলতা এক নয়। সম্প্রসারণশীলতা হলো কোন কিছুর প্রসারণশীলতামুলক বৈশিষ্ট্য।
পক্ষান্তরে সম্প্রসারণকারী বলতে কোন ব্যক্তি বা এমন কিছুকে বুঝায় যে সম্প্রসারণ ঘটান।
অর্থাৎ সম্প্রসারণ যে ঘটায় বা সংঘঠিত করে তাকে সম্প্রসারণকারী বলা হয়। এক্ষেত্রে আল্লাহ
যদি আকাশকে সম্প্রসারিত করে থাকে বিশালভাবে তবে আল্লাহ হলো সম্প্রসারণকারী। আবার বিশ্বজগত
যদি নিজে আকাশকে সম্প্রসারিত করে থাকে তবে তাকে মহাসম্প্রসারণকারী বলা যেতো; কিন্তু
বিশ্বজগতের কথা এই আয়াতে বলা হয়নি বলা হয়েছে আল্লাহর কথা। তবুও এটা দিয়ে বিশ্বজগতের
সম্প্রসারণশীলতার কথা বলা হয়নি। কারণ সম্প্রসারণকারী আর সম্প্রসারণশীল এক কথা নয়। যদি
বলা হতো যে আল্লাহ কুরআনে বলেছে যে, আমি বিশ্বজগতকে সম্প্রসারণশীল করে তৈরী করেছি
তবে বুঝা যেত যে আল্লাহ বিশ্বজগতের সম্প্রসারণশীলতার কথা বলেছে যেটা বাস্তব আর আধুনিক
বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু জাকির নায়েক দাবী করেছে (কুরআনের ভিন্ন অর্থ করে)
যে কুরআনে বিশ্বজগতকে সম্প্রসারণকারী বলেছে। লক্ষকরুন জাকির নায়েক এতো প্রতারণা করেও
সঠিক শব্দটি ব্যবহার করতে পারেনি। জাকির নায়েক যদি এখানে সম্প্রসারণকারী না বলে বলতো
সম্প্রসারণশীল তবুও কুরআন বিজ্ঞানময় হতে পারতো; অন্তত মুসলমানরা চিৎকার করে দাবী করতে
পারতো। কিন্তু জাকির নায়েক সঠিক ভাবে চালাকিও করতে পারেনি। সে বলেছে সম্প্রসারণকারী
মহাবিশ্ব; অর্থাৎ মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল নয় বরং মহাবিশ্ব নিজেই সম্প্রসারণকারী। কার
সম্প্রসারণকারী?
উত্তর হলো যেহেতু ওই আয়াতটিতে আকাশের
কথা বলা হয়েছে তাই বিশ্বজগত হলো আকাশের সম্প্রসারণকারী; নিজের নয়।
এখানে জাকির নায়েকের সাধ্যও নয়নি
সঠিক ভাবে প্রতারণা করার। তার বুদ্ধিতে এই সাধারণ ব্যাপারটাও খেলেনি। বরং সে দাবী করেছে
যে কুরআন বিশ্বজগতকে সম্প্রসারণকারী বলেছে, সম্প্রসারণশীল বলেনি। অর্থাৎ এতো প্রতারণার
আশ্রয় নিয়েও কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে ব্যর্থ হয়েছে ভন্ড জাকির সাহেব।
কুরআন খুব স্পষ্ট করে বলছে যে বিশ্বজগত
নয় বরং আল্লাহ সম্প্রসারণকারী। অর্থাৎ জাকির নায়েক কোন ভাবেই সফল হতে পারেনি কুরআনকে
বিজ্ঞানময় বানাতে। খালি প্যাঁচাল পেড়ে গেছে ঘন্টার পর ঘন্টা।
এর পরেও জাকির নায়েকের অন্ধবিশ্বাসী
অনুসারীরা ত্যাঁনাপ্যাঁচানো শুরু করবে তাই এই আয়াতটি নিয়ে কিছু আনুষঙ্গিক আলোচনা
করে নেওয়া যাক।
সূরা যারিয়াতের ৪৭ নাম্বার আয়াতে
আকাশ সম্পর্কে বলা হয়েছে যেখানে আল্লাহ দাবী করেছে সে নিজের হাতে আকাশকে তৈরী করেছে
আর তাই সে মহাসম্প্রসারণকারী। এখন এই আয়াতটিতে যেভাবে জাকির নায়েক সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের
দাবী করেছে সেটা যে কতটুকু মিথ্যে এবং ভিত্তিহীন সেটা প্রখরভাবে জানার জন্য আমাদের
আগে জানতে হবে কুরআনে আকাশ সম্পর্কে এবং পৃথিবী সম্পর্কে তথা বিশ্বজগত সম্পর্কে কি
বলেছে? অর্থাৎ কুরআনের বর্ননাতে বিশ্বজগত আসলে কিরুপ!
কুরআনে আকাশ সম্পর্কে বলা হয়েছে,
আল্লাহ এই পৃথিবীকে বিছানার মতো
করেছেন (অর্থাৎ সমতল) এবং আকাশকে ছাদ বা চাদোয়া বানিয়েছেন (২:২২)। আল্লাহ উর্ধদেশে
স্থাপন করেছেন আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভ ছাড়াই যেটা মানুষ দেখতে পায় (১৩:০২)। আল্লাহ আকাশের
দুয়ার খুলে দেবার ক্ষমতা রাখে (১৫:১৪)। বিধর্মীরা মুহাম্মদকে চ্যালেন্জ জানিয়েছে যে,
মুহাম্মদ যেমনটা কুরআনের বহু জায়গায় দাবী করেছে যে আকাশ ভেঙ্গে বা খন্ড খন্ড হয়ে মানুষের
মাথার উপর পরবে সেরকমটি যেন করে দেখায় (১৭:৯২)। কাফেরদের কথা শুনে আকাশ বিদীর্ণ বা
ফেটে পরার উপক্রম হয় (১৯:৯০)। আল্লাহ আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছে (২১:৩২)। কিন্তু কেয়ামতের
দিন আল্লাহ আকাশকে গুটিয়ে নেবে যেভাবে লিখিত কাগজকে মানুষ গুটিয়ে নেয় সেভাবে এবং আগের
মত করে আবার আকাশকে নতুন করে তৈরী করবে (২১:১০৪)। আল্লাহ আকাশকে স্থির রাখে যেন এটা
আল্লাহর আদেশ ছাড়া মাটিতে (পৃথিবীতে) না পড়ে যায় (২২:৬৫)। আল্লাহ ইচ্ছা করলেই আকাশের
কোন খন্ডকে মানুষের উপর ফেলে দিতে পারেন যেকোন সময় (৩৪:০৯)। কেয়ামতের দিন পৃথিবী
থাকবে আল্লাহর হাতের মুঠোয় আর আকাশ থাকবে তার ডান হাতে (কাগজের মতো) ভাজ করা (৩৯:৬৭)।
মাঝে মাঝে আকাশসমূহ উপর থেকে ফেটে পড়ার উপক্রম হয় কিন্তু ফেরেস্তারা আল্লাহর প্রশংসা
করে মানুষের জন্য ক্ষমা চায় বলে আকাশ ফেটে বা ভেঙ্গে মানুষের উপর পড়ে না (৪২:০৫)। আল্লাহ
মানুষকে আকাশকে দেখতে বলেছে যে সেটা কতো ভালো করে বানানো হয়েছে যে তাতে কোন রকমের
ফাটলও নেই (৫০:০৬)। কেয়ামতের দিন আকাশ কেঁপে উঠবে বা দুলে উঠবে (৫২:০৯)। যদি অবিশ্বাসীরা
আকাশের কোন খন্ডকে মাটিতে পড়তে দেখে তবে তারা সেটাকে আকাশের খন্ড বলে মেনে নিতে চায়
না; বরং তারা সেই আকাশের খন্ডকে পুঞ্জিভূত মেঘ বলে দাবী করে (৫২:৪৪)। কিয়ামতের দিন
যখন আকাশ ভেঙ্গে বা বিদীর্ণ হয়ে যাবে তখন সেটা লাল চামড়ার মত রং ধারণ করবে (৫৫:৩৭)।
আল্লাহ সাতটা আকাশ তৈরী করেছে এবং পৃথিবীও সাতটা তৈরী করেছে; অর্থাৎ সাতটা আকাশ যেমন
একটার উপর একটা এভাবে স্থাপিত ঠিক একই ভাবে পৃথিবীও একটার নিচে আরেকটা এভাবে স্থাপিত
(৬৫:১২)। আল্লাহ স্তরে স্তরে সাতটা আকাশ তৈরী করেছে যাতে কোন খুত বা অসামঞ্জস্যতা
নেই; মানুষকে ভালো করে তাকিয়ে পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে আকাশে কোন ত্রুটি বা ফাটল আছে
কিনা সেটা পরীক্ষা করে দেখতে (৬৭:০৩)। কেয়ামতের দিন আকাশ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ছড়িয়ে পড়বে
(৬৯:১৬)। কেয়ামতের দিন আকাশ গলিত তামার মতো হয়ে যাবে (৭০:০৮)। আল্লাহ মানুষকে প্রশ্ন
করে বলেছে, মানুষকি স্তরে স্তরে স্থাপিত আকাশকে লক্ষ করে দেখে না (৭১:১৫)। কেয়ামতের
দিন আকাশ বিদীর্ণ হবে বা ভেঙ্গে পড়বে (৭৭:০৯)। আল্লাহ মানুষের মাথার উপর স্থাপন করেছে
সুদৃঢ়, মজবুত সাত আকাশ (৭৮:১২) এবং কেয়ামতের দিন এই আকাশকে বিদীর্ণ করা হবে বা ভেঙ্গে
ফেলা হবে এবং তাতে অনেকগুলো দরজা তৈরী করা হবে (৭৮:১৯)।
আকাশের সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনা শুনে
যে কারও বুঝতে বাকী থাকবে না যে কুরআনে যে শক্ত, মজবুত, স্তরে স্তরে স্থাপিত ছাঁদের
মতো আকাশের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তার সাথে বাস্তব আকাশের কোন মিল নেই। এই আয়াতগুলোতে
সেসব ধারণাই লেখা হয়েছে মুহাম্মদ যেভাবে আকাশকে কল্পনা করেছে। যে আকাশ হলো শক্ত কঠিন
পদার্থের তৈরী একটি ছাদ, যা কেয়ামতের দিন ভেঙ্গে যাবে; এমনকি যেকোন সময় এই আকাশ ভেঙ্গে
যেয়ে এর কোন টুকরো মানুষের মাথার উপর পড়তে পারে। এসব ধারনা প্রাচীণ মানুষের মনে উদিত
হয়েছিল; আর মুহাম্মদ সেগুলোকেই সত্য ভেবে কুরআনে উল্লেখ করেছে। আসলে মানুষের কাছে
আকাশকে ছাদের মতই মনে হয়। স্বাভাবিক চোখে দেখলে আকাশকে শক্ত কঠিন ছাদই মনে হয়। ছোট
বেলায় আমরাও ভাবতাম যে আকাশ হলো শক্তি কঠিন পদার্থের তৈরী ছাদ।
কিন্তু আমরা জানি বাস্তব জগতে এমন
কোন আকাশ নেই যা কঠিন পদার্থের তৈরী ছাদ। যা যেকোন সময় ভেঙ্গে মানুষের মাথার উপর
পড়তে পারে। আসলে কুরআনের লেখক কুরআনে মুহাম্মদের ধ্যান ধারনাই উল্লেখ করেছে বলে কুরআনে
আকাশ সম্পর্কে এমন উদ্ভট কথা বলা হয়েছে। এটি প্রাচীণ মানুষের ধ্যাণ ধারনার প্রতিফলন
মাত্র। যা কুরআনে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
একই ভাবে কুরআনে পৃথিবী সম্পর্কে
বলা হয়েছে যে পৃথিবীকে বিছানা বা কার্পেটের মতো সমতলে বিছানো হয়েছে। যেমন কুরআনের
০২:২২, ৭৮:৬, ৫১:৪৮, ৪৩:১০, প্রভৃতি আয়াতে।
এছাড়াও বলা হয়েছে পৃথিবীকে প্রসারিত
বা বিস্তৃত করা হয়েছে। যেমন- কুরআনের ১৫:১৯, ১৩:৩, ৭৯:৩০, প্রভৃতি আয়াতে।
পৃথিবীকে সমতলে বা প্রশস্তভাবে স্থাপন
করা হয়েছে। যেমন- কুরআনের ৮৮:১৯-২০, ৭১:১৯-২০
প্রভৃতি আয়াতে।
আবার দাবী করা হয়েছে যে বিছানার মতো
সমতলে বিছানো পৃথিবীকে স্থির রাখার জন্য পাহাড় স্থাপন করে দিয়েছে। অর্থাৎ পাহাড় স্থাপন
করার কারণ হলো পৃথিবী অস্থির বা কোন দিকে কাঁত হয়ে পড়ে যেতে চায়। তাই পৃথিবীকে স্থির
ভাবে ধরে রাখার জন্য এতে পাহাড় স্থাপন করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে আল্লাহ পৃথিবীতে এজন্য পাহাড়-পর্বত স্থাপন
করেছে যেন পৃথিবী কোন এক দিকে কাঁত হয়ে ঢলে পড়ে না যায় বা কোন এক দিকে ঝুঁকে না পড়ে
যায়- বা কেঁপে না উঠে (২১:৩১), (৩১:১০), ১৬:১৫)।
অর্থাৎ কুরআনের বর্ণনা মতে আল্লাহ
শক্ত কঠিন পদার্থের তৈরী ছাদ আকৃতির বিশাল আকাশকে উর্ধদেশে খুটি ব্যাতিত স্থাপন করেছে।
এবং নিচে পৃথিবীকে বিছানার মতো সমতল করে স্থাপন করেছে এবং এই সমতল পৃথিবী যেন কোন
দিকে কাঁত হয়ে না পড়ে যায় তাই এর উপর পাহাড় পর্বতের ভার দিয়ে রেখেছে। আর নিচে পৃথিবী
এবং তার উপরে বিশাল আকাশকে মহা বিস্তৃত বা মহা প্রসারিত করে তৈরী করেছে বলে কুরআন আল্লাহকে
মহা সম্প্রসারণকারী বলে সম্বোধণ করেছে।
কুরআনের সূরা ফাতিরের ৪১ নাম্বার
আয়াতে উল্লেখ আছে,
"আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে
সংরক্ষণ করেন যাতে ওরা স্থান চ্যুত না হয়, ওরা স্থানচ্যুত হলে তিনি ব্যতীত কে ওদেরকে
সংরক্ষণ করবে।" (অনুবাদ- প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান)
এই আয়াত অনুযায়ী আকাশ এবং পৃথিবী
স্থির থাকে। অর্থাৎ প্রসারিত হয় না। তাই জাকির নায়েকের দাবী যে, কুরআন বিশ্বজগতকে সম্প্রসারণশীল
বলেছে সেটি পুরোপুরি মিথ্যা।
এই আয়াতটির অন্য অনুবাদ হলো,
"(বস্তুত) আল্লাহ তায়ালাই আসমানসমূহ
ও যমীনকে স্থির করে (ধরে) রেখেছেন, যাতে করে ওরা (স্বীয় কক্ষপথ থেকে) বিচ্যুত না হতে
পারে, যদি (কখনো) ওরা কক্ষচ্যুত হয়েই পড়ে তাহলে (তুমিই বলো) আল্লাহ তায়ালার পর এমন
কে আছে যে এদের উভয়কে (পুনঃ) স্থির করতে পারবে," (অনুবাদ- হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ)
দেখা যাচ্ছে আকাশ এবং পৃথিবী তাদের
স্থান থেকে কক্ষচ্যুত হয় না অর্থাৎ একই স্থানে স্থির থাকে। অর্থাৎ এরা সম্প্রসারিত
হয় না।
দেখা যাচ্ছে কুরআনের বর্ণনা মতে আকাশ
শক্ত কঠিন পদার্থের তৈরী এবং একে পৃথিবীর উপরে উচ্চ স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। আর বিছানার
মতো সমতল পৃথিবীর উপরে পাহাড় স্থাপন করে পৃথিবীকে স্থির করা হয়েছে। আর আকাশ এবং পৃথিবীকে
যথাস্থানে ধরে রাখে যাতে এগুলো স্থানচ্যুত না হয়। আল্লাহ পৃথিবী থেকে আকাশকে বিচ্ছিন্ন
করে উপরে স্থাপন করে পৃথিবী এবং আকাশকে বিস্তৃত করেছে অর্থাৎ সম্প্রসারিত করে দিয়েছে।
আর তাই কুরআনের সূরা যারিয়াতের ৪৭ নাম্বার আয়াতে আল্লাহকে মহাসম্প্রসারণকারী বলে আখ্যায়িত
করা হয়েছে।
কুরআনের উপরিউক্ত আয়াতগুলো থেকে
দেখতে পাচ্ছি যে কুরআনে আকাশকে শক্ত কঠিন ছাদ বলে উল্লেখ করেছে এবং পৃথিবীকে বিছানার
মতো সমতল বলা হয়েছে। এবং পৃথিবী কোন এক দিকে কাঁত হয়ে পড়ে যেতে পারে তাই এতে পাড়ার
স্থাপন করে একে স্থির করা হয়েছে। আকাশকে সুউচ্চে স্থাপন করে পৃথিবী এবং আকাশকে সম্প্রসারিত
করেছে। আর তাই আল্লাহ মহাসম্প্রসারণকারী।
কিন্তু জাকির নায়েক তার বক্তব্যে
দাবী করেছে যে, সূরা যারিয়াতের ৪৭ নাম্বার আয়াতে আল্লাহকে নয় বরং বিশ্বজগতকে মহাসম্প্রসারণকারী
বলেছে। কিন্তু যেহেতু আল্লাহই আকাশ এবং পৃথিবীকে আলাদা করে আকাশকে সুউচ্চে স্থাপন করেছে
তাই আল্লাহই মহাসম্প্রসারণকারী। এখানে বিশ্বজগতকে মহাসম্প্রসারণকারী বলাতে কোন স্বার্থকতা
থাকে না। কারণ আল্লাহই বিশ্বজগতকে মহাসম্প্রসারিত করে তৈরী করেছে, তাই আল্লাহ মহাসম্প্রসারণকারী
এটিই যুক্তি সঙ্গত। আল্লাহ আকাশকে মহাসম্প্রসারণ করেছে তাই সেইই মহাসম্প্রসারণকারী,
বিশ্বজগত নয়।
এখানে উল্লেখ্য কুরআন পৃথিবী বিছানার
মতো সমতল বলে উল্লেখ করেছে এবং আকাশকে শক্ত কঠিন ও দৃঢ় ছাদ বলেছে। কিন্তু বাস্তব জগতে
এমন পৃথিবী এবং আকাশ এই বিশ্বজগতে নেই। আর তাই কুরআনের আকাশ বা বিশ্বজগত আমাদের চির
চেনা বাস্তব বিশ্বজগত নয়। এটি অন্য এক বিশ্বজগত যেখানে পৃথিবী সমতল এবং আকাশ শক্ত কঠিন
ছাদ। এটি বিশ্বজগত সম্পর্কে প্রাচীণ মানুষের ভ্রান্ত ধারণার বহিঃপ্রকাশ।
আর তাই এটা অসম্ভব ব্যাপার যে কুরআনের
প্রাচীণ লেখক কুরআনে সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের কথা লিখেছে যেটা কুরআনের আয়াতের সাথে
সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ ওই আয়াতটিকে স্পষ্ট করে
আল্লাহকে মহাসম্প্রসারণকারী বলে সম্বোধন করেছে। যেটা জাকির নায়েক তার মিথ্যাবাদীতা
দিয়ে কুরআনের অর্থকে পরিবর্তন করে আল্লাহর জায়গায় বিশ্বজগতকে মহাসম্প্রসারণকারী বলে
দাবী করেছে। কিন্তু আয়াতটি অনুযায়ী এটাই যুক্তি যুক্ত যে আল্লাহই যেহেতু তার নিজের
হাতে আকাশ তৈরী করেছে, তাই আল্লাহই মহাসম্প্রসারণকারী। এখানে আকাশ এবং পৃথিবীকে বিস্তৃত
করে এবং বিশাল আকাশকে সম্প্রসারিত করে স্থাপন করাতে আল্লাহকে মহাসম্প্রসারণকারী বলে
আখ্যায়িত করা হয়েছে।
জাকির নায়েকের বক্তব্যে জাকির নায়েক
কুরআনের সূরা যারিয়াতের ৪৭ নাম্বার আয়াতের অর্থ যেখানে বলা হয়েছে আল্লাহ তার ক্ষমতাবলে
আকাশ সৃষ্টি করেছে এবং সেই মহাবিশ্বের বিশালতার মালিক বা বিস্তৃতিকারী, সেখানে জাকির
নায়েক এই আয়াতের অর্থকে দিয়ে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণশীলতার কথা বলেছে। কিন্তু আয়াতটিতে
সম্প্রসারণশীলতার কথা বলা হয়নি। বরং বলা হয়েছে বিশ্বজগত বিশাল ভাবে বিস্তৃত বা সম্প্রসারিত।
সম্প্রসারিত এবং সম্প্রসারণশীলতা এক বিষয় নয় সেটা আগেই বলেছি। কুরআন মতে আকাশ এবং পৃথিবীকে
বিশাল ভাবে বিস্তৃত করা হয়েছে বা সম্প্রসারিত করা হয়েছে। তাই এখানে আল্লাহকে মহাসম্প্রসারণকারী
বলা হয়েছে। এখানে বিশ্বজগত সম্প্রসারণশীল এটা বলা হয়নি।
আবার কুরআনের অন্যান্য আয়াতগুলো
থেকে জানা যাচ্ছে যে কুরআনে আকাশকে (শক্ত কঠিন আকাশ) স্থির বলা হয়েছে। আর পৃথিবীকেও
সমতল ও স্থির বলা হয়েছে (৩৫:৪১)। সুতরাং এটা স্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হয় যে সূরা যারিয়াতে
বলা আল্লাহ মহাসম্প্রসারণকারী দ্বারা বিশ্বজগতকে তথা আকাশ ও পৃথিবীকে বিশাল ভাবে বিস্তৃত
করা হয়েছে এটাই বুঝিয়েছে। বিশ্বজগতের সম্প্রসারণশীলতা নয়। অর্থাৎ বিশ্বজগতকে মহা সম্প্রসারিত
বা মহাবিস্তৃত করা হয়েছে আর তাই আল্লাহই মহা সম্প্রসারণকারী বা মহাবিস্তৃতিকারী।
সুতরাং জাকির নায়েকের দ্বাবী কুরআন
মহাবিশ্বের সম্প্রসারণশীলতার কথা বলেছে কথাটা জাকির নায়েকের হাজার মিথ্যের মধ্যে বলা
আরেকটি মিথ্যে দাবী মাত্র।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে মিথ্যেবাদী ও
ভন্ড জাকির নায়েক যেমনটি দ্বাবী করেছে যে মুসিইউনা অর্থ সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব কথাটি
পুরোপরি মিথ্যা। বরং মুসিইউনা শব্দটির উপযুক্ত অর্থ বিস্তৃত বা সম্প্রসারিত। কিন্তু
মিথ্যেবাদী জাকির নায়েক এই শব্দটির ভিন্ন অর্থ এনে বিজ্ঞানের সাথে মিলে যায় এমন শব্দ
এনে কুরআনের অর্থকে পরিবর্তন করেছে এবং কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানিয়েছে। এতে অবশ্য কুরআনের
সাফল্য প্রমাণিত হয়নি কারণ আসল কুরআনে এমনটা বলা হয়নি; বরং জাকির নায়েকের মিথ্যেবাদীতা
প্রমাণিত হয়েছে। কুরআনের অর্থকে পরিবর্তন করে নিজের মতো করে অর্থ করে কুরআনকে সংস্কার
করে জাকির নায়েক যা প্রমাণ করেছে তা হলো সে একটা বড় মাপের মিথ্যেবাদী, ভন্ড এবং প্রতারক।
পরে জাকির নায়েক বলেছে, অরবেনেহো নামে এক বিখ্যাত বিজ্ঞানী নাকি বলেছে যে মহাবিশ্ব ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু এই নামে কোন বিজ্ঞানী এটা আবিষ্কার করেনি। যে বিখ্যাত বিজ্ঞানী এটা প্রথম আবিষ্কার করেছিল তার নাম অরবেনেহো নয়; তার নাম হলো এডুইন হাবল্। তিনিই প্রথম তার আবিষ্কৃত হাবল্ টেলিস্কোপ দিয়ে আবিষ্কার করতে পেরেছিল যে মহাবিশ্ব স্থির নয় (যেমনটা কুরআনে দাবী করা হয়েছে)। বরং মহাবিশ্ব ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে। অর্থাৎ মহাবিশ্ব ক্রমাগত সম্প্রসারণশীল। যার ফলে কুরআনকে বিজ্ঞানমন বানাতে জাকির নায়েকের মতো লোকেরা কুরআনের আসল অর্থকে পরিবর্তন করে নতুন করে এই আবিষ্কারের সাথে মিলিয়ে সম্প্রসারণকারীর জায়গায় সম্প্রসারণশীল এই অর্থটি ব্যবহার করতে চেয়েছে। কিন্তু কুরআনের কোথাও মহাবিশ্বের সম্প্রসারণশীলতার কথা বলা হয়নি। বরং বিস্তৃত বা সম্প্রসারিত বিশ্বজগতের কথা বলা হয়েছে। (কুরআনতো জানতোই না যে আমাদের বিশ্বজগত এতো বিশাল। বরং কুরআনের বর্ননা মতে পৃথিবী এবং আকাশ পর্যন্তই বিশ্বজগতের স্বীমানা। কুরআন ঠিক ততটুকুই বর্ণনা করেছে যতটুকু মুহাম্মদের মতো মানুষ দেখতে পেয়েছিল। যেমন কুরআনে শুধু পৃথিবী, পাহাড় পর্বত, আকাশ, চাঁদ-তারা এবং সূর্যের কথাই বারবার বলে গেছে। কিন্তু যা দেখা মুহাম্মদের পক্ষে সম্ভব হয়নি সেগুলো কুরআনের কোথাও উল্লেখ করা নেই। আর তাই মুহাম্মদ যেমনটি দেখেছিল যে (ক্ষুদ্র) বিশ্বজগত আকাশ-পৃথিবী, চাঁদ-তারা, সূর্য প্রভৃতিকে আল্লাহ বিশাল করে, মহা সম্প্রসারিত করে এবং মহাবিস্তৃত করে তৈরী করেছে। তাই সে আল্লাহকে মহা সম্প্রসারণকারী বা মহা বিস্তৃতকারী বলে আখ্যায়িত করেছে। এটা সে বিশ্বজগতের মহা বিস্তৃতীর জন্য করেছে এবং বিশ্বজগত যে তার কাছে মহাসম্প্রসারিত অনুভব হয়েছিল তার জন্য বলেছে। সে জানতো না যে বিশ্বজগত সম্প্রসারিত হচ্ছে তাই তার পক্ষে সম্ভব হয়নি সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের কথা বলতে। এটা বলেছে জাকির নায়েকের মতো লোকেরা যারা বিজ্ঞানের কল্যাণে জানতে পেরেছে আধুনিক জগতে এসে; তাই তারা কুরআনের অর্থকে পরিবর্তন করে (বিস্তৃত বা সম্প্রসারিত করার জায়গায় সম্প্রসারণশীল কথাটি উল্লেখ করেছে যার কোন বাস্তব ভিত্তি নেই) বিজ্ঞানময় বানানোর চেষ্টা করতে পেরেছে। (কিন্তু কোন লাভ হয়নি।)
তারপর জাকির নায়েক দ্বাবী করেছে যে অবিশ্বাসীরা নাকি বলতে পারে যে কুরআনে এই কথাগুলো লেখা আছে কারণ আরবরা জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে আগে থেকেই জানতো। জাকির নায়েক তাদের ভূল ভাঙ্গানোর জন্য তাদেরকে জানিয়ে দিতে বলেছে যে আরবরা কুরআন নাজিল হবার অনেক পরে জ্যোতির্বিদ্যায় উন্নতি সাধন করেছিল। তাই জাকির নায়েক গর্বিত হয়ে দাবী করেছে যে তারা কুরআন থেকেই জ্যোতির্বিদ্যা শিখেছিল। এর ব্যতিক্রম হয়নি।
এখানে জাকির নায়েকের ভন্ডামী যতটা আছে তার থেকে প্রতারণা কম নেই।
একথা সত্য যে ইসলাম আসার পরে এবং মুহাম্মদের ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার পরে (কয়েকশো বছর পরে) অনেক বছর যাবত বিজ্ঞানের কাজে মুসলমানরা তথা আরবরা অনেক উন্নতি সাধন করে। এর পিছনে কোন অলৌকিক কারও ক্ষমতা কাজ করেনি। এবং কুরআনের তো কোন ভূমিকাই নেই। এর পিছনে কাজ করেছিল বাস্তবতা অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক কারণ। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবার পর ইসলাম একটি বড় রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিল। যার ফলে ইসলামী রাষ্ট্র ধন সম্পত্তিতে অনেক এগিয়ে গিয়েছিল। এবং ইসলাম বিভিন্ন দেশ দখল করার পরে সেসব দেশের সম্পদের সাথে সাথে জ্ঞানও সংগ্রহ করতে সামর্থ হয়েছিল। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই কিছু মানুষ বিজ্ঞানের চর্চা করার সুযোগ পেয়েছিল। এই সুযোগটি এনে দিয়েছিল ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম। কিন্তু কোন ভাবেই ইসলামের কোন ভুমিকা ছিল না এতে। বরং ইসলামের ফলে যে বড় রাষ্ট্রের তৈরী হয়েছিল সেটাই এই বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে ভুমিকা রেখেছিল। ফলে অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানীর জন্ম হয়েছিল মুসলমানদের মধ্যে। এবং আরবরা পরবর্তীতে বিজ্ঞানের অনেক শাখাতে অবদান রাখতে স্বামর্থ হয়েছিল। আর এর ফলেই সেই সব বিজ্ঞানীর জন্ম হয়েছিল যাদেরকে নিয়ে আজ মুসলমানরা গর্ব করে। এই সময়টিতে কিছু মুক্ত মনের মানুষের উদ্ভব হবার কারণেই তারা বিজ্ঞানে বড় অবদান রাখতে পেরেছিল। কিন্তু যখন তারা বিজ্ঞানের কিছু ব্যপার নিয়ে কথা বলতে শুরু করে তখন মুসলমানরা দেখেছিল যে ওগুলো ইসলামের ক্ষতি করতে পারে এবং এগুলো ইসলামের নিয়মের বাইরে চলে যায়। ফলে তারা ওই সব বিজ্ঞানী এবং মুক্তমনের অধিকারীদেরকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করে এবং সফল হয়। ফলে পরবর্তীতে আর কোন মুসলমান বিজ্ঞানে অগ্রগতি করতে পারেনি। এখানে উল্লেখ যোগ্য ব্যপার হচ্ছে, সেসময় যারা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখতে পেরেছিল তারা কেউই কুরআন থেকে শিক্ষা নিয়ে করেনি। তারা সবাই বাস্তব জ্ঞানের প্রেক্ষিতেই বিজ্ঞানে অবদান রেখেছিল। যার প্রমাণ পাওয়া যায় যখন দেখা যায় ইসলামী রাজ্যে মুক্ত চিন্তার পথ রোধ করে দেওয়া হয় যখন তারপর আর কোন বিজ্ঞানীর জন্ম ইসলামে সেরকম দেখা যায়নি। কুরআনে যদি আসলেই বিজ্ঞান থাকতো তবে ওই সময়ের পরেও (যখন সমস্ত মুক্তচিন্তার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়) মুসলমানরা বিজ্ঞানের বড় বড় আবিষ্কার গুলো করতে পারতো। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে মুসলমানদের বিজ্ঞানে পিছিয়ে থাকাটাই প্রমাণ করে আসলে কুরআন হাদিসে বিজ্ঞানের কোন কিছুই নেই, যেমনটা মুসলমানরা দাবী করে থাকে। পৃথিবীতে হাজার হাজার কুরআনের হাফেজ আছে, এছাড়াও লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন কুরআন নিয়ে পড়ে থেকেও বিজ্ঞানের ‘ব’ টুকুও জানে না। এর কারণ আর কিছুই নয়; কুরআনে কোন বিজ্ঞানের উপাদানই নেই। আর তাই মুসলমানরা শুধু কুরআন হাদিস নিয়ে পড়ে থেকে বিজ্ঞানের জ্ঞান থেকে পিছিয়ে গেছে হাজার মাইল। বর্তমানে যেসব মুসলমান বিজ্ঞানে অবদান রেখেছে তারা সবাই বিজ্ঞান শিখে বিজ্ঞানের মাধ্যমেই অবদান রেখেছে। কুরআনের মাধ্যমে নয়। আর তাই জাকির নায়েকের মতো মিথ্যেবাদীদের দাবী কখনই সত্য নয়। কুরআনে বিজ্ঞান নেই আর তার ফল স্বরুপ মুসলমানরা জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে রয়েছে।
জাকির নায়েক যেমনটি দাবী করেছে যে আরবরা জ্যোতির্বিজ্ঞানে এগিয়ে ছিল কারণ তারা কুরআন থেকে শিখেছিল দাবীটি চরম প্রতারণামুলক। তাই যদি সত্য হতো তবে মুসলমানরাই বিজ্ঞানে সব থেকে এগিয়ে থাকতো। কিন্তু তেমনটি হয়নি। কারণ কুরআনে কোন বিজ্ঞানের উপাদান নেই। আর তাই কোন মুসলমানই কুরআন থেকে বিজ্ঞান শিখতে পারে না।
যেহেতু ইসলাম আসার পরে আরবে শক্তিশালী ইসলামী রাষ্ট্র গঠিত হতে পেরেছিল। আর তার ফলেই কিছু সময়ের জন্য মুসলমানরা জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা করার ভালো সুযোগ পেয়েছিল। এবং তার জন্য তারা বিজ্ঞানে এগিয়ে গিয়েছিল। এবং যখন মুসলমানরা মুক্ত চিন্তার দাড় চির তরে বন্ধ করে দিয়েছিল তখনই মুসলমানদের বিজ্ঞানে অবদান রাখার সুযোগ শেষ হয়ে গিয়েছিল। আর তাই পরবর্তীতে মুসলমানরা বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়েছিল।
এর উদাহরণ আমরা দেখতে পাই পৃথিবীর সব সভ্যতার ক্ষেত্রে। যে সমাজ ধনসম্পত্তিতে এবং সমাজ ব্যবস্থায় এগিয়ে গিয়েছিল সে সমাজ ততই জ্ঞান বিজ্ঞানে অবদান রাখতে পেরেছিল। যখন ব্যবলীয়ন সভ্যতা এগিয়ে গিয়েছিল তখন তারা জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক উন্নতি সাধন করতে পেরেছিল। যখন মিশরীওরা সভ্যতায় এগিয়ে গিয়েছিল তখন তারা জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক উন্নতি সাধন করতে পেরেছিল। এক সময় গ্রীকরা সভ্যতায় এগিয়ে গিয়েছিল বলে তারা জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক বড় ভুমিকা রাখতে পেরেছিল। পরে মুসলমানরা এগিয়ে গিয়েছিল বলে তারাও জ্ঞান বিজ্ঞানে অবদান রাখতে পেরেছিল। বর্তমানে আমেরিকা, ইউরোপসহ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো অনেক এগিয়ে বলে বিজ্ঞানে তাদের অবদানই সব চেয়ে বেশী।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ধর্মের কোন ভূমিকা নেই। আসল ভূমিকা সুস্থ এবং উন্নত সমাজ ব্যবস্থা, এবং সর্বপরী উন্নত রাষ্ট্রিয় ব্যবস্থা।
আর তাই আরবদের বিজ্ঞানে অগ্রগতির জন্য যদি কারো ভূমিকা থেকে থাকে তবে সেটা ইসলামী রাষ্ট্রিয় অগ্রগামীতা; স্বয়ং ইসলামের নয়, কুরআনের নয়।
ফলে ভন্ড জাকির নায়েক যেভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করে আরবদের জ্যোতির্বিজ্ঞানে অগ্রগতির জন্য কুরআনের অবদানকে ফলাও করে প্রচার করেছে সেটা তার স্বভাবসুলভ প্রতারণা থেকেই করেছে। এর বাস্তব কোন প্রমাণ নেই। যেখানে পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ কুরআন পাঠ করা মানুষদের কাছ থেকে (জাকির নায়েকের কাছ থেকেও) বিজ্ঞানের 'ব'ও বের হয় না তখন নির্লজ্জের মতো দাবী করে বলছে যে ততকালীন আরবরা কুরআন থেকেই জ্যোতির্বিদ্যা শিখেছিল। জাকির নায়েকতো কুরআন নিয়ে দিন রাত পড়ে থাকে, আজ পর্যন্ত কি একটা সূতা পর্যন্ত বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে পেরেছে?
মিথ্যে কথা, ভন্ডামী এবং প্রতারণার মাধ্যমে ধর্ম ব্যবসা করা যায়, বিজ্ঞানে অবদান রাখা যায় না। সেটা জাকির নায়েক ভালো ভাবেই জানে।
ফলে জাকির নায়েকের দাবীটি শুধু প্রতারণামুলকই নয় বরং রীতিমতো ভন্ডামী।
হাজারটা মিথ্যে কথা বলে, ভন্ডামী এবং প্রতারণার মাধ্যমে কুরআনকে বিজ্ঞানের সাথে মিলিয়ে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর অপচেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শেষে আবার দাবী করছে কুরআনে নাকি আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কার ১৪০০ বছরই আগেই উল্লেখ করা আছে।
মিথ্যেবাদীতা, ভন্ডামী এবং প্রতারণারও একটা স্বীমা থাকা উচিত!
বি.দ্র.: কেন জাকির নায়েকের সমালোচনা? জাকির নায়েককে মিথ্যেবাদী প্রতারক প্রমাণ করাতে অনেক মুসলমানদের মনে আঘাত লাগতে পারে। তাদের কাছে ক্ষমা পূর্বক জানাতে চাই যে জাকির নায়েকের ভন্ডামী এবং প্রতারণা প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরী। কারণ জাকির নায়েক তার প্রতারণার মাধ্যমে শুধু স্বাধারণ মানুষকেই প্রতারিত করছে না বরং কুসংস্কার ছড়ানো সহ বিজ্ঞান সম্পর্কে মিথ্যে তথ্য দিয়ে অপবিজ্ঞান ছড়াচ্ছে। তাই জাকির নায়েকের ভন্ডামী, মিথ্যেবাদীতা এবং প্রতারণা সবার মাঝে তুলে ধরা সব সুস্থ মানুষের আবশ্যিক দায়িত্ব।
জানিনা এই লেখাটা কোন মূর্খের দ্বারা লেখা, এ বিজ্ঞানের জ্ঞানহীন মূর্খকে বলবো, আপনার বাবাকে জিজ্ঞেস করুন, তিনি স্কুলে কি পড়েছেন সূর্য স্থির না গতিশীল? কুরআনের চোদ্দশ বছর আগে বলা হয়েছে সূর্য নিজ কক্ষপথে ঘুরছে। এর উত্তরে শয়তানটা কি বলবে? বিগ ব্যাং থিওরি কুরআনে বলা হয়েছে। এ শয়তান জানেনা এটা কখনো আবিষ্কার হয়েছে। এ মূর্খের আরবি ভাষা সম্পর্কে কোন জ্ঞান নাই।এই মূর্খ কীভাবে অনুবাদ করে? জাকির নায়েক ভুল না ঠিক সেটা মূর্খরা বুঝবে না। এ শয়তানরা আমার সাথে কথা বলতে রাজি হয় না। জাকির নায়েককে কিভাবে ভুল প্রমাণ করবে? এগুলো না আছে বিজ্ঞানের জ্ঞান না আছে বোধশক্তি। সবগুলো মূর্খ।
ReplyDeleteআবাল
ReplyDelete