মুসলমান আস্তিকরা বিজ্ঞানের কোন আবিষ্কার
হলেই দাবী করে বসে যে, সেই আবিষ্কার করা বিষয়টি তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনে বর্ণনা
করা হয়েছে অনেক আগে, প্রায় ১৪০০ বছর আগে। কিন্তু তাদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে কুরআনে চোখ বুলালে কোথাও
সেই আবিষ্কারটির কথা পাওয়া যায় না। কিন্তু তাদের দাবী করা আয়াতগুলো দেখিয়ে যদি বলা হয়,
কুরআনের কোথায় আছে
সেই আবিষ্কারের কথা? তখন তারা বলে এই আয়াতে অমুক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে আর অমুক শব্দের অর্থ তমুক;
সুতরাং প্রমানিত হল
কুরআনে বিজ্ঞানের আবিষ্কারের কথা লেখা আছে ১৪০০ বছর আগে।
কিন্তু মুসলমানদের লেখা কোন বইয়েই (হাদিস
বা কুরআন সম্পর্কিত) সেই আবিষ্কারের কথা পাওয়া যায় না। বরং যে আয়াতটি মুসলমানরা দেখায় দেখা যায়, সেটাতে বিজ্ঞান বিরোধী কথা বলা আছে। কিন্তু মুসলমানরা সেই আয়াতের কোন একটি শব্দের
অর্থ পরিবর্তন করে দিয়ে কুরআনের আয়াতের সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ করে (অর্থাৎ অর্থ পরিবর্তন
করে) দেখায় যে কুরআন বিজ্ঞানময়। এক্ষেত্রে দুটো আয়াত বর্ণনা করলে বিষয়টা বুঝতে সহজ হবে।
কুরআনের সূরা আম্বিয়ার ৩০ নাম্বার আয়াতে বলা
হয়েছে,
"...আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী
মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম ...."
এই কথাতে কি বিগ ব্যাং বুঝা গেল ?
নাকি এই আয়াতে বলা
হচ্ছে যে, পৃথিবী আর আকাশ এক সাথে ছিল, আল্লাহ শুধু এদেরকে পৃথক করে দিয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবী ও আকাশ আগে থেকেই তৈরী করা
ছিল, আল্লাহ শুধু এদুটোকে
আলাদা করে দিয়েছে মাত্র। এটি বিগ ব্যাং থিওরীর সম্পূর্ন বিপরীত ও সাংঘর্ষিক। আর এই বিগ ব্যাং বিরোধী
আয়াতটি দিয়েই আবার মুসলমানরা দাবী করছে কুরআনে বিগ ব্যাং-এর কথা ১৪০০ বছর আগেই বলা
হয়েছে। তারা আকাশকে ভিন্ন
অর্থে ব্যবহার করে বলে এখানে আকাশমন্ডলী মানে হলো সমস্ত বিশ্বজগত। তাই কুরআনের আসল অর্থ
হলো বিশ্বজগত ও পৃথিবী মিশে ছিল যেটা বিগ ব্যাং থিওরীতে বর্ণিত সিঙ্গুলারিটিকে বুঝানো
হয়েছে। তাই কুরআন বিজ্ঞানময়।
কিন্তু কুরআনে কখনই বিগ ব্যাং-এর সিঙ্গুলারিটির
কথা বলা হয়নি। কুরআনে বলা হয়েছে আকাশমন্ডলী (কুরআনের দাবী অনুযায়ী সাতটা আকাশ) যেটা আগে থেকেই
প্রস্তুত করা ছিল এবং পৃথিবী, এটাও আগে থেকেই তৈরী করা ছিল, এদুটো পরস্পরের সাথে মিশে ছিল। অর্থাৎ পৃথিবীর উপরে
আকাশ এভাবে মিশে ছিল। আল্লাহ শুধু এদুটোকে আলাদা করে দিয়েছে।
ওই আয়াতের কোথাও বলা হয়নি পৃথিবী ও আকাশ
মিশে ছিল আল্লাহ এদেরকে সৃষ্টি করেছেন। বরং বলা হয়েছে আলাদা করেছেন। অর্থাৎ পৃথিবী ও আকাশ আগে থেকেই তৈরী করা
ছিল।
কিন্তু মুসলমানরা এই আয়াতের অর্থ পরিবর্তন
করে দাবী করে কুরআনে বিগ ব্যাং-এর কথা বলা হয়েছে।
আরেকটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা আরোও পরিষ্কার
হয়ে যাবে।
মুসলমানরা দাবী করে যে, কুরআনে চাঁদের আলোকে
প্রতিফলিত আলো বলা হয়েছে। কিন্তু ১৪০০ বছর আগে কারোও জানার কথা ছিল না যে চাঁদের আলো
আসলে প্রতিফলিত আলো। কারণ চাঁদের আলো যে প্রতিফলিত আলো সেটা মানুষ প্রথম জেনেছে খুব বেশী দিন আগে
নয়। তাহলে কুরআনে কিভাবে
১৪০০ বছর আগে বলা হল যে, চাঁদের আলো প্রতিফলিত আলো? মুসলমানদের দাবী তাহলে কুরআন আসলেই আল্লাহ নামের কোন সৃষ্টিকর্তার
গ্রন্থ।
কিন্তু আসলেই কি কুরআনে চাঁদের আলোকে প্রতিফলিত
আলো বলা হয়েছে? মুসলমানরা তাদের দাবীর স্বপক্ষে কুরআনের যে আয়াতটির কথা উল্লেখ করে সেটা হলো সূরা
ইউনুসের ৫ নাম্বার আয়াত এবং সূলা ফুরকানের ৬১ নাম্বার আয়াত।
দেখুন এ দুটো আয়াতের অনুবাদঃ
সূরা ইউনুস, আয়াত ৫
"তিনি (আল্লাহ), যিনি সূর্যকে দীপ্তিমান
ও চন্দ্রকে আলোকময় বানিয়েছেন ...."
সূরা ফুরকান, আয়াত ৬১
"কত মহান তিনি যিনি
আকাশে সৃষ্টি করেছেন বড় বড় তারকাপুঞ্জ এবং তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ (সূর্য) ও জ্যোতির্ময়
চন্দ্র! "
এই দুটো আয়াতেই চাঁদের আলোর কথা বলা হয়েছে
যে, চাঁদের নিজস্ব আলো
আছে। বলা হচ্ছে আলোকময়
চন্দ্র ও জ্যোতির্ময় চন্দ্র, অর্থাৎ আলো প্রদানকারী চাঁদ। এই একই অনুবাদ পাওয়া যায় আগের সবগুলো অনুবাদে
(ইংরেজী সহ ১০ টি ভাষার অনুবাদে)।
কিন্তু মুসলমানরা কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে
এই আয়াতগুলোর অর্থ বদলে দিয়ে দাবী করে যে কুরআনে চাঁদকে আলো প্রতিফলনকারী বলা হয়েছে। অর্থাৎ ‘আলো প্রদানকারী চাঁদ’ এই অর্খটি পরিবর্তন করে নতুন অর্থ করেছে
‘আলো প্রতিফলনকারী
চাঁদ’।
কিন্তু মুসলমানদের সব বই পুস্তকে এই আয়াতগুলোর
অর্থ করা আছে আলো প্রদানকারী চাঁদ। অর্থাৎ চাঁদের নিজের আলো আছে।
সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে কুরআন বিজ্ঞান বিরোধী
কথা বলেছে। অর্থাৎ কুরআন মিথ্যে। আর তাই মুসলমানরা কুরআনকে বাঁচাতে কুরআনের অর্থ পরিবর্তন করে
ফেলে নতুন অর্থ করে কুরআনকে সংশোধন করেছে। আর দাবী করছে কুরআন বিজ্ঞানময়। কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারে না যে, আল্লাহর দেয়া কুরআনের
অর্থ পরিবর্তন করে নতুন অর্থ করলে সেটা আর আল্লাহর গ্রন্থ থাকে না। সেটা হয়ে যায় মুসলমান
কর্তৃক সংশোধিত। যেহেতু কুরআনের ভুল ইতিমধ্যেই মুসলমানরা সংশোধন করেই ফেলেছে তাহলে নতুন করা অর্থ
অনুযায়ী কুরআন বিজ্ঞানময় হবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ মুসলমানরা বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখেই
নতুন অর্থ করেছে। কিন্তু সেই অর্থটা কুরআনের আসল অর্থ নয় অর্থাৎ সেটা আল্লাহর বলা বাণী বা কথা নয়।
আর তাই কুরআনের ভূল সংশোধন করে বিজ্ঞানের
সাথে মিল রেখে নতুন অর্থ করলেই সেই কুরআন বিজ্ঞানময় হয়ে যায় না। এই সব বলে স্বাধারণ
মুসলমানদের ইমান রক্ষা করা যায় (কারণ মুসলমানরা যুক্তি বুঝতে চায় না আর বুঝতে পারেও
না) কিন্তু বুদ্ধিমানদেরকে বোকা বানানো যায় না।
মুসলমানদের কুরআনের আগের অর্থ পরিবর্তন করে
বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে নতুন নতুন ভিন্ন অর্থ করাটা মুসলমানরা চালিয়েই যাবে সেটাই
আমাদের ধারণা । কারণ তাতে করে মুসলমানদের ইমান রক্ষা পাবে এবং তারা থেকে যাবে জ্ঞান বিজ্ঞান থেকে
হাজার মাইল দুরে। আর এটাই তারা চায়।
মুসলমানরা যাতে কুরআনের অর্থ পরিবর্তন করে
বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সাথে মিল রেখে নতুন নতুন অর্থ করতে পারে সেই কাজে সহযোগিতার
উদ্দেশ্যেই এই পর্বটি শুরু করেছি। এতে করে মুসলমানদের আর বুদ্ধিমান খ্রিস্টানদের ধারণা নকল করতে
হবে না। এই পর্বগুলো পড়লেই তারা কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর অনেক আইডিয়া পাবে এবং ভুলে
ভরা কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে পারবে। কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে মুসলমানদের ভবিষ্যত আচরণ কেমন হতে
পারে সেটাই দেখানোর চেষ্টা করবো এই পর্বগুলোতে। এই পর্বগুলোতে মুসলমানদের আচরনের এবং কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর
কু-কৌশলগুলো নিয়ে ভবিষ্যৎ
বাণী করবো।
মুসলমানদের কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর অপকৌশলের
প্রথম ভবিষ্যৎবাণীটি নিম্নে বর্ননা করা হলো।
বিবর্তনবাদের বিরোধী খ্রিস্টান ও
মুসলমান আস্তিকগন মহা আতংকে বিবর্তনবাদের মুন্ডুপাত করতে উদ্ব্যত
থাকে সব সময়। তবে ইতিমধ্যে চালাক খ্রিস্টানরা বিবর্তনবাদকে মেনে নিয়েছে
এবং এটা ইশ্বরের ইচ্ছা বলে ধর্মীয় মোড়কে আবৃত করে নিয়েছে। কিন্তু বোকা
খ্রিস্টানরা এখনও বিবর্তবাদকে মেনে নেয়নি। যেহেতু বোকারা বুঝতে পারে সবার শেষে তাই
চোখ বন্ধ করেই বলা যায় এই বোকা খ্রিস্টানগুলোও কয়েক বছর বা কয়েক
দশকের মধ্যে বিবর্তনবাদকে মেনে নেবে।
আর মুসলমানরা যেহেতু পৃথিবীর শ্রেষ্ট বোকাদের মধ্যে প্রথম সারিতে আছে তাই তারা বিবর্তনবাদকে মেনে নেবে সবার পরে। (এখানে উল্লেখ্য যে, মুসলমনানদের মধ্যে আহমাদিয়া সম্প্রদায় চালাক মুসলিম হওয়ায় তারাও বিবর্তনবাদকে অনেক আগেই মেনে নিয়েছে।) আর বলাই বাহুল্য যে মুসলমানরাই বেশী চিল্লাচিল্লি করবে এটা বলে যে বিবর্তনবাদ তাদের ধর্মীয় গ্রন্থে লেখা ছিল ১৪০০ বছর আগেই। যেহেতু এটা ১৪০০ বছর আগেই বলা হয়েছে তাই কুরআন অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রেরিত গ্রন্থ। অর্থাৎ কুরআন সৃষ্টিকর্তার বাণী।
আর মুসলমানরা যেহেতু পৃথিবীর শ্রেষ্ট বোকাদের মধ্যে প্রথম সারিতে আছে তাই তারা বিবর্তনবাদকে মেনে নেবে সবার পরে। (এখানে উল্লেখ্য যে, মুসলমনানদের মধ্যে আহমাদিয়া সম্প্রদায় চালাক মুসলিম হওয়ায় তারাও বিবর্তনবাদকে অনেক আগেই মেনে নিয়েছে।) আর বলাই বাহুল্য যে মুসলমানরাই বেশী চিল্লাচিল্লি করবে এটা বলে যে বিবর্তনবাদ তাদের ধর্মীয় গ্রন্থে লেখা ছিল ১৪০০ বছর আগেই। যেহেতু এটা ১৪০০ বছর আগেই বলা হয়েছে তাই কুরআন অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রেরিত গ্রন্থ। অর্থাৎ কুরআন সৃষ্টিকর্তার বাণী।
আর ইসলামী টিভি চ্যানেল ‘পিস’ টিভিতে সারাদিনরাত প্রচার করা হবে “কুরআনে বিবর্তনবাদের কথা সংক্ষেপে লেখা ছিল ১৪০০ বছর আগেই”। জাকির নায়েক তার লম্বা গলা উঁচু করে দাড়ি নাচাতে
নাচাতে বলবে- “আমি নাস্তিকদেরকে
দাওয়া (দাওয়াত) দিচ্ছি তারা বিজ্ঞান বাদ দিয়ে ১৪০০ বছর আগের কুরআনকে নিয়ে
গবেষনা করুক। কারণ কুরআন হচ্ছে সব চেয়ে অলৌকিক ও সব চেয়ে বড় বিজ্ঞান। কারণ কুরআন
বিবর্তনবাদের কথা লেখা হয়েছে ১৪০০ বছর আগেই”।
“যেটা আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করলো সেই
কিছুদিন আগে, সেটা ১৪০০ বছর আগে কিভাবে কুরআনে লেখা থাকে (!!!) ?” (এই সময় জাকির নায়েক মুখভঙ্গি হাসি হাসি করে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে
থাকবে।)
কিন্তু প্রশ্ন হলো মুসলমানরা বিবর্তনবাদকে কি বলে কুরআনের সাথে মিল দেখাবে। বিবর্তনবাদ অনুযায়ী মানুষ ও অন্যান্য হমিনিডসরা একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে। আবার বিবর্তনবাদ ও প্রাণির উতপত্তি বা অরিজিন অফ লাইফ থিওরি (এবাইয়োজেনেসিস) অনুযায়ী সব জীব এক রকমের আদি কোষ বা ব্যাকটেরিয়া থেকে উদ্ভুত হয়েছে। আবার কুরআনে আছে সব মানুষ এক আদম থেকে
এসেছে । (হাওয়াকেও আদমের পাজরের হাড় থেকে তৈরী করা হয়েছে।)
তারা কুরআনের সূরা আল ইমরান-এর ৫৯ নাম্বার আয়াতটি এক্ষেত্রে ব্যবহার
করবে।
আয়াতটি হল,
"নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের
অনুরুপ; তিনি তাঁকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করলেন, তৎপর বললেন, হও, ফলতঃ তাতেই হয়ে গেল।"
মুসলমানরা এই আয়াতটির আদম শব্দটির নতুন অর্থ
করবে এবং দাবী করবে যে, এই আয়াতে বলা হয়েছে,
"নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত প্রথম প্রাণী বা আদি কোষের
অনুরুপ; তিনি তাঁকে জড় পদার্থ দ্বারা সৃষ্টি করলেন, তৎপর বললেন, হও, ফলতঃ তাতেই হয়ে গেল।"
মুসলমানরা দাবী করে বলবে, এই আয়াতে বলা হয়েছে ঈসা (আঃ) হলো প্রথম আদি প্রাণীর মত বা প্রথম
আদি কোষের মত। যে আদি কোষকে আল্লাহ মাটি দিযে সৃষ্টি করেছে, আর হও বলেছে অমনি হয়ে গেছে।
মুসলমানরা আরো দাবী করবে, আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের বলে যে, পৃথিবীতে প্রানের সৃষ্টি হয়েছে জড় পদার্থ থেকে, আর কুরআন বলছে পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টি করা হয়েছে একটা জড় পদার্থ
থেকে। আর কুরআনও বলছে প্রথম প্রাণী কোষকে বা আদি কোষকে সৃষ্টি
করা হয়েছে জড় পদার্থ থেকে।
এখানে আদি কোষ বা আদি প্রাণী বুঝাতে আদম
শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ হলো আদি
কোষ বা আদি প্রাণী। আর এই আদি কোষকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে; এখানে মাটি শব্দটির অর্থ হলো জড় পদার্থ। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন
বলছে আদি প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে জড় পদার্থ থেকে এবং সেই আদি প্রাণী থেকে সমস্ত প্রাণী
জগত সৃষ্টি করা হয়েছে।
আবার আধুনিক বিজ্ঞানও আমাদের বলে যে, সমস্ত জীবজগত সৃষ্টি হয়েছে বিবর্তনের মাধ্যমে একটি মাত্র প্রাণী
থেকে। যে কথাটি বিজ্ঞান আবিষ্কার
করেছে মাত্র কয়েক বছর আগে সেই কথাটি কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে ১৪০০ বছর আগে। অতএব কুরআন অবশ্যই
আল্লাহর প্রেরিত বাণী। সেটা না হলে ১৪০০ আগের কিতাবে কিভাবে লেখা থাকে বিবর্তনের কথা?
সুতরাং সব সময়ের মতো মুসলমানরা আরবী শব্দ আদম (যেটা খ্রিস্টানদের আদি মানব এডাম থেকে নেয়া হয়েছে) শব্দটির নতুন অর্থ করবে এবং আদমের নতুন অর্থ হবে একটি আদি প্রাণী বা একটি পুর্ব পুরুষ। তাহলে আদমের নতুন করা অর্থ অনুযায়ী সব জীব বা প্রাণি একটি মাত্র পুর্ব পুরুষ বা একটি মাত্র আদি কোষ থেকে বিবর্তিত হয়েছে। (ধর্ম গ্রন্থগুলোকে বিজ্ঞানময় বানানো খুব সহজ। ভূল শব্দটির অর্থ সঠিক অর্থ দ্বারা পরিবর্তন করে নাও আর বিজ্ঞানময় বানাও !)
তাহলেই কুরআন হয়ে গেল সম্পূর্ন বিজ্ঞানময়। জাকির নায়েকের মতো ধর্মপন্ডিতরা গলা উচু করে দাবি করবে, “আদম শব্দটি এসেছে মুল শব্দ আরবী ‘আদন’ থেকে (যেটি আবার এসেছে দুটো শব্দ আবাল ও মদন থেকে- আবাল+মদন=আদন), যার অর্থ একই পুর্বপুরুষ বা একই আদি কোষ, আর আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের বলে, বিবর্তন থিওরী অনুযায়ী, সব মানুষ এবং সব হমিনিডস্ এসেছে একটি মাত্র পুর্বপুরুষ থেকে আর এবাইয়োজেনেসিস অনুযায়ী সব প্রান তৈরী হয়েছে জড় বস্তু থেকে একটি মাত্র আদি কোষ তৈরীর মাধ্যমে। আবার কুরআনও বলেছে সব প্রাণ বা সব মানুষ এসেছে একটা পূর্বপুরুষ বা একটা মাত্র আদি কোষ থেকে। কুরআন এই কথাটি বলেছে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে। আধুনিক বিজ্ঞান যেটা আবিষ্কার করলো এই সেদিন, সেটা কুরআনে ১৪০০ আগে কিভাবে লেখা থাকে? অতএব এটাই প্রমানিত হয় কুরআন মহা অলৌকিক ও বিজ্ঞানময়গ্রন্থ।”
আর এভাবেই ১৪০০ বছর আগের মুহাম্মদের লেখা কুরআন হয়ে যাবে মহা বিজ্ঞানময় গ্রন্থ।
এভাবেই কুরআনের অর্থের পরিবর্তন ও সংশোধনের
মাধ্যমে কুরআনকে মুসলমানরা মহা বিজ্ঞানময় গ্রন্থ হিসেবে প্রমাণ করেই ছাড়বে।
তারা যেভাবে কুরআনের অর্থগুলোর পরিবর্তন
করে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে নতুন অর্থ করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বলে প্রচার করে, ঠিক সেভাবেই তারা ভবিষ্যতেও বিজ্ঞানের আবিষ্কার গুলোর সাথে
কুরআনের মিল দেখাতে কুরআনের বর্তমান অর্থেরও পরিবর্তন ও সংশোধন করে নিবে। তারপর দাবী করবে তাদের
ধর্মগ্রন্থ কুরআন মহা বিজ্ঞানময় ও অলৌকিক(!) গ্রন্থ।
যদিও বির্বতবাদ প্রমানিত তত্ত্ব বা থিওরী
তবুও আব্রাহামীয় ধর্মগুলোর ধারণাকে সম্পূর্ন ভুল প্রমাণ করে দেওয়ায় এই ধর্মগুলোর
ধর্মবাজেরা অনেক আগে থেকেই এর বিরোধীতা করে আসছে। সেই ধারায় মুসলমানরাও বিবর্তনবাদের বিরোধীতা
এবং বিবর্তনবাদ সম্পর্কে মিথ্যে অপ-প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু বিবর্তনবাদ
যে একটা প্রমাণিত তত্ত্ব সেটা যতই দিন যাচ্ছে ততই প্রমাণ গুলো সম্পর্কে মানুষ জানতে
পারছে ও সচেতন হচ্ছে। ফলে ধর্মবাজেরা যে
মিথ্যে প্রচার করেছে, “বিবর্তনবাদ একটা থিওরী
মাত্র এটি প্রমাণিত কোন থিওরী নয় (ফ্যাক্ট নয়)”, সেটা সবাই ধরে ফেলছে। সবাই বুঝে যাচ্ছে, যে এই সব ধর্মবাজেরা আসলে তাদেরকে মিথ্যে বলে এসেছে এতদিন। বিবর্তনবাদের ব্যাপক
প্রমাণের ফলে ধর্মবাজদের করা মিথ্যে প্রচার আস্তে আস্তে সবার সামনে উন্মোচিত হচ্ছে। আর তাই খুব বেশী দিন
বাকী নেই যখন সব মানুষ বিবর্তনবাদ সম্পর্কে জেনে যাবে । ফলে এই সব ধর্মবাজগুলোও দেখবে যে আর কাউকে
রুপকথার গল্প বলে ঘুম পাড়ানো যাচ্ছে না। তারাই আবার বিবর্তনবাদকে মেনে নেবে এবং দাবী করতে থাকবে যে বিবর্তনবাদের
কথা কুরআনে লেখা আছে (সংক্ষেপে) সেই ১৪০০ বছর আগে।
ধর্মগুলোর দ্বিমুখিতা নতুন নয়। প্রথমে কোন তত্ত্বকে
(যেটা ধর্মের বিরুদ্ধে যায়) তারা মেনে নেয় না, তারপর প্রতিবাদ করে এবং সেই
তত্ত্বের বিরোদ্ধে ব্যাপক অপ-প্রচার চালিয়ে বোকা আস্তিকদেরকে বোকা বানিয়ে রাখে। পরে যখন সেই তত্ত্বটিই
সবার কাছে বোধগম্য হয়ে উঠে এবং এর সম্পর্কে সবাই ভালোভাবে জেনে যায় তখন এই ধর্মবাজগুলোই
সেই তত্ত্বটিকে তাদের ধর্মগ্রন্থে আবিষ্কার করে। এবং প্রচার করে বেড়ায় যে, এই আবিষ্কারের কথা তাদের ধর্মগ্রন্থে বহু বছর আগেই লেখা হয়েছে।
মুসলমানরাও এরকম করে অনেক তত্ত্বকেই প্রথমে
বিরোধীতা করেছে আবার সেই তত্ত্বকেই তাদের ধর্মগ্রন্থে ১৪০০ বছর আগে লেখা আছে বলে দাবী
করেছে। এক্ষেত্রে তারা কুরআনের
আগের অর্থকে পরিবর্তন করে বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সাথে মিলে যায় এমন করে অর্থ করেছে। অর্থাৎ বিজ্ঞানের সাথে
মিল রেখে কুরআনকে পরিবর্তন ও সংশোধন করেছে। ফলে ভূল কুরআন মুসলমান কর্তৃক পরিবর্তিত ও সংশোধিত হয়ে, হয়ে উঠেছে মহা বিজ্ঞানময় অলৌকিক গ্রন্থ।
এখানে কুরআনের বিজ্ঞানময় ও অলৌকিক হবার পিছনে
কাজ করে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে সুবিধা অনুযায়ী অর্থের পরিবর্তন ও সংশোধন। কুরআনের সত্যি সত্যি বিজ্ঞানময় হয়ে উঠা এবং অলৌকিক হয়ে উঠার কোন
ভুমিকা নেই এখানে।
মুসলমানদের এ যাবত কালের কীর্তিকলাপে এটা ভবিষ্যৎবাণী
করা কোন ব্যাপারই না। এটা আমার ভবিষ্যত বাণী। এখন দেখতে হবে কত দিন পর মুসলমানরা আদমের
অর্থ পরিবর্তন করে নতুন অর্থ করে এবং দাবী করে বিবর্তনবাদ কুরআনে লেখা আছে ১৪০০ বছর আগেই ?
আপনার নিজেরই তো জ্ঞানের অভাব আছে। আগে সবটা ভালো করে জানেন।
ReplyDeleteবিগব্যাং থিওরিতে বলা হয়েছে সমস্ত মহাকাশ একসময় একটা এটমের চেয়েও ছোট ছিল। তার মানে আমাদের পৃথিবী ও বাকি মহাকাশ পুঞ্জিভূত ছিল এবং পরে উভয়কে আলাদা করা হয়েছে। আর মহান আল্লাহ কুরআন মজিদে বলে দিয়েছেন তিনি আমাদের পৃথিবী সৃষ্টির সাক্ষী রাখেন নি। বিগব্যাং হচ্ছে থিওরি আর কুরআনহচ্ছে ফেক্ট। 🙂