পৃথিবীতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে ভাববার মতো। কিন্তু অনেক মানুষ আছে যারা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ নিয়ে কিছু অপেক্ষাকৃত কম বা গুরুত্বহীন বিষয় নিয়ে মাতামাতি করে। যেমন কেউ কেউ আছে সেক্স নিয়ে খুব মাথা ব্যথা। কে কে সেক্স করলো, কিভাবে করলো, কে কে কার সাথে কার বাসায় গেলো ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার কিছু কিছু মানুষ আছে যারা নারীদের পোষাক কেমন, তারা হাটে কিভাবে, তারা কথা বলে কি ভাবে, সেসব নিয়ে চিন্তায় অস্থির হয়ে যায়। মাদের মাথা ব্যথার মূল কারণই যেন নারীদের পোষাক পরিচ্ছদ।
কিছুদিন আগেই পাঠ্য বইয়ে, বাচ্চাদের বইয়ে উড়না লেখা থাকায় নানা রকমের বিতর্ক শুধু হয়ে গেছিল। লোকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে লিখে লিখে ভর্তি করে ফেলেছিল তাদের প্রতিবাদের ভাষা। মানুষের মাথার প্রধান ব্যাথা হয়ে উঠেছিল ওই ওড়নার বিষয়টি। (যদিও হুজুগে বাঙ্গালীর হুজুগ বরাবরের মতই বেশী দিন টিকেনি!) তাদের কথা শুনে মনে হয়েছিল যেন ওড়না খুবই খারাপ একটি বিষয়। অশ্লীলতা, নোংড়া, জঘন্য একটি বিষয় হয়ে দাড়িয়েছিল বাচ্চাদের বইয়ে ওই ওড়না শব্দটি যোগ করাতে। ভাবটা এমন ওড়না যেহেতু অশ্লীল এবং জঘন্য একটি জিনিস তাই সেটিকে বাচ্চাদের পাঠ্য বইয়ে থাকাতে মান সম্মান জলে চলে যাবে অথবা পোলাপান নষ্ট হয়ে যাবে! আমার মাঝে মাঝে অবাক লাগে এদেশের মানুষের চিন্তা ধারা এতোটা প্রাচীণ কেন সেটা ভেবে!
ওড়না হলো এক প্রকারের কাপড়; একটি জড় পদার্থ। এই জড় পদার্থ মেয়েদের বুকে রাখা হয় বলেই কি সেটা অশ্লীল হয়ে গেলো? যদি তাই হয় তবে জন সম্মুখে মেয়েরা এই অশ্লীল বস্তুটি কেন পড়ে? মেয়েরা বাবা-মা, কাকা, ভাই ও প্রতিবেশীর সামনে ওড়না পড়ে। তাহলে সেটি কি অশ্লীল হয়ে যায়? যদি অশ্লীলই হয় তবে সেটা না পড়লেই তো হয়। বিষয়টি কি এমন যে, পড়লে সমস্যা নেই; তাতে অশ্লীলতাও প্রকাশ পায় না কিন্তু সেটা বাচ্চাদের বইয়ে লেখা যাবে না। কেন লেখা যাবে না? এই কথাটি কি কেউ কখনও ভেবেছে?
আসলে এদেশের মানুষের মাথায় সব সময়ই অশ্লীলতা ঘুরপাক খায়। এজন্য তারা একটি জড় বস্তুতেও অশ্লীলতা দেখতে পায়। যদি কোন মেয়ে ওড়না না পড়ে তবে প্রথমে তারা সেটা উপভোগ করে এবং তারপরে নানা সমালোচনা করা শুধু করে দেয়। গেলো গেলো দেশটা উচ্ছন্নে গেলো, যুবতীরা অশ্লীল হয়ে গেলো ইত্যাদি ইত্যাদি। যেন নারীরা বস্তাবন্দি হলেই পুরুষের কুৎসিত মন মানুষিকতা হঠাত করেই পবিত্র হয়ে যাবে। যেন পুরুষের শালীনতা কিছু জড় বস্তুর উপর সম্পূর্ণই নির্ভরশীল। তাদের মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা কুৎসিত চিন্তা ধারার জন্য যেন কিছু জড় বস্তুই দায়ী। তাদের মন মানুষিকতা এবং চিন্তা ধারার যেন কোনই ভূমিকা নেই। আছে শুধু কিছু জড় বস্তুর ভূমিকা।
অথচ এই বিকৃত মনের পুরুষগুলো একটুও চিন্তা করে দেখে না যে অশ্লীলতা জড় বস্তুর মধ্যে বাস করে না। অশ্লীলতা নির্ভর করে কুৎসিত চিন্তা ধারায়। যদি তাই হতো তবে রাস্তার পাশে কোন পাগলী মেয়ে উলঙ্গ হয়ে ঘুরাফেরা করলে তাকে পুরুষ মানুষেরা অশ্লীল দৃষ্টিতে দেখতো। একজন বাবা তার মেয়ের দিকে কখনও খারাপ দৃষ্টিতে দেখে না। বাবার সামনে মেয়ে যে পোষাকেই থাকুক না কেন। এর কারণ জড় বস্তু নয়, এর কারণ মেয়ের প্রতি বাবার দৃষ্টি ভঙ্গি। একজন ভাই কখনই তার বোনের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখে না। বোন যে পোশাকেই থাকুন না কেন তাতে ভাই কখনই অশ্লীলতা দেখতে পায় না। অথচ এই ভাইটিই যখন বাইরের কোন মেয়েছে দেখে তখন তার মধ্যে কুৎসিত চিন্তা ভাবনা মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। এখন তুলনা করে দেখুন, একজন ভাই কখনই বোনকে অশ্লীল ভাবে দেখছে না যদিও বোনটি স্বাভাবিক পোষাকে রয়েছে। অপরদিকে সেই একই পোষাকের ভিন্ন কোন মেয়েকে দেখলেই তার মধ্যে কুৎসিত চিন্তা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। তাহলে বোন এবং রাস্তার মেয়েটির মধ্যে পার্থক্যটি কোথায়? কাপড়ে, জড় বস্তুতে? নাকি ওই ভাইটির মনে?
যদি বিষয়টি জড় বস্তুর উপরেই নির্ভরশীল হতো তবে কিন্তু সেই ভাইটি তার বোন এবং বাইরের মেয়েটির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এক রকমই হতো। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয় না। যদিও বোনটি এবং বাইরের মেয়েটি একই রকম পোশাক পড়ছে। এটা ঘটার প্রধাণ কারণটি হলো ওই ভাইটির দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তা ধারা। যদি ওই একই ছেলে পৃথিবীর সব মেয়েকে নিজের বোন বা মায়ের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখে তবে কিন্তু সে কোন মেয়ের মধ্যেই অশ্লীলতা খুজে পেতো না! যদি একজন পুরুষ নারীদেরকে প্রথমে খাদ্যবস্তু বা কামনার বস্তু না ভাবে তবে কখনই সে কোন মেয়ের মধ্যেই অশ্লীলতা দেখবে না।
এটার প্রমাণ পাওয়া যায় রাস্তা ঘাটে চলাফেরা করার সময়েই।
একই
রাস্তায় কিছু মানুষ চলার সময় যদি তাদের সামনের মেয়েটি আধুনিক সাজে আসে তবে একেকজন পুরুষ একেক রকম আচরণ করে। একজন বৃদ্ধ বয়সের পুরুষ সেই আধুনিক মেয়েটিকে স্বাধারণত খারাপ দৃষ্টিতে দেখে না (যদিও ব্যতীক্রম আছে)। কিন্তু মধ্যবয়স্ক কোন পুরুষ কিন্তু কিছুটা কুৎসিত দৃষ্টিতে দেখে। আবার একই স্থানে দাড়ানো কোন যুবক কিন্তু সেই মেয়েটিকে দেখবে প্রেমিকার দৃষ্টিতে। আর যদি কোন বালক দেখে তবে শুধু সুন্দর্য্যটুকুই দেখবে, যাতে কোন অশ্লীলতা থাকবে না।
অর্থাৎ একই স্থানে একই পরিবেশে একেকটা মানুষের মন মানুষিকতা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কাজ করছে। এখানে মেয়েটা কি পোষাক পড়ছে সেটি কিন্তু মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয় হচ্ছে সামনে দাড়ানো পুরুষ মানুষটির মন মানুষিকতা কিভাবে কাজ করে। আর তাই বলা যায় অশ্লীলতা শ্লীলতা এসব মানুষের মনের ব্যাপার। যদি আপনার মন কুৎসিত না হয় তবে কোন মেয়ে কোন ধরণের জড় বস্তু পড়ছে সেটি আপনার কাছে মুখ্য বিষয় হবে না। আপনি দেখবেন আপনার মন মানুষিকতা যেমন ঠিক সেরকম করেই। কেউ ওড়না পড়ুক আর কেউ না পড়ুক তাতে আপনার কিছু আসবে যাবে না। যদি প্রত্যেককে আপনি প্রথমে মানুষ মনে করেন তবে আপনার কাছে পোশাক কোনই ভুমিকা রাখবে না শালীনতা বা অশালীনতার ক্ষেত্রে।
আমাদের চারপাশে আমরা যখন আপনজনদের দেখি তখন কিন্তু তাদেরকে আমরা প্রথমে মানুষ হিসেবে দেখি। দেখি মায়া মমতা দিয়ে। এজন্যই মা, খালা বা বোন যে পোশাকেই থাকুক না কেন আমাদের কাছে অশ্লীল মনে হয় না। অথচ একই পোশাকের ভিন্ন নারীকে দেখলে আমাদের মধ্যে মানুষ ভেদে কম বেশী অশ্লীলতা কাজ করে। এর কারণ আমাদের মন মানুষিকতা আপনজনদের ক্ষেত্রে পবিত্র হলেও বাইরের কারো জন্য পবিত্র নয়। এজন্যই অপরিচিতকে আমরা কুৎসিত দৃষ্টিতে দেখি। অথচ আপনজনদের দিকে কখনই কুৎসিত দৃষ্টিতে তাকাই না।
অর্থাৎ এই পুরো প্রক্রিয়াটিই কাজ করে ব্যাক্তির মন মানুষিকতা এবং নিজস্ব চিন্তা ধারার উপর। এজন্যই যখন ইউরুপ আমেরিকার মেয়েগুলো আধুনিক স্মার্ট পোশাকে পুরুষদের সামনে ঘুরাফেরা করে তখন তাদের মধ্যে কোন অশ্লীলতা কাজ করে না। কিন্তু আমরা যখন সেসব আধুনিক স্মার্ট মেয়েদের দেখি তখন কিন্তু আমাদের মধ্যে অশ্লীলতা ঠিকই কাজ করে। কারণ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ওদের মতো অতটা উন্নত নয়। আমি অনেককেই বলতে শুনেছি যখন এদেশের মানুষ ইউরুপে যায় তখন প্রথম প্রথম তারাও সেসব আধুনিক স্মার্ট মেয়েদের দিকে কুৎসিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অথচ সময়ের সাথে সাথে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও ওদের মতই নিষ্কৃয় হয়ে যায়।
এর কারণ শ্লীলতা বা অশ্লীলতা কখনই কোন পোশাক তথা জড় বস্তুর আকৃতি প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল নয়। এগুলো সম্পূর্ণই মানুষের ব্যক্তিস্বত্বার উপর নির্ভরশীল। মানুষের চিন্তার সীমাবদ্ধতার উপর নির্ভরশীল। নিজের কুৎসিত মন মানুষিকতার জন্য অন্য কোন মানুষকে দায়ী করা বা কোন বস্তুকে দায়ী করার কোনই কারণ নেই। কিন্তু এদেশের মানুষ প্রাচীণ আমলের মিথ্যা ধ্যান ধারণার জন্য মনে করে শ্লীলতা বা অশ্লীলতা বুঝি পোশাকে বা জড় বস্তুতে নির্ভর করে। আসলে এই চিন্তা ভাবনাটি প্রাচীণ কালের মানুষের ভ্রান্তিকর ধ্যাণ ধারণার প্রতিফল। এর সাথে বাস্তবের শ্লীলতা বা অশ্লীলতার কোনই সম্পর্ক নেই। যেদিন এদেশের মানুষ আরো বেশী সভ্য হবে তখন মানুষ কিছু জড় বস্তুর উপর নির্ভর করে তাদের মনের কুৎসিত চিন্তাগুলোর প্রতিফলন ঘটাবে না। মানুষকে যেদিন মানুষ রুপে দেখবে, কোন খাদ্যবস্তু বা কামনার বস্তু হিসেবে দেখবে না তখন আর পোশাকে অশ্লীলতাও দেখবে না।
আমাদের দেশের মানুষগুলোকে শৈশবেই শেখানো হয় যে শালীনতা পোশাকের উপর নির্ভর করে। তাদেরকে শেখানো হয়, যারা বড় বড় পোশাক পড়ে তারাই শালীন। আর যারা ছোট ছোট পোশাক পড়ে তারা অশালীন। ফলে সেই শিশুটি এই ভ্রান্ত ধারণা নিয়েই বড় হয়। ফলে যখনই সে কোন ছোট পোশাকের নারীকে দেখে তখন সে ধরেই নেয় ওই নারীটি অশালীন। ফলে তার কাছে ছোট পোশাকের নারীকে অশ্লীল বলে মনে হয়। এবং মাথার মধ্যে খুব সহজেই কুৎসিত চিন্তা ধারা খেলে যায়। এর জন্য যে সেই নারীর ছোট পোশাক দায়ী নয় সেটা আগেই প্রমাণ দিয়েছি। আসলে এদেশের মানুষকে ভূল শিক্ষা দেওয়া হয় বলেই কিন্তু মানুষ জড় বস্তুতে শালীনতা অশালীনতা খুজে পায়। যদি সেসব মানুষকে শিক্ষা দেওয়া হতো যে, নারীরাও তোমাদের মতই মানুষ। তোমাদের যেমন নিজেকে সুন্দর করে সাজানোর অধিকার আছে ঠিক সেভাবে নারীরও অধিকার আছে তাকে সুন্দর করে সাজানোর। তুমি পুরুষ হয়ে যেমন সবার কাছে স্মার্ট ও সুদর্শন করে নিজেকে উপস্থাপন করতে চাও ঠিক একই ভাবে একজন নারীও চায় অন্যের কাছে স্মার্ট ও সুন্দর করে উপস্থান করতে। আসলে নারী পুরুষের প্রকৃতি এক রকম না হলেও তাদের চাওয়া পাওয়ার ধরন একই রকম। পুরুষ যেমন মানুষ ঠিক একই ভাবে নারীও মানুষ। তাদের মধ্যে আসলে তেমন বড় কোন পার্থক্য নেই যা তাদের একজনকে অন্যজন থেকে শ্রেষ্টত্ব দান করে। আর তাই প্রতিটি পুরুষের মতো নারীরও অধিকার আছে নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করার।
পৃথিবীর সব মানুষই নিজেকে সুন্দর করে অন্যের কাছে উপস্থাপন করতে চায়। কারণ মানুষ সুন্দর্যতা পছন্দ করে জন্মগত ভাবেই। আর সুন্দর্যতা প্রকাশে কোন অশ্লীলতা নেই। এই স্বাধারণ কথাটিই মানুষ বুঝতে চায় না। আমাদের সবারই কিন্তু সুন্দর নারী বা পুরুষকে দেখতে ভালো লাগে। কারণ মানুষ সুন্দর্য্যতাকে পছন্দ করে। এজন্যই পুরুষের মতো নারীরও অধিকার রয়েছে এমন পোশাক পড়া যা তাকে সুন্দর করে তুলে। আর এতে কোন শালীনতা বা অশালীনতার কিছু নেই। অনেককে বড় পোশাকে ভালো লাগে আবার অনেককে ছোট পোশাকে ভালো লাগে। অনেকের আবার বড় পোশাক পড়তে ভালো লাগে আবার অনেকের ছোট পোশাক পড়তে ভালো লাগে। এটা তার ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার। এতে যদি কারো মনে শালীনতার বা অশালীনতার প্রশ্ন দেখা দেয় তবে সেটা তার সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত চিন্তা ধারার বহিঃপ্রকাশ। আর এটাতে পোশাক পরিধানকারীর কোনই ভূমিকা নেই। এজন্য কুৎসিত মন মানুষিকতার এবং ভ্রান্তিকর মন মানুষিকতার মানুষের কাছে মনে হতে পারে যে অশ্লীলতা বুঝি সেই নারীটির পোশাকের উপর নির্ভর করছে। তবে বলতে হয় সেই পুরুষ মানুষটির চিন্তা ধারা বা ধ্যাণ ধারণাটি গড়ে উঠেছে ভূল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ফলে সে পোশাকে শ্লীলতা বা অশ্লীলতা দেখতে পাচ্ছে। অপরদিকে যে ভালো মন মানুষিকতা বা সঠিক ধ্যান ধারণা নিয়ে বড় হয়েছে তার কাছে পোশাক কোন বড় ব্যাপার হিসেবে দেখা দিচ্ছে না। কারণ সে জেনে এসেছে বা শিখেছে শালীনতা এবং অশালীনতা কখনই পোশাক আশাক বা জড় বস্তুর উপর নির্ভর করে না। এটি মানুষের নিজস্ব ধ্যাণ ধারণা এবং শিক্ষা পদ্ধতির উপর নির্ভর করে। ফলে সে নারীর পোশাকে শালীনতা অশালীনতা দেখতে পায় না। বরং সে শালীনতা বা অশালীনতা দেখতে পায় মানুষের নিজস্ব আচার আচরণের উপর। জড় বস্তুর উপর নয়।
এদেশের প্রতিটি মানুষই শৈশব থেকে দেখে এসেছে তার আপনজনদের অনেকেই ওড়না পড়েছে। সে কখনই তাতে অশ্লীলতা দেখতে পায়নি। সে তার আপনজনদের ওড়নাকে আর দশটা পোশাকের মতই জড় বস্তু হিসেবে দেখেছে। কিন্তু সে যখন বাইরের মেয়েদের গায়ে ওড়না দেখেছে তখন সে সেখানে অশ্লীলতা বা কামনা দেখেছে। এটা দেখে তার কাছে মনে হতেই পারে যে ওড়না আসলে খারাপ কোন কিছু্। আসলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটিই দাড়িয়ে আছে পোশাকের উপর শালীনতা অশালীনতা নির্ভর করে এর উপর ভিত্তি করে। ফলে একটা শিশু যখন দেখে তার আশে পাশের মেয়ে মানুষগুলো কোন বিশেষ পোশাকের উপর বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে তখন তারা ধরেই নেই যে ওই পোশাকের একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে। আর সে যখন শৈশব থেকেই লক্ষ করে বড় হয় এটা দেখে যে, ওড়নাকে মেয়েরা বিশেষ গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে। বিশেষ করে সে দেখে যে মেয়েরা ওড়নার ব্যবহার করছে অশালীনতা তথা অশ্লীলতার হাত থেকে বাঁচতে তখন সে ধরেই নেয় ওড়নার ব্যবহারের মধ্যে অশ্লীলতার ব্যপার আছে। এভাবে একটি পোশাক হয়ে ওঠে শালীনতার বা অশালীনতার প্রতীক হিসেবে। এজন্য এদেশের শিশুরা বড় হতে হতে ধরেই নেয় ওড়নার সাথে অশালীনতা বা অশ্লীনতার ওতপ্রত সম্পর্কে রয়েছে। ফলে তাদের মধ্যে ওড়নার মতো একটি জড় পদার্থের প্রতি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। এর ফল হিসেবেই যখন পাঠ্যবইয়ে ওড়নার মতো একটি নিরীহ জড় বস্তুর কথা লেখা হয় তখন এক ধরণের মানুষ ধরে নেয় শিশুকে অশ্লীলতা শেখানো হচ্ছে। আর তাই তারা রেঁ রেঁ করে উঠে। অথচ এটা যদি তারা বুঝতো যে প্রতিটি শিশুই বড় হতে হতে ওড়না দেখেই বড় হয়। তারা ওড়নাতে কোনই অশ্লীলতা দেখতে পায় না। বরং পরিবেশ এবং প্রাচীণ ধ্যান ধারণার আচার আচরণগুলো দেখে দেখেই সে বড় হয়ে ধরে নেয় এগুলোতে অশ্লীলতার বিষয় আছে। আর এর ফলেই মানুষগুলো পাঠ্যবইয়ে ওড়না শব্দটিতে অশ্লীলতার গন্ধ পেয়েছে। অথচ পাঠ্য বইয়ে এই শব্দটি থাকলে বরং শিশুরা বুঝতে পারতো এটি শুধু একটি শব্দ মাত্র। আর এতে কোনই অশ্লীলতার বালাই নেই। এটি একটি জড় বস্তু যার শালীন বা অশালীন হবার ক্ষমতা নেই। যেহেতু শালীনতা বা অশালীনতা মানুষের মনের গভিরে থাকা চিন্তা ধারা এবং ধ্যাণ ধারণার সমষ্টির ফলে তৈরি হয় তাই এর সাথে জড় বস্তু ওড়নার কোনই সম্পর্ক নেই। এটি পুরুষ এবং নারীর প্রাচীণ ধ্যান ধারণাময় চিন্তা ধারার প্রতিফলন মাত্র। এর সাথে বেচারা জড় ওড়নার কোনই সম্পর্কে নেই। তাই একটি ওড়না শালীন বা অশালীন কোনটাই নয়। আর তাই বইয়ে এই শব্দটি থাকাতে কোন সমস্যাই থাকার কথা নয়। বরং শিশু একটি পরিচিত শব্দ দেখে তাদের শিখতে সুবিধা হতো।
অথচ একদল মানুষ এই শব্দটিতে শ্লীলতা অশ্লীলতার বিষয়গুলো এনে একে অশ্লীল হিসেবে দেখাতে চাচ্ছে। তারা বুঝাতে চাচ্ছে ওড়না মানেই খারাপ কিছু। আর তাই এটি শিশুদের শেখানো উচিত নয়। ভাবটা এমন যেন পাঠ্য বই থেকে ও-তে ওড়না শব্দটি উঠিয়ে দিলেই শিশুরা আর ওড়নার মতো অশ্লীল শব্দটি শিখবে না। কথাটা অজ্ঞতাপূর্ণ এবং মূর্খতাপূর্ণ চিন্তা ভাবনার মানুষদের। বরং যদি বইয়ে এই শব্দটি থাকতো তবে শিশুরা জানতে পারতো এবং তারা শিখতে পারতো যে ওড়না কোন খারাপ বিষয় নয়। আসলে প্রাচীণ ধ্যাণ ধারণাগুলো মানুষকে অন্ধ করে রাখে বলেই মানুষের চিন্তাধারার মধ্যে অশ্লীলতা বাসা বাধে। তখন তারা জড় বস্তুতেও অশ্লীলতা দেখতে পায়। অথচ তারা তাদের মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা অশ্লীলতাকে দেখতে পায় না। পাঠ্যবই থেকে ওড়না শব্দটি তুলে নেওয়ায় কি হলো? মানুষের মনের অশ্লীলতা কি ধূয়ে মুছে পরিস্কার হয়ে গেলো? নাকি শিশুরা শিখলো ওড়না হলো অশ্লীল কিছু তাই এই শব্দটি শেখা উচিত নয়; ওড়না থেকে দুরে থাকতে হবে;
এসব? ফলে কি হবে? এসব শিশু ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে বড় হবে। তারা ধরেই নিবে ওড়নাতেই অশ্লীলতা আছে। ফলে যখন সে ওড়নার দিকে তাকাবে সে সেখানে অশ্লীলতা দেখতে পাবে। তার মনে হবে এই বস্তুটিতেই অশ্লীলতা লুকিয়ে আছে। আর এরফলে সে কখনই বুঝতে পারবেনা যে তার মনেই লুকিয়ে আছে অশ্লীলতা। অশ্লীলতা কোন বস্তুর মধ্যে থাকে না বরং অশ্লীলতা থাকে মানুষের মনে, মানুষের চিন্তা ধারায় সেটা সে জানতেই পারবে না। আর সেও কুৎসিত মন মানুষীকতা নিয়ে বড় হবে।
ভ্রান্তিময়
চিন্তা ধারার মানুষগুলোর মতো সেও বিশ্বাস করতে শিখবে যে ধর্ষণের জন্য দায়ী ধর্ষিতা। ধর্ষক নয়। মেয়েদের পোশাকে শালীনতা আছে তাই যদি কেউ অশালীন পোশাক পড়ে তবে তাকে ধর্ষণ করাই উচিত। এসব ভ্রান্তিকর মিথ্যা তথ্যগুলো তারাও বিশ্বাস করবে সম্পূর্ণই অন্ধের মতো। সেতো শিখছে শালীনতা মানুষের মনে নয় বরং মানুষের পোশাকেই থাকে। তবে সে ভ্রান্ত ধারণাগুলো থেকে বের হবে কিভাবে?
আমি এই ব্লগারের আম্মারে চুদবার চাই। শালি আমারে দুধ দেখায় মনে খারাপ চিন্তা জাগায়, বাড়াটা খাড়া করে দিছে।
ReplyDeleteনাস্তিকদের কাছে প্রশ্ন!
ReplyDeleteআমার মেয়ের (৫ বছর) গত ১১/০১/২০২১ তারিখে একটা স্বর্ণের আংটি লুজ হওয়ায় হাত থেকে খুলে হারিয়ে যায়। সারাদিন অনেক জায়গায় ঘোরাফেরা করেছে। তাই কোথায় খুলে পড়েছে অনেক খুজেও পাওয়া যায় নি। মনে খুব কষ্ট নিয়েই মেয়ে রাত্রে ঘুমিয়ে পড়েছে। কারন আংটিটা অনেকদিন ধরে চাওয়ার পর মাত্র কয়েকদিন আগে বানিয়ে দিয়েছি। আমরাও খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম মেয়ের মন খারাপ দেখে। যাইহোক ফজরের ওয়াক্তে হঠাৎ আমার মেয়ে ঘুম থেকে উঠে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে উঠছে আম্মু আম্মু আমার আংটি পেয়েছি। ওর আম্মু জিজ্ঞেস করছে কোথায় তোমার আংটি মামুনি? মেয়ে বলছে আল্লাহ আমাকে স্বপ্নে দেখিয়েছেন খাটের নিচে আংটি পড়ে আছে। তখনি খুঁজে দেখা গেল সত্যিই খাটের নিচে আংটিটি পড়ে আছে। এই ঘটনায় আল্লাহর প্রশংসা কিভাবে করব বুঝে পাচ্ছি না। আপনারা হলে কি করতেন ????