Translate

Search This Blog

বিশেষ সতর্কবার্তাঃ

এই ব্লগটি নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সন্দেহবাদী, মুক্তমনা এবং স্বাধীনচেতা মানুষদের জন্য। যারা যেকোন বিষয়ের সমালোচনা সহ্য করার মত ক্ষমতা রাখে। যদি কোন ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিক এই ব্লগটিতে আসে তবে তার ধর্মানুভূতি নামের অদ্ভূত দূর্বল অনিভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্লগ লেখক দায়ী থাকবে না। ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিকদের নিজ দায়িত্বে তাদের দূর্বল ধর্মানুভূতিকে সংরক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে। কারো ধর্মানুভূতি নামের অযৌক্তিক অনুভূতি আহত হবার জন্য কোন ক্রমেই ব্লগার বা লেখককে দায়ী করা যাবে না। যদি কোন অতি দুর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগে ভূল করে ঢুকে পরেন এবং তিনি তার অনুভূতিকে দূর্বল ভাবেন অর্থাৎ যিনি তার ধর্মের উপযুক্ত সমালোচনা সহ্য করতে অপারগ, তাকে বিনীত ভাবে এই ব্লগটি থেকে প্রস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পরেও যদি কোন দূর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগটিতে ঘুরাফেরা করেন এবং তার ফলে তার দূর্বল ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হন তবে কোন ক্রমেই এবং কোন ক্রমেই ব্লগের মালিক, 'আমি নাস্তিক' দায়ী থাকবে না।

Friday, February 10, 2017

কিভাবে ধর্মগ্রন্থগুলোকে বিজ্ঞানময় বানাবেন? ধর্মগ্রন্থগুলোকে বিজ্ঞানময় বানিয়ে আপনিও আস্তিক মহলে মহান বিজ্ঞানীর খেতাব পেতে পারেন! পর্ব ১


পুরো পৃথিবী জুরেই আস্তিকরা তাদের ধর্মগ্রন্থগুলোকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে ব্যতিব্যস্ত থাকে। সব ধর্মের আস্তিকদেরই প্রধাণ লক্ষ হচ্ছে কিভাবে তাদের ভূলে ভরা ধর্মগ্রন্থকে বিজ্ঞানময় বানাতে পারে। এসব করতে যেয়ে তারা দিনরাত এক করে ফেলছে। এমন কোন অপচেষ্টা নেই যা তারা করে না তাদের ধর্মগ্রন্থগুলোকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে। ধর্মগ্রন্থকে বিজ্ঞানময় বানিয়ে অনেক আম জনতা রাতারাতি মহা বিজ্ঞানী বনে গেছেন অন্ধবিশ্বাসী আস্তিকদের কাছে।

আমাদের আজকের আলোচনায় আমরা দেখাবো একজন আম আদমী কিভাবে কুরআনের মতো ভূলে ভরা প্রাচীন ধ্যান ধারণার একটি গ্রন্থকে বিজ্ঞানময় বানাতে পারে। এবং কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানিয়ে কিভাবে একজন আম পাবলিক কুসংস্কারাচ্ছন্ন আস্তিকদের কাছে রাতারাতি বিজ্ঞানীর খেতাব পেতে পারে!
কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানিয়ে মরিস বুকাইলী নামের এক চিকিৎসক কিভাবে মহা বিজ্ঞানী হয়ে মুসলমানদের কাছে অমর হয়ে আছে সেটা কারো অজানা নয়। আজ মুসলমানরা মরিস বুকাইলী নামের এক চিকিৎসককে পারতপক্ষে পুঁজা করতে ছাড়ে না। তাদের কাছে মরিস বুকাইলীই হলো সর্বকালের শ্রেষ্ট বিজ্ঞানী। কিন্তু দুষ্টো লোকেরা বলে মরিস বুকাইলী হলো আরবের রাজ পরিবারের পারিবারিক ডাক্তার। এবং তাকে বিশাল অংকের টাকা দেওয়া হয়েছে কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে।  
অপরদিকে আরেকজন সাধারণ মানের চিকিৎসককে মুসলমানরা মহা বিজ্ঞানীর আসনে বসিয়ে দিয়েছে। সে আর কেউ নয় আমাদের বহুল পরিচিত হযরত জাকির নায়েক। জাকির নায়েকের ভক্ত কুল পারলে জাকির নায়েককে “সাল্লেল্লাহে আলাইহেস সালাম অথবা "রাজিয়াল্লাহে তায়ালা আনহো" উপাধীতে ভূসিত করে। মুসলমানদের কাছে জাকির নায়েকই হলো বর্তমানের শ্রেষ্ট বিজ্ঞানী। অন্ধবিশ্বাসী কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুসলমানদের কাছে জাকির নায়েক হলো বিজ্ঞানীদের মধ্যে সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত বিজ্ঞানী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে জাকির নায়েক কোন বিজ্ঞানী নয়। সে একজন তৃতীয় শ্রেণীর সাধারণ এমবিবিএস ডিগ্রি ধারী চিকিৎসক। সে বিজ্ঞানের কিছুই জানে না শুধু মাত্র চিকিৎসা বিদ্যা বাদে। আর বিজ্ঞানের অতি সামান্য জ্ঞান রাখা এই মানুষকেই শ্রেষ্ট বিজ্ঞানী ভেবে বসে আছে মুসলমান আস্তিকরা।
হালের বাংলাদেশের এক অখ্যাত এবং বিজ্ঞানে জ্ঞানহীন এক সাধারণ মানুষকে মহা বিজ্ঞানী বানানো হচ্ছে। সে কোন ডিগ্রীধারী বিজ্ঞানী নয়। সে বিজ্ঞান শিখেছে জাকির নায়েক বা মরিস বুকাইলীর মতো বিজ্ঞান না জানা মানুষদের কাছ থেকে। এবং অপবিজ্ঞানের ধারক বাহক ক্রিয়েশনিস্টদের কাছে থেকে। যারা বিজ্ঞানকে ভূল ভাবে মানুষের কাছে উপস্থাপন করে বিজ্ঞানের ভূল বের করার চেষ্টায় দিন রাত অতিবাহিত করে। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে যে ব্যক্তি বিজ্ঞান শিখতে ডাক্তার বা অপবিজ্ঞানের ধারক বাহকদের কাছে সরনাপন্ন হয় সে কতটুকুই বা বিজ্ঞান শিখবে? অথচ বিজ্ঞান না জানা এসব আম পাবলীকই মুসলমান আস্তিকদের কাছে বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীর তকমা পেয়ে থাকে। বিজ্ঞানের ভালো জ্ঞান না রেখেই বিজ্ঞানীর খেতাব পাবার সহজ উপায় হচ্ছে ভূলে ভরা কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানো। ঠিক এই পদ্ধতি অবলম্বন করেই জনাব মুহাম্মদ আরিফ আজাদ নামের এক বিজ্ঞানের জ্ঞানহীন মানুষ আজ বাংলার মুসলমানদের কাছে মহা বিজ্ঞানী হয়ে উঠেছে। তার বই প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ বইটি নিয়ে বঙ্গের মুসলমানকুল মহা আস্ফালন শুরু করে দিয়েছে।
ভাবছেন মরিস বুকাইলী বা জাকির নায়েক অথবা অখ্যাত আরিফ আজাদ বিজ্ঞানী না হয়েও কিভাবে মহা বিজ্ঞানীর খেতাব পেলো? আপনি ভাবছেন তারা বিজ্ঞানের মহা জ্ঞান রাখে বলেই তারা মহা বিজ্ঞানীর খেতাব পেয়েছে?
মোটেও তা নয়। তাদের বিজ্ঞানের জ্ঞান আপনার মতো সাধারণ মুসলমানের চেয়ে বেশী নয়। আপনিও কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে মহা বিজ্ঞানীর তকমা পেতে পারেন। সাধারণ আম পাবলিক থেকে হয়ে উঠতে পারেন মহা বিজ্ঞানী। আপনাকে শুধু কষ্ট করে কুরআনের মতো ভূলে ভরা প্রাচীন ধ্যান ধারণার একটি বইকে বিজ্ঞানময় বানাতে হবে। ভাববেন না আপনি সেটা পারবেন না। যদি মুরিস বুকাইলি বা জাকির নায়েক অথবা আপনার অতিনিকটের আরিফ আজাদ যদি বিজ্ঞানের সামান্য জ্ঞান রেখে কুরআনের মতো একটি প্রাচীণ ধ্যান ধারণার ভূলে ভরা গ্রন্থকে বিজ্ঞানময় বানাতে পারে তবে আপনিও পারবেন কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে। শুধু কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে আপনাকে। তাহলেই আপনি কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানিয়ে নিজেকে মহা বিজ্ঞানীর আসনে উন্নিত করতে পারবেন। শুধু চাই একটু ধৈর্য্য এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে সামান্যমত জ্ঞান। আপনি এজন্য জাকির নায়েক বা মরিস বুকাইলির লেকচার বা বই পড়তে পারেন। অথবা কিছুদিন ক্রিয়েশনিস্টদের ওয়েব সাইট ঘাটাঘাটি করতে পারেন। এতে করে আপনি যে বিজ্ঞানের অর্থাৎ অপবিজ্ঞানের জ্ঞান লাভ করবেন তাতেই আপনি কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে পারবেন। ইউটিউব থেকে কতগুলো ক্রিয়েশনিস্ট দ্বারা উৎপন্ন ভিডিও দেখে নিতে পারেন। এতে করেই আপনার বিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন সম্পন্ন হবে কুরআনের মতো একটি গ্রন্থকে বিজ্ঞানময় বানানোর জন্য।
এবার আপনি কিছু পদ্ধতি অক্ষরে অক্ষরে অনুসরন করুন। কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর জন্য প্রথমেই একটি কুরআনের আয়াত নির্বাচন করুন যা আধো আধো বুলি প্রকাশ করে। অর্থাৎ আয়াতটি এমন হতে হবে যে তা দিয়ে ভাষা ভাষা কোন কিছু প্রকাশ করে।
এক্ষেত্রে আপনি আগে ভাগেই বিজ্ঞানের কোন বিষয়কে নির্বাচন করতে পারেন। যেমন ধরুন আইস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ। এখন আপনি একটু জাকির নায়েকের লেকচার বা মরিস বুকাইলির বই দেখে এ সম্পর্কিত কিছু কথা পড়ে নিলেন। এতে যদি আপনি যথেষ্ট ধারনা না পান তবে ক্রিয়েশনিস্টদের ওয়েবসাইটে গিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করে আপেক্ষিকতা বিষয়ে কিছু জ্ঞান লাভ করলেন। ব্যস আপনার আপেক্ষিকতার মতো বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা সম্পন্ন হলো। এবার আপনি কুরআনের এমন কিছু আয়াত বেছে নিন যা দিয়ে আপনি কুরআনকে আপেক্ষিকতার সাথে মিল দেখাতে পারেন। এক্ষেত্রে আপেক্ষিকতার একটি বিষয় সময়কে বেছে নিন। এবার কুরআন ঘেটে দেখুন 'সময়' সম্পর্কিত কোন আয়াত আছে কিনা। ধরুন খুজতে খুজতে আপনি পেয়ে গেলেন কুরআনের সূরা আল মা'আরিজ–এর ০৪ নং আয়াতটি। যেখানে বলা হয়েছে,
"ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহর দিকে আরোহণ করে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ (তোমাদের হিসাব মতে) পঞ্চাশ হাজার বছর।"
আয়াতটি পড়েই আপনার মাথায় বিদ্যুৎ ঝলক খেলে গেলো। আপনার মনে পড়লো আপনি জাকির নায়েক বা মুরিস বুকাইলির বই পড়ে নাকি ক্রিয়েশনিস্টদের লেখা পড়ে আপনি জেনেছেন যে আপেক্ষিকতা নামের থিউরীটিতে সময় নিয়ে কি জেনো বলা হয়েছে। আপনি আবার সেই লেখাটিকে খুজে বের করলেন। আপনি আবার করে দেখলেন যে সময় নিয়ে আপেক্ষিকতায় কি বলা হয়েছে? সেখানে আপনি পেলেন দুই মাধ্যম যদি ভিন্ন গতিতে থাকে তবে তাদের একজনের চেয়ে অন্য জনের সময় ভিন্ন হবে। যার গতি বেশী থাকবে তার কাছে সময় স্লো হয়ে যাবে।
ব্যস্ পেয়ে গেলেন কুরআন বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানোর হাতিয়ার। কুরআন বলেছে আল্লাহর এক দিন সমান মানুষের হাজার বছর। অপরদিকে বিজ্ঞানও বলেছে ভিন্ন গতির দুইজনের কাছে সময় ভিন্ন হয়। ব্যস্ বসে গেলেন কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে।
এখন কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে আপনাকে প্রথমে ক্রিয়েশনিস্টদের কাছ থেকে শেখা কিছু বিজ্ঞানের জ্ঞান ফলাতে হবে। যেমন ধরুন আপনি বললেন, একজন লোক যদি পৃথিবীতে থাকে এবং একজন লোক যদি একটি স্পেস শীপ নিয়ে আলোর গতিতে গতিশীল থাকে তবে স্পেসশীপের লোকটি যখন বছর ভ্রমন করে পৃথিবীতে আসবে তখন সে দেখতে পাবে পৃথিবীতে তখন ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। (এখানে লক্ষ করুন আপনি এমন কিছু শব্দ নিবেন যার সাথে কুরআনের আয়াতের শব্দের সাথে মিলে যায়। যেমন কুরআনের আয়াতটিতে পঞ্চাশ হাজার বছরের কথা বলা হয়েছে আর তাই তার সাথে আপনি পঞ্চাশ বছরটি দিবেন। এটিই হলো কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর প্রধাণ হাতিয়ার।)
যখন আপনি পৃথিবীতে আসলেন তখন আপনি এসে দেখলেন আপনার বয়স মাত্র ২১ (যেহেতু আপনি ১৮ বছরে ভ্রমনে বের হয়েছেন) অপরদিকে আপনার ভাইয়ের বয়স ৬৮ (৫০+১৮) অর্থাৎ আপনার বয়স মাত্র বছর বেড়েছে অপরদিকে আপনার ভাইয়ের বেড়েছে ৫০ বছর। অর্থাৎ আপনার কাছে যা বছর সেটাই আপনার ভাইয়ের কাছে ৫০ বছর। দেখলেন কিভাবে আপেক্ষিকতার কথাটি আপনার বর্ণিত কুরআনের ওই আয়াতটির সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে? আপনার বর্ণিত কুরআনের আয়াতে বলা হয়েছে যেযা আল্লাহর কাছে দিন সেটাই মানুষের কাছে ৫০ হাজার বছর। অপরদিকে ক্রিয়েশনিস্টদের দেওয়া আপেক্ষিকতার বিজ্ঞানেও আপনি পাচ্ছেন যে , আলোর গতিতে ছুটে চলা মানুষের কাছে বছর সময়টা পৃথিবীতে বসে থাকা মানুষের কাছে ৫০ বছর। এটিই হলো ৫০ সংখ্যাটির মাহাত্ত।
আপেক্ষিকতার থিউরীতে আসলেই এসব দাবী করা হয়েছে কিনা সেটি অন্ধবিশ্বাসী আস্তিকরা ঘুনাক্ষরেও খোজ নিয়ে দেখবে না সেটা  আপনি নিশ্চিত থাকুন। তারা শুধু দেখবে আপনি কুরআনকে বিজ্ঞানময় কিতাব বানাতে পারছেন কিনা সেটা। আপনি আপেক্ষিকতা বললেন নাকি কুরআনের কথার সাথে বিজ্ঞানকে ভূল ভাবে উপস্থাপন করলেন সেটা নিয়ে মুসলমান আস্তিকদের মাথা ব্যাথা নেই। তারা সত্য মিথ্যা যাচাই করেও দেখবে না। সুতরাং আপনার বলা কথাটি আসলেই বিজ্ঞানের কথা কিনা অথবা আপনার করা দাবীটির কথা আসলেই কুরআনে আছে কিনা সেটা দেখার মতো ধৈর্য্য মুসলমান আস্তিকদের নেই। তারা শুধু দেখবে কুরআন বিজ্ঞানময় গ্রন্থ হয়েছে কিনা। আর দেখেই সুবাহানআল্লাহ, আলহাম্দুলিল্লাহ ইত্যাদি শব্দ বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলবে। কুরআন আর বিজ্ঞানের আসলেই কোন মিল আছে কিনা সেটা তারা খতিয়ে দেখবে না সেটা আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। আপনার উদ্দেশ্য জ্ঞানী মহলের কাছে সম্মান পাওয়া নয়। বরং আপনার উদ্দেশ্য মূর্খ অজ্ঞ কুসংস্কারাচ্ছন্নদের কাছে সম্মান পাওয়া। সেটা পাবেন আপনি নিশ্চিত থাকেন।
যদিও জ্ঞানী মহল থেকে আপনি ভন্ড বা মিথ্যাবাদী প্রতারক খেতাব পাবেন। তবে সেটা নিয়ে আপনার না ঘাবড়ালেও চলবে। কারণ আপনার প্রধান লক্ষ হলো, অন্ধবিশ্বাসী কুসংস্কারাচ্ছন্ন অজ্ঞ আস্তিকরা। জ্ঞানীরা নয়।

যদি আপনি কুরআনে বিজ্ঞান আসলেই আছে কিনা সেটা যাচাই করে দেখতে চান তবে আপনাকে ক্রিয়েশনিস্টদের দেওয়া বিজ্ঞান দেখলে হবে না। বরং সেক্ষেত্রে আপনাকে বিজ্ঞানীদের প্রবর্তিত বিজ্ঞান শিখতে হবে। আপনাকে জানতে হবে আসলেই ক্রিয়েশনিস্টদের বিজ্ঞান আর প্রকৃত বিজ্ঞান এক কিনা। যেমন ধরুন উপরে বর্ণিত ক্রিয়েশনিস্টদের আপেক্ষিকতাবাদ অনুযায়ী একজন মানুষ আলোর গতিতে যেতে পারে যা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বলা হয় না। আবার ধরুন কেউ যদি আলোক বর্ষ দুরত্ব অতিক্রম করতে আপনার যে সময় লাগলো সেই সময় দিয়ে আপনি আলোর গতিতে যেয়েও হাজার আলোক বর্ষ যেতে পারবেন না। কারণ যখনই আপনি আলোর গতিতে চলতে চলতে আলোক বর্ষ অতিক্রম করবেন তখন আপনি আলোর গতিতে আলোক বর্ষই অতিক্রম করলেন। এর বেশী কারো পক্ষে অতিক্রম করা সম্ভব নয়। কারণ কোন কিছুই আলোর গতির বেশী গতিতে চলতে পারে না। কোন বস্তু বা জীবের ক্ষেত্রে তিন আলোক বর্ষ অতিক্রম করে হাজার আলোক বর্ষ অতিক্রম করা সম্ভব নয়। আমার যদি আপনি আলোর গতিতে অতিক্রম করেন তবে আপনি তিন বছরে মাত্র তিন আলোকবর্ষই অতিক্রম করতে পারবেন। যদিও আপনি পাড়ার মোল্লা বিজ্ঞানীর কাছ থেকে শিখেছেন যে কেউ যদি আলোর গতিতে ছুটে চলে তবে সে হাজার আলোক বর্ষ অতিক্রম করতে পারবে; কিন্তু সেটা প্রকৃত বিজ্ঞানের কথা নয়। সেটি পাড়ার মহল্লাহর এক অজ্ঞ মানুষের বিজ্ঞান না জানার প্রমাণ মাত্র। তবে আপনি এসব ভূল ভাল তথ্য আপনি কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানোর সময় ব্যবহার করতে পারেন। আমি আগেই বলেছি আপনার প্রধাণ উদ্দেশ্য অজ্ঞ আস্তিকদের মাঝে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানো। জ্ঞানীদেরকে আপনি উপেক্ষা করতে পারেন। বরং আপনি জ্ঞানীদেরকে বিবর্তনবাদী, অজ্ঞ, মূর্খ বলে সম্বোধন করে আপনার কুরআন বিজ্ঞানময় বিষয়ক গ্রন্থে লিখে দিলেন। এর সাথে সাথে আপনার পাঠকদেরকে সতর্ক করে দিলেন তারা যেন বিবর্তনবাদীদের কথা কোন ভাবেই বিশ্বাস না করে। তারা ইহুদী নাসারা কাফের ইত্যাদি ইত্যাদি বলে আখ্যায়িত করুন।
দেখবেন তারা ভূলেও জ্ঞানীদের বলা সত্য কথাগুলো কোন ভাবেই বিশ্বাস করবে না। বরং সেই সব জ্ঞানী মানুষদেরকে বানর, গাধা ইত্যাদি বলে গালাগাল দিচ্ছে। এভাবেই আপনি কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে পারলেন এবং নিজেকে বড় বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারছেন।
আপনি আপনার কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর বইটিতে প্রথমে ক্রিয়েশনিস্টদের কাছ থেকে শেখা অপবিজ্ঞানের কথা বলতে থাকুন যাতে অজ্ঞ  মুসলমানরা মনে করে যে আপনি আসলে বিজ্ঞানের মহা জ্ঞান অর্জন করে ফেলেছেন। এবার বিজ্ঞানের কিছু কঠিন কঠিন শব্দ উপস্থাপন করুন। যেমন ধরুন টাইম ডাইলেশন, স্পেশাল থিউরী অফ রিলেটিভিটি ইত্যাদি ইত্যাদি। দেখবেন আপনার পাঠকরা সবাই বাহ্ বাহ্ করছে। আর বলছে কত বড় বিজ্ঞানী এই আম পাবলিক মজিদ আজাদ। মজিদ আজাদ বিজ্ঞানের সব কিছুই শিখে ফেলেছে। এবার ক্রিয়েশনিস্টদের কাছে থেকে শেখা আপনার উল্লেখিত শব্দগুলো সম্পর্কে কিছুক্ষন রসালো গল্প শুরু করে দিন। এমন ভাব নিন যেন আপনি সব কিছুই ভালো করে জেনে গেছেন। এবার আপনি বারবার টাইম ডাইলেশন, থিউরী অফ রিলেটিভিটি শব্দগুলো উচ্চারন করে বলতে থাকুন যে যেহেতু আপনি আলোর গতিতে যাচ্ছেন তাই আপনি তিন বছরের মধ্যে ৫ হাজার আলোক বর্ষ অতিক্রম করবেন। আর তিন বছর পর পৃথিবীতে এসে দেখবেন আপনার বয়স ২১ আর আপনার জমজ ভাইয়ের বয়স ৬৮ (যা আগেই বলে দিয়েছি)। কারণ আপনি আলোর গতিতে ৩ বছরে ৫ হাজার আলোকবর্ষ গেছেন তাই আপনার সময় থেমে থেমে অতিবাহিত হয়েছে। অপর দিকে আপনার ভাই পৃথিবীতে বসে কুরআন তেলাওয়াত বাদ দিয়ে মার্বেল খেলেছে বলে তার বয়স ৫০ বছর বেড়ে গেছে। এর সাথে যুগ করুন আপনি আলোর গতিতে ৫ হাজার বছর ভ্রমণ করে যে অলৌকিক কাজ করে ফেলেছেন তার জন্য আপনার সময় স্লো হয়ে গেছে বিধায় আপনাম বয়স তিন বছরে মাত্র তিন বছরই বেড়েছে। কারণ আপনি তিন বছরে ৫ হাজার আলোক বর্ষ অতিক্রম করে ফেলেছেন যা কিনা বিজ্ঞানের ভাষায় অসম্ভব। কারণ আলোর গতিতে গেলেও আপনি তিন বছরে তিন আলোক বর্ষের বেশী যেতে পারবেন না। কিন্তু যেহেতু আপনি মুসলমান অজ্ঞ আস্তিকদের মাঝে মহা বিজ্ঞানী হতে চাচ্ছেন তাই আপনি ভ্রান্ত বিজ্ঞানের কথা বললেও কেউ ধরতে পারবে না। তবে যদি কোন জ্ঞানী মানুষ আপনার বইটি পড়ে ফেলে তবে তারা ঠিকই জানবে যে আলো এক বছরে যে দুরত্ব অতিক্রম করে সেটাই এক আলোকবর্ষ। তাই কোন মানুষ আলোর গতিতে যেতে থাকলেও তিন বছরে তিন আলোক বর্ষের চেয়ে এক চুলও বেশী যেতে পারবেন না। যা আপনি ক্রিয়েশনিস্টদের কাছ থেকে বিজ্ঞান শিখেছেন বলে জানেন না। কারণ আপনি বিজ্ঞান বই পড়ে সঠিক বিজ্ঞান শিখতে পারেননি।
আপেক্ষিকতাবাদের সময় বিষয়ের মূল কথাটি হলো, মানুষ যেমন চিরাচরিত ধারণা রাখতো যে সময় একই রকমের আচরণ করে এবং সব স্থানে সময়ের কোন পরিবর্তন হয় না। অর্থাৎ তাদের ধারণা ছিল সময় আপেক্ষিক নয়। কিন্তু আপেক্ষিকতাবাদ অনুযায়ী সময় আপেক্ষিক ব্যাপার। তাই ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে সময়ের আচরন ভিন্ন ভিন্ন হয়।
কিন্তু কুরআনে কি এই কথাটি বলা হয়েছে? আবার আয়াতটি লক্ষ করুন, বলা হযেছে,  
'ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহর দিকে আরোহণ করে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ (তোমাদের হিসাব মতে) পঞ্চাশ হাজার বছর।'- সূরা আল মা'আরিজ ০৪
অর্থাৎ ফেরেশতা এবং রূহ এমন এক দিনে আল্লাহর কাছে পৌছে যার পরিমান মানুষের দিনের হিসেবে ৫০ হাজার বছর। অর্থাৎ আল্লাহর এক দিন সমান মানুষের বর্তমান হিসেবে ৫০ হাজার বছর।
এই আয়াতের সাথে আপেক্ষিকতাবাদের সময়ের কোনই সম্পর্কই নেই। এই আয়াত দিনের কথা বলেছে সময়ের কথা বলেনি। আমরা জানি পদার্থ বিজ্ঞানে সময়কে দিন বলা হয় না। বিজ্ঞানের ভাষায় দিন হলো সময়ের একটি মাপকাঠি মাত্র। দিন সময় নয়। পৃথিবী নিজের অক্ষে এক বার ঘুরে আসতে যে সময় নেয় সেই সময়কে দিন বলা হয়। সংজ্ঞানুযায়ী মঙ্গলগ্রহ নিজ অক্ষে একবার ঘুরে আসতে যে সময় নিবে তাকে মঙ্গলগ্রহের এক দিন বলা হবে। আবার বৃহস্পতিগ্রহের নিজ অক্ষে এক বার ঘুরে আসতে সে সময় লাগবে তাকে সেখানের একদিন বলা হবে। অর্থাৎ দিন বিষয়টি সংজ্ঞায়িত হয় কোন স্থানের পরিবেশের ধরণের উপর। অপরদিকে বিজ্ঞানে সময় হলো একটি স্বাধীন মাত্রা। অর্থাৎ সময়ের একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট আছে এবং এটি দৈর্ঘ, প্রস্থ এবং উচ্চতার মতো একটি স্বাধীন অস্তিত্বশীল স্বত্বা। অর্থাৎ সময় নিজেই প্রকৃতির একটি বাস্তব অংশ। আমাদের এই বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ উচ্চতার সাথে সময়ের মাত্রার যোগফলের মাধ্যমে। অর্থাৎ সময় হলো বিশ্বজগতের একটি মৌলিক উপাদন। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা এই তিন মাত্রার সাথে সময় মিলিত হয়ে স্থান-কালের চার মাত্রার জগত সৃষ্টি করে। অর্থাৎ সময় হলো প্রকৃতির একটি অংশ বা সময় নিজেই প্রকৃতি। অথচ দিন কোন মাত্রা নয়। দিন হলো সময়ের হিসেব। আমাদের পৃথিবী ২৪ ঘন্টায় একবার নিজ অক্ষে আবর্তন করে বলে আমরা ২৪ ঘন্টাকে একদিন হিসেবে সংজ্ঞায়ীত করেছি। সুতরাং যদি এমন কোন গ্রহ থাকে যে গ্রহটি একবার নিজ অক্ষে আবর্তিত হতে  আমাদের পৃথিবীর দিনের হিসেবে মোট ৫০ হাজার বছর সময় নিবে সেখানে একদিন হবে আমাদের ৫০ হাজার বছরের সমান সময়ে। অর্থাৎ এই আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ যে গ্রহটিতে বাস করে সেখানে এক দিন হতে অর্থাৎ সেই গ্রহটি একবার নিজ অক্ষে ঘুরে আসতে পৃথিবীর দিনের হিসেবে ৫০ হাজার বছর সময় নেয়।
অর্থাৎ কুরআনের ওই আয়াতটিতে বিজ্ঞানের যে সময়ের উল্লেখ করা হয় সেই সময়ের আপেক্ষিকতার কথা বলা হয়নি। বরং ওই আয়াতে আল্লাহ যে গ্রহে থাকে সেই গ্রহের বছরের পরিমানের সাথে পৃথিবীর বছরের পরিমানের পার্থক্য দেখানো হয়েছে। দুটো ভিন্ন গতিশীল বস্তুর মধ্যে সময়ের ব্যবধানের কথা বলা হয়নি। ধরুন পৃথিবী নিজ অক্ষে ঘূর্ণনের গতি কমে গেলে তার  সাথে সাথে পৃথিবীতে দিন দীর্ঘ হবে। তখন দেখা যাবে ২৪ ঘন্টায় দিন না হয়ে ৩৮ বা ৪৮ ঘন্টায় দিন হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে তো সময় মাত্রারতো কোন পরিবর্তন হবে না। তখনও ৬০ মিনিটে এক ঘন্টাই হবে। অর্থাৎ সময় অপরিবর্তিত থাকবে শুধু পৃথিবীর দিনের হিসেবের পরিবর্তন ঘটবে। কারণ দিন হলো আমাদের পৃথিবীতে বসবাস করা মানুষের তৈরি করা এক প্রকার সময়ের হিসেব মাত্র। কিন্তু বিজ্ঞানের ভাষায় সময় হলো একটি স্বাধীন মাত্রা যা গতিশক্তির পরিবর্তনের ফলে এই সময় মাত্রায় অবস্থান করা বস্তুর মধ্যে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। এর কারণ হলো সময় নিজেই একটি স্বাধীন স্বত্তা (দৈর্ঘ, প্রস্থ এবং উচ্চতার মতো) বা মাত্রা। প্রতিটি বস্তুই এই মাত্রার মধ্যে অবস্থান করে। ফলে বস্তুটির গতির তারতম্যের কারণে বস্তুটির সময় মাত্রায় আচরণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। এজন্যই বলা হয় সময় (মাত্রাটি) বস্তুর অবস্থান বা গতিপ্রকৃতির ভিত্তিতে আপেক্ষিক।
আর দিন হলো সময়ের অনেকগুলো হিসেবের মাধ্যমের মতই একটি মাধ্যম।
ফলে দিন আর সময় যে এক নয় এই বিষয়টি কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানোর সময় ঘুনাক্ষরেও প্রকাশ করা যাবে না। বরং সাধারণ অজ্ঞ আস্তিকদেরকে এটাই বুঝাতে হবে যে বিজ্ঞানের আপেক্ষিকতাবাদের সময় আর দিন একই বিষয়। আর তাই কুরআনে পৃথিবীর দিন এবং আল্লাহর দিনের পার্থক্য মানেই হলো আপেক্ষিকতার সময়ের পার্থক্য। অর্থাৎ কুরআন হলো বিজ্ঞানময় গ্রন্থ।
এক্ষেত্রে মূল বিষয়টি যেন সাধারণ মানুষ বুঝতে না পারে বা বিভ্রান্তিতে থাকে তাই উল্লেখ করুন যে ফেরেশতা এবং রুহ হলো আলোর তৈরী। আর তাই ফেরেশতা এবং আত্মা আলোর গতিতে বছরে হাজার আলোকবর্ষ যেতে পারে। (যদিও তা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অসম্ভব)
কিন্তু কথা হচ্ছে কোন কিছু আলো দিয়ে তৈরী হলেই যে সেটা আলোর গতিতে যেতে পারবে সেই ধারণাটি ধর্মের সমস্ত হাস্যকর ধারণার মতই হাস্যকর। কারণ কোন কিছু আলো দিয়ে তৈরী হয়ে থাকলেও সেটি আর আলো থাকে না। সেটি একটি বস্তু স্বত্বায় পরিণত হয়। ফলে সেই বস্তু স্বত্ত্বা কখনই আলোর গতিতে চলতে পারবে না। আবার বিজ্ঞানে আত্মার মতো হাস্যকর ধারণার কোনই স্থান নেই। কিন্তু যেহেতু আপনি বিজ্ঞান শিখতে বিজ্ঞানের বই পড়েননি তাই এসব কথা আপনি জানতে পারবেন না। তবে সমস্যা নেই। কারণ আমি আগেই বলেছি আপনার উদ্দেশ্য অজ্ঞ আস্তিকদের কাছেই মহা বিজ্ঞানীর খেতাব পাওয়া। জ্ঞানীদের কাছে নয়।
বিষয়টিকে আরেকটু বিভ্রান্তিকর করার জন্য আপনি আরো কিছু অবান্তর কথা উল্লেখ করতে পারেন। যেমন কুরআন কোন সাইন্স বা বিজ্ঞান বই নয়। কুরআন হলো সাইন বা নিদর্শনের বই।
এই কথাটি প্রায় সব কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানোর কারিগররাই বলে থাকে। এর উদ্দেশ্য খুবই সহজ, আপনি কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেললেন। আপনি একই সাথে কুরআনকে বিজ্ঞানময় দাবী করছেন আবার একই সাথে একে নিদর্শনও দাবী করে আপনার যুক্তিকে ভূল প্রমাণ করার রাস্তা বন্ধ করে দিলেন।
এই যে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর চতুর কারিগররা এই দাবীটি করে থাকে তাদের দাবী অনুযায়ী কি সত্যিই কুরআন নিদর্শনের বই? কুরআন কি সাইনের বই?
প্রশ্নটি আপনি যে কোন মুসলমানকে করুন তারা কেউ এই দাবীটি মেনে নেবে না। তারা সবাই বলবে কুরআন নিদর্শন নয় বরং পথ প্রদর্শক। কুরআন হলো বিধান। তাহলে তারা এই বিভ্রান্তিমূলক দাবীটি কেন করে? তারা কেন বলে যে কুরআন কোন সাইন্স বা বিজ্ঞানের বই নয় বরং কুরআন হলো সাইন বা নিদর্শনের বই? এর কারণটি হলো কুরআনে বহু নিদর্শনের কথা বলা হয়েছে। আর এই নিদর্শনগুলো কিন্তু কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর জন্য করা হয়নি। বরং এই নিদর্শনগুলো দেখানো হয়েছে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর শক্তিমত্তা দেখাতে। তার অস্তিত্বের মহিমা প্রকাশের উদ্দেশ্যেই এই নিদর্শনগুলো দেখানো হয়েছে। যেমন কুরআনে বলা হয়েছে, ওমুক নিদর্শন, তমুক নিদর্শন দেখেও অবিশ্বাসীরা আল্লাহকে বিশ্বাস করবে না! আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলবে না?
অর্থাৎ কুরআনে বর্ণিত নিদর্শনগুলো শুধু আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ হিসেবে এবং আল্লাহর অসীমতা প্রকাশ করার জন্য করা হয়েছে। যেমন কুরআনে দাবী করা হয়েছে পাহাড় হলো একটি নিদর্শন। কারণ পাহাড়কে কোন মানুষ তৈরি করেনি। তাই কুরআন দাবী করেছে পাহাড়গুলো আল্লাহ সৃষ্টি করেছে। ঠিক একই ভাবে আকাশ, সাগর, নদী, চাঁদ, তারা, সূর্য এগুলো হলো আল্লাহর অস্তিত্বের নিদর্শন। সুতরাং স্পষ্টতই কুরআনের এই নিদর্শন কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর নিদর্শন নয়। এটি হলো আল্লাহর যে সত্যিই অস্তিত্ব আছে তার প্রমাণ হিসেবে এই নিদর্শনগুলো দেখানো হয়েছে।
আর এই কথাটিই সেই চতুর কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর কারিগররা বাহাদুরি দেখানোর জন্য উপস্থাপন করে। এতে করে তারা তাদের হীন উদ্দেশ্য সহজেই সাধন করতে পারে।
আর তাই আপনিও বুক ফুলিয়ে দাবী করুন, "কুরআন কোন সাইন্সের বই নয় বরং কুরআন হলো সাইনের বই" দেখবেন অজ্ঞ মুসলমানকুল আপনাকে বাহবা দিচ্ছে।
সর্বশেষে আপনার দাবীর সাথে যোগ করুন, যা বিজ্ঞান আবিষ্কার করলো এই সেদিন, সেটিই কিনা কুরআন বলেছে সেই ১৪০০ বছর আগে। চিন্তা করে দেখুন!
ব্যস কুরআন বিজ্ঞানময় হয়ে গেলো। আর আপনিও মুসলমান অজ্ঞ আস্তিকদের কাছে বড় বিজ্ঞানীর খেতাব পেয়ে গেলেন।
দেখলেন কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানো কতো সহজ। আর তার থেকেও সহজ হলো বিজ্ঞান না জেনেও বড় বিজ্ঞানী হওয়া।

(বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আপনি কুরআনের যে আয়াতটিকে দিয়ে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানালেন সেই আয়াতটির কিন্তু বড় ধরণের ঘাপলা আছে। যেমন ধরুন উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহর একদিন সমান পৃথিবীর দিনের হিসেবে ৫০ হাজার বছর।  
আবার সূরা হাজ্জের ৪৭ নং আয়াতে আছে,
"তোমার প্রতিপালকের একদিন তোমাদের গণনার সহস্র বছরের সমান।"
এই আয়াত অনুযায়ী আল্লাহর একদিন সমান পৃথিবীর ১০০০ বছর।
সুতরাং দেখাই যাচ্ছে আল্লাহ যে দিনপঞ্জিকা ব্যবহার করে তাতেও মহা গলদ আছে। আসলে মুহাম্মদ দুই আয়াত ভিন্ন ভিন্ন দুই সময়ে এবং দুই বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আল্লাহর দিনের এই হিসেব দিয়েছিল তো তাই সে বুঝতে পারেনি এবং তার মনেই ছিল না যে একসময় যে আল্লাহর দিন ১ হাজার বছর বলেছে এবং অন্য সময় ৫০ হাজার বছর বলেছে।
আসলে মুহাম্মদ বৃদ্ধ বয়সে আর কতই বা মনে রাখবে! তাই এরকম ভূল হতেই পারে। হাজার হোক বুড়া মানুষ কুরআন লিখেছে একটু আদটু ভূলতো থাকবেই।)

উপরের উল্লেখিত কুরআনের মতো একটি প্রাচীণ ভ্রান্ত ধারণার বইকে বিজ্ঞানময় বানানোর পদ্ধতিটি যারা ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছেন তারা এর মধ্যেই কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানোর জন্য বসে গেছেন। আর যারা এখনো ভালো করে বুঝেননি তাদের জন্যই আমি নিচের পদ্ধতিটি বর্ণনা করছি। কিভাবে কুরআনের মতো প্রাচীণ ধ্যান ধারণার, ভূলে ভরা ভ্রান্তির এবং মিথ্যাধারণার বইকে বিজ্ঞানময় বানাতে পারবেন সেটা ভালো করে জানার জন্য অবশ্যই প্রত্যেকটি পদ্ধতিই অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করতে হবে।
ধরুন আপনি চাচ্ছেন খুব সহজেই নিজেকে অজ্ঞ এবং বিজ্ঞানের জ্ঞান বঞ্চিত মানুষের কাছে মহা বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। এক্ষেত্রে আপনাকে অতি সামান্য কষ্ট স্বীকার করতেই হবে। আর সেটা হলো জাকির নায়েক বা মরিস বুকাইলি নামের বিজ্ঞানের অতি সামান্য জ্ঞান রাখা মানুষদের লেখা পড়ে অপবিজ্ঞান শেখা। এছাড়াও আপনাকে ক্রিয়েশনিস্টদের ওয়েব সাইটে গিয়ে বিজ্ঞানের কিছু বিষয় সম্পর্কে ভাসা ভাসা জ্ঞান লাভ করা। আপনাকে ভূলে গেলে চলবে না যে যারাই কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানিয়ে রাতারাতি মুসলমান অজ্ঞ মানুষদের কাছে মহা বিজ্ঞানীর খেতাব পেয়েছে তাদের বিজ্ঞানের জ্ঞান একদম ক্লাস ফাইভের একজন সাধারণ ছাত্রের চেয়েও কম। এবং তাদের বিজ্ঞানের ভাসা ভাসা জ্ঞান দিয়েই তারা কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানিয়েছে। সুতরাং আপনাকেও বিজ্ঞানের সামান্যতম জ্ঞান লাভ করতে হবে। আর এই অতি সামান্য জ্ঞান দিয়েই কুরআনের মতো একটি প্রাচীণ গ্রন্থকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে পারবেন।
প্রথমেই বিজ্ঞানের কোন একটি বিষয়কে বাছাই করুন। যেমন ধরুন কুয়ান্টাম ফিজিক্স। নাম শুনে ঘাবড়াবার প্রয়োজন নেই। যদিও কুয়ান্টাম ফিজিক্স হলো পদার্থ বিজ্ঞানের একটি জটিল বিষয় কিন্তু আমি আগেই বলেছি যে আপনার জ্ঞান শুধু ভাসা ভাসা জানলেই হবে। অথবা কুয়ান্টাম ফিজিক্সের কিছু গুরুত্ব পূর্ণ শব্দ মুখস্থ করলেই হবে। যেমন ধরুন, নাথিং, সামথিং, কুয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম, কুয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন, মেটার-এন্টিমেটার ইত্যাদি ইত্যাদি।
এবং আপনার কুযুক্তিগুলোকে যেন অজ্ঞ আস্তিকরা শক্তিশালী যুক্তি হিসেবে প্রথমেই ধরে নেয় সেজন্য আপনি ক্রিয়েশনিস্টদের দ্বারা উৎপন্ন হওয়া কিছু বিজ্ঞানের ভূল সুচক ভিডিও ইউটিউব থেকে দেখে নিতে পারেন। যদি আপনি ইংরেজীতে দুর্বল হন তাতেও কোন সমস্যা নেই। দরকার হলে ডিকশোনারী দেখে দেখে ইংরেজীর বাংলা অর্থ বুঝে নেবেন। মনে রাখবেন আপনি বিজ্ঞান না জানা আম পাবলিক থেকে মহা বিজ্ঞানী হতে যাচ্ছেন। তাও আবার রাতারাতি। সুতরাং দু এক দিন সময় খরচ করুন।
এবার আপনি ক্রিয়েশনিস্টদের কাছ থেকে শেখা বিজ্ঞানের ভূলগুলো এক, দুই. তিন এবং চার এভাবে নাম্বার করে বর্ণনা করুন। তার সাথে বলে দিন বিজ্ঞানের এসব আবিষ্কার যারা করেছে তারা কতটা গলদ। যদিও আপনি ভালো করে জানেনই না যে বিজ্ঞানের ওই বিষয়গুলো আসলেই গলদ কিনা? আর যদি গলদ হয় তবে সেই গলদগুলো সেই থিউরী প্রবক্তা বিজ্ঞানীই বলে দিয়েছে কিনা সেটাও আপনি বুঝেন না। এবং বিজ্ঞানের থিউরীর প্রবক্তারা কেনই বা সেই গলদগুলোর কথা উল্লেখ করেন সেটার সম্পর্কেও আপনার কোন ধারণা নেই। কিন্তু আপনি এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না। আপনি শুধু বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতাগুলোকে বিজ্ঞানের দোষ হিসেবে উল্লেখ করুন। সেই সাথে আপনার অজ্ঞ পাঠকদেরকে জানিয়ে দিন যে বিজ্ঞান সদা পরিবর্তনশীল কিন্তু ধর্ম সেই প্রাচীণ কালের ধারনাগুলেকে অপরিবর্তিত রাখে আর সেই অপরিবর্তন হলো মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ট কাজের মধ্যে প্রধান। কিন্তু আপনি আম পাবলিক জানেনই না কেন বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল হওয়াতেই মানুষ বিজ্ঞানকে চিরসত্য হিসেবে বিশ্বাস করে? কেন বিজ্ঞান তার পূর্বতন ধারণাকে নতুন করে সাজায় সে সম্পর্কে আপনার বিন্দুমাত্র ধারণা না থাকাতেও আপনি নিজের মন মতো বলে যান যে এটি বিজ্ঞানের চতুরতা। অথচ আপনি জানেনই না যে এটিই হলো বিজ্ঞানের মাধুর্যতা। বিজ্ঞান ভূলগুলোকে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সংশোধন করে বলেই মানুষ বিজ্ঞানকে সত্যের প্রতিক হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু আপনি বিজ্ঞান সম্পর্কে জানেন না বলেই এই কথাটি ধরতে পারেন না। এটা নিয়ে ঘাবড়াবার কোনই প্রয়োজন নেই। কারণ আমি আগেই বলেছি আপনার টার্গেট অজ্ঞ আস্তিকগুলোকে আরো অজ্ঞতার সাগরে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে মহা বিজ্ঞানী সাজা। তাই আপনি আপনার অজ্ঞতামুলক কথাবার্তা বলতে থাকুন। দেখবেন আপনার কথা বিশ্বাস করে অজ্ঞ আস্তিকরা বিজ্ঞানকে মিথ্যাবাদি হিসেবে বিশ্বাস করে নিয়েছে। অর্থাৎ ধরে নিন আপনি বিজ্ঞানের সামান্যতম জ্ঞান না রেখেও মহা বিজ্ঞানীর খেতাব পেতে যাচ্ছেন।  
এর সাথে আপনি আরো বলুন অমুক বিজ্ঞানী তমুক ভূল করেছে, তমুক বিজ্ঞানী অমুক ভূল করেছে, স্ট্রিং থিউরী ভূল, বিগ ব্যাং ভূল, বিবর্তনবাদ ভূল ইত্যাদি ইত্যাদি।
আপনি ক্রিয়েশনিস্টদের কাছে থেকে জেনেছেন যে কুয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন নামে বিজ্ঞানের একটি বিষয় আছে। সেখানে বলা হয়েছে শুন্য থেকে কিছু সময়ের জন্য মেটার এবং এন্টি মেটার তৈরি হয়। আপনি কুয়ান্টাম মেকানিক্স সম্পর্কে কিছু ভাসা ভাসা জ্ঞান লাভ করেছেন। সেগুলোর যে অনেকগুলো ভূল সেটাও আপনি ধরতে পারেন না। আপনার জ্ঞান কিছু প্রাথমিক ধারণাতেই সীমাবদ্ধ। যেহেতু আপনি ক্রিয়েশনিস্টদের কাছ থেকে বিজ্ঞান শিখেছেন তাই আপনি বিজ্ঞানের ভূলগুলোই শিখেছেন। এছাড়াও নানা রকমের অপবিজ্ঞানও শিখেছেন। আর এই জ্ঞানই আপনাকে অজ্ঞ আস্তিকদের কাছে আপনাকে মহা বিজ্ঞানী বানানোর জন্য যথেষ্ট।
আপনি জেনেছেন কুয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে শুন্য থেকে পদার্থ তৈরি হয়ে আবার পুনরায় শুন্যতে মিলিয়ে যায়। এখন এই জ্ঞানটি দিয়ে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানো যায় কিনা সেটা চেষ্টা করে দেখুন। আপনি কুরআন ঘেটে খুজতে থাকলেন কুরআনে কুয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের কাছাকাছি কোন কথা বলা হয়েছে কিনা। আপনি খুজতে খুজতে পেয়ে গেলেন একটি আয়াত যা ভাসা ভাসা ভাবে শুন্য থেকে মহাবিশ্বের সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। ধরুন আয়াতটি হলো 'সূরা বাকারার ১১৭ নাম্বার আয়াত। সেখানে বলা হয়েছে,
"তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে অনস্তিত্ব হতে অস্তিত্বে আনায়ন কারী।"
আপনি পেয়ে গেলেন কিভাবে কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাবেন। এবার আপনি কুয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন সম্পর্কে ক্রিয়েশনিস্টদের কাছ থেকে কিছু অপবিজ্ঞানময় কথাগুলো আবার করে পড়ে আসুন।
কুরআনের এই আয়াতটি প্রথমেই উল্লেখ করবেন না। কিছুক্ষন আপনি কুয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন সম্পর্কিত কি জানের সেই জ্ঞান আগে ফলান। যেমন বলুন, “পদার্থ বিজ্ঞানে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে কোয়াণ্টাম মেকানিক্স। এই কোয়ান্টাম মেকানিক্সে একটি বিষয় আছে, সেটি হলো- 'কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশান। এই কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশানের মূল কথা হলো,- 'মহাবিশ্বে পরম শুন্য স্থান বলে আদতে কিছু নেই। মানে, আমরা যেটাকে 'Nothing' বলে এতদিন জেনে এসেছি, বিজ্ঞান বলছে, আদতে 'Nothing' বলতে কিছুই নেই। প্রকৃতি শূন্য স্থান পছন্দ করেনা। তাই, যখনই কোন শুন্যস্থান (Nothing) তৈরি হয়, সেখানে এক সেকেন্ডের বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে কণা এবং প্রতিকণা (Matter & anti-matter) তৈরি হচ্ছে, এবং একটির সাথে অন্যটির ঘর্ষণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।“
“কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশানের ধারনা এসেছে হাইজেনবার্গের বিখ্যাত 'অনিশ্চয়তা নীতি থেকে।“ ইত্যাদি ইত্যাদি ভূল ভাল তথ্যগুলো উপস্থাপন করুন। আপনার অজ্ঞ মুসলমান পাঠকগুলো মনে মনে ভাববে আপনি বিরাট বিজ্ঞান জাননে ওয়ালা হয়ে গেছেন।
এর সাথে আরো যোগ করুন যে, হাইজেনবার্গের এই নীতি যদি সত্যি হয়, তাহলে মহাবিশ্বে 'শূন্যস্থান' বলে কিছু থাকতে পারেনা। যদি থাকে, তাহলে তার অবস্থান ও ভরবেগ দুটোই শূন্যে চলে আসে, যা হাইজেনবার্গের নীতি বিরুদ্ধ।
এই বাক্যটি যেকোন জ্ঞানী মানুষ পড়লেই বুঝে ফেলবে, আপনি আসলে বিজ্ঞান সম্পর্কে খুব কম ও ভূল ধারণা রাখেন। কিন্তু আগেই বলেছি আপনার উদ্দেশ্য হলো বোঁকা অজ্ঞ আস্তিকদেরকে অজ্ঞতার মধ্যে রাখা। এখানেই হলো কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর কারিগরদের মাহাত্ব। তারা যে বিষয়টি নিয়ে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে তারা সে বিষয়টি ভালো করে জানেই না। অথচ সে সম্পর্কে অনর্গল কথা বলেই যাচ্ছে। আর বিজ্ঞান না জানা অজ্ঞদের কাছে মহা বিজ্ঞানী সাজছে। মহাবিশ্বের শুন্য স্থানের সাথে অনিশ্চয়তাবাদের কোনই সম্পর্ক নেই এই তথ্যটি আপনি জানেননি না কিন্তু আপনি এর সাথে মিলিয়ে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানিয়ে ফেলতে এসেছেন। আপনি ক্রিয়েশনিস্টদের কাছ থেকে বিজ্ঞান শিখেছেন বলে আপনার ধারণা নেই যে কোথায় কোন সুত্র খাটে আর কোথায় খাটে না। 

(উল্লেখ্যঃ হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তাবাদ বস্তু কণার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। শুন্যস্থানের শুন্যতা কোন বস্তু নয়। তাই সেখানে কিছু সৃষ্টি হলো নাকি ধ্বংস হলো তার সাথে এর সম্পর্ক নেই। বিষয়টি বস্তুকণার (যেমন ইলেক্ট্রন বা ফোটন) আচরণকে ব্যাখ্যা করে। যদি শুন্যস্থানে কিছু সৃষ্টি না হয় তবে সেখানে কোন বস্তু থাকবে না। তাই সেই বস্তুকণাটির গতি এবং অবস্থানের অনিশ্চিত বা নিশ্চিত হবার কোনই কারণ নেই।)
এরপর আপনি বললেন যে, “বিগ ব্যাং- ঘটার সময় যে শক্তিটি ছিল সেটা এসেছে কুয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন থেকে। কিন্তু কুয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের জন্য অতি দরকারী হলো মহাকর্ষ বল। বিজ্ঞান ব্যাখ্যা দিতে পারছে না এই কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশানের জন্য মহাকর্ষ বল কোথা থেকে এলো, 'সময়' কেন, কিভাবে 'স্থান 'হলো, পরে আবার সেটা 'সময়' হলো। কিন্তু কুরআন আমাদেরকে সেই সমস্যার সমাধান দিয়ে দিয়েছে।“
জ্ঞানীরা লক্ষ করলেই বুঝতে পারবে যে আপনি বিজ্ঞান সম্পর্কে খুবই অজ্ঞ একটি ব্যাক্তি। আপনি কুরআনকে বিজ্ঞানময গ্রন্থ বানাতে এটি লেখাতেই অনেকগুলো ভূল বিজ্ঞান আওড়াচ্ছেন। আপনার এসব ভূল ভাল তথ্য শুনে বিজ্ঞানের জ্ঞান রাখা মানুষরা আমার মতই হাসবে। কি সব আবুল তাবুল তথ্যই না আপনি ক্রিয়েশনিস্টদের কাছ থেকে শিখেছেন। আর তাই দিয়ে কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাচ্ছেন। কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের জন্য মহাকর্ষ বল! স্থান থেকে সময় সৃষ্টি! সত্যিই অদ্ভূত। কিন্তু আপনি এসব দিকে লক্ষ করবেন না। কারণ আপনার লক্ষ হলো বিজ্ঞানের জ্ঞান বঞ্চিত অজ্ঞ আস্তিকরা। তাই এসব ক্রিয়েশনিস্ট মার্কা অপবিজ্ঞানের জ্ঞান আওড়াতে থাকুন।
এরপর আপনি কুরআনের সেই আয়াতটি উল্লেখ করুন। সূরা বাকারার ১১৭ নাম্বার আয়াতটি উল্লেখ করে দাবী করুন সেই আয়াতটিতে বলা হয়েছে,
"যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে অনস্তিত্ব হতে অস্তিত্বে আনয়ন করেন এবং যখন তিনি কিছু করবার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তখন শুধু বলেন হও, আর তা হয়ে যায়।"
এখানেই কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানোর কারিগর মুসলমান আস্তিকদের চতুরতা। পৃথিবীর সব ধর্মের আস্তিকরাই জানে যে তাদের ধর্মের সব সৃষ্টিকর্তাগুলোই বিশ্বজগতকে সৃষ্টি করেছে শুন্য থেকে। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মই দাবী করে যে তাদের সৃষ্টিকর্তা বিশ্বজগতকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বশীল করে সৃষ্টি করেছে। কিন্তু মুসলমান চতুর আস্তিকরাই চতুরতার আশ্রয় নিয়ে কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানায়। এই আয়াত দিয়ে কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানোর সবথেকে ফাকিবাজিটিই হলো যে এই দাবীটি পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মই করে। কিন্তু তাই বলে কি সেই ধর্মগুলোও বিজ্ঞানময় গ্রন্থ হয়ে গেলো? মোটেও না। কারণ সৃষ্টিকর্তার ধারণাটিই গড়ে উঠেছে এই শুন্য থেকে সৃষ্টি করার মাধ্যমে। কারণ যখনই অনস্তিত্ব থেকে সৃষ্টি করার ধারণা উঠবে তখনই তারা সৃষ্টিকর্তার ধারণাটি উত্থাপন করবে। পৃথিবীর সব ধর্মই দাবী করেছে যে এই বিশ্বজগতের কোন কিছুই অস্তিত্বশীল ছিল না। সৃষ্টিকর্তাই এদেরকে সৃষ্টি করেছে অনস্তিত্ব থেকে বা শুন্য থেকে। তাই বলে কি তারা বিজ্ঞানের আধুনিক আবিষ্কার ‘শুণ্য থেকে নিজে নিজেই বিশ্বজগত সৃষ্টির’ কথা বলা হয়েছে? মোটেও নয়। কারণ বিজ্ঞানের কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন এবং এই প্রক্রিয়ায় বিশ্বজগত সৃষ্টির প্রক্রিয়াটির মূল দাবিই হলো নিজে নিজে সৃষ্টি হওয়া। অপরদিকে সৃষ্টিকর্তার কাল্পনিক ধারণার মুল দাবী হলো একজন সৃষ্টিকর্তা থাকবে যে শুণ্য থেকে সব কিছু সৃষ্টি করবে। আর এটাই বিজ্ঞান বিরোধী ধারণা। সৃষ্টিকর্তার ধারণাটি সরাসরিই বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ শুন্য থেকেই যদি বিশ্বজগত সৃষ্টি হয় এবং এর মাধ্যমেই প্রাকৃতিক নিয়মগুলো সৃষ্টি হয় তবে এর মধ্যে সৃষ্টিকর্তার কোনই অস্তিত্ব থাকতে পারবে না। এর কারণ হলো সৃষ্টিকর্তাকে অস্তিত্বশীল থাকতে হলে কিছু স্থান এবং টাইমের মধ্যে অবস্থান করতে হবে। আর এই স্থান আর কালটি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এই স্থান এবং কালের সৃষ্টির পূর্বে কোন সৃষ্টিকর্তাই অস্তিত্বশীল থাকতে পারবে না। এটাই হলো অস্তিত্বশীল এবং অনস্থিত্বশীলতার প্রধান শর্ত। আস্তিকরা যতই তাদের কল্পনার দ্বারা চিন্তা করে দাবী করুক না কেন যে, ‘সৃষ্টিকর্তা হলো স্থান কালের উর্ধ্বের কিছু’, কিন্তু তাদের ধারণা শুধুমাত্র কল্পনাতেই সম্ভব। বাস্তবে নয়। এজন্যই বিজ্ঞান সরাসরি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে বাতিল করে দেয়। আর তাই বিজ্ঞানের শুন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি আর আস্তিকদের সৃষ্টিকর্তা দ্বারা শুন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টির ধারণা এক নয় এবং সরাসরি পরস্পর বিরোধী ধারণা।
আর তাই কুরআনের এই অনস্তিত্বশীল থেকে অস্তিত্বশীল মহাবিশ্ব সৃষ্টির সাথে বিজ্ঞানের কোন সম্পর্কই নেই। কিন্তু এই তথ্যটি আপনি জানেন না। কারণ আপনি বিজ্ঞান শিখেছেন কিছু বিজ্ঞানের ধারণাহীন মানুষের কাছে। এবং অপবিজ্ঞানের চর্চাকারী ক্রিয়েশনিস্টদের কাছ থেকে। অথবা যদি ভূল করে জেনেও যান তবে কোন ক্রমেই সেটা জানাবেন না। তাহলে আপনি সত্য বলার দায়ে কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে পারবেন না। আর আপনার অজ্ঞদের কাছে মহাবিজ্ঞানী হবার স্বপ্নও পুরন হবে না। তাই আপনি নিচের পদ্ধতিটি অবলম্বন করবেন। যেমন বলবেন,
এখানে মূল শব্দ 'বাদিয়্যু' /Originator- সেখান থেকেই অস্তিত্ব-অনস্তিত্বের ধারনা।
আপনি ভাবছেন এসব অবান্তর মিথ্যা কথাগুলো বলে লাভ কি? এসব বলাটাই তো হলো কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানোর মুল মন্ত্র। এযাবৎ কালে যত মুসলমান ব্যক্তিই কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানিয়েছে তারা সবাই এই কুকৌশলটি অবলম্বন করেছে। আপনাদের মরিস বুকাইলি থেকে শুরু করে জাকির নায়েকও এসব কুকৌশল অবলম্বন করেই তো কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানিয়েছে। তাই আপনাকেও এসব কুকৌশল অবলম্বন করেই কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে হবে। কারণ সব সময়ই একটি কথা মনে রাখবেন। যখনই আপনি কোন মিথ্যাতে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করবেন তখনই আপনাকে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে। আপনি কোনদিনও মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া ছাড়া মিথ্যাকে সত্য বানাতে পারবেন না। আপনি যদি দেখেন তবে দেখবেন যে, প্রত্যেক কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানোর কারিগরই এই কুকৌশলটি অবলম্বন করেছে। যখন তাদের উল্লেখ করা আয়াতের সাথে তাদের দাবী করা কথাটি মিলেনি তখনই তারা বলেছে, “এখানে ওমুক শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে আর ওমুক শব্দটির অর্থ হলো তমুক। আর তমুকের অর্থ হলো ঘমুক তাই এর অর্থ হলো ঘমুক।“ এভাবেই কুরআনের মতো একটি ভূলে ভরা গ্রন্থকে বিজ্ঞানময় বানাতে হয়। তাই আপনিও বলুন এখানে মূল শব্দ বাদিয়্যু ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ শুন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করা, এখান থেকেই অস্তিত্ব অনস্তিত্বের ধারণার জন্ম হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। দাবীটা এমন যে কুরআন লেখার আগে কেউই জানতো না যে সৃষ্টিকর্তা অনস্তিত্ব থেকেই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছে! কিন্তু আপনি নিশ্চিত থাকুন এই সহজ ফাকিবাজিটুকুই অজ্ঞ মুসলমান আস্তিকরা ধরতে পারবে না। ইতিপূর্বে কখনই পারেনি। আপনার ক্ষেত্রেও পারবে না। আপনি নিশ্চিন্তে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে পারেন। অথবা আপনি যেভাবে ইচ্ছা কুযুক্তি ব্যবহার করতে পারবেন। অন্ধবিশ্বাসী আস্তিকদের মাথা অতটা ভালো কাজ করে না। সুতরাং আপনার পদ্ধতি ব্যবহার করতে থাকুন।
এরপর আরেকটি মহাস্ত্র ব্যবহার করুন। বলুন,আমি আগেই বলেছি যে কুরআন সাইন্সের বই নয়; কুরআন সাইনের বই। দেখুন, আমি আবারো বলছি, আমি এটা বলছি না যে, আল্লাহ তা'লা এখানে কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশানের কথাই বলেছেন। তিনি তার সৃষ্টির কথা বলেছেন। তিনি 'অনস্তিত্ব' (Nothing) থেকে 'অস্তিত্বে' (Something) এনেছেন।এমন না যে, আল্লাহ তার হাত দিয়ে প্রথমে মহাবিশ্বের ছাদ বানালেন। তারপর তাতে সূর্য, চাঁদ, গ্যালাক্সি এগুলা একটা একটা বসিয়ে দিয়েছেন। তিনি কেবল নির্দেশ দিয়েছেন।
বলে রাখা ভালো এই যে আল্লাহ তার হাত দিয়ে (লক্ষ করুন আল্লাহর হাত আছে) মহাবিশ্বের ছাদ বানিয়েছে বলে আপনি কথাটি বললেন সেটি কিন্তু বিজ্ঞানের কথা নয়। সেটি একটি ভ্রান্ত ধারণা যা কুরআন দিয়েছে। কারণ মহাবিশ্বের ছাদ তথা আকাশের যে ধারণাটি কুরআন দেয় সেটির সাথে বাস্তবের মহাবিশ্বের কিন্তু কোনই সম্পর্কই নেই। এই ধারণাটি কুরআনের লেখক মুহাম্মদের। সে ভেবেছিল নীল রংয়ের ছাদের মতো দেখতে আকাশ বুঝি সত্যিই ছাদের মতো শক্ত কঠিন পদার্থের তৈরী। আর সেটাই সে কুরআনে লিখে দিয়েছে। আর আপনি কথাটিকে ঠিক ঘুরিয়ে উল্লেখ করলেন অন্ধবিশ্বাসী আস্তিকদেরকে বোঁকা বানাতে। এছাড়া আপনি যেমনটি বলেছেন যে আল্লাহ সূর্য, চাঁদ, গ্যালাক্সিগুলা একটা একটা করে বসিয়ে দিয়েছে সেই ধারণাটি সত্যিই খুব হাস্যকর। কারণ এই কথাটি দিয়ে বুঝায় যে, কুরআন যেভাবে দাবী করেছে যে আল্লাহ ছাদের মতো দেখতে শক্ত কঠিন আকাশে সূর্য, চন্দ্রগুলোকে বসিয়ে দিয়েছে যেভাবে ঘরের ছাদে সূর্য, চাঁদ, তারার ছবি বসিয়ে দেওয়া হয় সেটার সাথে কিন্তু বিজ্ঞানের মহাবিশ্ব সৃষ্টির কোনই সম্পর্ক নেই। কিন্তু আপনি কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে এই কথাগুলো লিখে দিলেন যা অজ্ঞ মুসলমানরা বুঝতেও পারবে না যে এগুলো আসলে বিজ্ঞানের কথা নয়। বরং তারা ধরেই নিবে যে এগুলো বুঝি বিজ্ঞানেরই কথা। এবং তারা কুরআন বিজ্ঞানময়, কুরআন বিজ্ঞানময় বলে চিৎকার শুরু করে দিবে। আপনি সেটা নিশ্চিত থাকতে পারেন।
এরপর বলুন, “হকিংও একই কথা বলছে। কিন্তু তারা বলছে এটা এমনি এমনি হয়ে গেছে, শূন্য থেকেই। আল্লাহ বলছেন, না, এমনি হয়নি। আমি যখন নির্দেশ করেছি 'হও' (কুন), তখন তা হয়ে গেলো।“
দেখলেন কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানোর ক্যালমা! হকিং নাকি কুরআনের কথাটিই বলেছে? এই কারণেই জ্ঞানীরা এসব কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানোর কারিগরদের নিয়ে হাসাহাসি করে। কোথায় আমতলা আর কোথায় গাবতলা?
এরপর আপনি দাবী তুললেন আল্লাহ কুন বললেই সব হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহ কোথা থেকে আসলো সেটা কিছুতেই উত্থাপন করবেন না। আপনি বিজ্ঞানের ভূল ধরতে ঠিকই বলবেন যে, বিজ্ঞান দাবী করে সব কিছু এমনি এমনি হয়েছে কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কেমনি কেমনি হয়েছে সেই প্রসঙ্গটি খুব কৌশলে এড়িয়ে যেতে হবে। আপনি দাবী করে ফেললেন আল্লাহ কুন বললেই সব হয়ে যায়, যার কোনই প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। কিন্তু আপনি বলে দিলেন যাতে ভূলে ভরা কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানো যায়।
এবার আপনি আবার করে বিজ্ঞানের ভূল গুলো উত্থাপন করুন যা আপনিই ভালো করে জানেন না সেগুলো আসলেই বিজ্ঞানের ভূল কিনা। যেমন বলুন,
হকিং ব্যাখ্যা দিতে পারছে না এই কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশানের জন্য মহাকর্ষ বল কোথা থেকে এলো, 'সময়' কেন, কিভাবে 'স্থান 'হলো, পরে আবার সেটা 'সময়' হলো।
এরপর আপনি আপনার মহামন্ত্রটি নিক্ষেপ করুন। বলুন, কিন্তু আমাদের স্রষ্টা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন 'হতে', আর তা হয়ে গেলো।
দেখেছেন ক্যালমা। বিজ্ঞান যদি বলে শুন্য থেকেই সব সৃষ্টি হয়েছে তবে সেটা অসম্ভব হয়ে যায়। তখন দাবী উঠে সেটা সম্ভব নয়, বিজ্ঞান ভূল, বিজ্ঞান ভূল ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আল্লাহ বললেই এমনি এমনি হয়ে যায়। একেই বলে ক্যালমা। আর এই অপযুক্তিটি যে অন্ধবিশ্বাসী আস্তিকের দল বুঝবে না সেটা আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। তারা শুধু বলবে, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ।
বিজ্ঞানের নীতিগুলো এমনি এমনি তৈরি হতে পারবে না কিন্তু আল্লাহ বললেই এমনি এমনি তৈরি হয়ে যাবে। মাগার আল্লাহকে সৃষ্টি হতে হবে না। সব চেয়ে বড় ক্যালমাটি দ্বারা অন্ধবিশ্বাসী কুসংস্কারাচ্ছন্ন আস্তিকরা ভালো ভাবেই আক্রান্ত। কারণ তারা জন্ম থেকেই ধরে নেয় যেহেতু আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা তাই তার কোনই সৃষ্টিকর্তা থাকতে পারবে না। এই অসম্ভব রকমের ক্যালমাটি কিন্তু আস্তিকরা অন্ধের মতই মেনে নেয়। কিন্তু জ্ঞানিরা নয়। আর সেটা নিয়ে আপনার মাথা ব্যথাও নয়। কারণ আপনার টার্গেট অজ্ঞদের কাছে মহা বিজ্ঞানী হওয়া।
এরপর আপনার কুযুক্তিটিকে আরেকটু পাকাপুক্ত করার জন্য আরেকটা অস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারেন যা অন্ধবিশ্বাসী অজ্ঞ আস্তিকদেরকে আরো বিভ্রান্তিতে ফেলে দেবে। আর সেটা করতে লেখুন,ধরুন একটা ম্যাজিশিয়ান ম্যাজিক দেখাচ্ছে। ম্যাজিশিয়ান বসে আছে ষ্টেজের এক কোণায়।কিন্তু সে তার চোখের ইশারায় ম্যাজিক দেখাচ্ছে। দর্শক দেখছে, খালি টেবিলের উপরে হঠাৎ একটা কবুতর তৈরি হয়ে গেল,এবং সেটা উড়েও গেলো।
এই কুযুক্তিটির প্রধান ফাকিটা দেখেছেন? আপনি কি কোনদিন ম্যাজিশিয়ান ছাড়া ম্যাজিক দেখেছেন? দেখেননি তাই না? ম্যাজিক যদি ম্যাজিশিয়ান ছাড়াই দেখতে পেতেন তবে সেটাই কিন্তু সব থেকে বড় ম্যাজিক হতো তাই না?
এই ফাকিটি যদি ধরতে পারেন তবেতো আপনি ইতিমধ্যেই কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে বসে গেছেন। আর যদি না পারেন তবে একটু অপেক্ষ করুন আমিই বলে দিচ্ছি যাতে আপনিও খুব সহজেই কুরআনের মতো একটি প্রাচীন ভ্রান্তির বইকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ হিসেবে দেখিয়ে নিজেকে অন্ধবিশ্বাসী অজ্ঞদের কাছে মহাবিজ্ঞানীর খেতাব পেতে পারেন।
একজন ম্যাজিকের দর্শক কিন্তু জানে যে একজন ম্যাজিশিয়ানের অস্তিত্ব আছে। এবং সে নিজের চোখের সামনেই দেখতে পায় ম্যাজিকটি ঘটছে। অর্থাৎ তথ্য প্রমাণ মানুষের সামনেই থাকে। বিজ্ঞান কাজ করে এভাবেই। অর্থাৎ বাস্তবিক উপায়ে।
যদি ম্যাজিশিয়ান না থাকে তবে কোন দিনই ম্যাজিক সংঘটিত হয় না। কিন্তু প্রকৃতির সব কাজই কারো হস্তক্ষেপ ছাড়াই ঘটে। এখানে কোনই ম্যাজিক নেই। আর তাই মানুষ মনে মনে একজন ম্যাজিশিয়ানকে কল্পনা করে নিয়েছে। অথচ বাস্তবে ম্যাজিক দেখলে ম্যাজিশিয়ানকেও দেখতে পাওয়া  যায়। কারণটি খুব সহজ, ম্যাজিকে অবশ্যই একজন ম্যাজিশিয়ানের দরকার হয়। কিন্তু প্রকৃতির ক্রিয়াকলাপে কখনই কোন ম্যাজিশিয়ান লাগে না। এখানেই বাস্তবতা এবং কল্পনার তথা ধর্মের পার্থক্য।
আপনি নিজেও জানের যে ম্যাজিশিয়ান ছাড়া ম্যাজিক দেখা যায় না। কিন্তু আপনি ইচ্ছে করেই এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করলেন যাতে আপনার পাঠকরা খুব সহজেই বিভ্রান্ত হতে পারে। কারণ এতে করেই কেবল আপনি আপনার কুযুক্তিটিকে সত্য বলে দেখাতে পারছেন। অন্যথায় আপনার কুযুক্তিটি কাজ করছে না। আপনি এমন ভাবেই উদাহরণটি উপস্থাপন করলেন যেন সৃষ্টিকর্তার কাল্পনিক ধারণার সাথে হুবহু মিলে যায়। আপনি বললেন একজন ম্যাজিশিয়ান আড়ালে বা স্টেজের কোণায় বসে আছে যেমন সৃষ্টিকর্তা আড়ালে থাকে (লক্ষ করুন ম্যাজিশিয়ানের অস্তিত্ব আছে এবং তা প্রমাণ করা যায়। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নেই এবং তাকে প্রমাণ করাও যায় না) কিন্তু ম্যাজিক ঘটে চলছে কিন্তু ম্যাজিশিয়ানকে দেখা যাচ্ছে না যেমন মহাবিশ্বের কাজগুলো চলে কিন্তু সৃষ্টিকর্তাকে দেখা যায় না। এই উদাহরণের ফাকিটিতেই কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানোর পদ্ধতির ফাকিটি লুকিয়ে আছে। আপনি একটি ভূল ধারণাকে প্রমাণ করতে একটি ধারণাকে ভূল ভাবে উপস্থাপন করছেন যা বাস্তবে ঘটে না বা অস্বাভাবিক।
ঠিক একই ভাবে আপনি একটি চিরচারিত ধারণাকে উল্লেখ করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় দাবী করছেন। যেমন পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মই দাবী করেছে যে বিশ্বজগতকে সৃষ্টিকর্তা শুন্য থেকে সৃষ্টি করেছে অর্থাৎ অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বশীল করেছে। অথচ কোন সৎ মানুষই এটা দিয়ে বিজ্ঞানের কুয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের শুন্য থেকে বস্তুকণা সৃষ্টির ধারণাকে মেলায়নি। তারা তাদের সেই ধর্মীয় ধারণার সাথে মিলিয়ে তাদের ধর্মগ্রন্থকে বিজ্ঞানময় দাবি করলেই সেটা কুয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন হয়ে যায় না। ঠিক একই ধারণার কথা মুহাম্মদ কুরআনে লিখার কারণেও কুরআন বিজ্ঞানময় গ্রন্থ হয়ে যায় না। ধর্মের দাবী অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার শুন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করা আর বিজ্ঞানের কুয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের রাত আর দিনের পার্থক্য যা জ্ঞানীরা বুঝলেও অন্ধবিশ্বাসী কুসংস্কারাচ্ছন্ন আস্তিকরা বুঝতে পারে না। কারণ কুয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন ঘটে নিজে নিজে অথচ ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী শুন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করতে একজন কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তা লাগে। অনেকটা পায়েশের সাথে তেতুলের মিল দেখানোর মতো ব্যাপার এটা।  
এবার নিশ্চয়ই আপনি বুঝে গেছেন ভূলে ভরা মিথ্যা ধারণার প্রাচীণ কুরআনকে কিভাবে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে হয়? তাহলে আর দেরী করছেন কেন? তারাতারি কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানো শুরু করে দিন। জাকির নায়েকের মতো বিজ্ঞান না জানা মানুষ যদি পারে কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে তবে আপনিও পারেন ক্রিয়েশনিস্টদের ওয়েব সাইট থেকে অপবিজ্ঞান শিখে  কুরআনের মতো ভূলে ভরা গ্রন্থকে বিজ্ঞানময় বানাতে।
সুতরাং শুরু করে দিন কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানো। আর জিতে নিন অন্ধবিশ্বাসী কুসংস্কারাচ্ছন্ন অজ্ঞ মুসলমানদের দ্বারা মহাবিজ্ঞানীর খেতাব। অন্যান্য আম পাবলিকের মতো আপনিও মহাবিজ্ঞানী হয়ে যান।

5 comments:

  1. ১ দিন (২৪ ঘন্টা) যদি আলোর বেগে যাওয়া যায়, তাইলে সে দুরত্ব হবে= 25920000000 কিলোমিটার। ঠিক কিনা? আমি এখনো স্টাডি করি। আমার জ্ঞান কম। যাই হোক, ভিডিওটি দেখতে পারেন,
    https://youtu.be/wwUYF1F6x1o

    ReplyDelete
  2. আল্লাহ তা'আলার নাজিলকৃত মহাগ্রন্থ কোরআনে বর্ণিত পৃথিবী, আকাশ, তারা ইত্যাদী আর বিজ্ঞানের দেওয়া মহাবিশ্ব* সম্পর্কিত তথ্য পরস্পর বিপরীত মেরুর। কারণ কথিত বিজ্ঞান আমাদের(মানুষ) মিথ্যা, বানোয়াট, এবং কল্পিত বিষয় শিখাচ্ছে। যা আমারা অন্ধের মতন চোখ বন্ধ করে মেনে নিচ্ছি। তাদের বিশ্বাস কুফরের উপর প্রতিষ্ঠিত। যা অনেক মুসলিম ভাইরা না জানার কারনে বিশ্বাস করছে। আর তোদের মত ন্যস্টিকরা সেসব মুসলিম ভাইদের যেসব কোরআন-হাদীস থেকে প্রশ্ন বা দলিল দেখিয়ে বিব্রত করতে চাস আমরা সেসব দলিল গর্ব করে প্রচার করে থাকি। ইনশাআলাহ্ শীঘ্রই এমন সময় আসবে যখন মুসলিমরা কোরআন-হাদীসেকে আর বিজ্ঞানের সাথে মিলাতে যাবে না বরং সেসব (অপ)বিজ্ঞানকে তা আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে।

    আর তরা পিথাগোরাস, ইবনে আরাবি, খোয়ারিজমি নিউটন, কোপার্নিকাস, জাদুকরদের 'বৈজ্ঞানিক' বলতে গর্ব করিস। কিন্তু আমরা তদের ব্যাবিলনীয় নিষিদ্ধ জ্ঞান জাদু চার্চর জন্য তাদের উপর কুফর সাব্যস্ত।
    কোরআন, নবী(সাঃ)র হাদীস, সাহাবাদের(রা:) বিশ্বাস এসব থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল।

    তোদের গাত্রদাহের জন্য কিছু লিংক দিলাম।
    [Undeniable Proof]
    জিওসেন্ট্রিক কস্মোলজি(Documentary):
    https://truth-stranger.blogspot.com/2019/01/documentary-articles.html

    [Islamic Proof]
    ইসলামের দৃষ্টিতে সৃষ্টিত্বত্ত(Documentary):
    https://truth-stranger.blogspot.com/2019/03/article-series.html?m=1
    [Running Series...]

    ReplyDelete
  3. মহিলা সাহাবীদের নামের তালিকা দেখুন। ইসলামের সৌভাগ্যবান ৭৯ জন মহিলা সাহাবীদের নাম
    https://islami-bangla.blogspot.com/2020/02/blog-post_139.html

    ReplyDelete
  4. নাস্তিকদের কাছে প্রশ্ন!
    আমার মেয়ের (৫ বছর) গত ১১/০১/২০২১ তারিখে একটা স্বর্ণের আংটি লুজ হওয়ায় হাত থেকে খুলে হারিয়ে যায়। সারাদিন অনেক জায়গায় ঘোরাফেরা করেছে। তাই কোথায় খুলে পড়েছে অনেক খুজেও পাওয়া যায় নি। মনে খুব কষ্ট নিয়েই মেয়ে রাত্রে ঘুমিয়ে পড়েছে। কারন আংটিটা অনেকদিন ধরে চাওয়ার পর মাত্র কয়েকদিন আগে বানিয়ে দিয়েছি। আমরাও খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম মেয়ের মন খারাপ দেখে। যাইহোক ফজরের ওয়াক্তে হঠাৎ আমার মেয়ে ঘুম থেকে উঠে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে উঠছে আম্মু আম্মু আমার আংটি পেয়েছি। ওর আম্মু জিজ্ঞেস করছে কোথায় তোমার আংটি মামুনি? মেয়ে বলছে আল্লাহ আমাকে স্বপ্নে দেখিয়েছেন খাটের নিচে আংটি পড়ে আছে। তখনি খুঁজে দেখা গেল সত্যিই খাটের নিচে আংটিটি পড়ে আছে। এই ঘটনায় আল্লাহর প্রশংসা কিভাবে করব বুঝে পাচ্ছি না। আপনারা হলে কি করতেন ????

    ReplyDelete
    Replies
    1. নবুয়তির লক্ষ্মণ। থুক্কু মহিলারা নবী হয় না।

      Delete