যুক্তিটাকে
খুব জোড়ালো এবং উপযুক্ত যুক্তি বলে আস্তিকরা অন্ধের মত বিশ্বাস করে
থাকে l তাদের বোধ শক্তিতে এটাই সব চেয়ে উপযুক্ত যুক্তি
বিবর্তনবাদকে মিথ্যা প্রমান করার জন্য l আর যেসব আস্তিক
এই যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চায় বা নিজেরাও বোঝে যে বিবর্তনবাদ যদি সত্য হত তবে মাছ থেকে
মত্স্য কন্যা হত ! মাছ থেকে বানর এবং এর পরে বানর থেকে মানুষ হওয়ার বদলে সরাসরি মাছ
থেকে মত্স্য কন্যা হওয়া অধিক সহজ এবং যুক্তিযুক্ত !
যেসকল আস্তিক
এই দাবিটি করে তারা বিবর্তনবাদ সম্পর্কে খুব সামান্য ধারনাই রাখেন l
বিবর্তনবাদ
অনুযায়ী পৃথিবী জীব বসবাসের উপযুগী হওয়ার পরে অর্থাত পৃথিবীতে পানি এবং বাতাসে অক্সিজেন,
নাইট্রোজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরী হবার পরে প্রথম এক কোষী
জীব তৈরী হয়েছিল পানির মধ্যে বা পানিতে l পরে এই এক কোষী
জীব (যেমন ব্যাকটেরিয়া) কোষ বিভাজনের মাধ্যমে বহুকোষী জীব তৈরী করে l এর পরে ক্রমান্নয়ে
বহুকোষী প্রাণী তৈরী হয় এগুলো ছিল অনেকটা বর্তমান মাছের মত প্রাণী l এই মাছগুলো পরবর্তিতে বিবর্তিত হয়ে পাখা বা ফুলকা বা লেজ আকৃতির
প্রাণীতে পরিনত হয়েছে l এর লক্ষ বছর পরে এই
প্রানীগুলো থেকে কিছুটা শক্ত মাংস ওয়ালা অঙ্গ (অনেকটা হাতের মত) প্রাণী তৈরী করে যেগুলো ক্রমান্নয়ে উভচর হিসেবে আচরণ করতে থাকে
l এরাই পরবর্তিতে ডাঙায় উঠে আসতে শুরু করে l এর মাধ্যমেই প্রাণী মাছ প্রজাতির পূর্ব পুরুষ থেকে পৃথক হয়ে
সম্পূর্ণ একটা স্থলচর প্রাণীর আবির্ভাব ঘটে l এর লক্ষ বছর পর গিরগিটি বা টিকটিকি অথবা ইদুরের মত এক প্রকারের প্রাণীর উদ্ভব হয়
যেগুলো থেকে পরবর্তিতে বড় আকৃতির প্রাণী বিবর্তিত হয়ে আরো বড় আকৃতি ধারণ করতে থাকে
l এভাবে পর্যায় ক্রমে বাঘ সিংহ, হাতি ঘোড়া প্রভৃতি প্রাণীর আবির্ভাব ঘটে l এবং মানব তৈরির সূচনা হয় বানর জাতীয় প্রাণী তৈরী হবার মাধ্যমে l এর পর থেকেই বানর থেকে পর্যায় ক্রমে বিবর্তনের মাধ্যমে গরিলা, শিপ্পাঞ্জি ও শেষে মানুষের আবির্ভাব ঘটে l আর এই বিবর্তন প্রক্রিয়ায় পানিতে তৈরী হয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এবং ডলফিন,
হাঙ্গর ও তিমির মত বড় প্রাণীর l আবার স্থলে সাপ, বেজি, খরগোস প্রভৃতি থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে পর্যায় ক্রমে তৈরী হয়েছে শেয়াল-কুকুর,
ছাগল-ভেরা, গরু-মহিষ, বাঘ-সিংহ, হাতি-ঘোড়া প্রভৃতি
উচু স্থরের প্রাণীর l এছাড়াও স্থলের প্রানীদের মধ্যে কিছু প্রাণী হিংস্র প্রানীদের
হাত থেকে বাচতে উড়তে শিখে যায় l ফলে পাখির মত প্রাণীর
উদ্ভব ঘটে l
বিবর্তন ঘটার
পিছনে কাজ করেছে সেই অঞ্চলের আবহাওয়া l যেখানে যে প্রাণীর
সহজে উদ্ভব হতে পেরেছে সেখানে সেই প্রাণীর আবির্ভাব হয়েছে l আর যেখানে যে প্রাণীর বেচে থাকার উপযোগিতা বেশি ছিল সেখানে সেই প্রাণী টিকে থেকেছে
খুব সহজে l ফলে প্রাণীর বিবর্তন নির্ভর করেছে প্রাণীর
বসবাসের উপযোগিতার উপর l আবার যে প্রাণী পরিবেশের
সাথে খাপ খাওয়াতে পারেনি সে প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে l
বিবর্তন নির্ভর
করেছে প্রাণী কোন পরিবেশে উদ্ভব হয়েছে এবং সেই পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর সংগ্রাম
থেকে l কোন প্রাণী কোন এক পরিবেশে উদ্ভুত হয়ে সে
সেই পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করেছে l আর এই খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা থেকে বিবর্তন ঘটেছে প্রায় সব প্রাণীর মধ্যে l
এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ডিএনএ মিউটেশন প্রাণীর বিবর্তনের
ক্ষেত্রে মুখ্য ভুমিকা পালন করেছে l
আর এভাবেই বিবর্তনের
ধারা পরিচালিত হয়েছে l
তাই প্রথমে
জীব জগতের উদ্ভব ঘটেছে পানিতে l পরে এটি স্থলে প্রবাহিত
হয়েছে l তৈরী করেছে উদ্ভিদ জগত l প্রাণী জগত প্রথমে
পানিতে বেশি উপযোগী ছিল আর তাই পানিতেই এদের প্রথম উদ্ভব ঘটে l পরবর্তিতে প্রাণী বিবর্তিত হয়ে প্রথমে নরম মাংসের প্রাণী এবং
পরে মেরুদন্ডি প্রাণীর উদ্ভব হয়েছে l এরপর এই মেরুদন্ডি
প্রাণী পানিতে সাতার কাটার তাগিদে তৈরী হয়েছে লেজ ও ফুলকা l পরে এদের কিছু কিছু প্রাণী বিবর্তিত হয়ে মাংসল অঙ্গ যেগুলো পরবর্তিতে শক্ত হয়ে
হাত বা পায়ের মত অঙ্গ তৈরী হয়েছে l এগুলো উভচর হিসেবে
আচরণ করেছে এবং বাচার তাগিদে স্থলে বসবাস করা শুরু করেছে l আর এ ভাবেই প্রাণী বিবর্তিত হয়ে তৈরী করেছে বিশাল প্রাণীজগত l ফলে প্রাণী ধাপে ধাপে উচুস্থরের প্রাণী তৈরী করেছে l
এবং এক সময় বানর, শিপ্পাঞ্জি
ও মানুষ প্রভৃতির আবির্ভাব হয়েছে l
এক প্রাণী অন্য
প্রাণীতে বিবর্তিত হবার সময় সবচেয়ে উপযোগী প্রাণীতে পরিবর্তিত হয়েছে l যেমন পানিতে যে প্রাণীজগত বিবর্তিত হয়ে তৈরী হয়েছে সেটা পানির
উপযোগী হয়ে টিকে থেকেছে l আর এজন্যই মাছের ও
অন্যন্য সামদ্রিক প্রাণীর গঠন প্রণালী এক রকম; আবার স্থলের প্রাণীজগতের গঠন প্রণালী অন্যরকম l এবং পাখিদের গঠন প্রণালী অন্য রকম l
মানুষের গঠন প্রণালী এবং শিপ্পাঞ্জি ও বানরের গঠন প্রণালীর মধ্যে
অনেক মিল আছে l মানুষের আবির্ভাব বানর হয়ে শিপ্পাঞ্জি ও মানুষের
পূর্বপুরুষের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে l এটা হয়েছে ধাপে
ধাপে l যদি
বানর এবং শিপ্পান্জির পূর্বপুরুষের আবির্ভাব না ঘটত তবে মানুষের উত্পত্তি পৃথিবীতে
হত না l পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব ঘটা সম্ভব হয়েছে
তার একমাত্র কারণ মানুষ, শিপ্পাঞ্জি এবং বানরের
পূর্বপুরুষের আবির্ভাব হয়ে ছিল বলেই l
আস্তিকদের মত্স্য
কন্যার ধারণার সাথে বিবর্তনকে মিলিয়ে ফেলতে যে অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারটা কাজ করে
সেটা হচ্ছে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবকে তারা আবশ্যিক কল্পনা করে l তাদের ধারণা পৃথিবীতে প্রাণীজগতের উত্পত্তির মূল কারণ মানুষের
আবির্ভাব ঘটা l আর তাই তারা চিন্তা করতে ভালবাসে যে যেখানেই
প্রাণীজগতের আবির্ভাব ঘটুক না কেন অবশ্যই মানুষের আবির্ভাব ঘটবেই l অর্থ্যাত তাদের ধারণা প্রাণীজগতের মূল উদ্দেশ্য মানুষ সৃষ্টি
l
কিন্তু তারা
এই ব্যাপারটা চিন্তা করে দেখে না যে পৃথিবীতে মানুষের উত্পত্তি নাও ঘটতে পারত l
মানুষের উত্পত্তি সম্ভব হয়েছে কারণ মানুষের উত্পত্তির যতগুলো
ধাপ পার হওয়ার দরকার তার সবগুলোই পার হয়েছে এবং সৌভাগ্য ক্রমে মানুষের পূর্বপুরুষের
জ্বিনে আমূল পরিবর্তন ঘটেছিল l যদি মানুষের পূর্বপুরুষদের
মধ্যে কোন একজন বিলুপ্ত হত মানুষের আবির্ভাবের পূর্বেই তবে আর মানুষের আবির্ভাব ঘটত
না পৃথিবীতে l আবার যদি মানুষের ডিএনএ-তে মিউটেশন না ঘটত
তবে মানুষের আবির্ভাব ঘটত না l পৃথিবীতে শুধু বানর
শিপ্পাঞ্জি এগুলো থাকতো l এবং পৃথিবীতে কোন বুদ্ধিমান
(মানুষের মত) প্রাণীর আবির্ভাব ঘটত না l
কিন্তু আস্তিকদের
ধারণা প্রাণীজগত তৈরী হয়েছে বা আবির্ভূত হয়েছে একমাত্র মানুষের আবির্ভাবের উদ্দেশ্যে
l আর তাই যেখানেই প্রাণীজগত থাকবে সেখানেই মানুষের আবির্ভাব ঘটতে
বাধ্য হবে l
এ চিন্তা থেকেই
তারা ধরে নেয় যদি বিবর্তন সত্যি হয়ে থাকে তবে ডাঙায় মানুষের উদ্ভব না ঘটে পানিতে মত্স্য
কন্যার উদ্ভব ঘটত l এখানে তাদের চিন্তার এবং বুদ্ধির অসারতা হচ্ছে
তাদের ধারণা যেখানেই প্রাণীজগত থাকবে সেখানেই মানুষের আবির্ভাব ঘটবে l আর তাই পানিতেই মানুষের বিবর্তন হয়ে মত্স্য কন্যার উদ্ভব ঘটবে
l
আস্তিকদের এই
রকম ধারনার কারণ হচ্ছে তারা বিবর্তন সম্পর্কে খুব কম (একদম অল্প পরিমান) জ্ঞান রাখে
l আর এজন্যই তারা এরকম উদ্ভট কথা উত্থাপন করে l
পানিতেও বিবর্তন
ঘটেছে l এবং পানিতে বিবর্তন ঘটে পানিতে বসবাসকারী
হাজারও প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছে l যেমন বিবর্তনের প্রথম
দিকে ছিল ছোট ছোট প্রাণী এবং ছোট ছোট মাছ l পরবর্তিতে বড় মাছের আবির্ভাব হয়েছে এবং আরো পরে রাক্ষসে মাছের উদ্ভব ঘটেছে l
আবার অন্যন্য প্রাণী যেমন কচ্ছপ, কুমির সাপ ব্যাং প্রভৃতি প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছে l এমনকি বিবর্তনের মাধ্যমে তিমির মত বৃহৎ প্রাণীর আবির্ভাব ঘটেছে l
আর তাই আস্তিকদের
দাবি বিবর্তন ঘটলে অবশ্যই সরাসরি মানুষ তৈরী হতে হবে কথাটা পুরোপুরি ভিত্তিহীন l
বিশ্বজগতে অনেক
জায়গাতেই প্রাণী জগতের উদ্ভব ঘটার অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে l তাহলে যদি অন্য কোথাও (আমাদের সৌরজগত বা গ্যালাক্সির বাইরে)
প্রাণীজগতের সন্ধান পাওয়া যায় তবে সেখানেও দেখা যাবে একটা প্রাণীজগতের সৃষ্টি হয়েছে
যেখানে হাজারও রকমের প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছে l সেখানে বুদ্ধিমান প্রাণী থাকারও খুব বেশি সম্ভাবনা রয়েছে l তাহলে সেই জগতে যে বুদ্ধিমান প্রাণীর আবির্ভাব ঘটবে সেটা কি
মানুষই হবে ? আস্তিকদের ধারণা মতে প্রাণীজগতের মূল উদ্দেশ্য
মানুষের আবির্ভাব ঘটা হলে সেখানেও মানুষের উত্পত্তি ঘটা উচিত l কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সেখানে কোন মানুষের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে
না বরং সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের প্রাণীর আবির্ভাব ঘটবে l যেমনটা ঘটা সম্ভব অসংখ্য গ্যালাক্সির অসংখ্য গ্রহে l এবং কোথাও মানুষ থাকবে না l এর কারণ হচ্ছে প্রাণী
জগতের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উপযোগী প্রাণী তৈরী করা কিন্তু মানুষ তৈরী করা নয় l
আর তাই পৃথিবীতে মানুষ তৈরী হওয়া কোন পূর্ব নির্ধারিত ঘটনা নয়
l এটা ঘটেছে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ ঘটার মাধ্যমেই l যদি এই সুনির্দিষ্ট কারণগুলো না ঘটত তবে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব
ঘটত না l যেমন যদি মানুষের পূর্বপুরুষের বিলুপ্তি ঘটে
যেত, যদি কোন বড় দুর্ঘটনা ঘটতো; তবে মানুষ,
শিপ্পাঞ্জি প্রভৃতির আবির্ভাব ঘটতো না l আবার যদি মানুষের জ্বিনের মিউটেশনের মাধ্যমে ক্রোমোসোম সংখ্যার
পরিবর্তন না ঘটতো তবে পৃথিবীতে কোন মানুষের আবির্ভাব ঘটতো না l শুধু শিপ্পাঞ্জিরা থাকতো l জেনেটিকেল মিউটেশনের মাধ্যমেই অন্যান্য Homo. প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়ে Homo sapience বা মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে l আর তাই পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব ঘটা প্রধান উদ্দেশ্য ছিলনা বরং মানুষের আবির্ভাব
ঘটেছে ডিএনএ-এর মিউটেশন নামে এক দুর্ঘটনার মাধ্যমে l
যদি শিপ্পাঞ্জি
এবং অন্যান্য হোমো প্রজাতির মধ্যে ডিএনএ-এর মিউটেশনের মাধ্যমে ক্রোমোসোম সংখ্যা ২৪
জোড়া থেকে কমে ২৩ জোড়া না হতো তবে পৃথিবীতে মানুষের উদ্ভবই ঘটতো না l কারণ ডিএনএ মিউটেশনের মাধ্যমে অন্যান্য হোমো প্রজাতির একটির
মধ্যে ২ জোড়া ক্রোমোসোম-এর মধ্যে মিউটেশন ঘটে ১ জোড়া ক্রোমোসোম তৈরী হয়েছিল l
( ২ জোড়া বা ৪ টা ক্রোমোসোম মিলে এক জোড়া বা ২ টা ক্রোমোসোম গঠন
করেছে) ফলে ২৪ জোড়ার মধ্যে ২২ জোড়া অপরিবর্তিত থেকেছে এবং ২ জোড়া ক্রোমোসোম মিলিত হয়ে
১ জোড়া ক্রোমোসোম তৈরী করেছে l ফলে নতুন একটি প্রজাতি
হোমো সেপিয়েন্স বা মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে পৃথিবীতে l আর এভাবেই বিবর্তন ঘটেছিল বলে মানুষের উদ্ভব সম্ভব হয়েছে l যদি এককোষী ব্যাকটেরিয়া
বিবর্তিত হয়ে হোমো প্রজাতি (২৪ জোড়া ক্রোমোসোম) তৈরী হতে না পারতো তবে কখনই
মানুষের (২৩ জোড়া ক্রোমোসোম) উদ্ভব ঘটা সম্ভব হতো না l
এখানে উল্লেখ্য
যে পৃথিবীতে মানুষের মত একটা প্রাণীর উদ্ভব ঘটার জন্য অবশ্যই অন্তর্বর্তী প্রাণী যেমন
বানর, গরিলা প্রভৃতির উদ্ভব ঘটা আবশ্যিক ছিল l যদি এই অন্তর্বর্তী প্রজাতির একটি বিলুপ্ত হয়ে যেতো পরবর্তী
প্রজাতির উদ্ভব হওয়ার আগেই তবে পৃথিবীতে মানুষের উদ্ভব ঘটা অসম্ভব ছিল l
আবার শারীরিক
দিক দিয়ে মাছের গঠনের সাথে মানুষের গঠনের আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে l মাছের পূর্ব পুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়ে মানুষের উদ্ভব হতে যে অন্তর্বর্তী
প্রানীগুলোর উদ্ভব হতে হবে সেগুলো না হলে কখনই মানুষের উদ্ভব হওয়া সম্ভব হবে না l
বিবর্তনের নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে মাছের পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত
হয়ে উভচর প্রাণীতে পরিনত হতে হবে l পরে এই উভচর প্রাণী
বিবর্তিত হয়ে বাঘ সিংহ হাতি এবং বানর প্রভৃতির পূর্বপুরুষে পরিনত হতে হবে l
এর পরে বানর থেকে মানুষের পূর্বপুরুষের (যেমন গরিলা) আবির্ভাব
ঘটবে l যদি মাছ থেকে মানুষের মত উন্নত প্রাণীর উদ্ভব
হতে হয় তবে বানর বা গরিলা প্রভৃতির মত উন্নত প্রাণীর উদ্ভব ঘটতে হবে l কিন্তু মাছের গঠন প্রণালী কখনই বিবর্তিত হয়ে মানুষের গঠন প্রণালী
তৈরী করার মত উপযুক্ত নয় l
মানুষের ডিএনএ
এবং মাছের ডিএনএ-এর মধ্যে অনেক বেশি পার্থক্য l কিন্তু প্রকৃতিতে প্রাপ্ত অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে মানুষের ডিএনএ-এর সাথে অন্যান্য
স্থলচর প্রাণীর উল্লেখযোগ্য মিল রয়েছে l আর এ থেকেই
বোঝা যায় মাছ থেকে সরাসরি মানুষের উদ্ভব ঘটা কখনই সম্ভব নয় l কিন্তু বানর বা গরিলা অথবা শিপ্পান্জির গঠনের মিল দেখে সহজেই
অনুমান করা যায় যে মানুষের উদ্ভব ঘটেছে বানরের এবং গরিলা বা শিপ্পান্জির পূর্বপুরুষ
থেকে l
কর্ড মাছের
ক্রোমোসোম সংখ্যা ১০৪ কিন্তু শিপ্পাঞ্জি বা গরিলার ডিএনএ সংখ্যা ৪৮ এবং মানুষের ডিএনএ
সংখ্যা ৪৬ l আর তাই গরিলা থেকে মানুষ তৈরী হওয়া অনেক যুক্তিযুক্ত
l কিন্তু মাছ থেকে সরাসরি মানুষের আবির্ভাব ঘটা অসম্ভব l
মানুষের বিবর্তন
ঘটা সম্ভব হয়েছে এককোষী ব্যাকটেরিয়া থকে বিবর্তনের মাধ্যমে বহুকোষী প্রাণী এবং পরবর্তিতে
মাছ এবং উভচর প্রাণীর উদ্ভব এবং এরও অনেক পরে স্থলচর প্রাণী বাঘ, সিংহ, হাতি, বানর প্রভৃতির পূর্বপুরুষের উদ্ভব এবং সব শেষে মানুষের পূর্বপুরুষের
উদ্ভবের মাধ্যমেই এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে মানুষের উদ্ভব ঘটেছে l এই পদ্ধতি ছাড়া কখনই মানুষের উদ্ভব ঘটতো না পৃথিবীতে l
পানিতে মাছের পূর্বপুরুষের মধ্যে বিবর্তন ঘটে তৈরী করেছে জলচর
প্রাণী এবং উভচর প্রাণী l আবার উভচর প্রাণীর
বিবর্তনের মাধ্যমে তৈরী হয়েছে স্থলচর প্রাণী l এবং এই স্থলচর প্রাণীর বিবর্তনের মাধ্যমে তৈরী হয়েছে উন্নত শ্রেনীর স্থলচর প্রাণী
l আর এর থেকে তৈরী হয়েছে গরিলা শিপ্পাঞ্জির মত উন্নত প্রাণী l
এদের পূর্বপুরুষের মধ্যে ডিএনএ-এর পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরী হয়েছে
অতি উন্নত প্রাণী মানুষের l
এভাবেই বিবর্তন
সম্পন্ন হয়েছে l এটাই বিবর্তনের ধারা l এর বিকল্প সম্ভব নয় কখনই !
আর তাই মাছ
থেকে মত্স্য কন্যা নয় বরং গরিলা শিপ্পান্জির মত প্রাণীর পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়ে
মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে l
বিবর্তন মানুষের
মাঝে ঘটেছে এবং ঘটছে l ভবিষ্যতেও বিবর্তন
ঘটতে থাকবে যতদিন প্রাণীজগত আছে l
No comments:
Post a Comment