Translate

Search This Blog

বিশেষ সতর্কবার্তাঃ

এই ব্লগটি নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সন্দেহবাদী, মুক্তমনা এবং স্বাধীনচেতা মানুষদের জন্য। যারা যেকোন বিষয়ের সমালোচনা সহ্য করার মত ক্ষমতা রাখে। যদি কোন ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিক এই ব্লগটিতে আসে তবে তার ধর্মানুভূতি নামের অদ্ভূত দূর্বল অনিভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্লগ লেখক দায়ী থাকবে না। ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিকদের নিজ দায়িত্বে তাদের দূর্বল ধর্মানুভূতিকে সংরক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে। কারো ধর্মানুভূতি নামের অযৌক্তিক অনুভূতি আহত হবার জন্য কোন ক্রমেই ব্লগার বা লেখককে দায়ী করা যাবে না। যদি কোন অতি দুর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগে ভূল করে ঢুকে পরেন এবং তিনি তার অনুভূতিকে দূর্বল ভাবেন অর্থাৎ যিনি তার ধর্মের উপযুক্ত সমালোচনা সহ্য করতে অপারগ, তাকে বিনীত ভাবে এই ব্লগটি থেকে প্রস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পরেও যদি কোন দূর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগটিতে ঘুরাফেরা করেন এবং তার ফলে তার দূর্বল ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হন তবে কোন ক্রমেই এবং কোন ক্রমেই ব্লগের মালিক, 'আমি নাস্তিক' দায়ী থাকবে না।

Monday, July 7, 2014

জাকির নায়েকের বিজ্ঞান সম্পর্কে মিথ্যাচার এবং প্রতারণা l



জাকির নায়েকের বিজ্ঞান সম্পর্কে মিথ্যাচার এবং প্রতারণা l

বিশিষ্ট ইসলামিক বক্তা জাকির নায়েক ইসলাম ধর্ম প্রচারে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি l কিন্তু লজ্জাকর ব্যাপার হচ্ছে তিনি তার বক্তৃতায় অনেক মিথ্যে কথা এবং ভুল তথ্য দিয়ে শ্রোতার কাছে প্রতারণা করে থাকে l তার বলা মিথ্যে কথা আগেও অনেকে ধরিয়ে দিয়েছে l আমিও জাকির নায়েকের মিথ্যাচার ধরিয়ে দিয়েছি l এবার তার বলা আরো একটি মিথ্যেবাদিতা ধরিয়ে দেব l

জাকির নায়েক-এর "কোরান ও আধুনিক বিজ্ঞান" বক্তৃতার (লেকচার) কিছু অংশ তুলে ধরছি -
"আমরা এখন জানবো পানি চক্র সম্পর্কে, যেটা প্রথম বলেছিলেন স্যার বার্নার্ড পেলেসী, ১৫৮০ সালে l তিনি ব্যাখ্যা করেছেন কিভাবে সমুদ্র থেকে বাষ্প হয়ে যায়, কিভাবে মেঘ তৈরী হয়, কিভাবে মেঘ উপরে উঠে যায়, কিভাবে সেখান থেকে বৃষ্টি হয়, বৃষ্টির পানি তারপর সমুদ্রে যায় l এভাবেই পানি চক্র পূর্ণ হয় l
আগেকার দিনে মানুষ ভাবতো খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে সে জব মেল্টিস, তিনি বলেছেন যে সমুদ্রের পানি বাতাসের সাথে মিশে যায় আর এই পানি পরবর্তিতে বৃষ্টি হয়ে পরে l
মানুষ আগে বুঝতে পারত না মাটির নিচের পানি, সেটা কিভাবে আসে l তাই তারা ভাবতো পানির উপরের বাতাসের প্রচন্ড চাপের কারণে, বাতাস যে প্রচন্ড চাপ দেয় এই কারণে উপরের পানি বৃষ্টিপাত হতে পারে l এই পানি মাটির উপর পড়ে l আর তারপর সমুদ্রের দিকে যায় একটা লোকানো পথে যার নাম 'এবিস' l আর প্লেটুর সময় এই পথটাকে বলা হত 'স্ট্যাটারেস' l এই মতবাদে পৃথিবীর মানুষ বিশ্বাস করে এসেছে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত l আর এরিস্টটলের থিওরিসহ বিভিন্ন দর্শন মেনে চলা হয়েছে উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত; যে মাটি থেকে পানি বাস্প হয়ে উপরে উঠে, এটা তারপর পাহাড়ের উপর জমা হয়, আর এই পাহাড়গুলোর উপরে তৈরী হয় রদ l এখান থেকে মাটির নিচে পানি জমে l
এখন আমরা জানি মাটির নিচে যে পানি জমে সেটা চুইয়ে চুইয়ে মাটির নিচে চলে যায় l
পবিত্র কোরানে আছে, সুরা জুমার-এর ২১ নাম্বার আয়াতে, উল্লেখ করা আছে-
"তোমরা কি দেখনা যে আল্লাহ তালা আকাশ হইতে বাড়ি বর্ষণ করেন, অতপর উহা ভূমিতে প্রবাহিত করেন, নির্ঝরিনী রূপে প্রবাহিত করেন এবং তত্দ্বারা বিভিন্ন বর্ণের ফসল উত্পন্ন করেন l "
এছাড়াও পবিত্র কোরানের সুরা রুম-এর ২৪ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে,
"আল্লাহ আকাশ হইতে বাড়ি বর্ষণ করেন, এবং তত্দ্বারা ভূমিকে পুনরুজ্জীবিত করেন l"
পবিত্র কোরানের সুরা মমিনুন-এর ৪৮ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে যে,
"আমি আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করি পরিমিত ভাবে, অতপর উহা মৃত্তিকায় সংরক্ষণ করি l আমি উহাকে অপসারণ করিতেও সক্ষম l"
পবিত্র কোরানে সুরা আল হিজাব-এর ২২ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে, বলা হয়েছে যে,
"আমি বৃষ্টি গর্ভ বায়ু প্রেরণ করি, যে বায়ুতে বৃষ্টি থাকে, অতপর আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করি এবং উহা তোমাদিগকে পান করিতে দিই l "
এখানে আরবি শব্দটি 'লাওয়াকি" এটা হল 'লাকি' শব্দটির বহুবচন, যার মূল শব্দ হলো 'লাকাহা' যার অর্থ গর্ভে ধারণ করা অথবা শরীরে ধারণ করা l বাতাস চারিদিক থেকে এসে মেঘগুলোকে বৃষ্টি গর্ভে রুপান্তরিত করে l তারপরে বৃষ্টি পাত হয় l বাতাসের কারণে মেঘগুলো একত্রিত হয়, প্রচন্ড চাপের সৃষ্টি হয়, বজ্র পাতের সৃষ্টি হয়, তারপর মেঘ থেকে বৃষ্টি পাত হয় l


পবিত্র কোরান সম্পূর্ণ পানি চক্রের কথা বলেছে; কিভাবে পানি বাষ্প হয় কিভাবে মেঘ তৈরী হয়, কিভাবে ঘনীভূত হয়, কিভাবে বৃষ্টিপাত হয়, কিভাবে পানি সমুদ্রে ফিরে l
অনেক জায়গায় বলা আছে l সুরা নুর-এর ৪৩ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে l সুরা নাবার ১২ নাম্বার আয়াত ও ১৩ নাম্বার আয়াতে l আর এছাড়াও সুরা রুম-এর ৪৮ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে l
পবিত্র কোরানে সুরা নুর-এর ৪৩ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে যে,
"আল্লাহ সঞ্চালিত করেন মেঘমালাকে l "
এটা দিয়ে কোরান কি বুঝাচ্ছে যখন বলা হচ্ছে যে আল্লাহ সঞ্চালিত করেন মেঘমালাকে ?
এখনকার দিনে যারা এরোপ্লেনে চড়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন, তারা বলতে পারবেন, যখন এরোপ্লেন মেঘের উপর চলে যায়, তখন যদি মেঘের দিকে তাকান, নিচে তিনি দেখতে পাবেন মেঘগুলোকে দেখাচ্ছে একটা বিশাল ঢেউয়ের মত l
কোরান একথা বলেছে ১৪০০ বছর আগে l ১৪০০ বছর আগে কোন এরোপ্লেন ছিলনা l পবিত্র কোরান হাইড্রলজি ও পানি চক্র নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন l

পবিত্র কোরানে সুরা আরাফ-এর ৫৭ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে l সুরা রাদ-এর ১৭ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে l সুরা ফুরকান-এর ৪৮ নাম্বার আয়াত এবং ৪৯ নাম্বার আয়াতে l সুরা ফাতির-এর ৯ নাম্বার আয়াতে এ কথা বলা হয়েছে l সুরা ইয়াসিন-এর ৩৪ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে l সুরা জাসিয়া-এর ৫ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে l সুরা কাফ-এর ৯ ও ১০ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে l সুরা ওয়াকিয়া-এর ৬৮-৭০ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে l আর এছাড়াও পবিত্র কোরানের সুরা মূলক-এর ৩০ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে l
পবিত্র কোরানে হাইড্রলজি এবং পানি চক্রের বিস্তারিত বর্ণনা আছে l”


এই হচ্ছে জাকির নায়েকের বলা কথা গুলো l
এখন আমরা তার বক্তৃতার পানি চক্রের অংশ টুকু নিয়ে আলোচনা করবো l
জাকির নায়েক দাবি করেছে কোরানে পানি চক্রের বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া আছে অর্থাত পানি চক্রের যতগুলো ধাপ আছে তার সবগুলোর বর্ণনা কোরানে দেয়া আছে l
পানি চক্রের শর্তানুযায়ী পানি সমুদ্র থেকে বাস্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে যায় তারপর বাস্প উপরের দিকে উঠতে থাকে l উপরের তাপমাত্রা কম থাকায় বাষ্প জমে পানিতে পরিনত হয় এবং তৈরী করে মেঘ l বাতাস মেঘকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় l যখন মেঘের ভার বাতাসের ধারণ ক্ষমতার বেশি হয়ে যায় তখন মেঘ থেকে পানি বৃষ্টি রূপে মাটিতে পড়ে l তারপরে সেই পানি নদী নালার মাধ্যমে আবার সুমুদ্রে চলে এসে পানি চক্র পূর্ণ করে l
জাকির নায়েকের দাবি যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে এই ধাপগুলোর সবগুলো কোরানে বর্ণিত থাকবে
আসুন দেখি জাকির নায়েক যে আয়াতগুলোর বর্ণনা দিয়েছে এবং উল্লেখ করেছে তার সবগুলো পর্যালোচনা করে দেখি
জাকির নায়েক নিচের আয়াতগুলো উল্লেখ করেছে -

সুরা আয যুমার :  আয়াত ২১ :
"তুমি কি দেখো না যে, আল্লাহ আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন, অতপর ভূমিতে নির্ঝররূপে প্রবাহিত করেন এবং তার দ্বারা বিবিধ বর্ণের ফসল উত্পন্ন করেন,"
সুরা রুম : আয়াত ২৪ :
"তিনি (আল্লাহ) আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন ও তার দ্বারা ভূমিকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন;"
সুরা মুমিনুন : আয়াত ১৮ :
"এবং আমি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে, অতপর আমি তা মাটিতে সংরক্ষিত করি; আমি ওকে অপসারিত করতেও সক্ষম l "
সুরা আল হিজর ; আয়াত ২২ :
"আমি বৃষ্টি গর্ভ বায়ু প্রেরণ করি, অতপর আকাশ হতে বারী বর্ষণ করি এবং তা তোমাদেরকে পান করিতে দিই; ওর ভান্ডার তোমাদের কাছে নেই l "
সুরা নুর ; আয়াত ৪৩ :
"তুমি কি দেখ না, আল্লাহ সঞ্চালিত করেন মেঘমালাকে, তত্পর তাদেরকে একত্রিত করেন এবং পরে পুঞ্জিভূত করেন, অতপর তুমি দেখতে পাও, ওর মধ্য হতে নির্গত হয় পানিধারা; আকাশস্থিত শিলাস্তূপ হতে তিনি বর্ষণ করেন শিলা এবং এটা দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা প্রদান করেন এবং যাকে ইচ্ছা তার উপর হতে এটা অন্য দিকে ফিরিয়ে দেন; "
সুরা নাবা ; আয়াত ১৪ ও ১৫ :
"আর বর্ষণ করেছি মেঘমালা হতে অবিশ্রান্ত পানি l "
"এর দ্বারা আমি উত্পন্ন করি শস্য ও উদ্ভিদ,"
সুরা রুম; আয়াত ৪৮ :
"আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, ফলে এটা মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে; অতপর তিনি একে যেমন ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন, পরে একে খন্ড-বিখন্ড করে এবং তুমি দেখতে পাও ওটা হতে নির্গত হয় পানিধারা; অতপর যখন তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের নিকট ইচ্ছা এটা পৌছিয়ে দেন, তখন তারা হয় আনন্দিত l "
সুরা আরাফ; আয়াত ৫৭ :
"সেই আল্লাহই স্বীয় রহমতের (বৃষ্টির) আগে আগে বাতাসকে সুসংবাদ রূপে প্রেরণ করেন, অবশেষে যখন ঐ বাতাস ভারী মেঘমালাকে বহন করে, তখন আমি এই মেঘমালাকে কোন নির্জীব ভু-খন্ডের দিকে প্রেরণ করি, অতপর ওটা হতে বারিধারা বর্ষণ করি, তারপর সেই পানির সাহায্যে সেখানে সর্ব প্রকার ফল ফলাদি উত্পাদন করি,"
সুরা রাদ; আয়াত ১৭ :
"তিনি আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, ফলে উপত্যকাসমূহ ওদের পরিমান অনুযায়ী প্লাবিত হয় এবং প্লাবন তার উপরিস্থিত ফেনা বহন করে, এভাবে ফেনা উপরিভাগে আসে যখন অলংকার অথবা তৈজসপত্র নির্মান উদ্দেশ্যে কিছু অগ্নিতে উত্তপ্ত করা হয়; এভাবে আল্লাহ সত্য ও অসত্যের দৃষ্টান্ত দিয়ে থাকেন; যা আবর্জনা তা ফেলে দেয়া হয় এবং যা মানুষের উপকারে আসে তা জমিতে থেকে যায়, এভাবেই আল্লাহ উপমা দিয়ে থাকেন l "
সুরা ফুরকান; আয়াত ৪৮ ও ৪৯ :
"তিনিই স্বীয় রহমতে সুসংবাদ বহনকারী রূপে বায়ু প্রেরণ করেন এবং আমি আকাশ হতে পবিত্র পানি বর্ষণ করি l "
"যার দ্বারা আমি মৃত ভু-খন্ডকে জীবিত করি এবং আমার সৃষ্টির মধ্যে বহু জীব-জন্তু ও মানুষকে তা পান করাই l "
সুরা ফাতির; আয়াত ৯ :
"আল্লাহই বায়ু প্রেরণ করে তা দ্বারা মেঘমালা সঞ্চালিত করেন l অতপর আমি তা মৃত ভু-খন্ডের দিকে পরিচালিত করি, অতপর আমি ওটা দ্বারা যমীনকে ওর মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করি l "
সুরা ইয়াসিন; আয়াত ৩৪ :
"তাতে আমি তৈরী করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং প্রবাহিত করি ঝর্ণাধারা l "
সুরা জাসিয়া; আয়াত ৫ :
"রাত্রি ও দিবসের পরিবর্তনে, আল্লাহ আকাশ হতে যে পানি বর্ষণ দ্বারা পৃথিবীকে ওর মৃত্যুর পর পুরর্জীবিত করেন তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্যে,"
সুরা ক্বাফ; আয়াত ৯ ও ১১ :
"আকাশ হতে আমি বর্ষণ করি কল্যাণকর বৃষ্টি এবং তদদ্বারা আমি সৃষ্টি করি উদ্যান ও পরিপক্ক শস্য রাজি l "
"বান্দাদের জীবিকা স্বরূপ; আমি বৃষ্টি দ্বারা জীবিত করি মৃত ভূমিকে; এভাবেই পুনরুত্থান ঘটবে l "
সুরা ওয়াকিয়া; আয়াত ৬৮, ৬৯ ও ৭০ :
"তোমরা যে পানি পান কর সে বিষয়ে তোমরা চিন্তা করেছো কি ?"
"তোমরাই কি ওটা মেঘ হতে বর্ষায়, না আমি বর্ষাই ?"
"আমি ইচ্ছা করলে ওটাকে লবনাক্ত বানাতে পারি l তবুও তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না কেন ?"
সুরা মূলক; আয়াত ৩০ :
"বল : তোমরা ভেবে দেখেছো কি যদি তোমাদের পানি ভু-গর্ভের তলদেশে চলে যায় তবে কে তোমাদেরকে এনে দিবে প্রবহমান পানি ?"


জাকির নায়েকের বর্ণিত আয়াত গুলোতে বলা হয়েছে যথাক্রমে
৩৯:২১
আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে নির্ঝররুপে আর এর দ্বারা বিভিন্ন রকমের ফসল উত্পন্ন হয় l
৩০:২৪
আল্লাহ আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে;
২৩:১৮
আল্লাহ আকাশ হইতে বাড়ি বর্ষণ করে পরিমিতভাবে, এটাকে মাটিতে সংরক্ষণ করে আর আল্লাহ একে অপসারণ করিতেও সক্ষম l
১৫:২২
আল্লাহ বৃষ্টি গর্ভ বায়ু প্রেরণ করে; আকাশ হতে বাড়ি বর্ষণ করে এবং সেটা মানুষকে পান করিতে দেয় যেটার ভান্ডার মানুষের কাছে নেই !
২৪:৪৩
আল্লাহ সঞ্চালিত করে মেঘমালাকে, তাদের একত্রিত করে পুঞ্জিভূত করে এর মধ্য হতে নির্গত হয় পানিধারা, আকাশে রক্ষিত শিলাস্তূপ থেকে শিলা বর্ষণ করে ;
৭৮:১৪
আল্লাহ মেঘমালা থেকে অবিশ্রান্ত পানি বর্ষণ করে l
৩০:৪৮
আল্লাহ বায়ু পাঠায় যেটা মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে আর একে যেমন ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেয়, খন্ড বিখন্ড করে এবং মানুষ দেখে এর থেকে পানি নির্গত হয় ;
০৭:৫৭
আল্লাহ বৃষ্টির আগে বাতাস পাঠান সুসংবাদ দিয়ে এবং বাতাস ভারী মেঘমালাকে বহন করে তখন আল্লাহ একে কোন নির্জীব শহরের দিকে নিয়ে বারিবর্ষণ করে ;
১৩:১৭
আল্লাহ আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করে ফলে উপত্তকাগুলো পরিমানমতো প্লাবিত হয়;
২৫:৪৮
আল্লাহ সুসংবাদ বহনকারীরূপে বায়ু প্রেরণ করে এবং আকাশ হইতে পানি বর্ষণ করে l
৩৫:০৯
আল্লাহ বায়ু পাঠিয়ে মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে ;
৩৬:৩৪
(আল্লাহ) প্রবাহিত করে ঝরনাধারা;
৪৫:০৫
আল্লাহ আকাশ হইতে পানি বর্ষণ দ্বারা পৃথিবীকে উর্ভর করে ;
৫০:০৯
আল্লাহ আকাশ হতে বর্ষণ করে কল্যাণকর বৃষ্টি;
(১১)আল্লাহ বৃষ্টি দ্বারা জীবিত করে মৃত ভূমিকে;
৫৬:৬৯-৭০
মানুষ মেঘমালা থেকে পানি বর্ষণ করে না বরং আল্লাহ করে;
আল্লাহ চাইলে বৃষ্টির পানিকে লবনাক্ত করে দিতে পারে;
৬৭:৩০
পানি যদি মাটির নিচে চলে যায় তবে আল্লাহ ছাড়া কেউ সেটাকে এনে দিতে পারবে না;

জাকির নায়েক বর্ণিত আয়াত গুলোতে বলা হয়েছে আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে l বায়ু দ্বারা মেঘ সঞ্চালিত হয় l বায়ু মেঘ মালাকে বহন করে নিয়ে যায় এবং যেখানে আল্লাহর ইচ্ছা সেদিকে মেঘমালা বহন করে নিয়ে যায় আর আল্লাহর ইচ্ছায় বৃষ্টিপাত হয় l
এবং এই পানি আল্লাহই মাটিতে সংরক্ষণ করে রাখে l কিন্তু এই সংরক্ষিত পানি মাটির নিচে চলে যায়না আল্লাহর ইচ্ছায় l এগুলো মাটির নিচে চলে যায় না, মাটির উপর সংরক্ষিত অবস্থায় থাকে l আবার আল্লাহ এই পানি অপসারণ করতেও সক্ষম l
উক্ত আয়াতগুলোতে সব জায়গাতেই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ হয় এই কথাটা বলা হয়েছে বারবার l কিন্তু কোথাও বলা হয়নি এই পানি কোথা থেকে আসে এবং এই পানি কোথায় যায় l
পানি চক্রের মূল শর্ত পানিকে বাষ্প হতে হবে এই শর্তটি কোরানের কোথাও বলা হয়নি l বরং বারবার বলা হয়েছে পানি আকাশ থেকে বর্ষিত হয় l কিন্তু কোথাও বলা হয়নি এই পানি কোথা থেকে আসে l আবার পানি নদী নালা ইত্যাদি পথে সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার কথা কোরানে কোথাও বলা হয়নি যেটা পানি চক্রের শেষ ধাপ l অর্থাত পানি চক্রের মূল ধাপ বাষ্প হওয়া এবং শেষ ধাপ পানি সমুদ্রে ফিরে যাওয়া সম্পর্কে কোরান কিছুই বলেনি l শুধু বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা হয়েছে আকাশ থেকে পানি বর্ষণের কথা l কিন্তু জাকির নায়ের দাবি করে বলছে কোরানে সম্পূর্ণ পানি চক্রের বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া আছে l কিন্তু কোরানের কোন আয়াতেই পানির বাস্পীভূত হওয়া এবং সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার কথা উল্লেখ নেই l
তাহলে কিভাবে কোরান সম্পূর্ণ পানি চক্রের বর্ণনা দিল ?
এখানে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে জাকির নায়েক মিথ্যে কথা বলছে যেটা সে বারবার উচ্চারণ করেছে l অর্থাত তার এই মিথ্যাচারিতা ইচ্ছা কৃত l অর্থাত সে মানুষের কাছে প্রতারণা করেছে মিথ্যে কথা বলে এবং বিজ্ঞানকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে l সুতরাং জাকির নায়েক একটা মিথ্যাবাদী এবং প্রতারক l

এবার আসি জাকির নায়েকের বক্তৃতা সম্পর্কে;
জাকির নায়েক বলেছে পানি মাটির ভিতরে প্রবেশ করে চুইয়ে চুইয়ে l এরপরেই সে একটা আয়াতের বর্ণনা দিয়েছে যাতে সে বুঝাতে চেয়েছে কোরানে এই চুইয়ে চুইয়ে মাটিতে যাবার কথা বলা হয়েছে l কিন্তু তার বর্ণিত আয়াতে অর্থাত সুরা জুমার ২১ নাম্বার আয়াতে মাটির নিচে পানি যাবার কথা বলা হয়নি !
এই আয়াতটিতে বলা হয়েছে আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে এবং সেই পানি মাটিতে প্রবাহিত করে এবং এর দ্বারা নানা বর্ণের ফসল উত্পাদন করে l সুতরাং এখানে আকাশ থেকে পানি মাটিতে পড়ার কথা এবং সেই পানির মাটিতে প্রবাহিত হবার কথা অর্থাত স্রোতের কথা বলা হয়েছে l কিন্তু মাটির নিচে পানি প্রবেশ করার কথা বলা হয়নি !
এরপরে জাকির নায়েক সুরা রুম-এর ২৪ নাম্বার আয়াতের উল্লেখ করেছে,
আল্লাহ আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে ও তার দ্বারা ভূমিকে অনুর্ভর অবস্থা থেকে উর্ভর করে l
এখানেও মাটির নিচে পানি যাবার ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি বরং বৃষ্টি সম্পর্কে একটা স্বাধারণ কথা বলা হয়েছে যে বৃষ্টি আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে এবং মাটিকে উর্ভর করে l
এরপর জাকির নায়েক সুরা মমিনুনের ১৮ নাম্বার আয়াতের উল্লেখ করেছে,
আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে পরিমিতভাবে, এরপর তা মাটিতে সংরক্ষিত করে আর আল্লাহ এই পানিকে অপসারিত করতেও সক্ষম l
এখানে পানি যে নদী নালায় বা পুকুর ডোবা প্রভৃতিতে সংরক্ষিত হয় সে কথাই বলা হয়েছে l আর আল্লাহ এই পানিকে শুকিয়ে ফেলতে পারে সেই ইঙ্গিত করেছে l
এটা দিয়ে কখনই পানির মাটির ভিতরে যাওয়া বোঝায় না বরং এটা একটা স্বাধারণ মানুষের স্বাধারণ পর্যবেক্ষণ l
এরপর জাকির নায়েক সুরা হিজরের ২২ নাম্বার আয়াতের উল্লেখ করেছে,
আল্লাহ বৃষ্টি গর্ভ বায়ু পাঠায় তারপর আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করে এবং তা মানুষকে পান করতে দেয়, যে পানির ভান্ডার মানুষের কাছে নেই l
এখানেও পানির মাটির গভীরে চলে যাবার কথা বলেনি বরং এখানে বায়ুর ভিতরে বৃষ্টিকে বহন করার কথা বলা হয়েছে যেটা পরে বৃষ্টিতে পরিনত নয় এবং পৃথিবীতে আসলে মানুষ সেই পানি পান করে সেই কথা বলা হয়েছে l আর এটা একটা স্বাধারণ মানুষের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই বলা যায় l এছাড়া আল্লাহ বলেছে পানির ভান্ডার মানুষের কাছে নেই l কথাটা এক হাজার বছর আগের জন্য প্রযোজ্য ছিল কিন্তু আধুনিক যুগের জন্য মিথ্যে ছাড়া আর কিছুই নয় l
জাকির নায়েক আরোও বলেছে বায়ু চার দিক থেকে এসে মেঘগুলোকে বৃষ্টি গর্ভে  রুপান্তরিত করে l 
জাকির নায়েকের এই কথাটা সম্পূর্ণ ভাবে মিথ্যে l বাতাসের কারণে মেঘগুলো বৃষ্টিতে রুপান্তরিত হয় না বরং পানি বাষ্প হয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকে এবং বায়ুমন্ডলের অনেক উপরে উঠার পরে সেখানে তাপমাত্রা অনেক কম থাকে বলে জলীয় বাষ্প পানিতে পরিনত হয় এবং এর ফলেই ঘন হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে l এখানে বাতাসের বিন্দু মাত্রও ভুমিকা নেই শুধুমাত্র মেঘগুলোকে বহন করা ছাড়া l জলীয় বাষ্প পানিতে পরিনত হয় তাপমাত্রার কারণে বাতাসের কারণে নয় l জাকির নায়েক এখানে মিথ্যে কথা বলেছে যে বাতাসের কারণে মেঘের সৃষ্টি হয় l সত্যিটা হচ্ছে তাপমাত্রার হ্রাসের কারণে মেঘের সৃষ্টি হয় l এবং মেঘের ভর বাতাসের ধারণ ক্ষমতার বেশি হলেই সেই মেঘগুলো মাটিতে পড়ে বৃষ্টির মত করে l
এরপরেই জাকির নায়েক মিথ্যে কথাটি বলে, সে দাবি করে যে কোরানে সম্পূর্ণ পানি চক্রের কথা বলা হয়েছে বিস্তারিত ভাবে l কথাটা কতটুকু মিথ্যে সেটা আমি আগেই প্রমান দিয়েছি l কোরানে মেঘের কথা বলা হয়েছে, মেঘের সঞ্চালিত হবার কথা বলা হয়েছে বাতাসের সাহায্যে, বৃষ্টি হবার কথা বলা হয়েছে এবং মাটিতে পানি প্রবাহিত হবার কথা বলা হয়েছে কিন্তু পানির বাষ্প হয়ে যাওয়া এবং বৃষ্টির পানির সমুদ্রে ফিরে যাবার কথা বলা হয়নি l অর্থাত কোরানে পানি চক্রের সম্পূর্ণ বর্ণনা দেয়া নেই l জাকির নায়েক দাবি করেছে কোরানে কিভাবে পানি বাষ্প হয়, কিভাবে মেঘ তৈরী হয়, কিভাবে ঘনীভূত হয়, কিভাবে বৃষ্টিপাত হয়, কিভাবে পানি সমুদ্রে ফিরে এসব কিছুই বর্ণনা করা হয়েছে l
উপরে বর্ণিত আয়াতগুলোতে মোটেও পানির বাষ্প হওয়া, মেঘ তৈরী হওয়া এবং পানির সমুদ্রে ফিরে যাবার কথা বলা হয়নি l কিন্তু জাকির নায়েক তারপরেও সেই মিথ্যে দাবিটি করেছে বারবার l
জাকির নায়েক মিথ্যে করে বারবার দাবি করেছে কোরানে সম্পূর্ণ পানি চক্রের বর্ণনা দেয়া হয়েছে l অর্থাত জাকির নায়েক মিথ্যে কথা বলেছে l অর্থাত জাকির নায়েক একজন মিথ্যেবাদী l

এরপরে জাকির নায়েক সুরা নুর-এর ৪৩ নাম্বার আয়াতের কিছু অংশ তার সুবিধা মত উপস্থান করেছে কিন্তু পুরো আয়াতটি বর্ণনা করেনি l
আল্লাহ সঞ্চালিত করে মেঘমালাকে'
জাকির নায়েক এতটুকুই বর্ণনা করে দাবি করেছে যে এখানে সঞ্চালিত হওয়া মানে মেঘের ডেউ-এর মত অবস্থাকে বুঝানো হয়েছে l তার দাবীমতে প্লেনে করে গেলেই কেবল এরকম ডেউ-এর মত মেঘ দেখা যায় l আর এটাকে সে অলৌকিক হিসেবে তুলে ধরেছে যে পৃথিবীর মানুষের এই ডেউ-এর কথা জানার কথা নয় l কিন্তু বাস্তবে আমরা সবাই মেঘকে ডেউ-এর মতই দেখি পৃথিবী থেকেও l মেঘ যখন আকাশে ভেসে বেড়ায় তখন একে ডেউ-এর মতই দেখায় l
কিন্তু ওই আয়াতটিতে ডেউ-এর কথা বলা হয়নি বরং এখানে মেঘের প্রবাহিত হয়ে ভেসে বেড়ানোর কথা বলা হয়েছে l আয়াতটিতে বলা হয়েছে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে (অর্থাত প্রবাহিত করে), তাদেরকে একত্রিত করে এবং পুঞ্জিভূত করে, এরপর এর মধ্য থেকে পানি নির্গত হয় l আল্লাহ আকাশে অবস্থিত শিলা থেকে শিলা বর্ষণ করে l
আয়াতটি লক্ষ করুন ভালো করে, এখানে মেঘের সঞ্চালিত হওয়া অর্থাত প্রবাহিত হবার কথা বলা হয়েছে l এবং বলা হয়েছে এই মেঘগুলোর একত্রিত করার কথা এবং পুঞ্জিভূত করার কথা কিন্তু মেঘের ডেউ-এর কথা বলা হয়নি l অর্থাত জাকির নায়েক এখানেও মিথ্যে কথা বলছে l প্রবাহিত হওয়াকে ডেউ বলে ভুল ও মিথ্যে কথা প্রচার করছে l
আর এই আয়াতটি কেন জাকির নায়েক সম্পূর্ণ উল্লেখ করেনি সেটা লক্ষ করুন, বলা হয়েছে আল্লাহ আকাশের শিলাস্তূপ থেকে শিলা বর্ষণ করে l অর্থাত কোরানের দাবি অনুযায়ী শিলা যেটা আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে সেটা আকাশেই থাকে l অর্থাত কোরানে শিলা সম্পর্কে মিথ্যে কথা বলা হয়েছে l আল্লাহ বলছে শিলা আকাশেই থাকে আর সেখান থেকে আল্লাহ পৃথিবীতে নিক্ষেপ করে l অর্থাত শিলা আসলে কি থেকে তৈরী হয় এই তথ্যটা আল্লাহর জানা নেই l আল্লাহ ধরে নিয়েছে যে শিলা আকাশেই থাকে l
কিন্তু আমরা জানি যে বাষ্প বাতাসে ভেসে উপরের দিকে উঠতে থাকে এবং পরবর্তিতে এই বাষ্প জমে গিয়ে মেঘের সৃষ্টি করে কিন্তু বায়ুমন্ডলের উপরের স্তরে যদি তাপমাত্রা বেশি কম থাকে তবে মেঘ জমে গিয়ে বরফে পরিনত হয় l আর এই বরফগুলোই শিলা রূপে পৃথিবীতে পড়ে l কিন্তু এগুলো আকাশে থাকে না বরং এগুলো পৃথিবীর বাষ্প হয়ে যাওয়া পানি থেকেই তৈরী হয় l অর্থাত আল্লাহ এখানে শিলার ব্যাপারে মিথ্যে কথা বলেছে l আল্লাহ জানেই না শিলা আসলে কি l
আর মিথ্যেবাদী জাকির নায়েক এই অংশটুকু তুলে ধরেনি l কারণ তাহলে মানুষের কাছে প্রমান হয়ে যাবে যে কোরানে মিথ্যে কথা বলা হয়েছে l এখানে জাকির নায়েক চতুরতার আশ্রয় নিয়েছে l

মিথ্যেবাদী জাকির নায়েক আবার দাবি করেছে যে কোরানে সম্পূর্ণ পানি চক্রের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে l কিন্তু আমি আগেই দেখিয়েছি কোরানে পানি চক্রের মাত্র দুইটি ধাপ বলা হয়েছে বারবার l অর্থাত জাকির নায়েক মিথ্যে দাবি করেছে l
কোরানে যেসব আয়াতে পানি বা বৃষ্টির কথা বলা হয়েছে তার সবগুলোতেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা বলা হয়েছে বারবার l অর্থাত মেঘের সঞ্চারিত বা প্রবাহিত হওয়া এবং বৃষ্টিপাতের কথাই বলা হয়েছে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারবার l কিন্তু পানির বাষ্প হয়ে বাতাসে মিশে যাওয়া, সেই পানি থেকে মেঘ হওয়া এবং বৃষ্টির পানির সমুদ্রে যাওয়ার কোন কথা বলা হয়নি l শুধু মেঘের সঞ্চারিত হওয়া এবং বৃষ্টিপাতের কথাই ঘুরে ফিরে বারবার বলা হয়েছে l কিন্তু পানিচক্রের অন্যন্য ধাপগুলোর কথা কোরানের কোথাও নেই l আর তাই জাকির নায়েকের দাবি কোরানে সম্পূর্ণ পানি চক্রের বর্ণনা বিস্তারিত বলা হয়েছে কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এটা একটা প্রতারণা l

সুরা মমিনুন-এর ৪৮ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে যে আল্লাহ মাটিতে পানি সংরক্ষণ করে l
আবার সুরা মূলক-এর ৩০ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ বলেছে, মানুষ কি ভেবে দেখেছে যদি পানি ভু-গর্ভের তলদেশে চলে যায় তবে কে প্রবহমান পানি এনে দেবে ?
এই আয়াতটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে বৃষ্টির পানি মাটির নিচে যায় না, আর যদি পানি মাটির নিচে যেত তবে আল্লাহ ছাড়া কেউ প্রবহমান পানি এনে দিতে পারতো না l অর্থাত এখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে পানি মাটির নিচে যায় না l যদি যেত তবে কেও (আল্লাহ ব্যতিত) এই প্রবহমান পানি আনতে পারতো না l কিন্তু আল্লাহর রহমতে ভু-পৃষ্টের পানি মাটির নিচে যায় না l
আবার সুরা মমিনুন-এর ৪৮ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ পানিকে মাটিতে সংরক্ষণ করে l তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে এখানে সংরক্ষণ করা বলতে মাটির উপরে নদী-নালা প্রভৃতিতে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে l (মাটির অভ্যন্তরে সংরক্ষণের কথা বলা হয়নি l)
আর তাই জাকির নায়েকের দাবি সম্পূর্ণ রূপে মিথ্যে প্রমানিত হয়েছে যে পানি মাটির নিচের চলে যাওয়ার কথা কোরানে বলা হয়েছে l বরং কোরানে উল্টো কথা বলা হয়েছে যে মাটির উপরের পানি কখনো মাটির নিচে যায় না l যেটা সম্পূর্ণ একটা ভুল কথা l আমরা জানি বৃষ্টির পানির কিছু অংশ মাটির নিচে যায় ঠিক যতটুকু পানি ভু-অভ্যন্তর ভাগ ধারণ করতে পারে ঠিক সে পরিমান পানি মাটির নিচে চলে যায় l  আর বাকিটা নদী পথে সমুদ্রে গিয়ে পৌঁছোয় l
এখানে বুঝা যাচ্ছে কোরানে ভুল কথা বলা হয়েছে l

কোরানে বৃষ্টির পানি সম্পর্কে বলা হয়েছে; মেঘের ভেসে যাওয়ার কথা l বৃষ্টির পূর্বে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কথা l বৃষ্টি হওয়ার কথা এবং বৃষ্টির পানির প্রবাহিত হবার কথা বলা হয়েছে বারবার l যে কথাগুলো একজন স্বাধারণ মানুষই পর্যবেক্ষণ করতে পারে পৃথিবীতে দাড়িয়ে l  সেই কথাগুলোই বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা হয়েছে l যেটা বলার জন্য কোন জ্ঞানী হতে হয় না l গ্রামের এক কৃষকই এসব বলতে পারবে l আর কোরানে এই কথাগুলোই বলা হয়েছে বারবার l কিন্তু যে কথাগুলো একজন স্বাধারণ মানুষ বলতে পারবে না যেমন পানির বাষ্প হওয়া এবং পানি প্রবাহিত হয়ে কোথায় যায় এই কথা গুলো কোরানের কোথাও বলা হয়নি l অর্থাত কোরানের কথাগুলো একজন স্বাধারণ মানুষের স্বাধারণ কথা ছাড়া আর কিছুই নয় l

আর মিথ্যেবাদী জাকির নায়েক কোরানের ভুল কথাগুলোকে প্রকাশ না করে যে কথাগুলো খুব স্বাভাবিক এবং যে কথাগুলো একজন স্বাধারণ মানুষই ধরতে পারে যেমন মেঘের ভেসে চলা এবং বৃষ্টি হওয়া এবং বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হওয়া সেগুলোকেই অন্যরকম করে বলে কোরানকে বৈজ্ঞানিক প্রমান করতে চেয়েছে l আর এটা করতে যেয়ে সে অনেকগুলো মিথ্যে কথা বলেছে মানুষকে l অর্থাত জাকির নায়েক মিথ্যে কথা বলে মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে l আর তাই জাকির নায়েক একটা মিথ্যেবাদী প্রতারক ছাড়া আর কিছুই নয় l

No comments:

Post a Comment