প্রথম অংশ-এর পর থেকে...
যুক্তিবাদী ভার্সন,
একদা মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় দুই জমজ শিশু মাতৃগর্ভে গল্প করছিলো। একজন আরেকজনকে বললো, "আচ্ছা ভাইয়া তুমি কি প্রসবের পরবর্তীতে একটি জীবন আছে সেটি বিশ্বাস করো?”
দ্বিতীয়জন বললো, "আমার মনে হয় যে প্রসবের পরে একটি জীবন থাকতে পারে। কারণ আমি দেখেছি আমাদের এই তরলের ঘরটির যে একটি গুপ্ত দরজা আছে সেটি দিয়ে কোন এক জায়গায় জাওয়া যায়। আমার মনে হয় প্রসবের পরে আমরা সেই জায়গাটিতে যেতে পারবো।“
প্রথমজন বললো, "আমি জানি আমি অবশ্যই প্রসবের পরে এক স্বর্গীয় জায়গায় যাবো। সেখানে আমাদের জন্য কোন তরল ব্যাতিত এক শুন্য মাধ্যমে বিচরণ করতে হবে। আমরা সেই শুন্যতায় ভেসে থাকতে পারবো। আমরা শুন্যে হাটবো, দৌড়াবো এবং অনন্তকাল ধরে খেলা করবো।“
দ্বিতীয়জন বললো, "আরে বেকুব, প্রসবের পরবর্তী যে জীবনটা থাকবে সেটা শুন্য মাধ্যম হতে পারবে না। কারণ তুমি কি লক্ষ করনি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য একটি তরল খাদ্য দরকার হচ্ছে। আরো ভালো করে যদি তুমি লক্ষ করো তবে দেখবে একটা অদৃশ্য শক্তি আমাদেরকে নিচের দিকে টেনে ধরে রেখেছে। তাই এটা অসম্ভব যে প্রসবের পরে সেই শক্তিটা আমাদেরকে শুন্যে ভেসে থাকতে বা হাটতে দেবে না। তোমার ভাবনাটি কাল্পনিক। তুমি কিভাবে ভাবতে পারো যে কেউ শুন্যে ভেসে থাকতে পারে?
প্রথমজন বললো, "আমি আসলে জানি না। তবে আমার বিশ্বাস প্রসবের পরের সময়টিতে আমরা অদৃশ্য কিছুও দেখতে পাবো। আমাদের কোন খাদ্য গ্রহনের দরকার পড়বে না। আমরা না খেয়েও বেঁচে থাকতে পারবো। আমাদের শ্বাস প্রশ্বাসগুলো চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা এক শুন্যতায় ঢুবে থাকবো। আর আমাদের সারা দেহ কথা বলে উঠবে।
দ্বিতীয়জন বললো, "দেখ তুমি অতি কল্পনা বিলাসী হয়ে উঠছো। আমাদের জগতের কোথাও এমনটি দেখা যাচ্ছে না যে মানুষ কিছু দেখতে পারে। আমি তুমি কেও কিছু দেখতে পাচ্ছি না। শুধু একটি তরলে সামান্য কিছু আলোর উপস্থিতি টের পাচ্ছি। কিন্তু কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। আর তুমি কিনা বলছো প্রসবের পরে আমরা অদৃশ্য কিছুও দেখতে পাবো। এটা অসম্ভব। তোমার কল্পনা মাত্র।“
প্রথমজন বললো, "আমি নিশ্চিত জানি এটি সত্যি। আমি আমার অনুভুতি দিয়ে বুঝতে পারি আমরা শুন্যে ভেসে থাকতে পারবো, সেখানে আমরা শুন্যতার সাগরে সাঁতার কাটবো। ইচ্ছে হলে শুন্যে দৌড়াবো অনন্তের উদ্দেশ্যে। সেখানে আমাদের কোন শক্তি আটকে রাখতে পারবে না। আমরা অনন্তকাল ধরে শুন্যে খেলা করতে পারবো।“
দ্বিতীয়জন প্রতিবাদ করে বললো, "অসম্ভব! কারো পক্ষেও অনন্তকাল থাকা সম্ভব নয়। তুমি কি দেখছো না আমরা জন্মেছি মাত্র কিছু দিন আগে। তার আগে আমাদের কোন অস্তিত্বই ছিল না। তাহলে তুমি কি করে বিশ্বাস করো যে আমরা অনন্তকাল ধরে থাকতে পারবো; তাও আবার শুন্যে? আমরা যেমন ভ্রুণ অবস্থার পূর্বে ছিলাম না ঠিক তেমনি অনন্তকাল ধরে বাঁচতে পারবো না।“
প্রথমজন বললো, "আমি জানি না ভ্রুণ অবস্থার পূর্বে আমরা ছিলাম কিনা। তবে আমি নিশ্চিত জানি আমরা প্রসবের পরের জীবনে অনন্তকাল শুন্যে ভেসে বেড়াবো।“
দ্বিতীয়জন বললো, "অসম্ভব। এটা তোমার অনুর্ভর মস্তিষ্কের কল্পনা মাত্র। এটা কখনই সম্ভব নয়।“
প্রথমজন বললো, "আমি জানি প্রসবের পরের জীবনটা এমনই হবে। এর ব্যতীক্রম হওয়া কখনই সম্ভব নয়। সেখানের নিয়ম নীতি এখানের মতো নয়। আমি জানি সেখানে কোন অদৃশ্য শক্তি কাউকে নিচের দিকে টেনে ধরে না। তাই কারো শুন্যে ভেসে থাকতে হয় না। সেখানে খাবার খাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই কোন নাড়ি মানুষকে আটকে রাখে না। কোন তরলের মধ্যে এমনকি বাতাসের মধ্যেও কেউ ঢুবে থাকে না। প্রসবের পরের জীবনটা অস্বীম মুক্তির জায়গা। সেখানে কোন বন্ধনই কাজ করে না।“
দ্বিতীয়জন প্রতিবাদ করলো, "অসম্ভব। কল্পনা আর কাকে বলে? বন্ধনহীন শুন্যতায় ভেসে বেড়ানো! এটা তোমার মতো কল্পনা বিলাসীর পক্ষেই সম্ভব। এই তরল ঘরের কেউই আজ পর্যন্ত বন্ধনহীন অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারেনি। সামান্য একটু রক্ত ক্ষরণ বা তরল ঘরটি ভেঙ্গে গেছেই শিশু মারা যায়। এবং জীবিত অবস্থায় গুপ্ত পথে প্রসবের মাধ্যমে বের হতে পারে না। মৃত অবস্থায় বের হয়। আর তুমি বলছো খাদ্য ছাড়া শুন্যতায় অনন্তকাল ধরে ভেসে বেড়াবে? এটা এক কথায় অসম্ভব। নাড়ি ছাড়া এবং তরল ছাড়াও যদি বেঁচে থাকা সম্ভব হয় তবুও তাকে কোন খাদ্য নিতে হবে। এবং তরল না হলেও তাকে বাতাসের মধ্যে ঢুবে থাকতে হবে। শুন্য মাধ্যমে খাদ্য গ্রহন না করে বেঁচে থাকা, কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।“
প্রথমজন বললো, "আমি ঠিক জানি না সেটা কিভাবে ঘটবে। তবে আমি জানি একজন অতিক্ষমতাবাণ ব্যক্তি যে এই তরল ঘরটি এবং আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সে আমাদেরকে শুন্যে খাদ্যহীন ভাবে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে। কারণ তার অস্বীম ক্ষমতা আছে। সে প্রসবের আগে আমাদের দেখা শুনা করছে এই তরল ঘরটির বাইরে দাড়িয়ে। সে যেমন আমাদের সৃষ্টি করেছেন ঠিক সেভাবেই তিনি আমাদের অনন্তকাল ধরে শুন্যে ভেসে থাকতে দেবে। তিনি হচ্ছে অনন্ত অস্বীম স্বত্বা। তার সৃষ্টি নেই তার ধ্বংস নেই এবং তার কোন প্রসবের দরকার নেই। তাকে কেউ কখনও কোন তরল ঘরে থাকতে দেয়নি বরং তিনিই সবাইকে তরল ঘরে থাকতে দিয়েছে এবং প্রসব ঘটিয়েছে।“
দ্বিতীয়জন প্রতিবাদ করে বললো, "তোমার কল্পনার ঘুড়িকে তুমি অসীম পর্যন্ত নিয়ে গেছ। কল্পনার ঘোড়াকে এবার লাগাম দাও। প্রসবের পরবর্তী জীবনে কোন অস্বীম ক্ষমতার কেউ দাড়িয়ে নেই। যদি কেউ থেকে থাকে তবে সে আমাদেরই মতো মানুষ। হয়তো সে ছেলে বা মেয়ে। কিন্তু সে অবশ্যই একজন মানুষের মতই হবে। সে খাদ্য গ্রহন করে এবং সে তরলে ঢুবে না থাকলেও তাকে অবশ্যই কোন মাধ্যমে ঢুবে থাকতে হবে। সেটা তরল না হলেও বাতাস হবে। কারও পক্ষে খাদ্য গ্রহন করা ছাড়া এবং কোন মাধ্যমে ঢুবে থাকা ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাই তরল ঘরে কেউ থাকলে সে আমাদের মতই মানুষই হবে যে খাদ্য গ্রহন করবে এবং তরল বা বাতাসে ঢুবে থাকবে। এবং তাকেও তার জীবনের কোন এক সময় আমাদের মতো তরল ঘরে থাকতে হবে। তাই যার অস্তিত্ব তুমি আমি টের পাই সে কোন অতিক্ষমতাবাণ নয়। সে অবশ্যই কোন মানুষ।
প্রথমজন প্রতিবাদ করে বললো, "কোন মানুষের পক্ষে আমাদের বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তুমি কি পারবে কাউকে বাঁচিয়ে রাখতে? তুমি নিজেই তো বেঁচে থাকো কোন একজন অতিক্ষমতাবাণ তরল সরবরাহকারীর দয়ায়। তাহলে তুমি কিভাবে ভাবতে পারো যে সেই মানুষটি কোন স্বাধারণ মানুষ?
দ্বিতীয়জন বললো, "কারণ যৌক্তিকভাবে কালো পক্ষে খাদ্যগ্রহন ছাড়া এবং প্রসব ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এবং কারো পক্ষে অনন্তকাল ধরে টিকে থাকাও সম্ভব নয়। তুমি কি অনেককে মৃত প্রসব হতে দেখনি? তারা প্রসবের আগ পর্যন্তই বেঁচে থাকতো। তাই আমরা ধরে নিতে পারি যার জন্ম আছে তার মৃত্যুও আছে। তাই কারও পক্ষেই চিরকাল বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাও আবার খাদ্য ছাড়া এবং শুন্যতায়! এটা অসম্ভব। “
প্রথমজন বললো, "তুমি যাই বলো না কেন, আমি জানি প্রসবের পরের জীবন অনন্ত এবং শুন্য মাধ্যমেও আমরা বেঁচে থাকতে পারবো। কারণ অতিক্ষমতাবাণ একজন প্রসবের পরের জীবনে আমাদের দেখা শুনা করে রাখবে। “
দ্বিতীয়জন বললা, "এটা তোমার অন্ধবিশ্বাস। তথ্য প্রমাণ বলছে, তরল ঘরের বাইরে যদি কেউ থাকে তবে সে অবশ্যই মানুষ বা মানুষের মতো স্বীমিত ক্ষমতাবাণ কেউ হবে।“
প্রথমজন বললো, "অসম্ভব, তরল ঘরের বাইরে যে আছে সে অবশ্যই অতিক্ষমতাবাণ।"
দ্বিতীয়জন বললো, "যদি তাই হতো তবে সে তরল ঘরে আসে না কেন তার অতিক্ষমতা ব্যবহার করে?”
প্রথমজন বললো, "আমি জানি না। তবে সেই ব্যক্তিটি যে একজন অতিক্ষমতাবাণ কেউই সেটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। সে আমাদের প্রসবের পরে অনন্তকাল ধরে বাঁচিয়ে রাখবে কোন খাদ্য ছাড়াই।"
দ্বিতীয়জন বললো, "এটা তোমার অন্ধবিশ্বাস। লক্ষ করে দেখ, যে আছে সে কোন স্বাধারণ মানুষই। নয়তো সে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারতো। তুমি ভালো করে লক্ষ করলেই বুঝবে কেউ একজন আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইছে। যদি সে অতিক্ষমতাবাণ কেউ হতো হবে তার অতিক্ষমতা দিয়ে অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হতো। সে স্বাধারণ মানুষের মতো প্রাণী বলে সেটা পারছে না। ভালো করে লক্ষ করে দেখ তাহলেই বুঝতে পারবে।"
প্রথমজন বললো, "তুমি যত যুক্তি দাও না কেন আমি কখনই বিশ্বাস করবো না যে সেই ব্যক্তিটি অতিক্ষমতাবাণ নয়।"
এখন গল্পটির নাস্তিকীয় ভার্সনটি দেখিঃ
একদা দুই জমজ শিশু মাতৃগর্ভে গল্প করিতেছিলো। একক অন্যকে কহিল, "তুমি কি প্রসবের পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস করো?"
অন্যজন সম্মতি জানাইয়া কহিল, "অবশ্যই করি। নিশ্চয়ই প্রসবের পরবর্তীকাল বলিয়া কিছু রহিয়াছে এবং সেই পরবর্তীকালের প্রস্তুতিকরণের উদ্দেশ্যেই আজ আমরা এইখানে।"
প্রথমজন কহিল, "আমিও প্রসব পরবর্তী জীবন বিশ্বাস করি কিন্তু তুমি কেমন করিয়া নিশ্চিত হইয়া ইয়া বলিতে পারিলে? আমি কেবল এইটুকু কহিতে পারি যে প্রসবের পরবর্তী একটা জীবন রহিয়াছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত হইয়া কিছুই বলিতে পারি না। কেবল চারিপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষন করিয়া এই টুকু অনুমান করিতে পারি যে প্রসবের পরবর্তী একটা জীবন রহিয়াছে। কিন্তু আমি এই ব্যাপারে নিশ্চিত নই। আর ইহাই হইলো কারণ যে আমরা সেই জীবনের প্রস্ততিতেই এই খানে রহিয়াছি কিনা সে বিষয়ে বলিতে পারি না। কিন্তু এই টুকু কহিতে পারি যে, আমরা প্রসবের পরের জীবনে প্রবেশ করিবো।"
দ্বিতীয়জন কহিল, "দেখ ভাহে, আমি নিশ্চিত রুপেই জানি যে প্রসবের পরবর্তী একটি জীবন রহিয়াছে। আমি এও নিশ্চিত করিয়া বলিতেপারি যে এই জীবন প্রসব পরবর্তী জীবনের প্রস্ততিই হইবে।"
প্রথম জন প্রতিবাদ করিয়া বলিয়া উঠিল, "দেখ বাহে, তুমি যদি কোন পত্র মার্ফৎ জানিয়া থাকো তবে আমাদিগকে বলিতে পার। তোমার এহেন নিশ্চিত দাবির পিছনে যাহা প্রমাণ হিসেবে পাইয়াছো তাহা আমাদিগকে দেখাইয়া দাও তবেই আমরা তাহা সত্য বলিয়া মানিয়া লইবো।"
দ্বিতীয়জন কহিল, "শুন বাহে, প্রমাণ চাহিয়া তুমি পাপ করিও না। তুমি জানিতে পারিবে না প্রমাণ চাহিয়া তুমি কিরুপ পাপ করিতেছ। তুমি আমার কথাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করিয়া লও।"
প্রথমজন কহিল, "আমি প্রমাণ ব্যতিত কিছুই বিশ্বাস করিব না। এমনও তো হইতে পারে, প্রসবের পরে আমরা জান্নাতে চলিয়া যাইবো? অথবা এই তরল ঘরের চাইতে বড় কোন তরল ঘরে চলিয়া যাইবো? হয়তো এই প্রসব পূর্বের সময়টি কোন প্রস্তুতি সরুপ নহে, হয়তো আমরা প্রসবের পরবর্তী জীবনে যাইবার উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করিতেছি প্রসব পরিবেশ নরকের মত বলিয়া? যে কোন কিছুই হইতে পারে যাহা আমরা জানি না। হইতে পারে না কি? তবে তুমি কি করিয়া নিশ্চিত হইয়া বলিতেছ যে এখানে আমরা প্রস্ততিকরণের উদ্দেশ্যেই রহিয়াছি? এমনতো হইতে পারে, প্রসব পরবর্তী পরিবেশেরই প্রস্তুতি চলিতেছে, আর আমরা তার অপেক্ষায় রহিয়াছি। তথাপি তুমি তোমার দাবির কোন কারণ বলিতে পারিবে কি?”
দ্বিতীয়জন কহিল, "না আমি কোনই প্রমাণ দিতে পারিবো না। কিন্তু তুমি যদি না বিশ্বাস করিতে চাহ তবে তোমাকে স্বতর্ক করিয়া বলিতেছি, নিশ্চয়ই প্রসব পরবর্তীতে তোমার জন্য অপেক্ষা করিতেছে এক ভয়ানক শাস্তি। যদি তাহা হইতে বাঁচিতে চাও তবে তুমি আমার কথাকে বিনা প্রমাণে মানিয়া লও। নিশ্চয়ই সেথায় থাকবে আলোক এখান হইতে অধীক এবং সেথায় আমরা নিজ পায়ে হাটিয়া বেড়াইবো, মুখ দিয়া আহার করিবো এবং সেথায় আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি হইবে এখান হইতে অধিক ক্ষমতাশালী। তুমি কি তাহা বিশ্বাস করিবে না? তবে তোমার জন্য রহিয়াছে নরকের অগ্নীকুন্ড!"
প্রথমজন কহিলো, "এগুলি তোমার কল্পনা কিনা তাহা প্রমাণ পাইবার আগে কিছুই বলিতে পারিতেছি না। কিন্তু তোমার কথাকে সত্য বলিয়া মানিতে আমি রাজি নই যে পর্যন্ত না তুমি তোমার দাবির পক্ষে কোন প্রমাণ হাজির করিতে পারো। তুমি কোথা হইতে এসব জানিতে পারিয়াছ, কাহার কথা শুনিয়া তোমার এরুপ ধারণা হইয়াছে আমাকে বিস্তারিত বলিলে আমি বিবেচনা করিতে পারিবো তোমার কথা সত্য নাকি মিথ্যা তাহা যাচাই করিয়া লইতে পারিব। তাছাড়া তুমি কিরুপে নিশ্চিত হইয়া বলিতে পারিতেছ যে, আমরা সেথায় নিজ পায়ে হাটিতে পারিবো, ডানা মেলিয়া শুন্যে উড়িয়া বেড়াইতে পারিবো না। আলোক কি সেটাই তুমি ঠিক রুপে জানো নাই, তাহা হইলে তুমি কিরুপে নিশ্চিত হইয়াছো যে সেথায় আলোক এখান হইবে বেশী হইবে। আমাকে ইহার কারণ বলিতে পারিবে? তুমি কিরুপে নিশ্চিত হইয়া কহিতে পারো সেথায় আমরা মুখ দিয়াই আহার করিতে পারিবো, নাক দিয়া নহে? হইতেও তো পারে আমরা নাক দিয়াও খাইতে পারিবো অথবা মুখ দিয়া কথা কহিতে পারিবো। পারে না কি? কিন্তু তুমি কিরুপে নিশ্চিত হইয়া এই সব দাবি করিতেছ?"
দ্বিতীয়জন কহিলো, "আমার কথার কোনই প্রমাণ আমি দিতে পারিবো না। তবে তোমাকে সতর্ক করিয়া বলিতে পারিবো যে, যদি তুমি আমার কথা বিশ্বাস না করো তবে তোমাকে নরকের শাস্তি ভোগ করিয়ে হইবে। ইহা থেকে নিস্তার পাইবার একমাত্র কারণ হইলো আমার কথাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করিয়া লওয়া। আমি মনে করিয়া থাকি জীবনের এখানেই কোন সমাপ্তি নহে। প্রসব পরবর্তী জীবন অন্যরকমের হইবে। হয়তো সেথায় আমাদের এই নাড়ির প্রয়োজনই হইবে না।"
প্রথমজন প্রতিবাদ করিয়া বলিলো, “দেখ প্রমাণ ছাড়া তুমি যাহাই কল্পনা করিবে তাহার সকলই সত্য হইয়া যাইবে না। কল্পনা মিথ্যা হইতে পারে যদি তাহার কোন প্রমাণ না পাইয়া থাকো। তাহাই কারণ কল্পনাকে একমাত্র সত্য বলিয়া বিশ্বাস না করিবার। আমার অনুরোধ তুমি তোমার কল্পনার ঘোড়াকে লাগাম লাগাইয়া তোমার দাবীর প্রমাণ পাইবার চেষ্টা চালাও। প্রমাণ লইয়া আসিবার পরেই আমি তোমার দাবিকে সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিতে পারি। কল্পনাকে বিশ্বাস করিবার কোন কারণ নাই যদি তাহার কোন উপযুক্ত প্রমাণ না পাওয়া যায়। তুমি যাহা খুশি কল্পনা করিতে পারিবে। তুমি ভাবিতে পারিবে যে প্রসবের পরের জীবনে তুমি পঙ্খিরাজ ঘোড়ার মতই উড়িয়া বেড়াইতেছ শুন্যে। তোমাকে কোন তরল ঘিরিয়া রাখে নাই এবং কোন বাতাসও তোমাকে ঘিরিয়া রাখেনাই যেমন এইখানে আমাদিগকে তরল ঘিরিয়া রাখিয়াছে। তুমি কল্পনা করিতে পারিবে তুমি শুন্যে সাতার কাটিতেছ। তুমি চিরকাল ধরিয়া খাদ্য বিনা বাঁচিয়া রহিয়াছ। কোন কিছুই তোমার কল্পনার বাইরে যাইবে না। কিন্তু তাহা সত্য হইয়া যাইবে না। সত্য হইবার জন্য এসবের প্রমাণ বাহির করিতে হইবে। তুমি যাহাই কল্পনা করো না কেন তাহাকে সত্য বলিয়া প্রমাণ করিতে হইলে তোমাকে প্রমাণ খুজিয়া বাহির করিতে হইবে। নইলে পঙ্খিরাজ ঘোড়ার মতন তোমার কথা মিথ্যা প্রমাণিত হইয়া যাইবে। যাহা কিছু সত্য তাহার অবশ্যই কোন প্রমাণ রহিয়াছে। এই যে দেখিতে পারিতেছ আমরা তরলের মধ্যে ঢুবিয়া রহিয়াছি আর আমাদের এই নাড়ির মাধ্যমে খাদ্য পাইতেছি; তাই আমরা এই প্রমাণ দিয়া বলিতে পারি যে আমাদের বাঁচিয়া থাকার জন্য অবশ্যই কোন কিছুতে ঢুবিয়া থাকিতে হইবে। তাহা তরল না হইলেও বাতাস হইতে হইবে। তুমি যদি কল্পনা করিয়া বলিয়া ফেলো, আমরা শুন্যেও বাঁচিতে পারিবো তবে তোমাকে তাহার প্রমাণ দিতে হইবে। কারণ আমরা এমনটি আর দেখি নাই। আবার এই নাড়িটা আমাদেরকে এটাই বলিতেছে যে আমরা খাদ্য বিনা বাঁচিতে পারিবো না। তাই যদি তুমি তোমার কল্পনার ঘুড়ি উড়াইয়া দাবি করিতে থাকো যে তুমি খাদ্য বিনাই বাঁচিতে পারিবে তবে তাহার প্রমাণ তোমাকে দিতে হইবে। কারণ এমনটি কেহ দেখে নাই। তুমি কল্পনা দিয়া যাহা ইচ্ছা কল্পনা করিয়া সেটাকে সত্যি ভাবিতে পারো ; কিন্তু কোনরুপ প্রমাণ ছাড়া কেহ তাহা মানিয়া লইবে না। আমাদের দুইখানা পদ রহিয়াছে। তাই আমরা ভাবিতে পারি আমরা এই পদ লইয়া কি করিতে পারিবো। তাই তুমি বলিতে পারো যে এই পা দিয়া আমরা হাটিতে পারিবো। কিন্তু আমাদের কোনই পাখা নাই। তাই যদি তুমি কল্পনা করিয়া বলিতে থাকো , প্রসবের পরে আমাদের দুটো পাখা গজাইবে এবং তাহা দিয়া আমরা শুন্যে উড়িয়া বেড়াইবো তবে তোমাকে তাহার প্রমাণ দিতে হইবে। নয়তো আমি তাহা মানিয়া লইবো না। তুমি দেখিয়াছো নিশ্চয়ই আমাদের দুটো চক্ষু রহিয়াছে? তাহার উপর ভিত্তি করিয়া তুমি দাবি করিতে পারো যে তুমি দেখিতে পাইবে। কিন্তু তুমি যদি দাবি করিতে থাকো যে এই চক্ষু হইতে আগুন বাহির হইবে যাহা দিয়া তুমি পুড়াইয়া দিতে পারিবে। তবে তোমাকে তাহার প্রমাণ দিতে হইবে। আমরা জানি চক্ষু হইলো দেখার বস্তু। কিন্তু চক্ষু হইতে আগুন বাহির হইতে আমরা দেখি নাই। তাই এরুপ দাবির জন্য তোমাকে প্রমাণ দিতে হইবে। তুমি কি তাহার প্রমাণ দিতে পারিবে?
দ্বিতীয়জন কহিল, "দেখ বাহে, আমি কোন কিছুর প্রমাণ দিতে পারিবো না। তবে আমি তোমাকে আবারও সতর্ক করিতেছি যে আমার কথাকে বিনা প্রমাণে মানিয়া লও। নতুবা তোমার জন্য রহিয়াছে প্রসব পরবর্তী কঠিন শাস্তি। কিন্তু যাহারা প্রমাণ ব্যতিতই সব কিছু মানিয়া লয় তাহাদের জন্য প্রসব পরবর্তীতে রহিয়াছে এক মাতা যে তাহাকে সব রকমের বিপদ থেকে বাঁচাইবে। আর যাহারা বিনা প্রমাণ বিশ্বাস করিবে না তাহাদের জন্য রহিয়াছে পিতা ; যাহারা অবিশ্বাসীদেরকে বিপদে ঠেলে পাঠাইবে। আর তাহাদের জন্য রহিয়াছে নানা শাস্তির ব্যবস্থা। সেথায় পিতাদ্বিগ তাহাদেরকে অনন্ত শাস্তির ব্যবস্থা করিবে।"
প্রথমজন প্রতিবাদ করিয়া বলিলো, তুমি কি করিয়া ভাবিতে পারো মাতা শুধু অন্ধবিশ্বাসীদের জন্যই থাকিবে; অবিশ্বাসী যুক্তিবাদীদিগের কোন মাতা থাকিবে না? পিতা যে নিষ্ঠুর হইবে তাহারই বা প্রমাণ কি? হইতেও তো পারে মাতার মতই পিতাও মমতাময়। সেও মাতার সাথে সব সন্তানদিগকেই আগলে রাখিবে পরম মমতায়। মাতার কাছে বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসী বলিয়া কিছু নাই। হইতে পারে না কি?”
দ্বিতীয়জন প্রতিবাদ করিয়া বলিলো, "অসম্ভব! মাতা কখনই এমন হইতে পারিবে না। সে শুধু বিশ্বাসীদিগকেই ভালোবাসিবে। আর অবিশ্বাসীদের জন্য রহিয়াছে নিষ্ঠুর পিতার ব্যবস্থা। ইহার ব্যতিক্রম হইতেই পারে না। যদি তুমি বিশ্বাস না করো তবে তোমার জন্য রহিয়াছে নিষ্ঠুর পিতার শাস্তি এবং মাতার ঘৃণা। ইহার অন্যথা হইতেই পারে না। হইবেও না। ইহা একমাত্র সত্য। ইহার ব্যতিক্রম হওয়া কখনই সম্ভব নহে।"
প্রথমজন বলিলো, "ইহা তোমার অন্ধবিশ্বাস বিনা কিছুই নহে। প্রথম কথা হইলো তুমি তোমার দাবির পক্ষে কোনরুপ প্রমাণ হাজির করিতে পারিতেছো না। দ্বিতীয় কথা হইলো তুমি তোমার কল্পনাকে একমাত্র সত্য বলিয়া ভাবিতেছে। কিন্তু আমি তোমার কথাতে অনেক গুলযোগ দেখিতে পাইতেছি। আমি কখনই বিশ্বাস করিতে পারিবো না মাতা শুধু বিশ্বাসীদিগকেই ভালোবাসিবে। বরং মাতা বলিয়া যদি কেহ থাকিয়া থাকে তবে অবশ্যই তাহার সন্ধান আমরা পাইবো। এবং মাতা সবাইকে সমান ভালোবাসিবে। তুমি কি দেখনি তুমি অন্ধবিশ্বাসী হইবার পরেও আমরা সমান সুযোগ পাইতেছি। একই রুপে প্রসবের পরেও তিনি আমাদিগকে সমান ভালোবাসিবে। তথ্য প্রমাণ তাহাই ইঙ্গিত করিতেছে। মাতার অস্তিত্ব থাকিতে পারিলে পিতারও অস্তিত্ব থাকা সম্ভব হইবে। আর পিতাও মাতার মতই মমতাময় হইবে। আমি কিছুতেই কল্পনা করিতে পারি না যে মাতা একপক্ষিও মমতাময়ী এবং পিতাকে নিষ্ঠুরই হইতে হইবে। বরং এর ব্যতিক্রমও হইতে পারে। কিন্তু তুমি তোমার অন্ধবিশ্বাসের জন্যই শুধু তোমার বিশ্বাসকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিতেছ। ভিন্নটাও সত্য হইতে পারে। যেহেতু তোমার দাবির কোন প্রমাণ তুমি দিতে পারতেছ না তাই তোমার দাবী সত্য বলিয়া গন্য হইবে না। যদি একপক্ষিও মমতাময়ী মাতা এবং নিষ্ঠুর পিতার অস্তিত্ব সত্যই থাকিয়া থাকে তবে তারার প্রমাণ অবশ্যই আমরা পাইতাম; যেরুপ একজন পক্ষহীন মমতাময়ী মায়ের প্রমাণ আমরা এখান হইতেই পাইতেছি সেরুপে।
দ্বিতীয়জন প্রতিবাদ করিয়া কহিল, "তুমি কি জগতের সব কিছুই জানিয়া লইয়াছো? তোমার ক্ষুদ্র বুদ্ধি দিয়া মমতাময়ী মা এবং নিষ্ঠুর পিতাকে পরিমাপ করিতে যাইয়ো না। তাহা তোমার বুদ্ধিমত্তায় ধরিবে না। বরং আমার মতো বিশ্বাস লইয়া চোখ কান, যুক্তিবুদ্ধি বন্ধ করিয়া চোপ চাপ লক্ষ করিয়া দেখ তবে দেখিতে পাইবে একজন মাতা সর্বক্ষন অপেক্ষা করিতেছে শুধু বিশ্বাসীদেরকে মমতা দিবার জন্যই এবং একজন নিষ্ঠুর পিতা মাঝে মাঝে খোজ নিয়া জাইতেছে একজন অবিশ্বাসী সন্তানের। তুমি এই বিশ্বাসে অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করিলেই ইহার প্রমাণ পাইবে।"
প্রথমজন বলিলো, "ইহা তোমার কল্পনা ব্যতীত কিছুই নহে। আমরা একজন সার্বক্ষনিক মাতার অস্তিত্ব দেখিতে পাইতেছি এবং একজন পিতার অস্তিত্ব বুঝিতে পারিতেছি আমাদের চারিপাশের তথ্য প্রমাণের উপস্থিতি দেখিতে পাইয়া। কিন্তু আমরা জানিতে পারিতেছি না যে মাতা শুধু বিশ্বাসীদিগকেই ভালোবাসেন আর পিতা শুধু শাস্তিই দিবে শুধু অবিশ্বাসীদিগকে। হতে পারে সেই দুইজন মাতা পিতা নহে কোন তরল পদার্থ। অথবা একজন মাতা সত্যি রহিয়াছে যে সকলকেই সমান মমতা দিয়া থাকে। অথবা মাতাকে সাহায্য করিবার জন্য একজন পিতা রহিয়াছে। সেও আমাদিগকে সমান পরিমান ভালোবাসিবে। তাহাদের নিকট বিশ্বাসী অবিশ্বাসী ইত্যাদি বিভেদ নাই। কে বলিতে পারে? যে কোন কিছুই সম্ভব হইতে পারে। তাই বলিতে পারি তোমার বিশ্বাসের কোনই ভিত্তি নাই। তোমার কল্পনাই যে একমাত্র সত্য হইতে পারিবে আর কাহারোটা সত্য হইতে পারিবে না তাহা বিশ্বাস করাটাই তোমার অন্ধবিশ্বাস হইবে। যদি তোমার দাবিগুলো সত্য হইয়া থাকে তাহা হইলে তাহার প্রমাণ হাজির করিয়া দেখাইয়া দাও।“
দ্বিতীয়জন অত্যধিক রাগান্বিত হইয়া প্রথমজনকে শাপ-অভিশাপ দিতে লাগলো। বলিতে লাগিলো, "তুমি অবিশ্বাসী নরকেই তোমার স্থান। সেথায় থাকিবে নিষ্ঠুর পিতার ভয়ানক শাস্তি। তুমি কি প্রমাণ করিতে পারিবে যে নিষ্ঠুর পিতার অস্তিত্ব নাই। নিশ্চয়ই আমি যাহা কল্পনা করিয়াছি তাহা ভিন্ন অন্য কোন সত্য হইতে পারে না। আমার বিশ্বাসই চিরসত্য বিশ্বাস। ইহার অন্যথা হইতে পারিবে না। কোন প্রমাণ না দিতে পারিলেও ইহাই চির সত্য। যদি না বিশ্বাস করিয়া থাকো তবে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করিতেছে নরকের যন্ত্রনা। নিশ্চয়ই ইহাই জগতের এক মাত্র সত্য। “
এবার গল্পটিকে যুক্তি প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবচ্ছেদ করে দেখি গল্পটির ভিত্তিহীনতা কতটুকু। এবং এই গল্পটি বানানোর উদ্দেশ্যটি সৎ নাকি মানুষকে বোঁকা বানিয়ে রাখার জন্যই এই গল্পটি তৈরী করা হয়েছে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে।
গল্পটি তৈরির উদ্দেশ্য হলো একটি তুঁতুলকে দিয়ে পায়েশের গুনাগুন বুঝানোর মতো। গল্পের পটভূমিতে এমন একটি স্থানকে তুলে ধরা হয়েছে যার সাথে ইহকাল এবং পরকালের মিল আছে বলে মনে হলেও আসলে এর মধ্যে আকাশ পাতালের ফাঁক আছে। এখানে একজন মাতৃগর্ভের বৃদ্ধিহীন শিশুকে দিয়ে বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মানুষের তুলনা করা হয়েছে। এবং উদ্দেশ্যমূলক ভাবে গল্পকারের মনের কথাগুলোই বুদ্ধিহীন শিশুর মাধ্যমে ব্যক্ত করা হয়েছে। অথচ গল্পকার এবং বুদ্ধিহীন শিশুর মধ্যে যে আকাশ পাতালের পার্থক্য রয়েছে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বুদ্ধিমান গল্পকারের চিন্তাগুলোই অবুঝ শিশুর চিন্তার মতো করে দেখানো হয়েছে। গল্পকার যেভাবে কল্পনা করে গল্পের শিশুগুলোর কল্পনা শক্তি এবং বুদ্ধিমত্তাও সেভাবেই তুলে ধরা হয়েছে। অথচ গল্পকার বুদ্ধিমান প্রাণি কিন্তু তার সমপর্যায়ের চিন্তাগুলো যে মাতৃগর্ভের শিশুরা করতে পারে না সেটা এড়িয়ে গিয়ে শুধু তার মতামতকেই তুলে ধরার অপচেষ্টা করেছে। যেহেতু তার গল্পটিতে অপযুক্তিতে ভরপুর তাই প্রথম দেখাতে মনে হয় এগুলো খুব উঁচু মানের যুক্তি। এই গল্পটির কুযুক্তি এবং অপযুক্তিগুলো এখন বের করবো।
গল্পের প্রথমেই দুটো জমজ শিশুর একটিকে নাস্তিক এবং আরেকটিকে আস্তিক হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু শিশুরা নাস্তিক বা আস্তিক কোন ধরণের মতবাদই গ্রহন করতে পারে না। নাস্তিক শিশুটি আস্তিক শিশুকে বলছে তুমি কি প্রসবের পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস করো?
লক্ষ করুন প্রশ্নটি দেখলেই মনে হয় একজন বুদ্ধিমান আস্তিকের করা প্রশ্ন যে পৃথিবীর জীবনের পরে কাল্পনিক এক পরকাল বা মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস করে তার প্রশ্ন ফুটে উঠেছে। সে প্রশ্নটি এজন্যই এভাবে উপস্থাপন করেছে যাতে প্রসবকে দিয়ে মৃত্যুকে তুলনা করতে পারে। কিন্তু আমরা জানি প্রসব আর মৃত্যু প্রক্রিয়া সম্পূর্ন ভিন্ন দুটি বিষয়। অনেকটা একটি তেঁতুল এবং অন্যটি পায়েশ। প্রসবের মাধ্যমে মানব শিশু এক পরিবেশ থেকে অন্য পরিবেশে প্রবেশ করে। যেমন গ্রাম থেকে একটি মানুষ শহরে আসলে অথবা বাংলাদেশ থেকে কেউ আমেরিকা গেলে যে পরিবেশের বদল হবে প্রসবের আগের এবং পরের অবস্থাটা হলো সেরকম। কিন্তু গল্পকার প্রসবের আগের অবস্থা এবং পরের অবস্থা দিয়ে ইহকাল এবং পরকাল বুঝিয়েছে। কিন্তু এটি একটি ভূল উদাহরণ। কারণ প্রসব ঘটে একই জগতে অর্থাৎ একই রকম জগতে শুধু পরিবেশের বদল ঘটে। জন্ম এবং মৃত্যু দুটি আলাদা বিষয়। জন্মের মাধ্যমে মানুষ জীবন লাভ করে এবং মৃত্যুর মাধ্যমে জীবনের শেষ ঘটে। প্রসব হলো জন্ম মৃত্যুর মাঝামাঝি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। জন্ম পদ্ধতি শুরু হয় ভ্রুণ তৈরী থেকে প্রসবের পর পর্যন্ত। এবং মৃত্যুর মাধ্যমে সেই জীবনের সমাপ্তি ঘটে। প্রসবের মাধ্যমে কারো জন্ম হয় না। প্রসব হলো জন্মের একটি প্রক্রিয়া মাত্র। অথচ মৃত্যু ঘটলে জীবনের সমাপ্তি ঘটে। অর্থাৎ মৃত্যু ব্যপারটিই সংজ্ঞায়িত জীবনের সমাপ্তি হিসেবে। তাই প্রসবের সাথে মৃত্যুর তুলনা করাটা কুযুক্তিমূলক। কারণ প্রসবের মাধ্যমে জীবনের সমাপ্তি ঘটে না। কিন্তু মৃত্যুর মাধ্যমে জীবনের সমাপ্তি ঘটে। আর জীবন শেষ হলে কোন কিছু অবশিষ্ট থাকে না। এর সাথে নানা কাল্পনিক ধারণা যুক্ত হয়ে পরকালের গল্পগুলো তৈরী হয়। কিন্তু প্রসব আসলে সেরকম ঘটনা নয়। বরং মায়ের গর্ভে যদি শিশু বুদ্ধিমান হতো তবে সে তার চারপাশের পরিবেশ দেখে খুব সহজেই আবিষ্কার করতে পারতো যে তার ভবিষ্যত কি এবং কেমন হবে? যেভাবে মানুষ পৃথিবীতে বসেই বিশ্বজগতের সৃষ্টি সহস্য বের করে ফেলেছে। কিন্তু গল্পে উদ্দেশ্যমুলক ভাবে দেখানো হয়েছে যে এক বুদ্ধিমান প্রাণী গবেষণা বা পর্যবেক্ষণের মাধ্যবে বিচার বিশ্লেষণ না করেই শুধু বিশ্বাসের সাথে বলছে যে প্রসবের পরবর্তী একটি জীবন আছে। অথচ এই অবস্থাটি ছিল প্রাচীণকালে যখন মানুষ কেবল ধর্মকে সৃষ্টি করেছে। কিন্তু হাজার হাজার বছরের অভিজ্ঞতায় মানুষ আজ আর জ্ঞানের সেই পর্যায়টিতে নেই। কিন্তু গল্পে দেখা যাচ্ছে একজন উদ্দেশ্যমুলক ভাবে প্রকৃত রহস্য জেনে গেছে এবং অন্যজন উদ্দেশ্যমুলক ভাবে সেটা অবিশ্বাস করছে। যেমনটি হাজার হাজার বছর আগে মানুষ করেছে। অথচ মানুষ আজ বিজ্ঞানের কল্যাণে জেনে গেছে যে কোন সৃষ্টিকর্তার হস্তক্ষেপ ছাড়াই এই বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু একজন বুদ্ধিমান শিশুর পক্ষে যেমন জানা সম্ভব যে প্রসবের পরের জীবন আছে কি নেই সে সম্পর্কে, ঠিক একই ভাবে মানুষ তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে জেনে গেছে যে বাস্তবজগতের বাইরে কোন সৃষ্টিকর্তা থাকা সম্ভব নয়। বলে রাখা ভালো যে মাতৃগর্ভের জগত এবং মাতৃগর্ভের বাইরের জগতে আসলে একই রকম নিয়ম চলে। কিন্তু লেখক উদ্দেশ্যমূলক ভাবে দুটিকে ভিন্ন প্রক্রিয়ায় তুলে ধরেছে। প্রকৃতসত্য হলো মাতৃগর্ভের ভিতরে এবং বাইরে একই নীতি কার্যকর থাকে; শুধু শিশুর অবস্থা ভিন্ন হয়। প্রকৃতি একই থাকে। তাই মাতৃগর্ভের ভিতরের কোন বুদ্ধিমান শিশুর পক্ষে খুব সহজেই বাইরের জগত সম্পর্কে জানা সম্ভব এবং প্রমাণ করাও সম্ভব। যেভাবে মানুষ বিশ্বজগতের শুরুটা কেমন ছিল বা তার আগে কেমন ছিল সেটা আবিষ্কার করে ফেলেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এদের মধ্যে একজন কিছু প্রমাণহীন কাল্পনিক দাবী করবে বলে অন্যজনকে প্রমাণ ছাড়া সে দাবী মেনে নিতে হবে। মাতৃগর্ভের একজন শিশু যদি বের করতে পারে যে মাতৃগর্ভের বাইরে জীবন থাকা সম্ভব তবে উভয়েই সেই প্রমাণ দেখতে পারে। যেমন নাড়িটি কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে, ভিতরের তরলের প্রকৃতি এবং তার দরুন বাইরের চাপ ইত্যাদি বাস্তব প্রমাণ দিয়ে সে মাতৃগর্ভের পরিবেশ সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারবে। তাই একজন নাস্তিক এবং অন্যজন আস্তিকের মত নয় বরং দুজনই একই রকম মত দিবে। গল্পকারের মতের মতো তেঁতুল আর পায়েশ এক রকম হবে না। দেখুন আস্তিক শিশু বলছে "অবশ্যই প্রসবের পরের জীবন আছে এবং তার প্রস্তুরির জন্যই তারা মাতৃগর্ভে অবস্থান করছে।" তাহলে দ্বিতীয়জন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন করবে তুমি সেটা কি ভাবে জানলে? বা এর পক্ষে কোন কারণ আছে কিনা? কিন্তু গল্পকার প্রথমজনকে আস্তিক দেখিয়ে তাকে বুদ্ধিমান হিসেবে তুলে ধরেছে। আর অন্যজনকে গাঁড়ত্যাড়া নাস্তিক হিসেবে দেখাচ্ছে। বুঝায় যায় এভাবে ভুল ভাবে উপস্থাপন করে গল্পকার কাল্পনিক পরকালকে সত্য দেখাতে চাচ্ছে। প্রশ্ন আসে মাতৃগর্ভে থেকে শিশুটি কিভাবে জানলো যে প্রসবের পরের একটি জীবন আছে? গল্পকার কি সেই শিশুর কানে কানে এটি বলে দিয়েছে? সেই জীবনের প্রস্তুতিতেই এই জীবন এই তথ্যটি কি মাতৃগর্ভের শিশুর জানার কথা? গল্পকারের উত্তরটি অবশ্যই হ্যাঁ হবে। কারণ খুব সহজ। আসলে গল্পকারতো মাতৃগর্ভের বাইরের জগত দেখেছে এবং সেটা তার গল্পের শিশুকে জানিয়ে দিয়েছে তাই শিশুটি জানতে পেরেছে। এটি যে একটি যুক্তিহীন একটি গল্প সেটি হয়তো গল্পকার ভাবেই নি। আস্তিকরা যেমন এক চোখা চিন্তা ভাবনা করে এবং তাদের বিশ্বাসের বাইরেও কিছু ঘটা সম্ভব সেটা তারা ভাবতেও পারে না ঠিক সেভাবে গল্পের দ্বিতীয়জন এক রকম সব সঠিক সঠিক উত্তর বলে যাচ্ছে। এগুলো নাহয় গল্পকার তার নিজের বুদ্ধিমত্তা এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে জেনেছে কিন্তু মাতৃগর্ভের শিশুর কি সেই অভিজ্ঞতা আছে? লেখক যে তার নির্দিষ্ট চিন্তাগুলোই গল্পে শিশুটির নামে চালিয়ে দিচ্ছে অথচ শিশুটির বাস্তব অভিজ্ঞতার তুয়াক্কা করছে না সেটি হয়তো তিনি বুঝতে পারেন নি। অথবা মানুষকে বোঁকা বানানোর চেষ্টা করেছেন সব কিছু জেনে বুঝেই। দেখুন মাতৃগর্ভের শিশুটি একদম সঠিক উত্তরটিই দিয়ে দিচ্ছে যে প্রসব পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতিকল্পেই এই জীবন। এতো সঠিক উত্তরটি কি এতো সহজেই মাতৃগর্ভের শিশুর পক্ষে জানা সম্ভব? অন্যরকমও যে হতে পারে এরকম চিন্তা কেন সেই শিশুটির মনে আসলো না? উত্তরটি খুব সহজ কারণ শিশুটির গল্পকারের বুদ্ধিমত্তা এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে।
দ্বিতীয়জনের প্রসবের বিশ্বাসে প্রথমজন ক্ষেপে উঠলো। কারণ সে নাস্তিক। তাই সে দ্বিতীয়শিশুকে বেয়াকুফ, মূর্খ ইত্যাদি বলতে লাগলো। চমৎকার ছলচাতুরী গল্পকারের। আস্তিকরা যাই দাবী করে সাথে সাথে নাস্তিকরা গালাগালি শুরু করে দেয় বিচার বিবেচনা না করেই। এমনটিই গল্পকারের উদ্দেশ্য। যাতে গল্পটি মূখরুচক করে আস্তিকদের খাওয়ানো যায়। প্রথমজন আক্রমনাত্বক প্রশ্ন করলো, “তোমার সেই প্রসব পরবর্তী কাল্পনিক জীবন কিভাবে সম্ভব?”
কিন্তু দ্বিতীয়জন আবার গল্পকারের মতো করে প্রশ্নের উত্তর না দিতে পেরে তার দাবীগুলো অবুঝ শিশুদেরকে দিয়ে ঠিক ঠিক ভাবে বলিয়ে নিচ্ছে। অদ্ভুত ব্যাপার। মায়ের পেটে অবস্থান করে আস্তিক শিশুটি কিভাবে জানলো যে প্রসবের পর বাইরের পৃথিবীর আলো একটু বেশী হবে? এই সঠিক উত্তরটি সে কিভাবে জানলো অথচ অপরজন কিছু টেরই পেল না? আবার আমার প্রশ্ন যে সেই শিশুটি এতো নিখুত ভাবে সব কিছু বলছে কিভাবে? লেখক কি তার মতামত, বুদ্ধিমত্তা এবং অভিজ্ঞতা শিশুটিকে দিয়ে এসেছে যে শিশুটি লেখকের মতো সঠিক ভাবে সব কিছু বলছে? সত্যি মিরাকল।
আস্তিক শিশুটি আরও দাবী করছে যে প্রসবের পরের জীবনে তারা পায়ে হেটে বেড়াবে, মুখ দিয়ে খাবে এবং তাদের অনুভুতিগুলো আরও তীব্র হবে। বাহ্ চমৎকার। আমার বলতেই হচ্ছে আস্তিকশিশুটি আসলে একজন মাতৃগর্ভের নবী। তা না হলে সে গল্পকারের মনের কথাগুলো কিভাবে বলছে। সে তো কলমের লেখার মাধ্যমে জেনে যাচ্ছে না। সে তাহলে জানলো কিভাবে গল্পনকারের মনের কথাগুলো। ও! আস্তিক শিশুটি তাহলে নবী! গল্পকার গল্পটি লেখার মাধ্যমে শিশুটিকে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে অথচ নাস্তিক শিশুটিকে কিছুই জানায়নি দেখে সে নাস্তিক হয়ে আস্তিক শিশুর কথা চোখ কান বন্ধ করে অবিশ্বাস করে যাচ্ছে। সত্যই অলৌকিক।
আমার মনে প্রশ্ন থেমে থাকছে না। আচ্ছা। মাতৃগর্ভের শিশুটি সব সঠিক উত্তরই কেন বলে যাচ্ছে? সে যদি কল্পনা করে বের করে থাকে তবে কেন সে অন্য কোন ভূল কথা বললো না। গল্পকার কি তাহলে সত্যিই আস্তিক শিশুটিকে সব সঠিক উত্তর জানিয়ে দিয়েছে? কিন্তু কিভাবে?
মাতৃগর্ভে যদি শিশু বুদ্ধিমানই হতো তবে তার পক্ষে এটা খুব সহজেই আবিষ্কার করার কথা ছিল যে প্রসবের পরেও একটি জীবন আছে। তার পারিপার্শের পরিবেশ দেখেই সে আবিষ্কার করে ফেলতো যে তার হাত এবং পায়ের কোন একটি ব্যবহার করা যায়। তার থেকে সে খুব সহজেই বুঝতে পারতো হাটা চলা বা মুখ দিয়ে খাওয়া সম্ভব। এবং চোখ দিয়ে দেখার মতো বিষয়গুলোও সেই শিশুর পক্ষে বুঝাটা সম্ভব ছিল। কিন্তু গল্পকার খুব চতুরতার সাথে আস্তিকের মুখ থেকে সঠিক উত্তরটি বের করে দিচ্ছে অথচ অপরটির কাছে একই পরিমান তথ্যপ্রমাণ থাকার পরেও তাকে সত্যকে অবিশ্বাসকারী হিসেবে দেখিয়েছে। অথচ বাস্তবে দেখা যায় নাস্তিকরাই তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নেওয়া স্বীদ্ধান্তকে মেনে নিতে এবং কল্পনাকে পরিহার করে বাস্তব প্রমাণের দিকে লক্ষ রেখে সীদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু গল্পকার উদ্দেশ্যমূলক ভাবে আস্তিককে দৈব ক্রমে সব কিছু জানিয়ে দিচ্ছে এবং নাস্তিক শিশুটিকে তথ্যপ্রমাণ থাকার পরেও অবিশ্বাসী করে রাখছে। অথচ বাস্তব জগতের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে মানুষ বাস্তব প্রমাণের ভিত্তিতেই কাল্পনিক পরকাল এবং সৃষ্টিকর্তার ধারণাকে মিথ্যা বলে প্রমাণ করেছে।
অথচ গল্পে আস্তিক শিশুটি সঠিক উত্তরগুলোই জানছে এবং সেগুলো বলছে। কিন্তু সে কিভাবে জানছে সেটা সে বলতে পারছে না। আবার লক্ষ করুন গল্পকার আস্তিকটিকে দিয়ে সঠিক উত্তরগুলোও দেওয়াচ্ছে আর নাস্তিককে দিয়ে সেই সঠিক উত্তরগুলোকে অবিশ্বাস করাচ্ছে। এখানেই তো বুদ্ধিমান মানুষের মনে প্রশ্ন চলে আসে। যদি মাতৃগর্ভের শিশু না জানে যে তার বাইরের জগতে কি আছে তবে আস্তিক শিশুটি কিভাবে সব সঠিক উত্তর বলছে? অথচ নাস্তিক শিশুটি কিছুই জানছে না? তার কোন উত্তর না দিয়েই গল্পকার একের পর এক সঠিক উত্তর গল্পের আস্তিক শিশুটিকে দিয়ে বলাচ্ছে। যেন শিশুটি মাতৃগর্ভের বাইরে এসে থেকে গেছে এবং সব সঠিক উত্তর শিখে গেছে। অথচ তার প্রমাণ দিতে পারছে না। গল্পকার কি খুব বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে এখানে? লক্ষ করলে দেখা যায় আস্তিক শিশু সব কথাই সঠিক সঠিক ভাবে বলছে। কিন্তু তার মাথায় ভিন্ন চিন্তা আসেনি। যেমন হাটার বদলে শুন্যে ভাসা। খাদ্য গ্রহন না করা, মার বদলে কোন শয়তার উপস্থিত থাকা ইত্যাদি। কিন্তু নাস্তিক শিশুটি কেন প্রশ্ন করলো না যে কিভাবে সে এসব জেনেছে? বরং নাস্তিক শিশুটিকে এভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে যে সে শুধু অবিশ্বাস করবে। তথ্য প্রমাণের তুয়াক্কা না করে শুধু সে অবিশ্বাস করবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটে অন্য। নাস্তিকরাই তথ্য প্রমাণকে গুরুত্ব দেয় এবং আস্তিকরা তথ্য প্রমানের তুয়াক্কা না করে তাদের কল্পনাকে বিশ্বাস করে। কিন্তু গল্পকার একজন পাঁকা আস্তিকদের মতো ছলচাতুরী ব্যবহারে সক্ষম ভুমিকা নিয়েছেন। বরং নাস্তিকরাই নানা মুখি চিন্তা ভাবনা করতে পারে যেখানে আস্তিকরা শুধু তাদের বহু দিনের লালিত বিশ্বাসকেই চরম সত্য বলে বিশ্বাস করে। ভিন্ন কিছু ঘটা সম্ভব এটা তারা ভাবতেই পারে না। অথচ লেখন নাস্তিক শিশুটিকে ভিন্ন কিছু ভাবতে পারে না এমন করে উপস্থাপন করেছে। আর আস্তিক শিশুটিকে উপস্থাপন করেছে একজন শংশয়বাদী হিসেবে। কিন্তু আমরা জানি বাস্তব জগতের আস্তিকগুলো এভাবে মুক্ত ভাবে চিন্তা করতে পারে না। বরং তাদের চিন্তা ভাবনা খুব বেশী একমুখী। অথচ গল্পকার নাস্তিক শিশুটিকে একমুখি চিন্তাশীল করে উপস্থাপন করেছে নিজের কথাকে বাস্তব প্রমাণ করার জন্য।
গল্পটির পরের অংশে আস্তিক শিশুটি এই জীবন শেষ নহে এবং পরের জীবন অন্যরকম ইত্যাদি আস্তিকীয় দাবিগুলোকে আস্তিক শিশুটির মাধ্যমে তূলে ধরেছে। আস্তিক শিশুটি মায়ের অস্তিত্বের কথা বলেছে। এবং নাস্তিক শিশুটি বরাবরের মতো অবিশ্বাস করেছে।
গল্পের উপস্থাপনা পুরোপুরি আস্তিকীয় ধরণের। গল্পকারের বুদ্ধিমত্তাও আস্তিকদের মতই ফুটে উঠেছে গল্পটিতে। আস্তিকরা যেমন এক চোখা চিন্তাভাবনার অধিকারী ঠিক তেমনি গল্পকারকেও একমুখি চিন্তাভাবনার অধিকারী হিসেবে মনে হচ্ছে। সে আস্তিক শিশুটিকে একদম সঠিক সঠিক উত্তর বলে দিয়েছে অথচ নাস্তিক শিশুটিকে যুক্তিবাদীর বদলে গাঁড়ত্যাড়া আস্তিকদের মতো করে যুক্তিহীন ভাবে উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু আমরা সবাই জানি বাস্তবতা তার বিপরীত। গল্পে যেমন আস্তিক শিশুটি ভিন্ন রকম চিন্তা করতে সক্ষম বাস্তবে নাস্তিকরা ভিন্ন ভাবে চিন্তা করতে সক্ষম। বরং আস্তিকরাই তাদের বাপদাদার বিশ্বাসকে কোন কারণ ছাড়াই অন্ধের মতো চিরসত্য বলে বিশ্বাস করে। সেখানে নাস্তিকরা নতুন নতুন চিন্তা ভাবনাকে গ্রহন করে। আর তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে নতুন সীদ্ধান্তকে সাদরে গ্রহন করে; কিন্তু আস্তিকরাই বাপ-দাদার অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারগুলোকে অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করে এবং গাঁড়ত্যাঁড়া ভাবে নতুন চিন্তা ভাবনাগুলোকে অবিশ্বাস করে। অথচ গল্পে নাস্তিক শিশুটিকে সেরকম দাঁড় করিয়েছে।
আবারও আমার প্রশ্ন কিভাবে আস্তিক শিশুটি মায়ের কথা সঠিক ভাবে বলতে পারলো? মাতৃগর্ভের শিশু যদি বুদ্ধিমান হয় তবে তাদের পক্ষে সম্ভব মাতৃগর্ভের বাইরে কেউ আছে কি নেই সেটা টের পাওয়া। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আস্তিক শিশুটি সঠিক ভাবে সব কিছু বলতে পারলেও নাস্তিক শিশুটি কোন কিছু টেরই পায়নি। আবার আস্তিক শিশুটি সঠিক ভাবে বাইরের মানুষটিকে মা’ই হবে সেটা জানতে পেরেছে। সেটা অন্য কেউ যে হতে পারে সেটা ভাবতেই পারেনি যেন! একদম সঠিক উত্তর দিচ্ছে। গল্পকার নিশ্চয়ই কানে কানে আস্তিক শিশুটিকে সব কিছু বলে এসেছে।
দেখা যায় আস্তিক শিশুটি সব কিছু ঠিক ঠিক ভাবেই বলছে আর নাস্তিক শিশুটি তথ্য প্রমাণের তুয়াক্কা না করেই সব কিছুকে অস্বীকার করছে। অথচ প্রসবের পরের জীবন সম্পর্কে মাতৃগর্ভে থেকেই জানা সম্ভব যদি গর্ভের শিশু বুদ্ধিমান হয়। যেমন নাড়, তরল, শব্দ, নড়াচড়ার কম্পন, আলোর তারতম্য ইত্যাদির মাধ্যমে। তাই গর্ভের শিশু বুদ্ধিমান হলে সে প্রসবের পরের জীবন সম্পর্কে জানবে। কিন্তু গল্পে দেখা যাচ্ছে একজন সব সঠিক উত্তর দৈব ক্রমে জেনে যাচ্ছে কিন্তু কোন কারণ বলতে পারছে না অথচ অপরজন কিছুই জানতে পারছে না। খুবই অদ্ভুত। একের পর এক সঠিক উত্তর আস্তিক শিশুটিকে দিয়ে বলাচ্ছে গল্পকার। ভিন্ন কোন কাল্পনিক উত্তর নয়; একদম সঠিক উত্তর দেওয়াচ্ছে আস্তিক শিশুটিকে দিয়ে। যেমন সে মুখ দিয়ে খাবার কথা বলেছে কিন্তু পা দিয়ে খাবার কথা বলেনি। পা দিয়ে হাটার কথা বলেছে কিন্তু মুখ দিয়ে হাটার কথা বলেনি। সব কিছু ঠিকঠাক ভাবেই বলেছে। এমনকি সে যে একজন মায়ের পেটেই রয়েছে সেটাও সে ঠিক ঠিক ভাবেই বলেছে। কিন্তু বোঁকা নাস্তিক শিশুটি এই প্রশ্নটি করেনি এসব তুমি কিভাবে এবং কার মাধ্যমে জানতে পারলে। অথবা তোমার দাবীর পক্ষে যুক্তিটিই বা কি?
সব চেয়ে অদ্ভুত লেগেছে যে পরকাল এবং সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণের জন্য এখানে শুধু সঠিক উত্তরগুলোই কল্পনা করেছে আস্তিক শিশুটি। যদি সে সঠিক উত্তর কল্পনা না করে ভূল কল্পনা করতো তবে সৃষ্টিকর্তা এবং পরকালের প্রমাণগুলো ভিত্তিহীন হয়ে যেতো। যেমন- যে মাতৃগর্ভকে প্রসব পরবর্তীকালের প্রস্তুতিস্বরুপ বলেছে। কিন্তু সে এই সঠিক উত্তরটি কল্পনা না করে যদি সে কল্পনা করতো যে প্রসবের পরবর্তী জীবনটি শেষ করে আমরা আবার মাতৃগর্ভে ফিরে আসবো। অথবা প্রসবের পরের জীবনটি হলো আগুনের তৈরী তাই আমরা তরলে ঢুবে আছি। এসব ভুল কল্পনা করলে গল্পকারের উদ্দেশ্য যে পরকালকে সত্যি প্রমাণ করা সম্ভব হতো না। তাই সে সঠিক কল্পনাটিই আস্তিক শিশুটিকে দিয়ে করিয়েছে।
আবার আস্তিক শিশুটি প্রসবের জীবনে যে আলো বেশি থাকবে আর পায়ে হাটবে বা মুখ দিয়ে খাবে অথবা ইন্দ্রিয়গুলো যে প্রকট হবে সেগুলোও সঠিক ভাবে বলেছে। যদি সে এগুলো ভুল ভাবে বলতো তবে গল্পকারের উদ্দেশ্য সফল হতো না। তাই আস্তিক শিশুটি এক ভাবেই চিন্তা করেছে এবং তার কল্পনা একমুখিই হয়েছে। যেমন আস্তিক শিশুটি যদি বলতো যে প্রসবের পরের জীবনে মানুষ শুন্যে উড়ে বেড়াতে পারবে, তার সারা শরীরই কথা বলবে এবং সারা শরীর দিয়ে খাদ্য গ্রহন করবে অথবা তাদের খাদ্য গ্রহনের দরকার হবে না অথবা তাদের ডানা থাকবে যা দিয়ে তারা শুন্যে উড়ে বেড়াতে পারবে, তারা শুন্যে দৌড়াতে পারবে এবং তারা অনন্তকাল ধরে সেখানে অবস্থান করবে এবং তাদের মা হবে অতিক্ষমতাবাণ কোন চিরঞ্জিবী স্বত্বা। যদি এই ভূল উত্তরগুলো দিতো যেভাবে বাস্তব জগতের আস্তিকরা তাদের কল্পনার ফাঁনুশ উড়িয়ে দেয় সেভাবে তবে কিন্তু গল্পকারের উদ্দেশ্য সফলতো হতই না বরং ভূল প্রমাণিত হতো। এজন্যইগল্পকার অত্যন্ত কৌশলের সাথেই আস্তিক শিশুটিকে দিয়ে সঠিক উত্তরগুলো দিয়েছে। যাতে তার উদ্দেশ্য সফল হয়।
এই গল্পটির কথাগুলো অপযুক্তি এবং কুযুক্তি মূলক। কারণ এখানে তেঁতুলের মতো কোন টক জিনিসের মাধ্যমে পায়েশের মতো কোন মিষ্টি কিছুকে বুঝানোর মতো উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, মাতৃশিশু বুদ্ধিমান নয়। যদি তারা বুদ্ধিমান হতো তবে তারা বিজ্ঞানের মতো বাস্তব জ্ঞান দিয়ে প্রসব জীবনের পরের জীবন সম্পর্কে জানতে পারতো। কিন্তু তারা বুদ্ধিমান নয়। দ্বিতীয়ত, এখানে প্রসবকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করা হয়েছে। অথচ প্রসব আর মৃত্যু এক নয়। কারণ প্রসব হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মাতৃগর্ভে জন্ম নেওয়া শিশু এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়। অর্থাৎ ভ্রুন থেকে শিশুর জন্ম হয় এবং প্রসবের মাধ্যমে শিশু এক পরিবেশ থেকে অন্য পরিবেশে আসে কিন্তু সে জীবিত থাকে। মৃত্যু হলো জীবনের সমাপ্তি। অর্থাৎ ভ্রুণ সৃষ্টি হবার মাধ্যমে যে শিশুর জন্ম হয় সেই শিশুর জীবনের নানা ধাপ পার হয়ে একে বারে শেষ পরিণতি ঘটে মৃত্যুর মাধ্যমে। অর্থাৎ মৃত্যু মানে জীবনের শেষ হওয়া; অপরদিকে প্রসব হলো এক পরিবেশ থেকে অন্য পরিবেশে স্থানান্তরিত হওয়া। যেমন গ্রাম থেকে শহরে আসা বা পুকুরের মাছ নদীতে যাওয়া; এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু মৃত্যু হলো জীবের শেষ পরিণতি অর্থাৎ যারপর আর কিছু নেই। তাই প্রসবের সাথে মৃত্যুর বা মৃত্যুর পরের জীবনের তুলনা করা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আপাত দৃষ্টিতে দেখলে প্রসবের মাধ্যমে শিশু এক জগত থেকে অন্য জগতে গেলেও মৃত্যু হলো শেষ পরিণতি। যার ফলে মৃত্যুর পরে কেউ অস্তিত্বশীল থাকতে পারে না যেমনটি প্রসবের পরেও পারে। এখানে প্রসব এবং মৃত্যুর সংজ্ঞাতেই গল্পটির ভিত্তিহীনতা লোকানো আছে। মৃত্যু শব্দটিই জীবনের সমাপ্তি বুঝায়। অর্থাৎ যার পর আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। জীবনের সমাপ্তি ঘটে আর প্রসবের মাধ্যমে জীবন শুধু এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থাপ্রাপ্ত হয়। তাই গল্পটির মাধ্যমে প্রসবের মাধ্যমে মৃত্যুকে তুলে ধরার প্রকৃয়াটি ভিত্তিহীন, অযৌক্তিক এবং অসৎ।
(সমাপ্ত)
যুক্তিবাদী ভার্সন,
একদা মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় দুই জমজ শিশু মাতৃগর্ভে গল্প করছিলো। একজন আরেকজনকে বললো, "আচ্ছা ভাইয়া তুমি কি প্রসবের পরবর্তীতে একটি জীবন আছে সেটি বিশ্বাস করো?”
দ্বিতীয়জন বললো, "আমার মনে হয় যে প্রসবের পরে একটি জীবন থাকতে পারে। কারণ আমি দেখেছি আমাদের এই তরলের ঘরটির যে একটি গুপ্ত দরজা আছে সেটি দিয়ে কোন এক জায়গায় জাওয়া যায়। আমার মনে হয় প্রসবের পরে আমরা সেই জায়গাটিতে যেতে পারবো।“
প্রথমজন বললো, "আমি জানি আমি অবশ্যই প্রসবের পরে এক স্বর্গীয় জায়গায় যাবো। সেখানে আমাদের জন্য কোন তরল ব্যাতিত এক শুন্য মাধ্যমে বিচরণ করতে হবে। আমরা সেই শুন্যতায় ভেসে থাকতে পারবো। আমরা শুন্যে হাটবো, দৌড়াবো এবং অনন্তকাল ধরে খেলা করবো।“
দ্বিতীয়জন বললো, "আরে বেকুব, প্রসবের পরবর্তী যে জীবনটা থাকবে সেটা শুন্য মাধ্যম হতে পারবে না। কারণ তুমি কি লক্ষ করনি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য একটি তরল খাদ্য দরকার হচ্ছে। আরো ভালো করে যদি তুমি লক্ষ করো তবে দেখবে একটা অদৃশ্য শক্তি আমাদেরকে নিচের দিকে টেনে ধরে রেখেছে। তাই এটা অসম্ভব যে প্রসবের পরে সেই শক্তিটা আমাদেরকে শুন্যে ভেসে থাকতে বা হাটতে দেবে না। তোমার ভাবনাটি কাল্পনিক। তুমি কিভাবে ভাবতে পারো যে কেউ শুন্যে ভেসে থাকতে পারে?
প্রথমজন বললো, "আমি আসলে জানি না। তবে আমার বিশ্বাস প্রসবের পরের সময়টিতে আমরা অদৃশ্য কিছুও দেখতে পাবো। আমাদের কোন খাদ্য গ্রহনের দরকার পড়বে না। আমরা না খেয়েও বেঁচে থাকতে পারবো। আমাদের শ্বাস প্রশ্বাসগুলো চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা এক শুন্যতায় ঢুবে থাকবো। আর আমাদের সারা দেহ কথা বলে উঠবে।
দ্বিতীয়জন বললো, "দেখ তুমি অতি কল্পনা বিলাসী হয়ে উঠছো। আমাদের জগতের কোথাও এমনটি দেখা যাচ্ছে না যে মানুষ কিছু দেখতে পারে। আমি তুমি কেও কিছু দেখতে পাচ্ছি না। শুধু একটি তরলে সামান্য কিছু আলোর উপস্থিতি টের পাচ্ছি। কিন্তু কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। আর তুমি কিনা বলছো প্রসবের পরে আমরা অদৃশ্য কিছুও দেখতে পাবো। এটা অসম্ভব। তোমার কল্পনা মাত্র।“
প্রথমজন বললো, "আমি নিশ্চিত জানি এটি সত্যি। আমি আমার অনুভুতি দিয়ে বুঝতে পারি আমরা শুন্যে ভেসে থাকতে পারবো, সেখানে আমরা শুন্যতার সাগরে সাঁতার কাটবো। ইচ্ছে হলে শুন্যে দৌড়াবো অনন্তের উদ্দেশ্যে। সেখানে আমাদের কোন শক্তি আটকে রাখতে পারবে না। আমরা অনন্তকাল ধরে শুন্যে খেলা করতে পারবো।“
দ্বিতীয়জন প্রতিবাদ করে বললো, "অসম্ভব! কারো পক্ষেও অনন্তকাল থাকা সম্ভব নয়। তুমি কি দেখছো না আমরা জন্মেছি মাত্র কিছু দিন আগে। তার আগে আমাদের কোন অস্তিত্বই ছিল না। তাহলে তুমি কি করে বিশ্বাস করো যে আমরা অনন্তকাল ধরে থাকতে পারবো; তাও আবার শুন্যে? আমরা যেমন ভ্রুণ অবস্থার পূর্বে ছিলাম না ঠিক তেমনি অনন্তকাল ধরে বাঁচতে পারবো না।“
প্রথমজন বললো, "আমি জানি না ভ্রুণ অবস্থার পূর্বে আমরা ছিলাম কিনা। তবে আমি নিশ্চিত জানি আমরা প্রসবের পরের জীবনে অনন্তকাল শুন্যে ভেসে বেড়াবো।“
দ্বিতীয়জন বললো, "অসম্ভব। এটা তোমার অনুর্ভর মস্তিষ্কের কল্পনা মাত্র। এটা কখনই সম্ভব নয়।“
প্রথমজন বললো, "আমি জানি প্রসবের পরের জীবনটা এমনই হবে। এর ব্যতীক্রম হওয়া কখনই সম্ভব নয়। সেখানের নিয়ম নীতি এখানের মতো নয়। আমি জানি সেখানে কোন অদৃশ্য শক্তি কাউকে নিচের দিকে টেনে ধরে না। তাই কারো শুন্যে ভেসে থাকতে হয় না। সেখানে খাবার খাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই কোন নাড়ি মানুষকে আটকে রাখে না। কোন তরলের মধ্যে এমনকি বাতাসের মধ্যেও কেউ ঢুবে থাকে না। প্রসবের পরের জীবনটা অস্বীম মুক্তির জায়গা। সেখানে কোন বন্ধনই কাজ করে না।“
দ্বিতীয়জন প্রতিবাদ করলো, "অসম্ভব। কল্পনা আর কাকে বলে? বন্ধনহীন শুন্যতায় ভেসে বেড়ানো! এটা তোমার মতো কল্পনা বিলাসীর পক্ষেই সম্ভব। এই তরল ঘরের কেউই আজ পর্যন্ত বন্ধনহীন অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারেনি। সামান্য একটু রক্ত ক্ষরণ বা তরল ঘরটি ভেঙ্গে গেছেই শিশু মারা যায়। এবং জীবিত অবস্থায় গুপ্ত পথে প্রসবের মাধ্যমে বের হতে পারে না। মৃত অবস্থায় বের হয়। আর তুমি বলছো খাদ্য ছাড়া শুন্যতায় অনন্তকাল ধরে ভেসে বেড়াবে? এটা এক কথায় অসম্ভব। নাড়ি ছাড়া এবং তরল ছাড়াও যদি বেঁচে থাকা সম্ভব হয় তবুও তাকে কোন খাদ্য নিতে হবে। এবং তরল না হলেও তাকে বাতাসের মধ্যে ঢুবে থাকতে হবে। শুন্য মাধ্যমে খাদ্য গ্রহন না করে বেঁচে থাকা, কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।“
প্রথমজন বললো, "আমি ঠিক জানি না সেটা কিভাবে ঘটবে। তবে আমি জানি একজন অতিক্ষমতাবাণ ব্যক্তি যে এই তরল ঘরটি এবং আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সে আমাদেরকে শুন্যে খাদ্যহীন ভাবে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে। কারণ তার অস্বীম ক্ষমতা আছে। সে প্রসবের আগে আমাদের দেখা শুনা করছে এই তরল ঘরটির বাইরে দাড়িয়ে। সে যেমন আমাদের সৃষ্টি করেছেন ঠিক সেভাবেই তিনি আমাদের অনন্তকাল ধরে শুন্যে ভেসে থাকতে দেবে। তিনি হচ্ছে অনন্ত অস্বীম স্বত্বা। তার সৃষ্টি নেই তার ধ্বংস নেই এবং তার কোন প্রসবের দরকার নেই। তাকে কেউ কখনও কোন তরল ঘরে থাকতে দেয়নি বরং তিনিই সবাইকে তরল ঘরে থাকতে দিয়েছে এবং প্রসব ঘটিয়েছে।“
দ্বিতীয়জন প্রতিবাদ করে বললো, "তোমার কল্পনার ঘুড়িকে তুমি অসীম পর্যন্ত নিয়ে গেছ। কল্পনার ঘোড়াকে এবার লাগাম দাও। প্রসবের পরবর্তী জীবনে কোন অস্বীম ক্ষমতার কেউ দাড়িয়ে নেই। যদি কেউ থেকে থাকে তবে সে আমাদেরই মতো মানুষ। হয়তো সে ছেলে বা মেয়ে। কিন্তু সে অবশ্যই একজন মানুষের মতই হবে। সে খাদ্য গ্রহন করে এবং সে তরলে ঢুবে না থাকলেও তাকে অবশ্যই কোন মাধ্যমে ঢুবে থাকতে হবে। সেটা তরল না হলেও বাতাস হবে। কারও পক্ষে খাদ্য গ্রহন করা ছাড়া এবং কোন মাধ্যমে ঢুবে থাকা ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাই তরল ঘরে কেউ থাকলে সে আমাদের মতই মানুষই হবে যে খাদ্য গ্রহন করবে এবং তরল বা বাতাসে ঢুবে থাকবে। এবং তাকেও তার জীবনের কোন এক সময় আমাদের মতো তরল ঘরে থাকতে হবে। তাই যার অস্তিত্ব তুমি আমি টের পাই সে কোন অতিক্ষমতাবাণ নয়। সে অবশ্যই কোন মানুষ।
প্রথমজন প্রতিবাদ করে বললো, "কোন মানুষের পক্ষে আমাদের বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তুমি কি পারবে কাউকে বাঁচিয়ে রাখতে? তুমি নিজেই তো বেঁচে থাকো কোন একজন অতিক্ষমতাবাণ তরল সরবরাহকারীর দয়ায়। তাহলে তুমি কিভাবে ভাবতে পারো যে সেই মানুষটি কোন স্বাধারণ মানুষ?
দ্বিতীয়জন বললো, "কারণ যৌক্তিকভাবে কালো পক্ষে খাদ্যগ্রহন ছাড়া এবং প্রসব ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এবং কারো পক্ষে অনন্তকাল ধরে টিকে থাকাও সম্ভব নয়। তুমি কি অনেককে মৃত প্রসব হতে দেখনি? তারা প্রসবের আগ পর্যন্তই বেঁচে থাকতো। তাই আমরা ধরে নিতে পারি যার জন্ম আছে তার মৃত্যুও আছে। তাই কারও পক্ষেই চিরকাল বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাও আবার খাদ্য ছাড়া এবং শুন্যতায়! এটা অসম্ভব। “
প্রথমজন বললো, "তুমি যাই বলো না কেন, আমি জানি প্রসবের পরের জীবন অনন্ত এবং শুন্য মাধ্যমেও আমরা বেঁচে থাকতে পারবো। কারণ অতিক্ষমতাবাণ একজন প্রসবের পরের জীবনে আমাদের দেখা শুনা করে রাখবে। “
দ্বিতীয়জন বললা, "এটা তোমার অন্ধবিশ্বাস। তথ্য প্রমাণ বলছে, তরল ঘরের বাইরে যদি কেউ থাকে তবে সে অবশ্যই মানুষ বা মানুষের মতো স্বীমিত ক্ষমতাবাণ কেউ হবে।“
প্রথমজন বললো, "অসম্ভব, তরল ঘরের বাইরে যে আছে সে অবশ্যই অতিক্ষমতাবাণ।"
দ্বিতীয়জন বললো, "যদি তাই হতো তবে সে তরল ঘরে আসে না কেন তার অতিক্ষমতা ব্যবহার করে?”
প্রথমজন বললো, "আমি জানি না। তবে সেই ব্যক্তিটি যে একজন অতিক্ষমতাবাণ কেউই সেটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। সে আমাদের প্রসবের পরে অনন্তকাল ধরে বাঁচিয়ে রাখবে কোন খাদ্য ছাড়াই।"
দ্বিতীয়জন বললো, "এটা তোমার অন্ধবিশ্বাস। লক্ষ করে দেখ, যে আছে সে কোন স্বাধারণ মানুষই। নয়তো সে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারতো। তুমি ভালো করে লক্ষ করলেই বুঝবে কেউ একজন আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইছে। যদি সে অতিক্ষমতাবাণ কেউ হতো হবে তার অতিক্ষমতা দিয়ে অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হতো। সে স্বাধারণ মানুষের মতো প্রাণী বলে সেটা পারছে না। ভালো করে লক্ষ করে দেখ তাহলেই বুঝতে পারবে।"
প্রথমজন বললো, "তুমি যত যুক্তি দাও না কেন আমি কখনই বিশ্বাস করবো না যে সেই ব্যক্তিটি অতিক্ষমতাবাণ নয়।"
এখন গল্পটির নাস্তিকীয় ভার্সনটি দেখিঃ
একদা দুই জমজ শিশু মাতৃগর্ভে গল্প করিতেছিলো। একক অন্যকে কহিল, "তুমি কি প্রসবের পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস করো?"
অন্যজন সম্মতি জানাইয়া কহিল, "অবশ্যই করি। নিশ্চয়ই প্রসবের পরবর্তীকাল বলিয়া কিছু রহিয়াছে এবং সেই পরবর্তীকালের প্রস্তুতিকরণের উদ্দেশ্যেই আজ আমরা এইখানে।"
প্রথমজন কহিল, "আমিও প্রসব পরবর্তী জীবন বিশ্বাস করি কিন্তু তুমি কেমন করিয়া নিশ্চিত হইয়া ইয়া বলিতে পারিলে? আমি কেবল এইটুকু কহিতে পারি যে প্রসবের পরবর্তী একটা জীবন রহিয়াছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত হইয়া কিছুই বলিতে পারি না। কেবল চারিপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষন করিয়া এই টুকু অনুমান করিতে পারি যে প্রসবের পরবর্তী একটা জীবন রহিয়াছে। কিন্তু আমি এই ব্যাপারে নিশ্চিত নই। আর ইহাই হইলো কারণ যে আমরা সেই জীবনের প্রস্ততিতেই এই খানে রহিয়াছি কিনা সে বিষয়ে বলিতে পারি না। কিন্তু এই টুকু কহিতে পারি যে, আমরা প্রসবের পরের জীবনে প্রবেশ করিবো।"
দ্বিতীয়জন কহিল, "দেখ ভাহে, আমি নিশ্চিত রুপেই জানি যে প্রসবের পরবর্তী একটি জীবন রহিয়াছে। আমি এও নিশ্চিত করিয়া বলিতেপারি যে এই জীবন প্রসব পরবর্তী জীবনের প্রস্ততিই হইবে।"
প্রথম জন প্রতিবাদ করিয়া বলিয়া উঠিল, "দেখ বাহে, তুমি যদি কোন পত্র মার্ফৎ জানিয়া থাকো তবে আমাদিগকে বলিতে পার। তোমার এহেন নিশ্চিত দাবির পিছনে যাহা প্রমাণ হিসেবে পাইয়াছো তাহা আমাদিগকে দেখাইয়া দাও তবেই আমরা তাহা সত্য বলিয়া মানিয়া লইবো।"
দ্বিতীয়জন কহিল, "শুন বাহে, প্রমাণ চাহিয়া তুমি পাপ করিও না। তুমি জানিতে পারিবে না প্রমাণ চাহিয়া তুমি কিরুপ পাপ করিতেছ। তুমি আমার কথাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করিয়া লও।"
প্রথমজন কহিল, "আমি প্রমাণ ব্যতিত কিছুই বিশ্বাস করিব না। এমনও তো হইতে পারে, প্রসবের পরে আমরা জান্নাতে চলিয়া যাইবো? অথবা এই তরল ঘরের চাইতে বড় কোন তরল ঘরে চলিয়া যাইবো? হয়তো এই প্রসব পূর্বের সময়টি কোন প্রস্তুতি সরুপ নহে, হয়তো আমরা প্রসবের পরবর্তী জীবনে যাইবার উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করিতেছি প্রসব পরিবেশ নরকের মত বলিয়া? যে কোন কিছুই হইতে পারে যাহা আমরা জানি না। হইতে পারে না কি? তবে তুমি কি করিয়া নিশ্চিত হইয়া বলিতেছ যে এখানে আমরা প্রস্ততিকরণের উদ্দেশ্যেই রহিয়াছি? এমনতো হইতে পারে, প্রসব পরবর্তী পরিবেশেরই প্রস্তুতি চলিতেছে, আর আমরা তার অপেক্ষায় রহিয়াছি। তথাপি তুমি তোমার দাবির কোন কারণ বলিতে পারিবে কি?”
দ্বিতীয়জন কহিল, "না আমি কোনই প্রমাণ দিতে পারিবো না। কিন্তু তুমি যদি না বিশ্বাস করিতে চাহ তবে তোমাকে স্বতর্ক করিয়া বলিতেছি, নিশ্চয়ই প্রসব পরবর্তীতে তোমার জন্য অপেক্ষা করিতেছে এক ভয়ানক শাস্তি। যদি তাহা হইতে বাঁচিতে চাও তবে তুমি আমার কথাকে বিনা প্রমাণে মানিয়া লও। নিশ্চয়ই সেথায় থাকবে আলোক এখান হইতে অধীক এবং সেথায় আমরা নিজ পায়ে হাটিয়া বেড়াইবো, মুখ দিয়া আহার করিবো এবং সেথায় আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি হইবে এখান হইতে অধিক ক্ষমতাশালী। তুমি কি তাহা বিশ্বাস করিবে না? তবে তোমার জন্য রহিয়াছে নরকের অগ্নীকুন্ড!"
প্রথমজন কহিলো, "এগুলি তোমার কল্পনা কিনা তাহা প্রমাণ পাইবার আগে কিছুই বলিতে পারিতেছি না। কিন্তু তোমার কথাকে সত্য বলিয়া মানিতে আমি রাজি নই যে পর্যন্ত না তুমি তোমার দাবির পক্ষে কোন প্রমাণ হাজির করিতে পারো। তুমি কোথা হইতে এসব জানিতে পারিয়াছ, কাহার কথা শুনিয়া তোমার এরুপ ধারণা হইয়াছে আমাকে বিস্তারিত বলিলে আমি বিবেচনা করিতে পারিবো তোমার কথা সত্য নাকি মিথ্যা তাহা যাচাই করিয়া লইতে পারিব। তাছাড়া তুমি কিরুপে নিশ্চিত হইয়া বলিতে পারিতেছ যে, আমরা সেথায় নিজ পায়ে হাটিতে পারিবো, ডানা মেলিয়া শুন্যে উড়িয়া বেড়াইতে পারিবো না। আলোক কি সেটাই তুমি ঠিক রুপে জানো নাই, তাহা হইলে তুমি কিরুপে নিশ্চিত হইয়াছো যে সেথায় আলোক এখান হইবে বেশী হইবে। আমাকে ইহার কারণ বলিতে পারিবে? তুমি কিরুপে নিশ্চিত হইয়া কহিতে পারো সেথায় আমরা মুখ দিয়াই আহার করিতে পারিবো, নাক দিয়া নহে? হইতেও তো পারে আমরা নাক দিয়াও খাইতে পারিবো অথবা মুখ দিয়া কথা কহিতে পারিবো। পারে না কি? কিন্তু তুমি কিরুপে নিশ্চিত হইয়া এই সব দাবি করিতেছ?"
দ্বিতীয়জন কহিলো, "আমার কথার কোনই প্রমাণ আমি দিতে পারিবো না। তবে তোমাকে সতর্ক করিয়া বলিতে পারিবো যে, যদি তুমি আমার কথা বিশ্বাস না করো তবে তোমাকে নরকের শাস্তি ভোগ করিয়ে হইবে। ইহা থেকে নিস্তার পাইবার একমাত্র কারণ হইলো আমার কথাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করিয়া লওয়া। আমি মনে করিয়া থাকি জীবনের এখানেই কোন সমাপ্তি নহে। প্রসব পরবর্তী জীবন অন্যরকমের হইবে। হয়তো সেথায় আমাদের এই নাড়ির প্রয়োজনই হইবে না।"
প্রথমজন প্রতিবাদ করিয়া বলিলো, “দেখ প্রমাণ ছাড়া তুমি যাহাই কল্পনা করিবে তাহার সকলই সত্য হইয়া যাইবে না। কল্পনা মিথ্যা হইতে পারে যদি তাহার কোন প্রমাণ না পাইয়া থাকো। তাহাই কারণ কল্পনাকে একমাত্র সত্য বলিয়া বিশ্বাস না করিবার। আমার অনুরোধ তুমি তোমার কল্পনার ঘোড়াকে লাগাম লাগাইয়া তোমার দাবীর প্রমাণ পাইবার চেষ্টা চালাও। প্রমাণ লইয়া আসিবার পরেই আমি তোমার দাবিকে সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিতে পারি। কল্পনাকে বিশ্বাস করিবার কোন কারণ নাই যদি তাহার কোন উপযুক্ত প্রমাণ না পাওয়া যায়। তুমি যাহা খুশি কল্পনা করিতে পারিবে। তুমি ভাবিতে পারিবে যে প্রসবের পরের জীবনে তুমি পঙ্খিরাজ ঘোড়ার মতই উড়িয়া বেড়াইতেছ শুন্যে। তোমাকে কোন তরল ঘিরিয়া রাখে নাই এবং কোন বাতাসও তোমাকে ঘিরিয়া রাখেনাই যেমন এইখানে আমাদিগকে তরল ঘিরিয়া রাখিয়াছে। তুমি কল্পনা করিতে পারিবে তুমি শুন্যে সাতার কাটিতেছ। তুমি চিরকাল ধরিয়া খাদ্য বিনা বাঁচিয়া রহিয়াছ। কোন কিছুই তোমার কল্পনার বাইরে যাইবে না। কিন্তু তাহা সত্য হইয়া যাইবে না। সত্য হইবার জন্য এসবের প্রমাণ বাহির করিতে হইবে। তুমি যাহাই কল্পনা করো না কেন তাহাকে সত্য বলিয়া প্রমাণ করিতে হইলে তোমাকে প্রমাণ খুজিয়া বাহির করিতে হইবে। নইলে পঙ্খিরাজ ঘোড়ার মতন তোমার কথা মিথ্যা প্রমাণিত হইয়া যাইবে। যাহা কিছু সত্য তাহার অবশ্যই কোন প্রমাণ রহিয়াছে। এই যে দেখিতে পারিতেছ আমরা তরলের মধ্যে ঢুবিয়া রহিয়াছি আর আমাদের এই নাড়ির মাধ্যমে খাদ্য পাইতেছি; তাই আমরা এই প্রমাণ দিয়া বলিতে পারি যে আমাদের বাঁচিয়া থাকার জন্য অবশ্যই কোন কিছুতে ঢুবিয়া থাকিতে হইবে। তাহা তরল না হইলেও বাতাস হইতে হইবে। তুমি যদি কল্পনা করিয়া বলিয়া ফেলো, আমরা শুন্যেও বাঁচিতে পারিবো তবে তোমাকে তাহার প্রমাণ দিতে হইবে। কারণ আমরা এমনটি আর দেখি নাই। আবার এই নাড়িটা আমাদেরকে এটাই বলিতেছে যে আমরা খাদ্য বিনা বাঁচিতে পারিবো না। তাই যদি তুমি তোমার কল্পনার ঘুড়ি উড়াইয়া দাবি করিতে থাকো যে তুমি খাদ্য বিনাই বাঁচিতে পারিবে তবে তাহার প্রমাণ তোমাকে দিতে হইবে। কারণ এমনটি কেহ দেখে নাই। তুমি কল্পনা দিয়া যাহা ইচ্ছা কল্পনা করিয়া সেটাকে সত্যি ভাবিতে পারো ; কিন্তু কোনরুপ প্রমাণ ছাড়া কেহ তাহা মানিয়া লইবে না। আমাদের দুইখানা পদ রহিয়াছে। তাই আমরা ভাবিতে পারি আমরা এই পদ লইয়া কি করিতে পারিবো। তাই তুমি বলিতে পারো যে এই পা দিয়া আমরা হাটিতে পারিবো। কিন্তু আমাদের কোনই পাখা নাই। তাই যদি তুমি কল্পনা করিয়া বলিতে থাকো , প্রসবের পরে আমাদের দুটো পাখা গজাইবে এবং তাহা দিয়া আমরা শুন্যে উড়িয়া বেড়াইবো তবে তোমাকে তাহার প্রমাণ দিতে হইবে। নয়তো আমি তাহা মানিয়া লইবো না। তুমি দেখিয়াছো নিশ্চয়ই আমাদের দুটো চক্ষু রহিয়াছে? তাহার উপর ভিত্তি করিয়া তুমি দাবি করিতে পারো যে তুমি দেখিতে পাইবে। কিন্তু তুমি যদি দাবি করিতে থাকো যে এই চক্ষু হইতে আগুন বাহির হইবে যাহা দিয়া তুমি পুড়াইয়া দিতে পারিবে। তবে তোমাকে তাহার প্রমাণ দিতে হইবে। আমরা জানি চক্ষু হইলো দেখার বস্তু। কিন্তু চক্ষু হইতে আগুন বাহির হইতে আমরা দেখি নাই। তাই এরুপ দাবির জন্য তোমাকে প্রমাণ দিতে হইবে। তুমি কি তাহার প্রমাণ দিতে পারিবে?
দ্বিতীয়জন কহিল, "দেখ বাহে, আমি কোন কিছুর প্রমাণ দিতে পারিবো না। তবে আমি তোমাকে আবারও সতর্ক করিতেছি যে আমার কথাকে বিনা প্রমাণে মানিয়া লও। নতুবা তোমার জন্য রহিয়াছে প্রসব পরবর্তী কঠিন শাস্তি। কিন্তু যাহারা প্রমাণ ব্যতিতই সব কিছু মানিয়া লয় তাহাদের জন্য প্রসব পরবর্তীতে রহিয়াছে এক মাতা যে তাহাকে সব রকমের বিপদ থেকে বাঁচাইবে। আর যাহারা বিনা প্রমাণ বিশ্বাস করিবে না তাহাদের জন্য রহিয়াছে পিতা ; যাহারা অবিশ্বাসীদেরকে বিপদে ঠেলে পাঠাইবে। আর তাহাদের জন্য রহিয়াছে নানা শাস্তির ব্যবস্থা। সেথায় পিতাদ্বিগ তাহাদেরকে অনন্ত শাস্তির ব্যবস্থা করিবে।"
প্রথমজন প্রতিবাদ করিয়া বলিলো, তুমি কি করিয়া ভাবিতে পারো মাতা শুধু অন্ধবিশ্বাসীদের জন্যই থাকিবে; অবিশ্বাসী যুক্তিবাদীদিগের কোন মাতা থাকিবে না? পিতা যে নিষ্ঠুর হইবে তাহারই বা প্রমাণ কি? হইতেও তো পারে মাতার মতই পিতাও মমতাময়। সেও মাতার সাথে সব সন্তানদিগকেই আগলে রাখিবে পরম মমতায়। মাতার কাছে বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসী বলিয়া কিছু নাই। হইতে পারে না কি?”
দ্বিতীয়জন প্রতিবাদ করিয়া বলিলো, "অসম্ভব! মাতা কখনই এমন হইতে পারিবে না। সে শুধু বিশ্বাসীদিগকেই ভালোবাসিবে। আর অবিশ্বাসীদের জন্য রহিয়াছে নিষ্ঠুর পিতার ব্যবস্থা। ইহার ব্যতিক্রম হইতেই পারে না। যদি তুমি বিশ্বাস না করো তবে তোমার জন্য রহিয়াছে নিষ্ঠুর পিতার শাস্তি এবং মাতার ঘৃণা। ইহার অন্যথা হইতেই পারে না। হইবেও না। ইহা একমাত্র সত্য। ইহার ব্যতিক্রম হওয়া কখনই সম্ভব নহে।"
প্রথমজন বলিলো, "ইহা তোমার অন্ধবিশ্বাস বিনা কিছুই নহে। প্রথম কথা হইলো তুমি তোমার দাবির পক্ষে কোনরুপ প্রমাণ হাজির করিতে পারিতেছো না। দ্বিতীয় কথা হইলো তুমি তোমার কল্পনাকে একমাত্র সত্য বলিয়া ভাবিতেছে। কিন্তু আমি তোমার কথাতে অনেক গুলযোগ দেখিতে পাইতেছি। আমি কখনই বিশ্বাস করিতে পারিবো না মাতা শুধু বিশ্বাসীদিগকেই ভালোবাসিবে। বরং মাতা বলিয়া যদি কেহ থাকিয়া থাকে তবে অবশ্যই তাহার সন্ধান আমরা পাইবো। এবং মাতা সবাইকে সমান ভালোবাসিবে। তুমি কি দেখনি তুমি অন্ধবিশ্বাসী হইবার পরেও আমরা সমান সুযোগ পাইতেছি। একই রুপে প্রসবের পরেও তিনি আমাদিগকে সমান ভালোবাসিবে। তথ্য প্রমাণ তাহাই ইঙ্গিত করিতেছে। মাতার অস্তিত্ব থাকিতে পারিলে পিতারও অস্তিত্ব থাকা সম্ভব হইবে। আর পিতাও মাতার মতই মমতাময় হইবে। আমি কিছুতেই কল্পনা করিতে পারি না যে মাতা একপক্ষিও মমতাময়ী এবং পিতাকে নিষ্ঠুরই হইতে হইবে। বরং এর ব্যতিক্রমও হইতে পারে। কিন্তু তুমি তোমার অন্ধবিশ্বাসের জন্যই শুধু তোমার বিশ্বাসকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিতেছ। ভিন্নটাও সত্য হইতে পারে। যেহেতু তোমার দাবির কোন প্রমাণ তুমি দিতে পারতেছ না তাই তোমার দাবী সত্য বলিয়া গন্য হইবে না। যদি একপক্ষিও মমতাময়ী মাতা এবং নিষ্ঠুর পিতার অস্তিত্ব সত্যই থাকিয়া থাকে তবে তারার প্রমাণ অবশ্যই আমরা পাইতাম; যেরুপ একজন পক্ষহীন মমতাময়ী মায়ের প্রমাণ আমরা এখান হইতেই পাইতেছি সেরুপে।
দ্বিতীয়জন প্রতিবাদ করিয়া কহিল, "তুমি কি জগতের সব কিছুই জানিয়া লইয়াছো? তোমার ক্ষুদ্র বুদ্ধি দিয়া মমতাময়ী মা এবং নিষ্ঠুর পিতাকে পরিমাপ করিতে যাইয়ো না। তাহা তোমার বুদ্ধিমত্তায় ধরিবে না। বরং আমার মতো বিশ্বাস লইয়া চোখ কান, যুক্তিবুদ্ধি বন্ধ করিয়া চোপ চাপ লক্ষ করিয়া দেখ তবে দেখিতে পাইবে একজন মাতা সর্বক্ষন অপেক্ষা করিতেছে শুধু বিশ্বাসীদেরকে মমতা দিবার জন্যই এবং একজন নিষ্ঠুর পিতা মাঝে মাঝে খোজ নিয়া জাইতেছে একজন অবিশ্বাসী সন্তানের। তুমি এই বিশ্বাসে অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করিলেই ইহার প্রমাণ পাইবে।"
প্রথমজন বলিলো, "ইহা তোমার কল্পনা ব্যতীত কিছুই নহে। আমরা একজন সার্বক্ষনিক মাতার অস্তিত্ব দেখিতে পাইতেছি এবং একজন পিতার অস্তিত্ব বুঝিতে পারিতেছি আমাদের চারিপাশের তথ্য প্রমাণের উপস্থিতি দেখিতে পাইয়া। কিন্তু আমরা জানিতে পারিতেছি না যে মাতা শুধু বিশ্বাসীদিগকেই ভালোবাসেন আর পিতা শুধু শাস্তিই দিবে শুধু অবিশ্বাসীদিগকে। হতে পারে সেই দুইজন মাতা পিতা নহে কোন তরল পদার্থ। অথবা একজন মাতা সত্যি রহিয়াছে যে সকলকেই সমান মমতা দিয়া থাকে। অথবা মাতাকে সাহায্য করিবার জন্য একজন পিতা রহিয়াছে। সেও আমাদিগকে সমান পরিমান ভালোবাসিবে। তাহাদের নিকট বিশ্বাসী অবিশ্বাসী ইত্যাদি বিভেদ নাই। কে বলিতে পারে? যে কোন কিছুই সম্ভব হইতে পারে। তাই বলিতে পারি তোমার বিশ্বাসের কোনই ভিত্তি নাই। তোমার কল্পনাই যে একমাত্র সত্য হইতে পারিবে আর কাহারোটা সত্য হইতে পারিবে না তাহা বিশ্বাস করাটাই তোমার অন্ধবিশ্বাস হইবে। যদি তোমার দাবিগুলো সত্য হইয়া থাকে তাহা হইলে তাহার প্রমাণ হাজির করিয়া দেখাইয়া দাও।“
দ্বিতীয়জন অত্যধিক রাগান্বিত হইয়া প্রথমজনকে শাপ-অভিশাপ দিতে লাগলো। বলিতে লাগিলো, "তুমি অবিশ্বাসী নরকেই তোমার স্থান। সেথায় থাকিবে নিষ্ঠুর পিতার ভয়ানক শাস্তি। তুমি কি প্রমাণ করিতে পারিবে যে নিষ্ঠুর পিতার অস্তিত্ব নাই। নিশ্চয়ই আমি যাহা কল্পনা করিয়াছি তাহা ভিন্ন অন্য কোন সত্য হইতে পারে না। আমার বিশ্বাসই চিরসত্য বিশ্বাস। ইহার অন্যথা হইতে পারিবে না। কোন প্রমাণ না দিতে পারিলেও ইহাই চির সত্য। যদি না বিশ্বাস করিয়া থাকো তবে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করিতেছে নরকের যন্ত্রনা। নিশ্চয়ই ইহাই জগতের এক মাত্র সত্য। “
এবার গল্পটিকে যুক্তি প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবচ্ছেদ করে দেখি গল্পটির ভিত্তিহীনতা কতটুকু। এবং এই গল্পটি বানানোর উদ্দেশ্যটি সৎ নাকি মানুষকে বোঁকা বানিয়ে রাখার জন্যই এই গল্পটি তৈরী করা হয়েছে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে।
গল্পটি তৈরির উদ্দেশ্য হলো একটি তুঁতুলকে দিয়ে পায়েশের গুনাগুন বুঝানোর মতো। গল্পের পটভূমিতে এমন একটি স্থানকে তুলে ধরা হয়েছে যার সাথে ইহকাল এবং পরকালের মিল আছে বলে মনে হলেও আসলে এর মধ্যে আকাশ পাতালের ফাঁক আছে। এখানে একজন মাতৃগর্ভের বৃদ্ধিহীন শিশুকে দিয়ে বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মানুষের তুলনা করা হয়েছে। এবং উদ্দেশ্যমূলক ভাবে গল্পকারের মনের কথাগুলোই বুদ্ধিহীন শিশুর মাধ্যমে ব্যক্ত করা হয়েছে। অথচ গল্পকার এবং বুদ্ধিহীন শিশুর মধ্যে যে আকাশ পাতালের পার্থক্য রয়েছে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বুদ্ধিমান গল্পকারের চিন্তাগুলোই অবুঝ শিশুর চিন্তার মতো করে দেখানো হয়েছে। গল্পকার যেভাবে কল্পনা করে গল্পের শিশুগুলোর কল্পনা শক্তি এবং বুদ্ধিমত্তাও সেভাবেই তুলে ধরা হয়েছে। অথচ গল্পকার বুদ্ধিমান প্রাণি কিন্তু তার সমপর্যায়ের চিন্তাগুলো যে মাতৃগর্ভের শিশুরা করতে পারে না সেটা এড়িয়ে গিয়ে শুধু তার মতামতকেই তুলে ধরার অপচেষ্টা করেছে। যেহেতু তার গল্পটিতে অপযুক্তিতে ভরপুর তাই প্রথম দেখাতে মনে হয় এগুলো খুব উঁচু মানের যুক্তি। এই গল্পটির কুযুক্তি এবং অপযুক্তিগুলো এখন বের করবো।
গল্পের প্রথমেই দুটো জমজ শিশুর একটিকে নাস্তিক এবং আরেকটিকে আস্তিক হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু শিশুরা নাস্তিক বা আস্তিক কোন ধরণের মতবাদই গ্রহন করতে পারে না। নাস্তিক শিশুটি আস্তিক শিশুকে বলছে তুমি কি প্রসবের পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস করো?
লক্ষ করুন প্রশ্নটি দেখলেই মনে হয় একজন বুদ্ধিমান আস্তিকের করা প্রশ্ন যে পৃথিবীর জীবনের পরে কাল্পনিক এক পরকাল বা মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস করে তার প্রশ্ন ফুটে উঠেছে। সে প্রশ্নটি এজন্যই এভাবে উপস্থাপন করেছে যাতে প্রসবকে দিয়ে মৃত্যুকে তুলনা করতে পারে। কিন্তু আমরা জানি প্রসব আর মৃত্যু প্রক্রিয়া সম্পূর্ন ভিন্ন দুটি বিষয়। অনেকটা একটি তেঁতুল এবং অন্যটি পায়েশ। প্রসবের মাধ্যমে মানব শিশু এক পরিবেশ থেকে অন্য পরিবেশে প্রবেশ করে। যেমন গ্রাম থেকে একটি মানুষ শহরে আসলে অথবা বাংলাদেশ থেকে কেউ আমেরিকা গেলে যে পরিবেশের বদল হবে প্রসবের আগের এবং পরের অবস্থাটা হলো সেরকম। কিন্তু গল্পকার প্রসবের আগের অবস্থা এবং পরের অবস্থা দিয়ে ইহকাল এবং পরকাল বুঝিয়েছে। কিন্তু এটি একটি ভূল উদাহরণ। কারণ প্রসব ঘটে একই জগতে অর্থাৎ একই রকম জগতে শুধু পরিবেশের বদল ঘটে। জন্ম এবং মৃত্যু দুটি আলাদা বিষয়। জন্মের মাধ্যমে মানুষ জীবন লাভ করে এবং মৃত্যুর মাধ্যমে জীবনের শেষ ঘটে। প্রসব হলো জন্ম মৃত্যুর মাঝামাঝি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। জন্ম পদ্ধতি শুরু হয় ভ্রুণ তৈরী থেকে প্রসবের পর পর্যন্ত। এবং মৃত্যুর মাধ্যমে সেই জীবনের সমাপ্তি ঘটে। প্রসবের মাধ্যমে কারো জন্ম হয় না। প্রসব হলো জন্মের একটি প্রক্রিয়া মাত্র। অথচ মৃত্যু ঘটলে জীবনের সমাপ্তি ঘটে। অর্থাৎ মৃত্যু ব্যপারটিই সংজ্ঞায়িত জীবনের সমাপ্তি হিসেবে। তাই প্রসবের সাথে মৃত্যুর তুলনা করাটা কুযুক্তিমূলক। কারণ প্রসবের মাধ্যমে জীবনের সমাপ্তি ঘটে না। কিন্তু মৃত্যুর মাধ্যমে জীবনের সমাপ্তি ঘটে। আর জীবন শেষ হলে কোন কিছু অবশিষ্ট থাকে না। এর সাথে নানা কাল্পনিক ধারণা যুক্ত হয়ে পরকালের গল্পগুলো তৈরী হয়। কিন্তু প্রসব আসলে সেরকম ঘটনা নয়। বরং মায়ের গর্ভে যদি শিশু বুদ্ধিমান হতো তবে সে তার চারপাশের পরিবেশ দেখে খুব সহজেই আবিষ্কার করতে পারতো যে তার ভবিষ্যত কি এবং কেমন হবে? যেভাবে মানুষ পৃথিবীতে বসেই বিশ্বজগতের সৃষ্টি সহস্য বের করে ফেলেছে। কিন্তু গল্পে উদ্দেশ্যমুলক ভাবে দেখানো হয়েছে যে এক বুদ্ধিমান প্রাণী গবেষণা বা পর্যবেক্ষণের মাধ্যবে বিচার বিশ্লেষণ না করেই শুধু বিশ্বাসের সাথে বলছে যে প্রসবের পরবর্তী একটি জীবন আছে। অথচ এই অবস্থাটি ছিল প্রাচীণকালে যখন মানুষ কেবল ধর্মকে সৃষ্টি করেছে। কিন্তু হাজার হাজার বছরের অভিজ্ঞতায় মানুষ আজ আর জ্ঞানের সেই পর্যায়টিতে নেই। কিন্তু গল্পে দেখা যাচ্ছে একজন উদ্দেশ্যমুলক ভাবে প্রকৃত রহস্য জেনে গেছে এবং অন্যজন উদ্দেশ্যমুলক ভাবে সেটা অবিশ্বাস করছে। যেমনটি হাজার হাজার বছর আগে মানুষ করেছে। অথচ মানুষ আজ বিজ্ঞানের কল্যাণে জেনে গেছে যে কোন সৃষ্টিকর্তার হস্তক্ষেপ ছাড়াই এই বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু একজন বুদ্ধিমান শিশুর পক্ষে যেমন জানা সম্ভব যে প্রসবের পরের জীবন আছে কি নেই সে সম্পর্কে, ঠিক একই ভাবে মানুষ তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে জেনে গেছে যে বাস্তবজগতের বাইরে কোন সৃষ্টিকর্তা থাকা সম্ভব নয়। বলে রাখা ভালো যে মাতৃগর্ভের জগত এবং মাতৃগর্ভের বাইরের জগতে আসলে একই রকম নিয়ম চলে। কিন্তু লেখক উদ্দেশ্যমূলক ভাবে দুটিকে ভিন্ন প্রক্রিয়ায় তুলে ধরেছে। প্রকৃতসত্য হলো মাতৃগর্ভের ভিতরে এবং বাইরে একই নীতি কার্যকর থাকে; শুধু শিশুর অবস্থা ভিন্ন হয়। প্রকৃতি একই থাকে। তাই মাতৃগর্ভের ভিতরের কোন বুদ্ধিমান শিশুর পক্ষে খুব সহজেই বাইরের জগত সম্পর্কে জানা সম্ভব এবং প্রমাণ করাও সম্ভব। যেভাবে মানুষ বিশ্বজগতের শুরুটা কেমন ছিল বা তার আগে কেমন ছিল সেটা আবিষ্কার করে ফেলেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এদের মধ্যে একজন কিছু প্রমাণহীন কাল্পনিক দাবী করবে বলে অন্যজনকে প্রমাণ ছাড়া সে দাবী মেনে নিতে হবে। মাতৃগর্ভের একজন শিশু যদি বের করতে পারে যে মাতৃগর্ভের বাইরে জীবন থাকা সম্ভব তবে উভয়েই সেই প্রমাণ দেখতে পারে। যেমন নাড়িটি কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে, ভিতরের তরলের প্রকৃতি এবং তার দরুন বাইরের চাপ ইত্যাদি বাস্তব প্রমাণ দিয়ে সে মাতৃগর্ভের পরিবেশ সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারবে। তাই একজন নাস্তিক এবং অন্যজন আস্তিকের মত নয় বরং দুজনই একই রকম মত দিবে। গল্পকারের মতের মতো তেঁতুল আর পায়েশ এক রকম হবে না। দেখুন আস্তিক শিশু বলছে "অবশ্যই প্রসবের পরের জীবন আছে এবং তার প্রস্তুরির জন্যই তারা মাতৃগর্ভে অবস্থান করছে।" তাহলে দ্বিতীয়জন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন করবে তুমি সেটা কি ভাবে জানলে? বা এর পক্ষে কোন কারণ আছে কিনা? কিন্তু গল্পকার প্রথমজনকে আস্তিক দেখিয়ে তাকে বুদ্ধিমান হিসেবে তুলে ধরেছে। আর অন্যজনকে গাঁড়ত্যাড়া নাস্তিক হিসেবে দেখাচ্ছে। বুঝায় যায় এভাবে ভুল ভাবে উপস্থাপন করে গল্পকার কাল্পনিক পরকালকে সত্য দেখাতে চাচ্ছে। প্রশ্ন আসে মাতৃগর্ভে থেকে শিশুটি কিভাবে জানলো যে প্রসবের পরের একটি জীবন আছে? গল্পকার কি সেই শিশুর কানে কানে এটি বলে দিয়েছে? সেই জীবনের প্রস্তুতিতেই এই জীবন এই তথ্যটি কি মাতৃগর্ভের শিশুর জানার কথা? গল্পকারের উত্তরটি অবশ্যই হ্যাঁ হবে। কারণ খুব সহজ। আসলে গল্পকারতো মাতৃগর্ভের বাইরের জগত দেখেছে এবং সেটা তার গল্পের শিশুকে জানিয়ে দিয়েছে তাই শিশুটি জানতে পেরেছে। এটি যে একটি যুক্তিহীন একটি গল্প সেটি হয়তো গল্পকার ভাবেই নি। আস্তিকরা যেমন এক চোখা চিন্তা ভাবনা করে এবং তাদের বিশ্বাসের বাইরেও কিছু ঘটা সম্ভব সেটা তারা ভাবতেও পারে না ঠিক সেভাবে গল্পের দ্বিতীয়জন এক রকম সব সঠিক সঠিক উত্তর বলে যাচ্ছে। এগুলো নাহয় গল্পকার তার নিজের বুদ্ধিমত্তা এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে জেনেছে কিন্তু মাতৃগর্ভের শিশুর কি সেই অভিজ্ঞতা আছে? লেখক যে তার নির্দিষ্ট চিন্তাগুলোই গল্পে শিশুটির নামে চালিয়ে দিচ্ছে অথচ শিশুটির বাস্তব অভিজ্ঞতার তুয়াক্কা করছে না সেটি হয়তো তিনি বুঝতে পারেন নি। অথবা মানুষকে বোঁকা বানানোর চেষ্টা করেছেন সব কিছু জেনে বুঝেই। দেখুন মাতৃগর্ভের শিশুটি একদম সঠিক উত্তরটিই দিয়ে দিচ্ছে যে প্রসব পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতিকল্পেই এই জীবন। এতো সঠিক উত্তরটি কি এতো সহজেই মাতৃগর্ভের শিশুর পক্ষে জানা সম্ভব? অন্যরকমও যে হতে পারে এরকম চিন্তা কেন সেই শিশুটির মনে আসলো না? উত্তরটি খুব সহজ কারণ শিশুটির গল্পকারের বুদ্ধিমত্তা এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে।
দ্বিতীয়জনের প্রসবের বিশ্বাসে প্রথমজন ক্ষেপে উঠলো। কারণ সে নাস্তিক। তাই সে দ্বিতীয়শিশুকে বেয়াকুফ, মূর্খ ইত্যাদি বলতে লাগলো। চমৎকার ছলচাতুরী গল্পকারের। আস্তিকরা যাই দাবী করে সাথে সাথে নাস্তিকরা গালাগালি শুরু করে দেয় বিচার বিবেচনা না করেই। এমনটিই গল্পকারের উদ্দেশ্য। যাতে গল্পটি মূখরুচক করে আস্তিকদের খাওয়ানো যায়। প্রথমজন আক্রমনাত্বক প্রশ্ন করলো, “তোমার সেই প্রসব পরবর্তী কাল্পনিক জীবন কিভাবে সম্ভব?”
কিন্তু দ্বিতীয়জন আবার গল্পকারের মতো করে প্রশ্নের উত্তর না দিতে পেরে তার দাবীগুলো অবুঝ শিশুদেরকে দিয়ে ঠিক ঠিক ভাবে বলিয়ে নিচ্ছে। অদ্ভুত ব্যাপার। মায়ের পেটে অবস্থান করে আস্তিক শিশুটি কিভাবে জানলো যে প্রসবের পর বাইরের পৃথিবীর আলো একটু বেশী হবে? এই সঠিক উত্তরটি সে কিভাবে জানলো অথচ অপরজন কিছু টেরই পেল না? আবার আমার প্রশ্ন যে সেই শিশুটি এতো নিখুত ভাবে সব কিছু বলছে কিভাবে? লেখক কি তার মতামত, বুদ্ধিমত্তা এবং অভিজ্ঞতা শিশুটিকে দিয়ে এসেছে যে শিশুটি লেখকের মতো সঠিক ভাবে সব কিছু বলছে? সত্যি মিরাকল।
আস্তিক শিশুটি আরও দাবী করছে যে প্রসবের পরের জীবনে তারা পায়ে হেটে বেড়াবে, মুখ দিয়ে খাবে এবং তাদের অনুভুতিগুলো আরও তীব্র হবে। বাহ্ চমৎকার। আমার বলতেই হচ্ছে আস্তিকশিশুটি আসলে একজন মাতৃগর্ভের নবী। তা না হলে সে গল্পকারের মনের কথাগুলো কিভাবে বলছে। সে তো কলমের লেখার মাধ্যমে জেনে যাচ্ছে না। সে তাহলে জানলো কিভাবে গল্পনকারের মনের কথাগুলো। ও! আস্তিক শিশুটি তাহলে নবী! গল্পকার গল্পটি লেখার মাধ্যমে শিশুটিকে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে অথচ নাস্তিক শিশুটিকে কিছুই জানায়নি দেখে সে নাস্তিক হয়ে আস্তিক শিশুর কথা চোখ কান বন্ধ করে অবিশ্বাস করে যাচ্ছে। সত্যই অলৌকিক।
আমার মনে প্রশ্ন থেমে থাকছে না। আচ্ছা। মাতৃগর্ভের শিশুটি সব সঠিক উত্তরই কেন বলে যাচ্ছে? সে যদি কল্পনা করে বের করে থাকে তবে কেন সে অন্য কোন ভূল কথা বললো না। গল্পকার কি তাহলে সত্যিই আস্তিক শিশুটিকে সব সঠিক উত্তর জানিয়ে দিয়েছে? কিন্তু কিভাবে?
মাতৃগর্ভে যদি শিশু বুদ্ধিমানই হতো তবে তার পক্ষে এটা খুব সহজেই আবিষ্কার করার কথা ছিল যে প্রসবের পরেও একটি জীবন আছে। তার পারিপার্শের পরিবেশ দেখেই সে আবিষ্কার করে ফেলতো যে তার হাত এবং পায়ের কোন একটি ব্যবহার করা যায়। তার থেকে সে খুব সহজেই বুঝতে পারতো হাটা চলা বা মুখ দিয়ে খাওয়া সম্ভব। এবং চোখ দিয়ে দেখার মতো বিষয়গুলোও সেই শিশুর পক্ষে বুঝাটা সম্ভব ছিল। কিন্তু গল্পকার খুব চতুরতার সাথে আস্তিকের মুখ থেকে সঠিক উত্তরটি বের করে দিচ্ছে অথচ অপরটির কাছে একই পরিমান তথ্যপ্রমাণ থাকার পরেও তাকে সত্যকে অবিশ্বাসকারী হিসেবে দেখিয়েছে। অথচ বাস্তবে দেখা যায় নাস্তিকরাই তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নেওয়া স্বীদ্ধান্তকে মেনে নিতে এবং কল্পনাকে পরিহার করে বাস্তব প্রমাণের দিকে লক্ষ রেখে সীদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু গল্পকার উদ্দেশ্যমূলক ভাবে আস্তিককে দৈব ক্রমে সব কিছু জানিয়ে দিচ্ছে এবং নাস্তিক শিশুটিকে তথ্যপ্রমাণ থাকার পরেও অবিশ্বাসী করে রাখছে। অথচ বাস্তব জগতের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে মানুষ বাস্তব প্রমাণের ভিত্তিতেই কাল্পনিক পরকাল এবং সৃষ্টিকর্তার ধারণাকে মিথ্যা বলে প্রমাণ করেছে।
অথচ গল্পে আস্তিক শিশুটি সঠিক উত্তরগুলোই জানছে এবং সেগুলো বলছে। কিন্তু সে কিভাবে জানছে সেটা সে বলতে পারছে না। আবার লক্ষ করুন গল্পকার আস্তিকটিকে দিয়ে সঠিক উত্তরগুলোও দেওয়াচ্ছে আর নাস্তিককে দিয়ে সেই সঠিক উত্তরগুলোকে অবিশ্বাস করাচ্ছে। এখানেই তো বুদ্ধিমান মানুষের মনে প্রশ্ন চলে আসে। যদি মাতৃগর্ভের শিশু না জানে যে তার বাইরের জগতে কি আছে তবে আস্তিক শিশুটি কিভাবে সব সঠিক উত্তর বলছে? অথচ নাস্তিক শিশুটি কিছুই জানছে না? তার কোন উত্তর না দিয়েই গল্পকার একের পর এক সঠিক উত্তর গল্পের আস্তিক শিশুটিকে দিয়ে বলাচ্ছে। যেন শিশুটি মাতৃগর্ভের বাইরে এসে থেকে গেছে এবং সব সঠিক উত্তর শিখে গেছে। অথচ তার প্রমাণ দিতে পারছে না। গল্পকার কি খুব বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে এখানে? লক্ষ করলে দেখা যায় আস্তিক শিশু সব কথাই সঠিক সঠিক ভাবে বলছে। কিন্তু তার মাথায় ভিন্ন চিন্তা আসেনি। যেমন হাটার বদলে শুন্যে ভাসা। খাদ্য গ্রহন না করা, মার বদলে কোন শয়তার উপস্থিত থাকা ইত্যাদি। কিন্তু নাস্তিক শিশুটি কেন প্রশ্ন করলো না যে কিভাবে সে এসব জেনেছে? বরং নাস্তিক শিশুটিকে এভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে যে সে শুধু অবিশ্বাস করবে। তথ্য প্রমাণের তুয়াক্কা না করে শুধু সে অবিশ্বাস করবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটে অন্য। নাস্তিকরাই তথ্য প্রমাণকে গুরুত্ব দেয় এবং আস্তিকরা তথ্য প্রমানের তুয়াক্কা না করে তাদের কল্পনাকে বিশ্বাস করে। কিন্তু গল্পকার একজন পাঁকা আস্তিকদের মতো ছলচাতুরী ব্যবহারে সক্ষম ভুমিকা নিয়েছেন। বরং নাস্তিকরাই নানা মুখি চিন্তা ভাবনা করতে পারে যেখানে আস্তিকরা শুধু তাদের বহু দিনের লালিত বিশ্বাসকেই চরম সত্য বলে বিশ্বাস করে। ভিন্ন কিছু ঘটা সম্ভব এটা তারা ভাবতেই পারে না। অথচ লেখন নাস্তিক শিশুটিকে ভিন্ন কিছু ভাবতে পারে না এমন করে উপস্থাপন করেছে। আর আস্তিক শিশুটিকে উপস্থাপন করেছে একজন শংশয়বাদী হিসেবে। কিন্তু আমরা জানি বাস্তব জগতের আস্তিকগুলো এভাবে মুক্ত ভাবে চিন্তা করতে পারে না। বরং তাদের চিন্তা ভাবনা খুব বেশী একমুখী। অথচ গল্পকার নাস্তিক শিশুটিকে একমুখি চিন্তাশীল করে উপস্থাপন করেছে নিজের কথাকে বাস্তব প্রমাণ করার জন্য।
গল্পটির পরের অংশে আস্তিক শিশুটি এই জীবন শেষ নহে এবং পরের জীবন অন্যরকম ইত্যাদি আস্তিকীয় দাবিগুলোকে আস্তিক শিশুটির মাধ্যমে তূলে ধরেছে। আস্তিক শিশুটি মায়ের অস্তিত্বের কথা বলেছে। এবং নাস্তিক শিশুটি বরাবরের মতো অবিশ্বাস করেছে।
গল্পের উপস্থাপনা পুরোপুরি আস্তিকীয় ধরণের। গল্পকারের বুদ্ধিমত্তাও আস্তিকদের মতই ফুটে উঠেছে গল্পটিতে। আস্তিকরা যেমন এক চোখা চিন্তাভাবনার অধিকারী ঠিক তেমনি গল্পকারকেও একমুখি চিন্তাভাবনার অধিকারী হিসেবে মনে হচ্ছে। সে আস্তিক শিশুটিকে একদম সঠিক সঠিক উত্তর বলে দিয়েছে অথচ নাস্তিক শিশুটিকে যুক্তিবাদীর বদলে গাঁড়ত্যাড়া আস্তিকদের মতো করে যুক্তিহীন ভাবে উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু আমরা সবাই জানি বাস্তবতা তার বিপরীত। গল্পে যেমন আস্তিক শিশুটি ভিন্ন রকম চিন্তা করতে সক্ষম বাস্তবে নাস্তিকরা ভিন্ন ভাবে চিন্তা করতে সক্ষম। বরং আস্তিকরাই তাদের বাপদাদার বিশ্বাসকে কোন কারণ ছাড়াই অন্ধের মতো চিরসত্য বলে বিশ্বাস করে। সেখানে নাস্তিকরা নতুন নতুন চিন্তা ভাবনাকে গ্রহন করে। আর তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে নতুন সীদ্ধান্তকে সাদরে গ্রহন করে; কিন্তু আস্তিকরাই বাপ-দাদার অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারগুলোকে অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করে এবং গাঁড়ত্যাঁড়া ভাবে নতুন চিন্তা ভাবনাগুলোকে অবিশ্বাস করে। অথচ গল্পে নাস্তিক শিশুটিকে সেরকম দাঁড় করিয়েছে।
আবারও আমার প্রশ্ন কিভাবে আস্তিক শিশুটি মায়ের কথা সঠিক ভাবে বলতে পারলো? মাতৃগর্ভের শিশু যদি বুদ্ধিমান হয় তবে তাদের পক্ষে সম্ভব মাতৃগর্ভের বাইরে কেউ আছে কি নেই সেটা টের পাওয়া। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আস্তিক শিশুটি সঠিক ভাবে সব কিছু বলতে পারলেও নাস্তিক শিশুটি কোন কিছু টেরই পায়নি। আবার আস্তিক শিশুটি সঠিক ভাবে বাইরের মানুষটিকে মা’ই হবে সেটা জানতে পেরেছে। সেটা অন্য কেউ যে হতে পারে সেটা ভাবতেই পারেনি যেন! একদম সঠিক উত্তর দিচ্ছে। গল্পকার নিশ্চয়ই কানে কানে আস্তিক শিশুটিকে সব কিছু বলে এসেছে।
দেখা যায় আস্তিক শিশুটি সব কিছু ঠিক ঠিক ভাবেই বলছে আর নাস্তিক শিশুটি তথ্য প্রমাণের তুয়াক্কা না করেই সব কিছুকে অস্বীকার করছে। অথচ প্রসবের পরের জীবন সম্পর্কে মাতৃগর্ভে থেকেই জানা সম্ভব যদি গর্ভের শিশু বুদ্ধিমান হয়। যেমন নাড়, তরল, শব্দ, নড়াচড়ার কম্পন, আলোর তারতম্য ইত্যাদির মাধ্যমে। তাই গর্ভের শিশু বুদ্ধিমান হলে সে প্রসবের পরের জীবন সম্পর্কে জানবে। কিন্তু গল্পে দেখা যাচ্ছে একজন সব সঠিক উত্তর দৈব ক্রমে জেনে যাচ্ছে কিন্তু কোন কারণ বলতে পারছে না অথচ অপরজন কিছুই জানতে পারছে না। খুবই অদ্ভুত। একের পর এক সঠিক উত্তর আস্তিক শিশুটিকে দিয়ে বলাচ্ছে গল্পকার। ভিন্ন কোন কাল্পনিক উত্তর নয়; একদম সঠিক উত্তর দেওয়াচ্ছে আস্তিক শিশুটিকে দিয়ে। যেমন সে মুখ দিয়ে খাবার কথা বলেছে কিন্তু পা দিয়ে খাবার কথা বলেনি। পা দিয়ে হাটার কথা বলেছে কিন্তু মুখ দিয়ে হাটার কথা বলেনি। সব কিছু ঠিকঠাক ভাবেই বলেছে। এমনকি সে যে একজন মায়ের পেটেই রয়েছে সেটাও সে ঠিক ঠিক ভাবেই বলেছে। কিন্তু বোঁকা নাস্তিক শিশুটি এই প্রশ্নটি করেনি এসব তুমি কিভাবে এবং কার মাধ্যমে জানতে পারলে। অথবা তোমার দাবীর পক্ষে যুক্তিটিই বা কি?
সব চেয়ে অদ্ভুত লেগেছে যে পরকাল এবং সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণের জন্য এখানে শুধু সঠিক উত্তরগুলোই কল্পনা করেছে আস্তিক শিশুটি। যদি সে সঠিক উত্তর কল্পনা না করে ভূল কল্পনা করতো তবে সৃষ্টিকর্তা এবং পরকালের প্রমাণগুলো ভিত্তিহীন হয়ে যেতো। যেমন- যে মাতৃগর্ভকে প্রসব পরবর্তীকালের প্রস্তুতিস্বরুপ বলেছে। কিন্তু সে এই সঠিক উত্তরটি কল্পনা না করে যদি সে কল্পনা করতো যে প্রসবের পরবর্তী জীবনটি শেষ করে আমরা আবার মাতৃগর্ভে ফিরে আসবো। অথবা প্রসবের পরের জীবনটি হলো আগুনের তৈরী তাই আমরা তরলে ঢুবে আছি। এসব ভুল কল্পনা করলে গল্পকারের উদ্দেশ্য যে পরকালকে সত্যি প্রমাণ করা সম্ভব হতো না। তাই সে সঠিক কল্পনাটিই আস্তিক শিশুটিকে দিয়ে করিয়েছে।
আবার আস্তিক শিশুটি প্রসবের জীবনে যে আলো বেশি থাকবে আর পায়ে হাটবে বা মুখ দিয়ে খাবে অথবা ইন্দ্রিয়গুলো যে প্রকট হবে সেগুলোও সঠিক ভাবে বলেছে। যদি সে এগুলো ভুল ভাবে বলতো তবে গল্পকারের উদ্দেশ্য সফল হতো না। তাই আস্তিক শিশুটি এক ভাবেই চিন্তা করেছে এবং তার কল্পনা একমুখিই হয়েছে। যেমন আস্তিক শিশুটি যদি বলতো যে প্রসবের পরের জীবনে মানুষ শুন্যে উড়ে বেড়াতে পারবে, তার সারা শরীরই কথা বলবে এবং সারা শরীর দিয়ে খাদ্য গ্রহন করবে অথবা তাদের খাদ্য গ্রহনের দরকার হবে না অথবা তাদের ডানা থাকবে যা দিয়ে তারা শুন্যে উড়ে বেড়াতে পারবে, তারা শুন্যে দৌড়াতে পারবে এবং তারা অনন্তকাল ধরে সেখানে অবস্থান করবে এবং তাদের মা হবে অতিক্ষমতাবাণ কোন চিরঞ্জিবী স্বত্বা। যদি এই ভূল উত্তরগুলো দিতো যেভাবে বাস্তব জগতের আস্তিকরা তাদের কল্পনার ফাঁনুশ উড়িয়ে দেয় সেভাবে তবে কিন্তু গল্পকারের উদ্দেশ্য সফলতো হতই না বরং ভূল প্রমাণিত হতো। এজন্যইগল্পকার অত্যন্ত কৌশলের সাথেই আস্তিক শিশুটিকে দিয়ে সঠিক উত্তরগুলো দিয়েছে। যাতে তার উদ্দেশ্য সফল হয়।
এই গল্পটির কথাগুলো অপযুক্তি এবং কুযুক্তি মূলক। কারণ এখানে তেঁতুলের মতো কোন টক জিনিসের মাধ্যমে পায়েশের মতো কোন মিষ্টি কিছুকে বুঝানোর মতো উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, মাতৃশিশু বুদ্ধিমান নয়। যদি তারা বুদ্ধিমান হতো তবে তারা বিজ্ঞানের মতো বাস্তব জ্ঞান দিয়ে প্রসব জীবনের পরের জীবন সম্পর্কে জানতে পারতো। কিন্তু তারা বুদ্ধিমান নয়। দ্বিতীয়ত, এখানে প্রসবকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করা হয়েছে। অথচ প্রসব আর মৃত্যু এক নয়। কারণ প্রসব হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মাতৃগর্ভে জন্ম নেওয়া শিশু এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়। অর্থাৎ ভ্রুন থেকে শিশুর জন্ম হয় এবং প্রসবের মাধ্যমে শিশু এক পরিবেশ থেকে অন্য পরিবেশে আসে কিন্তু সে জীবিত থাকে। মৃত্যু হলো জীবনের সমাপ্তি। অর্থাৎ ভ্রুণ সৃষ্টি হবার মাধ্যমে যে শিশুর জন্ম হয় সেই শিশুর জীবনের নানা ধাপ পার হয়ে একে বারে শেষ পরিণতি ঘটে মৃত্যুর মাধ্যমে। অর্থাৎ মৃত্যু মানে জীবনের শেষ হওয়া; অপরদিকে প্রসব হলো এক পরিবেশ থেকে অন্য পরিবেশে স্থানান্তরিত হওয়া। যেমন গ্রাম থেকে শহরে আসা বা পুকুরের মাছ নদীতে যাওয়া; এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু মৃত্যু হলো জীবের শেষ পরিণতি অর্থাৎ যারপর আর কিছু নেই। তাই প্রসবের সাথে মৃত্যুর বা মৃত্যুর পরের জীবনের তুলনা করা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আপাত দৃষ্টিতে দেখলে প্রসবের মাধ্যমে শিশু এক জগত থেকে অন্য জগতে গেলেও মৃত্যু হলো শেষ পরিণতি। যার ফলে মৃত্যুর পরে কেউ অস্তিত্বশীল থাকতে পারে না যেমনটি প্রসবের পরেও পারে। এখানে প্রসব এবং মৃত্যুর সংজ্ঞাতেই গল্পটির ভিত্তিহীনতা লোকানো আছে। মৃত্যু শব্দটিই জীবনের সমাপ্তি বুঝায়। অর্থাৎ যার পর আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। জীবনের সমাপ্তি ঘটে আর প্রসবের মাধ্যমে জীবন শুধু এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থাপ্রাপ্ত হয়। তাই গল্পটির মাধ্যমে প্রসবের মাধ্যমে মৃত্যুকে তুলে ধরার প্রকৃয়াটি ভিত্তিহীন, অযৌক্তিক এবং অসৎ।
(সমাপ্ত)
No comments:
Post a Comment