আস্তিকদের অযৌক্তিক,
কুযৌক্তিক,
অপযৌক্তিক
এবং
অপ-বৈজ্ঞানিক
প্রশ্নঃ
এ জীবন একটা পরীক্ষা। এটা ফলাফলের জায়গা নয়। এজন্যই সৃষ্টিকর্তাকে
মানুষ কোনদিন খুজে পাবে না। মানুষের এই জীবনে বিশ্বাসের পরীক্ষা নেওয়ার জন্যই সৃষ্টিকর্তা
মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তাই মানুষ সৃষ্টিকর্তার সন্ধান কখনই পাবে না। সৃষ্টিকর্তাকে
না দেখেই যারা তাকে বিশ্বাস করবে তারাই হবে সৃষ্টিকর্তার প্রিয় পাত্র। তাদেরকেই সৃষ্টিকর্তা
পরকালে পুরস্কৃত করবেন। এজন্যই সৃষ্টিকর্তাকে কেউ কখনও দেখেনি।
পৃথিবীতে কষ্ট দুর্দশা
সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। এতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি করা এবং শয়তানের
দ্বারা মানুষকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্য হলো যাতে মানুষের সৃষ্টিকর্তা বিশ্বাসের পরীক্ষা
নেওয়া যায়। এজন্যই মানুষের শত দুঃখ কষ্ট দেবার পরেও এসব থেকে মানুষকে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা
রক্ষা করে না। মানুষকে কষ্ট দিয়ে বিশ্বাসের পরীক্ষা নেন। জীবন একটা পরীক্ষা আর পৃথিবী
হলো পরীক্ষার হল। এখানে যদি সৃষ্টিকর্তা নিজে উপস্থিত হয় তবে মানুষের বিশ্বাসের পরীক্ষা
নেওয়াটা অর্থহীন হয়ে যাবে। কারণ সেটা হবে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেওয়ার মতো।
তাই সৃষ্টিকর্তা নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেন ঠিকই কিন্তু নিজে কখনও উপস্থিত হন না।
যৌক্তির এবং
বৈজ্ঞানিক
উত্তরঃ
পৃথিবীতে এর চেয়ে হাস্যকর কিছু নেই। আল্লাহ একজনকে পরীক্ষা করেন
অন্য জনকে কষ্ট দিয়ে। কি বে ইনসাফি!
আর তার প্রিয়জনকে প্রশ্ন ফাঁস করে দেয়। বাংলাদেশে এজন্যইতো
বারবার প্রশ্ন ফাঁস হয় কিন্তু কোন বিকার হয়না। কারন তারা সবাই আল্লাহর কাছ থেকে প্রশ্ন
ফাঁস করা শিখেছে।
আল্লাহ মুহাম্মদকে দেখা দিয়েছে (যাতে প্যাঁচাতে না পারেন তাই
মেরাজের কথা উল্লেখ করছি) এবং ফেরেশতা পাঠিতে তার অস্তিত্বের প্রমান দিয়েছে; অর্থাত
প্রশ্ন ফাঁস করে দিয়েছে। কিন্তু আমরা যুক্তিবাদীরা হাজার খুজেও কোন সৃষ্টিকর্তার কোন
রুপ অস্তিত্বের প্রমান পাইনি। সেজন্য নাস্তিক হয়ে গেছি। অন্ধবিশ্বাসী হয়ে কুসংস্কারের
জীবন বেছে নেইনি।
আল্লাহর প্রশ্ন ফাসের কি অসততা! এরকম দুর্নিতিবাজ কাইকে গড মানা
আমাদের সতো আদর্শবানদের সম্ভব না। তাই সৃষ্টিকর্তাকে যুক্তিবুদ্ধির মাধ্যমে যাচাই
বাছাই করে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেই। কুসংস্কারমুক্ত হয়ে মুক্তমনা হয়ে যাই।
সৃষ্টিকর্তা পারলে নবী রাসুলদের মতো আমাদের সামনে আসুক! কথা
দিচ্ছি সারা জীবন নয়, অনন্তকাল তার গোলামী করবো।
ভাই আবেগ দিয়ে কথা বললে হবে না। আবেগ দিয়ে কথা বললে সেটা যুক্তি
হয় না। যুক্তি কোন আবেগের ধার ধারে না। আল্লাহর প্রতি আপনার আবেগ অসীম তাই কুরআনের
কোন ভুলই আপনার কাছে ভুল মনে হয় না। কিন্তু আপনার এই আবেগ তো আর যুক্তি হয়ে যাবে
না। এটা আপনাকে বুঝতে হবে।
যদি পৃথিবীটা পরীক্ষার হলই হয়ে থাকে তবে সৃষ্টিকর্তা একজনের
কাছে দেখা দিতে পারে কিন্তু অন্যজনের কাছে দেখা দিতে পারে না কেন? ফেরেশতা বা দেবদূতগুলো
বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়ে গেছে কেন? ধর্মগ্রন্থগুলোতে সৃষ্টিকর্তার অনেক ক্ষমতার কথা
বর্ণনা করা হয়েছে, পৃথিবীর যত অলৌকিক গল্প বা রুপকথার কাহিনী আছে সবগুলোই ধর্মগ্রন্থে
পাওয়া যায় কিন্তু বাস্তবে কোন অলৌকিকতার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না কেন? সৃষ্টিকর্তার
ক্ষমতা বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়ে গেছে কেন?
এতো এতো কেনর উত্তর ধার্মিকদের দ্বারা দেওয়া সম্ভব নয়। তারা
শুধু অ্যাঁ! অ্যাঁ! মানে মানে করতে থাকে এবং ত্যাঁনা প্যাঁচানো মার্কা কথা বলতে থাকে।
কিন্তু এসব প্রশ্নের কোন যুক্তিযুক্ত উত্তর দিতে পারে না। মানুষ প্রাচীণকালে তার স্বীমাবদ্ধ
জ্ঞান দিয়ে বিশ্বজগতকে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিল। ফলে তারা সৃষ্টিকর্তার মতো এক কাল্পনিক
চরিত্রকে সৃষ্টি করেছিল তার কল্পনায়। ফলে এই সৃষ্টিকর্তাকে দিয়ে তার জানার আগ্রহকে
ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পেরেছিল। বিশ্বজগতের ব্যাখ্যা দিতে সৃষ্টিকর্তাকে মানুষ সৃষ্টি
করেছে কারণ তাদের কাছে বিশ্বজগতের ব্যাখ্যা দেবার মতো ক্ষমতা ছিল না। তাই সৃষ্টিকর্তাকে
সৃষ্টি করাতে প্রাচীণ মানুষের কোন দোষ দেওয়া যায় না। এটির মাধ্যমে বরং প্রাচীণ মানুষের
সৃষ্টিশীলতাই প্রকাশ পায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আধুনিক কালের কিছু অন্ধবিশ্বাসী কুসংস্কারাচ্ছন্ন
মানুষকে নিয়ে, যারা এই একবিংশ শতাব্দিতে বাস করেও সেই প্রাচীণ মানুষদের সৃষ্টি করা
কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে চলে। তারা বিজ্ঞানময় জগতে বাস করে
সৃষ্টিকর্তার কোন প্রমাণতো দিতেই পারে না উপরন্তু সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণের
জন্য নানা মুখরোচক কথা বলে চাপাবাজির মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চায়।
কারণ তারা খুব ভালো করেই জানে যে সৃষ্টিকর্তার বাস্তব কোন প্রমাণ তাদের কাছে নেই।
তারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের কোন প্রমাণই দিতে পারবে না। কারণ তারা খুব ভালো করেই
জানে যে সৃষ্টিকর্তার কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই। তাই তারা সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্বের
প্রমাণ দিতে পারবে না। এজন্যই নানা মুখরোচক কথা বলে মানুষের প্রশ্ন করার ক্ষমতা এবং
বিজ্ঞানমনস্কতার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। সৃষ্টিকর্তার কোন প্রমাণ নেই বলেই তারা দাবী
করে যে সৃষ্টিকর্তাকে প্রমাণ করা যায় না অথবা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব মানুষ কখনই পাবে
না। প্রকৃতপক্ষে এটি আস্তিকদের অক্ষমতা যা তারা পুরো মানব জাতির অক্ষমতা হিসেবে দেখায়।
তারা আসলে সৃষ্টিকর্তার কোন প্রমাণ দিতে পারবে না জেনেই এমন ছল চাতুরীর আশ্রয় নেয়।
বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে যেমন মানুষের জ্ঞানের পরিধি বেড়েছে
ঠিক একই সাথে তার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ অদেখাকে দেখার মতো প্রযুক্তি বানিয়েছে।
তাই ধর্মের মিথ্যাবুলিগুলো ধরা পড়ে গেছে অনেক আগেই। প্রাচীণ মানুষ যেভাবে ধর্মকে বৈধতা
দিতে দেবদুত বা ফেরেশতাদর মতো কাল্পনিক অস্তিত্বগুলোর আমদানী করেছে এবং এদের উপর
ভর করে তাদের অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারগুলোকে টিকিয়ে রেখেছে সেভাবে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি
আসার পরে সেই সব অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারগুলোকে একে একে ধ্বংস করা হয়েছে বিজ্ঞানের
জ্ঞান এবং প্রযুক্তির ক্ষমতা দিয়ে। এখন আর মানুষ আকাশের উপর কোন সৃষ্টিকর্তার বাসগৃহ
রয়েছে বলে বিশ্বাস করে না। মানুষ আর বিশ্বাস করে না যে ফেরেশতাদের তিন তিন, চার চার,
বা ছয় ছয় পাখা রয়েছে। মানুষের ডান কাঁধ এবং বাম কাঁধে দুইজন ফেরেশতা বসে আছে এমন অযৌক্তিক
কথা শুনে মানুষ হা হা করে হেসে উঠে। কারণ মানুষ জানে যে পৃথিবীর কোথাও কোন ফেরেশতা
নেই। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে প্রাচীণ কালের সেইসব ছেলে ভূলানো কথাগুলো
যে সম্পূর্ণই মিথ্যা এটা আর কারো জানার বাকী নেই। এজন্যই ধর্মবাদী কুসংস্কারাচ্ছন্ন
আস্তিকরা সৃষ্টিকর্তার কোন প্রমাণ পায়নি। কারণ সৃষ্টিকর্তা হলো প্রাচীণ মানুষের হাজার
হাজার কাল্পনিক রুপকথার চরিত্রগুলোর একটি। রুপকথার চরিত্রগুলোর যেমন বাস্তব অস্তিত্ব
নেই ঠিক সেভাবেই সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্ব নেই। সৃষ্টিকর্তা একটি কাল্পনিক চরিত্র।
এজন্যই বাস্তবে সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্ব পাওয়া সম্ভব নয়।
কিন্তু কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধার্মিকগুলো যেহেতু জানে যে তারা সৃষ্টিকর্তার
কোন রকম প্রমাণই দিতে পারবে না তাই তারা নানা অযুক্তি, কুযুক্তি এবং অপযু্ক্তির মাধ্যমে
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব দিতে চায়; চাপাবাজির মাধ্যমে তারা সৃষ্টিকর্তাকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত
করতে চায়। কিন্তু যেহেতু সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্ব নেই তাই তারা সৃষ্টিকর্তার কোন
রকমের প্রমাণই দিতে পারে না। শুধু সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব দিতে নানা চাপাবাজির অবতারনা
করে।
সৃষ্টিকর্তাকে মানুষ কখনই খুজে পাবে না অথবা সৃষ্টিকর্তাকে খুজে
পাবার ক্ষমতা মানুষের নেই অথবা সৃষ্টিকর্তা মানুষের সামনে আসে না কারণ সৃষ্টিকর্তা
মানুষের বিশ্বাসের পরীক্ষা নেন ইত্যাদি কুযুক্তিগুলো এজন্যই দেওয়া হয় কারণ তারা জানে
যে সৃষ্টিকর্তার কোন প্রমাণ তারা দিতে পারবে না। তাদের অক্ষমতাকে ঢাকার জন্যই তারা
এসব মুখরোচক কথা বলে মানুষকে অন্ধবিশ্বাসী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে রাখে।
প্রকৃত সত্য হলো যেহেতু সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্ব নেই তাই
মানুষ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে কখনই পাবে না। যেহেতু সৃষ্টিকর্তা একটি কাল্পনিক চরিত্র
এবং সৃষ্টিকর্তার বাস মানুষের কল্পনাতেই, বাস্তবে নেই; তাই সৃষ্টিকর্তার বাস্তব অস্তিত্ব
দেওয়া সম্ভব নয় এবং বাস্তব জগতে সৃষ্টিকর্তাকে মানুষ খুজে পাবে না। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব
নেই বলেই মানুষের পক্ষে সৃষ্টিকর্তার সন্ধান পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ সৃষ্টিকর্তা একটি
অবাস্তব কাল্পনিক চরিত্র যার বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই।
ধার্মিকরা যখন দ্বাবী করে যে পৃথিবী একটি পরীক্ষাগার আর তাই
মানুষের সামনে সৃষ্টিকর্তা আসেন না তখন হাসি চেঁপে রাখা খুব কষ্টকর হয়ে যায়। কারণ ধর্মগ্রন্থগুলোতে
সৃষ্টিকর্তার নানা ক্ষমতার কথা উল্লেখ আছে এবং সৃষ্টিকর্তা যে অনেক মানুষের সামনে উপস্থিত
হয়েছিল এবং তার দূত বা ফেরেশতা পাঠিয়েছিল তার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে ধর্মগ্রন্থগুলোতে।
যেমন ইহুদী, খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থগুলোতে উল্লেখ আছে যে নবী মুসা এবং
মুহাম্মদ সৃষ্টিকর্তাকে দেখেছিল। আবার প্রায় সব নবীই সৃষ্টিকর্তার দূত বা ফেরেশতাকে
দেখেছিল যেমন- ইসা, মুহাম্মদ ইত্যাদির কাছে ফেরেশতা দেখা দিয়েছিল। আবার নানা অলৌকিক
ক্ষমতা মানুষ দেখেছিল যেমন মুসা বা মুজেস, ঈসা বা জেসাস ক্রাইস্ট, সুলেমান প্রভৃতি
ব্যক্তির অলৌকিক ক্ষমতা ছিল এবং তারা মানুষের কাছে সেটা প্রকাশ করেছিল।
কিন্তু বাস্তব জগতে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব তো দুরে থাক সৃষ্টিকর্তার
অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত বিষয় যেমন যাদুমন্ত্র, অলৌকিকতা, ফেরেশতা, জ্বীন-ভুত, শয়তান
কোন কিছুরই কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব এবং সৃষ্টিকর্তার
অস্তিত্ব সম্পর্কিত কোন কিছুরই কোন রুপ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অথচ মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে
এবং প্রযুক্তিতে এতো এতো উন্নতি করেছে যে মহাবিশ্বের অন্য প্রান্তে কি আছে সেটা পৃথিবীতে
বসেই বের করতে পারে। বিশ্বজগতের শুরুতে কি হয়েছে সেটা বর্তমানে পৃথিবীতে বসেই বের করতে
পারে। পরমানুর মধ্যে কি ঘটে বা ইলেক্ট্রন, প্রোটনের মতো অতিক্ষুদ্র কণা বা নিউট্রিনোর
মতো অদৃশ্য এবং অস্তিত্ব প্রমাণে প্রায় অসম্ভব অতি অতি ক্ষুদ্র কণিকাগুলোকেও আবিষ্কার
করতে পারে। মানুষ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে এতো এতো উন্নতি করার পরেও কোন রকমের অলৌকিকতা,
সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কিত ধারণা যেমন জ্বীন-ফেরেশতা শয়তার প্রভৃতি এবং সৃষ্টিকর্তার কোনরুপ
অস্তিত্বের প্রমাণ পায়নি। অথচ ধর্ম এবং ধর্ম গ্রন্থগুলোতে এসব অবাস্তব এবং অসম্ভব
কিছুর অস্তিত্বের ছড়াছড়ি যেগুলোর কোন বাস্তব অস্তিত্বই নেই।
তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে যে যদি পৃথিবীটা পরীক্ষাগারই হয় তবে
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা একেবারে শুন্যের কাছাকাছি হয় কেন? সৃষ্টিকর্তা
প্রাচীণকালের মানুষের কাছে দেখা দিয়েছে তবে বর্তমানে কারও কাছে দেখা দেয় না কেন? যাদের
কাছে সৃষ্টিকর্তা দেখা দেয় তাদেরকে মানুষ পাগল হিসেবে পাগলাগারদে রেখে চিকিৎসা করে
এবং তারা ভালোও হয়ে যায়; কেন? নানা অলৌকিকতা আগে দেখা যেতো কিন্তু বিজ্ঞানের উন্নতির
সাথে সাথে অলৌকিকতাগুলো উধাও হয়ে গেল কেন? যদি পৃথিবীটা পরীক্ষাগারই হয় তবে সৃষ্টিকর্তা
কিছু নির্দিষ্ট চরিত্রের মানুষের কাছে উপস্থিত হয় কিন্তু আধুনিক মানুষের কাছে উপস্থিত
হয় না কেন? যদি পৃথিবীটা পরীক্ষাগারই হয় তবে কিছু মানুষের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করে
সৃষ্টিকর্তা কি সেসব মানুষকে প্রশ্ন ফাঁস করে দেন না? তাহলে সেটা পরীক্ষা হয় কি করে
যেখানে সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং কিছু মানুষকে প্রশ্ন ফাঁস করে দেয়। অথচ যুক্তিবাদী বা মুক্তচিন্তার
মানুষের কাছে গুপন থাকে। কেন?
পৃথিবীটা যদি পরীক্ষাগারই হয় তবে কেন আস্তিকরা দাবী করে যে সৃষ্টিকর্তা
মানুষের বিশ্বাসেরই পরীক্ষা নিচ্ছেন। এমনও তো হতে পারে যে সৃষ্টিকর্তা আসলে মানুষের
বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা দিচ্ছেন। যদি পৃথিবীটা একটা পরীক্ষারই জায়গা হয় তবে আমরা জানি
না আসলে সৃষ্টিকর্তা আমাদের কিসের ভিত্তিতে পরীক্ষাটি নিচ্ছে। যদি পরীক্ষা নেওয়াই মানুষকে
পৃথিবীতে পাঠানোর উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তবে আমরা জানবো না আসলে কোন ভিত্তিতে সৃষ্টিকর্তা
আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছে। হতে পারে সেটি যুক্তিবুদ্ধির পরীক্ষা, বা জ্ঞানের সিমা রেখার
পরীক্ষা, বিজ্ঞান চর্চার পরীক্ষা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আস্তিকরা তাদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন
মন নিয়ে এবং অন্ধবিশ্বাসের বশবতী হয়ে তারা চোখ কান বন্ধ করে দাবী করে যে সৃষ্টিকর্তা
মানুষের বিশ্বাস বা অন্ধবিশ্বাসের পরীক্ষাই নেন।
অথচ ধর্মের ইতিহাস সাক্ষি দেয় যে সৃষ্টিকর্তা কিছু মানুষকে সৃষ্টিকর্তার
অস্তিত্ব আছে কি নেই সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয় নিজে উপস্থিত হয়ে অথবা তার তৈরী দেবদুত
বা ফেরেশতাদেরকে সেই সব নির্বাচিত মানুষের কাছে উপস্থিত করে। অর্থাৎ সেই সব নির্বাচিত
মানুষের কাছে সৃষ্টিকর্তা প্রশ্ন ফাঁস করে দেয়।
তাহলে এক চোখাপনা মনোভাব দেখিয়ে সৃষ্টিকর্তা কিসের পরীক্ষা
নিবে? জানি আস্তিকরা এই টুকু পড়েই চ্যাঁচামেচি শুরু করে দেবে আর বলবে, কিছু মানুষকে
এজন্যই দেখা দিয়েছে কারণ এটা কারণ সেটা ইত্যাদি। আরো নানা ত্যানা প্যাঁচানো কুযুক্তি
দিতে থাকবে। কিন্তু তারা যদি একবার অন্ধবিশ্বাসহীন মুক্ত ভাবে চিন্তা করে দেখে তাহলে
খুব সহজেই বুঝতে পারবে যে যদি পৃথিবীটা মানুষের বিশ্বাস বা অন্ধবিশ্বাসের পরীক্ষাগারই
হয় তবে সৃষ্টিকর্তা কখনও কিছু নির্দিষ্ট মানুষের সামনে উপস্থিত হয়ে তাদের কাছে প্রশ্ন
ফাঁস করে দেবে না। হলে সবার সামনেই হবে এবং না হলে কারো সামনেই হবে না। সব থেকে বড়
কথা যদি পৃথিবীটা মানুষের পরীক্ষাগারই হয় তবে মানুষের জানার কথা নয় যে মানুষের বিশ্বাসেরই
পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। হয়তো মানুষের বিশ্বাসের পরীক্ষার জন্য নয় বরং অন্য কিছু যেমন,
যুক্তিবুদ্ধি, জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা, ভালোবাসা ইত্যাদির পরীক্ষার জন্যই মানুষকে সৃষ্টি
করা হয়েছে।
সমস্যা হচ্ছে আস্তিকদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা। তারা তাদের অন্ধবিশ্বাসের
বাইরে যায় এমন কিছুই চিন্তা করতে পারে না। ফলে তারা তাদের কুসংস্কারের মন নিয়ে অন্ধভাবে
বিশ্বাস করে যে মানুষকে পৃথিবীতে বিশ্বাসের পরীক্ষার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। অথচ তাদের
মাথায় এটা ঢুকে না যে পৃথিবীটা পরীক্ষাগার হলে যে কোন বিষয়ই পরীক্ষার বিষয় হতে পারে।
শুধু অন্ধবিশ্বাস বা বিশ্বাস নয়। আস্তিকদের এই চাতুরতার কারণ হলো মানুষকে শুধু অন্ধবিশ্বাসী
এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে রাখা। যাতে মানুষ কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাস থেকে বের হয়ে
বিজ্ঞান মনস্ক যুক্তিবাদী না হতে পারে সে জন্যই আস্তিকগণ বা ধর্মের সৃষ্টিকারী মানুষেরা
এসব কুযুক্তি ও অপযুক্তি দিয়ে মানুষকে অন্ধবিশ্বাসী কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে রেখেছে। তাই
তারা এমন মুখরোচক কুযুক্তি এবং অপযুক্তির অবতারনা করে থাকে।
সবথেকে
বড় কুযুক্তি হলো সৃষ্টিকর্তা একজন মানুষের বিশ্বাসের পরীক্ষা নেবার জন্য অন্য মানুষকে কষ্ট দেয় এবং মেরে ফেলে। এর থেকে হাস্যকর
কথা আর হয় না।
যদি কোন মানুষ একজনকে পরীক্ষা নেবার জন্য অন্য মানুষকে কষ্ট দেয় তবে মানুষ তাকে নিষ্ঠুর, নির্মম এবং বর্বর বলে সম্বোধন করে। অথচ আস্তিকরা দাবী করে সৃষ্টিকর্তা এমন জঘন্য খারাপ কাজ করার পরেও তিনি পরম দয়াময়। কুযুক্তি এবং অপযুক্তির শ্রেষ্ট (নিকৃষ্ট) উদাহরণ। যদি সৃষ্টিকর্তা ঝড়-তুফান, ভুমিকম্প,
সুনামি দিয়ে মানুষকে কষ্ট দিয়ে হত্যা করে তার মাধ্যমে অন্য কোন মানুষের বিশ্বাসের (অন্ধবিশ্বাসের) পরীক্ষা নেওয়া হয় তবে সেই
সৃষ্টিকর্তাকে নিকৃষ্ট, নির্মম এবং বর্বর বলা ছাড়া আমাদের মতো যুক্তিবাদী মানুষের অন্য কোন পথ খোলা থাকে
না।
আবার
সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে খারাপ চরিত্রটি ফুটে উঠে যখন সে একজন মানুষকে
পরীক্ষা করার জন্য একজন মানুষ যখন আরেকজন মানুষকে খুন করে, অত্যাচার করে, ধর্ষন করে বা যন্ত্রনা দেয়
তখন ক্ষমতা থাকা সত্তেও সৃষ্টিকর্তা সেই নিরীহ মানুষটিকে রক্ষা করে না। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে এবং খুনি বা অত্যাচারী মানুষটিকে
শাস্তি দেবার পরিকল্পনা করতে থাকে। কিন্তু সেই অত্যাচারিত মানুষকে বাঁচায় না। যদি কোন মানুষ ক্ষমতা থাকা সত্তেও কোন মানুষকে অত্যাচারিত বা নির্যাচিত হতে
দেখার পরেও কিছু না বলে, তবে
তাকে আমরা জঘন্য খারাপ মানুষ হিসেবে ধিক্কার দেই। এই একই রকম
কাজ করার পরেও আস্তিকরা সৃষ্টিকর্তাকে পরম দয়ালু খেতাব দেয়। একজন ছয় বছরের শিশুকে
যখন কোন নরপশু ধর্ষণ করতে থাকে তখন সৃষ্টিকর্তা শিশুকে না বাঁচিয়ে এই
পর্ণগ্রাফী দেখে মজা নিয়ে কি পরম দয়া
দেখায় মানুষের উপর? সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের বুঝার বাকী থাকে না, শুধু অসুস্থ কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধবিশ্বাসী মানুষ ব্যাতীত।
যদি
কোন সৃষ্টিকর্তা থেকেই থাকতো যে কিনা পরম
দয়ালু এবং সর্বশক্তিমান কিন্তু সে ধর্ষিত শিশুকে
রক্ষাতো করেই না বরং বলে
যে সে ধর্ষকের পরীক্ষা
নিচ্ছে এবং ধর্ষণ সম্পূর্ন হলে ধর্ষককে কঠিন শাস্তি দেবে সে; তখন যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে প্রশ্ন জাগে সে কি ধর্ষকের
বিশ্বাসের পরীক্ষা নিতে শিশুটির উপর অমানুষীক যন্ত্রনার ব্যবস্থা করে রাখেনি? তবে সে শিশুটির কাছে
পরম দয়ালু থাকে কি করে?
ঠিক
একই ভাবে কোন মানুষের বিশ্বাসের পরীক্ষা নেবার জন্য যখন কোন সৃষ্টিকর্তা অন্য কোন অসহায় মানুষকে কষ্ট, যন্ত্রনার ব্যবস্থা করে রাখে সেই সৃষ্টিকর্তাকে আর যাই হোক
দয়ালু বলা যায় না। বরং সে হলো নিষ্ঠুর,
নির্মম এবং বর্বর এক মানুষীক রোগী।
সে কখনই কারোও উপাসনার যোগ্যতা রাখে না। বরং সবার ধিক্কারের যোগ্যতা রাখে। সেই নিষ্ঠুর, নির্মম এবং বর্বর ঈশ্বরের অস্তিত্ব যদি থেকেও থাকে তবুও কোন সুস্থ এবং বিবেকবাণ মানুষের পক্ষে তাকে সম্মান দেওয়া সম্ভব নয়।
তাই
আস্তিকদের এসব দাবীর কোন ভিত্তিই নেই যে সৃষ্টিকর্তা মানুষের
বিশ্বাসের পরীক্ষা নেবার জন্যই মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। আবার সৃষ্টিকর্তা একজনকে পরীক্ষা নেবার জন্য আরেকজনকে কষ্ট দেন কিন্তু তিনি এবং তার সৃষ্ট অলৌকিকতা, দেবদুত বা ফেরেশতাদের মানুষের
সামনে আনেন না, এগুলো কুযুক্তি এবং অপযুক্তিমূলক কথা। বরং আস্তিকরা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের কোন প্রমাণ দিতে পারে না বলে এমন
কুযুক্তি বা অপযুক্তির আমদানী
করে থাকে। যদি সৃষ্টিকর্তা বলে সত্যই কেউ থেকে থাকতো তবে অবশ্য তার অথবা তার সম্পর্কিত নানা রুপকথার কাহিনীগুলোর সত্যতা পাওয়া যেতো। যেমন সৃষ্টিকর্তা যদি পৃথিবীতে নাও আসতে পারে তবুও ফেরেশতা, দেবদুত, জ্বীন-পরী, শয়তান-ভুত অথবা অলৌকিক কিছুর অস্তিত্ব অবশ্যই পাওয়া যেতো।
পৃথিবীতে
সব ধরনের অস্তিত্বশীল কিছুরই অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় অথচ শুধু সৃষ্টিকর্তা এবং সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কিত কোন কিছুরই অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। এর কারণ একটাই;
সৃষ্টিকর্তার কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই। মানুষ তার কল্পনা শক্তি দিয়ে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে সৃষ্টি করেছে। আর তাই সৃষ্টিকর্তার
অবস্থান মানুষের কল্পনায়, মানুষের মনে। এজন্যই বাস্তব জগতে সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। কারণ বাস্তব জগতে সৃষ্টিকর্তার কোনই অস্তিত্ব নেই। সৃষ্টিকর্তা মানুষের মনে বাস করে, মানুষের কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাসের মধ্যে। বাস্তবে নয়।
No comments:
Post a Comment