আস্তিকদের অযৌক্তিক,
কুযৌক্তিক,
অপযৌক্তিক
এবং
অপ-বৈজ্ঞানিক
প্রশ্নঃ
বাংলা
শব্দ দিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই আরবির ১০০ ভাগ প্রতিশব্দ হয় না। আর
তাই আরবী ভাষার কুরআনের ভূল কুরআনের বাংলা অনুবাদ দিয়ে করলে সেটা হবে না। আপনাকে কুরআনের ভূল ধরতে হলে আগে আরবী ভালা জানতে হবে। তা না হলে
আপনি কখনই কুরআন ভূল নাকি শুদ্ধ সেটা বুঝতে পারবেন না।
যৌক্তির এবং
বৈজ্ঞানিক
উত্তরঃ
বাংলা শব্দের ভান্ডার কম সেটা ঠিক আছে । কিন্তু তার মানে এটা নয় যে কুরআনের অনুবাদ বাংলা ভাষা দিয়ে করা যাবে না। পৃথিবীর সব ভাষাকেই বাংলা ভাষা দিয়ে অনুবাদ করা যায়। এবং মানুষ সেটা অনেক আগে থেকেই অত্যন্ত স্বার্থকতার সাথে করে এসেছে। বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে যথেষ্ট পরিমাণ শব্দ রয়েছে যা দিয়ে পৃথিবীর যে কোন ভাষাকেই অনুবাদ করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো ১০০% সঠিক ভাবে অনুবাদ করা যায় না তবে ৯৯.৯৯% সঠিক ভাবে অনুবাদ করা সম্ভব।
আর সব চেয়ে বেশী শব্দের ইংরেজী ভাষা দিয়ে সব ভাষাই অনুবাদ করা যায়। তাই কুরআনের ইংরেজী অনুবাদগুলোর মধ্যে কোন ভূল নেই। ইংরেজী ভাষায় কুরআনকে চমৎকার ভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। পৃথিবীর সব মুসলমান এবং বাদবাকী মানুষ তাদের নিজের ভাষার পাশাপাশি ইংরেজী ভাষার কুরআনের অনুবাদকে মিলিয়ে দেখে। সব অনুবাদের মধ্যেই মিল রয়েছে। সব অনুবাদই একই রকম কথা বলে। কোন অনুবাদেই পরস্পর বিরোধিতা লক্ষ করা যায় না। যদিও ভিন্ন ভিন্ন অনুবাদগুলো কিছুটা ভিন্ন ভাবে প্রকাশ হয়েছে। তবে সব অনুবাদেই কুরআনের মূল বক্তব্যকে অক্ষুন্ন রাখা হয়।
বাংলা ভাষা দিয়েও পৃথিবীর সব ভাষা অনুবাদ করা যায়।
আর বাংলা ভাষা দিয়ে কুরআনের মতো সাধারন একটা বই অনুবাদ করা যাবে না এটা সম্পূর্ন ভূল। কুরআনে এমন কিছুই নেই যেটা বাংলা ভাষা দিয়ে অনুবাদ করা যায়নি । অনেক বাংলা অনুবাদ আছে । আপনি চাইলেই দেখতে পাবেন কি সুন্দর করে তারা কুরআনকে বাংলা অনুবাদ করেছে। আসলে কুরআনে এমন কিছুই নেই যেটা বাংলা ভাষা দিয়ে অনুবাদ করা যাবে না।
যারা কুরআনের ভূল বের করে তারা শুধু বাংলা ভাষার অনুবাদগুলো দেখে ভূল বের করে না। বরং তারা বাংলার পাশাপাশি ইংরেজী ভাষার অনুবাদ দেখে নিয়েই কুরআনের ভূল বের করে। এছাড়াও কুরআনের আরো অনেক ভাষার অনুবাদ আছে যেগুলোর অনুবাদের সাথে বাংলা ভাষার কুরআনের অনুবাদের ১০০% মিল রয়েছে। সেগুলো দেখেও কুরআনের ভূল বের করা হয়েছে।
কুরআনে সব অনুবাদ এবং আরবী ভাষায় কুরআনের ব্যাখ্যা যখন একই কথা বলে তখন কুরআনের অনুবাদ করা যায় না কথাটির কোন ভিত্তি থাকে না।
সব চেয়ে বড় কথা কুরআনের অনুবাদকগণ খুব ভালো করেই আরবী ভাষা
জানা ইসলামিক পন্ডিত। তারা কুরআন, হাদিস এবং ইসলাম সম্পর্কে অনেক পড়াশুনা করেই কুরআনকে
অনুবাদ করেছেন। আর তাই পৃথিবীর সব ভাষার কুরআনের অনুবাদের মধ্যে মিল দেখা যায়। কুরআনের
অনুবাদ কোন আরবী ভাষা না জানা মানুষ অনুবাদ করেনি। যারা কুরআনকে অনুবাদ করেছে তারা
কুরআন সম্পর্কে সব কিছু জেনে বুঝে ইতিহাস ঘেটেই কুরআনের অনুবাদ করেছে। ফলে আরবী ভাষার
কুরআনকে অনুবাদ করা যায় না অথবা কুরআনের বাংলা অনুবাদ দেখে কুরআনের ভূল বের করা যাবে
না এই কথাটির বিন্দু মাত্রও ভিত্তি নেই।
যারা বলে কুরআনের পূর্ববর্তী অনুবাদকগণের অনুবাদ পুরোপুরি সঠিক নয়, তারা আসলে কুরআনের প্রমানিত ভূলের হাত থেকে কুরআনকে বাঁচাতে অসৎ পন্থা অবলম্বন করে। তারা কুরআনে ব্যবহৃত শব্দগুলোর সাম্প্রতিক নতুন তৈরী হওয়া অর্থগুলো নিয়ে কুরআনের প্রকৃত অর্থকে পরিবর্তন করে কুরআনকে নতুন করে অর্থ দিয়ে কুরআনের ভূলগুলোকে সংশোধন করে। এতে কাজ না হলে তারা কুরআনে ব্যবহৃত শব্দগুলোর যে কোন একটি শব্দের সম্পূর্ণ নতুন অর্থ এমন ভাবে তৈরী করে যাতে তা দিয়ে কুরআনের ভূলকে সংশোধন করা যায় এবং বিজ্ঞানের সাথে মিল রাখা যায়। ফলে তাদের করা অনুবাদগুলোর অর্থ এবং প্রকৃত কুরআনের অর্থ যায় সম্পূর্ণ বদলে। ফলে প্রকৃত কুরআন আর মুসলমান দ্বারা (অর্থের পরিবর্তনের মাধ্যমে) সংশোধিত কুরআন এক থাকে না। তাই মুসলমান দ্বারা বানানো বিজ্ঞানময় কুরআনের কোন মূল্য নেই। এগুলো মুসলমানদের জন্য ধর্মবিশ্বাস (অন্ধবিশ্বাস) রক্ষার টনিক হিসেবে কাজ করে। এর অন্য কোন স্বার্থকতা নেই।
একটি শব্দের একশো প্রতিশব্দের ব্যাপারে একটু বলা আবশ্যক।
একটা ভাষায় একটা শব্দের অনেকগুলো অর্থ বা প্রতিশব্দ থাকে । কিন্তু কোন শব্দ যখন কোন একটা বাক্যে ব্যবহৃত হয় তখন ওই শব্দটির শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট অর্থই বহন করে । বাকী প্রতিশব্দগুলোর অর্থ বহন করে না। অর্থাৎ বাক্যে ব্যবহৃত শব্দগুলোর একাধিক অর্থ থাকলেও কোন
বাক্যে ব্যবহৃত শব্দগুলোর শুধু মাত্র একটি নির্দিষ্ট অর্থই হয়।
শুধু মাত্র লেখক ওই প্রতিশব্দটির যে অর্থটি ব্যবহার করেছে ওই নির্দিষ্ট বাক্যে ওই শব্দটির শুধু মাত্র সেই নির্দিষ্ট অর্থই হবে ।
একটা উদাহরণ দিলে হয়তো ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন ।
ইংরেজী শব্দ ডিসকভার এবং ইনভেনশন এই শব্দ দুইটির একটি বাংলা প্রতিশব্দ আছে, আর সেটা হলো আবিষ্কার । আবিষ্কার দিয়ে বাংলা ভাষায় দুই অর্থই হয় ।
এখন কোন একজন লেখক বললো- লোকটি নতুন একটি দীপ আবিষ্কার করেছে । এখানের এই আবিষ্কারটির একটি নির্দিষ্ট অর্থই বহন করছে । অর্থাৎ ডিসকভার । কারণ দীপ ইনভেনশন করা যায় না, দীপ ডিসকভার বা আবিষ্কার করা যায় । অর্থাৎ অনুসন্ধান করে আবিষ্কার করা ।
আবার কোন লেখক যদি লিখে যে, লোকটি ঔষধটি আবিষ্কার করেছে । এখানে কিন্তু ডিসকভার হবে না, এখানে আবিষ্কারের অর্থ হচ্ছে ইনভেনশন । অর্থাৎ গবেষণা করে আবিষ্কার করা ।
ঠিক তেমনি একটি বাক্যে যখন কোন শব্দ ব্যবহৃত হবে তখন ওই শব্দটির একটি মাত্র নির্দিষ্ট অর্থই প্রকাশ করবে । বাকী অর্থগুলো ব্যবহৃত হবে না ।
আবার বাংলা ‘মাথা’ শব্দটির অনেকগুলো অর্থ হতে পারে। বাক্যে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে অর্থের ভিন্নতা প্রদর্শন করে। যদি বলা হয় মানুষের একটি ‘মাথা’ থাকে, তবে এর অর্থ একটিই হয়; আর সেটা হলো মাথা বা মস্তক। আবার যদি বলা হয় ছেলেটির মাথা খারাপ তবে এখানে মাথা খারাপ মানে মাথার গঠন খারাপ বুঝায় না বরং এখানে পাগল বোঝানো হয়। আবার ঠিক সেভাবেই যদি বলা হয় যে, ছেলের মাথা ভালো তবে এখানে এর অর্থ হয় সে খুব বুদ্ধিমান বা মেধাবী।
একই ভাবে যখন বলা হয় যে ছেলেটি অংকে কাঁচা তবে এখানে কাঁচা শব্দটির অর্থ ফল পাকে নি বা ছেলেটি পেঁকে যায়নি বুঝায় না। বরং এর অর্থ হয় ছেলেটি অংকে পারদর্শী নয়। ঠিক এভাবেই কোন শব্দের অর্থ অনেকগুলো হলেও কোন শব্দকে যখন বাক্যে ব্যবহার করা হয় তখন এর একটি মাত্র অর্থই হয় (যদিও শব্দটির অনেকগুলো অর্থ রয়েছে)।
ফলে কুরআনে ব্যবহৃত শব্দগুলোর অর্থও প্রাচীণ সময়ে ব্যবহৃত অর্থই প্রকাশ করবে। এই শব্দগুলোর নতুন ভাবে তৈরী হওয়া অর্থ দিয়ে কুরআনকে নতুন করে অর্থ করলে বা অনুবাদ করলে প্রকৃত কুরআনের অর্থ বদলে যাবে।
কিন্তু কুরআনের বর্তমান অনুবাদগুলোতে কুরআনে ব্যবহৃত পুরাতন শব্দগুলোর নতুন তৈরী করা অর্থ ব্যবহার করে যে নতুন অর্থ করা হয় সেটা মুহাম্মদ বর্নিত অর্থ নয় । কারন নতুন অর্থ ব্যবহার করলে অর্থ বদলে যাবে ।
কিন্তু অসৎ মুসলমানগুলো এই কাজটিই করে যাচ্ছে নির্লজ্জের মতো।
আর অসৎ মানুষদের মতো কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাচ্ছে। কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোতে কুরআনের কোন ভূমিকা নেই। কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে প্রকৃত ভূমিকা রাখছে কুরআনের মূল অর্থকে পরিবর্তন করে কুরআনের নতুন অর্থ করে যারা কুরআনকে (বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে) সংশোধিত করছে তাদের।
আস্তিকদের অযৌক্তিক,
কুযৌক্তিক,
অপযৌক্তিক
এবং
অপ-বৈজ্ঞানিক
প্রশ্নঃ
আমি
যদি বলি what is the natural
number before 2? তবে
আপনি বলতে পারেন যে ওয়ান বা
১ । কিন্তু আমি
যদি বলি what is the natural
number before 1? তখন
আপনি কিন্তু কোন natural number বলতে পারবেন না। ঠিক একই ভাবে যদি বলা হয় যে সব
কিছুরই একটি আদি
কারণ রয়েছে আর সেটি হলো
সৃষ্টিকর্তা। তবে আপনি কিন্তু বলতে পারেন না যে সৃষ্টিকর্তার
আদি কারণ কি বা সৃষ্টিকর্তাকে
কে সৃষ্টি করেছে? কারণ ১-এর আগে
যেমন আর কোন স্বাভাবিক
সংখ্যা নেই; একই হলো প্রথম সংখ্যা তাই ১-এর পূর্বে
কোন সংখ্যা নেই। আর সেভাবেই সৃষ্টিকর্তার
কোন সৃষ্টিকর্তা নেই।
যৌক্তির এবং
বৈজ্ঞানিক
উত্তরঃ
ভাই, নাম্বারিং শুরু হয় ১ থেকে কিন্তু স্টার্টিং পয়েন্ট ০ থেকে হয়। নাম্বারিং শুরু হয় অর্থাৎ নাম্বারিং-এর স্টার্টিং আছে। কিন্তু আস্তিকদের দাবী গড আনলিমিটেড ধারণা । তাহলে একটা লিমিটেড বিষয় দিয়ে আনলিমিটেড কিছুকে বিচার করা কি যুক্তি সংগত ? অবশ্য গডকেও যদি লিমিটেড ধরেন তবে ভিন্ন কথা । আপরি নাম্বার দিয়ে তো সৃষ্টিকর্তাকে পরিমাপ করেন না; করেন কি ?
যদি করে থাকেন তাহলে সৃষ্টিকর্তার একটা শুরু থাকবে। সে শুণ্য থেকে শুরু হবে। অর্থাৎ প্রথমে কিছুই ছিল না মানে শুণ্য ছিল। তারপর গড (সৃষ্টিকর্তা) সৃষ্টি হলো এবং তারপর সে সব কিছু সৃষ্টি করলো।
অর্থাত প্রথমে ০, তারপর ১, তারপর ২ এভাবে।
আর আপনার তুলনা অনুযায়ী, প্রথমে ০ মানে শুন্যতা, তারপর ১ মানে গড, তারপর ২ মানে সময়, তারপর ৩ মানে স্থান, তারপর ৪ মানে কাল, তারপর ৫ মানে বিশ্বজগত। অর্থাত এই ধারনা অনুযায়ী গড তৈরী হয়েছে শুন্য থেকে । তার পূর্বে কিছু ছিল না।
বিজ্ঞানীদের অতি সাম্প্রতিক ধারণা অনুযায়ী বিশ্বজগতের পূর্বে কিছুই ছিল না (সৃষ্টিকর্তাও নয়। কারণ বিশ্বজগত সৃষ্টির আগে স্থান এবং সময় কিছুই ছিল না সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বশীল থাকার মতো)। তারপর কুয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে কিছু তৈরী হয়েছে এবং ইনফ্লেশনের মধ্য দিয়ে বিগ ব্যাং-এর মাধ্যমে বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে। তারপর বিশ্বজগত আজকের অবস্থায় বিবর্তিত হয়েছে।
ঠিক একই ভাবে যদি ঈশ্বরের অস্তিত্বের তুলনা নাম্বারিং সিস্টেমের মাধ্যমে দেন তবে বলতে হবে, প্রথমে কিছুই ছিল না মানে শুন্য (০) ছিল। তারপর ইশ্বর সৃষ্টি হলো অর্থাৎ ১ হলো। পরে ঈশ্বর বিগ ব্যাং ঘটালো অর্থাৎ ২ হলো। তারপর পৃথিবী, সূর্য সৃষ্টি করলো অর্থাৎ ৩ হলো। এভাবে চলতে থাকবে। কিন্তু তাতে করে ঈশ্বরকেও শুন্য থেকে সৃষ্টি হতে হবে।
আর তাই আপনি নাম্বার দিয়ে গডকে বিচার করতে পারেন না ।
এখানে যুক্তি বা লজিক বলে, যেটা সব কিছুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সেটা গডের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে । যদি সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা থাকে তবে গডেরও একজন সৃষ্টিকর্তা থাকবে ।
তেমনি গডকে যদি নাম্বারের সাথে তুলনা করেন তবে নাম্বারের ক্ষেত্রে যেটা প্রযোজ্য সেটা গডের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। অর্থাত নাম্বারের ক্ষেত্রে একটা শুরু বা স্টার্টিং পয়েন্ট থাকে তেমনি গডের ক্ষেত্রেও একটা শুরু বা স্টার্টিং পয়েন্ট থাকতে হবে।
আপনি গডকে হিসাবে ধরবেন কিন্তু তাকে গননা করবেন না সেটাতো হবে না।
আর তাই নাম্বার দিয়ে গডকে বিচার করা যুক্তিযুক্ত নয়।
আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী বিশ্বজগত সৃষ্টির আগে কিছুই ছিল না। না পদার্থ, না শক্তি এমনকি স্থান (এমটি স্পেস) এবং কাল (টাইম) এগুলোও বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বে অনুপস্থিত ছিল। বিশ্বজগত সৃষ্টি হবার সাথে সাথে স্থান এবং কালের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বজগত প্রসারিত হবার সাথে সাথে এগুলোও প্রসারিত হচ্ছে। ফলে সৃষ্টিকর্তা বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বে অস্তিত্বশীল থাকতে পারবে না। কারণ বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকার মতো পদার্থ ও শক্তির অস্তিত্ব যেমন ছিল না ঠিক একই ভাবে সৃষ্টিকর্তাকে বিরাজমান থাকার মতো স্থান এবং কাল (সময়) ছিল অনুপস্থিত। ফলে অস্তিত্বশীল সৃষ্টিকর্তার বেঁচে থাকার মতো পদার্থ বা শক্তি এবং স্থান ও কাল কোনটিই ছিল না। অর্থাৎ পরিণতি হিসেবে সৃষ্টিকর্তারও অস্তিত্বশীল থাকা সম্ভব ছিল না।
যারা স্থান, কাল পদার্থ এবং শক্তির উর্ধে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ছিল বলে বিশ্বাস করে (সম্পূর্ণ অন্ধভাবে) তারা তাদের কল্পনার জগতে সৃষ্টিকর্তার এমন অস্তিত্বশীলতা সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ পদার্থ, শক্তি স্থান এবং কাল বিহীন অবস্থায় সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব শুধু মাত্র অন্ধবিশ্বাসীদের মনে থাকা সম্ভব। বাস্তব জগতে এটি কখনই সম্ভব নয়।
অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার ধারণা সম্পূর্ক মনের কল্পনা জগতের। বাস্তবে সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্ব নেই।
আস্তিকদের অযৌক্তিক,
কুযৌক্তিক,
অপযৌক্তিক
এবং
অপ-বৈজ্ঞানিক
প্রশ্নঃ
আমার
জানা মতে মানুষের শরিরের উপাদান হইতেছে,
water,
carbon, lime, phosphorus, sulphur, fluorine, iron, silocon and আরো ১৫ টা উপাদান।
এবং এই সবগুলাই মাটি থেকেই পাওয়া যায়। আর তাই কুরআন বর্ণিত মানুষকে মাটি এবং পানি থেকে
সৃষ্টি করা হয়েছে। আর তাই কুরআন সত্য।
যৌক্তির এবং
বৈজ্ঞানিক
উত্তরঃ
পানি এবং খনিজ উপাদার মানুষের বেচে থাকার জন্য প্রযোজনীয় । কিন্তু এগুলো দিয়ে মানব দেহ গঠিত হয়নি ।
মানব দেহ গঠনের মূল উপাদান কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন । এছাড়া নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস ব্যবহৃত হয়েছে । এদের কোনটিই মাটির মূল উপাদানে নেই । আর দুটো যৌগে একই রকম মৌল থাকলেই এটা বলা যায় না যে একটা যৌগ অন্যটা দিয়ে গঠিত হয়েছে । বরং এটা বলা যায় যৌগ দুটো একই মৌল দিয়ে গঠিত হয়ছে ।
মানুষের শরীরের মূল উপাদান এমানো এসিড বা ডিএরএ -এর গঠন প্রকৃতি মাটির মূল উপাদান থেকে সম্পুর্ন আলাদা ।
মাটির মূল উপাদানের সাথে কিছু জৈব যৌগ যেমন নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন প্রভৃতি যুক্ত হয়ে মাটির কম্পোজ তৈরী করে বা উর্ভর মাটি তৈরী করে কিন্তু এগুলো মাটির মূল উপাদান নয় ।
আর এই উপাদান মাটির সাথে মিশ্রিত থাকলেই এটা বলা যায় না যে মানুষ মাটি দিয়ে তৈরী বরং এটা বলা যায় উর্বর মাটি এবং মানূষ প্রায় (সম্পূর্ন নয়) একই উপাদান দিয়ে গঠিত । কিছু কিছু উপাদান মানুষের দেহ গঠনে ব্যবহৃত হয়েছে এবং সেগুলো মাটিতেও বিদ্যমান তার মানে এটা নয় যে মানুষ মাটি দিয়ে তৈরী । কারণ মাটির মূল উপাদানগুলো মানুষের দেহে উপস্থিত নেই । যদি তাই হয় তবে এটা বলতে দোষ কি যে, মানুষ মাটি দিযে নয় বরং উর্বর মাটি মানুষ দিয়ে গঠিত।
মাটির মূল উপাদানগুলো হলো (যেমন- (SiO2), ক্যালসাইট (CaCO3), ফেল্ডসপার (KAlSi3O8) এবং মিকা
(K(Mg,Fe)3AlSi3O10(OH)2) )। এছাড়াও মাটির মূল উপাদান গুলোর মধ্যে রয়েছে P2O5, K2O, CaO, MgO,
SiO2, Al2O3, Fe2O3, Na2O, TiO2, MnO2 প্রভৃতি।
মানুষের দেহ গঠিত হয় প্রধান দুই উপাদান নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম-এর সমন্নয়ে। সাইটোপ্লাজমে থাকে পানি এবং বিভিন্ন জৈবিক অংশ যেমন- মাইট্রোকনডিয়া, গলজি বস্তু, লাইসোসোম প্রভৃতি গঠিত হয়েছে প্রোটিন দিয়ে। প্রোটিন গঠিত হয় অ্যামাইনো এসিড দিয়ে। আবার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়েছে নিউক্লিক এসিডের সমন্বয়ে। (নিউক্লিইক এসিড গঠিত হয় একপ্রকার সুগার, ফসফেট এবং নাইট্রোজেন বেজ দ্বারা।) অর্থাৎ জীবদেহ গঠিত হয় প্রোটিন তথা অ্যামাইনো এসিড এবং নিউক্লিইক এসিডের সমন্বয়ে।
এদের মধ্যে পানি (H2O) সাইটোপ্লাজমে থাকলেও এই পানি দিয়ে মানুষের শরীর গঠিত হয়নি। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য পানি অবশ্যই প্রয়োজনীয় উপাদান হলেও পানি দিয়ে মানুষের দেহ তৈরী হয়নি। সাইটোপ্লাজমে পানি না থাকলে শরীরের কোষগুলো বেঁচে থাকে না একথা সত্য। তবে মূল দেহ গঠনে এর কোন ভূমিকা নেই।
অ্যামাইনো এসিড ((H2NCHRCOOH) ও নিউক্লিক এসিডের মূল উপাদান কখনই মাটিতে নেই। আর তাই মানুষ মাটি থেকে তৈরী হয়নি। মানুষের শরীরে মাটির মূল উপাদানগুলো উপস্থিত নেই।
তবে মাটির মধ্যে কিছু কিছু উপাদান বাইরে থেকে এসে যোগ হয় যেগুলো আসলে মাটির মূল উপাদান নয়। যেমন মাটির সাথে জীব দেহ মিশে গেলে এর উপাদানগুলো মাটিতে থেকে যায়। কিন্তু এসব তো মাটি নয়। আবার নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন মাটির মূল উপাদানে অনুপস্থিত। তবে এসব উপাদান মাটির সাথে মিশে জৈব মাটি বা দোআঁশ মাটি তৈরী করে। এই মাটিতেই গাছ বা ফসল উৎপাদন হয়। অন্য মাটিগুলোতে কোন ফসল বা গাছ উৎপন্ন হয় না। যেমন বেলে মাটি বা বালুর মধ্যে কখনই গাছ বা ফসল উৎপাদিত হয় না। কারণ এতে জৈব উপাদানগুলো উপস্থিত থাকে না।
অর্থাৎ মানুষ যে উপাদানগুলো দিয়ে তৈরী হয়েছে সেগুলোর কোনটিই মাটির মূল উপাদান নয়। এগুলো মাটির বাইরের উপাদান। আবার মানুষের শরীরের প্রোটিন এবং নিউক্লিক এসিড মাটির মূল উপাদানগুলোর মধ্যে নেই।
মানুষের মধ্যে যেসব উপাদান আছে তাঁর কিছু কিছু মাটিতেও বিদ্যমান রয়েছে। যেমন কার্বন, হাউড্রোজন, অক্সিজেন প্রভৃতি। কিন্তু এগুলোর মাটির মূল উপাদান নয়। তবে এগুলো যেমন মানুষের দেহের প্রধান উপাদান ঠিক তেমনি মাটির উপাদানের মধ্যে সামান্য কিছু পরিমান এই মৌলগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কিন্তু মাটির প্রধান যে উপাদানগুলো রয়েছে সেগুলোর কোনটিই মানুষের দেহে পাওয়া যায় না।
কিন্তু তার মানে এই নয় যে যেহেতু মানুষের শরীর গঠনের মূল উপাদানগুলো মাটিতে সামান্য পরিমাণ পাওয়া গেছে সুতরাং মানুষ মাটি দিয়েই তৈরী। বরং সঠিক ভাবে বললে মাটিতে যে সব উপাদান বাইরে থেকে যোগ হয়েছে সেগুলো বাইরে থেকে এবং মানুষ বা অন্যান্য জীব থেকে মাটিতে এসেছে। অর্থাৎ মানুষ মাটি দিয়ে গঠিত নয় বরং মাটির উপাদানের কিছু কিছু মানুষ দিয়ে তৈরী।
সুতরাং কুরআনের কথার কোনই ভিত্তি নেই। তাই কুরআন সত্য নয়।
আস্তিকদের অযৌক্তিক,
কুযৌক্তিক,
অপযৌক্তিক
এবং
অপ-বৈজ্ঞানিক
প্রশ্নঃ
কুরআনে বলা হয়েছে মানুষকে আল্লাহ কাঁদামাটি থেকে তৈরী করেছে। কিন্তু আপনি যেসব যৌগের নাম দিয়েছেন সেগুলি সব ভুত্বকের উপাদানের নাম, কাদামাটির উপাদানের নয়। আর তাই কুরআন সত্য। আপনিই বুঝতে ভূল করেছেন।
যৌক্তির এবং
বৈজ্ঞানিক
উত্তরঃ
কুরআনে কয়েক প্রকার মাটির কথা বলা হয়েছে যা দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে কুরআন দাবী করেছে। যেমন- কোন আয়াতে বলা হয়েছে এঁটেল মাটি দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আবার কোথাও বলা হয়েছে শুষ্ক মাটি (শুকনো মাটি) দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আবার কোথাও বলা হয়েছে পঁচা মাটি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। আবার এটাও বলা হয়েছে যে, মানুষকে পানি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। অর্থাৎ কুরআনের একেক আয়াতে একেক রকম (পরস্পর বিরোধী) কথা বলা হয়েছে। আমরা জানি যে এঁটেল মাটি বা পঁচা মাটি দিয়ে মানুষ তৈরী করা সম্ভব নয়। আবার শুষ্ক মাটি দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করা সম্ভব নাকি সম্ভব নয় সেটা নির্ভর করে সেই শুষ্ক মাটিটি কোন ধরণের মাটির তার উপর। তর্কের খাঁতিরে ধরে নিলাম যে মানুষকে জৈব শুষ্ক মাটি থেকেই তৈরী করা হয়েছে। তবে এই শুষ্ক মাটিতে পানি ঢেলে কাঁদা মাটি মানানো যায়। ফলে এই মাটি থেকে মানুষকে সৃষ্টি করার সম্ভাবনা ০.০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০১%। অর্থাৎ একে বারে প্রায় অসম্ভব। কারণ মানুষের শরীর গঠেনের উপাদানগুলোর মধ্যে কিছু পরিমাণ জৈব মাটিতে উপস্থিত থাকে কিন্তু মাটির মূল উপাদানগুলো মানুষের শরীরে উপস্থিত নেই বলে মানুষ মাটির তৈরী হবে না। কিন্তু যদি মাটির মূল উপাদানগুলো কোনটি মানুষের শরীরে উপস্থিত থাকতো তবে হয়তো এই কথাটিকে সত্য বলে কিছুটা (সামান্য %) ধরে নেওয়া যেত। কিন্তু কুরআনকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়ে মাটির মূল উপাদানগুলো মানুষের শরীরে উপস্থিত নেই।
আবার কুরআন যে মানুষকে এঁটেল মাটি বা পঁচা মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে দাবী করেছে সেটি ১০০% মিথ্যা এবং ভ্রান্তিযুক্ত। আর তাই কুরআন মিথ্যা।
এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক।
আপনি দাবী করেছেন যে মানুষকে কাঁদা মাটি থেকে তৈরী করা হয়েছে। আর কাঁদামাটি দিয়েই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং আপনার দাবী অনুযায়ী মাটির মূল উপাদানগুলো কাঁদামাটিতে অনুপস্থিত বলে মানুষকে কাঁদা মাটি থেকে সৃষ্টি করা সম্ভব।
কিন্তু একটু সাধারণ বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করলে আপনিও বুঝতে পারতেন যে যেকোন মাটিতে পানি দিলে সেটি কাঁদা মাটি হতে বাধ্য। কারণ কাঁদা মাটি হলো সেটাই যেটা পানি দিয়ে নরম করা হয়েছে। অর্থাৎ পানি মিশ্রিত মাটিকে কাঁদা মাটি বলে। সেজন্য আপনি মাটির মূল উপাদানগুলোতে পানি দিয়ে সেটাকে কাঁদা মাটি মানাতে পারবেন। কিন্তু সেই মাটি থেকে মানুষকে সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। সৃষ্টিকর্তার পক্ষেও নয়। কারণ কাঁদা মাটি আর মানুষের শরীরের মূল উপাদান সম্পূর্ণ ভিন্ন। (মানুষের শরীরে পানি থাকে যেটা কাঁদা মাটিতেও থাকে শুধু এই একটাই মিল।)
শুধু এটাই শেষ কথা নয়। কুরআন পরস্পর বিরোধীমূলক ভাবে বলেছে মানুষকে কাঁদামাটি, শুষ্ক মাটি, পঁচা মাটি অথবা এঁটের মাটি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে।
মাটি দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করার ধারণা কুরআন লেখক বাইবেল থেকে ধার করে কুরআনে লিখে দিয়েছে। ফলে বাইবেলের এই মিথ্যা এবং ভ্রান্তিকর কথাটিই কুরআন যে মিথ্যা তার প্রমাণ হিসেবে আধুনিক মানুষের কাছে উপস্থিত হয়েছে। ফলে কুরআনের মিথ্যা জারিজুরি পৃথিবীর সবার কাছে প্রকাশ হয়ে পড়েছে।
কুরআন মিথ্যা বলেই এটি বাইবেলের মিথ্যা ধারণাকে নকল করে কুরআনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এটি একজন সাধারণ মানুষই করেছে বলে এমন ভ্রান্তিকর তথ্য কুরআনে উল্লেখ আছে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- কুরআনে পানি থেকে মানুষকে তৈরী করা হয়েছে
যেটা বাস্তবতার সাথে মিলে যায় বলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়। কিন্তু মানুষের শরীরের মূল
গঠনে পানির কোন ভূমিকা নেই। তবে মানুষকে জীবিত থাকতে হলে পানিকে শরীরে ধারণ করতে হয়।
ফলে মুসলমানরা ভ্রুমগ্রন্থ হতে পারে যে কুরআন সত্য কথা বলেছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো,
মানুষকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে এই তথ্যটি মুহাম্মদ বাইবেল থেকে নিয়ে কুরআনে যোগ
করে দিয়েছে। বাইবেলে মানুষকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে এই ভ্রান্ত ধারণাটি লেখা আছে
যেটা মুহাম্মদ জানতো। আর তাই মুহাম্মদ এটা নিয়ে চিন্তা করেছে যে কিভাবে মানুষকে মাটি
দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। মাটি শুষ্ক বা শুকনা থাকলে তো এটি দিয়ে মানুষের শরীরের আকৃতি
দেওয়া সম্ভব নয়। তাই মুহাম্মদ মনে করেছে যে আল্লাহ শুষ্ক বা শুকনো মাটিকে প্রথমে পানি
দিয়ে নরম করেছে (অর্থাৎ কাঁদামাটি বানিয়েছে)। এবং তারপরে এই পানিযুক্ত কাঁদামাটিকে
মানুষের আকৃতির (পুতুলের মতো) করে গড়েছে। এরপরে বাইবেলের কথা মতো এতে আত্মা দিয়ে
একে জীবন্ত করা হয়েছে। আর এভাবেই মুহাম্মদ মানুষকে মাটি এবং পানি দিয়ে তৈরী করা হয়েছে
বলে অনুমান করেছে। যেহেতু মানুষের দেহে পানি বিদ্যমান ছিল (যেমন রক্ত) তাই মুহাম্মদ
মানুষকে মাটি এবং পানি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অনুমান করেছে। কিন্তু তার ধারণাটা
মিথ্যা ছিল যেটা সে বুঝতে পারেনি। এভাবেই কুরআনে পানি এবং মাটি দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি
করা হয়েছে বলে মুহাম্মদ উল্লেখ করেছে।
No comments:
Post a Comment