জাকির নায়েক একজন বিখ্যাত (অথবা কুখ্যাত) ইসলামী বক্তা।
তার মুখোরুচক কথার মাধ্যমে পৃথিবীর অনেক আস্তিকদেরকে (বিশেষ করে মুসলমান অন্ধবিশ্বাসী
আস্তিকদেরকে) মুখরিত করে রাখে। তার বাঁচনভঙ্গি সবাইকে আনন্দিত করে। মানুষ জাকির নায়েকের
বলা কথাগুলোকে সত্য বলে ধরে নেয়। বিশেষ করে মুসলমানদের মধ্যে জাকির নায়েকের ভক্তরা
জাকির নায়েকের বলা কথাগুলোকে চিরসত্য বলে ধরে নেয়।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যারা একটি জ্ঞানী এবং সত্য মিথ্যা
যাচাই বাছাই করার মতো ইচ্ছা রাখেন তারা একটু খুজ খবর নিয়েই বুঝতে পারেন যে জাকির নায়েক
তার বক্তব্যে প্রচুর মিথ্যাকথা বলে। এমনকি তার অযুক্তিকর কথাগুলোকে নানা রকম কুযুক্তি
এবং অপযুক্তির মাধ্যমে উপস্থাপন করে। ফলে বোঁকা আস্তিকগুলো খুব সহজেই জাকির নায়েকের
মিথ্যাবাদিতা এবং প্রতারণার দ্বারা প্রতারিত হয়। জাকির নায়েক যে শুধু ধর্ম সম্পর্কেই
মিথ্যা কথা বলে তাই নয়, বরং জাকির নায়েক বিজ্ঞান সম্পর্কেও চোখের পলকেই মিথ্যা কথা
বলে। দ্রুত কথা বলার কারণে জাকির নায়েকের এসব মিথ্যা কথা এবং প্রতারণামূলক বক্তব্য
স্বাধারণ মানুষ ধরতে পারে না। কিন্তু যারা জাকির নায়েকের বক্তব্যগুলো যাচাই করে দেখে
তারা সবাই নিশ্চিত হয়ে যায় যে জাকির নায়েক একজন নিকৃষ্ট মানের মিথ্যাবাদী এবং প্রতারণাকারী।
জাকির নায়েকের বক্তব্যগুলো পর্যালোচনা এবং যাচাই করলে এটা প্রমাণিত হয়ে যায় যে জাকির
নায়েক একজন প্রতিষ্ঠিত মিথ্যাবাদি, প্রতারক এবং ভন্ড।
জাকির নায়েকের মিথ্যাবাদীতা এবং প্রতারণাগুলো অনেক আগেই
মানুষ প্রমাণিত করেছে এবং আমিও আগের পর্বগুলোতে জাকির নায়েকের মিথ্যাবাদীতা এবং প্রতারণা
প্রমাণ করে দিয়েছি। এই পর্বটিতেও জাকির নায়েকের আরো একটি মিথ্যাবাদীতা এবং প্রতারণা
প্রমাণ করে দেবো।
জাকির নায়েকের 'কুরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞান- বিরোধ নাকি
সাদৃশ্য' স্বীর্ষক বক্তৃতায় (লেকচারে) পাহাড় পর্বত সম্পর্কে নিম্নুক্ত কথাগুলো বলেছে,
এখনকার দিনের ভূতত্ত্ববীদ, তারা আমাদের বলে, আমরা যে পৃথিবীতে
বাস করি বাইরের ভূত্বক এটা শক্ত ও কঠিন। আর ভেতরের অংশ খুব গরম আর তরল। আর সেখানে কোন
প্রানীর পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব না।
ভূতত্ত্ববীদরা বলেন পৃথিবীর উপরের স্তরটা বেশ পাতলা, বেশী
হলে ৮ থেকে ১০ মাইল; যেটা পৃথিবীর ব্যাসার্ধের এক পার্সেন্টেরও কম। পৃথিবীর ব্যাসার্ধ
তিন হাজার সাতশো পঞ্চাশ মাইল।
এখন, বাইরের স্তরটা বেশ পাতলা তাই এই স্তরটার নড়াচড়া করার
সম্ভাবনাটাও বেশী। ভূতত্ত্ববীদরা আমাদেরকে বলেন যে, এই স্তরটা ভাঁজ হয়ে যায়। সে জন্যই
তৈরী হয় বিভিন্ন রকম পাহাড় পর্বত। এই পাহাড়গুলো, এগুলোর কারণেই পৃথিবী খুব বেশী নড়াচড়া
করে না। এগুলো কীলকের মত কাজ করে, খুটির মতো।
পবিত্র কুরআনে আছে সূরা নাবার ৬ নাম্বার আয়াত ও ৭ নাম্বার
আয়াতে উল্লেখ করা আছে,
"আমি এই ভূমিকে করিয়াছি শজ্জা এবং পর্বতসমূহকে করিয়াছি
কিলক।"
এখানে আরবী শব্দ 'আওতাদ' অর্থ কীলক, অর্থ খুটি। এটা আমরা
সেদিন আবিষ্কার করেছি।
পবিত্র কুরআনে সূরা গাশিয়ার ১৯ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা
আছে, এছাড়াও পবিত্র কুরআনে সূরা নাযিয়াতের ৩২ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে,
"পর্বতমালাকে স্থাপন করা হইয়াছে সূদৃঢ়ভাবে।"
জিওগ্রাফির উপর একটি বই আছে 'দি আর্থ', বইটা খুব বিখ্যাত,
আর পৃথিবীর অনেক ইউনিভার্সিটিতে জিওগ্রাফির জন্য এই বইটা পড়ানো হয়ে থাকে অনেক দেশে। এই বইটার লেখকদের মধ্যে একজন হলেন ফ্রাং প্রেস;
আর তিনি এই বইটার ভেতরে পাহাড় পর্বতের উপর বেশ কিছু ছবি দিয়েছিলেন, সেগুলো ছিল নিচের
দিকে সুচাঁলো। তার মতে পাহাড় পর্বতের কাজ হলো পৃথিবীর উপরের স্তরটাকে স্বাভাবিক রাখা।
কুরআনেও একই কথা বলা আছে। একই তথ্য আছে সূরা আম্বিয়ার ৩১ নাম্বার আয়াতে, একথা বলা হয়েছে।
এছাড়াও পবিত্র কুরআনে সূরা লোকমান-এর ১০ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও সূরা
নাহালের ১৫ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, যে,
"পৃথিবীতে স্থাপন করিয়াছেন সূদৃঢ় পর্বতমালা, যাহাতে
পৃথিবী আন্দোলিত না হয়।"
পবিত্র কুরআনে পাহাড় পর্বতের কাজের কথা বলা হয়েছে ১৪০০
বছর আগে, যেটা আমরা আবিষ্কার করলাম সেদিন।
এটাই ছিল জাকির
নায়েকের পাহাড় পর্বত সম্পর্কে বলা কথা। এখন আমরা জাকির নায়েকের কথাগুলো বিশ্লেষণ করে
দেখবো যে জাকির নায়েক তার দাবীকে প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে কি কি মিথ্যা কথা বলেছে এবং
কোন কোন অযুক্তি, কুযুক্তি এবং অপযুক্তির আমদানী করে মানুষের প্রতারণা করেছে।
জাকির নায়েক দাবী করেছে পাহাড় পর্বতের জন্যই পৃথিবী খুব
বেশী নড়াচড়া করে না। পাহাড় পর্তবগুলো কীলক বা খুঁটির মতো কাজ করে।
এই ভিত্তিহীন দাবীটি করেই জাকির নায়েক কুরআনের একটি আয়াতের
উল্লেখ করেছে। আয়াতটি হলো,
সূরা নাবা-এর ৬ ও ৭ নং আয়াত,
"আমি কি পৃথিবীকে বিছানা বানিয়ে দেইনি? ও পাহাড়সমূহকে
পেরেক রুপে গেঁড়ে দেইনি?" (অনুবাদ- প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান)
এই আয়াতের অন্যান্য
অনুবাদে বলা হয়েছে, আল্লাহ পাহাড় পর্বতগুলোকে খুঁটি রুপে স্থাপন করেছে (অনুবাদ- ডঃ
জহুরুল হক), আল্লাহ পাহাড় সমূহকে (ভূমিকে স্থির রাখার জন্য) পাহাড়সমূকে (ভূমির গায়ে)
পেরেকের মতো গেঁড়ে রেখেছে (অনুবাদ- হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ), আল্লাহ পর্বতগুলোকে
কীলক করেছে – mountains as pegs (অনুবাদ- Ministry of religious Affairs of
Bangladesh)
এই আয়াতের ইংরেজী অনুবাদে ইউসুফ আলি পাহাড় পর্বতকে কীলক
বা pegs অর্থাৎ খুটি বলেছে। Mohammad Marmaduke Pickthal এই আয়াতের অনুবাদে বলেছেন
পাহাড় পর্বতগুলো bulwarks হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে এবং Saheeh International-এর অনুবাদে
বলা হয়েছে পাহাড়কে stakes হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে। এই দুটোর অর্থ হলো পাহাড় পর্বতগুলোকে
রক্ষাকারক বা সাপোর্ট হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীর রক্ষাকর্তা হিসেবে
পাহাড় পর্বতগুলো খুঁটির মতো করে স্থাপন করে পৃথিবীকে সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে যেন পৃথিবীর
কোন কিছু (কুরআনের পাহাড় সম্পর্কিত অন্যান্য আয়াত অনুযায়ী পৃথিবীর কাঁত হয়ে পড়ে যাওয়া
বা আন্দোলিত) না হয়।
কুরআনের এই আয়াতটি একটি মিথ্যা এবং ভ্রান্তিযুক্ত কথা বলেছে।
প্রথমত, পৃথিবী কোন শজ্জা নয়। শজ্জা বা বিছানা হলো সমতল ক্ষেত্র। অর্থাৎ কুরআনের
এই আয়াত অনুযায়ী পৃথিবী হলো সমতল। কিন্তু আমরা জানি পৃথিবী সমতল শজ্জা বা বিছানার
মতো নয়। পৃথিবী গোলাকার বা গোলক আকার। তাই পৃথিবীকে বিছানার মতো সমতল বলাটা একটি
প্রাচীণ ভ্রান্তিমূলক কথা। দ্বিতীয়ত, এই আয়াতে পাহাড়কে খুটি বা কীলক বলাটা কুরআন লেখকের
অজ্ঞতার পরিচয় বহন করছে। পাহাড় কারো খুটি নয় অথবা পাহাড় কোন কিছুকে ঠিকা দিয়ে রাখেনি
যে একে কীলক বলা যায়। পাহাড় সম্পর্কিত এই আয়াতটি দ্বারা কুরআনের লেখকের অজ্ঞতার পরিচয়
পাওয়া যাচ্ছে।
পাহাড় তৈরী হয় পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের
ফলে অথবা ভূমি ধ্বসের মতো প্রাকৃতিক ব্যাপারগুলোর জন্য। পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটগুলো
পৃথিবী থেকে উপরের দিকে উঠে যাওয়ার ফলে তৈরী হয়। অর্থাৎ পাহাড় পর্বতগুলো তৈরী হয় পৃথিবীর
ভিতর থেকে উপরের দিকে উঠে যাওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু খুটি বা কীলককে বাইরে থেকে এনে গেঁড়ে
দেওয়া হয়। তাই পাহাড়কে খুঁটি বা কীলক বলার মানেটাই হলো পাহাড় পর্বত সম্পর্কে অজ্ঞতার
পরিচয় দেওয়া। কারণ পাহাড় পর্বতগুলো পৃথিবীর অংশ থেকে তৈরী হয় পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে
বাইরের দিকে। কিন্তু খুঁটি বা কীলক স্থাপন করা হয় বাইরে থেকে ভিতরের দিকে। অর্থাৎ কুরআন
লেখক যে শুধু পাহাড়ের কাজ সম্পর্কে জানতো না সেটাই নয় উপরন্তু পাহাড় পর্বতগুলো কিভাবে
গঠিত হয় সেটাও জানতো না। পাহাড় কখনও কোন খুঁটি বা কীলক নয়। বরং পাহাড় হলো পৃথিবী
থেকে বের হওয়া উর্ধ্বিত অংশ। অর্থাৎ পাহাড় সম্পর্কিত এই আয়াতটি সম্পর্ন ভ্রান্ত কথা
বলেছে।
কিন্তু মিথ্যাবাদী প্রতারক জাকির নায়েক এই ভ্রান্ত এবং
মিথ্যা আয়াতটি দিয়ে কুরআনের সত্যতা দাবী করেছে। এজন্য সে কিছু মিথ্যা কথা বলেছে। জাকির
নায়েক বলেছে পাহাড় পর্বতের জন্য পৃথিবী নড়াচড়া কম করে। এই কথাটার মানেটা কি? পৃথিবী
কি কোন দোলনা যে এটি নড়াচড়া করবে? পৃথিবী কি স্থির থাকে নাকি যে, এটি পাহাড় পর্বতের
জন্যই স্থির থাকে বলা হলো?
জাকির নায়েকের এই দাবীর কোন ভিত্তিই নেই। সে তার কথাকে
বৈধ করতে কিছু অর্থহীন কথার আমদানী করেছে মাত্র। আমরা জানি পৃথিবী প্রতিনিয়ত নিজ অক্ষের
চারপাশে পরিভ্রমনের সাথে সাথে এটি সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিন করে চলেছে। অর্থাৎ পৃথিবী
প্রতিনিয়ত নড়াচড়ার মধ্যেই আছে। আবার যদি ভূমিকম্পের কথা বলা হয় তবে কুরআনের কথাটি আরো
মিথ্যা হয়ে যায়। কারণ আমরা জানি যে ভূমিকম্প পৃথিবীর নড়াচড়ার জন্য হয় না। ভূমিকম্প
হয় পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটগুলোর জন্য। অর্থাৎ ভূমিকম্পের কারণ হলো পৃথিবীর সামান্য
অংশ নড়াচড়া করা। সম্পূর্ণ পৃথিবী নড়াচড়া করার জন্য নয়। পৃথিবী প্রতিনিয়তই নিজ অক্ষ
এবং সূর্যের চারপাশে নড়াচড়া বা পরিক্রমন করছে। তাই মিথ্যাবাদী প্রতারক জাকির নায়েকের
কথার কোন ভিত্তি তো নেইই বরং কোন অর্থও নেই। কারণ পৃথিবীর নড়াচড়ার ক্ষেত্রে পাহাড়
পর্বতের কোন ভূমিকাই নেই। তবে যদি ভূমিকম্পের কথা বলা হয় তবে পাহাড় পর্বতের ভূমিকম্পের
উপরে সামান্য প্রভাত থাকলেও থাকতে পারে যদিও সেটা নেগেটিভ অর্থে হবে। কারণ আমরা জানি
যে পাহাড় পর্বতগুলো ভূমিকম্প কমায় না বরং স্থান এবং সময় ভেদে ভূমিকম্প বাড়ায়। যেমন
পাহাড় পর্বতগুলো তৈরী হবার সময় প্রচন্ড ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ পাহাড় পর্বতই
ভূমিকম্পের কারণ। আবার পৃথিবীতে এতো পাহাড় পর্বত থাকার পরও প্রতিনিয়তই ভুমিকম্প হচ্ছে।
তথ্য প্রমাণ বলে পাহাড় পর্বতহীন স্থানে যে পরিমান ভূমিকম্প হয় পাহাড় পর্বতযুক্ত স্থানে
ঠিক সে পরিমান ভূমিকম্পই হয়। বরং কোন কোন স্থানে পাহাড় পর্বত বেশী হওয়ার জন্যই ভূমিকম্প
বেশী হয়। যেমন জাপানে প্রচুর সংখ্যক পাহাড় পর্বত থাকার পরেও সেখানে বেশী বেশী ভূমিকম্প
হয়। অর্থাৎ ভূমিকম্প ঘটার ক্ষেত্রে পাহাড় পর্বতগুলো কোন ভূমিকাই রাখতে পারে না। যদি
তাই হতো তবে নেপাল এবং ভারতের হিমালয়ের কাছের অঞ্চলগুলোতে ভূমিকম্পই হতো না। কিন্তু
কুরআনকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে এসব জায়গায় প্রায়ই ভূমিকম্প হয়।
তাহলে দেখা যাচ্ছে পাহাড় পর্বত তো ভূমিকম্প কমায়ই না বরং
ভূমিকম্প বাড়ায়। আর তাই জাকির নায়েকের এই দাবীটি ভিত্তিহীন, অমূলক এবং মিথ্যা।
জাকির নায়েক বলেছে যে উক্ত আয়াতটিতে ‘আওতাদ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে যার অর্থ
কীলক বা খুঁটি। আর এই তথ্যটা তারা মানে জাকির নায়েকরা কিছু দিন আগে আবিষ্কার করেছে।
এই আয়াতটি প্রায় দেড় হাজার বছর আগে থেকে আরব বিশ্বে এবং
পরে মুসলিম বিশ্বে পরিচিত ছিল। তাই পাহাড়কে কীলক বা খুঁটি এই তথ্যটা জাকির নায়েক কেন
কিছু দিন আগে আবিষ্কার করলো সেটি বোধগম্য হচ্ছে না আমার। বরং দেড় হাজার বছর ধরে প্রচলিত
কুরআনের এই কথাটা যে মিথ্যা এবং ভ্রান্তিযুক্ত সেটাই বরং মানুষ এই কিছুদিন আগে আবিষ্কার
করেছে। কারণ এর আগে মানুষ পাহাড় পর্বতের গঠন ও উৎপত্তি সম্পর্কে জানতো না। তাই মানুষ
কুরআনের মতো মিথ্যা এবং ভ্রান্তিযুক্ত গ্রন্থের মিথ্যা কথাগুলো অন্ধের মতো বিশ্বাস
করেছে। কিন্তু আধুনিক কালে এসে মানুষ আবিষ্কার করেছে যে কুরআনে যেভাবে বলা হয়েছে যে
পাহাড় পর্বতগুলো খুঁটি হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে পৃথিবীকে ঠিকা বা সাপোর্ট দেবার জন্য
এই তথ্যটি ঢাহা মিথ্যা কথা। পাহাড় কোন খুঁটি নয় তাই এটি দিয়ে পৃথিবীকে ঠিকা দেওয়া
যায় না যেমনটি কুরআন দাবী করেছে। আর তাই মিথ্যাবাদী জাকির নায়েকের এই দাবীটা সম্পূর্নই
মিথ্যা।
এরপর জাকির নায়েক সূরা গাশিয়ার ১৯ নং আয়াত এবং সূরা নাযিয়াতের
৩২ নং আয়াতের কথা উল্লেখ করেছে। আয়াত দুটি হলো,
সূরা গাশিয়াহ্-এর
১৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
"এবং পর্বতমালার দিকে যে, কিভাবে ওটাকে বসানো হয়েছে?"
সূরা নাযিয়াত-এর ৩২ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
"আর পাহাড়সমূহকে তিনি দৃঢ়ভাবে গেঁড়ে দিয়েছেন;"
(অনুবাদ- প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান)
উপরের আয়াত দুটো থেকে দেখা যাচ্ছে যে, কুরআনে পাহাড় পর্বতগুলোকে
বসানো হয়েছে এবং গেঁড়ে দেওয়া হয়েছে এই কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী
পাহাড় পর্বতগুলোকে বাইরে থেকে এনে পৃথিবীর উপর স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি
যে পাহাড় পর্বতগুলো তৈরি হয় পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটগুলো ভিতর থেকে বাইরে বের হয়ে
এসে। অর্থাৎ পাহাড় পর্বত পৃথিবীর ভিতর থেকে উদগত হয়; তাই পৃথিবীর উপর পাহাড় পর্বতগুলো
বসানো হয় না এবং এগুলোকে গেঁড়ে দেওয়াও হয় না। কিন্তু কুরআন বলছে পাহাড় পর্বতগুলো
(বাইরে থেকে এনে) পৃথিবীর উপর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং পেঁরেকের মতো গেঁড়ে দেওয়া হয়েছে।
স্পষ্টতই কুরআন মিথ্যা এবং ভ্রান্তিযুক্ত কথা বলেছে। বাস্তবে পাহাড় পর্বতগুলোকে অন্য
কোথাও থেকে এনে পৃথিবীর উপর বসিয়ে দেওয়া হয় না এবং এগুলোকে পেঁরেকের মতো পৃথিবীতে
গেঁড়েও দেওয়া হয় না। বরং পাহাড় পর্বতগুলো পৃথিবীর ভিতর থেকে বাইরের দিকে বেরিয়ে আসে।
অর্থাৎ কুরআন যা বলেছে বাস্তবে তার বিপরীতটি ঘটে।
স্পষ্টতই কুরআন মিথ্যা।
জাকির নায়েকের নিজের মতো করে অনুবাদও বলছে যে পাহাড় পর্বতগুলোকে
স্থাপন করা হয়েছে। আর কোন কিছুকে পৃথিবীর উপর স্থাপন করার অর্থই হচ্ছে এটিকে বাইরে
থেকে এনে পৃথিবীর উপর স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে বাস্তবে ঘটে তার উল্টোটি। অর্থাৎ
পাহাড় পর্বতগুলো পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে বাইরের দিকে বেড়িয়ে আসে। পাহাড় পর্বতগুলোকে
স্থাপন করা হয় না বরং পাহাড় পর্বতগুলো বাইরে বেরিয়ে আসে। অর্থাৎ কুরআন পাহাড় পর্বত
সম্পর্কে ভূল এবং মিথ্যা কথা বলেছে।
কিন্তু মিথ্যাবাদী প্রতারক ভন্ড জাকির নায়েক এই মিথ্যা
এবং ভূল কথাটিকেই ভূল ভাবে উপস্থাপন করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় দাবী করেছে। এমনকি বিজ্ঞানের
নামেও মিথ্যা কথা বলেছে মিথ্যা কুরআনকে সত্য হিসেবে দেখাতে।
এছাড়াও জাকির নায়েক কুরআনের সূরা আম্বিয়া-এর ৩১ নং আয়াত,
সূরা লোকমান-এর ১০ নং আয়াত এবং সূরা নাহাল-এর ১৫ নং আয়াতের কথা উল্লেখ করেছে। জাকির
নায়েক দাবী করেছে এই আয়াতগুলোতে বলা আছে,
"পৃথিবীতে পর্বতমালাগুলোকে সূদৃঢ়ভাবে স্থাপন করা
হয়েছে যেন পৃথিবী আন্দোলিত না হয়।" অর্থাৎ জাকির নায়েক দাবী করেছে যে পাহাড় পর্বতগুলো
দৃঢ় ভাবে স্থাপন করা হয়েছে যাতে পৃথিবীতে ভূমিকম্প না হয়। পাহাড় পর্বতের এই রকম কাজের
কথা জাকির নায়েকরা কিছু দিন আগে আবিষ্কার করেছে।
আমি আগেই বলেছি কুরআনে এই কথা প্রায় দেড় হাজার বছর আগেই
লেখা হয়েছে। কিন্তু জাকির নায়েক এই কথাটা কিছু দিন আগে কেন আবিষ্কার করলো সেটা বুঝতে
পারছি না আমি। জাকির নায়েকের আগে কি মানুষ কুরআনের এই আয়াতগুলো পড়েনি?
আসুন জাকির নায়েকের উল্লেখিত আয়াতগুলোর প্রকৃত অনুবাদ
দেখে নেই।
সূরা আম্বিয়ার ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
"এবং আমি পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বত যাতে
পৃথিবী তাদেরকে নিয়ে এদিক ওদিক ঢলে না যায়..." (অনুবাদ- প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর
রহমান)
এই আয়াতে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে পাহাড় পর্বতগুলোকে স্থাপন
করার কারণ হলো যাতে পৃথিবী মানুষকে নিয়ে এদিক ওদিক ঢলে না যায়। কুরআনের এই আয়াত অনুযায়ী
যদি পৃথিবীতে পাহাড় পর্বত না স্থাপন করা হতো তবে পৃথিবী এদিক ওদিক ঢলে যেত অর্থাৎ
পৃথিবী যে কোন এক দিকে কাঁত হয়ে যেত। স্পষ্টতই কুরআন লেখক পৃথিবীকে সমতল মনে করে এই
কথাটি বলেছে। কুরআন লেখক ভেবেছে যে পৃথিবী সমতল এবং তার ফলে এটি যেকোন এক দিকে ঢলে
যেতে পারে বা কাঁত হয়ে যেতে পারে। আর তাই পৃথিবীর উপর পাহাড় পর্বত স্থাপন করে পৃথিবীর
ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে। যাতে এটি কোন এক দিকে কাঁত হয়ে পড়ে না যায়।
বুঝাই যাচ্ছে কুরআন লেখকের পৃথিবী এবং পাহাড় পর্বত সম্পর্কে
কোন বাস্তব ধারণা ছিল না। তাই সে পৃথিবীকে সমতল ভেবে এটি যাতে কোন দিকে ঢলে বা কাঁত
হয়ে না যায় তাই এতে পাহাড় পর্বত স্থাপন করে এর ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে, এমনটিই ধারণা
করতো। এই ভ্রান্ত ধারণাটাই কুরআনে লিখে দিয়েছে। স্পষ্টতই কুরআন প্রাচীণ মানুষের লেখা
ভ্রান্তিমূলক ধারণার বই।
এই আয়াতটির অন্যান্য অনুবাদগুলো হলো,
"আর পৃথিবীতে আমরা পাহাড় পর্বত স্থাপন করেছি পাছে
তাদের সঙ্গে এটি আন্দোলিত হয়;" (অনুবাদ- ডঃ জহুরুল হক)
"আমি যমীনের ওপর সুদৃঢ় পাহাড়সমূহ রেখে দিয়েছি যেন
তা ওদের নিয়ে (এদিক সেদিক) নড়াচড়া করতে না পারে,..." (অনুবাদ- হাফেজ মুনির উদ্দীন
আহমদ)
"এবং আমি পৃথিবীতে সৃষ্টি করিয়াছি সুদৃঢ় পর্বত, যাহাতে
পৃথিবী উহাদেরকে লইয়া এদিক-ওদিক ঢলিয়া না যায়,...."
“And
We have set on the earth mountains standing firm, lest it should shake with
them, ...” (অনুবাদ-
Ministry of Religious Affairs of Bangladesh)
"And We have set on the earth mountains
standing firm, lest it should shake with them,..." (অনুবাদ- Abdullah Yusuf
Ali)
"And We have placed in the earth firm hills
lest it quake with them,..." (অনুবাদ- Mohammad Marmaduke Pickthal)
উপরের সবগুলো অনুবাদই বলছে যে, পাহাড় পর্বতগুলোকে পৃথিবীর
উপর স্থাপন করা হয়েছে যেন পৃথিবী নড়াচড়া না করে বা কোন দিকে ঢলে না পড়ে অথবা ভূমিকম্প
না ঘটে। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখতে পাই যে পাহাড় পর্বতগুলো পৃথিবীর উপর স্থাপন করা
হয়নি বরং পাহাড় পর্বতগুলো পৃথিবীর ভিতর থেকে বেরিয়ে এসেছে অর্থাৎ পাহাড় পর্বতগুলো
পৃথিবীরই অংশ, এদেরকে পৃথিবীর উপর (বাইরে থেকে এনে) স্থাপন করা হয়নি।
আবার এই আয়াতটিতে বলা হয়েছে যে পাহাড় পর্বত স্থাপন করা
হয়েছে যাতে পৃথিবী কোন এক দিকে কাঁত হয়ে পড়ে না যায় বা পৃথিবী না নড়ে উঠে অথবা ভূমিকম্প
না হয়। কিন্তু আমরা জানি যে পৃথিবীতে প্রচুর সংখ্যক পাহাড় পর্বত থাকার পরেও পৃথিবীতে
বহাল তবীয়তে ভূমিকম্প হয় বা কেঁপে উঠে। কিন্তু কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী পাহাড় পর্বত স্থাপন
করে ভূমিকম্প রোধ করে দেওয়া হয়েছে। দেখুন লেখা আছে, পৃথিবীতে পাহাড় পর্বত স্থাপন করা
হয়েছে যাতে ভূমিকম্প না হয়। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়তই দেখি যে পাহাড় পর্বত থাকার পরেও
খুব ভূমিকম্প হয়। অর্থাৎ কুরআনের দাবী সত্য নয় বরং মিথ্যা।
কিন্তু যদি এই আয়াতের অর্থ ধরে নেই যে, পৃথিবীতে পাহাড়
পর্বত স্থাপন করা হয়েছে যাতে পৃথিবী কাঁত হয়ে পড়ে না যায় সেজন্য, তবে কিন্তু এই আয়াতটির
ভাষ্য সত্য হবে। কারণ পৃথিবী আসলেও কোন দিকে কাঁত হয়ে পড়ে যায় না। কিন্তু তবে এই আয়াত
অনুযায়ী পৃথিবী সমতল বুঝাবে যা প্রকৃতপক্ষে আরেকটি ভূল।
অর্থাৎ আয়াতটি দুই দিক থেকেই ভূল এবং ভ্রান্তিপূর্ণ। আর
তাই কোন দিক থেকেই এই আয়াতটির মিথ্যা, ভূল এবং ভ্রান্তিকর ধারণার হাত থেকে মুসলমানরা
কুরআনকে বাঁচাতে পারবে না। যদি এই আয়াতের অর্থ ভূমিকম্পও ধরা হয় তবুও আয়াতের ভাষ্য
মিথ্যা হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে পাহাড় পর্বত স্থাপন করার ফলে ভূমিকম্প বন্ধ হয়ে যাবার কথা।
কারণ যদি ভূমিকম্প দূর করার উদ্দেশ্যেই পাহাড় পর্বত স্থাপন করা হয় তবে পৃথিবীতে এতো
এতো ভূমিকম্প কেন? আবার যদি এই আয়াতে বলা হয়ে থাকে যে, পৃথিবীর কোন এক দিকে কাঁত
হয়ে পড়ে যাবার হাত থেকে বাঁচাতেই পাহাড় পর্বতগুলো তৈরি করা হয়েছে, তবুও আয়াতটি মিথ্যা
প্রতিপন্ন হয়। কারণ পৃথিবী সমতল নয় যে এটি কোন এক দিকে কাঁত হয়ে যেতে পারে!
তাই এই আয়াতটি একটি ভূল এবং মিথ্যা প্রাচীণ ভ্রান্ত ধারণা
বহন করে। ফলে কুরআন মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়।
কিন্তু মিথ্যাবাদী ভন্ড প্রতারক জাকির নায়েক এই ভূল ও মিথ্যা
আয়াতটি দিয়েই কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর অপচেষ্টা করেছে। এই আয়াতের ভ্রান্তিটিকে তার
কথার মার প্যাঁচে বিজ্ঞানের সাথে মিল দেখাতে চেয়েছে। ফলে জাকির নায়েক যে একজন মিথ্যাবাদী
ভন্ড প্রতারক সেটি প্রতিফলিত হয়েছে। জাকির নায়েক এই মিথ্যা আয়াতটি বলার পরেই দাবী করেছে
এটি নাকি সে এবং তার অনুসারীরা আবিষ্কার করেছে এই সেদিন, যেখানে কুরআনে এই ভ্রান্ত
কথাটি বলা হয়েছে ১৪০০ বছর আগে। কুরআনে ১৪০০ বছর আগেই এই ভূল কথাটি লেখা থাকার পরেও
কেন জাকির নায়েক এই কথাটা কিছু দিন আগে আবিষ্কার করলো সেটি চিন্তার বিষয় বটে!
দেখা যাচ্ছে জাকির নায়েক যে সব আয়াত উপস্থাপন করেছে সেসবের
আসল অনুবাদ অনুযায়ী কুরআন একটি মিথ্যাবাদী এবং প্রাচীণ অজ্ঞ মানুষের ধ্যান ধারণার বই।
কিন্তু ভন্ড প্রতারক জাকির নায়েক অনেকগুলো মিথ্যা কথা বলে, কুরআনকে নিজের মতো করে
ভূলভাবে অনুবাদ করে এবং বিজ্ঞানকে ভূল ভাবে
উপস্থাপন করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ প্রমাণ করার অপচেষ্টা করেছে। যে আয়াতগুলো জাকির
নায়েক কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে উপস্থাপন করেছিল
সেই আয়াতগুলো দিয়েই দেখলাম যে কুরআন পাহাড় পর্বত সম্পর্কে কেমন ভূল বা ভ্রান্ত এবং
মিথ্যা কথা বলেছে। অর্থাৎ যেসব আয়াত দিয়ে মিথ্যাবাদী জাকির নায়েক কুরআনকে বিজ্ঞানময়
বানাতে চেয়েছিল সেই আয়াতগুলো দিয়েই কুরআনকে মিথ্যা প্রমাণ করা হলো।
সূরা লোকমান-এর ১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
"তিনি আকাশমন্ডলী নির্মাণ করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত, তোমরা
এটা দেখছো; তিনিই পৃথিবীতে করেছেন পর্বতমালা যাতে এটা তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে...."
(অনুবাদ- প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান)
এই আয়াতে আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভ ছাড়া বানানো হয়েছে বলে দাবী
করা হয়েছে। কিন্তু কেন আকাশকে স্তম্ভ ছাড়া বানানো হয়েছে বলে দাবী করা হলো? আকাশ কি
শক্ত কঠিন পদার্থের তৈরী কোন ছাদ যে এটাতে স্তম্ভ লাগতো কিন্তু এটাকে স্তম্ভ ছাড়াই
বানানো হয়েছে বলা হচ্ছে?
আমরা জানি আকাশ হলো বায়ু বা গ্যাস দিয়ে তৈরী হওয়া একটি
বায়বীয় মাধ্যম। আর এই বায়ুমন্ডলকে স্থাপন করার জন্য কোন খুটি রাখার প্রশ্নেই আসে না।
কিন্তু কুরআন লেখক এমন ভাবে বর্ণনা করেছে যেন আকাশ কোন কঠিন পদার্থের তৈরি ছাদ তাই
এটির স্তম্ভ লাগতো। কিন্তু আল্লাহ আকাশকে স্তম্ভ ছাড়াই বানিয়েছে দেখে আল্লাহর ক্ষমতা
দেখানো হচ্ছে। অর্থাৎ কুরআন আকাশকে শক্ত কঠিন পদার্থের বলে দাবী করছে। কুরআনের অনেক
আয়াতের মাধ্যমেই আকাশকে শক্ত কঠিন পদার্থের ছাদ করে দাবী করা হয়েছে। এটি একটি প্রাচীণ
অজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষের ভ্রান্ত ধারণা। এই ভ্রান্ত ধারণাই কুরআনে ফলাও করে প্রচার করা
হচ্ছে।
আবার দাবী করছে যে, আল্লাহ পৃথিবীতে পাহাড় পর্বত স্থাপন
করেছে যাতে পৃথিবী মানুষকে নিয়ে ঢলে পড়ে না যায়। অর্থাৎ কুরআন লেখকের দাবী অনুযায়ী
পৃথিবী আসলে সমতল। তাই যাতে পৃথিবী কোন এক দিকে ঢলে বা কাঁত হয়ে পড়ে না যায় তাই এর
উপর (বাইরে থেকে এনে) পাহাড় স্থাপন করে পৃথিবীকে ভারসাম্যপূর্ণ করা হয়েছে। যেন পাহাড়
পর্বত না স্থাপন করা হলে পৃথিবী এক দিকে কাঁত হয়ে ঢলে পড়তো কিন্তু পাহাড় পর্বত স্থাপন
করা হয়েছে বলে এটি আর ঢলে বা কাঁত হয়ে পড়ে যাচ্ছে না।
স্পষ্টতই আয়াতটি একটি মিথ্যা আয়াত যাতে প্রাচীণ মানুষের
ভ্রান্ত ধারণার কথা বর্ণিত হয়েছে।
এই আয়াতটির অন্যান্য অনুবাদগুলো হলো,
"তিনিই মহাকাশমন্ডলীকে সৃষ্টি করেছেন কোনো খুঁটি
ছাড়াই,- তোমরা তা দেখতেই পাচ্ছ; আর তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা পাছে এটি
তোমাদের নিয়ে ঢলে পড়ে;..." (অনুবাদ- ডঃ জহুরুল হক)
এই অনুবাদে 'পাছে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে ঢলে পড়ে' দ্বারা
বুঝানো হয়েছে পাহাড় পর্বত না স্থাপন করা হলে পৃথিবী সত্য সত্যই ঢলে পড়ে যেতো। পাহাড়
পর্বত স্থাপন করার ফলে পৃথিবী কোন দিকে ঢলে পড়ছে না।
"তিনি আসমানসমূহকে কোনো স্তম্ভ ছাড়াই পয়দা করেছেন,
তোমরা তো তা দেখতেই পাচ্ছো, তিনি যমীনে পাহাড়সমূহ স্থাপন করে রেখেছেন যাতে করে তা
তোমাদের নিয়ে কখনো (একদিকে) ঢলে না পড়ে, ...." (অনুবাদ- হাফেজ মুনির উদ্দীন
আহমদ)
"তিনি আকাশমন্ডলী নির্মাণ করিয়াছেন স্তম্ভ ব্যতীত-
তোমরা ইহা দেখিতেছ; তিনিই পৃথিবীতে স্থাপন করিয়াছেন পর্বতমালা যাহাতে ইহা তোমাদেরকে
লইয়া ঢলিয়া না পড়ে, ..."
"He cteated the heavens without any pillars
that you can see; He set on the earth mountains standing firm, lest it should
shake with you; ... " (অনুবাদ- Ministry of Religious Affairs of Bangladesh)
“He
created the heavens without any pillars that ye can see; He set on the earth
mountains standing firm, lest it should shake with you, …”(অনুবাদ-Abdullah
Yusuf Ali)
উপরের সবগুলো অনুবাদই বলছে যে যদি পাহাড় পর্বত স্থাপন
না করা হতো তবে পৃথিবী কোন এক দিকে কাঁত হয়ে ঢলে পড়তো অথবা ভূমিকম্প হতো। কিন্তু
পাহাড় পর্বত স্থাপন করার ফলে আর পৃথিবী কাঁত হয়ে ঢলে পড়তে পারছে না অথবা ভূমিকম্প হচ্ছে
না।
কিন্তু আমরা প্রতিনিয়তই দেখি যে পৃথিবীতে প্রচুর সংখ্যক
ভূমিকম্প হচ্ছে। আবার পৃথিবী সমতল নয় বলেই এটির পক্ষে কাঁত হয়ে ঢলে পড়া সম্ভব নয়; পাহাড়
থাকুক বা না থাকুক। অর্থাৎ এই আয়াতটি দ্বারা একটি প্রাচীণ মানুষের ভ্রান্ত ধারণা বর্ণিত
হয়েছে। তাই কুরআন কখনই সত্য হতে পারে না। কিন্তু মিথ্যাবাদী প্রতারক জাকির নায়েক এই
মিথ্যা আয়াতটি দিয়েই কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে চাচ্ছে। যাতে প্রমাণিত হয়েছে যে জাকির
নায়েক একজন মিথ্যাবাদী, ভন্ড এবং প্রতারক।
সূরা নাহল-এর ১৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
"আর তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে
পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয়,..." (অনুবাদ- প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর
রহমান)
এই আয়াতেও বলা হয়েছে, যদি পাহাড় পর্বত না থাকতো তবে পৃথিবী
আন্দোলিত হতো। যেহেতু পৃথিবীতে পাহাড় পর্বতকে স্থাপন করা হয়েছে তাই পৃথিবী আর আন্দোলিত
হয় না।
প্রথম কথা, পৃথিবী কখনই আন্দোলিত হয় না। মাঝে মাঝে ভূমিকম্প
হয় বটে তবে সেটা পৃথিবীর আন্দোলিত হওয়ার জন্য নয়। বরং পৃথিবীর কিছু অংশের (টেকটোনিক
প্লেটগুলোর) আন্দোলিত হওয়ার জন্য। আবার যেহেতু পৃথিবীতে পাহাড় পর্বত স্থাপনের পরেও
প্রচুর সংখ্যক ভূমিকম্পের অস্তিত্ব মানুষ প্রতিনিয়তই পাচ্ছে। তাই আয়াতটি দ্বারা প্রমানিত
হচ্ছে যে কুরআন একটি মিথ্যা এবং ভ্রান্তিকর ধারণার গ্রন্থ। অর্থাৎ কুরআন মিথ্যা।
কিন্তু মিথ্যাবাদী প্রতারক জাকির নায়েক এই মিথ্যা আয়াতটি
দিয়েই কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানোর অপচেষ্টা করেছে। প্রকৃতপক্ষে এতে কুরআনের
অসাড়ত্বেরই প্রমাণ হয়েছে।
এতক্ষণে প্রমাণ করতে পেরেছি যে জাকির নায়েক যে আয়াতগুলো
দিয়ে কুরআনকে বিজ্ঞানময় প্রমাণ করতে চেয়েছে অনেক মিথ্যা কথা এবং বিজ্ঞানকে ভূল ভাবে
উপস্থাপন করার মাধ্যমে। কিন্তু সেই আয়াতগুলোই কুরআনকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে।
এবার জাকির নায়েকের বক্তব্যটি বিশ্লেষণ করে দেখবো জাকির
নায়েক তার পাহাড় পর্বত সম্পর্কিত বক্তব্যটিতে কি কি মিথ্যা কথা বলেছে এবং কি কি প্রতারণামূলক
কথা বলেছে।
প্রথমেই জাকির নায়েক ভূতত্ত্ববীদদের
কথা উল্লেখ করেছে যারা বলে থাকে যে, পৃথিবীর বাইরের ভূত্বক অর্থাৎ
পৃথিবীর উপরের স্তরটি শক্ত এবং কঠিন। ভেতরের কয়েকটি স্তর উত্তপ্ত এবং তরল। সেখানে প্রাণীর
পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। জাকির নায়েক এই তথ্যটি বিজ্ঞানের কল্যাণে জানতে পেরেছে।
তবে জাকির নায়েক যেভাবে বুঝাতে চেয়েছে যে পৃথিবীর অভ্যন্তরের গরম তরল লাভার কারণে সেখানে
প্রাণীর বেঁচে থাকা সম্ভব নয় সেটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি সত্য হলো পৃথিবীর অভ্যন্তরে
বসবাসের উপযুক্ত নয় কারণ সেখানে অক্সিজেন নেই।
এরপর জাকির বলেছে পৃথিবীর
উপরের স্তরটি পাতলা। কথাটি মিথ্যা নয় এবং এই তথ্যটিও জাকির নায়েক বিজ্ঞানের কল্যাণেই
জানতে পেরেছে। কোন ধর্মগ্রন্থের কল্যাণে নয়। পৃথিবীর উপরের স্তরের প্লেটগুলোর মধ্যে
সংঘর্ষের ফলে এগুলো ভাঁজ হয়ে যাবার কারণে যে পাহাড় পর্বত তৈরী হয় এই তথ্যটিও বিজ্ঞানের
কারণেই আমরা সবাই জানতে পেরেছি। কোন ধর্মগ্রন্থ থেকে এই তথ্যটি কেউ পায়নি।
কিন্তু জাকির নায়েক এরপরেই
দাবী করেছে যে পাহাড় পর্বতের জন্যই পৃথিবী খুব বেশী নড়াচড়া করে না। পাহাড়গুলো নাকি
কীলক বা খুঁটির মতো কাজ করে।
জাকির নায়েকের এই কথাটি পুরোপুরিই
মিথ্যা। যদিও জাকির নায়েক তার কথাকে সত্য বলে প্রমাণ করার জন্য ভূতত্ত্ববীদদের নাম
ব্যবহার করেছে কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো কোন ভূতাত্ত্বীকই এই ভ্রান্ত কথাটি বলেনি।
এটি জাকির নায়েকের মনগড়া কথা। কিন্তু জাকির নায়েক তার দাবীর সাথে ভূতত্ত্ববীদদের কথাকে
মিলাতে প্রথমে কিছু ভূতত্ত্ববীদদের কথা বলেছে এবং তার মধ্যেখানে নিজের মিথ্যা দাবীটিকে
ঢুকিয়ে দিয়েছে। যেমন ভূতত্ত্ববীদরা পৃথিবীর উপরের স্তর এবং এদের ফলেই যে পাহাড় পর্বতগুলো
তৈরী হয় এটা বলে থাকে কিন্তু কোন ভূতত্ত্ববীদই এটা বলে না যে পাহাড় পর্বতগুলোর জন্যই
পৃথিবী নড়াচড়া করে না বা ভূমিকম্প হয় না। আসলে জাকির নায়েক প্রথমে ভূতত্ত্ববীদদের কথা
বলে তার মধ্যে নিজের মনগড়া কথাকে ঢুকিয়ে দিয়েছে যাতে কুরআনের ভূল ও মিথ্যা কথাকে সত্য
প্রমাণ করতে পারে। এজন্যই এই প্রতারণাটুকু জাকির মিথ্যাবাদী নায়েক করেছে।
প্রথমত, পৃথিবী নড়াচড়া করে না কথাটা অমুলক। কারণ আমরা জানি যে পৃথিবী
প্রতিনিয়ত নিজের অক্ষে ঘূর্ণনরত থাকে এবং এটি সূর্যের চারপাশেও ঘূরতে থাকে। অর্থাৎ
পৃথিবী নড়াচড়া করে আর এই নড়াচড়াতে পাহাড় পর্বতের কোন ভূমিকা নেই। দ্বিতীয়ত, যদি ভূমিকম্পের কথাই বলা হয় তবে বলতে হয় ভূমিকম্প পৃথিবী নড়াচড়ার
জন্য হয় না। ভূমিকম্প হয় পৃথিবীর কিছু অংশ যেমন টেকটোনিক প্লেটগুলোর কিছু সংখ্যক
প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে এবং এগুলোর নড়াচড়ার ফলে ভূমিকম্প হয়। কিন্তু তখন পুরো
পৃথিবী নড়ে উঠে না। তাই ভূমিকম্প আর সমগ্র পৃথিবীর নড়াচড়া এক কথা নয়। তৃতীয়ত, পাহাড় পর্বতগুলো কোন খুঁটি বা কীলক নয় যে এটি পৃথিবীকে ঠিকা
দিয়ে রাখবে বা পৃথিবীকে নড়াচড়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য কীলকের মতো টানা দিয়ে রাখবে।
বরং পাহাড় পর্বতগুলোও পৃথিবীর উপরের স্তরেরই অংশ এবং পাহাড় পর্বতগুলো টেকটোনিক প্লেটগুলোরই
অংশ। আর তাই টেকটোনিক প্লেট হয়ে পাহাড় পর্বতগুলো কোন টেকটোনিক প্লেটকে ঠিকা দিয়ে
বা টানা দিয়ে রাখে না। বিষয়টা এমন যে পৃথিবী বাতাসে উড়ে যাবে সেই ভয়ে একে ঠিকা দিয়ে রাখতে হবে
বা টানা দিয়ে রাখতে হবে। পৃথিবীর উপরের স্তরটার একটি উর্ধ্বিত অংশই হলো পাহাড় পর্বত।
তাই পাহাড় পর্বতগুলো কাউকেই ঠিকা দিয়ে রাখে না বা টানা দিয়ে রাখে না খুঁটি বা কীলকের
মতো। আর সবচেয়ে বড় কথা পাহাড় পর্বতগুলো পৃথিবীর অংশ হওয়ায় ভূমিকম্প হবার সময় যে বলটা
পৃথিবীর উপরের স্তরের উপর ক্রিয়া করে ঠিক একই পরিমান বল পাহাড় পর্বতের উপরেও ক্রিয়া
করে। ফলে ভূপৃষ্ঠ যে পরিমাণে নড়াচড়া করে উঠে ঠিক একই পরিমাণে পাহাড় পর্বতগুলোও নড়াচড়া
করে, যেহেতু পাহাড়পর্বতগুলো পৃথিবীরই অংশ এবং পাহাড় পবর্তগুলো টেকটোনিক প্লেটের সাথে লেগে থাকে। যেমন চলন্ত ট্রেনের গতি এবং যাত্রীর গতি একই থাকে
কারণ তাদের মধ্যে একই গতিশক্তি ক্রিয়া করে; ঠিক একই ভাবে যে গতিশক্তিটি পৃথিবীর উপরের
ভূপৃষ্ঠে ক্রিয়া করে ঠিক একই শক্তি পাহাড়গুলোর উপরের ক্রিয়া করে। ফলে ভূপৃষ্ঠের নড়াচড়া
এবং পাহাড় পর্বতগুলোর নড়াচড়া একই রকম হয়। বরং পাহাড় পর্বত ভারী হওয়ায় নড়াচড়ার ফলে
এর আশে পাশের এলাকায় বেশী পরিমাণে ক্ষতি হয়। অর্থাৎ পাহাড় পর্বতগুলো ভূমিকম্পতো কমাতে
পারবেই না উপরন্তু পাহাড় পর্বতের কারণে বরং ভূমিকম্পের ক্ষতি বেড়ে যায়।
কিন্তু জাকির নায়েক ভূতাত্ত্বীকদের
সত্য কথার সাথে নিজের মিথ্যা কথাকে প্রতারণামূলকভাবে জুড়ে দিয়ে নিজের মিথ্যা দাবীটিকে
সত্য বলে দেখাতে চেয়েছে। আর জাকির নায়েক প্রতারক বলেই এমন হীন কাজটি করেছে। প্রকৃতপক্ষে
কোন ভূতত্ত্ববীদই এটা বলে না যে পাহাড় পর্বতগুলো ভূমিকম্পগুলো কমায়। বরং সব ভূতত্ববীদরাই
একমত যে পাহাড় পর্বতগুলোর কারণেই ভূমিকম্প বেড়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে ভূমিকম্পের
কারণই এই পাহাড় পর্বতগুলো। কারণ যখন পাহাড় পর্বতগুলো তৈরী হয় তখন প্রবল মাত্রার ভূমিকম্প
হয়। আমরা আগেই জেনেছি যে টেকটোনিক প্লেটগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে পাহাড় পর্বত উৎপন্ন
হয় এবং সেসময় প্রবল ভূমিকম্প হয়। অর্থাৎ পাহাড় পর্বতগুলোতো ভূমিকম্প কমায়ই না উপরন্তু
ভূমিকম্পের কারণই হলো এই পাহাড় পর্বতগুলো।
কিন্তু জাকির নায়েক দাবী
করেছে যে ভূতত্ত্ববীদরা নাকি বলে যে পাহাড় পর্বতগুলোর কারণে পৃথিবী খুব বেশী নড়াচড়া
করে না। পাহাড় পর্বতগুলো নাকি কীলক বা খুটির মতো কাজ করে।
ছোট বেলায় যখন গ্রামে থাকতাম
তখন আমাদের টিনের ঘরটির খুঁটি ছিল বাঁশের। ফলে ঝড় বৃষ্টি আসলেই ঘরটি নড়েচড়ে উঠতো। আর
তার থেকে রক্ষার জন্য ঘরের চারপাশে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠিকা দিয়ে রাখা হয়েছে অনেকটা
কীলকের মতো করে। আমার মনে আছে এমনটি করা হতো ঘর যেন ঝড় বাতাসে পড়ে না যায় বা নড়াচড়া না করে। জাকির নায়েক পাহাড়কে এরকম খুঁটি বা কীলক বলে
দাবী করেছে। সেটা চরম মিথ্যা ও ভ্রান্তিকর কথা। আর এই ভ্রান্তিপূর্ণ কুরআনের কথাটির
সাথে বিজ্ঞানের মিল দেখাতে যেয়ে জাকির নায়েক নানা মিথ্যা কথা বলে মানুষের সাথে প্রতারণা
করেছে। মিথ্যাবাদী জাকির নায়েকের মতে পাহাড় পর্বতগুলো খুঁটি বা কীলক অর্থাৎ পাহাড়
পর্বতগুলো দিয়ে পৃথিবীকে ঠিকা বা টানা দিয়ে রাখা হয়েছে যাতে পৃথিবী নড়েচড়ে না উঠে।
কিন্তু বিশাল পৃথিবীর নড়চড়া বন্ধ করা যে পাহাড় পর্বতের পক্ষে সম্ভব নয় সেটা এই মিথ্যাবাদী
প্রতারককে কে বুঝাবে?
এরকম কথা কোন ভূতত্ত্ববীদতো
বলেইনি বরং পাহাড় পর্বতগুলো যে খুঁটি বা কীলক এমন কথা শুধু মাত্র মূর্খ মানুষের পক্ষেই
বলা সম্ভব। কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে এমন অবৈজ্ঞানিক কথা বলা সম্ভব নয়।
এর পরে জাকির নায়েক সূরা
নাবার ৬ ও ৭ নাম্বার আয়াতের কথা বলেছে। জাকির নায়েক বলেছে এই আয়াতটিতে পৃথিবীকে শজ্জা
বা বিছানা বলা হয়েছে এবং পর্বতগুলোকে কীলক বা খুঁটি বলা হয়েছে এমনটিই ভূতত্ত্ববীদরা
বলে থাকে। কিন্তু আমরা জানি যে পাহাড় পর্বতগুলো খুঁটি বা কীলক নয় তাই এমন অবৈজ্ঞানিক
কথা কোন ভূতত্ত্ববীদই বলে না। শুধু জাকির নায়েকের মতো মিথ্যাবাদী প্রতারকরাই এই কথাটি
বলবে। এমন মিথ্যা কথা কোন সত্যবাদী ভূতত্ত্ববীদই বলে না। বরং এই আয়াতটিতে পৃথিবীকে
বিছানার মতো সমতল বলা এবং পাহাড় পর্বতগুলোকে খুঁটি বলাটা কুরআন যে মিথ্যা সেটা প্রমাণ করে।
জাকির নায়েক বলেছে যে এই
আয়াতে আরবী শব্দ আওতাদ যার অর্থ কীলক বা খুঁটি। এই তথ্যটি জাকির নায়েকরা কিছুদিন আগে
আবিষ্কার করেছে। কথাটি হাস্যকর মনে হয় আমার কাছে। কুরআনে এই কথাগুলো বলা হয়েছে হাজার
বছর আগে। কিন্তু জাকির নায়েকরা এই তথ্যটি কিছুদিন আগে কেন আবিষ্কার করলো? এর আগে কি কুরআনে এই আয়াতটি কেউ পড়েনি?
যদি জাকির নায়েক বুঝিয়ে থাকে
যে বিজ্ঞানীরা পাহাড় পর্বত যে কীলক বা খুঁটি সেটি কিছুদিন আগে আবিষ্কার করেছে তবে বলতেই
হয়, ভন্ড জাকির নিপাক যা তারাতারি। কারণ
কোন বিজ্ঞানীই এমন অবৈজ্ঞানিক এবং অবাস্তব কথা শুনেনি, দেখেনি, জানেনি আর আবিষ্কারতো অনেক
পরের কথা। কারণ পাহাড় পর্বতগুলো খুঁটি বা কীলক নয়; আর কেউই পাহাড় পর্বতগুলো দিয়ে পৃথিবীকে ঠিকা বা টানা দিয়ে রাখেনি। তাই জাকির নায়েকের
দাবীটি চরম মিথ্যা এবং নিজের মনগড়া কথা যা জাকির নায়েক ভন্ডামী ও প্রতারণা করার জন্যই
ব্যবহার করেছে।
এরপর জাকির নায়েক সূরা গাশিয়ার
১৯ নং আয়াত এবং সূরা নাযিয়াত-এর ৩২ নং আয়াত উল্লেখ করে বলেছে যে “পাহাড় পর্বতকে সুদৃঢ়ভাবে
স্থাপন করা হয়েছে।“ এই আয়াতে বলা হয়েছে যে পাহাড় পর্বতগুলোকে গেঁড়ে দেওয়া হয়েছে বা
স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি যে পাহাড় পর্বতকে গেঁড়ে দেওয়া হয়নি বা অন্য কোথাও
থেকে পাহাড় পর্বতগুলোকে এনে পৃথিবীর উপর স্থাপন করাও হয়নি। বরং পাহাড় পর্বতগুলো পৃথিবীর
অভ্যন্তরভাগ থেকে বেরিয়ে এসেছে বা উদগত হয়েছে। সুতরাং স্পষ্টতই এই আয়াতটি কুরআনের ভূল
বা মিথ্যাবাদিতা প্রমাণ করে। আর জাকির নায়েক কিনা এটা দিয়ে ভূলে ভরা কুরআনকে বিজ্ঞানময়
বানাতে এসেছে আর মুখরোচক মিথ্যার ফুলঝুড়ি ফুটাচ্ছে!
এরপর জাকির নায়েক বলেছে যে 'দি আর্থ' নামের বইটি পৃথিবীর
নানা দেশের অনেক ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো হয়। এই বইটির লেখকদের মধ্যে একজন হলো ফ্রাঙ্ক
প্রেস যিনি চিত্রের সাহায্যে দেখিয়েছে যে পাহাড় পর্বতগুলো নিচের দিকে সূঁচালো। জাকির
নায়েক দাবী করেছে ফ্রাঙ্ক প্রেস নাকি বলেছে যে পাহাড় পর্বতগুলোর কাজ হলো পৃথিবীকে
স্বাভাবিক রাখা। জাকির নায়েক এরপরই দাবী করেছে কুরআনেও একই কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ জাকির
নায়েকের দাবী অনুযায়ী কুরআনেও বলা আছে যে পাহাড় পর্বতগুলোর কাজ পৃথিবীকে স্বাভাবিক
রাখা।
প্রথমত, কিছু কিছু পাহাড় পর্বতের নিচের দিকে সামান্য সূঁচালু
থাকলেও সব পাহাড় পর্বতের নিচের দিকে সূঁচালু থাকে না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এই
সামান্য সূঁচালু পাহাড় পর্বতগুলোকে খুঁটি, পেঁরেক বা কীলকের মতো উপর থেকে গেঁড়ে বা
গেঁথে দেওয়া হয়েছে। কুরআনে যেভাবে বলা হয়েছে যে পাহাড় পর্বতগুলো হলো খুঁটি বা কীলক
তাই এদেরকে গেঁড়ে বা গেঁথে দেওয়া হয়েছে কথাটা সম্পূর্ণই কুরআনের ভূল উক্তি। বাস্তবে
পাহাড় পর্বতগুলো খুঁটি বা কীলক নয় এবং এদেরকে পৃথিবীর উপর থেকে গেঁড়ে বা গেঁথে দেওয়া
হয়নি যেভাবে কুরআনে বলা হয়েছে। বরং পাহাড় পর্বতগুলো পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগ থেকে উপরের
দিকে উর্ধ্বিত হয়েছে। অর্থাৎ গেঁড়ে বা গেঁথে (উপর থেকে নিচের দিকে) দেওয়ার বিপরীতটি
হলো পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে (নিচের দিক থেকে) উপরের দিকে উর্ধ্বিত হওয়া। অর্থাৎ কুরআন
বাস্তবতার বিপরীত কথা বলেছে বা মিথ্যা কথা বলেছে। আর তাই কোন কোন পাহাড় পর্বতের নিচের
দিকে সামান্য সূঁচালো হবার মানেই কুরআনের কথা সত্য হয়ে যাওয়া নয়। বরং পাহাড় পর্বতের
নিচের দিকের সামান্য সুঁচালো হবার কারণ হলো পাহাড় পর্বতগুলো উপরের দিকে (চাপের কারণে)
উর্ধ্বিত হবার সাথে সাথে নিচের দিকেও (চাপের কারণে) সামান্য ধেঁবে যায়। কিন্তু তাই
বলে কুরআনে যেভাবে পাহাড় পর্বতকে গেঁথে বা গেঁড়ে দেবার কথা বলা হয়েছে সেটি সত্য নয়।
বরং বাস্তবতা তার বিপরীত।
দ্বিতীয়ত, জাকির নায়েক বলেছে যে ফ্রাঙ্ক প্রেস বলেছে, পাহাড়
পর্বতগুলোর কাজ হলো পৃথিবীকে স্বাভাবিক রাখা এই কথাটি ডাহা মিথ্যা। এখানেও জাকির
নায়েক ফ্রাঙ্ক প্রেসের বলা কথাটির সাথে সাথে নিজের দাবীটিকে ঢুকিয়ে দিয়ে দেখানোর অপচেষ্টা
করেছে যে কুরআন বিজ্ঞানময়। কিন্তু বাস্তবে জাকির নায়েকের বলা হাজারটা মিথ্যা কথার মতো
এটিও একটি প্রতারণামূলক মিথ্যা কথা। আসলে ফ্রাঙ্ক প্রেস এমনটি ওই বইটিতে লেখেনি। কিন্তু
জাকির নায়েক তার অসততার মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছে যে ফ্রাঙ্ক প্রেসই বুঝি এই কথাটি বলেছে।
কিন্তু আসলে তিনি এই কথাটি বলেনি। ইন্টারনেটে অনেক মানুষই জাকির নায়েকের এই মিথ্যা
কথাটির প্রতিবাদ করে বলেছে যে তারা ওই বইটির কোথাও পায়নি যেখানে ফ্রাঙ্ক প্রেস বলেছে
যে পাহাড় পর্বতের কাজ হলো পৃথিবীকে স্বাভাবিক রাখা। প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীকে স্বাভাবিক
রাখার ক্ষেত্রে পাহাড় পর্বতের কোন ভূমিকা নেই। আমাদের (জাকির প্রতারক নায়েকের কথা
শুনে) ভূলে গেলে চলবে না যে পাহাড় পর্বতগুলো বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। পাহাড় পর্বতগুলো
পৃথিবীরই নিজস্ব অংশ বা অঙ্গ। এটি যেমন বাইরে থেকে এনে পৃথিবীর উপর বসিয়ে দেওয়া হয়নি
(যেমনটি কুরআন দাবী করেছে) ঠিক একই ভাবে এটি পৃথিবীর উপর কোন ভূমিকাই রাখতে পারে না।
কারণ পৃথিবী হলো বিশাল একটি গোলক যা প্রতিনিয়ত নড়াচড়ার মধ্যে থেকে নিজ অক্ষে এবং
সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিনরত রয়েছে। পাহাড় পর্বতগুলো না থাকলেও পৃথিবী সব সময়ই প্রদক্ষিনরত
থাকতো। এই প্রদক্ষিনশীলতা পাহাড় পর্বতের জন্য হয় না বরং পৃথিবীর ভরের জন্য হয় এবং
মহাকর্ষ বলের জন্য হয়। আবার পৃথিবীর কোন অস্বাভাবিকতা যেমন ঝড়, ভূমিকম্প, প্রভৃতিতেও
পাহাড় পর্বতের কোন ভূমিকা নেই। সব চেয়ে বড় কথা হলো কুরআনে যেভাবে বলা হয়েছে যে পাহাড়
পর্বতগুলো পৃথিবীর আন্দোলিত হওয়া বন্ধ করে দেয় সেটিও ঠিক নয়। কারণ একেতো পৃথিবী
বা সমগ্র পৃথিবী কখনই আন্দোলিত হয় না বরং পৃথিবীর কিছু অংশ আন্দোলিত হয় (যেমন টেকটোনিক
প্লেট বা পৃথিবীর কোন নির্দিষ্ট এলাকা আন্দোলিত হয়), অন্যকথায় ভূমিকম্প পৃথিবীকে
আন্দোলিত করে না বরং পৃথিবীর কিছু অংশকে আন্দোলিত করে। পৃথিবীর আন্দোলিত হওয়া এবং
এর কিছু অংশের আন্দোলিত হওয়ার মধ্যে আকাশ পাতালের পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ কুরআনে যেভাবে
বলা হয়েছে যে পাহাড় পর্বত পৃথিবীর আন্দোলিত হওয়া থামায় সেটি মিথ্যা, কুরআনে যেভাবে
বলা হয়েছে পাহাড় পর্বতগুলো পৃথিবীকে কাঁত হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে সেটিও মিথ্যা।
আর পৃথিবীর আন্দোলিত হওয়া এবং পৃথিবীকে স্বাভাবিক রাখা এই কথা দুটো ভিন্ন ধর্মী কথা।
পৃথিবীর আন্দোলিত হওয়াও একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হতো যদি সমগ্র পৃথিবী সত্য সত্যই
আন্দোলিত হতো। তাই পৃথিবীর আন্দোলিত হওয়া আর ভূমিকম্প হওয়া এক ব্যাপার নয়। প্রকৃতপক্ষে
আমরা দেখতে পাই যে কুরআনে যেভাবে বলা আছে যে, পৃথিবীর আন্দোলিত হওয়া বন্ধ করার জন্য
পাহাড় পর্বত স্থাপন করা হয়েছে যাতে পৃথিবী আর আন্দোলিত না হয়, সেই কথাটি মিথ্যা হয়ে
যায় যখন আমরা দেখি যে পৃথিবীতে পাহাড় পর্বত থাকা সত্তেও বহাল তবীয়তে ভূমিকম্প হচ্ছে।
একেতো পৃথিবী আন্দোলিত হয় না অপর দিকে যদি এখানে ভূমিকম্পকেই বুঝানো হয়ে থাকে তবুও
একথা সত্য নয় যে পাহাড় পর্বত স্থাপনের ফলে ভূমিকম্প থেমে গেছে বা কম হচ্ছে। কুরআনে
বরং বলা আছে পাহাড় পর্বতগুলো স্থাপন করে ভূমিকম্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এজন্যই পাহাড়
পর্বত স্থাপন করা হয়েছে যেন ভূমিকম্প না হয়।
তাহলে প্রশ্ন আসে যে কথাটা ফ্রাঙ্ক প্রেস বলেই নি সেটা
কেন জাকির নায়েক বললো যে ফ্রাঙ্ক প্রেস বলেছে যে পাহাড় পর্বতগুলোর কাজ পৃথিবীকে স্বাভাবিক
রাখা?
উত্তরটি খুব সহজ। জাকির নায়েক হাজারটা মিথ্যা কথা বলার
মতো করে এই মিথ্যা কথাটা বলেছে যাতে তার মিথ্যা কথাটা সবার কাছে সত্য বলে উপস্থাপন
করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় দেখাতে পারে। এজন্যই প্রতারক জাকির নায়েক এই প্রতারণামূলক মিথ্যা
কথাটা বলেছে। বস্তুত যারা বইটি পড়েছে তারা দাবী করেছে যে এই রকম কোন কথা ফ্রাঙ্ক প্রেস
বলেনি। যেহেতু জাকির নায়েক একজন প্রমাণিত মিথ্যাবাদী এবং প্রতারক তাই একথা নিশ্চিত
হয়েই বলা যায় যে ফ্রাঙ্ক প্রেস-এর মতো জ্ঞানী লোক এই ভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা কথাটি
বলতে পারে না। সুতরাং এটাই প্রমাণিত হয় যে জাকির নায়েকই তার মত প্রতিষ্ঠা করার হীন
উদ্দেশ্যেই ফ্রাঙ্ক প্রেসের কথাকে মিথ্যা ভাবে উপস্থাপন করেছে যাতে সে কুরআনকে বিজ্ঞানময়
গ্রন্থ প্রমাণ করতে পারে। এজন্য এই প্রতারণাটুকু জাকির মিথ্যাবাদী নায়েক করেছে।
এরপর জাকির নায়েক দাবী করেছে যে কুরআনে বলা হয়েছে যে, পাহাড়
পর্বতগুলোর কাজ হলো পৃথিবীকে স্বাভাবিক রাখা। সে এ কথাটি বলে দাবী করেছে যে কুরআনের
সূরা আম্বিয়ার ৩১ নং আয়াত, সূরা লোকমান-এর ১০ নং আয়াত এবং সূরা নাহল-এর ১৫ নং আয়াতে
বলা আছে যে পৃথিবীতে পাহাড় পর্বত স্থাপন করা হয়েছে পৃথিবীকে স্বাভাবিক রাখা। কিন্তু
উক্ত আয়াতগুলোর কোনটিতেই জাকির নায়েকের বলা এই কথাটি উল্লেখ করা নেই। উপরিউক্ত আয়াতগুলোতে
বলা হয়েছে যে, পৃথিবীতে পাহাড় পর্বত স্থাপন করা হয়েছে বা গেঁড়ে দেওয়া হয়েছে যাতে পৃথিবী
কাঁত হয়ে বা ঢলে না যায় অথবা আন্দোলিত না হয়। অর্থাৎ পাহাড় পর্বত স্থাপন করে বা গেঁড়ে
দিয়ে পৃথিবীর কাঁত হয়ে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বা আন্দোলিত হওয়া বা ভূমিকম্প হওয়ার হাত
থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করা হয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীতে পাহাড় পর্বত স্থাপন করার পরে আর আন্দোলন
বা ভূমিকম্প হয় না। (কিন্তু আমরা বাস্তব জীবনে দেখি কথাটা পুরোপুরি মিথ্যা।) অথচ জাকির
নায়েক দাবী করেছে যে এই আয়াতগুলোতে পৃথিবীর স্বাভাবিক থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু
প্রতারক মিথ্যাবাদী জাকির নায়েককে কে বুঝাবে যে আন্দোলিত না হওয়া আর স্বাভাবিক রাখা
এক কথা নয়। যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই যে ফ্রাঙ্ক প্রেস বলেছে যে পাহাড় পর্বতের কাজ
পৃথিবীকে স্বাভাবিক রাখা তাই বলেতো এর মানে এটা দাড়ালো না যে সে আন্দোলন না হওয়া
বা ভূমিকম্পকেই বুঝিয়েছে। তাছাড়া ভূমিকম্প থামানোর মাধ্যমেই কি একমাত্র পৃথিবীকে স্বাভাবিক
রাখা যায়? ঝড়, বজ্রপাত, উল্কাপিন্ডের আঘাত, বন্যা, সুনামী প্রভৃতি থেকে কি পাহাড় পর্বতগুলো পৃথিবীকে স্বাভাবিক রাখতে পারে নাকি রাখা সম্ভব?
এমন কুযুক্তি উপস্থাপন করে এবং তিলের সাথে তালকে মিলিয়ে
জগাখিঁচুড়ী পাঁকিয়ে অদ্ভূত উপায়ে প্রতারণা করেছে এই মিথ্যাবাদী ভন্ড জাকির নায়েক।
আবার নির্লজ্জের মতো দাবী করে যে এটি নাকি জাকির নায়েকের
মতো ভন্ড মিথ্যাবাদীরা এই কিছু দিন আগে আবিষ্কার করেছে! এভাবেই ভন্ড, প্রতারক, মিথ্যাবাদী
ধর্ম ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার মিথ্যা কথা বলে মানুষের সাথে প্রতারণা করে টাকা ইনকাম
করে।
দেখা যাচ্ছে জাকির নায়েকতো কুরআনকে বিজ্ঞানময় প্রমাণ করতে
পারেইনি বরং নানা রকম মিথ্যা কথা বলে, কুযুক্তি উপস্থাপন করে, বিজ্ঞানকে ভূল ভাবে উপস্থাপন
করে মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে। এর মাধ্যমে জাকির নায়েক একজন মিথ্যাবাদী, ভন্ড, প্রতারক
এটিই প্রমাণিত হয়েছে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ কেন জাকির নায়েকের প্রতারণা প্রকাশ?
জাকির নায়েকের মতো মিথ্যাবাদী, ভন্ড, প্রতারকগুলো নানা
রকম মুখোরুচক কথা বলে, বিজ্ঞান এবং ধর্মগ্রন্থের বিকৃতি করে মানুষের কাছে সুন্দর করে
উপস্থাপন করে এবং মানুষের কাছে টাকা ছিনিয়ে নেয়। এভাবে প্রতারণা করে স্বাধারণ মানুষের
কষ্টের টাকা ছিনিয়ে নিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে জাকির নায়েকের মতো ধুরন্ধর লোকেরা।
তাছাড়া জাকির নায়েকের এসব প্রতারণামূলক অপযুক্তি এবং কুযুক্তিগুলো অশিক্ষিত বা আধা
শিক্ষিত যুবকদেরকে প্রবল ভাবে প্রভাবিত করে। ফলে প্রতিটি যুবকই জাকির নায়েকের মিথ্যাবাদীতা
এবং প্রতারণা ধারা আক্রান্ত। তাই এইসব ধান্দাবাজ, মিথ্যাবাদী প্রতারকদের মুখোশ উন্মুক্ত
করা প্রতিটি সচেতন মানুষের নৈতিক দায়িত্ব।
Thank You😊
ReplyDeleteবলদ
ReplyDeletePure ignorant you
ReplyDelete