মুসলমানদের দাবী কুরআন হলো এমন একটি গ্রন্থ যার কথা বা বাণীগুলো স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক তৈরী কৃত। কিন্তু মুসলমানরা বাদে পৃথিবীর সব মানুষই কুরআন পড়ে এটা নিশ্চিত হয়ে যায় যে এটি কোন ক্রমেই কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী বা কথা হতে পারে না। কিন্তু তবুও মুসলমানরা নিজেরাই কুরআনকে সৃষ্টিকর্তার বাণী, সৃষ্টিকর্তার বাণী বলে দাবী করতে থাকে। তারা কুরআনের আধো আধো বুলি, কবিতার মতো অস্পষ্ট করে লেখা কথাগুলোকে ফুঁলিয়ে ফাঁপিয়ে নিজেদের মতো করে অর্থ করে, বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে নতুন ভাবে অর্থ করে দাবী করে যে কুরআন বিজ্ঞানময় গ্রন্থ। কিন্তু পৃথিবীর সব মানুষই (যারা কুরআন সম্পর্কে অন্ধবিশ্বাসী নয়) কুরআন পড়ে স্পষ্ট করেই বুঝতে পারে এটি কোন প্রাচীণ মানুষের লেখা একটি স্বাধারণ মানের বই।
তাতে কিন্তু মুসলমানদের দাবী করা থেমে থাকে না। তারা কুরআনের অর্থকে পরিবর্তন করে এবং এগুলোর মুখরোচক ব্যাখ্যা দাড় করিয়ে, সর্বপরী বিজ্ঞানকে ভূল ভাবে উপস্থাপন করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বলে দাবী করে। যা পুরোটাই মিথ্যা এবং সেটা সব মানুষই বুঝতে পারে মুসলমান কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধবিশ্বাসীরা ব্যতীত।
পৃথিবীর অনেক মানুষ কুরআনকে মিথ্যা প্রমাণ করে দেখিয়েছে যে কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী নয়; বরং কুরআন হলো প্রাচীণ আরবের এক স্বাধারণ মানুষের লেখা গ্রন্থ। আর তার নাম হলো মুহাম্মদ (মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ)।
আমিও এর আগের পর্বগুলোতে কুরআনকে মিথ্যা এবং এটি মানুষের তৈরী একটি স্বাধারণ গ্রন্থ তা প্রমাণ করতে সার্থক হয়েছি। অনেকগুলো প্রমাণ হাজির করে আমার পক্ষে দেখানো সম্ভব হয়েছে যে কুরআন আল্লাহ নামের কোন আরবীয় সৃষ্টিকর্তার বাণী নয় বরং কুরআন মুহাম্মদ নামের এক আরবীয় প্রাচীণ ধ্যানধারণার স্বাধারণ মানুষের লেখা বই। এই পর্বটিতেও এমন একটি প্রমান হাজির করবো। যাতে মানুষ কুসংস্কারকে চিনতে পারে এবং কুসংস্কারের উপর অন্ধবিশ্বাস বাদ দিয়ে মুক্ত এবং বিজ্ঞানমনস্ক হতে পারে।
কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তার
বাণী নয় বরং কুরআন হলো মুহাম্মদ নামের একজন প্রাচীণ আরবীয় মানুষের লেখা গ্রন্থ। এর
নানাবিধ ভূল, ভ্রান্তিকর কথা, বাইবেলকে নকল করতে যেয়ে বাইবেলের ভূল
এবং ভ্রান্তিকর বাণীগুলোকে কুরআনে অন্তর্ভুক্তিকরণ, অবৈজ্ঞানিক এবং অবাস্তব কথা, প্রাচীণ রুপকথা এবং
উপকথাগুলো অন্তর্ভূক্তিকরণ, ইতিহাস এবং ভৌগোলিক ভূল, আকাশ এবং পৃথিবী সম্পর্কে
প্রাচীণ মানুষের ভ্রান্তিকর কথা এবং অজ্ঞতার উপস্থিতি, পরস্পর বিরোধিমুলক কথা, প্রাচীণ আরব্য সাহিত্যমুলক
গ্রন্থনা (যেমন কবিতা এবং গদ্যকাব্যের মতো করে কুরআনের বর্ণনা), নারী এবং বিধর্মীদের প্রতি
বিদ্বেষমুলক কথাবার্তা এবং আরো অনেক অনেক কারণের জন্য কুরআনকে একজন আরবীয় সাধারণ
মানুষের লেখা গ্রন্থ বলে রায় দিয়েছে সারা পৃথিবীর মানুষ এবং আমার মতো মুসলিম পরিবারে
জন্ম নিয়ে পরে নাস্তিক হয়ে যাওয়া মানুষগুলো।
এতো এতো ভূল এবং ভ্রান্তিযুক্ত
বাণী, প্রাচীণ আরবের এক সাধারণ মানুষের ভাবমুর্তি ফুটে উঠা
কোন গ্রন্থ কোন ভাবেই কোন সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক রচিত হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে
সম্পূর্ণ কুরআন পরে কোন মানুষ বিশ্বজগত এবং ন্যায় নীতির এমনই এক ধারণা পায় যেন দেড় হাজার
বছর আগে কোন এক মানুষ আরবের বুকে দাড়িয়ে এসব ধ্যান ধারণা নিয়ে বিশ্বজগত দেখেছে। যেমন
আরবের মরুভূমিতে দাড়িয়ে একজন মানুষের যেমন মনে হয় যে আকাশ একটি ছাদ, তাই সে কুরআনে আকাশকে ছাদ
হিসেবে বর্ণনা করেছে। সেসময় আরবের মানুষ ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের
ধর্মগ্রন্থের নানা পৌরানিক কাহিনী এবং বিশ্বসৃষ্টির মিথ্যা ও ভ্রান্তিকর বর্ণনাগুলো জানতো। কুরআনে
সেগুলোকেই অসম্পূর্ণ এবং ভ্রান্তিকর ভাবে তুলে ধরেছে। সেসময়ের মানুষ ভেবেছে আকাশ
হলো শক্ত কঠিন পদার্থের তৈরি তাই এটা যেকোন সময়ে ভেঙ্গে যেতে পারে। কুরআনে এই
ভ্রান্তিকর ধারণাকে বিভিন্ন জায়গায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। আবার মানুষ ভেবেছে তারকাগুলো
ছাদের মতো আকাশের গাঁয়ে লাগিয়ে দেওয়া কতগুলো আলোক চিহ্ন। কিন্তু সে সময়ের মানুষের
পক্ষে ধারণা করাও সম্ভব ছিল না যে এক একটি তারকা পৃথিবীর থেকেও বিশাল আকৃতির। ফলে কুরআনে
তারকাগুলো সম্পর্কে পাওয়া যায় নানা রকম ভ্রান্তিকর কথাবার্তা। যেমন কখনও তারকাগুলোকে
চিহ্ন বলা হয়েছে আবার কখনও এগুলোকে আগুনের গোলা বলা হয়েছে। কুরআন তারকাগুলোকে আকাশের
গায়ে লাগিয়ে দেওযা হয়েছে যাতে ছাদ আকৃতির আকাশের সুন্দর্য বৃদ্ধি পায়। স্বাধারণ ভাবেই
আরবের একজন মানুষের কাছে তারকাগুলোকে ছাদে একে দেওয়া নানা সুন্দর্যমুলক ছবি বা আঁকা
চিহ্ন বলে মনে হবে। আবার নানা পৌরানিক কাহিনীগুলো থেকে এটা ধারণা পাওয়া যাবে যে
তারকাগুলো আগুনের গোলা, এবং এগুলো আকাশের শক্ত কঠিন দেওয়ালের সাথে লাগানো রয়েছে। শয়তান
বা জ্বীন (আরবীয় ভূত বা কাল্পনিক প্রাণী) এসব প্রাণীকে শাস্তি দেবার জন্য রাখা হয়েছে। যদি
শয়তান বা দুষ্ট জ্বীনেরা আকাশের দেওয়ালকে ভেদ করে স্বর্গে যেতে চায় তবে এই তারকাগুলো
যা কুরআনে আগুনের গোলা বলা হয়েছে সেগুলোকে ছুড়ে মেরে শয়তান এবং জ্বীনকে শাস্তি
দেওয়া হয়। তারকাগুলো সম্পর্কে আরবীয় মানুষদের ভ্রান্তিকর ধারণা ছিল বলেই কুরআনে এসব
ভ্রান্তিকর কথা লেখা রয়েছে। আকাশ শক্ত কঠিন পদার্থ দিয়ে তৈরী এবং এর মধ্যে নানা দরজা
আছে। কেউ যদি আকাশ ভেদ করে স্বর্গে যেতে চায় তবে তাকে দরজার প্রহরী ফেরেশতার
অনুমতিতে যেতে হবে। আকাশের উপরেই স্বর্গ এমন ধারণাই ছিল প্রাচীণ মানুষের। আরবের মানুষও এসব
ভ্রান্তিকর ধারণা পোষণ করতো। এবং কুরআনেও এমন বর্ণনা করা হয়েছে নানা জায়গায়। আর
হাদিসে মুহাম্মদের মেরাজের গল্পেও এ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
কুরআনে সূর্য এবং চন্দ্রকে
চলমান বলেছে কিন্তু পৃথিবীকে এবং আকাশকে স্থির বলেছে। (যদিও আকাশকে চক্রশীল বলে উল্লেখ
করেছে কুরআন লেখক।) আরবের মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না যে সূর্য ও চাঁদের মতো
পৃথিবীও চলমান। তাই কুরআনে বারবার সূর্য চন্দ্র ভ্রমন করে বলা হলেও পৃথিবীর ভ্রমনের
ব্যাপারে কোন কথাই বলা সম্ভব হয়নি কুরআন লেখকের। বরং পৃথিবী স্থির, পৃথিবী সমতল বিছানার মতো
(সমতল) বলা হয়েছে। অর্থাৎ স্পষ্টতই কুরআন লেখক এসব আরবীয় প্রাচীণ ভ্রান্ত ধারণা
রাখতো বলেই কুরআনে এসব এভাবে বর্ণিত হয়েছে।
আকাশ যে কঠিন পদার্থের তৈরী
নয় বরং আকাশ হলো গ্যাসের তৈরী এটা জানা সম্ভব ছিল না কুরআন লেখকের পক্ষে সেই দেড়
হাজার বছর আগে আরবের মাটিতে বসে। তাইতো সে আকাশকে ছাদ, পৃথিবীকে মেঝে বলে উল্লেখ করেছে কুরআনে। প্রকৃত
পক্ষে কুরআনে তাই লেখা রয়েছে এবং এমন ভাবেই লেখা হয়েছে যেভাবে কুরআন লেখক আরবের
প্রাচীণ সাধারণ মানুষ হয়ে দেখেছে। আরবের মাটিতে দাড়িয়ে সে আকাশকে ছাদ ভেবেছে তাই
কুরআনে আকাশকে ছাদ বলে উল্লেখ করেছে। তারকাগুলোকে আকাশে এঁকে দেওয়া চিহ্ন মনে হয়েছে
তাই সেটাই কুরআনে লিখে দিয়েছে। সূর্য ও চন্দ্রকে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে বলে মনে
করেছে কিন্তু পৃথিবীকে স্থির দেখেছে তাই সে কুরআনে এসবই লিখে রেখেছে। সে মনে করেছে
সূর্য ও চন্দ্র দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলাচল করে এবং বাকী সময় বিশ্রাম নেয়
তাই সে কুরআনে সূর্য ও চন্দ্রের চলমানতা সম্পর্কে বলেছে যে সূর্য ও চন্দ্র শুধু একটি
নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তই ভ্রমন করে। হাদিস তা সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছে
যে সুর্য ও চন্দ্র নির্দিষ্ট সময় ভ্রমণ শেষে আরবীয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর আরসের (বসার চেয়ার)
নিচে যেয়ে সিজদা দেয়। তাই কুরআনে সূর্য ও চন্দ্রের নির্দিষ্টকাল ভ্রমণের কথা বলা হয়েছে। এটা
সাভাবিক যে দেড় হাজার বছর আগের এক সাধারণ আরবীয় মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না যে
সূর্য ও চন্দ্র কেন দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তই দেখা যায় কিন্তু তার পর আর
দেখা যায় না। তাই সে ভেবেছে সূর্য ও চন্দ্র বুঝি দিনের একটা নির্দিষ্টসময়ই ভ্রমণ করে এবং
বাকী সময় বিশ্রামে থাকে। আর তাই সে কুরআনে এমন ভ্রান্তিকর কথা লিখে দিয়েছে।
দেড় হাজার বছর আগে মানুষ
জানতো না যে পাহাড় পর্বতগুলো কেন পৃথিবীতে রয়েছে এবং কিভাবেই বা এগুলো তৈরি হয়েছে।
তাই সে সময়ের মানুষ ভেবেছে পাহাড় পর্বতগুলো পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করে। এবং পাহাড়
পর্বতগুলোকে পৃথিবীর উপর স্থাপন করা হয়েছে (বাইরে থেকে এনে) যাতে সমতল পৃথিবী কোন এক
দিকে কাত হয়ে পড়ে না যায়। এটা কোনই আশ্চর্যের বিষয়ই নয় যে কুরআনে পাহাড় পর্বতের বিষয়ে
এমন ভ্রান্তিকর কথাই বলা হয়েছে। সেসময়ের মানুষ যেমন জানতো না যে পাহাড় পর্বতগুলো বাইরে
থেকে এনে পৃথিবীর বুকে পেঁরেকের মতো গেঁথে দেওয়া হয়নি বরং পাহাড় পর্বতগুলো পৃথিবীর
ভিতর থেকেই তৈরী হয়েছে। দেড় হাজার আগের কোন মানুষের পক্ষে এটা জানা সম্ভব ছিল না যে
পাহাড় পর্বতগুলো পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করে না কারণ পৃথিবী সমতল নয় যে এর ভারসাম্য
রক্ষার দরকার হবে। দেড় হাজার বছর আগের একজন মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয় যে পাহাড়
পর্বতগুলো পৃথিবীর নড়াচড়া থামাতে পারে না (যেমনটি কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে) বরং
কোন কোন ক্ষেত্রে পাহাড় পর্বতগুলোই ভুমিকম্পের কারণ হয়। আজ আমরা জানি যে পৃথিবীতে
প্রচুর পাহাড় পর্বত থাকার পরেও ভূমিকম্প হয় কিন্তু কুরআন লেখক ভেবেছে যে পাহাড় পর্বতগুলো
ভুমিকম্প থামিয়ে দেয়। তাই কুরআন লেখক কুরআনে উল্লেখ করেছে যে পাহাড় পর্বত স্থাপন করা
হয়েছে যেন পৃথিবীর নড়াচড়া বন্ধ হয় এবং এটি কোন এক দিকে কাঁত হয়ে না পড়ে যায়। পাহাড়
পর্বত না থাকলে পৃথিবী কাঁত হয়ে যেতো বা নড়ে উঠতো তাই পাহাড় পর্বত স্থাপন করা হয়েছে
এমন ভ্রান্তিকর দাবি কখনই কোন সৃষ্টিকর্তার হতে পারে না। বরং পাহাড়
পর্বতগুলো যখন উৎপন্ন হয় তখনই ভুমিকম্প হয়। অথচ কুরআন বলেছে যে পাহাড় পর্বত স্থাপনের ফলে
পৃথিবী কাঁত হয়ে যায় না বা পৃথিবী নড়ে উঠে না। যা খুব ভ্রান্তিকর তথ্য।
দেড় হাজার বছর আগের কোন
মানুষের জানার কথা ছিল না যে বিশ্বজগত শুধু আকাশ, পৃথিবী, সূর্য-চন্দ্র এবং চিহ্নস্বরুপ তারকা রুপী আগুনের গোলা এ
নিয়েই গঠিত নয় বরং আরো অনেক কিছু নিয়ে গঠিত। অথচ কুরআন পড়লে
মনে হয় কুরআন লেখক আরবের বুকে দাড়িয়ে বিশ্বজগতকে যেভাবে এবং যতটুকু দেখছে ততটুকুই এবং
সেভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে। সমগ্র কুরআন পড়লে এটাই মনে হবে যে কুরআন লেখক দেড় হাজার
বছর আগে আরবের বুকে দাড়িয়ে বিশ্বজগতকে দেখছে এবং তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে
সেভাবেই কুরআনে বর্ণনা করেছে। যেমন- সূর্যের পঙ্কিল জলাশয়ে ডুব দেওয়া এবং আকাশহীন
অবস্থায় সূর্য উদিত হওয়া। একজন মানুষের পশ্চিত এবং পূর্ব পাশের পৃথিবীর প্রান্তে পৌছে
যাওয়া এসব ভ্রান্ত ধারণা আর যাই হোক কোন সৃষ্টিকর্তার কথা হতে পারে না।
এসব ভুলকে মুসলমানরা
অস্বীকার করে এবং তারা কুরআনের নতুন নতুন অর্থ তৈরি করে বিজ্ঞানের
সাথে মিল রেখে এবং কুরআনের ভূলগুলোকে শুদ্ধ করা যায় এমন ভাবে। ফলে কুরআন সংশোধিত হয়ে যায়
মুসলমানদের দ্বারা। প্রকৃতপক্ষে এটি দ্বারা এটাই প্রমাণ হয় যে কুরআন সৃষ্টিকর্তার মতো
কোন সর্বজ্ঞানী লেখেনি বরং কুরআন লিখেছে কোন প্রাচীণ অজ্ঞা মানুষ যার ফলে কুরআনকে
সংশোধন করতে হয়। কুরআন সংশোধনের মাধ্যমে পক্ষান্তরে মুসলমানরা এটাই প্রমাণ করে
যে কুরআনের লেখক এমন কেউ নয় যার দ্বারা খুব ভালো করে কোন গ্রন্থ লেখা সম্ভব যা
পরিবর্তন বা সংশোধন করার দরকার নেই। কুরআনের অর্থকে পরিবর্তন করে কুরআনকে সংশোধন করার
মাধ্যমে মুসলমানরাই প্রমাণ দিচ্ছে যে কুরআন আসলে মানুষই লিখেছে যার জন্য এর প্রাচীণ কালে
ব্যবহৃত শব্দের অর্থকে পরিবর্তন করে আধুনিক কোন অর্থ দিয়ে কুরআনকে বিজ্ঞানের সাথে মিল
রেখে নতুন অর্থ করতে হয় এবং কুরআনের ভূলকে সংশোধন করতে হয়। অর্থাৎ তারা এমন এক সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে যে কিনা
এমন একটা গ্রন্থ লিখতে পারে না যার অর্থের পরিবর্তন করার দরকার পড়ে না। তাদের মতে
তাদের সৃষ্টিকর্তা আসলে ততটা জ্ঞানী নয় যে একটা বিষয়কে এমন ভাবে লিখতে পারে যার অর্থকে
পরিবর্তন করতে হবে না এবং যা সব যুগের মানুষের জন্যই একটাই অর্থ বহন করবে। যেমনটি
ঘটে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে। বিজ্ঞানে দুই হাজার বছর আগের কোন বইয়ের অর্থকে নতুন করে
পরিবর্তন করতে হয় না। যেমন পিথাগোরাসের জ্যামিতির একটি উপপাদ্য যা স্কুলে পড়ানো হয়, ত্রিভুজের অতিভুজটির দৈর্ঘ্য
অপর বাহুগুলোর যোগফলের সমান। অথবা দুই যোগ দুই সমান চার। প্রাচীনকাল
থেকে মানুষ এই লেখাগুলোকে এক রকম ভাবেই বুঝতে পারে এবং ভবিষ্যতেও মানুষ বুঝতে
পারবে এদের মধ্যকার অর্থের কোন পরিবর্তন ব্যতীতই।
কিন্তু কুরআনের ক্ষেত্রে
দেখা যায় মুসলমানরা কুরআনের পূর্বের ভূলগুলোকে কুরআনে ব্যবহৃত পুরানো শব্দগুলোর
নতুন নতুন তৈরী হওয়া শব্দগুলোর অর্থের মাধ্যমে পূর্বের অর্থকে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে
পরিবর্তন করে নেয়। এবং তারা এমনভাবে নতুন অর্থগুলো নেয় যাতে কুরআনের ভূল ঠিক হয়ে যায়
এবং নতুন অর্থ দিয়েই কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানো যায়। যেমন কুরআনে চাঁদের আলো সম্পর্কের
আয়াতগুলোর ক্ষেত্রে মুসলমানরা পুরোনো অর্থকে পরিবর্তন করে নতুন তৈরী হওয়া অর্থের
সাহায্যে পরিবর্তন করে এবং আয়াতগুলোকে বিজ্ঞানের সাথে মিলিয়ে নতুন অর্থ করার মাধ্যমে
সংশোধন করে নেয়। উদাহরণের মাধ্যমে বললে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। যেমন কুরআনের কিছু আয়াত
আছে যার মধ্যে চাঁদের আলোকে তার নিজের আলো বলা হয়েছে। যেমন সূর্য হলো প্রদীপ এবং চাঁদ
হলো আলো। আবার বলা আছে, সূর্যের আলো উজ্জ্বল আলো এবং চাঁদের আলো নরম আলো। আবার
বলা আছে, আকাশকে সৃষ্টি করে তাতে সূর্য এবং দীপ্তিময় চন্দ্রকে
রাখা হয়েছে। অর্থাৎ চাঁদের নিজের আলো আছে। কিন্তু দেখা যায় যে আধুনিক কালে এসে
মানুষ কুরআনের এই কথার ভূল এবং ভ্রান্তি ধরতে পারছে। কারণ দেড় হাজার বছর আগে কেউ জানতো না
যে চাঁদের যে আলো আসে সেটা চাঁদের নিজের আলো নয় বরং তা সূর্যের আলোর
প্রতিফলিত আলো। তাই কুরআন এভাবে চাঁদের আলোকে তার নিজের আলো
হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ফলে মুসলমানরা দেখলো যে আর কুরআনের মিথ্যাকে বাঁচানো
যাচ্ছে না। তাই তারা এই আয়াতগুলোর অর্থের পরিবর্তন করলো। তারা এই আয়াতগুলোতে
ব্যবহৃত চাঁদের নিজের আলো আছে বুঝাতে যে শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলোর অর্থ পরিবর্তন করে
দিল বিজ্ঞানের সাথে মিলে যায় এমন ভাবে। যেমন চাঁদকে নূর বলা হয়েছে কুরআনে। আরবে নূর মানে
হলো আলো। যেমন রেডিয়ামের আলো বা মনি মুক্তি থেকে প্রাপ্ত আলোকে নূর বলা হতো
এবং কুপির আলো বা আগুনের আলোকে নূর বলা হতো না। অর্থাৎ নূর হচ্ছে এমন এক প্রকারের আলো যা আগুনের
মাধ্যমে বা কোন কিছু পুঁড়িয়ে বের করতে হয় না। এটি এমনিতেই আলো ছড়ায়।
যদিও দেড় হাজার বছর ধরে নূর অর্থ আলো প্রদানকারী কোন বস্তুকে বুঝাতো কিন্তু যখন মানুষ
আবিষ্কার করলো যে চাঁদের আলো হলো সূর্যের প্রতিফলিত আলো তখন মুসলমানরা নূরের একটি
নতুন অর্থ বের করলো কুরআনের ভূলকে সংশোধন করতে। আর তা হলো প্রতিফলিত আলো। ফলে যে
আয়াতটির অর্থ ছিল চাঁদের নিজের আলো সেই আয়াতের অর্থই হয়ে গেলো চাঁদের প্রতিফলিত আলো।
এবং কুরআনে অর্থের পরিবর্তনের মাধ্যমে কুরআনের ভূলটাই বদলে যেয়ে কুরআন বিজ্ঞানময় হয়ে
গেলো। যা ছিল নিজের আলো সেটাই হয়ে গেলো প্রতিফলিত আলো। অর্থাৎ পুরোনো অর্থ বাদ দিয়ে বিজ্ঞানের সাথে মিলে যায় এমনভাবে নতুন অর্থ নিজেরাই
তৈরী করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানো হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে ন্যায় নীতি
বোধের, সততার। যদি কুরআনের
ভূলগুলোকে বিজ্ঞানের সাথে মিলাতে এর প্রকৃত অর্থ পরিবর্তন করে নতুন অর্থ বা নিজেদের
তৈরী করা অর্থ ব্যবহার করে যেভাবে কুরআনকে বিজ্ঞানময় দাবী করা হচ্ছে তাতে কুরআনের স্বার্থকতাটা
কি থাকছে? কুরআনের আগের অর্থ অর্থাৎ প্রকৃত অর্থের পরিবর্তনের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই কুরআনের ভূলকে
সংশোধন করা হয়ে গেছে এবং পূর্বের কুরআনের ভূলগুলোকে সংশোধনের
মাধ্যমে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানো হয়েই গেছে। সমস্যা হচ্ছে এটি করেছে আধুনিক যুগের
মানুষেরা যারা বিজ্ঞানের এই সব আবিষ্কারের কথা জানতো এবং তারা
বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলোর কথা জেনেই কুরআনের অর্থ কে পরিবর্তন করে কুরআনকে বিজ্ঞানময়
বানিয়েছে। অর্থা কুরআনের অর্থের পরিবর্তনের মাধ্যমে সংশোধিত কুরআনের কৃতিত্ব কুরআনের
প্রকৃত লেখকের নয় বরং আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলো জানা মুসলমানদের। যারা কুরআনের
ভূলগুলো দেখেছে এবং কুরআনের অর্থের পরিবর্তন করে কুরআনের ভূলগুলোকে সংশোধন করেছে।
সব কৃতত্ব কুরআন সংশোধনকারীদের, কুরআন রচয়ীতার নয়।
এই সহজ কথাটা মুসলমানরা
বুঝতে চায় না। তাই তারা বুঝতে পারে না যে কুরআন আসলে কোন অতিবৃদ্ধিমত্তা সম্পন্ন
সৃষ্টিকর্তার লেখা নয়। বরং কুরআন হলো প্রাচীণ আবরের এক সাধারণ মানুষের
লেখা বই। তাই কুরআনের এতো এতো ভূল রয়েছে।
কুরআন যদি কোন সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত গ্রন্থই হতো তবে এর মধ্যে কোন ভূল থাকতো না। আর সেই ভূলকে সংশোধনের জন্য জঘন্য কু-কৌশল অবলম্বন করতে হতো না মুসলমানদের। একজন সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা নির্ভূলভাবে যদি একটি গ্রন্থই না লিখতে পারে তবে সে আর সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা থাকে কি করে? কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তা লিখলে তার পক্ষে এমন গ্রন্থ লেখাও সম্ভব ছিল যার মধ্যে বর্ণিত বাণীগুলো সব সময়ের জন্যই প্রযোজ্য হতো। কিন্তু কুরআন লেখক কোন সৃষ্টিকর্তা নয় বলেই কুরআনের ভূল পাওয়া যায় এবং সেই ভূলগুলোকে কুরআনে ব্যবহৃত শব্দগুলোর ভিন্ন এবং সম্পূর্ণ নতুন অর্থ এনে কুরআনকে সংশোধন করতে হয়। যদি কুরআন সত্যিই কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী হতো তবে মুসলমানদের কষ্ট করে কুরআনের শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে কুরআন লেখকের কথাকে সংশোধন করতে হতো না। সৃষ্টিকর্তা সর্বজ্ঞানী হলে তার লেখা কোন গ্রন্থের কথাগুলো অপরিবর্তিত থাকতো। কিন্তু মুসলমানরা কুরআনের শব্দগুলো অক্ষুন্ন রাখলেও শব্দগুলোর অর্থকে পরিবর্তন করার মাধ্যমে কুরআনের লেখকের কথাকেই আমুল পরিবর্তন করে দিচ্ছে। মুসলমানদের এসব অসৎ প্রতারণামূলক কর্মকান্ডগুলো এটাই প্রমাণ দেয় যে কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী নয়। কুরআন কোন প্রাচীণ অজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষ লিখেছে বলেই কুরআনে এতো এতো ভূল। এবং সেই ভূলগুলোকে কুরআনের শব্দের অর্থের পরিবর্তনের মাধ্যমে মুসলমানদেরকেই সংশোধন করতে হয়।
অর্থাৎ নিঃসন্দেহেই কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী নয়। কুরআন হলো একজন প্রাচীণ আরবীয় মানুষের বাণী।
যেহেতু কুরআন মুহাম্মদের নিজের মুখের কথা বা বাণীর সংকলন তাই কুরআন মুহাম্মদেরই বাণী বা মুহাম্মদের রচিত গ্রন্থ।
এটা সর্বসম্মতভাবেই (অন্ধবিশ্বাসী মুসলমান ব্যতীত) প্রমাণিত যে কুরআন আল্লাহর বাণী নয়, কুরআন মুহাম্মদের বাণী।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ কুরআনের নানা ভূল এবং ভ্রান্তিকর মিথ্যা কথাগুলোকে মুসলমানরা পরিবর্তন করে কুরআনকে সংশোধন করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় দাবী করে। কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারে না যে কুরআনের বাক্যগুলোতে ব্যবহৃত শব্দগুলোর অর্থকে পরিবর্তন করে ভিন্ন অর্থ ব্যবহার করলে কুরআনের অর্থ বদলে যাবে এবং প্রকৃত কুরআনের থেকে এর অর্থের অমিল তৈরী হবে। ফলে কুরআন লেখকের দেওয়া অর্থটি বদলে সম্পূর্ন নতুন অর্থ তৈরী হবে যেটা কুরআন লেখকের নয়। কুরআনের সংশোধনকারীরা এই সহজ কথাটা বুঝতে পারে না অথবা পারলেও অসততার আশ্রয় নেয়। কোন বাক্যে ব্যবহৃত কোন শব্দের অনেকগুলো অর্থ থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে কোন একটা বাক্যের কোন একটা শব্দের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ এনে সেই বাক্যের অর্থ করলে সেই অর্থটি পরিবর্তিত হবেই। আর সেই পরিবর্তিত অর্থ বাক্যের প্রকৃত অর্থ নয়।
প্রকৃতপক্ষে বাক্যে ব্যবহৃত শব্দের অর্থ সেটাই হবে যে অর্থটা লেখক সেই বাক্যটিতে ব্যবহার করেছে। যদি সেই শব্দটির অন্য অর্থ এনে সেই বাক্যের নতুন অর্থ করে তবে সেই বাক্যটি আর লেখকের ব্যবহার করা অর্থ হবে না। সেটা হবে পরিবর্তনকারীর কথা।
কুরআনের ক্ষেত্রে এমনটিই ঘটে।
No comments:
Post a Comment