Translate

Search This Blog

বিশেষ সতর্কবার্তাঃ

এই ব্লগটি নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সন্দেহবাদী, মুক্তমনা এবং স্বাধীনচেতা মানুষদের জন্য। যারা যেকোন বিষয়ের সমালোচনা সহ্য করার মত ক্ষমতা রাখে। যদি কোন ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিক এই ব্লগটিতে আসে তবে তার ধর্মানুভূতি নামের অদ্ভূত দূর্বল অনিভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্লগ লেখক দায়ী থাকবে না। ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিকদের নিজ দায়িত্বে তাদের দূর্বল ধর্মানুভূতিকে সংরক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে। কারো ধর্মানুভূতি নামের অযৌক্তিক অনুভূতি আহত হবার জন্য কোন ক্রমেই ব্লগার বা লেখককে দায়ী করা যাবে না। যদি কোন অতি দুর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগে ভূল করে ঢুকে পরেন এবং তিনি তার অনুভূতিকে দূর্বল ভাবেন অর্থাৎ যিনি তার ধর্মের উপযুক্ত সমালোচনা সহ্য করতে অপারগ, তাকে বিনীত ভাবে এই ব্লগটি থেকে প্রস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পরেও যদি কোন দূর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগটিতে ঘুরাফেরা করেন এবং তার ফলে তার দূর্বল ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হন তবে কোন ক্রমেই এবং কোন ক্রমেই ব্লগের মালিক, 'আমি নাস্তিক' দায়ী থাকবে না।

Thursday, February 18, 2016

কুরআনের কারিক্যাচার এবং মুসলমানদের অনুবাদের কারী-ক্যাঁচাল । ১৪০০ বছর পরে কি এমন হলো যে কুরআনের অর্থই বদলে গেল ? (পর্ব ৪) মানুষের জন্ম পঁচা রক্ত থেকে নাকি ঝুলন্ত জোঁক থেকে?


মুসলমানরা দাবী করে যে তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ আল কুরআন স্বয়ং আরবীয় ঈশ্বর আল্লাহর লিখিত বা রচিত বই। এবং আল্লাহই এই বইয়ের সুরক্ষা করে থাকে। ফলে কুরআনের কোন আয়াতেরই কোনরুপ পরিবর্তন করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। অর্থাৎ কুরআন অবিকৃত আছে এবং এটি আল্লাহ যেভাবে রচনা করেছে ঠিক সেভাবেই আছে। এক চুল পরিমাণ পরিবর্তনও কুরআনে ঘটেনি। কারণ এটি সর্বশক্তিমান আরবীয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ নিজে সংরক্ষণের দায়িত্বে আছে।

কিন্তু বাস্তব ইতিহাস ভিন্ন রকম সাক্ষ্য দেয়। প্রথমত কুরআন আল্লাহর হাতে লিখিত নয়, মুহাম্মদ নিজের মুখে যা বললো আল্লাহর নাম করে সেগুলোর মুহাম্মদের সাহাবিরা লিখে রাখতো পাতায়, পাথরে এবং পশুর চামড়ায়। এরকম খন্ড খন্ড অংশ চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে অর্থাৎ একেক জনের কাছে একেকটা আয়াত সংরক্ষিত থাকে। অনেক মানুষ আবার কুরআনের অনেক আয়াতকে মুখস্ত করে রাখতো। এভাবেই কুরআনের আয়াতগুলো সংরক্ষন করতো স্বাধারণ মানুষেরা। পরবর্তীতে মুহাম্মদ মারা যাবার পর প্রথম খলিফা আবু বক্করের শাসনামলে দ্বিতীয় খলিফা ওমরের পরামর্শে কুরআনকে বই বা গ্রন্থ আকারে সংরক্ষণ করা হয়। বলে রাখা ভালো যে এই সংরক্ষনও মানুষের হাতেই ঘটেছিল। পরবর্তীতে তৃতীয় খলিফা উসমানের সময়ে কুরআনের বিভিন্ন রকমের অনুলিপি অর্থাৎ কুরআনের ভিন্ন ভিন্ন রকমফের তৈরি হয়। এবং একটা আয়াতের এক কপির সাথে একই আয়াতের অন্য কপির মধ্যে ভিন্নতা দেখা দেয়। অর্থাৎ কুরআনের আয়াতগুলোর মধ্যে বিকৃতি দেখা দেয়। তখন খলিফা উসমান সমস্ত কুরআনের ভিন্ন ভিন্ন কপিকে এক সাথে করেন এবং কুরআনকে সংশোধন করে নতুন করে সংকলন করার জন্য কয়েকজন কুরআন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটি একই আয়াতের ভিন্ন ভিন্ন রকমের কপি থেকে তাদের নিজেদের মতো করে একটি সংশোধিত কপি তৈরী করেন। আর বাকী ভিন্ন ভিন্ন কপিগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। আর সেই সংশোধিত কুরআনের কপিটি সব জায়গায় প্রেরণ করা হয়। এভাবেই কুরআনের নানা বিকৃতি সম্পন্ন কুরআনকে সংশোধন করে এক রকমের সংশোধিত কুরআন সংকলন করা হয়। বর্তমানে যে কুরআন পৃথিবীর সর্বত্র রয়েছে সেই কুরআন উসমান কর্তৃক সংশোধিত এবং সংরক্ষিত কুরআন।  

ফলে কুরআনের সংরক্ষনের দায়িত্ব আল্লাহর হাতে রয়েছে এবং তিনি ছাড়া আর কেউ কুরআনের পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারবে না অথবা পৃথিবীর কোন মানুষই কুরআনকে বিকৃত করতে পারবে না এমন অবাস্তব দাবীর কোন ভিত্তিই নেই। কুরআন সংরক্ষনে মুসলমানদের আরবীয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। বরং মানুষই আল্লাহকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কুরআনকে পরিবর্তন করে সংশোধন করেছে এবং এই সংশোধিত কুরআনকে সংরক্ষন করেছে। মানুষই এমনটা করেছে কিন্তু আল্লাহ কিছুই করতে পারেনি।

আধুনিক কালেও কুরআনের একপ্রকার বিকৃতি বা সংশোধন করা হচ্ছে। আধুনিক মুসলমানরা যখন দেখেছে কুরআনে বর্ণিত কথাগুলো আধুনিক কালে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে এবং কুরআনের কথাগুলো বিজ্ঞানের কাছে মিথ্যা বলে পরিগণিত হয়েছে তখন এক শ্রেণীর মুসলমান কুরআনের পূর্বের অর্থের পরিবর্তন করে কুরআনের নতুন অর্থ তৈরী করে কুরআনের ভূলগুলোকে সংশোধন করছে এবং বিজ্ঞানের সাথে মিলিয়ে নতুন করে অর্থ করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাচ্ছে। ফলে কুরআনের যেসব ভূলগুলো ছিল সেগুলো মুসলমানদের দারা সংশোধিত হয়ে ভূলে ভরা কুরআন বিজ্ঞানময় হয়ে যাচ্ছে। এতে বিধর্মী বা জ্ঞানী মানুষেরা মুসলমানদের এই জুচ্চুরী ধরে ফেলছে ঠিকই কিন্তু অজ্ঞ বা আধা শিক্ষিত মুসলমানগুলো তাদের অন্ধবিশ্বাসের পক্ষে শক্তি খুজে পাচ্ছে। ফলে তারা মুসলমানদের দ্বারা পরিবর্তিত কুরআনের অর্থের পরিবর্তনকেই প্রকৃত কুরআনের বাণী বলে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে যাচ্ছে। ফলে মুহাম্মদ কুরআনে যে কথাগুলো লিখেছিল সেই কথাগুলোর ভূল সংশোধন করা হচ্ছে আধুনিক কালের মুসলমানদের দ্বারা। আর এর ফলে মুহাম্মদের কুরআন পরিবর্তিত হয়ে গেছে। অর্থের পরিবর্তনের ফলে যে কুরআন বানানো হচ্ছে সেটি মুহাম্মদের রচিত কুরআন থাকছে না বরং সেটি হয়ে যাচ্ছে আধুনিক মুসলমানদের দ্বারা সংশোধিত কুরআন। ফলে আল্লাহই কুরআনের সংরক্ষনকারী কথাটা চরম মিথ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। কুরআনের এমন আমুল পরিবর্তন দেখে ব্যাঁচারা আল্লাহ হয়তো কেঁদে কেটে মরছে। কে জানে?

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে গত দেড় হাজার বছর যাবৎ কুরআনের যে অর্থ প্রচলিত ছিল এই একবিংশ শতাব্দিতে এসে কেন কুরআনের অর্থকে পরিবর্তন করে কুরআনকে সংশোধন করার প্রয়োজন পড়লো?

উত্তরটি কিন্তু কঠিন নয়। কুরআনের যেসব আয়াতের পরিবর্তন করা হচ্ছে সেই সব আয়াতের পূর্বের মহাম্মদ কর্তৃক প্রণিত অর্থ এবং বর্তমানে মুসলমানদের করা অর্থের পার্থক্য দেখলেই সেটা বুঝা পানির চেয়েও সহজ হয়ে যায়। যেমন কুরআনে মুহাম্মদ বলেছিল যে চাঁদের আলো আছে। সেই অর্থটি আধুনিক বিজ্ঞান মিথ্যা বলে রায় দিয়েছে। তাই আধুনিক মুসলমানরা কুরআনকে বাঁচাতে এই আয়াতের অর্থকে পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। ফলে তারা মুহাম্মদের করা "চাঁদের নিজের আলো আছে" এই অর্থ পরিবর্তন করে “চাঁদের আলো প্রতিফলিত আলো” এই অর্থটি করা ছাড়া কোন ভাবেই কুরআনকে বাঁচানো যেতো না। তাই আধুনিক মুসলমানরা এই আয়াতটির অর্থের পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। এরকম অনেক আয়াতের অর্থকে পরিবর্তন করেই মুসলমানরা কুরআনের ভূলগুলোকে সংশোধন করছে এবং একই সাথে ভূলে ভরা কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাচ্ছে।

এই পর্বটির উদ্দেশ্যই হলো, কেন ১৪০০ বছর ধরে চলে আসা কুরআনের অর্থের পরিবর্তন করতে হলো? কি জন্য কুরআনের অর্থের পরিবর্তন করার দরকার হলো প্রায় দেড় হাজার বছর পরে এসে?

গত পর্বগুলোতে দেখানো হয়েছে যে মুসলমানরা কিছু আয়াতের পুর্বের অর্থের পরিবর্তন করে নতুন করে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে অর্থ করেছে এবং কেন এমনটি করেছে? এই পর্বটিতেই এমনই একটি আয়াতের অর্থের পরিবর্তন দেখানো হবে এবং কেন এই আয়াতের অর্থকে পরিবর্তন করা হলো সেই কারণটিও দেখানো হবে।  

 

মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের সূরা আলাক-এর নং আয়াতে বলা হয়েছে,

"সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।"

এই আয়াতে বলা হয়েছে মানষকে জমাট রক্ত থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

একই কথা বলা হয়েছে কুরআনের আরো কিছু আয়াতে।

সূরা কিয়ামাহ্-এর ৩৭ ৩৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে,

"সে কি নিক্ষিপ্ত শুক্রবিন্দু ছিল না? অতঃপর সে রক্তপিন্ডে পরিণত হয়। তারপর তাকে আকৃতি দান করেন এবং সুঠাম করেন।"

সূরা মু'মিনুন-এর ১৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে,

"পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি রক্তপিন্ডে, অতঃপর রক্তপিন্ডকে পরিণত করি গোশতপিন্ডে এবং গোশতপিন্ডকে পরিণত করি হাড়সমূহে; অতঃপর হাড়সমূহকে ঢেকে দিই গোশত দ্বারা; অবশেষে ওকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরুপে;..."

সূরা হাজ্জ-এর নং আয়াতে বলা হয়েছে,

"হে মানুষ পুনরুত্থান সম্বন্ধে যদি তোমরা সন্দিহান হও তবে (অনুধাবক কর) আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকা হতে, তারপর শুক্র হতে, তারপর রক্তপিন্ড হতে, তারপর পূর্ণাকৃতি বা অপূর্ণাকৃতি মাংসপিন্ড হতে;..."

সুরা মু'মিন, আয়াত ৬৭

"তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে, পরে শুক্রবিন্দু হতে, তারপর রক্তপিন্ড হতে, তারপর তোমাদেরকে বের করেন শিশুরুপে, অতঃপর যেন তোমরা উপনীত হও যৌবনে, তারপন হও বৃদ্ধ "

উপরিউক্ত সবগুলো আয়াতেই বলা হয়েছে মানুষকে রক্ত থেকে বা জমাট রক্ত থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই আয়াতগুলোর সবগুলো অনুবাদেই মানুষকে রক্ত বা জমাট বাধা রক্ত থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে বলেই (কুরআনে) উল্লেখ করা হয়েছে।

যেমন হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ সূরা আলাক-এর ২ নং আয়াতের অনুবাদ করেছেন জমাট বাঁধা রক্ত থেকে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ডঃ জহুরুল হক এই আয়াতের অনুবাদ করেছেন মানুষকে এক রক্তপিন্ড থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। মিনিস্ট্রি অফ রিলিজিওন অফ বাংলাদেশ থেকে অনুবাদিত কুরআনেও বলা হয়েছে যে মানুষকে জমাট বাঁধা রক্ত থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে (congealed blood থেকে)। আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলি এই আয়াতের অনুবাদেও মানুষকে জমাট বাঁধা রক্ত থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে এটাই অনুবাদ করেছেন (congealed blood থেকে)। পিকথালও এই আয়াতের অনুবাদে বলেছেন, মানুষকে জমাট রক্ত থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে (from a clot)।

অর্থাৎ সব অনুবাদকগণই এই আয়াতের অনুবাদ করেছেন মানুষকে জমাট বাঁধা রক্ত থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

সূরা কিয়ামাহ্-এর ৩৭-৩৮, সূরা মুমিনুন-এর ১৪, সূরা হাজ্জ-এর , সূরা মুমিন-এর ৬৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, শুক্র বিন্দু জমাট রক্তে পরিণত হয়; জমাট রক্ত পরে মাংসে পরিণত হয়, মাংস হাড়ে পরিণত হয়, হাড়ের চারপাশে মাংস আসে এভাবেই শিশুর জন্ম হয়। অর্থাৎ কুরআন অনুযায়ী শুক্রানু জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়, এবং এই জমাট বাঁধা রক্ত পরবর্তীতে মাংসে পরিণত হয়।

আধুনিক মেডিকেল সাইন্স অনুযায়ী শুক্রানু কখনই জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয় না। আবার জমাট বাঁধা রক্তও কোনদিন মাংসে পরিণত হয় না। তাই আধুনিক বিজ্ঞানের বাস্তব সত্যের কাছে কুরআনের এসব আয়াতের কথাগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তার লেখা বই নয়। বরং কুরআন হলো মুহাম্মদ নামের এক স্বাধারণ অজ্ঞ মানুষের রচিত বই। তাই কুরআন একটি মিথ্যার সংকলন। কুরআন মানুষেরই রচিত।

যখন বিজ্ঞানের সত্য মানুষের কাছে এসে পৌছলো তখন মুসলমানরা দেখলো আর কুরআনকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। কুরআন যে কোন সৃষ্টিকর্তার গ্রন্থ নয় বরং এটি এক স্বাধারণ মানুষের লেখা এক স্বাধারণ মানের বই এই সত্যের হাত থেকে কুরআনকে বাঁচানো অসম্ভব। তাই মুসলমানরা খলিফা উসমানের পথ অনুসরণ করলো। এমনকি তারা খলিফা উসমানের থেকে এক ধাপ উপরে উঠে গেলো। খলিফা উসমান কুরআনের বাক্যগুলো বা লেখাগুলোকে পরিবর্তন করেছিল, কিন্তু আধুনিক মুসলমানরা খুব ভালো করেই জানতো যে কুরআনের আয়াতগুলোর পরিবর্তন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তারা বাধ্য হয়ে কুরআনের আয়াতগুলোর অর্থ পরিবর্তন করতে চেষ্টা করলো। তারা দেখলো প্রাচীণ কালে ব্যবহৃত কুরআনের অনেক শব্দের একাধিক বর্তমান কালের তৈরি করা অর্থ রয়েছে। এই ভিন্ন অর্থগুলোকেই যদি কুরআনের ওইসব শব্দের অর্থের সাথে পরিবর্তন করে বসিয়ে দেই তবে কুরআনের ভূলকে সংশোধন করা যায়। যেমন উপরুক্ত আয়াতগুলোতে জমাট রক্ত বুঝাতে যে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে সেটি হলো আলাক অর্থ রক্তপিন্ড বা জমাট বাঁধা রক্ত। আলাক শব্দটির অর্থ সেই দেড় হাজার বছর আগে থেকেই করা হতো রক্ত বা জমাট রক্ত। এই অর্থটি গত দেড় হাজার বছর ধরেই মানুষ ব্যবহার করে আসছে। মুহাম্মদও তাই কুরআনে এই শব্দটির অর্থ করেছে জমাট বাঁধা রক্ত। তার অনুসারীরা এজন্যই গত দেড় হাজার বছর ধরে আলাক শব্দটির অর্থ করেছে জমাট বাঁধা রক্ত। কুরআনে এই কথাটা লেখাটার কারণটিও ছিল খুব সহজ। কারণ সেই সময়টিতে গ্রীক দার্শনীকগণ মনে করতো মানুষের জন্ম হয় শুক্রানু এবং জমাট রক্ত থেকে। মুহাম্মদও এই কথাটা শুনেছিল। কিন্তু সেসময়ের মানুষের মতো সেও জানতো না যে এই কথাটি ছিল একেবারে মিথ্যা। তাই সে একথাটিকে সত্য ভেবে কুরআনে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এবং জমাট বাঁধা রক্ত বুঝাতে আলাক শব্দটি ব্যবহার করেছে।

কিন্তু বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দিতে এসে মানুষ জানতে পারলো যে মানুষের জন্ম জমাট বাঁধা রক্ত থেকে হয় না। বরং মানুষের জন্ম হয় পুরুষের শুক্রানু এবং মেয়েদের ডিম্বানুর নিষেকের ফলে ভ্রুণ তৈরী হবার মাধ্যমে। কিন্তু মুহাম্মদ তো আর এই তথ্যটি জানতো না। তাই সে গ্রীক দার্শনীকদের কথা ভ্রান্ত ধারণাটাই কুরআনে লিখে রেখেছিল। গ্রীক দার্শনীকরা যেমন ভেবেছিল যে শুক্রানু এবং রক্ত মিলে মাংস তৈরী হয়। মাংস থেকে হাড় তৈরী হয়। ঠিক একই ভাবে এই মিথ্যা ধারণাটাই মুহাম্মদ কুরআনে লিখে রেখেছে যে, শুক্রানু রক্তে পরিনত হয়, এই জমাট বাঁধা রক্ত মাংসে পরিণত হয়। আধুনিক কালে এসে মানুষ দেখলো যে কুরআনে মিথ্যা কথা লেখা আছে। তাই মুসলমানরা কুরআনকে বাঁচাতে উঠে পড়ে লাগলো। তারা মিথ্যার হাত থেকে কুরআনকে বাঁচাতে এই আলাক শব্দটির নতুন অর্থ করলো জোঁক বা জোঁকের মতো ঝুলন্ত বস্তু। এবং তারা মানব ভ্রুণকে জোঁকের মতো ঝুলন্ত বস্তু বলে অপপ্রচার করে বেড়ালো। কিন্তু তাতেও অবশ্য কুরআনের ভূল ঢাকলো না। কারণ মানব ভ্রুণ আসলে জোঁকের মতো ঝুলন্ত কোন বস্তু নয়।

অর্থাৎ মুসলমানরা নানা রকম অপচেষ্টা করার পরেও কুরআনকে মিথ্যাবাদীর লেখা বই এই তকমা থেকে বাঁচাতে পারলো না। তবে এতে করে কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধবিশ্বাসী মুসলমানরা প্রচন্ড আত্মসন্তুষ্টি বোধ করতে থাকলো। মরতে মরতে বেঁচে গেলো কুরআন।

এখন প্রশ্ন হলো আলাক শব্দটির এই অর্থ পরিবর্তন করে কুরআনের পুরোনো অর্থকে কেন পরিবর্তন করা হলো। উত্তরটি হয়তো এতোক্ষন সবাই বুঝতে পেরেছেন। শুধু মাত্র অন্ধবিশ্বাসী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন গোঁড়া মুসলমানরা ব্যতীত।  

একবার সুস্থ মস্তিষ্কে ভাবুনতো, যে শব্দটির (আলাক) অর্থ করা হয়েছে রক্ত বা জমাট বাঁধা রক্ত সেই দেড় হাজার বছর যাবত, সেই শব্দটির কেন নতুন অর্থ তৈরী করে কুরআনের সাথে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে? আলাক অর্থ জোঁকের মতো ঝুলন্ত বস্তু এই অর্থটি কিছু কাল আগে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু আলাকের প্রাচীণ অর্থ রক্ত বা জমাট রক্ত সেই প্রাচীণকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আর আজ যখন কুরআনের ভূল ধরা পড়লো, মানুষ জেনে গেলো যে মানুষ আসলে জমাট বাঁধা রক্ত থেকে জন্ম নিতে পারে না। কারণ রক্ত থেকে এমনিই মানুষের জন্ম হতে পারবে না তার উপর জমাট বাঁধা রক্ত হচ্ছে মৃত রক্ত। আর তাই জমাট বাঁধা রক্ত থেকে মানুষের জন্ম হওয়া শুধু অবৈজ্ঞানিকই নয় উপরন্তু অবাস্তব এবং অসম্ভব। আর এই অসম্ভবকেই সত্য বলে বর্ণনা করেছে কুরআনের লেখক মুহাম্মদ। ফলে কুরআন যে মুহাম্মদের মতো এক স্বাধারণ অজ্ঞ মানুষের লেখা বই সেটা প্রমাণিত হয়ে পড়েছে। আর তাই কুরআনের এই আয়াতগুলোর অর্থ পরিবর্তন করে বিজ্ঞানের সাথে কিছুটা মিলে যায় (পুরোপুরি মিলেনি) সেই নতুন তৈরি করা অর্থ দিয়ে কুরআনের ভূলকে সংশোধন করার চেষ্টা করা হয়েছে (যা আসলে সফল হয়নি)

 

কেন এমন প্রতারণামুলক ভন্ডামীর আশ্রয় নেওয়া? উত্তরটি খুবই সহজ এবং প্রমাণিত, কারণ কুরআনের ভূলকে সংশোধন করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানোর জন্য।

কুরআনে ব্যবহৃত শব্দগুলোর পুরনো অর্থের পরিবর্তে নতুন তৈরি করা অর্থ ব্যবহার করে কুরআনের প্রাচীণ অর্থকে পরিবর্তন করে কুরআনের ভূলগুলোকে সংশোধন করার মাধ্যমে মুসলমানরা নিজেদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মন এবং তাদের অন্ধবিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখতে পারলেও এটা প্রমাণিত হয় না যে কুরআন সত্য। প্রকৃত সত্য হলো কুরআন মিথ্যা ছিল কুরআন মিথ্যাই আছে। পুরনো কুরআন যেমন আগেই মিথ্যা ছিল যে কুরআন মুহাম্মদের বর্ণিত করা, সেই কুরআন এখনও মিথ্যা কুরআনই। বরং মুসলমানরা সেই কুরআনকে তার ভিতরের শব্দগুলোর নতুন তৈরী করা অর্থ ব্যবহার করে এবং সুবিধামত নিজেরাই নতুন অর্থ তৈরী করে কুরআনের পুরনো অর্থকে পরিবর্তন করার মাধ্যমে কুরআনের ভূলকে সংশোধন করা এবং নতুন অর্থ সমৃদ্ধ বিজ্ঞানময় কুরআন বানানোতে যেমন মুহাম্মদের কোন ভূমিকা নেই ঠিক তেমনি মুহাম্মদের কাল্পনিক আল্লাহরও কোন ভূমিকা নেই। বরং সমস্ত ভূমিকাই আধুনিক কালের বিজ্ঞান জানা এবং বিজ্ঞান জানার পর বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে কুরআনের নতুন অর্থ করে কুরআনকে সংশোধনকারীদের।

 

কুরআনের অর্থ কেন ১৪০০ বছর পর পরিবর্তন করা হচ্ছে বা হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরটি এতোক্ষণে প্রমাণ হয়ে গেছে।

কুরআনের ভূল ভ্রান্তিগুলোকে সংশোধন করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতেই এই হীন অপকর্মটি মুসলমানরা করেছে এবং করছে।

 

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ কোন একটা শব্দের অনেকগুলো অর্থ থাকতে পারে। এটাই স্বাভাবিক যে একটি শব্দের একাধীক অর্থ থাকে। কিন্তু সেই শব্দটি যখন কোন একটি নির্দিষ্ট বাক্যে ব্যবহৃত হয় তখন ওই শব্দটির একটি মাত্র নির্দিষ্ট অর্থই ব্যবহৃত হয়। শব্দটির যে অর্থটি লেখক ওই বাক্যে ব্যবহার করেছে বাক্যটিতে শব্দটির ওই একটামাত্র অর্থই বহন করে। কিন্তু সেই বাক্যে যদি ওই শব্দটির ভিন্ন অর্থ এনে বাক্যটি নতুন অর্থ করা হয় তবে সেই অর্থটি আর লেখকের বর্ণিত অর্থ থাকবে না। সেটি পরিবর্তন হয়ে যাবে। তাই প্রাচীণ ধর্মগ্রন্থগুলোর আয়াত বা ভার্স-এ ব্যবহৃত প্রাচীণ শব্দগুলোর প্রাচীণ অর্থের পরিবর্তে যদি শব্দটির তৈরি হওয়া আধুনিক কালের নতুন অর্থ ব্যবহার করা হয় তবে অবশ্যই সেই গ্রন্থটির ওই আয়াত বা ভার্স-এর অর্থ পরিবর্তিত হয়ে যাবে। ফলে সেটি আর প্রাচীণ গ্রন্থ থাকবে না বরং আধুনিক মানুষের করা নতুন অর্থবহ সংশোধিত গ্রন্থ হবে। মুসলমানরা এই হীন অপকর্মটির মাধ্যমেই কুরআনের ভূলগুলোকে সংশোধনের মাধ্যমে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাচ্ছে।  

 

 

 

No comments:

Post a Comment