আস্তিকদের অযৌক্তিক, কুযৌক্তিক, অপযৌক্তিক এবং অপ-বৈজ্ঞানিক প্রশ্নঃ
আমরা
জানি একটা শব্দের অনেকগুলো অর্থ থাকে। তাই যদি কোন একটা শব্দের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ এনে ওই বাক্যের অর্থ
করা হয় তবে তাতে
দোষের কিছু নেই। কুরআনেও যেসব শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলোরও অনেকগুলো অর্থ আছে। তাই কোন শব্দের সুবিধামত অর্থ নিয়ে কুরআনের অর্থ করা যায়। একটি শব্দের একাধিক অর্থ থাকলে যেখানে যেটা সঠিক সেখানে সেটাই ব্যবহার করা দোষের কি আছে? বরং
নিজেদের সুবিধা মতো কুরআনের শব্দগুলোর অর্থ ব্যবহার করে কুরআনের যথার্থ অর্থ করাতে দোষের কিছু নেই। দাহাহা শব্দটির অর্থ যেমন বিস্তৃত করা বুঝায় ঠিক তেমনি এর অর্থ ডিম্বাকৃতিরও
হয়। তাহলে আমাদের সুবিধামতো যেটা উপযুক্ত সেই অর্থটি নিয়ে কুরআনের নতুন অর্থ করাতে দোষের কি আছে?
যৌক্তির এবং
বৈজ্ঞানিক
উত্তরঃ
একটি শব্দের অনেকগুলো অর্থ থাকতে পারে, এবং ভাষার ক্ষেত্রে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন সেই শব্দটি কোন বাক্যে ব্যবহৃত হয় তখন কিন্তু সেই শব্দটির একটি নির্দিষ্ট অর্থই ওই বাক্যটিতে ব্যবহৃত হয়। একটা বাক্যে কোন শব্দ ব্যবহৃত হলে সেই শব্দটির অর্থ সেটাই হবে যে অর্থটা লেখক ব্যবহার করেছেন। কিন্তু লেখক শব্দটির যে অর্থ বাক্যটিতে ব্যবহার করেছেন যদি সেই শব্দটির সেই নির্দিষ্ট অর্থটি বদলে শব্দটির অন্যান্য ভিন্ন অর্থ এনে বাক্যটির অর্থ করা হয় তবে সম্পূর্ণ বাক্যটির অর্থই বদলে যাবে। ফলে লেখক বাক্যটিতে যে কথাটি বলেছিলেন সেই কথাটিও পরিবর্তিত হয়ে নতুন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করবে। যেমন যদি কেউ একটি বাক্য লেখে যে, “ছেলেটির মাথা খুব ভালো"; এই বাক্যটিতে “ছেলেটির মাথা খুব ভালো” বলতে ছেলেটির মেধা খুব ভালো এই অর্থটি বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ ছেলেটির ব্রেইন খুব সার্প। কিন্তু যদি এই অর্থের পরিবর্তিতে কেউ এই বাক্যে ব্যবহৃত ‘মাথা’ শব্দটির ভিন্ন অর্থ করে যেমন, মাথা শব্দটির দ্বারা মস্তক বা মগজ বোঝানো হয়। আবার মাথা শব্দটি দিয়ে মানুষের মুখের উপরের চুল যুক্ত গোল অঙ্গটিকে বোঝায়। এখন যদি উক্ত বাক্যটিতে ব্যবহৃত মাথা শব্দটির অর্থ মগজ বা চুল যুক্ত গোল অজ্ঞ এই অর্থটি নিয়ে বাক্যটির নতুন অর্থ করা হয় তবে দাড়ায়, “ছেলেটির মাথা দেখতে সুন্দর; অথবা ছেলেটির মগজ খুব ভালো অর্থাৎ সুস্থ”। ফলে লেখকের দেওয়া অর্থটি অর্থাৎ ছেলেটি খুব মেধাবী বদলে যেয়ে সম্পূর্ণ বাক্যটির অর্থটিই বদলে যাচ্ছে। ফলে মাথা শব্দটির অর্থ পরিবর্তন করেই সম্পূর্ণ বাক্যটির অর্থ পরিবর্তন করে দেওয়া যাচ্ছে। যেখানে লেখক "ছেলেটির মাথা খুব ভালো" বাক্যটি দিয়ে ছেলেটি মেধাবী এই অর্থটি বুঝিয়েছিলেন সেই অর্থটি বদলে যেয়ে নতুন অর্থ হচ্ছে ছেলেটির মাথা দেখতে খুব সুন্দর বা ছেলেটির মগজ সুস্থ।
আরেকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো পরিস্কার হবে। ধরি কেউ একটি বাক্য লিখলো, “ছেলেটি অংকে পাঁকা”। এই বাক্যটির অর্থ হলো, ছেলেটির অংকে দক্ষতা রয়েছে। কিন্তু আমরা জানি যে পাঁকা শব্দটি দিয়ে ‘ফল পাঁকা’ এই অর্থটি বুঝানো হয়। এখন যদি কেউ এসে পাঁকা শব্দটির ফল পেঁকে যাওয়া এই অর্থটি ব্যবহার করেন তবে বাক্যটির অর্থ হবে, ছেলেটি অংকে পেঁকে গেছে অর্থাৎ কিছুদিন পর ছেলেটির অংকে পঁচে যাবে। অর্থাৎ পাঁকা শব্দটি দিয়ে লেখক যেভাবে দক্ষতা বুঝিয়েছেন সেই অর্থটি সম্পূর্ণ বদলে যাচ্ছে। একই ভাবে যদি বলা হয় যে ছেলেটি অংকে কাঁচা তার মানে কিন্তু "ছেলেটি কাঁচা ফলের মতো" বা "ছেলেটি পাঁকা ফলের মতো” এমনটি বুঝায় না। লেখক এখানে বাক্যটিতে পাঁকা শব্দটি ব্যবহার করে ছেলেটির অংকে দক্ষতা বুঝাচ্ছেন। তাই কেউ চাইলেই পাঁকা বা কাঁচা শব্দটির অর্থ পরিবর্তন করতে পারে না। সেক্ষেত্রে লেখকের দেওয়া অর্থটি বদলে যাবে। আর এভাবে বাক্যের অর্থ পরিবর্তন করাটা হবে অসততা।
এখন কুরআনের সূরা নাযিয়াতের ৩০ নং আয়াতে পৃথিবী বিস্তৃত বুঝাতে 'দাহাহা' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। কুরআনের অনেক আয়াতেই “পৃথিবীকে বিস্তৃত করা হয়েছে” এই কথাটি লেখা হয়েছে। পৃথিবীকে বিস্তৃত করা হয়েছে এই কথাটি বলা হয়েছে কুরআনের সুরা হিজর-এর ১৯,
ক্বাফ-এর ৭, নাবা'র ৬, গাশিয়াহ-এর ২০, যারিয়াত-এর ৪৮, রাদ-এর ৩, ত্ত্বায়াহা-এর ৫৩, নূহ-এর ১৯, যুখরুফ-এর ১০,নাযিয়াত-এর ৩০, শামস-এর ৬ ইত্যাদি আয়াতে।
অর্থাৎ কুরআনে নানা জায়গায় পৃথিবীকে বিস্তৃত করা হয়েছে এই কথাটি বলা হয়েছে। আবার আরবী ডিকশনারী অনুযায়ী 'দাহাহা' শব্দটির অর্থ হলো 'বিস্তৃত করা'। কিন্তু পৃথিবী বিস্তৃত মানে হলো পৃথিবী সমতল। তাই কুরআনে যে পৃথিবীকে সমতল বলা হয়েছে এটি প্রমাণিত হয়ে পড়ে। ফলে এই শব্দটির অর্থ 'বিস্তৃত করা' পরিবর্তন করে এটার নতুন অর্থ করা হয়েছে ডিম্বাকৃতির।
আর এজন্যই গত ১৪০০ বছর যাবৎ ধরে ‘দাহাহা' শব্দটির অর্থ হয়ে এসেছে
বিস্তৃত করা।
কিন্তু যখনই দেখা গেল কুরআনের বর্ননার সাথে বাস্তবতার অমিল হচ্ছে
তখন নতুন একটা অর্থ তৈরী করে বসিয়ে দেওয়া হলো কুরআনের ওই আয়াতে। 'দাহাহা' শব্দটির
অর্থ হলো বিস্তৃত করা। কিন্তু এই শব্দটির নতুন অর্থ করা হয়েছে ডিম্বাকৃতির। ফলে এই
অর্থটি ব্যবহার করে কুরআনের উক্ত আয়াতটির নতুন অর্থ করা হয়েছে, পৃথিবী ডিম্বাকৃতির।
কিন্তু দাহাহা শব্দটির এতো কাল পুরোনো অর্থ বদলে দিলেইতো আর সেটা সত্য হয়ে যাবে
না! কুরআনের নতুন অর্থ করে বিস্তৃত করার পরিবর্তে ডিম্বাকৃতির এই অর্থটি করার মাধ্যমে
মুসলমানদের আত্ম সন্তুষ্টি লাভ হবে। কিন্তু কুরআনে ব্যবহৃত বিস্তৃত পৃথিবী এই অর্থটি
যা কুরআন লেখক দেড় হাজার বছর আগে ব্যবহৃত করেছেন এবং দেড় হাজার বছর ধরে বলবৎ রয়েছে"
সেই অর্থটিই কিন্তু কুরআনের আসল অর্থ হবে। নতুন অর্থ প্রয়োগ করে নতুন অর্থ করার ফলে
কুরআনের মূল অর্থ পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং গেছে। ফলে ডিম্বাকৃতির পৃথিবী কথাটি আর কুরআনের
থাকবে না। এটি মুসলমানদের নতুন করা অর্থ হবে। কুরআন লেখকের করা অর্থ হবে না। কারণ কুরআন
লেখক 'দাহাহা' অর্থ করেছিলো বিস্তৃত করা, সেই অর্থটি আর ডিম্বাকৃতি এই অর্থটি পরস্পর
বিপরীত অর্থ বহন করে। আর এটা কুরআন লেখকের করা অর্থ নয়। বরং এটি আধুনিক মুসলমানদের
করা নতুন এবং মূল কুরআনের ভিন্ন অর্থ।
আপনি গবেষনা করে দেখুন, গত ১৪০০ যাবৎ দাহাহা শব্দটির অর্থ বিস্তৃত
করা এই অর্থটিই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
তাহলে একবিংশ শতাব্দিতে এসে এই অর্থ পরিবর্তন কেন?
এভাবে যদি কুরআনে ব্যবহৃত শব্দের নতুন অর্থ তৈরী করে সেটা দিয়ে
কুরআনকে বিজ্ঞানময় প্রমান করা যায় তবে পৃথিবীর সব ধর্মগ্রন্থই এভাবে শব্দের নতুন অর্থ
তৈরী করে সেগুলোকে কুরআনের মতই বিজ্ঞানময় প্রমান করা যায়। এবং এটাই করে থাকে সব ধর্মের
আস্তিকগুলো । কিন্তু তাতে করে সেই ধর্মগ্রন্থগুলো বিজ্ঞানময় হয়ে যায় না।
কুরআনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
যেভাবে মুসলমানরা কুরআনকে গুজামিল দিয়ে বিজ্ঞানময় করছে ঠিক একই
ভাবে পৃথিবীর সব ধর্মগ্রন্থগুলোকেও বিজ্ঞানময় প্রমান করা হচ্ছে। আর এজন্যই বাইবেলকে
খ্রিস্টানরা বিজ্ঞানময় দাবী করে । বেদকে হিন্দুরা বিজ্ঞানময় দাবী করে। এবং মুসলমানরা
কুরআনকে বিজ্ঞানময় দাবী করে।
আর আপনার মত আবেগপ্রবণ ধর্মানুসারীরা সেই সব গুজামিলকে সত্য
বলে বিশ্বাস করে। তাতে করে সেগুলো বিজ্ঞানময় হয়ে যায় না।
এটাই বাস্তবতা । আর বাস্তবতা আবেগ বুঝতে পারে না। বুঝে যুক্তি
ও প্রমাণ।
আস্তিকদের অযৌক্তিক,
কুযৌক্তিক,
অপযৌক্তিক
এবং
অপ-বৈজ্ঞানিক
প্রশ্নঃ
সুরা নাবা ৬-৭, আম্বিয়া ৩১ আয়াতে বলা হইছে যে পাহারের জন্য
পৃথিবী ঢলে পরে না।
কুরআনে বলা আছে যে পৃথিবীতে পাহাড় পর্বতগুলো পেঁরেকের মতো
গেঁড়ে দেওয়া হয়েছে বলে পৃথিবী নড়াচড়া করে না। এবার শুনুন,পৃথিবী যদি গোলাকার হয় তবেই
কিন্তু এ কথা খাটে। একটু ভাবুন, পৃথিবী যদি সমতল হয় তখন কিন্তু পেরেক লাগানোর জন্য
আরো বেশি কাঁপত।
কুরআনে বলা হয়েছে যে পৃথিবী ডিম্বাকার। আর আধুনিক বিজ্ঞানও
বলে যে পৃথিবী ডিম্বাকার। পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে চাপা তাই পৃথিবী ডিমের মতো। আমি শুধু
পৃথিবী ডিম্বাকার তা ব্যাখ্যা দিলাম।
যৌক্তির এবং
বৈজ্ঞানিক
উত্তরঃ
পৃথিবী
কি সমতল যে এটি ঢলে
পড়বে বা এক দিকে
কাঁত হয়ে যাবে? কুরআনের এই আয়াততো বরং
প্রমাণ দিচ্ছে পৃথিবী সমতল। সমতল পৃথিবীর ক্ষেত্রেই ঢলে বা কাঁত হয়ে
পড়ার প্রশ্ন আসে। গোলাকার পৃথিবীর ক্ষেত্রে নয়। কারণ গোলাকার বা গোলক আকার
পৃথিবীর পক্ষে কাঁত হয়ে ঢলে যাবার প্রশ্নই আসে না। কারণ এটি সব দিক থেকেই
গোল বা গোলক আকার।
আপনি কি কোন গোলক
আকার মার্বেল বা ফুটবলকে কোন
দিকে কাঁত করতে পারবেন? সমতল কোন কিছুকেই সহজে কাঁত করা যায়। যেমন সমতল টেবিলকে আপনি ইচ্ছে করলেই কাঁত করতে পারবেন। আবার সমতল টেবিলের পক্ষেই কোন এক দিকে ঢলে
যাবার ভয় থাকে। পৃথিবী
কোন দিকে কাঁত হয়ে যেতো বা ঢলে যেতো
এই কথাটা এজন্য কুরআন লেখক বলেছে কারণ সে ভেবেছে পৃথিবী
সমতল, তাই এটি কোন এক দিকে কাঁত
হয়ে যেতে পারে বা ঢলে পড়ে
যেতে পারে। যদি কুরআন লেখক জানতো যে পৃথিবী সমতল
নয় বরং পৃথিবী গোল বা গোলক আকার
তবে সে বলতো না
যে পৃথিবী ঢলে পড়ে। যদি একটু জানা থাকে তবে আপনি জেনে থাকবেন যে পৃথিবী সূর্যের
অবস্থানের সাপেক্ষে উত্তর মেরুর দিকে একটু ঢলে আছে। কুরআনে যেভাবে বলা হয়েছে যে পৃথিবী যাতে
ঢলে পড়ে না যায় তাই
পাহাড় স্থাপন করা হয়েছে সেই কথাটির কোন ভিত্তি নেই। কারণ পাহাড় পর্বত থাকার পরও পৃথিবী সূর্যের সাপেক্ষে উত্তর মেরুর দিকে সামান্য ঝুকে থাকে। আর এতে পাহাড়
পর্বতের কোনই ভূমিকা নেই।
গোলক
আকার ফুটবল বা মার্বেলকে যেমন
কোন দিকে কাঁত করা যায় না অথবা কোন
দিকে ঢলে পড়া সম্ভব নয় ঠিক একই
ভাবে (প্রায়) গোলক আকার পৃথিবীর পক্ষেও সম্ভব নয় কোন দিকে
কাঁত হয়ে পড়ার বা ঢলে পড়ার।
আসলে গোলক আকার কোন কিছুর ক্ষেত্রে কাঁত হয়ে যাওয়া বা ঢলে পড়া
বলাটা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
কারণ গোলক আকার কোন কিছু সব দিক থেকেই
সমান থাকে বলে এটির ক্ষেত্রে কাঁত হওয়া বা ঢলে পড়া
সম্ভব নয়। কোন এক দিকে কাঁত
হয়ে পড়া বা ঢলে পড়া
শুধু মাত্র সমতল কোন কিছুর ক্ষেত্রেই সম্ভব। যেমন সমতল কাঠকে কোন দিকে কাঁত করা যায় বা একে ঢলে
ফেলা যায়। কোন গোলককে কাঁত করা বা ঢলে ফেলা
সম্ভব নয়।
কুরআন
লেখক পৃথিবীকে সমতল ভেবেছে বলেই দাবী করেছে যে যাতে পৃথিবী
কোন এক দিকে কাঁত
হয়ে ঢলে পড়ে না যায় তাই
এর উপর পাহাড় পর্বত স্থাপন করে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে এবং এর ফলে পৃথিবী
কোন দিকে কাঁত হয়ে ঢলে পড়ছে না।
অর্থাৎ
স্পষ্টতই কুরআনে পৃথিবীকে সমতল বলা হয়েছে।
সূরা আম্বিয়ার ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
"এবং আমি পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বত যাতে পৃথিবী তাদেরকে নিয়ে এদিক ওদিক ঢলে না যায়..."
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে পৃথিবী কোন এক দিকে কাঁত হয়ে ঢলে পড়তো যদি না এর উপর পাহাড় পর্বত স্থাপন করা হতো। পাহাড় পর্বত স্থাপন করার ফলেই পৃথিবী কোন এক দিকে ঢলে পড়ছে না বা কাঁত হয়ে যাচ্ছে না। অর্থাৎ কুরআন লেখক ধারণা করেছিল যে পৃথিবী সমতল এবং তার জন্য এটি ভারসাম্য হারিয়ে কোন এক দিকে কাঁত হয়ে বা ঢলে যেতে পারে।
পৃথিবী গোলাকার হলে এর উপর পেঁরেকের মতো পাহাড় পর্বতগুলোকে গেঁড়ে দেওয়া যাবে না, এই কথাটার ভিত্তিটা কি? গোলাকার ফুটবলে কি পেরেক লাগানো যায় না? আমরা সহজেই জানি যে, যে কোন কিছুতেই পেরেক লাগানো যায়। আর পৃথিবী সমতল হলে পেঁরেক লাগালে পৃথিবী আরও বেশী কাঁপতো কথাটার মানেটাই বা কি? গোলাকার কিছুতে পেঁরেক লাগালে কি সেটা কাঁপে না?
পৃথিবীর উপরে পাহাড় পর্বতকে পেরেকের মতো গেঁথে দেবারই বা প্রয়োজন পড়লো কেন? পাহাড় পর্বতগুলো কি পেঁরেক যে এগুলাকে গেঁড়ে বা গেঁথে দিতে হবে? বিজ্ঞান আজ মানুষকে ব্যাখ্যা করে জানিয়েছে যে পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে পাহাড় পর্বতগুলো তৈরী হয়। পৃথিবীর অভ্যন্তরের মাটি উপরের দিকে উঠে যেয়ে অথবা আশে পাশের মাটি ধ্বসে যাওয়ায় পাহাড় পর্বত গঠিত হয়। তাই পাহাড় পর্বতগুলো পৃথিবীরই অংশ। ফলে পাহাড় পর্বতগুলো পেঁরেকের মতো গেঁড়ে দেওয়া হয়েছে কথাটা পুরোপুরি মিথ্যা। কুরআনের সূরা নাবা'র ৬ ও ৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
"আমি কি পৃথিবীকে বিছানা বানিয়ে দেয়নি? ও পাহাড়সমূহকে পেরেক রুপে গেঁড়ে দেয়নি?"
অর্থাৎ কুরআন লেখক মনে করেছিল যে পাহাড় পর্বতগুলোকে বাইরে থেকে আনা হয়েছে এবং সেগুলোকে পেঁরেকের মতো গেঁড়ে দেওয়া হয়েছে। তাই সে এমন উদ্ভট কথা বলেছে যে পৃথিবীকে বিছানার মতো সমতল বানিয়ে এর উপর পাহাড় পর্বতগুলোকে পেঁরেকের মতো করে গেঁড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আসলে পাহাড় পর্বতগুলো পৃথিবীর অংশ এবং পৃথিবীর অভ্যন্তরিন উপাদানগুলো বাইরের দিকে বেড়িয়ে এসে পাহাড় পর্বত গঠিত হয়েছে। কিন্তু কুরআন বলছে পাহাড় পর্বতগুলো বাইরে থেকে এনে পৃথিবীতে গেঁড়ে দেওয়া হয়েছে। বাস্তবে ঘটেছে উল্টোটি। কুরআন বলছে পাহাড় পর্বতগুলো (বাইরে থেকে এনে) পৃথিবীর উপর গেঁড়ে দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ উপর থেকে নিচের দিকে গেঁড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে পাহাড় পর্বতগুলো নিচের দিক থেকে উপর দিকে উঠে এসেছে। অর্থাৎ বাস্তবে কুরআনের কথার বিপরীতটি হয়েছে।
পাহাড়কে পেরেক বলাটা সব থেকে বড় পাগলের কথাবার্তা। কোথায় পেঁরেক আর কোথায় পাহাড়! কুরআন কি কোন পাগলে লিখেছে নাকি?
আপনি কি পৃথিবীকে সমতল কাঁঠ পেয়েছেন যে সেখানে পাহাড়ের পেঁড়েক মারবেন আর পৃথিবী কাঁঠের মত কেঁপে উঠবে? এই চিন্তাগুলো কি কোন সুস্থ মানুষের চিন্তা বলে আপনি মনে করেন? আল্লাহ কি অসুস্থ ম্যাড নাকি যে এমন উল্টাপাল্টা কথা বলেছে্?
আর পাহাড়ের সাথে পেরেকের সম্পর্কটাই বা কি? পৃথিবীকে কি কোন কিছুর সাথে আটকে রাখতে হয় নাকি যে একে পেঁরেক মেরে স্থির রাখতে হবে? এগুলো মোটেও কোন সুস্থ মাথার কথা বার্তা নয়!
পৃথিবী কোন কাঠ নয়। আর পাহাড় পর্বতগুলোও কোন পেঁরেক নয় যে পৃথিবীতে পাহাড় পর্বত দিয়ে স্থির রাখতে হবে বা পাহাড় পর্বত দিয়ে পৃথিবীকে কোন কিছুর সাথে আটকে দিতে হবে। সমতল কিছুতে পেঁরেক লাগালে যেমন সেটা কেঁপে উঠবে সেটা গোলাকার হলেও কেঁপে উঠবে। তাই আপনি যেমনটি দাবী করেছেন যে, "পৃথিবী যদি গোলাকার হয় তবেই পৃথিবীতে পেঁরেক লাগানো যাবে সমতল হলে যাবে না এবং গোলাকার পৃথিবীতেই পেঁরেক লাগালে পৃথিবী কেঁপে উঠবে সমতল হলে কেঁপে উঠবে না, পৃথিবী যদি সমতল হয় তখন পেরেক লাগানোর জন্য আরো বেশি কাঁপত" কথাটি কুসংস্কারাচ্ছন্ন বোঁকা আস্তিকদেরই মানায়। কোন সুস্থ মানুষ এমন অবাস্তব বোঁকা কথা বলবে না। পৃথিবী এতো বিশাল যে এটির উপর যত বড় পেঁরেকই আপনি গেঁড়ে দিন না কেন এটি কেঁপে উঠবে না। আর পৃথিবী গোলাকার বলেই এর উপর পাহাড় পর্বতকে গেঁড়ে দিয়েও নড়াচড়া করা বন্ধ করা যায় না। পৃথিবী গোলাকার বলেই এটি কোন দিকে ঢলে পড়ে না এবং ঢলে পড়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য পাহাড় পর্বতের ভার দিয়ে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করা যায় না। পৃথিবী সমতল নয় যে একে ঢলে পড়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এর উপর পাহাড় পর্বতের ভার দিতে হবে অথবা পাহাড় পর্বতকে পেঁরেকের মতো গেঁড়ে দিতে হবে! পৃথিবী গোলাকার বা গোলক আকার বলেই এটি যেমন কোন দিকে কাঁত হয়ে ঢলে যায় না ঠিক তেমনি পৃথিবী কোন সমতল কাঠও নয় যে এর উপর পাহাড় পর্বতের মতো কোন কিছুকে পেঁরেকের মতো গেঁড়ে দিয়ে এর ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে কুরআন লেখকের প্রাচীণ ধারণা ছিল যে পৃথিবী সমতল তাই এটি কোন দিকে কাঁত হয়ে ঢলে পড়তে পারে। তাই এর উপর পাহাড় পর্বত স্থাপন করা হয়েছে যাতে এটি কোন দিকে কাঁত হয়ে ঢলে পরে না যায়। এটি প্রাচীণ মানুষের ভ্রান্ত ধারণা। যা কুরআন লেখকের অজ্ঞতার সাথে সাথে কুরআনে ঢুকে গেছে।
আপনি কি বিজ্ঞানী
নাকি যে আপনি পৃথিবী ডিম্বাকার সেটা আবিষ্কার করে ব্যাখ্যা দিলেন!
প্রথমত, পৃথিবী
ডিম্বাকৃতির নয় পৃথীবী কমলার আকৃতি অথবা অসম ফুটবল আকৃতির। মুসলমানরা দাবী করলো পৃথিবী
ডিম্বাকৃতির অমনি কি ডিম্বাকৃতির হয়ে যাবে? কোন বিজ্ঞানীই পৃথিবীকে ডিম্বাকৃতির বলে
না। এটা শুধু মুসলমানরাই বলে। যদি এটা সত্যিই হতো হবে পৃথিবীতে মুসলমানরাই বড় বিজ্ঞানী
হতো।
মেরু অঞ্চলে সামান্য
একটু চাপা হওয়া এবং পৃথিবীর আকৃতি ডিম্বাকৃতির হয়ে যাবার মধ্যে আকাশ পাতালের পার্থক্য।
ডিম্বাকৃতির হওয়ার
জন্য পৃথিবীকে মেরু অঞ্চলের দিকে বিষুবীয় অঞ্চলের তুলনায় ৬০% চাপা হতে হবে। কিন্তু
পৃথিবী এক্ষেত্রে মাত্র ৫% চাপা। অর্থাত পৃথিবী পুরোপুরি কমলা আকৃতির।
আর তাই বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীকে ডিম্বাকৃতির বলে দাবী করে না। কিন্তু মুসলমানরা এই ভুল তথ্যগুলো প্রচার করে
মুসলমানদেরকে বোঁকা বানিয়ে রাখে।
আপনারা চোখ কান
বন্ধ করে সেই মিথ্যে কথাগুলোকে বিশ্বাস করে যান।
কুরআনে সূরা নাযিয়াতের
৩০ নং আয়াতে বলা হয়েছে, "পৃথিবীকে বিস্তৃত করা হয়েছে"। কিন্তু মুসলমানরা
এই আয়াতের ভিন্ন অর্থ করে বলে যে এই আয়াতে "পৃথিবীকে ডিম্বাকার করা হয়েছে"
এই কথাটি বলা হয়েছে। যা ছিল বিস্তৃত সেটা হয়ে গেলো ডিম বা ডিম্বাকার (মনে হয় ঘোড়ার
ডিম)।
কুরআনের অর্থের
পরিবর্তন করে অথবা বিকৃত করে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে নতুন করে কুরআনের নতুন অর্থ করলেই
কি পৃথিবী ডিম্বাকার হয়ে যাবে? মুসলমানরা না হয় জালিয়াতি করে কুরআনের অর্থ বদলে দিলো;
কিন্তু তাই বলে কি গোলাকার পৃথিবীও ডিম হয়ে যাবে?
বিজ্ঞানীরা গবেষনা
করে বের করে দেখিয়েছেন যে পৃথিবী কমলা আকৃতির। কমলার আকৃতি যেমন উপর নিচে কিছুটা চ্যাপ্টা
মাঝের অঞ্চলের তুলনায় ঠিক একই ভাবে পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে কিছুটা চ্যাপ্টা বিষুবীয় অঞ্চলের
তুলনায়। অপর দিকে ডিমের আকৃতি হলো মাঝ বরাবর চ্যাপ্টা আর মেরু এলাকা সুঁচালো। অর্থাৎ
পৃথিবীর আকৃতির বিপরীত। অথচ কুরআনের বিস্তৃত পৃথিবীকে অনুবাদের বিকৃতি করে ডিম্বাকৃতির
পৃথিবী বানানোর পর বাস্তব পৃথিবীকেও কমলার আকৃতি থেকে বিকৃত করে ডিম্বাকৃতির করার
জন্য মুসলমানরা আদাজল খেয়ে নেমেছে। আর চাপাবাজির মাধ্যমে পৃথিবীকে ডিম্বাকৃতির বানানোর
চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু তারা কুরআনের অর্থকে যেমন খুশি তেমন সাজো’র মতো করে কি
পৃথিবীকেও যেমন খুশি তেমন ডিম বানাতে পারবে? কুরআনের অর্থকে না হয় যেমন খুশি তেমন ডিম
বানানো গেলো তাই বলে কি কমলার আকৃতির বিশাল পৃথিবীটাও ডিম হয়ে যাবে?
বাস্তবে পৃথিবী
ডিম্বাকৃতির নয় বরং ডিম্বাকৃতির বিপরীত। ডিম যেমন মেরু অঞ্চলে সরু বা সুঁচালো এবং
মাঝ বরাবর চ্যাপ্টা ঠিক তার বিপরীত আকৃতির হলো পৃথিবী যার মাঝ বরাবর মোটা এবং মেরু
অঞ্চল কিছুটা চ্যাপ্টা। অর্থাৎ ডিমের আকৃতির সম্পূর্ণ বিপরীত আকৃতির হলো পৃথিবীর আকৃতি।
পৃথিবীর আকৃতিকে এজন্যই ডিমের আকৃতির বলা হয় না। বরং পৃথিবীর আকৃতিকে কমলা লেবুর আকৃতি
বলা হয়। কারণ কমলার আকৃতি হলো মাঝ বরাবর মোটা এবং মেরুর দিকে কিছুটা চ্যাপ্টা। ঠিক
পৃথিবীর আকৃতির মতো। অথচ ডিমের মেরু দিকে সুঁচালো বা সরু থাকে এবং মাঝ বরাবর চ্যাপ্টা
থাকে। আবার পৃথিবীর আকৃতি কখনই ডিমের আকৃতির হতে পারবে না। কারণ পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে
অর্থাৎ প্রান্তে সামান্য পরিমাণ চ্যাপ্টা কিন্তু ডিমের মাঝে বিশাল পরিমাণ চ্যাপ্টা।
এমনকি পৃথিবীর কোথাও ডিমের মতো সরু বা সুঁচালো প্রান্ত নেই। বরং পৃথিবীর প্রান্ত
চ্যাপ্টা সরু বা সুঁচালো নয় যেমনটি ডিমের মাঝে রয়েছে। অথচ পৃথিবীর প্রান্ত সরুতো
নয়ই উপরন্তু চ্যাপ্টা। অর্থাৎ ডিমের আকৃতির বিপরীত হলো পৃথিবীর আকৃতি।
কিন্তু গাঁড় ত্যাঁড়া
মুসলমানদেরকে শত বার বোঝানোর পড়েও এরা তাদের মিথ্যা দাবী (পৃথিবী ডিমের আকারের) করা
বাদ দেয় না। বরং এই ভ্রান্ত ও মিথ্যা কথাটাই সব মুসলমানদের কাছে প্রচার করে। যদিও তাদের
কথাটা সম্পূর্ণই বিজ্ঞানীদের দাবীর বিপরীত দাবী এবং সম্পূর্ণই মিথ্যা।
শত শত বার বোঝানোর
পড়েও গাঁড় ত্যাড়া মুসলমানরা তাদের মিথ্যা দাবী থেকে সরে আসে না। তারা তাদের অন্ধবিশ্বাসকে
নিয়েই কুসংস্কারের অন্ধকারে থাকবে। কিন্তু বিজ্ঞানের আলোতে আসবে না। উপরন্তু নানা
ত্যাঁনা প্যাঁচানো কুযুক্তি, অপযুক্তির বাহার নিয়ে বসবে বিজ্ঞান বিরোধী মতবাদ প্রচার
করতে।
No comments:
Post a Comment