Translate

Search This Blog

বিশেষ সতর্কবার্তাঃ

এই ব্লগটি নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সন্দেহবাদী, মুক্তমনা এবং স্বাধীনচেতা মানুষদের জন্য। যারা যেকোন বিষয়ের সমালোচনা সহ্য করার মত ক্ষমতা রাখে। যদি কোন ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিক এই ব্লগটিতে আসে তবে তার ধর্মানুভূতি নামের অদ্ভূত দূর্বল অনিভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্লগ লেখক দায়ী থাকবে না। ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিকদের নিজ দায়িত্বে তাদের দূর্বল ধর্মানুভূতিকে সংরক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে। কারো ধর্মানুভূতি নামের অযৌক্তিক অনুভূতি আহত হবার জন্য কোন ক্রমেই ব্লগার বা লেখককে দায়ী করা যাবে না। যদি কোন অতি দুর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগে ভূল করে ঢুকে পরেন এবং তিনি তার অনুভূতিকে দূর্বল ভাবেন অর্থাৎ যিনি তার ধর্মের উপযুক্ত সমালোচনা সহ্য করতে অপারগ, তাকে বিনীত ভাবে এই ব্লগটি থেকে প্রস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পরেও যদি কোন দূর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগটিতে ঘুরাফেরা করেন এবং তার ফলে তার দূর্বল ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হন তবে কোন ক্রমেই এবং কোন ক্রমেই ব্লগের মালিক, 'আমি নাস্তিক' দায়ী থাকবে না।

Monday, November 16, 2015

কোরআনের বর্ণনায় সমতল পৃথিবী - পর্ব ২



কোরআনের বর্ণনায় সমতল পৃথিবী - পর্ব

পর্ব ১-এর পর থেকে...
(১৩). সুরা রাদ; আয়াত :
      তিনিই ভূমন্ডলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পাহাড় নদ-নদী স্থাপন করেছেন এবং প্রত্যেক ফলের মধ্যে দু'দু প্রকার সৃষ্টি করেছেন l তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আবৃত করেন l এতে তাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা চিন্তা করে l

(১৩). সুরা রাদ; আয়াত :
      "তিনিই ভুতলকে বিস্তৃত করেছেন এবং ওতে পর্বত নদী সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়; তিনি দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন; এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে l" (অনুবাদ- প্রফেসর : মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান)

(১৩). সুরা রাদ; আয়াত :
      "আর তিনিই সেইজন যিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন, আর তাতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা নদ-নদী l আর প্রত্যেক ফলের ক্ষেত্রে- তার মধ্যে তিনি সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায় দুটি-দুটি l তিনি রাত্রিকে দিয়ে দিনকে আবৃত করেন l নি:সন্দেহ এতে সাক্ষাত নিদর্শন রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা চিন্তা করে l" (অনুবাদ:- : জহুরুল হক)


SURA 13. Rad, or Thunder
3. “And it is He who spread out the earth, and set thereon mountains standing firm and [flowing] rivers: and fruit of every kind He made in pairs, two and two: He draweth the night as a veil o'er the Day. Behold, verily in these things there are signs for those who consider!” (Translation by Abdullah Yusuf Ali)

SURA 13. AR-RAD (THE THUNDER)
3. “And He it is Who spread out the earth and placed therein firm hills and flowing streams, and of all fruits He placed therein two spouses [male and female]. He covereth the night with the day. lo! herein verily are portents for people who take thought.” (Translation by Mohammad Marmaduke Pickthal)

এই আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পর্বতমালা নদ-নদী স্থাপন করেছেন l আর প্রত্যেক ফল তৈরী করেছেন জোড়ায় জোড়ায় দু-দু প্রকারে l আল্লাহ দিনকে রাত্রির দ্বারা আবৃত করেন বা ঢেকে দেন l আর এতে নিদর্শন রয়েছে সেইসব লোকদের জন্য যারা চিন্তা-ভাবনা করেন এসব নিয়ে l
অর্থাত আল্লাহ পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন এবং এতে পর্বত নদ-নদী স্থাপন করেছেন l আর সব ফলের মধ্যে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন l আল্লাহ দিনকে রাত দিয়ে ঢেকে দেন l আর এতে নিদর্শন আছে যারা চিন্তা করে অর্থাত যারা মুসলমান l
লক্ষ করুন এখানেও আল্লাহ বলেছেন যে আল্লাহ পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন এবং এতে পর্বত নদ-নদী সৃষ্টি করেছেন l অর্থাত আল্লাহ পৃথিবীকে বিস্তৃত করে তৈরী করেছেন l

(২০). সুরা ত্ত্বায়াহা; আয়াত ৫৩:
      "তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে শয্যা করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উত্পন্য করেছি l"

(২০). সুরা ত্ত্বায়াহা; আয়াত ৫৩:
     "যিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং তাতে করে দিয়েছেন তোমাদের চলবার পথ, তিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন এবং আমি ত়া দ্বারা বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ উত্পন্ন করি l" (অনুবাদ- প্রফেসর : মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান)

(২০). সুরা ত্ত্বায়াহা; আয়াত ৫৩:
      "যিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীটাকে করেছেন একটি বিছানা, আর তোমাদের জন্য এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন পথসমূহ, আর তিনি আকাশ থেকে পাঠান পানি l তারপর এর দ্বারা আমরা উত্পাদন করি জোড়ায় জোড়ায় বিভিন্ন ধরনের গাছপালা l"
(অনুবাদ:- : জহুরুল হক)

SURA 20. Ta Ha
53. "He Who has, made for you the earth like a carpet spread out; has enabled you to go about therein by roads [and channels]; and has sent down water from the sky." With it have We produced diverse pairs of plants each separate from the others. (Translation by Abdullah Yusuf Ali)

SURA 20. TA-HA
53. Who hath appointed the earth as a bed and hath threaded roads for you therein and hath sent down water from the sky and thereby We have brought forth divers kinds of vegetation, (Translation by Mohammad Marmaduke Pickthal)

উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে যে আল্লাহ মানুষের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানা অথবা পৃথিবীকে বিছানার মত বিছানো হয়েছে l আর এতে বিভিন্ন চলার পথ তৈরী করে দিয়েছেন l এবং আকাশ থেকে বৃষ্টির মাধ্যমে পানি বর্ষণ করেছেন l আর এর দ্বারা আল্লাহর হুকুমে তার ফেরেশতারা বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উত্পন্ন করে l
অর্থাত আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানা করে দিয়েছেন বা বিছানা যেভাবে বিছানো হয় সেভাবে বিছিয়েছেন l আর এতে বিভিন্ন চলার পথ তৈরী করেছেন মানুষের চলার জন্য l আকাশ থেকে বৃষ্টির মাধ্যমে পানি প্রেরণ করেন যেটা দিয়ে বিভিন্ন উদ্ভিদ উত্পন্ন করা হয় l

লক্ষ করুন এখানে বলা হয়েছে যে আল্লাহ পৃথিবীকে করেছেন বিছানা অথবা বিছানা যেভাবে বিছানো হয় সেভাবে বিছিয়েছেন l

(৭১). সুরা নূহ; আয়াত ১৯ ২০ :
   "আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্যে ভূমিকে করেছেন বিছানা l"
   "যাতে তোমরা চলাফেরা কর প্রশস্থ পথে l"

(৭১). সুরা নূহ; আয়াত ১৯ ২০ :
    "এবং আল্লাহ তোমাদের জন্যে ভূমিকে করেছেন বিস্তৃত- "
    "যাতে তোমরা এর প্রশস্ত পথে চলাফেরা করতে পারো l"  (অনুবাদ- প্রফেসর : মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান)

(৭১). সুরা নূহ; আয়াত ১৯ ২০ :
    "আর আল্লাহ তোমাদের জন্য পৃথিবীটাকে করেছেন সুবিস্তৃত,
    "যেন তোমরা তাতে চলতে পার প্রশস্ত পথে l"  (অনুবাদ:- : জহুরুল হক)

SURA 71. Nuh, or Noah
19. "'And Allah has made the earth for you as a carpet [spread out],
20. "'That ye may go about therein, in spacious roads.'" (Translation by Abdullah Yusuf Ali)

SURA 71. NOOH
19. “And Allah hath made the earth a wide expanse for you”
20. “That ye may thread the valley-ways thereof.”  (Translation by Mohammad Marmaduke Pickthal)

এই আয়াত দুটি অনুযায়ী আল্লাহ ভূমিকে বা পৃথিবীকে করেছেন বিছানার মত বিছানো বা কার্পেটের মত বিছানো অথবা প্রশস্ত ভাবে প্রসারিত l যেন মানুষ চলাফেরা করতে পারে প্রশস্ত পথে l
অর্থাত আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানার মত বিছিয়েছেন বা কার্পেটের মত বিছিয়েছেন অথবা প্রসস্তভাবে প্রসারিত কতেছেন l মোট কথা আল্লাহ পৃথিবীকে সমতলভাবে বিছিয়েছেন যেন মানুষ প্রশস্ত পথে চলাচল করতে পারে l
এই আয়াতে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে যে পৃথিবীকে সমতলের মত করে তৈরী করা হয়েছে যেন মানুষ সমতল প্রশস্ত পথে চলাফেরা করতে পারে l মানুষের ভালোভাবে চলাফেরা করার জন্যই আল্লাহ পৃথিবীকে সমতলভাবে বিছিয়েছেন l
অর্থাত আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানার মত বা কার্পেটের মত অথবা প্রশস্ত ভাবে পৃথিবীকে বিছিয়েছেন l মানে সমতল করেছেন l

(৪৩). সুরা আয-যুখরুফ; আয়াত ১০:
      "যিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং তাতে তোমাদের জন্যে করেছেন পথ, যাতে তোমরা গন্তব্যস্থলে পৌছতে পর l"

(৪৩). সুরা আয-যুখরুফ; আয়াত ১০:
      "যিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে করেছেন শয্যা এবং ওতে করেছেন তোমাদের চলার পথ যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পারো; "  (অনুবাদ- প্রফেসর : মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান)

(৪৩). সুরা আয-যুখরুফ; আয়াত ১০:
      "যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন এক খাটিয়া, আর এতে তৈরী করেছেন তোমাদের কারণে পথসমূহ, যাতে তোমরা পথের দিশা পেতে পারো;"  (অনুবাদ:- : জহুরুল হক)

SURA 43. Zukhruf, or Gold Adornments
10. “[Yea, the same that] has made for you the earth [like a carpet] spread out, and has made for you roads [and channels] therein, in order that ye may find guidance [on the way];”  (Translation by Abdullah Yusuf Ali)

SURA 43. AZ-ZUKHRUF
10. “Who made the earth a resting-place for you, and placed roads for you therein, that haply ye may find your way; (Translation by Mohammad Marmaduke Pickthal)

এই আয়াতে বলা হয়েছে যে আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানা বা খাটিয়া করেছেন অথবা কার্পেট হিসেবে বিছিয়েছেন বা প্রসারিত করেছেন l আর এতে চলার জন্য পথ তৈরী করেছেন যাতে মানুষ সহজে পথ খুঁজে পেতে পারে বা গন্তব্যস্থলে পৌছতে পারে l
অর্থাত আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানা বা খাটিয়া অথবা কার্পেটের মত সমতলভাবে বিছিয়েছে আর এতে পথ তৈরী করেছেন যেন মানুষ সহজে পথ খুঁজে পায় এবং গন্তব্যস্থলে পৌছে l
এর মানে আল্লাহ পৃথিবীকে সমতল করেছেন এবং এতে পথ তৈরী করেছেন যেন মানুষ সহজে পথ খুঁজে পায় আর সহজেই গন্তব্যস্থলে পৌছতে পারে l যদি উচুনিচু করে পৃথিবীকে তৈরী করতো সবজায়গায় অর্থাত সব জায়গায় পাহাড় পর্বত তৈরী করতো তাহলে মানুষের পথ খুঁজে পেতে অনেক সমস্যা হত l আর তাই আল্লাহ পৃথিবীকে সমতল করে তৈরী করেছেন l

(৭৯). সুরা আন-নাযিয়াত; আয়াত ৩০, ৩১ ৩২ :
       "পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন l"
    "তিনি এর মধ্য থেকে এর পানি ঘাম নির্গত করেছেন l"
     "পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন l"

(৭৯). সুরা আন-নাযিয়াত; আয়াত ৩০, ৩১ ৩২ :
       "এবং পৃথিবীকে এরপর বিস্তৃত করেছেন l"
        "তিনি তা থেকে বের করেছেন পানি উদ্ভিদ,"
       "আর পাহারসমুহকে তিনি দৃঢ়ভাবে গেড়ে দিয়েছেন,"  (অনুবাদ- প্রফেসর : মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান)

(৭৯). সুরা আন-নাযিয়াত; আয়াত ৩০, ৩১ ৩২ :
       "আর পৃথিবী- এর পরে তাকে প্রসারিত করেছেন l "
       "এর থেকে তিনি বের করেছেন তার জল, আর তার চারণভূমি l"
      "আর পাহাড় পর্বত - তিনি তাদের মজবুতভাবে বসিয়ে দিয়েছেন, "  (অনুবাদ:- : জহুরুল হক)

SURA 79. Naziat, or Those Who Tear Out :
30. “And the earth, moreover, hath He extended [to a wide expanse];”
31. “He draweth out therefrom its moisture and its pasture;”
32. “And the mountains hath He firmly fixed;-“  (Translation by Abdullah Yusuf Ali)

SURA 79. AN-NAZIAT (THOSE WHO DRAG FORTH, SOUlSNATCHERS):
30. “And after that He spread the earth,”
31. “And produced therefrom the water thereof and the pasture thereof,”
32. “And He made fast the hills,”  (Translation by Mohammad Marmaduke Pickthal)

এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ বলেছেন যে আল্লাহ পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন বা প্রসারিত করেছেন l আর এর থেকে পানি উদ্ভিদ বের করেছেন ; এবং এতে দৃঢ়ভাবে পাহাড়-পর্বত গেথে দিয়েছেন বা স্থাপন করেছেন l
অর্থাত আল্লাহ পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন বা প্রসারিত করেছেন প্রশস্ত ভাবে l এবং এর মধ্য থেকে পানি উদ্ভিদ বের করেছেন আর এর উপর পাহাড় গেড়ে দিয়েছেন যেভাবে পেরেককে গেথে দেওয়া হয় বা দৃঢ়ভাবে স্থাপন করেছেন l
এখানে লক্ষ করুন- আল্লাহ পৃথিবীকে বিস্তৃত বা প্রসারিত করেছেন l

এখানে একটা কথা উল্লেখ না করলেই নয়; আর সেটা হচ্ছে এই সুরার ৩০ নাম্বার আয়াতের অর্থ বর্তমান মুসলমানরা বদলে দিয়েছে l তারা বলে যে এখানে বলা হয়েছে যে এরপর আল্লাহ পৃথিবীকে করেছেন ডিম্বাকৃতির l
তাদের যুক্তি হলো যে এখানে ব্যবহৃত আরবি 'দাহাহা' শব্দটি এসেছে মূল শব্দ 'দুইয়া' থেকে l আর এই দুইয়া শব্দটির অর্থ ডিম বা উটপাখির ডিম l কিন্তু দাহাহা শব্দটির অর্থ হচ্ছে বিস্তৃত করা বা প্রসারিত করা l আর বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত মুসলমানরা এর অর্থ করেছে বিস্তৃত বা প্রসারিত পৃথিবী l কিন্তু একবিংশ শতাব্দিতে এসে তারা এর অর্থ করছে ডিম্বাকৃতির পৃথিবী l
কিন্তু পুরো কোরআনের কোথাও পাবেন না যে পৃথিবীর আকৃতি ডিম্বাকৃতির বলা হয়েছে l সব জায়গায় দেখবেন যে বলা হয়েছে বিস্তৃত বা প্রশস্তভাবে প্রসারিত, বিছানার মত বিস্তৃত বা বিছানার মত, কার্পেটের মত চিছানো বা খাটোয়া বা শয্যার মত সমতল বিছানো হয়েছে l
তাই এখানে বিস্তৃত বা প্রসারিত পৃথিবী এই অনুবাদটাই ১০০% সঠিক l
অর্থাত এখানে বলা হয়েছে যে আল্লাহ পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন l

(৯১). সুরা আশ-শামস; আয়াত :
      "শপথ পৃথিবীর এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন তার l"

(৯১). সুরা আশ-শামস; আয়াত :
       "শপথ পৃথিবীর এবং তার যিনি তা বিস্তৃত করেছেন, " (অনুবাদ- প্রফেসর : মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান)

(৯১). সুরা আশ-শামস; আয়াত :
     "আর পৃথিবীর কথা যিনি তাকে প্রসারিত করেছেন,  " (অনুবাদ:- : জহুরুল হক)

SURA 91. Shams, or The Sun
6. “By the Earth and its [wide] expanse: “(Translation by Abdullah Yusuf Ali)

SURA 91. ASH-SHAMS
6. And the earth and Him Who spread it, (Translation by Mohammad Marmaduke Pickthal)

এই আয়াতে বলা হয়েছে যে পৃথিবী যে পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন বা প্রসারিত করেছেন তার শপথ l
অর্থাত পৃথিবী যিনি একে বিস্তৃত করেছেন তার শপথ l
লক্ষ করুন এখানে বলা হয়েছে পৃথিবীকে বিস্তৃত বা প্রসারিত করা হয়েছে l

(৬৭). সুরা আল মূলক; আয়াত ১৫ :
      "তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে সুগম করেছেন, অতএব তোমরা তার কাধে বিচরণ কর এবং তার দেয়া রিযিক আহার কর l তারই কাছে পুনরুজ্জীবিত হবে l"

(৬৭). সুরা আল মূলক; আয়াত ১৫ :
      "তিনি তো তোমাদের জন্যে যমীনকে চলাচলের উপযোগী করেছেন; অতএব তোমরা ওর দিক-দিকন্তে রাস্তাসমুহে বিচরণ কর এবং তার দেয়া রিযিক হতে আহার কর, পুনরুত্থান তো তারই নিকট l" (অনুবাদ- প্রফেসর : মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান)

(৬৭). সুরা আল মূলক; আয়াত ১৫ :
      "তিনিই সেইজন যিনি পৃথিবীটাকে তোমাদের জন্য করে দিয়েছেন শান্ত, ফলে তোমরা এর দিগদিগন্তে বিচরণ করছ এবং তার জীবিকা থেকে আহার করছ l আর তারই কাছে পুনরুত্থান l" (অনুবাদ:- : জহুরুল হক)

SURA 67. Mulk, or Dominion
15. It is He Who has made the earth manageable for you, so traverse ye through its tracts and enjoy of the Sustenance which He furnishes: but unto Him is the Resurrection. (Translation by Abdullah Yusuf Ali)

SURA 67. Al-MUlK
15. He it is Who hath made the earth subservient unto you, so Walk in the paths thereof and eat of His providence. And unto Him will be the resurrection [of the dead]. (Translation by Mohammad Marmaduke Pickthal)

এই আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ পৃথিবীকে সুগম করেছেন বা চলাচলের উপযুগী করেছেন অথবা শান্ত করে দিয়েছেন যেন মানুষ খুব ভালো ভাবে আরামে পথ চলতে পারে আর দিগ-দিগন্তে যেতে পারে l আর এর থেকে খাবার সংগ্রহ করতে পারে l আর মানুষ পৃথিবীর বুক থেকেই মরার পরে পুনরায় উত্থিত হবে l

অর্থাত আল্লাহ পৃথিবীকে সুগম বা চলাচলের উপযোগী করেছেন যেন মানুষ ভালো ভাবে চলাফেরা করতে পারে l যদি পৃথিবীকে এবড়োথেবড়ো করে দিত বা পৃথিবীর সব জায়গায় পাহাড় পর্বত গিজগিজ করত তবে তাতে মানুষের চলাচলের জন্য অসুবিধা হত l আর তাই আল্লাহ একে সুগম বা চলাচলের উপযোগী করে দিয়েছেন l
লক্ষ করুন এখানে পৃথিবীর সমতল রূপের কথাই ইঙ্গিত করা হয়েছে l

এবার আমরা উপরিউক্ত আয়াত সমূহ পর্যালোচনা করব :
৪০:৬৪ নাম্বার আয়াত অনুযায়ী
পৃথিবীকে আল্লাহ মানুষের বাসস্থান করেছেন আর আকাশকে করেছেন ছাদ l
০২:২২ অনুযায়ী
আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানা বা শয্যার মত করে তৈরী করেছেন l
১৫:১৯ অনুযায়ী
আল্লাহ পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন বা প্রসারিত করেছেন l
৫০: অনুযায়ী
আল্লাহ ভূমিকে তথা পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন বা প্রসারিত করেছেন l এবং এতে পাহাড় স্থাপন করেছেন l
৭৮: অনুযায়ী
আল্লাহ প্রশ্ন রেখে বলেছেন তিনি ভূমিকে তথা পৃথিবীকে বিছানার মত করে বানিয়েছেন l আর পর্বতকে প্রেরেকের মত বা খুটির মত করে গেড়ে দিয়েছেন l
৮৮: ১৯ ২০ অনুযায়ী
আল্লাহ মানুষকে লক্ষ করতে বলেছেন যে পাহাড়-পর্বতের দিকে সেটা কিভাবে স্থাপন করা হয়েছে আর পৃথিবীর দিকে যে সেটা কিভাবে সমতল বিছানো হয়েছে অথবা কিভাবে তাকে প্রশস্ত ভাবে প্রসারিত করা হয়েছে l
৫১:৪৮ অনুযায়ী
আল্লাহ ভূমিকে বিছিয়েছেন (যেভাবে বিছানা বা কার্পেট বিছানো হয় সেভাবে ) l আর আল্লাহ খুব ভালো বিস্তারকারী বা বিস্তার করতে পারেন l
১৩: অনুযায়ী
আল্লাহ ভূমি তথা পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন আর এতে পর্বত এবং নদ-নদী স্থাপন করেছেন l
২০:৫৩ অনুযায়ী
আল্লাহ পৃথিবীকে করেছেন বিছানা অর্থাত একে বিছানার মত করে বিছিয়েছেন আর এতে পথসমূহ  তৈরী করেছেন l
৭১: ১৯ ২০ অনুযায়ী
আল্লাহ ভূমিকে তথা পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন প্রশস্ত ভাবে যেভাবে বিছানা বা কার্পেট বিছানো হয় l এটাকে এভাবে বিস্তৃত করেছেন যাতে মানুষ প্রশস্ত পথে চলাফেরা করতে পারে l

৪৩:১০ অনুযায়ী
আল্লাহ পৃথিবীকে করেছেন বিছানার মত (অর্থাত একে বিছানা বা কার্পেটের মত করে বিছিয়েছেন) l
আর এতে বিভিন্ন পথ তৈরী করেছেন যাতে মানুষ সঠিকভাবে বা ভালোভাবে পথ খুঁজে পায় l
৭৯: ৩০, ৩১ ৩২ অনুযায়ী
আল্লাহ পৃথিবীকে বিস্তৃত তথা প্রসারিত করেছেন l এর ভিতর থেকে পানি বের করেছেন l আর এতে পাহাড়-পর্বতকে দৃঢ়ভাবে গেড়ে দিয়েছেন পেরেকের মত করে l
৯১: অনুযায়ী
আল্লাহ বিস্তৃত বা প্রসারিত পৃথিবীর কথা বলেছেন l
৬৭:১৫ অনুযায়ী
আল্লাহ পৃথিবীকে চলাচলের জন্য সুবিধাজনক করে তৈরী করেছেন (অর্থাত সমতল করে তৈরী করেছেন )l

উপরিউক্ত আয়াত সমূহ থেকে এটা স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে যে আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানা বা কার্পেটের মত করে বিছিয়েছেন বা একে প্রশস্ত ভাবে প্রসারিত করেছেন এবং এতে পথ তৈরী করেছেন যেন মানুষ এতে সহজে চলাফেরা করতে পারে l এখানে নদী বা সমুদ্র পথ এবং স্থল পথের কথা বলা হয়েছে l এখন যদি আল্লাহ বিস্তৃত করে বা বিছানার মত করে পৃথিবীকে না তৈরী করতো তবে এতে মানুষের চলাচল করতে খুব সমস্যা হতো l যেমন যদি এতে পাহাড়-পর্বত থাকতো সব জায়গায় অথবা উচুনিচু থাকতো সবখানে তবে মানুষ তার গন্তব্যস্থল খুঁজে পেতো না আর সহজে গন্তব্যস্থলে পৌছতে পারত না l আর তাই আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানা বা কার্পেটের মত করে বিছিয়েছে বা প্রশস্ত ভাবে প্রসারিত করেছেন l অর্থাত আল্লাহ পৃথিবীকে সমতল ভাবে বিছিয়েছেন বা সমতল করেছেন যেন মানুষ সহজে পথ চলতে পারে l

উপরিউক্ত সবগুলো আয়াতে বলা হয়েছে যে পৃথিবীকে বিছানা বানানো হয়েছে বা কার্পেট বা বিছানার মত করে বিছানো হয়েছে অথবা একে প্রসারিত করা হয়েছে প্রশস্ত ভাবে l আর এতে পর্বতকে পেরেকের মত বা খুটির মত গেড়ে দেয়া হয়েছে l কিন্তু অন্য কোন রূপ অথবা অন্য কোনো প্রকারের কথা বলা হয়নি পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে l

সুতরাং আল্লাহ বলছেন যে তিনি পৃথিবীকে বিছানার মত বা কার্পেটের মত বিছিয়েছেন বা একে প্রশস্ত ভাবে প্রসারিত করেছেন শুধুমাত্র মানুষের চলাচলের সুবিধার জন্য l মানুষ যেন ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারে সেজন্যই তিনি পৃথিবীকে সমতলভাবে বিছিয়েছেন l অন্য কোনো ভাবে তিনি পৃথিবীকে তৈরী করেননি l যদি অন্য কোনো প্রকারে পৃথিবী তৈরী করতেন যেমন এবড়ো থেবড়ো, উচু নিচু , পাহাড়-পর্বত, খাদ থাকতো সব জায়গায় তবে মানুষ সহজে চলাচল করতে পারত না l আর তাই আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানা বা কার্পেট যেভাবে বিছানো হয় সেভাবে বিছিয়েছেন l অর্থাত সমতল করে বিছিয়েছেন l

উপরিউক্ত আয়াত সমূহ থেকে এটা স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে যে আল্লাহ মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করেই পৃথিবীকে সমতল করে সৃষ্টি করেছেন l অর্থাত আল্লাহ সমতল করে পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন l
(চলবে....)


(বি.দ্র.: লেখাটি এমকেএ আহমেদ রচিত "কোরআনের বর্ণনায় সমতল পৃথিবী- ১ম খন্ড" থেকে ধারাবাহিক ভাবে নেওয়া হচ্ছে।)

No comments:

Post a Comment