Translate

Search This Blog

বিশেষ সতর্কবার্তাঃ

এই ব্লগটি নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সন্দেহবাদী, মুক্তমনা এবং স্বাধীনচেতা মানুষদের জন্য। যারা যেকোন বিষয়ের সমালোচনা সহ্য করার মত ক্ষমতা রাখে। যদি কোন ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিক এই ব্লগটিতে আসে তবে তার ধর্মানুভূতি নামের অদ্ভূত দূর্বল অনিভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্লগ লেখক দায়ী থাকবে না। ধার্মিক, গোড়া ধার্মিক আস্তিকদের নিজ দায়িত্বে তাদের দূর্বল ধর্মানুভূতিকে সংরক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে। কারো ধর্মানুভূতি নামের অযৌক্তিক অনুভূতি আহত হবার জন্য কোন ক্রমেই ব্লগার বা লেখককে দায়ী করা যাবে না। যদি কোন অতি দুর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগে ভূল করে ঢুকে পরেন এবং তিনি তার অনুভূতিকে দূর্বল ভাবেন অর্থাৎ যিনি তার ধর্মের উপযুক্ত সমালোচনা সহ্য করতে অপারগ, তাকে বিনীত ভাবে এই ব্লগটি থেকে প্রস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পরেও যদি কোন দূর্বল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ব্যাক্তি এই ব্লগটিতে ঘুরাফেরা করেন এবং তার ফলে তার দূর্বল ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হন তবে কোন ক্রমেই এবং কোন ক্রমেই ব্লগের মালিক, 'আমি নাস্তিক' দায়ী থাকবে না।

Monday, November 23, 2015

কোরআনের বর্ণনায় সমতল পৃথিবী - পর্ব ৮

পর্ব ৭-এর পর থেকে




অনেক মুসলমান তারপরও বলে থাকে যে এই আয়াতগুলোতে ভুমিকম্পের কথা বলা হয়েছে এবং পাহাড়-পর্বতগুলোর জন্যই পৃথিবীতে ভূমিকম্প কম হয় l অর্থাত তারা বলতে চায় যে আল্লাহ পাহাড়-পর্বতগুলো স্থাপন করেছেন (পেরেকের মত বা খুটির মত গেথে দিয়েছেন l ৭৮:০৭ অনুযায়ী) এবং এর জন্যই ভূমি কম্প কম হয় l তা'না হলে আরো অনেক বেশি ভূমিকম্প হত l তাদের মতে ভূমিকম্প বিরোধী কাজ করে পাহাড়-পর্বতগুলো l
কিন্তু যদি আপনারা ওই আয়াত গুলো লক্ষ করেন তবে বুঝতে পারবেন যে সেখানে বলা হয়েছে পাহাড়-পর্বত না স্থাপন করা হলে পৃথিবী ঢলে পরতো বা ঝুকে পরতো অথবা কাত হয়ে পরতো l আবার বলা হয়েছে পাহাড়-পর্বত না স্থাপন করা হলে পৃথিবী কেপে উঠত বা আন্দোলিত হত অর্থাত ভূমিকম্প হত l তাহলে এই আয়াতগুলো দ্বারা বোঝা যায় যে পাহাড়-পর্বতগুলো থাকাতে পৃথিবী ঢলে পরছে না বা ঝুকে পরছে না অথবা কাত হয়ে পরছে না এবং এগুলো কেপে উঠছে না বা আন্দোলিত হচ্ছে না তথা ভূমিকম্প হচ্ছে না l কিন্তু আমরা জানি পাহাড়-পর্বত থাকার পরেও ভূমিকম্প কমে যায়নি l যেমন হবার কথা সেরকমই ভূমিকম্প হচ্ছে l বরং কোনো ক্ষেত্রে পাহাড়-পর্বতের জন্য ভূমিকম্প বেড়ে গেছে l
তারপরও তর্কের খাতিরে আপাতত ধরে নিলাম যে এখানে বলা হয়েছে ভুমিকম্পের কথাই l অর্থাত আল্লাহ পাহাড়-পর্বত স্থাপন করেছেন ভূমিকম্প রোধ করার জন্য l তাহলে কি তাদের দাবি অনুযায়ী আসলেই পাহাড় পর্বতগুলোর জন্য ভূমি কম্প হয় না নাকি অন্য কিছু ?
এখন আসুন কথাটা কত টুকু মিথ্যা সেটা প্রমান করি l


আমরা জানি যে ভুমিকম্পের ফলেই তৈরী হয় পাহাড়-পর্বতগুলো l অর্থাত পাহাড়-পর্বতগুলো হচ্ছে ভুমিকম্পের ফল l কখনই এটা সত্যি নয় যে পাহাড়-পর্বত স্থাপিত হয়েছে ভূমিকম্প প্রতিরুধের জন্য l বরং ভুমিকম্পের ফলেই তৈরী হচ্ছে পাহাড়-পর্বত l

আসুন দেখি বিজ্ঞানীরা কি বলে পাহাড়-পর্বতসমূহ তৈরির ব্যাপারে l
বিজ্ঞানীরা বলেন যে আমাদের এই পৃথিবী, এর অভ্যন্তরে অনেকগুলো প্লেট- বিভক্ত l এখন এই প্লেট গুলো মাঝে মাঝে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সড়ে যায় l ঠিক সেই সময় সেই প্লেটের উপরের পৃথিবী পৃষ্টে প্রচন্ড কম্পনের সৃষ্টি হয় l এই কম্পনকেই ভূমিকম্প বলা হয় l
এখন এই প্লেট গুলো যখন একটা সড়ে যায় তখন একটি প্লেট আরেকটা প্লেটের সাথে ধাক্কা খায় এবং মাঝে মাঝে একটি প্লেট আরেকটি প্লেটের উপরে উঠে পড়ে l আর সেই উপরের প্লেটের অংশটি অনেক উচুতে উঠে যায় এবং তৈরী হয় পর্বতমালার l এই সময় ওই প্লেটটির পৃথিবীর উপরের পৃষ্টে প্রচন্ড ভূমিকম্পনের সৃষ্টি হয় l আর এই ভাবেই তৈরী হয় ভলকানো (volcano) পর্বতমালা l তাহলে এখানে লক্ষ করুন এই পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ প্লেটগুলো সড়ে গিয়ে একটি আরেকটির উপর উঠে যাচ্ছে এবং ভূমিকম্পনের ফলে তৈরী হচ্ছে পর্বতমালার l তাহলে কখনই পাহাড় পর্বত ভূমিকম্পনের বিরুদ্ধে কাজ করলো না বরং পর্বতমালা তৈরী হবার সময়েই ভূমিকম্প হলো l এখানে পর্বতমালা তৈরী হওয়াই ভুমিকম্পের কারণ l



চিত্র :- ভুমিকম্পের ফলে তৈরী হচ্ছে পাহাড় পর্বত l

আবার দুটি প্লেট পরস্পরের সাথে ধাক্কা খেয়ে উপরের দিকে উঠে গেলে সেখানে তৈরী হয় পর্বতমালা l এবং সেই অঞ্চলে প্রচন্ড ভুমিকম্পের সৃষ্টি হয় l আর এভাবেই তৈরী হয় ফোল্ড পর্বতমালার (Fold  Mountain) l তাহলে এখানেও দেখা যাচ্ছে যে পর্বতমালা তৈরী হওয়ার সময়েই ভূমিকম্প হচ্ছে l অর্থাত ভূমিকম্প হওয়ার কারণ এই পর্বতগুলো তৈরী হওয়া l




চিত্র :- দুটি প্লেটের সংঘর্ষের ফলে তৈরী হচ্ছে পর্বত l

আবার কখনো কখনো কোনো জায়গায় কোনো প্লেটের কোনো অংশ ধ্বসে যায় এবং কিছু অংশ নিজে পড়ে যায় আর বাকি অংশ উপরে থেকে যায় l আর এভাবেই তৈরী হয় ফোল্ড পর্বতমালার (Block Mountain) l এসময়ে ভু-পৃষ্ঠের সে অংশে ভূমিকম্পনের সৃষ্টি হয় l অর্থাত এখানেও ভুমিকম্পের কারণ পর্বত সৃষ্টি l



   
 

চিত্র :- ভূমি ধ্বসে যেয়ে পর্বত সৃষ্টি হচ্ছে এবং এতে প্রবল ভূমিকম্প হচ্ছে l



চিত্র :- ভূমি ধ্বসের ফলে তৈরী হচ্ছে পাহাড় ফলে প্রবল ভুমিকম্পের সৃষ্টি হচ্ছে l


আবার ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত লাভা ভু-পৃষ্টের উপরি অংশে (Crust কে) প্রচন্ড শক্তিতে উপরের দিকে চাপ দেয় l এবং এসময় সেখানে পর্বতের সৃষ্টি হয় l আর ভু-পৃষ্ট প্রচন্ডভাবে কেপে উঠে l অর্থাত এক্ষেত্রেও পর্বতমালা তৈরিই ভুমিকম্পের কারণ l




চিত্র :- ভু-অভ্যন্তরের গলিত তরল লাভার প্রচন্ড ধাক্কায় তৈরী হচ্ছে পর্বত l



চিত্র :- উত্তপ্ত মেন্টল(Mantle)-এর প্রচন্ড ধাক্কায় তৈরী হচ্ছে পর্বত l

সুতরাং পাহাড়-পর্বত ভূমিকম্প রোধ করছে না বরং এই পাহাড়-পর্বত তৈরির ফলেই ভূমিকম্প হচ্ছে l অর্থাত পাহাড়-পর্বত তৈরিই ভুমিকম্পের কারণ l
আবার কোনো স্থানে পাহাড় পর্বত থাকলেই সেখানে ভূমি কম্প থেমে থাকছে না l কোথাও কোথাও এই পর্বত্গুলোর জন্যই বেশি বেশি ভূমিকম্প হচ্ছে l যেমন জাপান একটি দেশ যেখানে অনেক পর্বতমালা আছে l কিন্তু তবুও সেখানে কয়েকদিন পরপরই ভূমিকম্প হয় l
সেরকম পৃথিবীর অনেক জায়গা আছে যেখানে পাহাড়-পর্বত থাকার পরও সমানে ভূমিকম্প হচ্ছে l
আর তাই এটা ঠিক নয় যে পাহাড়-পর্বত থাকলে ভূমিকম্প হয়না l অথবা পাহাড়-পর্বত ভূমিকম্প বন্ধ করে বা কমায় l

তাই এই আয়াতগুলোতে যদি বলা হয় যে এখানে গোলক আকার পৃথিবীর ভুমিকম্পের কথা বলা হয়েছে সেটা পুরোপুরি ভুল l বরং এখানে সমতল পৃথিবীর কথা বলা হয়েছে যেখানে সমতল পৃথিবী শুন্যে ভেসে থাকার সময় এর অভ্যন্তরীণ জীব-জন্তু নিয়ে কোনো এক দিকে ঢলে বা ঝুকে অথবা কাত হয়ে যেন না পড়ে যায় সেজন্য আল্লাহ পৃথিবীতে পাহাড়-পর্বত স্থাপন করে (পেরেকের মত) পৃথিবীকে স্থির করেছেন  যেন এটি কোনো দিকে ঢলে বা ঝুকে না পড়ে অথবা কাত হয়ে না পড়ে l আবার যেন এই সমতল পৃথিবী নড়েচড়ে বা আন্দোলিত হয়ে না উঠে, সেজন্য (ভারসাম্যের জন্য) আল্লাহ পৃথিবীতে পাহাড়-পর্বত স্থাপন করেছেন (পেরেকের মত গেথে বা গেড়ে দিয়ে) l
এখানে উল্লেখ্য যে পাহাড়-পর্বত পেরেকের মত বা তাবুর খুটির মত গেথে বা গেড়ে, এরকম ভাবে নেই l বরং এগুলি ভু-অভ্যন্তর থেকে উপরের দিকে উঠে গেছে l আর এগুলো নিচের অংশও মাটির নিচে শিকড়ের(Root) মত নেই l কোনটি নিচেন দিকে গরম লাভা যেটা উপরে উঠে আসে l আবার কোনটির সমস্ত প্লেটটির সাথে সংযুক্ত যেটা মোটেও শিকর বা root -এর মত নয় l

সুতরাং এই আয়াতগুলো দিয়ে সম্পূর্ণ সমতল পৃথিবীর কথা বলা হয়েছে l
সুতরাং পৃথিবী সম্পূর্ণ রূপে সমতল l


(চলবে....)
(বি.দ্র.: লেখাটি এমকেএ আহমেদ রচিত "কোরআনের বর্ণনায় সমতল পৃথিবী- ১ম খন্ড" থেকে ধারাবাহিক ভাবে নেওয়া হচ্ছে।)

No comments:

Post a Comment