পর্ব ৪-এর পর থেকে
পৃথিবীকে বিছানা করা হয়েছে, এই কথাটা দিয়ে কি বোঝানো হয়েছে ? অযুক্তিক দাবির
উপযুক্ত জবাব l
উত্তর :
মুসলমানদের
দাবি কোরানে পৃথিবীকে বিছানা অথবা কার্পেট বলা হয়েছে কারণ পৃথিবীর ভু-অভ্যন্তরের
উত্তপ্ত গলিত পদার্থ থেকে বাচাতে আল্লাহ পৃথিবীর উপরি পৃষ্টে যে শক্ত কঠিন এবং
শীতল আবরণ বা ক্রাস্ট (crust)
তৈরী করেছেন সেটা বুঝিয়েছেন l
তাদের
ভাষ্য মতে পৃথিবীর ভু-অভ্যন্তরের গলিত উত্তপ্ত পদার্থ থেকে মানুষকে রক্ষা করার
জন্য আল্লাহ পৃথিবীর উপরিভাগে ক্রাস্ট তৈরী করে মানুষের বসবাসের উপৈযুগী করে
দিয়েছেন l তাদের মতে পৃথিবীর উপরিভাগে ক্রাস্ট আছে বলেই মানুষ বেচে আছে
ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত অবস্থা থেকে l অর্থাত পৃথিবীর
উপরিভাগে এই ক্রাস্ট তৈরী করা হয়েছে ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত পদার্থ থেকে বাচার জন্য
l যদি ক্রাস্ট না থাকতো তবে মানুষ বেচে থাকতে পারত না l মানুষ কে ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত পদার্থ থেকে বাচানোর জন্যই আল্লাহ
ক্রাস্ট তৈরী করেছেন l অর্থাত ক্রাস্ট তৈরির উদ্দেশ্য হলো
মানুষকে ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত তরল পদার্থ থেকে রক্ষা করা l
যদি
ক্রাস্ট না থাকতো তবে মানুষ ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত পদার্থের জন্য বেচে থাকতে পারত
না l
আর
আল্লাহ ক্রাস্ট তৈরী করে মানুষকে রক্ষা করছে এই জন্যে ভূমিকে বিছানা বলা হয়েছে l অর্থাত ভূমি কে আল্লাহ বিছানার মত নিরাপদ করে তৈরী করেছেন l আর তাই ভূমিকে বিছানা বা কার্পেটের সাথে তুলনা করা হয়েছে l
অর্থাত
আল্লাহ পৃথিবী তৈরী করেছেন এবং এর উপরে বিছানার মত বা কার্পেটের মত ক্রাস্ট তৈরী
করেছেন ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত পদার্থ থেকে রক্ষা করার জন্য l মুসলমানদের দাবি অনুযায়ী ক্রাস্ট
তৈরির মূল উদ্দেশ্য ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত অবস্থা থেকে মানুষকে রক্ষা করে বসবাসের
উপযুগী করা l
আল্লাহ
ক্রাস্ট তৈরী করলেন যেন ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত পদার্থ মানুষকে ক্ষতি করতে না পারে l
আসুন
এবার দেখি ক্রাস্ট তৈরী সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা কি বলে :
বিজ্ঞানীরা
বলে পৃথিবী সৃষ্টির প্রাথমিক দিকে পৃথিবী অত্যন্ত উত্তপ্ত ছিল l অর্থাত পৃথিবী তৈরির সময়ে সমস্ত পৃথিবী উত্তপ্ত অবস্থায় ছিল l
এর পরে
পৃথিবী তাপ বিকিরণ শুরু করে এবং শীতল হতে থাকে l ভু-পৃষ্ট উপরে
হওয়ায় খুব সহজে তাপ বিকিরণ করতে থাকে এবং দ্রুত শীতল হতে থাকে ভু-অভ্যন্তরের
তুলনায় l এরফলে ভু-পৃষ্ট খুব দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল হতে
থাকে এবং ভুপৃষ্ট দ্রুত শক্ত কঠিন পদার্থে পরিনত হয় l এর ফলে
ভু-অভ্যন্তরের তাপ বিকিরণ বাধা প্রাপ্ত হয় l অর্থাত
ভু-অভ্যন্তরের তাপ আর বের হতে পারে না কারণ ভু-প্রষ্টের তাপ সম্পূর্ণ বিকিরিত হয়ে
শক্ত কঠিন হয়ে গেছে অর্থাত ক্রাস্ট তৈরী হয়ে গেছে l আর এই
ক্রাস্টের জন্যই ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত পদার্থ আর তাপ বিকিরণ করতে পারে না l ফলে ভু-অভ্যন্তরের পদার্থগুলো উত্তপ্ত অবস্থায় থেকে যায় l অর্থাত ভু-পৃষ্ট খুব দ্রুত তাপ বিকিরণ করতে পেরেছে বলে খুব দ্রুত শীতল
হয়ে শক্ত কঠিন হয়ে গেছে এবং খুব দ্রুত
ক্রাস্ট তৈরী করেছে l আর এই ক্রাস্ট তৈরী হয়ে যাবার
জন্যই ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত পদার্থ তাপ বিকিরণ করতে পারেনি l এর ফলেই ভু-অভ্যন্তর ভাগ উত্তপ্ত অবস্থাতেই থেকে গেছে l
ভু-পৃষ্টের
ক্রাস্ট তৈরির জন্যই ভু-অভ্যন্তরের পদার্থ উত্তপ্ত অবস্থায় রয়ে গেছে l অর্থাত ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত পদার্থের জন্য দায়ী হচ্ছে এই ক্রাস্ট l ক্রাস্ট খুব দ্রুত তৈরী হবার জন্যই ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত পদার্থ আর তাপ
বিকিরণ করতে পারে নি l এরফলে ভু-অভ্যন্তর ভাগ উত্তপ্ত থেকে
গেছে l আর এজন্যই ভু-অভ্যন্তরে এখনো উত্তপ্ত এবং গলিত
পদার্থগুলো এখনো উত্তপ্ত অবস্থায় আছে l কারণ এই ক্রাস্টের
জন্য ভু-অভ্যন্তরের পদার্থ গুলো তাপ বিকিরণ করতে পারে নি l
অর্থাত
ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত পদার্থগুলোর জন্য দায়ী এই ক্রাস্ট l যদি ক্রাস্ট না তৈরী হতো এত দ্রুত তবে ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত পদার্থগুলো
তাপ বিকিরণ করতে পারত এবং শীতল হয়ে কঠিন হয়ে যেত l কিন্তু
ক্রাস্ট খুব দ্রুত গঠিত হয়ে যাবার জন্যই ভু-অভ্যন্তর ভাগ উত্তপ্ত অবস্থায় রয়ে গেছে
l
সুতরাং
বোঝা যাচ্ছে ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত এবং গলিত পদার্থের জন্য দায়ী হচ্ছে ক্রাস্ট l ক্রাস্টের জন্যই ভু-অভ্যন্তর ভাগ উত্তপ্ত l
কিন্তু
মুসলমানরা দাবি করছে ভু-অভ্যন্তর উত্তপ্ত বলেই ক্রাস্ট তৈরী করা হয়েছে যেটা
বিজ্ঞানীদের কথার এবং বাস্তবতার বিরুধী l মুসলমানদের দাবি
ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত পদার্থ থেকে বাচানোর জন্য ক্রাস্ট তৈরী করা হয়েছে l কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন ক্রাস্ট তৈরী হয়ে যাবার কারণেই ভু-অভ্যন্তরের
তাপ বেরোতে পারেনি এবং উত্তপ্ত অবস্থায় থেকে গেছে l
সত্যি
কথাটা হচ্ছে এই ক্রাস্ট গঠিত হবার কারণে ভু-অভ্যন্তরের তাপ বেরোতে পারেনি এবং এর
ফলেই ভু-অভ্যন্তরের পদার্থগুলো উত্তপ্ত এবং উত্তপ্ত তরল হিসেবে রয়ে গেছে l
আর তাই
মুসলমানদের দাবি যে, ভু-অভ্যন্তরের
উত্তপ্ত পদার্থ থেকে রক্ষার জন্য এই ক্রাস্ট গঠিত হয়েছে কথাটা সম্পূর্ণ ভাবে
মিথ্যা এবং বিজ্ঞানকে ভুল ভাবে উপস্থাপনা l
অর্থাত
ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত পদার্থ থেকে মানুষকে বাচানোর জন্য ক্রাস্ট তৈরী করা হয়েছে
আর তাই পৃথিবীকে বিছানা বা কার্পেটের সাথে তুলনা করা হয়েছে কথাটা সম্পূর্ণ ভাবে
মিথ্যা l ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত পদার্থ থেকে বাচানোর জন্য ক্রাস্ট তৈরী
হয়নি বরং ক্রাস্টের জন্যই ভু-অভ্যন্তরের পদার্থগুলো উত্তপ্ত অবস্থায় থেকে গেছে l আর তাই পৃথিবীকে বিছানার সাথে তুলনা করার সাথে ক্রাস্টের কোন সম্পর্ক নেই
l কারণ ভু-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত পদার্থের জন্য এই ক্রাস্টই
দ্বায়ী l আর তাই ক্রাস্ট বোঝাতে আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানা
বলেননি বরং সমতল অর্থেই বিছানা কথাটা বলেছেন l আল্লাহর কথা
মত পৃথিবী বিছানা বা কার্পেটের মতই সমতল l অর্থাত পৃথিবী
সমতল l
আল্লাহ কি পৃথিবীকে দোলনা করেছেন ? যেন মানুষ দোল খেতে পারে !
উত্তর :
অনেক মুসলমান বর্তমানের অর্থাত নতুন অনুবাদে কোরআনকে বিজ্ঞানের সাথে মিলাতে অদ্ভুত অদ্ভুত অনুবাদ বের করছেন l যেগুলো হজম করা খুব কষ্ট সাধ্য !
আসুন দেখি তারা কোরান কে বিজ্ঞানের সাথে মিলাতে কি করছে দেখি :
Muhammad Sarwar , AJ Arberry, Ali Quri
Qarai, Wahiduddin Khan এবং আরো অনেক অনুবাদক অনুবাদ করেছেন :
43:10
(It
is) He who made the earth to be a cradle for you and made in it ways for you,
in order that you are guided.
এই অনুবাদ অনুযায়ী আল্লাহ পৃথিবীকে দোলনা করেছেন এবং এতে পথ তৈরী করেছেন যেন মানুষ পথ পায় অথবা গন্তব্যস্থলে পৌছতে পারে l
আর এটার ভালো অনুবাদ হচ্ছে, আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানা করেছেন এবং এতে পথ তৈরী করেছেন যেন মানুষ গন্তব্যস্থলে পৌছতে পারে l
এবার চিন্তা করে দেখুনতো কোন অনুবাদটা উপযুক্ত- আল্লাহ পৃথিবীকে দোলনা করেছেন আর তাতে পথ তৈরী করেছেন নাকি আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানা করেছেন আর তাতে পথ তৈরী করেছেন ? দোলনা তৈরী করে তাতে পথ তৈরী করা অর্থহীন কিন্তু বিছানা তৈরী করে তাতে পথ তৈরী করা উপযুক্ত l কারণ বিছানা সমতল আর এতে পথ তৈরী করা স্বাভাবিক l কিন্তু দোলনা তৈরী করে তাতে পথ তৈরী করা কি উপযোক্ত হয় ? দোলনাতো দোল খাবার জন্য পথ তৈরী করা দোলনা তে স্বাভাবিক নয় l কিন্তু বিছানা আকৃতির পৃথিবীতে পথ তৈরী করা স্বাভাবিক l কারণ বিছানা তৈরী করা হয় সমতলভাবে l আর এটা সবসময় সমতল ভাবে থাকে l আর তাই পৃথিবীকে করা হয়েছে বিছানা আর তাতে পথ তৈরী করা হয়েছে এই অর্থটাই উপযুক্ত l বরং ওই আয়াতে যদি দোলনা শব্দটি ব্যবহার করেন তবে তার অর্থ হওয়া উচিত ছিল আল্লাহ পৃথিবীকে করেছেন দোলনা এবং এতে করেছেন বসার জায়গা যাতে তোমরা বসে দোল খেতে পারো l তাহলে এখানে দোলনা শব্দটি উপযুক্ত হত l কিন্তু এই আয়াতে দোল খাওয়ার কথা বলা হয়নি বরং এখানে পথ চলার কথা বলা হয়েছে l অর্থাত বিছানা আকৃতির পৃথিবীতে পথ তৈরী করেছেন l এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত l
আবার
(20.53). He Who has made the earth a cradle for you
and traced out roads on it for you, and sends down water from the sky, and
produces with it pairs of various plants.
এই আয়াত অনুযায়ী - আল্লাহ পৃথিবীকে দোলনা করেছেন এবং এতে পথ তৈরী করেছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা থেকে বিভিন্ন ফসল উত্পন্ন করেছেন l
এখানেও একই কথা বলা হয়েছে অর্থাত আল্লাহ পৃথিবীকে দোলনা করেছেন এবং তাতে পথ তৈরী করেছেন l আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন তা দ্বারা উদ্ভিদসমূহ উত্পন্ন করেছেন l
এখানেও একই কথা খাটে যে দোলনা করে তাতে পথ তৈরী করা অর্থহীন কারণ দোলনা দোল খাওয়ার জন্য পথ তৈরী করার জন্য নয় l আর পৃথিবী যে দোলনা নয় তাতো সবাই বুঝতে পারবে l বরং পৃথিবী শয্যা বা বিছানার মত এটাই উপযুক্ত l কারণ পৃথিবীকে মানুষের কাছে বিছানার মতই সমতল মনে হয় l আর তাতে পথ থাকাটাই স্বাভাবিক l এবং এই বিছানার মত পৃথিবীতে বৃষ্টি থেকে পানি নিয়ে উদ্ভিদ উত্পন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক l কিন্তু দোলনা দোল খাওয়ার জন্য পথ তৈরী করার জন্য নয় l আর তাতে বৃষ্টি এবং উদ্ভিত উত্পন্ন হওয়া অর্থহীন l কারণ দোলনা দোলতে থাকে আর তাতে পথ থাকা সম্ভব নয় আর তাতে বৃষ্টি হয়ে উদ্ভিদ উত্পন্ন হওয়া ছেলে মানুষী ছাড়া কিছুই না l কিন্তু বিছানার মত বিছানো পৃথিবী এবং এতে পথ আর বৃষ্টির মাধ্যমে উত্পন্ন উদ্ভিদ এই অর্থটাই সঠিক l কিন্তু দোলনা দোলতে থাকবে আর তাতে পথ তৈরী করা হবে এবং বৃষ্টি হয়ে উদ্ভিদ উত্পন্ন হবে সেটা হাস্যকর l
78.6. Have We not
made the earth as a cradle,
এই আয়াতটিতেও বলা হয়েছে পৃথিবীকে দোলনা করা হয়েছে l
এখন কথা হচ্ছে যে এক শব্দের অনেকগুলো অর্থ বা সমার্থক শব্দ থাকে l আর এটা সব ভাষার ক্ষেত্রেই একই রকম l কিন্তু যখন কেউ কথা বলে তখন কোনো একটি শব্দের কোন অর্থ হবে সেটা প্রসংগ অনুযায়ী বুঝে নিতে হয় l কোনো লেখা পড়ার সময়ও মানুষ কোন শব্দের কখন কোন অর্থ হবে সেটা প্রসংগ অনুসারে সবাই বুঝে নেয় l আর এটা পৃথিবীর সব ভাষার ক্ষেত্রেই হয় l
কোরআনে অনেক আয়াতে বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে পৃথিবীকে বোঝানো হয়েছে বিছানা বা কার্পেটের মত করে বিছানো অথবা প্রশস্তভাবে বিস্তৃত পৃথিবী l এবং বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে পৃথিবীকে বিছানার সাথে তুলনা করতে বা প্রশস্তভাবে বিছানো বা বিস্তৃত বোঝাতে l
কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনো একটি শব্দের হয়তবা অন্য কোনো অর্থ নিয়ে কোরানের আয়াতের অন্য অর্থ করা যায় l কিন্তু সেটা কোরানের ওই আয়াত অনুযায়ী শব্দটা মিলবে কিনা সেটা ভালো ভাবে বোঝে তারপরই এর অনুবাদ করতে হবে l এখন কোরানের সব জায়গায় বলা হচ্ছে পৃথিবীকে বিস্তৃত বা প্রসারিত করা হয়েছে অথবা পৃথিবীকে বিছানা বা কার্পেটের মত বিছানো হয়েছে l অথবা পৃথিবীকে প্রশস্তভাবে বিছানো হয়েছে বা বিস্তৃত করা হয়েছে l এখন এই কথাগুলোর অর্থ হয় একই রকম l অর্থাত কোরআনে যতগুলো আয়াতে পৃথিবীকে বিছানা বা কার্পেট অথবা প্রশস্তভাবে বিস্তৃত বোঝানো হয়েছে তাদের প্রত্যেকটি অর্থই একই কথা প্রকাশ করে l অর্থাত পৃথিবী প্রশস্ত ভাবে বিস্তৃত বা বিছানার মত বিছানো l
এখন কেও যদি কোনো একটি বিশেষ আয়াতের কোনো একটি শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে ওই আয়াতের অর্থ পরিবর্তন করা হয় তবে সেটা সঠিক অর্থ প্রকাশ করবে না l
যেমন সুরা আন-নাযিয়াত-এর ৩০ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে
"পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন l"
আর এর অর্থ যদি করা হয় ডিম্বাকৃতির পৃথিবী তবে সেটা প্রসঙ্গ অনুযায়ী হবে না l কারণ কোরআনের সব আয়াতেই পৃথিবীকে বিস্তৃত করা হয়েছে এই কথাটাই বারবার বলা হয়েছে l তাই এর অর্থ ডিম্বাকৃতির বলা যাবে না এখানে বিস্তৃত করা এই অর্থটিই করতে হবে l কারণ এটাই কোরানের সব আয়াতে বলা আছে l কোরআনে এই কথাটিই পৃথিবীর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে বারবার l আর তাই এই অর্থটিই এখানে উপযুক্ত l
আবার কোরআনের ৪৩:১০ , ২০;৫৩ এবং ৭৮:০৬ নাম্বার আয়াতের অর্থ ভিন্ন করে অনুবাদ করা হয়েছে পৃথিবীকে দোলনা করা হয়েছে l কিন্তু এর সঠিক অর্থ হলো পৃথিবীকে বিছানা করা হয়েছে l
এখন, এখানে যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটার অন্য একটি অর্থ হয় দোলনা এবং বিছানা l আবার কোরআনের অন্য আয়াত্গুলুতে পৃথিবীকে বিছানা বলা হয়েছে অথবা বিছানার মত বিছানো হয়েছে বা প্রশস্তভাবে বিস্তৃত করা হয়েছে l তাই এই অর্থের সাথে বিছানা শব্দটিই উপযুক্ত যেটা দোলনা এই অর্থের সাথে উপযুক্ত নয় l কোরআনের সব জায়গায় পৃথিবীকে বিছানার সাথেই তুলনা করা হয়েছে দোলনার সাথে নয় l আর এই আয়াত গুলোতে বিছানা অর্থটিই সবচেয়ে উপযুক্ত l কারণ দোলনা সাথে পৃথিবী মিলে না কিন্তু বিছানার সাথে পৃথিবীকে মিলানো যায় l কারণ পৃথিবীকে মানুষের কাছে বিছানারমত সমতলই মনে হয় কিন্তু কখনো দোলনার মত দলনশীল মনে হয় না l আর ওই আয়াতগুলোতে বলা হয়েছে আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানা করেছেন এবং তাতে চলার জন্য পথ করেছেন l আর চলার পথ বিছানার মত সমতল পৃথিবীর উপরই ভালো মানায় বা স্থাপন করা যায় l কিন্তু দোলনার উপর চলার পথ স্থাপন করা এবং এর উপর বৃষ্টি হয়ে উদ্ভিদ উত্পন্ন হওয়া সম্ভব নয় l আর তাই কোরআনের সব আয়াত অনুযায়ী এখনে পৃথিবী বিছানার মত এই কথাটিই সঠিক l
যদি তারপরও এখানে দোলনা শব্দটি বসানো হয় তবে এই আয়াতের অর্থ উপযুক্ত হবে এরকম - আল্লাহ পৃথিবীকে করেছেন দোলনা আর তাতে করেছেন বসার জায়গা যাতে মানুষ ভালোভাবে দোল খেতে পারে l
আবার - আল্লাহ পৃথিবীকে করেছেন দোলনা এবং তাতে করেছেন দোলনময় পথ l আর তিনি বৃষ্টির দ্বারা বিভিন্ন উদ্ভিদ উত্পন্ন করেছেন যেগুলো দোলনায় দোল খায় l
তাহলে দোলনা শব্দটির ব্যবহার স্বার্থক হবে l কিন্তু তাতে কোরআনের কথার বিকৃতি হয়ে যাবে l
আর তাই কোরআনের এই আয়াতের সঠিক অর্থ এটাই হওয়া উচিত -
আল্লাহ পৃথিবীকে করেছেন বিছানা আর তাতে তৈরী করেছেন পথ যেন মানুষ সঠিক পথ খুঁজে পেতে পারে l
আর আল্লাহ পৃথিবীকে করেছেন বিছানা আর এতে তৈরী করেছেন পথ এবং এতে বৃষ্টির দ্বারা বিভিন্ন উদ্ভিদ উত্পন্ন করা হয় l
তাহলে বিছানার মত পৃথিবীতে পথ তৈরী করা এবং বৃষ্টির দ্বারা উদ্ভিদ উত্পন্ন করা এই অর্থের কোনো পরিবর্তন বা অসামঞ্জস্য থাকে না l
আর তাই বিজ্ঞানের সাথে মিলাতে যেয়ে কোরআনের এরকম ভিন্ন অর্থ বা অনুপোযুক্ত অর্থ এনে কোরআনের অর্থ অসামঞ্জস্য করে তুলা আর মানুষের কাছে হাস্যকর করে তুলা ছাড়া এর আর কোনো সার্থকতা নেই l
কোরআনে পৃথিবীকে বিছানাই বলা হয়েছে এতে কোন ভুল নেই l আর সব আয়াত গুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় যে পৃথিবীকে আল্লাহ বিছানার মত করে বিস্তৃত করেছেন বা প্রশস্তভাবে প্রসারিত করেছেন l আর তাই কোরআনের মতে পৃথিবী সমতল l
পৃথিবীকে দোলনা করেছেন, এটি দিয়ে কি পৃথিবীর গতিপথ বর্ণনা করা হয়েছে ?
উত্তর :
মুসলমানদের
দাবি কোরানে কিছু আয়াতে পৃথিবীকে দোলনার সাথে তুলনা করা হয়েছে যেটা দিয়ে পৃথিবীর বার্ষিক
গতিপথের বর্ণনা দেয়া হয়েছে l
তাদের দাবি
অনুযায়ী দোলনা দোল খায় বৃত্তাকার পথে এবং এটি বৃত্তাকার পথে যেতে যেতে অভিকর্ষজ বলের
টানে আবার বিপরীত দিকে ফিরে যেতে থাকে l যদি দোলনাকে দুলতে দেয়া
হয় এবং এটি বৃত্তাকার পথে চলার সময় যে প্রান্ত থেকে অভিকর্ষজ বলের জন্যে ফিরে আসতে
থাকে সেখানে যদি দোলনাকে ফিরে আসতে না দেয়া হয় অর্থাত বল প্রয়োগে এটিকে উপরের দিকে
ঘুরিয়ে আসতে দেয়া যায় তবে এটি অভিকর্ষজ বলের জন্য বৃত্তাকারে না যেয়ে এটি উপ-বৃত্তাকারে
অথবা বর্তুলাকার পথে যাবে l কারণ অভিকর্ষজ বলের জন্য দোলনার গতিপথ
কিছুটা পরিবর্তন হবে ফলে এটি আর বৃত্তাকার পথে যাবে না l দোলনা
উপরে থাকা অবস্থায় এটি অভিকর্ষজ বলের জন্য কিছুটা নিচে নেমে আসবে এবং দোলনার গতিপথ
বৃত্তাকারে না হয়ে হবে উপবৃতাকারে অর্থাত বর্তুলাকার l
আর এর জন্যই
কোরানে বলা হয়েছে আল্লাহ পৃথিবীকে করেছেন দোলনা l
তারা কোরানের
সাথে বিজ্ঞানকে মিলাতে এই যুক্তি গুলো উপস্থাপন করে l
কিন্তু
তারা বিজ্ঞান ভালো করে জানে না অথবা জানলেও মিথ্যাচার করে এমন ভাবে বলে l বিজ্ঞানকে ভুল ভাবে উপস্থাপন
করে মানুষের সামনে l আর বিজ্ঞানের ভুল ব্যাখ্যা করে কোরানকে বিজ্ঞানের
সাথে মিলাতে চায় l
তাদের বর্ণনা
যে পুরোপুরি ভুল বা মিথ্যা সেটা আসুন যাচাই করে দেখি l
দোলনা দুলার
সময় এটি সামনে পিছনে দুলতে থাকে l এর উপর বল প্রয়োগ করতে হয় l কোন দোলনাতে বল প্রয়োগের ফলে এটি সামনে পিছনে দুলতে থাকবে l ফলে এটিকে ধাক্কা দিলে এটি সামনের দিকে যেতে থাকবে এবং কিছু দূর যাবার পরে
এটি আস্তে আস্তে থেমে যাবে এবং পুনরায় এটি বিপরীত দিকে ফিরে আসতে থাকবে l এভাবেই দোলনা দুলতে থাকে l দোলনা দুলার সময় এটির উপর
তিনটি বল ক্রিয়া করে l
১. দোলনার
উপর বলপ্রয়োগের ফলে এর গতি শক্তি যেটা দোলনাকে সামনে পিছনে নিয়ে যায় l
২. দোলনা
যে রশি দিয়ে বাধা থাকে তার কেন্দ্রাভিমুখী বল যেটা দোলনাকে বৃত্তাকার পথে স্থির রাখে
l অর্থাত দোলনা ছিটকে পড়ে না l
৩. অভিকর্ষজ
বল যেটা দোলনাকে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে টানতে থাকে l
যখন দোলনার
উপর বল প্রয়োগ করে এটিকে দুলতে দেয়া হয় তখন এটির উপর এই তিনটি বল ক্রিয়া করে l বল প্রয়োগে দোলনা গতিশীল হয় l এটির গতিশীলতা বল প্রয়োগের
সমান l অর্থাত দোলনাকে যত জোরে ধাক্কা দেয়া হবে এটি তত দ্রুত
চলতে থাকবে অর্থাত এর গতিশক্তি ততবেশী হবে l এখন স্বাভাবিক ভাবে
কোন দোলনাকে যে বলে ধাক্কা দেয়া হয় সেই বল প্রয়োগের ফলে দোলনা সামনের দিকে যেতে থাকে
l ঠিক সেই সময়ে দোলনার রশির কেন্দ্রমুখী বলে দোলনাকে রশির দৈর্ঘ্য
বরাবর ধরে রাখে যেন দোলনার গতি শক্তির ফলে এবং এর উপর ক্রিয়াশীল অভিকর্ষজ বলের ফলে
এটি ছিটকে না পড়ে l অর্থাত রশি কর্তৃক প্রয়োগকৃত বল দোলনা কে
সুষম বৃত্তাকার পথে পরিচালিত করে l এর জন্যই দোলনা বৃত্তাকার
পথে চলে l এখন দোলনা কিছুদুর চলতে থাকবে বৃত্তাকার পথে l এবং এটি সামনের দিকে যেতে থাকবে l এটি ততদূর পর্যন্তই
যাবে যতটুকু বল এর উপর প্রয়োগ করা হয়েছে l এটি গতিশীল হয়ে সামনের
দিকে যেতে থাকবে এবং দোলনার রশি এটিকে বৃত্তাকার পথে ধরে রাখবে l এরফলে দোলনা সামনের দিকে যাবে এবং এটি উপরের দিকে উঠতে থাকবে l এখন দোলনার উপর বল প্রয়োগে এটিকে গতিশীল করলে এটি গতিশীল হবে এবং প্রয়োগকৃত
বলের সমান গতিশক্তি অর্জন করবে l এবং সামনের দিকে যেতে থাকবে
l তখন অভিকর্ষজ বলের জন্য দোলনা আস্তে আস্তে থেমে যেতে থাকবে
l এবং এটি যখন উপরের দিকে উঠতে থাকবে তখন দোলনাকে অভিকর্ষজ বলের
বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে l এরফলে দোলনার গতিশক্তি কমে যেতে থাকবে
l এবং উপরের দিকে একটি নির্দিষ্ট দুরত্ব উঠার পড়ে এটির গতিশক্তি
শূন্য হবে এবং এটি থেমে যাবে l
ফলে এটির
উপর ক্রিয়াশীল অভিকর্ষজ বলের জন্য এটি নিচের দিকে বিপরীত পথে চলতে শুরু করবে l তখন এর গতি শক্তি বাড়তে থাকবে অভিকর্ষজ বলের ফলে তৈরী ত্বরণ-এর কারণে l এখন দোলনা যে সাম্যবস্থায় ছিল গতিশক্তির কারণে এটি পার হয়ে আরো পিছনের দিকে
চলতে থাকবে l এবং এটি পিছনের দিকে উপরের দিকে উঠতে থাকবে l এখন এটির উপর কিয়াশীল অভিকর্ষজ বলের ফলে এটি আবার থেমে যেতে থাকবে এবং একসময়
গতিশক্তি কমে গিয়ে শুন্যে ঠেকবে l ফলে আবার এটি বিপরীত দিকে চলতে
শুরু করবে অভিকর্ষজ বলের কারণে l এজন্যই দোলনার উপর বল প্রয়োগ
করলে দোলনা দুলতে থাকে l
এখন যদি
প্রচন্ড বল প্রয়োগ করা হয় l তবে দোলনা চলতে থাকবে এবং এর গতি শক্তি হবে
অনেক বেশি (প্রয়োগকৃত বলের সমান) এরফলে এটি আগের চেয়ে আরোও উপরের দিকে উঠতে থাকবে l ফলে এর উপর ক্রিয়াশীল অভিকর্ষজ বল দোলনার গতিশক্তি বেশি হওয়ায় দোলনাকে থামিয়ে
দিতে এবং এর গতিশক্তি শুন্যে নিয়ে আসতে অনেক বেশি সময় নিবে l
ফলে দোলনা অনেক উপরে উঠে যাবে এবং এটি থেমে যেয়ে আবার বিপরীত দিকে চলতে শুরু করবে l
যদি দোলনাতে
অনেক বল প্রয়োগ করা হয় তবে এটি একদম উপরে উঠে যাবে এবং অভিকর্ষজ বল এটিকে থামাতে পারবে
না l এবং দোলনার রশি এটিকে বৃত্তাকার পথে ধরে রাখতে চাইবে l তখন দোলনা যেতে যেতে থেমে না যেয়ে বরং উপরের দিকে এটি সম্পূর্ণ বৃত্ত ঘুরে
আসতে চাইবে l এখন দোলনা যদি উপরে উঠে যায় তখন এটির উপর অভিকর্ষজ
বল সর্বোচ্চ শক্তিতে ক্রিয়া করবে l ফলে এটি সম্পূর্ণ বৃত্ত পরিভ্রমন
না করে নিচের দিকে পড়ে যাবে l অর্থাত এটি সম্পূর্ণ বৃত্ত পথে
ঘুরে আসতে পারবে না l দোলনা উপরে উঠে সরাসরি নিচে পড়ে যাবে l তাহলে মুসলমানদের দাবি অনুযায়ী দোলনা উপবৃত্তাকার পথে ঘুরবে না বরং এটি নিচে
পড়ে যাবে l আর তাই দুলনা উপবৃত্তাকার পথে ঘুরে, দাবিটা সম্পূর্ণ অমূলক l
আসুন দেখি
দোলনাকে যদি সম্পূর্ণ বৃত্তাকার পথ অতিক্রম করতে দেয়া হয় তবে কি হবে l
যদি দোলনার
উপর এত জোরে ধাক্কা দেয়া হয় যে ধাক্কার জন্য উত্পন্ন গতিশক্তি দোলনাকে অভিকর্ষজ বল
উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ বৃত্তাকার পথ অতিক্রম করাতে পারবে l তখন এটি উপরের দিকে উঠতে থাকবে এবং এর গতিশক্তি এত বেশি হবে যে এটি অভিকর্ষজ
বল উপেক্ষা করে সরাসরি বৃত্তাকার পথে চলবে এবং এর গতিশক্তি অনেক বেশি হওয়ায় এটি নিচের
দিকে আর নেমে আসবে না সরাসরি সুষম বৃত্তাকার পথে চলবে l আর এর
কারণ হচ্ছে গতিশক্তির জন্য উত্পন্ন কেন্দ্রাবিমুখী বল বা কেন্দ্র বহির্মুখী বল যেটা দোলনাকে বাইরের দিকে ছিটকে ফেলে দিতে চায় l কম বল প্রয়োগের ফলে উত্পন্ন কেন্দ্রাভিমুখী বল দোলনার রশির দ্বারা উত্পন্ন
কেন্দ্রমুখী বল দ্বারা নাকচ হয় l এবং দোলনা ঝুলে থাকে l এবং বৃত্তাকার পথে চলতে থাকে l
কিন্তু
দোলনার উপর যদি প্রচন্ড বল প্রয়োগ করা হয় যেটা দোলনাকে সম্পূর্ণ বৃত্তাকার পথ ঘুরিয়ে
আনবে এবং এই বল প্রয়োগের ফলে দোলনা যখন একদম উপরে অর্থাত মাটির বিপরীত পাশে উঠে যাবে
তখন এর উপর ক্রিয়া করবে অভিকর্ষজ বল যেটা দোলনাকে নিচের দিকে ফেলে দিতে চাইবে l কিন্তু তখন এর গতিশক্তি এত বেশি থাকবে যে গতিশক্তির জন্য উত্পন্ন কেন্দ্রবিমুখী
বল বা কেন্দ্র বহির্মুখী বল এটিকে বাইরের দিকে অর্থাত উপরের দিকে ছিটকে ফেলে দিতে চাইবে
l ফলে অভিকর্ষজ বল এটিকে নিচে ফেলে দিতে পারবে না l এবং কেন্দ্র বহির্মুখী বল দোলনাকে সম্পূর্ণ বৃত্ত ঘুরে আসতে দিবে l এবং এর গতিপথ সুষম বৃত্তাকার হবে কারণ তখন অভিকর্ষজ বল দোলনাকে এর গতিপথ থেকে
সরাতে পারবে না l আর তাই দোলনা চলবে সুষম বৃত্তাকার পথে l উপবৃত্তাকার বা বর্তুলাকার পথে নয় l
অর্থাত
দোলনাকে সম্পূর্ণ বৃত্তাকার পথ ঘুরিয়ে আনতে যে বল প্রয়োগ করতে হবে এবং ওই পরিমান বল
প্রয়োগের ফলে যে গতিশক্তি তৈরী হবে সেটা অভিকর্ষজ বলকে সম্পূর্ণ রূপে উপেক্ষা করে দোলনাকে
সুষম বৃত্তাকার পথে নিয়ে যাবে l
সুতরাং
দোলনার গতিপথ কখনই উপবৃত্তাকার হবে না l প্রকৃত পক্ষে দোলনার গতিপথ
বৃত্তাকার l এবং এটিকে যদি সম্পূর্ণ বৃত্তাকার পথ ঘুরে আসতে দেয়া
হয় তবে এটি সবসময় সুষম বৃত্তাকার পথেই চলবে l আর তাই দোলনা উপবৃত্তাকার
বা বর্তুলাকার পথে চলে কথাটা সম্পূর্ণ রূপে মিথ্যা l
প্রকৃত
পক্ষে দোলনা কখনই উপবৃত্তাকার বা বর্তুলাকার পথে চলে না বরং এটি বৃত্তাকার পথে চলে
l
আর এর উত্কৃষ্ট
উদাহরণ হলো - যদি কোন ভারী বস্তু একটা রশিতে বেধে দেয়া হয় এবং এটিকে রশি ধরে হাত দিয়ে
ঘুরানো হয় তবে এটি সম্পূর্ণ বৃত্তাকার পথেই চলে l অর্থাত রশিতে বাধা
বস্তুটি সুষম বৃত্তাকার পথে চলে l
আপনিও এটি
দেখতে পারেন l কোন বস্তুকে (ছোট বস্তুকে) যদি রশির সাথে বেধে বিত্তাকারে ঘুরান
তবে দেখবেন এটি সুষম বৃত্তাকারে ঘুরছে l উপবৃত্তাকার বা বর্তুলাকার
ভাবে ঘুরছে না l
কারণ এতে
পয়োগ কৃত বল অর্থাত গতিশক্তি এত বেশি থাকে যে এটি অভিকর্ষজ বলকে সম্পূর্ণ রূপে উপেক্ষা
করে সুষম বৃত্তাকার পথে চলে l এজন্যই দোলনার গতিপথ সুষম বৃত্তাকার
l উপবৃত্তাকার বা বর্তুলাকার নয় l আর তাই
মুসলমানদের দাবি দোলনা উপবৃত্তাকার বা বর্তুলাকার পথে ঘুরে কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা l
অর্থাত
মুসলমানদের দাবি "দোলনা উপবৃত্তাকার বা বর্তুলাকার পথে ঘুরে আর তাই পৃথিবীকে দোলনা
বলে আল্লাহ এর বার্ষিক গতি অর্থাত পৃথিবী যে বার্ষিক গতিপথে সূর্যকে পরিভ্রমন করে সেটা
বোঝানো হয়েছে" এই কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা l অর্থাত দোলনা উপবৃত্তাকার
বা বর্তুলাকার পথে ঘুরে না বরং এটি বৃত্তাকার পথে ঘুরে l আর তাই
এর গতিপথের সাথে পৃথিবীর উপবৃত্তাকার বা বর্তুলাকার পথে সূর্যকে প্রদক্ষিন করার গতিপথের
কোন মিল নেই l কারণ পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিন করে উপবৃত্তাকার
বা বর্তুলাকার পথে l কিন্তু দোলনার গতিপথ সম্পূর্ণ বৃত্তাকার
l
আর তাই
"আল্লাহ পৃথিবীকে করেছেন দোলনা" আর এটি দ্বারা পৃথিবীর গতিপথ বর্ণনা করা
হয়েছে এই দাবিটা সম্পূর্ণ রূপে ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা l
অর্থাত
আল্লাহ পৃথিবীকে দোলনা করেননি l বরং করেছেন বিস্তৃত অথবা বিছানার মত
সমতল l
আর তাই
কোরানে পৃথিবীর বর্ণনা করা হয়েছে সম্পূর্ণ সমতল l
(চলবে....)
(বি.দ্র.: লেখাটি এমকেএ আহমেদ রচিত
"কোরআনের বর্ণনায় সমতল পৃথিবী- ১ম খন্ড" থেকে ধারাবাহিক ভাবে নেওয়া হচ্ছে।)
No comments:
Post a Comment