আল মুরআল
সুরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টি (ব্যাকডেটেড পিপল)
আয়াত ১৭৯৬ এবং ১৭৯৭
"তুমি কি তাদের দেখেছো যারা সত্যকে পরিত্যাগ
করে আর বলে 'এটাতো স্পষ্ট মিথ্যা' ? যারা সত্যজ্ঞানের সুফল ভোগ করে কিন্তু কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে
না ? তারা তাদের অন্ধবিশ্বাস
এবং কুসংস্কারকে সত্য বলে মনে করে । যদি তারা বুঝতোঃ কল্পনা কখনো বাস্তবতার সাথে সামনঞ্জস্যপূর্ন
নয় ! বস্তুত তারা এমন এক
দৃষ্টান্ত যা আমি প্রদর্শন করে রেখেছি, যারা কল্পনাকে
আকড়ে ধরে থাকে এবং বাস্তব সত্যকে পরিত্যাগ করে । তারাই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টি যাদেরকে আমি রেখেছি
দৃষ্টান্ত স্বরুপ যাতে মানব জাতি শিক্ষা গ্রহন করে যুগ যুগ ধরে ।"
“তুমি কি দেখনি যারা সত্যজ্ঞানকে অস্বীকার করেছিল ? তারা শাস্তি দিয়েছিল সত্যজ্ঞান প্রচারকারীকে
। আমি কি তাদেরকে মানুষের
কাছে অন্ধবিশ্বাসী আর কুসংস্কারাচ্ছন্ন হিসেবে হাসির পাত্র বানাইনি ? তারাতো ছিল এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টির পূর্বসুরি । বস্তুত এখন যারা সত্যজ্ঞানকে
অস্বীকার করে তাদের কাল্পনিক প্রাচীন মিথ্যে জ্ঞানকে আকড়ে ধরে আছে অন্ধের মত;
তাদেরকে আমি প্রদর্শন করবো সেই রুপে যেমনটি আমি তাদের পূর্ববর্তীগনকে
করেছি । বস্তুত এরাই অন্ধবিশ্বাসী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন পিছিয়ে পড়া মানুষ !"
ব্যাখ্যাঃ উপরিউক্ত আয়াত দুটোতে বলা হয়েছে
আস্তিকদের কথা যারা সত্যজ্ঞান তথা বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে কিন্তু বিজ্ঞানের সুফল ভোগ
করে । তারা তাদের অন্ধবিশ্বাস
এবং কুসংস্কারকে আকড়ে ধরে বসে থাকে কিন্তু সত্যজ্ঞান তথা বিজ্ঞানকে মিথ্যা বলে প্রচার
করে । কিন্তু বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলো
ব্যবহার করে তবে বিজ্ঞানের প্রতি কৃতজ্ঞশীল থাকে না । তারা বিজ্ঞানকে মিথ্যে বলে মনে করে এবং তাদের
কাল্পনিক অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারগুলোকে সত্য বলে মনে করে । ফলে তারা বাস্তবতাকে
অস্বীকার করে চলে এবং বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে মিথ্যে অপ-প্রচার করে বেড়ায় । তারা বুঝতে চায়না তাদের
কাল্পনিক বিশ্বাসগুলো বাস্তব নয় এগুলো শুধুই কল্পনা । আর কল্পনা কখনো বাস্তব নয় । এই অন্ধবিশ্বাসী এবং
কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষগুলো বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে বলে এরা বাস্তবতা থেকে দুরে চলে
যায় । ফলে তারা অন্যান্য
বাস্তববাদী মানুষের তুলনায় সত্যজ্ঞান তথা বিজ্ঞান থেকে পিছিয়ে পড়ে । এরাই পিছিয়ে পড়া মানুষ
যাদেরকে সৃষ্টিকর্তা (তথা আল্লাহ) মানব জাতির জন্য দৃষ্টান্ত-স্বরুপ রেখেছে যাতে মানুষ যুগযুগ ধরে শিক্ষা নিতে পারে ।
সত্যজ্ঞান তথা বিজ্ঞানের জ্ঞান প্রচার করার
দায়ে অনেক বিজ্ঞানীকে অনেক বর্বর শাস্তি পেতে হয়েছে অন্ধবিশ্বাসীদের কাছ থেকে । যারা পূর্বে বিজ্ঞানীদেরকে
সত্য প্রচার করার দায়ে শাস্তি দিয়েছিল তারা বর্তমানের মানুষের কাছে অন্ধবিশ্বাসী আর
কুসংস্কারাচ্ছন্ন হিসেবে ঘৃনিত হয়েছে । এমনকি মানুষ ওইসব মানুষকে অন্ধবিশ্বাসী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন
হিসেবে দেখে, এমনকি তাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করে । অথচ এরাই বিজ্ঞানকে এক সময় প্রতিহত করেছিল তাদের মিথ্যে ধর্মগুলোর
জন্য ।
বর্তমানেও অন্ধবিশ্বাসী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন
ধার্মিকরা বিজ্ঞানের সত্য তথা বাস্তব জ্ঞানকে অস্বীকার করে । তারা তাদের কাল্পনিক ও মিথ্যে বিশ্বাসকে সত্য
মনে করে এবং বিজ্ঞানকে মিথ্যে বলে প্রচার করে । এই আয়াত দুটোতে সৃষ্টিকর্তা এইসব মানুষকে
পূর্বের ওইসব মানুষের সাথে তুলনা করেছে যারা বিজ্ঞানকে অস্বীকার করেছিল । সৃষ্টিকর্তা এদেরকে
মানুষের কাছে (ভবিষ্যতের মানুষের কাছে) এক দৃষ্টান্ত হিসেবে রেখে দেবে যেমন দৃষ্টান্ত
পুর্ববর্তী ওইসব অন্ধবিশ্বাসী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষদের রেখেছেন । এরা সেইসব অন্ধবিশ্বাসীদের
উত্তরসূরী যারা পূর্বে বিজ্ঞানকে অস্বীকার করেছিল । বর্তমানে যেসব মানুষ বিজ্ঞানকে অস্বীকার করছে
তাদেরকে সৃষ্টিকর্তা সেভাবেই দৃষ্টান্তস্বরুপ করে রাখবে যেমনটি পূর্ববর্তী অন্ধবিশ্বাসী
ও কুসংস্কারাচ্ছন্নদেরকে করেছেন । প্রকৃতপক্ষে এইসব অন্ধবিশ্বাসী ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষগুলোই
তাদের মিথ্যে ও কাল্পনিক বিশ্বাস (অন্ধবিশ্বাস) এবং কুসংস্কারকে আকড়ে ধরে বসে থাকার
কারণে অন্যান্য বাস্তববাদী মানুষদের থেকে পিছিয়ে থাকে । এদেরকেই সৃষ্টিকর্তা পিছিয়ে পড়া মানুষ (ব্যাকডেটেড
পিপল) বলে অভিহিত করেছেন । আর এদেরকে পরবর্তী মানব জাতির জন্য অন্ধবিশ্বাসী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন
পিছিয়ে পড়া মানুষের দৃষ্টান্ত-স্বরুপ প্রদর্শন করার কথা ব্যক্ত করেছেন ।
এটাই এই দুই আয়াতের ব্যাখ্যা ।
No comments:
Post a Comment